নানকের বেদ নিন্দা -
প্রারম্ভিক সময়ে বেদ প্রশংসা করে সাধারণের মধ্যে প্রবেশ করলেও আস্তে আস্তে তাঁর রূপ বদলে যেতে থাকে । যেমন -
নাভিকমল তে ব্রহ্মা উপজৈ বেদ পঢ়ে মুখকণ্ঠ সঁবার ।
নাকো অন্ত জাই লখণা আবত জাবত রহে গঁবার ।।
গুজরী ১।২
অনুবাদঃ নাভিকমল থেকে ব্রহ্মা উৎপন্ন হলো । মুখ ও কণ্ঠে বেদ তার ধারণকৃত । কিন্তু তার পরেও সে 'গঁবার ' অর্থাৎ মূর্খই রয়ে গেলো ।
বেদ পঢ়ে পঢ়ে ব্রহমে জন্ম গঁবায়া ।
আসা শ্রী কবীরজী কী বাণী । [ পৃষ্ঠা ৯ - ৯৯ কৈক্স্টন প্রেস , অনারকলী, লাহোর ]অনুবাদঃ বেদ পড়ে পড়ে ব্রহ্মা তার জীবন নষ্ট করলো ।
বেদ কতেব ইফতিরা ভাই,
দিল কা ফিকর ন জাই ।।
তিলংগ কবীরজী ১।১[ পৃ০ ১৮০ ]
অনুবাদঃ বেদ পুস্তক [ কতেব > কিতাব ] মিথ্যা । এগুলো নিয়ে ভাবা উচিৎ নয় ।
এখানে ইফতিরা অর্থ প্রসিদ্ধ শিখ বিদ্বান ভাই কাহনসিংহ তার ' মহাকোষ' এ করেছেন - (১) নিন্দা (২) তোহমত (৩) অতিশয়োক্তি , মুবালিগা (৪) ঝূঠ , অসত্য ।
সাধ কি মহিমা বেদ ন জানে
সুখমনী ৭৮
অনুবাদঃ সাধুর মাহাত্ম্য বেদ জানে না ।
নানক ব্রহ্ম জ্ঞানী আপ পরমেশ্বর
সুখমনী ৮৬
অনুবাদঃ নানক ব্রহ্ম, জ্ঞানী, আপ্ত, পরমেশ্বর ।
নানকের সংস্কৃত বিদ্যা -
পঢ় পুস্তক সন্ধ্যাবাদম্ । সিল পূজিস বগল সমাধম্ । মুখ ঝূঠ বিভূষণসারম্ । তৈপাল নিহাল বিচারম্ । গলমালা তিলক ললাটম্ । দোয় ধোতী বস্ত্র কপাটম্ । জো জানস ব্রহ্মকর্মম্ । সব ফোকট নিশ্চয় কর্মম্ । কহৈ নানক নিশ্চাধ্যাবৈ । বিন সতগুরু বাট ন পাবৈ ।
শ্লোক সহংস্কৃতি(?), মহল্লা ১
নানক ধারার ৫ম গুরু অর্জুনদেবজীর সংস্কৃত রচনা -
কতং চ মাতা কতং চ পিতা কতং চ বনিতা বিনীতঃ সুতঃ ।
কতং চ ভ্রাত মীত হি বান্ধব কতং চ মোহ কুটুম্ব তে ॥
কতং চ চপল মোহিনীরূপম্ নেসন্তং ত্যাগং করোতি ।
কতং চ সংগ ভগবান্ সিমরণ নানক লব্ধ অচ্যুতঃ ॥
শ্লোক সহংস্কৃতি (?) মহল্লা ৫
নানকের বিয়েতে ব্রহ্মার বেদ পাঠ -
আঠাইস হাজার দেবপত্নী সমেত ইন্দ্র , ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব নিজ শক্তিসহ বাবজীর [ নানক ] বিবাহ দেখতে এলো । লক্ষ্মী, পার্বতী , ইন্দ্রাণী, ব্রহ্মাণী হাতে পূজার সামগ্রী নিয়ে এলো ও গীত করতে লাগলো । ব্রহ্মা বেদ পাঠ করে স্তুতি করতে লাগলো । শিবজী মুকুট নিয়ে এলো । গণ-গন্ধর্ব মিলে মঙ্গলাচার করতে লাগলো । সনকাদি মিষ্টি নিয়ে এলো । সব দেবী-দেবতা জয়ধ্বনি করতে লাগলো । নয় নাথ, চুরাশী সিদ্ধ উপহার নিয়ে এলো ।
জনমসাখী ভাইবালা , পন্না ৪৭, ৪৮, সাখী ব্যাহ দী [ বিবাহ ] ও নানক প্রকাশ পূর্বার্দ্ধ অধ্যায় ২২
নানক নিয়ে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর অভিমত -
" নানকের অভিপ্রায় তো ভাল ছিল; কিন্তু তাঁহার বিদ্যা মোটেই ভাল ছিল না । "
অর্থাৎ নানক সমাজ থেকে যেসব কুসংস্কার দূর করতে চেয়েছিলেন তা উত্তম মহর্ষি মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন । কিন্তু প্রথমে যে তিনিই বেদ প্রশংসা করেছেন পরবর্তীতে তিনিই বিদ্যা ব্যতীতই বেদকে অবজ্ঞা করে দম্ভোক্তি করেছেন ।
এছাড়াও মহর্ষি নানককে যে এখন ঈশ্বর বলে পূজা করা হয় তার জন্য তার শিষ্যদেরই দায়ী করে বলেছেন যে নানক যা ভক্তি হিসেবে করেছিলেম তাই শ্রেয় ছিলো
" তাঁহার শিষ্যগণ,— তিনি ঈশ্বর হইয়াছেন মনে করিয়া কর্মোপাসনা ছাড়িয়া তাঁহার দিকে ঝুঁকিতে আরম্ভ করিলেন। ইহা অনর্থ সৃষ্টি করিল। নতুবা নানক ঈশ্বরভক্তি সম্বন্ধে যাহা কিছু লিখিয়াছিলেন, যদি তাঁহার শিষ্যগণ সে বিষয়ে তাঁহার অনুসরণ করিতেন, তাহা হইলে খুবই ভাল হইত।"
ইত্যোম্
0 মন্তব্য(গুলি)