https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে সায়ণের নিরুক্ত বিরোধী যম-নচিকেতার গল্প খণ্ডন

Tuesday, December 28, 2021


আমরা সকলেই জানি বেদে কোন লৌকিক ইতিহাস নেই । বেদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সকল গবেষকই এই সম্পর্কে অবগত । তবে সায়ণাচার্যের ভ্রান্ত ভাষ্যের অনুসরণকারীদের কমতি নেই । তারা শত প্রমাণ সত্ত্বেও এটি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন যে সায়ণ তার ভাষ্যে ভুল , অরূপসমৃদ্ধ বিনিয়োগ, কাল্পনিক ইতিহাস প্রদর্শন করেছেন । আজকে আমরা যম - নচিকেতার কঠোপনিষদের রূপক আখ্যানের বলপূর্বক ও ভ্রান্তভাবে পরিচালিত হয়ে সায়ণ দ্বারা একটি মন্ত্রে এর প্রয়োগ , খণ্ডন ও পরিশেষে সদর্থ দেখবো । 




যস্মিন্বৃক্ষে সুপলাশো দেবৈঃ সংপিবেত যমঃ।
অত্রা নো বিশপতিঃ পিতা পুরাণাং অনু বেনতি।। 
(ঋক০ ১০।১৩৫।১)


সায়ণ ভাষ্যঃ 

"বৃক্ষে । লুপ্তোপমমেতৎ । বৃক্ষবৎ সুপলাশে শোভনপলাশোপেতে শোভনোদ্যানসহিতে। যদ্বা। শোভনপর্ণোপেতে বৃক্ষে । তাদৃশস্য বৃক্ষস্য মূলং যথৌষ্ণ্যজনিতশ্রমাপনোদনেন সুখকরং ভবতি তদ্বৎ সুখকরে “যস্মিন্ স্থানে “দেবৈঃ পরিজনভূতৈঃ “যমঃ নিয়ন্তা বৈবস্বতঃ সংপিবতে সহ ভুঙ্ক্তে পিবতীত্যর্থঃ । “বিশ্পতিঃ বিশাং প্রজানামধিপতিঃ “পিতা “নঃ । ব্যত্যযেন বহুবচনম্। মম নচিকেতসো জনকো বাজশ্রবসঃ “অত্র অস্মিন্ যমস্য স্থানে “পুরাণান্ পুরাতনান্ অত্র চিরকালং নিবসতঃ পিতৄন্ অনু তেষাং পশ্চাৎ তৎসমীপে নিবসত্বয়মিতি “বেনতি মাং কাময়তে । নচিকেতা নাম কুমারো বাজশ্রবসেন পিত্রা যমলোকং প্রস্থাপিতঃ সন্ যমং দৃষ্ট্বা প্রসাদ্য পুনরপীমং লোকমাজগাম । অয়মর্থং ইদমাদিকৈর্মন্ত্রৈঃ প্রতিপাদ্যতে । যদ্বা । কুমারো নাম নচিকেতসোঽন্যঃ কশ্চিদৃষিঃ । যচ্ছতীতি যম আদিত্যঃ । তমনেন সূক্তেন তুষ্টাব । সুপলাশে বৃক্ষ ইব যস্মিন্ শোভনে স্থানে যম আদিত্যো দেবৈঃ। দীব্যন্তীতি দেবা রশ্ময়ঃ । তৈঃ সংপিবতে সংগচ্ছতে । উপসর্গবশাৎ পিবতিরত্র গত্যর্থঃ । ব্যত্যযেনা স্ন  স্থিতো বিশ্পতির্বিশাং প্রজানাং প্রকাশনপ্রবর্ষণাদিনা পালয়িত প্রাণাত্মনা সর্বেষাং জনকঃ স আদিত্যঃ পুরাণাংশ্চিরংতনান্ স্তোতৄন্ নোঽস্মানপি বেনতি অনুগ্রাহ্যত্বেন কাময়তে । যদ্বা । অত্র স্থানে স্থিতান্ নোঽস্মাকং পুরাণান্ পূর্বপুরুষাননু বেনতি অনুক্রমেণ কাময়তে।

সায়ণ ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদঃ 

চমৎকার পত্রদ্বারা শোভিত যে বৃক্ষের উপরে যমদেব দেবতাদিগের সঙ্গে একত্রে পান করেন, আমাদিগের নরপতি পিতা ইচ্ছা করিয়াছেন, যে আমি সেই বৃক্ষে যাইয়া পূর্বপুরুষদিগের সঙ্গী হই।




এই সুক্তের ঋষি 'কুমার' এবং দেবতা "যম"। সুতরাং এই সূক্তে নচিকেতার কথা আছে এরূপ সায়ণাচার্যের মত। যে বৃক্ষের নিচে দেব এবং পিতৃগণের সাথে বসে যম সোমরস পান করছেন সেখানে পুত্র নচিকেতাও গমন করুক, এরূপ গৌতম বাজশ্রবা ঋষির ইচ্ছা। কিন্তু সায়ণের এটি কল্পনা ব্যতীত আর কিছু নয় । 

কেননা নিরুক্তাকার যাস্ক এই মন্ত্রের ব্যাখ্যাতে যম নচিকেতার কোনো সংবাদ খুঁজে পাননি। আবার এখানে ' আমাদিগের' উল্লেখ আছে । নচিকেতার কাহিনীতে কেবল নচিকেতাই যমলোকে একাই গিয়েছিলো । দলবেঁধে নয় । অতঃ সায়ণের অর্থ যে বচন বিরুদ্ধ সেটিও প্রমাণিত । যাস্ক  এই মন্ত্রের ব্যাখ্যায় বলেছেন-

যস্মিন বৃক্ষে সুপলাশে স্থানে বৃতক্ষয়ে বা, অপি বোপমার্থে স্যাদ্ বৃক্ষ ইব সুপলাশে ইতি। বৃক্ষো ব্রশ্চানাৎ, পলাশং পলাশদনাৎ। দেবৈঃ সংগচ্ছতে যমো রশ্মিভিরাদিত্যঃ। তত্র নঃ সর্বস্য পাতা বা পালয়িতা বা পুরাণাননুকাময়েত।। (নিরুক্ত ১২।২৯)


অর্থাৎ - 

বৃক্ষ- বৃতক্ষয়ের সংক্ষিপ্তরূপ 'বৃক্ষ', যার অর্থ মুক্তাত্মাদের নিবাস স্থান দ্যুলোক। বৃক্ষ, কারণ তা ছেদন হয় (ছেদনার্থ বৃশ্চ ধাতুর সাথো 'স' প্রত্যয় যোগে),  'পলাশ' শব্দ 'পরা' পূর্বজ 'শদ্' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়, দ্যুলোকের বাচক। দেব = রশ্মি। সম্পিবতে = সংগচ্ছতে  এখানে 'সম্' পূর্বক 'পিব' ধাতু সংগমনার্থক মানা হয়েছে। 


যমের অর্থ এখানে সায়ংকালীন অস্তগত আদিত্য। নিঘণ্টু টীকাকার দেবরাজ যজ্বা 'যম' এর নির্বচন করে লিখেছেন- 

"সংগচ্ছতি রশ্মিভিরিতি অস্তময়াবস্থ আদিত্য উচ্যতে।" 



এখানে 'যম' ধাতু গমনার্থক মানা হয়েছে। অতএব উক্ত মন্ত্রের যথাযথ অর্থ এই প্রকার- 

(যস্মিন) যে কালে (যমঃ) অস্তগামী সূর্য (বৃক্ষে সুপলাশে) মুক্তাত্মাদের নিবাসস্থল দ্যুলোকে (দেবৈঃ সম্পিবতে) রশ্মিসমূহের সাথে সংগত হয়, অর্থাৎ ভূলোক এবং অন্তরিক্ষলোক থেকে রশ্মিজালকে একীভূত করে, (অত্র) সেই সময় (নঃ  বিশ্বপতিঃ পিতা) আমাদের প্রজাপালক পিতৃস্থানীয় আদিত্য (পুরাণান্ অনুবেনতি) প্রাচীন চন্দ্র নক্ষত্র আদি লোককে নিজের অস্ত হওয়ার পশ্চাৎ প্রকাশিত করার ইচ্ছা করেন।

 

অর্থাৎ, সূর্যাস্তের সময় সূর্য বা আদিত্য নিজ রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠ ও অন্তরীক্ষ হতে সরিয়ে কেন্দ্রীভূত করেন এবং কেবল দ্যুলোকে নিজের রশ্মি প্রকাশিত করেন। তার ফলে আমরা, ভূলোকে বসবাসকারী জীব চন্দ্র ও নক্ষত্রআদিকে দর্শন করতে পারি।