https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

' পুরাণ ' - বাল্যবিবাহের আঁতুড়ঘর

Saturday, January 8, 2022




বেদ ও বৈদিকশাস্ত্র বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করে। 
য়ুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান ভবতি জায়মানঃ । 
তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি স্বাধ্যো ৩ মনসা দেবয়ন্তঃ ॥ 
(ঋগ্বেদ ৩/ ৮/ ৪) 

অনুবাদঃ যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সু শিক্ষিত হইয়া , সুন্দর বস্ত্র পরিধান পূর্বক , ব্রহ্মচর্য্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হইয়া , বিদ্যাগ্রহণ করিয়া গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন , তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়া অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন । উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন । আর যে স্ত্রী পুরুষ , ব্রহ্মচর্য্য ধারণ , বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করিয়া বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তাহারা নষ্ট - ভ্রষ্ট হইয়া বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করেনা ॥
 
 



আ ধেনবাে ধুনয়ন্তামশিশ্বীঃ সবর্দুৰ্ঘাঃ শশয়া অপ্রদুগ্ধাঃ । 
নব্যানব্যা যুবতয়াে ভবন্তীর্মদ্দেবানামসুরত্বমেকম্ ৷৷ 
 (ঋ ০৩/৫৫/১৬)
অনুবাদঃ যে সকল গাভীর দুগ্ধ দোহন করা হয় নাই , সেই সকল গাভীর ন্যায় । যাঁহাদের বাল্যাবস্থা অতিক্রান্ত হইয়াছে, যাঁহারা সকল প্রকার সদাচার পালন করেন এবং যাঁহারা কুমারাবস্থা অতিক্রম করিয়াছেন , নবনব শিক্ষা ও অবস্থায় পরিপূর্ণ হইয়াছেন সেই পূর্ণযৌবনা স্ত্রীসকল ব্রহ্মচর্য্যের সুনিয়মে পূর্ণতাপ্রাপ্ত বিদ্বানদের অদ্বিতীয় , মহান্ প্রজ্ঞা শাস্ত্র শিক্ষাযুক্ত ও প্রজায় আনন্দভােগের তত্ত্ব প্রাপ্ত হইয়া তরুণ পতি লাভ করিয়া গর্ভধারণ করিবেন । 




কেননা তাহারা কখনও ভুলক্রমেও বাল্যাবস্থায় মনে মনেও পুরুষের চিন্তা করিবেন না । এইরূপ কাৰ্য্যই তাঁহাদের ইহলােক এবং পরলােকের সুখের সাধন । বাল্যবিবাহের দ্বারা পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীলােকেরই অধিক ক্ষতি হইয়া থাকে । 


পূর্বীরহং শরদঃ শশ্রমাণা দোষাবস্তোরুসসা জরয়ন্তীঃ । 
মিনাতি শ্রিয়ং জরিমা তনূনামপ্য নুপত্নীৰ্বৃষণাে জগদ্যুঃ | 
(ঋ ০১/১৭৯/১) 
অনুবাদঃ  যাহাতে শীঘ্র অত্যন্ত পরিশ্রমী, বীৰ্যসিঞ্চনে সমর্থ ও পূর্ণযৌবন সম্পন্ন পুরুষ যুবতী প্রাণপ্রিয় স্ত্রী লাভ করিয়া পূর্ণ শতবর্ষ বা ততােধিক আয়ু আনন্দের সহিত ভােগ করিতে এবং পুত্র পৌত্রাদির সহিত মিলিত থাকিতে পারে স্ত্রী - পুরুষ সর্বদা এইরূপ আচরণ করিবে । যেহেতু পূর্ববর্তী শরদ ঋতু সকল এবং বার্ধক্য আনয়নকারী উষাকাল , রাত্রি এবং দিন শরীরের শােভাকে , বল এবং সৌন্দর্যকে দূরীভূত করিয়া অতিশয় বার্ধক্য আনয়ন করে , আমি , স্ত্রী বা পুরুষ , উত্তমরূপে নিশ্চয় করিয়া , ব্রহ্মচর্য দ্বারা বিদ্যা , সুশিক্ষা , শারীরিক ও আত্মিক বল এবং যৌবন প্রাপ্ত হইয়া বিবাহ করিব ।
 
 



ইহার বিরুদ্ধ কাৰ্য্য বেদবিরুদ্ধ বলিয়া বিবাহ কখনও সুখের হয় না । যতদিন ঋষি মুনি এবং রাজা মহারাজা প্রভৃতি আৰ্যেরা ব্রহ্মচর্য দ্বারা বিদ্যাধ্যয়ন করিয়া স্বয়ম্বর বিবাহ করিতেন, ততদিন পর্যন্ত এদেশের সর্বদা উন্নতি হইতেছিল। যখন হইতে ব্রহ্মচর্য্য দ্বারা বিদ্যাধ্যয়ন রহিত হইল এবং বাল্যাবস্থায় পরাধীন অর্থাৎ মাতা পিতার অধীন বিবাহ হইতে লাগিল তখন হইতে আর্যাবর্ত দেশে ক্রমশঃ অকল্যাণ হইতে লাগিল । অতএব এই কুপ্রথা পরিত্যাগ করিয়া সজ্জনগণ পূর্বোক্ত রীতি অনুসারে স্বয়ম্বর বিবাহ করিবে । বিবাহবর্ণানুক্রম অনুসারে করিবে এবং বর্ণব্যবস্থাও গুণ - কর্ম - স্বভাব অনুসারে হওয়া উচিত ।

উপযুক্ত সময় অপেক্ষা কমবয়স্ক স্ত্রী পুরুষদের গর্ভাধান সম্বন্ধে মুনিবর ধন্বন্তরি সুশ্রুতে নিষেধ করিয়াছেন : 

ঊনষােড়শ বর্ষায়াম প্রাপ্তঃ পঞ্চবিংশতিম্ । 
অদ্যাধত্তে পুমান গর্ভং কুক্ষিস্থঃ স বিপদ্যতে।। 
জাতাে বা ন চিরঞ্জীবের জীবদ্বা দুৰ্ব্বলেন্দ্রিয় । 
তসমাদত্যন্তবালায়ং গর্ভধানং ন কারয়েৎ ॥
[সুশ্রুত /শরীরস্থান/ অধ্যায় ১০/ শ্লোক ৪৩ ] 

অর্থ - ষােল বৎসরের কম বয়স্কা স্ত্রীতে পঁচিশ বৎসরের কম বয়স্ক পুরুষ গর্ভাধান করিলে সেই কুক্ষিস্থ গর্ভ বিপন্ন হয় অর্থাৎ পূর্ণকাল পর্যন্ত গর্ভাশয়ে থাকিয়া উৎপন্ন হয় না।  অথবা উৎপন্ন হইলে ও দীর্ঘকাল পর্যন্ত থাকে না ; জীবিত থাকিলেও দুৰ্ব্বলেন্দ্রিয় হয় । এই জন্য অতি অল্প বয়স্কা স্ত্রীতে গর্ভ - স্থাপন করিবে না। 
 


ঈদৃশ শাস্ত্রোক্ত নিয়ম ও সৃষ্টিক্রম দেখিলে ও বুদ্ধির সহিত বিচার করিলে ইহাই সিদ্ধ হয় যে, ১৬ বৎসরের নূন্য বয়স্কা স্ত্রী এবং ২৫ বৎসরের নূন্য বয়স্ক পুরুষ কখনও গর্ভাধানের উপযুক্ত নহে । যাহারা এই সকল নিয়মের বিপরীত আচরণ করে , তাহাদের দুঃখভাগী হইতে হয়। 


সন্তুষ্টো ভার্য্যয়া ভর্তা ভর্ত্রা ভার্যা তথৈব চ ।
য়স্মিন্নেব কুলে নিত্যং কল্যাণং তত্র বৈ ধ্রুবম । 
মনুস্মৃতি ৩।৬০
অনুবাদঃ যে পরিবারে স্ত্রীর প্রতি পুরুষ ও পুরুষের প্রতি স্ত্রী সর্বদা প্রসন্ন থাকে, সেই পরিবারে আনন্দ, লক্ষ্মী এবং কীর্তি নিবাস করে। আর যেখানে বিরােধ ও কলহ হয় , সেখানে দুঃখ দারিদ্র্য ও নিন্দা নিবাস করে ।


 সুতরাং যেরূপ স্বয়ম্বর প্রথা আৰ্য্যাবর্তে পরস্পরাক্রমে প্রচলিত ছিল সেই বিবাহই উত্তম । স্ত্রী - পুরুষ বিবাহ করিতে ইচ্ছুক হইলে তাহাদের বিদ্যা , বিনয় , শীল , রূপ , আয়ু , বল , কুল এবং শরীরের পরিমাণাদি বিষয়ে যথাযােগ্য ভাবে অবহিত হওয়া উচিত । যে পৰ্য্যন্ত ইহাদের মিল না হইবে সে পর্যন্ত বিবাহে কোন সুখ হয় না এবং বাল্যকালে বিবাহেও সুখ হয় না । 



পক্ষান্তরে গৌণ তথাকথিত স্মৃতিসমূহ ও পুরাণে বেদ বিরোধী বাল্যবিবাহের বহুল সমর্থন বিদ্যমান । বর্তমানে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রসর ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা ও শ্রীমদ্ভাগবত , শ্রীমদভগবদগীতা, চৈতন্য চরিতামৃতের ভাষ্যকার শ্রীল প্রভুপাদ তার ভাগবত ৪।২৫।৪২ এর তাৎপর্যে বলেছেন - 

কৈশোর অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া মাত্রই, মেয়েরা যৌন বাসনার দ্বারা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়। তাই পিতার কর্তব্য হচ্ছে কৈশোর অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই কন্যার বিবাহ দেওয়া। 


হরিবংশ বিষ্ণুপর্ব ৫৯।৩৮ এ দেখা যায় বিবাহের সময় রুক্ষ্মিণীর বয়স ছিলো ১৬ বছর । 
 



কিন্তু পরবর্তীতে পুরাণসমূহে বাল্যবিবাহ সমর্থনের জন্য তারা বিকৃত করে একে ৮ বছর করা হয় । 

ততঃ সা কালপর্যায়াদষ্টবর্ষা ব্যজায়ত ।
পূর্বোক্তং চৈব তদ্বাক্যমশরীরিণ্যুদীরিতম্ ॥
স্মৃত্বা স্মৃত্বাথ নৃপতিশ্চিন্তয়ামাস ভূপতিঃ ।
কস্মৈ দেয়া ময়া বালা ভবিতা কশ্চতুর্ভুজঃ ॥
স্কন্দপুরাণ ৫।৩।১৪২।১৩-১৪
অনুবাদঃ 
তাঁহারা কন্যার রুক্ষ্মিণী নাম নির্দ্দেশ করিলেন।অনন্তর রুক্ষ্মিণী কালক্রমে অষ্টবর্ষে পদার্পণ করিলেন।এদিকে ভূপতি ভীষ্মকও পূর্ব্বজাত অশরীরিণী বাণীর স্মরণ করিয়া চিন্তিত হইলেন।ভূপতি ভাবিলেন, বালা কন্যা রুক্ষ্মিণীকে কাহার করে অর্পণ করিবে?




শ্রীমদ্ভাগবতেও সদ্য যৌবনে প্রবেশকারী [ উল্লেখ যুবতী নয় ] বলেই বর্ণিত হয়েছে - 

 
 
তাং দেবমায়ামিব ধীরমোহিনীং সুমধ্যমাং কুণ্ডলমণ্ডিতাননাম্
শ্যামাং নিতম্বার্পিতরত্নমেখলাং ব্যঞ্জৎস্তনীং কুন্তলশঙ্কিতেক্ষণাম্
শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৫৩।৫১

গৌড়ীয় ভাষ্যানুবাদঃ 
 
তৎকালে বিষ্ণুমায়ার ন্যায় তাঁহার দর্শনে ধীর ব্যক্তিগণেরও মোহ জন্মিয়াছিল, তাঁহার কটিদেশ ক্ষীণ, বদন কুণ্ডল-যুগল-মণ্ডিত, নিতম্বদেশ রত্নমেখলায় আবদ্ধ, স্তনযুগল প্রকাশমান, নেত্রযুগল কেশরাশি হইতে শঙ্কিত হইয়াই যেন চপলভাবগ্রস্ত, হাস্য বিশুদ্ধ, কুন্দকোরক সদৃশ শুভ্রদন্তরাজি, বিশ্ব ফলতুল্য অধরের শোভায় রক্তিম ভাবাপন্ন এবং গমন কলহংস সদৃশ ছিল। সমবেত যশস্বী বীরপুরুষগণ এই অজাতরজস্কা কন্যাকে শব্দায়মান সুশোভন নূপুর-কান্তি-শোভিত পদদ্বয়ে গমন করিতে দেখিয়া কামবেগে পীড়িত হইয়া মেহপ্রাপ্ত হইলেন। 




অজাতরজস্কা বলতে এখানে রজস্বলা হয়নি অর্থাৎ বালিকাই বুঝিয়েছে । 


গীতাপ্রেসের বাংলা অনুবাদঃ 

হে পরীক্ষিৎ! শ্রীরুক্মিণী শ্রীভগবানের মায়ার মতন বড় বড় ধীর-বীরদেরও মোহিত করতে সক্ষম ছিলেন। তাঁর সুন্দর ও ক্ষীণ কটিদেশের সৌন্দর্য ছিল অনুপম। তার বদনমণ্ডলে কর্ণকুণ্ডল যুগলের শোভা ছিল নয়নাভিরাম। কৈশোর-যৌবনের বয়ঃসন্ধি সুনিতম্বিনীর দেহে রত্ন খচিত চন্দ্রহারের সৌন্দর্য ছিল অপরূপ। বক্ষঃস্থলে ছিল যৌবনের অঙ্কুরোদগম। দোদুল্যমান অলকদাম হেতু তাঁর দৃষ্টি চঞ্চল হয়ে উঠছিল। 



' যৌবনের অঙ্কুরোদগম'  পদ দ্বারা অপ্রাপ্তবয়স্কই অভিপ্রেত তা সুস্পষ্ট । 


শ্রীল প্রভুপাদঃ 
 
ভগবানের মায়াশক্তির ন্যায় মোহিনীরূপে রুক্মিণী উপস্থিত হয়েছিলেন,যিনি বীর ও শান্ত মানুষদেরও মোহিত করেছিলেন।রাজারা এইভাবে তাঁর কুমারী-সৌন্দর্য, তাঁর সুগঠিত কোমর ও তাঁর কুণ্ডল শোভিত মনোরম মুখমণ্ডল অবলোকন করলেন।তাঁর নিতম্ব ছিল রত্নখচিত মেখলায় শোভিত, তাঁর স্তনদ্বয় ছিল সদ্য মুকুলিত, এবং তাঁর দুই চোখ যেন ছিল তাঁর কেশরাশিতে শঙ্কিত।তিনি মধুরভাবে হাসছিলেন, তাঁর কুন্দ-কোরকের মতো দন্তরাজি তাঁর বিম্বরক্তিম অধরের দীপ্তিকে প্রতিফলিত করছিল।তিনি যখন রাজহংসীর মতো গতিতে পাদচারণা করছিলেন তখন তাঁর শব্দায়মান নূপুরের প্রভা তাঁর পদযুগল শোভিত করছিল। তাঁকে দর্শন করে সমবেত বীরগণ সম্পূর্ণ মোহিত হয়েছিলেন।তাঁদের হৃদয় কামনায় বিদীর্ণ হচ্ছিল।





তাং দৃষ্ট্বা রাজরাজেন্দ্রো বালক্রীডারতাং পরাম্
বালাং সুশোভাং কুর্বন্তীং যথাঽভ্রেষু বিধোঃ কলাম্ ॥ ৮ ॥
শরৎপূর্ণেন্দুশোভাঢ্যাং শরৎকমললোচনাম্ ।
বিবাহয়োগ্যাং যুবতীং লজ্জানম্রাননাং শুভম্ ॥ ৯ ॥
সহসা চিন্তিতো ধর্মো ধর্মশীলশ্চ সুব্রতঃ ।
সুতাং পপ্রচ্ছ পুত্রাংশ্চ ব্রাহ্মণাংশ্চ পুরোহিতান্ ॥ ১০ ॥
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্ম খণ্ড ১০৫।৮-১০
অনুবাদঃ 
রাজাধিরাজ ভীষ্মক শোভাশালিনী বালা এবং বাল্যক্রীড়ায় আসক্তা কন্যাকে মেঘমধ্যগত চন্দ্রকলার ন্যায় দর্শন করিলেন শরৎকালীন পূর্ণশশধর সদৃশ শোভাশালিনী শরং কালীন কমল অপেক্ষ। উৎকৃষ্ট নয়না, লজ্জাহেতু নত বদনা, যৌবনারূঢ়া মনোহারিণী কন্যার বিবাহ দেওয়া উচিত বিবেচনায় ধৰ্ম্মশীল ধার্মিক সুব্রত রাজা সহসা চিন্তান্বিত হইয়া কন্যা, পুত্র, পুরোহিত এবং ব্রাহ্মণ গণকে জিজ্ঞাসা করলেন..





ততঃ কালী কথাং শ্রুত্বা নারদস্য মুখাত্তদা ।
লজ্জয়াধোমুখী ভূত্বা স্মিতবিস্তারিতাননা ॥
করেণ তাং তু সংস্পৃশ্য শ্রুত্বা তচ্চরিতং গিরিঃ ।
মূর্ধ্নি শশ্বত্তথাঘ্রায় স্বাস নান্তে ন্যবেশয়ৎ ॥

শিবপুরাণ রুদ্র সংহিতা পার্বতী খণ্ড ৮।৫১,৫২
অনুবাদঃ
On hearing the story from Narada, Parvati bent down her head in bashfulness but her smile heightened the beauty of her face. On hearing the story, the lord of mountains stroked her fondly, kissed her on the head and placed her on his seat.
 




কিমর্থমাগতা যূয়ং ব্রূতাগমনকারণম্॥
তদোচুঃ সপ্ত ঋষয়ো মহেশপ্রেরিতা বয়ম্॥ 
সমাগতাস্ত্বৎসকাশং কন্যায়াশ্চ বিলোকনে॥
তানস্মান্বিদ্ধি ভোঃ শৈল স্বাং কন্যাং দর্শয়াশু বৈ॥ 
তথেত্যুক্ত্বা ঋষিগণানানীতা তত্র পার্বতী॥
স্বোৎসংগে পরিগৃহ্যাশু গিরীন্দ্রঃ পুত্রবৎসলঃ॥

হিমবান্গিরিরাজোঽথ উবাচ প্রহসন্নিব॥
ইয়ং সুতা মদীয়া হি বাক্যং শ্রুণুত মে পুনঃ॥
তপস্বিনাং বরিষ্ঠঽসৌ বিরক্তো মদনাংতকঃ॥
কথমুদ্বহনার্থী চ যেনানংগঃ কৃত স্মরঃ॥
অত্যাসন্নেচাতিদূরে আঢ্যে ধনবিবর্জিতে॥
বৃত্তিহীনে চ মূর্খে চ কন্যাদানং ন শস্যতে॥ 
মূঢায় চ বিরক্তায় আত্মসংভাবিতায় চ॥
আতুরায় প্রমত্তায় কন্যাদানং ন কারয়েৎ॥ 
তস্মান্ময়া বিচার্যৈব ভবদ্ভির্ঋষিসত্তমাঃ॥
প্রদাতব্যা মহেশায় এতন্মে ব্রতমুত্তমম্॥
স্কন্দপুরাণ ১।১।২৩।৩-৯ 
অনুবাদঃ 
লোমশ কহিলেন, ইত্যবসরে মহেশ-প্রেরিত ঋষিগণ সহসা হিমালয়ের নিকট আগমন করিলেন। হিমালয় তাহাদিগকে আসিতে দেখিয়া সত্বর উত্থিত হইয়া নতশিরে প্রীতিপূর্ণ-মনে, তাহাদিগের অর্চ্চনা করিলেন এবং বলিলেন—আপনারা কিজন্য আসিয়াছেন?আপনাদের আগমন-কারণ ব্যক্ত করুন।তখন মহেশ-প্রেরিত সপ্তর্ষি বলিলেন,আমরা তোমার কন্যাদর্শনার্থ আগমন করিয়াছি। অতএব হে শৈলরাজ ! আমাদিগকে তোমার কন্যা প্রদর্শন কর। হিমালয় তৎশ্রবণে 'তথাস্থ’ বলিয়া স্বীয় কন্যা পাৰ্ব্বতীকে আনয়ন করিলেন। অনন্তর পুত্রবৎসল গিরিরাজ কন্যাকে স্বীয় উৎসঙ্গে ধারণ করিয়া হাসি হাসি মুখে কহিলেন,  ঋষিগণ! আমার বাক্য শ্রবণ করুন; এই আমার কন্যা দেখুন।তপস্বিগণের গরিষ্ঠ বিষয় বিরক্ত হর যিনি মদনকে ভস্মীভূত করিয়াছেন, তিনি কিরূপে আমার ক্যার 1 পাণিপীড়নার্থী হইতে পারেন?



কোলে বসানো তখনই সম্ভব যখন কিনা সে বালিকা বা শিশু হয় । স্কন্দ পুরাণে এই কথাটিকেই আরো স্পষ্ট করেছে ৮ বছর বয়স বলে নির্দেশ করে । 
 
বর্দ্ধমানা তদা সাধ্বী ররাজ প্রতিবাসরম্ ।
অষ্টবর্ষা যদা জাতা হিমালয়গৃহে সতী॥
স্কন্দ পুরাণ ১।১।২১।১ 
অনুবাদঃ
লোমশ কহিলেন, –সতী হিমালয়নন্দিনী  প্রতিদিন পিতৃগৃহে বৰ্দ্ধিত হইয়া বিরাজ করিতে লাগিলেন। যখন তিনি হিমালয়গৃহে অষ্টবর্ষ বয়স্কা হইলেন, তখন মহাদেব বীরভদ্রাদি গণাধ্যক্ষ সমুহে পরিবৃত হইয়া হিমগিরি-দ্রোণীতে অবস্থান পূর্ব্বক তপস্যা করিতেছিলেন।

ব্রহ্মোবাচ
বর্দ্ধমানা গিরেঃ পুত্রী সা শক্তি লোকপূজিতা ।
অষ্টবর্ষা যদা জাতা হিমালয়গৃহে সতী ॥
তজ্জন্ম গিরিশো জ্ঞাত্বা সতীবিরহকাতরঃ ।
কৃত্বা তামদ্ভুতামন্তর্মুমোদাতীব নারদ॥
শিবপুরাণ রুদ্র সংহিতা পার্বতী খণ্ড ৩।১১।১-২
অনুবাদঃ 
Brahma said:- O Narada, the daughter of the mountain, honoured in the three worlds, was brought up in the palace of Himacala. When she was eight years old, Siva distressed by Sati’s separation came to know of her birth. Keeping her wonderful memory within his heart He rejoiced much.

 

 
পুরাণে বাল্যবিবাহের নির্দেশ -


তাবদ্বিবাহয়েৎকন্যাং যাবন্নর্তুমতী ভবেৎ
বিবাহস্ত্বষ্টবর্ষায়াঃ কন্যায়াঃ শস্যতে বুধৈঃ।
পদ্মপুরাণ ৬।১১৮।৭
অনুবাদঃ 
কন্যা যে পর্যন্ত না ঋতুমতী হয়, সেই কাল মধ্যেই তাহাকে বিবাহ দিবে।অষ্টবর্ষীয়া কন্যার বিবাহই বুধগণের প্রশংসিত। 




কুমারীমষ্টবর্ষোয়াং সুবিপ্রয় দদাতি যঃ ।
সংপূজ্য সর্বাভরণাং দুর্গাদানফলং লভেৎ ॥
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ড ৭৬।৫২
অনুবাদঃ 
যে ব্যক্তি অষ্টমবর্ষীয়া কুমারীকে সর্ব্বাভরণে ভূষিতা করিয়া অর্চ্চনাপূর্বক সুব্রহ্মাণকে দান করে তাহার দুর্গাদানের ফল লাভ হয়। 




নিরংকুশা কৃতা গেহে তেন নষ্টা মহামতে
তাবদ্ধি ধারয়েৎকন্যাং গৃহে কান্তংবচঃ শৃণু ৫৭
অষ্টবর্ষান্বিতা যাবৎপ্রবলাং নৈব ধারয়েৎ
পিতুর্গেহস্থিতা পুত্রী যৎপাপং হি প্রকুর্বতী ৫৮

উভাভ্যামপি তৎপাপং পিতৃভ্যামপি বিংদতি
তস্মান্ন ধার্যতে কন্যা সমর্থা নিজমন্দিরে ৫৯
যস্য দত্তা ভবেৎসা চ তস্য গেহে প্রপোষয়েৎ
তত্রস্থা সাধয়েৎকান্তং সগুণং ভক্তিপূর্বকম্ ৬০
পদ্মপুরাণ ২।৪৭।৫৭ - ৬০
অনুবাদঃ 
হে কান্ত।শ্রবণ কর।অষ্টবর্ষ বয়স পর্যন্তই কন্যাকে গৃহে রাখিতে হয়।পরে প্রবলা হইলে তাহাকে আর স্বগৃহে রাখিতে নাই।পিতৃগৃহে থাকিয়া কন্যা যে পাপাচার করে,পিতামাতা উভয় হইতেই সে পাপ লাভ করিয়া থাকে। অতএব বয়স্কা কন্যাকে নিজ মন্দিরে রাখিতে নাই।কন্যা যাহার করে সম্প্রদান করা হয়,তাহার গৃহে থাকিয়াই পালিত হইবে। 





দশ বছর বয়সকেও বিবাহযোগ্য বয়স বলে পুরাণে কথিত হয়েছে - 

বিবাহোঽস্তি সুতায়া মে নাস্তি বিত্তং করোমি কিম্ ।
দশবর্ষাধিকায়াস্তু দানকালোঽপি যাত্যলম্ ॥
দেবীভাগবত ৩।২৭।৪০ 
অনুবাদঃ 
আমার তনয়ার বিবাহকাল উপস্থিত, ধন নাই আমি কি করি, হায়! তাহার বয়ঃক্রম দশ বৎসরেরও অধিক হইল, তাহার সম্প্রদান কাল গত হইয়া যাইতেছে। 




ইন্দোঃ কলেব চাত্যর্থং ববৃধে সা দিনেদিনে ।
দশবর্ষা যদা জাতা কন্যা চাতিমনোহরা ॥
বরার্থং নৃপতিশ্চিন্তামবাপ চ দিনেদিনে ।
মদ্রদেশাধিপঃ শূরঃ সুধন্বা নাম পার্থিবঃ ॥
দেবীভাগবত ৫।১৭।৯-১০ 
অনুবাদঃ 
সেই কন্যা ইন্দুকলার ন্যায় দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। যখন কন্যার বয়স দশ বৎসর পূর্ণ হইল, তখন সেই কন্যা অতিশয় মনোহারিণী হইয়া উঠিল । নরপতি কন্যাকে দর্শন করিয়া তাহার বরের নিমিত্ত প্রতিদিন চিন্তা করিতে লাগিলেন। 
 
 




দ্বাদশ অর্থাৎ ১২ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার উল্লেখও পুরাণে পাওয়া যায় - 

 
তাং রূপলক্ষণোপেতাং বালাং দ্বাদশহায়নাম্ ॥
যয়াচে পদ্মনাভাখ্যো মৃতদারশ্চ স দ্বিজঃ ॥ ৪ ॥
স্কন্দপুরাণ ৩।৩।১৮।৪
অনুবাদঃ 
...দ্বাদশ-বর্ষদেশীয়া বালিকাকে পত্নীত্বে প্রার্থনা করেন। কন্ঠার পিতা সেই মহাধন শান্ত রাজসথ দ্বিজের প্রার্থনা ভঙ্গ করা যুক্তিসঙ্গত নয় বিবেচনা করিয়া কন্যাটি তাঁহাকে দান করিলেন।





এমনকি ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ছায়া রাধারও ১২ বছরে বিয়েরই উল্লেখ পাওয়া যায় -

রাধা জগাম বারাহে গোকুলং ভারতং সতী ।
বৃষভানোশ্চ বৈশ্যস্য সা চ কন্যা বভূব হ ॥
অয়োনিসম্ভবা দেবী বায়ুগর্ভা কলাবতী ।
সুষুবে মায়যা বায়ুং সা তত্রাবির্বভূব হ ॥
অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্ট্বা তাং নবয়ৌবনাম্ ।
সার্ধং রায়াণবৈশ্যেন তৎসম্বন্ধং চকার সঃ ॥
ছায়াং সংস্থাপ্য তদ্গেহে সাঽন্তর্দ্ধানমবাপ হ ।
বভূব তস্য বৈশ্যস্য বিবাহশ্ছায়যা সহ ॥
গতে চতুর্দশাব্দে তু কংসভীতেশ্ছলেন চ ।
জগাম গোকুলং কৃষ্ণঃ শিশুরূপী জগৎপতিঃ ॥
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ৪৯।৩৬-৪০
অনুবাদঃ 
দ্বাদশ বৎসর অতীত হইলে, বৃষভানু , রায়াণ-বৈশ্যের সহত নবযৌবনা নিজ কন্যার বিবাহ সম্বন্ধ করে। 






পৌরাণিকদের মধ্যে সুবিধাবাদী প্রক্ষেপদাবিকারীদের এক্ষণে এটাও জানা উচিৎ যে বর্তমানে পরম্পরাবাদীদের তথাকথিত গৌণ স্মৃতিসমূহেও বেদ বিরুদ্ধ এহেন বাল্যবিবাহের আজ্ঞা উপস্থিত - 


  • সংবর্ত সংহিতা ৬।৬৮-৬৮
অনুবাদঃ 
অষ্টমবৎসরবয়স্কা অবিবাহিতা কন্যা গৌরী, নবমবর্ষবয়স্কা রোহিণী, এবং দশমবর্যবয়স্কা কন্যকা নামে খ্যাত; একাদশ বৎসর কন্যার বয়ঃক্রম হইলে রজস্বলা বলিয়া খ্যাত হয়। কন্যা রজস্বলা হইলে অর্থাৎ কন্যার একাদশবর্ষে বিবাহ না হইলে, মাতা, পিতা, এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এই তিন জন নরকে গমন করে। সেই হেতু যে পর্যন্ত কন্যা ঋতুমতী না হয়, তাহার মধ্যে কন্যার বিবাহ প্রশস্ত জানিবে। 
 
 
 
 
  • পরাশর সংহিতা ৭।৬-৯ 
অনুবাদঃ 
অষ্টমবর্ষীয়া কন্যাকে গৌরী, নবমবর্ষীয়াকে রোহিণী এবং দশম বর্ষীয়াকে কন্যা বলা যায়।দশম বর্ষের পর কন্যাকে রজস্বলা বলা যায়।কন্যার দ্বাদশ বৎসর বয়ঃক্রম হইলেও যদি কন্যা সম্প্ৰদত্তা না হয়,তবে তাহার পিতৃগণ মাসে মসে তাহার ঋতুশোণিত পান করিয়া থাকে। কন্যাকে (অবিবাহিতাবস্থায় )  রজস্বলা হইতে দেখিলে তাহার মাতা পিতা ও জ্যেষ্ঠভ্রাতা তিনজনেই নরকগামী হয়। যে ব্রাহ্মণ অজ্ঞানমুগ্ধ হইয়া ঐ কন্যাকে বিবাহ করেন, তিনি শূদ্রাপতিসদৃশ। তাহার সহিত কেহ এক পঙ্ক্তিতে ভোজন এবং সম্ভাষণও করিবে না। 







  • যমসংহিতা ২২-২৪ 
অনুবাদঃ 
যে ব্যক্তি দ্বাদশবর্ষ বয়ঃক্রম হইতেছে দেখিয়াও কন্যা অর্পণ না করে, ঐ পিতা, সেই কন্যার মাসে মাসে যে রজ হয়, সেই রক্তপান করিয়া থাকে অর্থাৎ তত্তুল্য পাপী হয়।মাতা পিতা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কন্যা বা ভগিনীকে বিবাহ হইবার পূর্ব্বে রজস্বলা (একাদশবর্ষবয়স্কা ) হইতে দেখিলে, তাহারা তিনজনেই নরকে গমন করে। যে ব্রাহ্মণ মদমোহিত হইয়া সেই রজস্বলা কন্যাকে বিবাহ করে, সেই বৃষলীপতি ব্রাহ্মণের সহিত সম্ভাষণ ও পংক্তিভোজন নিষিদ্ধ । 
 
 

  • বিষ্ণু সংহিতা ২৪।৪০-৪১
অনুবাদঃ 
তিনবার ঋতুদর্শন-পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিয়া কন্যা স্বয়ংবর করিবে। কেননা তিনবার ঋতু দর্শন, হইয়া গেলে কন্যা আপনার উপর প্রভুত্বসম্পন্ন হয়। যে কন্যা অবিবাহিতা-অবস্থায় পিতৃগৃহে রজো দর্শন করে, সেই কন্যা বৃষলী বলিয়া জ্ঞাতব্যা। তাহাকে হরণ করিলে দোষী হইতে হয় না। 






অর্থাৎ নারী তখন নিজে বর যেমন পছন্দ করতে পারবে কিন্তু সে বৃষলী বলে গণ্য হবে । তাকে হরণ [ সোজা কথায় তার সাথে যা ইচ্ছা করা ] করলেও দোষ হবে না । 

কি সুন্দর বিধান !  




  • গৌতম সংহিতা ১৮।২১
অনুবাদঃ 
ঋতু দর্শনের পূর্ব্বেই কন্যা দান করিবে। ঋতুদর্শনের পূর্ব্বে কন্যাদান না করিলে কন্যার অভিভাবক পাপী হইবে। কেহ কেহ বলেন, 'কন্যা নগ্নিকা অবস্থায় অর্থাৎ ঋতুমতী হইবার পূর্ব্বেই উহাকে প্রদান করিবে। 



  • ব্যাসসংহিতা ২।৭-৮
অনুবাদঃ 
যদ্যপি কন্যা দাতার অনবধানতা ! বশতঃ অবিবাহিতাবস্থায় ঋতুমতী হয়, তাহা হইলে ভ্রূণহত্যার পাতক হয়। ঋতুকালের পূর্ব্বে যে ব্যক্তি কন্যাদান না করে, সে পতিত হয়।





অতঃ সামগ্রিকভাবে পুরাণ ও তথাকথিত স্মৃতিসমূহের এই প্রকার বাক্যসমূহ পরিত্যাগ করা উচিৎ ।