বৈদিক শাস্ত্রে অর্থাৎ প্রধানতঃ বেদে পৃথিবী সূর্যেযে চারিদিকে কোন অবলম্বন ছাড়াই প্রদক্ষিণ করে বলে বর্ণিত রয়েছে । [ https://www.agniveerbangla.org/2018/10/gravity.html?m=1আধুনিক বিজ্ঞানও এই বিষয়টি প্রমাণ করেছে । যদিও মায়াবাদীগণ উক্ত অর্থ স্বীকার করে না এবং স্বীয়
বেদভাষ্যে পৃথিবীকে অচল বলে সূর্যেরই আবর্তন স্বীকার করে [ পড়ুন এখানে - http://back2thevedas.blogspot.com/2021/04/blog-post_19.html?m=1 ] ।
পৌরাণিক শাস্ত্রে মূখ্যতঃ পৃথিবী চারটি হাতির পিঠে ধারণকৃত বলে বর্ণিত আছে । প্রারম্ভিক সময়ে মহাভারত ও রামায়ণে প্রক্ষেপকারীগণ একটি হাতি বললেও পরবর্তীতে তার সংখ্যা হয়ে যায় চারটি কেননা সমতল পৃথিবী হলে ৪টিই ধারক প্রয়োজন । কিন্তু ভিন্নসূত্রে যদিও শেষনাগের কথাও পাওয়া যায় তবে ভাগবত অনুযায়ী তার সহস্র ফণাতেই সহস্র ব্রহ্মাণ্ড ধারণ করেছে ।
পুরাণের বিশেষতঃ ভাগবতের এসব উক্তিকে রূপক বা আধ্যাত্মিক বা হস্তি মূলতঃ চারদিক ইত্যাদি বলে দাবি করার প্রবণতা মিথ্যাচারী পৌরাণিকদের পুরাতন স্বভাব । আমরা তাই একাধিক পুরাণ , টীকা ও প্রামাণিক ভাষ্য ব্যবহার করবো তাদের মিথ্যাচার রুখে দেওয়ার জন্য ।
- বাল্মীকি রামায়ণ ১।৪০।১৩-১৪
অনন্তর পুনরায় পৃথিবীকে খনন করতে করতে সগরসন্তানেরা বিরূপাক্ষ নামক পর্বতাকার এক দিগহস্তীকে দেখতে পেলেন, যে পৃথিবীকে (স্বীয় মস্তকে) ধারণ করে আছে।
রঘুনন্দন রাম! সেই মহান হস্তী বিরূপাক্ষ পর্বত ও অরণ্যসহ সমগ্র পৃথিবীকে স্বীয় মস্তকে ধারণ করেছিল।
- শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২০। ৩৯
গৌড়ীয় ভাষ্যঃ
অনুবাদ – এই লোকালোক-পর্ব্বতের উপরিভাগে চতুর্দিকে জগদ্গুরু ব্রহ্মাকর্তৃক স্থাপিত চারিটী গজ পতি রহিয়াছে ৷ ঐ গজপতি-চতুষ্টয়ের নাম— ঋষভ, পুষ্করচুড়, বামন ও অপরাজিত ইহারাই ; সকল-লোকস্থিতির মূল ৷৷ ৩৯ ৷৷
লোকালোক পর্বতের উপরে চারটি গজপতি জগদ্গুরু ব্রহ্মা কর্তৃক স্থাপিত হয়েছে। তাদের নাম ঋষভ, পুষ্করচূড়, বামন এবং অপরাজিত। তারা ব্রহ্মাণ্ডের এই সমস্ত লোক ধারণ করেন।
জগদ্গুরু স্বয়ম্ভু ব্রহ্মা সকল লোকের স্থিতির জন্য ঋষভ,পুষ্করচূড়, বামন এবং অপরাজিত নামে চারটি গজরাজকে স্থাপন করেছেন। ৩৯ ॥
- দেবীভাগবত ৮।১৪।১০-১১
অনুবাদঃ
ইহার উপরি চতুর্দিকে আত্মযোনি ব্রহ্ম। যে সকল দিগ্গজ সন্নিবেশিত করিয়াছেন, তাহাদের নাম সকল শ্রবণ কর। ঋষত, পুষ্পচূড় বামন ও অপরাজিত । এই গজচতুষ্টয় সমস্ত লোকের স্থিতিবিধান করিতেছে ।
কিছু স্থলে আবার জগতের স্থিতি শেষনাগের শীষে বলেও বর্ণিত আছে । অর্থাৎ পৌরাণিকগণ নিজেরাই স্ববিরোধী ।
মহাভারত অনুশাসন০ ২০১।১২-১৩
অনুবাদঃ
মার্কণ্ডেয় কহিলেন, মহারাজ! শ্রবণ করুন। সমুদায় চরাচর প্রলয়পয়োধিজলে বিলীন হইলে সৰ্ব্বলোকেশ্বর ভগবান্ বিষ্ণু সলিলরাশিমধ্যে শেষভুজঙ্গযোগে শয়নপূর্ব্বক যোগনিদ্রায় নিদ্রিতহইয়া ছিলেন। তৎকালে এই ভূমণ্ডল তাঁহার শয়নভূত ভুজঙ্গভোগে সংসক্ত ছিল।
আদিপর্বে আবার ব্রহ্মার বরে শেষনাগ এই পৃথিবী মাথায় ধারণ করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন বলা আছে । একই মহাভারতেই দুইরকম কথা । স্পষ্টতঃই মূর্খ
পৌরাণিকদের প্রক্ষেপ ।
মহাভারত আদি০ ৩৬।১৭-২৫
অনুবাদঃ শেষ কহিলেন, হে সৰ্ব্বলোকপিতামহ! আমি এই বর প্রার্থনা করি যেন ধর্ম্মে, শমগুণে ও তপস্যায় আমার অচলাভক্তি থাকে। ব্রহ্মা কহিলেন, বৎস! আমি তোমার শম ও দম দেখিয়া সাতিশয় সন্তুষ্ট হইলাম, কিন্তু হে বৎস! তোমাকে এই সর্ব্বলোক-হিতকর কার্য্যটি সম্পাদন করিতে হইবে। পৰ্ব্বতকাননাদি-সমবেত এই ধরণীমণ্ডলকে তোমায় এইরূপে ধারণ করিতে হইবে, যেন উহা আর বিচলিত না হইতে পারে। শেষ কহিলেন, হে বরদ প্রজাপতে! হে ধরানাথ! হে ভূতনাথ! হে জগন্নাথ! আপনি যেরূপে আজ্ঞা করিতেছেন, আমি ঐরূপে মহীধারণ করিব; কিন্তু আপনি পৃথিবীকে আমার মস্তকোপরি স্থাপন করুন। ব্রহ্মা কহিলেন, হে ভুজঙ্গোত্তম! পৃথিবী স্বয়ং তোমাকে পথ প্রদান করিবেন, তুমি সেই পথ দিয়া ধরিত্রীর অধোভাগে গমনপূর্ব্বক ইঁহাকে ধারণ কর, তাহা হইলেই আমার পরম প্রীতিকর কার্য্য করা হইবে।
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, ভুজঙ্গমাগ্রজ শেষ “যে আজ্ঞা” বলিয়া পৃথিবীদত্ত বিবরদ্বারা রসাতলে প্রবেশপূর্ব্বক সসাগরা বসুন্ধরাকে মস্তকোপরি ধারণ করিলেন। এইরূপে মহাব্রতশালী ভগবান্ অনন্ত ব্রহ্মার নির্দেশানুসারে একাকী ধরা ধারণ করিয়া পাতালতলে বাস করিতে লাগিলেন। সব্বামরোত্তম ভগবান্ পিতামহ, খগবর বিনতানন্দনকে অনন্তদেবের সখা করিয়া দিলেন।
শ্রীমদ্ভাগবতে আবার অনন্ত বা শেষ নাগের ফণার উপরই আছে বলে স্পষ্ট বর্ণনা আছে ।
- শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২৫।২
অনুবাদঃ ক্ষিতিমণ্ডল ঐ সহস্ৰশীর্ষ অনন্তমূৰ্ত্তি ভগবান্ সঙ্কর্ষণের একমাত্র ফণায় ধৃত হইয়া সর্ষপের ন্যায় লক্ষিত হইতেছে ৷৷ ২ ৷৷ [ গৌড়ীয় ভাষ্য ]
শ্রীল প্রভুপাদ তার শ্রীমদ্ভাগবত ৫।১৭।২১ এর তাৎপর্যে বলেছেন -
শেষ বা অনন্ত নামক ভগবানের অবতার অনন্ত শক্তি, যশ, ঐশ্বর্য, জ্ঞান, সৌন্দর্য এবং বৈরাগ্য সমন্বিত। এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, অনন্তের শক্তি এমনই অসীম যে, তাঁর ফণায় অনন্ত ব্রহ্মাও বিরাজ করছে। তাঁর রূপ সহস্র সহস্র ফণা সমন্বিত একটি সর্পের মতো, এবং যেহেতু তাঁর শক্তি অনন্ত, তাই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডগুলিকে তাঁর কাছে নগণ্য সরষের দানার মতো হাল্কা বলে মনে হয়। একটি সাপের মাথার উপর একটি সরষের দানা যে কত নগণ্য, তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। এই প্রসঙ্গে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের আদি লীলার পঞ্চম অধ্যায়ের ১১৭-১২৫ শ্লোক দ্রষ্টব্য। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, অনন্তশেষ নাগরূপে ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার সমস্ত ব্রহ্মাগুগুলিকে তাঁর ফণার উপর ধারণ করে রয়েছেন। আমাদের গণনা অনুসারে, এক-একটি ব্রহ্মাও অত্যন্ত ভারী হতে পারে, কিন্তু ভগবান অনন্ত হওয়ার ফলে, তাঁর কাছে এক একটি ব্রহ্মাণ্ড সরষের দানা থেকে ভারী নয়।
0 মন্তব্য(গুলি)