https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শতপথ ব্রাহ্মণে অশ্বমেধ - বিবেকানন্দ সমর্থিত অশ্লীলতা ও সদর্থ

Friday, March 4, 2022


সম্প্রতি শতপথ ব্রাহ্মণকে বেদ মর্যাদা দিয়ে একে ঈশ্বরীয় বাণী দাবি করা কিছু মহামূর্খ আবির্ভূত হয়েছে । যেখানে ব্রাহ্মণগ্রন্থ নিজেরাই নিজেদের বেদ বলেনি সেখানে পূর্ব মীমাংসার প্রমাণে স্বীকৃত পৌরুষেয় কল্পসূত্র বাক্য তাদের নিকট পরমপ্রমাণ । মহাভাষ্যের ঔপচারিক তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম এই প্রাণীদের ইতোপূর্বে ব্রাহ্মণের সায়ণভাষ্য দিয়ে লেখা কোন আর্টিকেলই সদুত্তর দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্ধবিশ্বাসীদের নিকটা সায়ণের গুণগান করতে ব্যস্ত । অথচ সায়ণাচার্য শতপথ ব্রাহ্মণের ত্রয়োদশ কাণ্ডের ভাষ্যই করেননি । 

এমনকি পাণ্ডুলিপিও উপলব্ধ নয় । পাশাপাশি শতপথ ব্রাহ্মণে যেখানে কিনা ইতিহাস, মতবিরোধ আলোচনা , এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বেদ বিরুদ্ধ বচনও রয়েছে তাকেও ' ঈশ্বরের বাণী ' বলতে উদগ্রীব । তাদের জন্য আজ আমরা এক শরে দুই বরাহ শিকারের ন্যায় ভাষ্যকার দ্বারাও অশ্লীলতা সমর্থন ও শতপথ ব্রাহ্মণে অশ্লীলতা - পরস্পরবিরোধীতা প্রদর্শন করবো ৷ আমরা জানি এসব যুক্তি ও প্রমাণ কোন অকেজো মস্তিষ্কে প্রবেশ করবে না তবে সাধারণ সনাতনীগণ পথ নিজেরাই খুঁজে নেবেন ৷ আমরা শতপথ ব্রাহ্মণের সেই অংশ হরি স্বামীর ভাষ্যসহই অনুবাদ উল্লেখ করছি -


এতেঽউক্ত্বা যদধ্রিগোঃ পরিশিষ্টং ভবতি তদাহ বাসোঽধিবাসং হিরণ্যমিত্যশ্বায়োপস্তৃণন্তি তস্মিন্নেনমধি সংজ্ঞপয়ন্তি সংজ্ঞপ্তেষু পশুষু পত্ন্যঃ পান্নেজনৈরুদায়ন্তি চতস্রশ্চ জায়াঃ কুমারী পঞ্চমী চত্বারি চ শতান্যনুচরীণাম্ - ১৩.৫.২.১



হরিস্বামীভাষ্যঃ এতে উক্ত্বা । ' উপ প্রাগাৎ ' ইত্যেতে উক্ত্বা অধ্রিগো শমীধ্বমিত্যেতদাহ । 




নিষ্ঠিতেষু পান্নেজনেষু মহিষীমশ্বায়োপনিপাদয়ন্ত্যথৈনাবধিবাসেন সম্প্রোর্ণুবন্তি স্বর্গে লোকে প্রোর্ণুবাথামিত্যেষ বৈ স্বর্গো লোকো যত্র পশুং সংজ্ঞপয়ন্তি নিরায়ত্যাশ্বস্য শিশ্নং মহিষ্যুপস্থে নিধত্তে বৃষা বাজী রেতোধা রেতো দধাত্বিতি মিথুনস্যৈব সর্বত্বায় - ১৩.৫.২.২




হরিস্বামীভাষ্যঃ নিরায়ত্য বহিরায়ম্যাকৃষ্য অশ্বস্য শিশ্নং মহিষী আত্মনঃ উপস্থে স্ত্রীপ্রজননে প্রদেশে স্থাপয়তি । 



তয়োঃ শয়ানয়োঃ অশ্বং যজমানোঽভিমেথত্যুৎসক্থ্যা অব গুদং ধেহীতি তং ন কশ্চন প্রত্যভিমেথতি নেদ্যজমানং প্রতিপ্রতিঃ কশ্চিদসদিতি - ১৩.৫.২.৩



হরিস্বামীভাষ্যঃ নিরায়ত্য বহিরায়ম্যাকৃষ্য অশ্বস্য শিশ্নং মহিষী আত্মনঃ উপস্থে স্ত্রীপ্রজননে প্রদেশে স্থাপয়তি । 




সুধী, দেখুন কিভাবে বেদমন্ত্রের জঘন্যতম প্রয়োগ দেখানে দেখানো হয়েছে । এরপরেও যারা এসবকে বেদবাক্য বা ঈশ্বরীয় বাণী বলে তাদের সম্পর্কে কি ভলা উচিৎ আপনারাই ঠিক করে ভাবুন । সর্বপ্রথম মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী শতপথেই অন্যত্র স্থিত সদর্থ দ্বারা এর সমাধান করেছেন । মহীধরভাষ্য খণ্ডনসহ পড়তে ক্লিক করুন এখানে - http://back2thevedas.blogspot.com/2018/01/blog-post_27.html

আগ্রহোদ্দীপক বিষয় হলো এই ব্রাহ্মণের পূর্বেই অত্যন্ত শ্লীল অর্থ ও রাজধর্ম বিষয়ক জ্ঞান অন্য ব্রাহ্মণে দেওয়া হয়েছে । দূর্গাদাস লাহিড়ী এখানে আধ্যাত্মিক অর্থ করেছেন । মজার বিষয় মহীধর-উবট পরম্পরাবাদী যারা বলে শতপথ ব্রাহ্মণও বেদ কেননা এখানের বিধি ঈশ্বরোক্ত তাদের সেই অর্থই লাহিড়ী মশাই সম্পূর্ণ অশ্লীল বলে নিজেই স্বীকার করেছেন । কি বিচিত্র । যারা কিনা এতো বিনিয়োগ আর পরম্পরার ধ্বজা নিতে চলে তারাই কিনা মুখ লুকোলো সম্পূর্ণ বিনিয়োগ বিরোধী কপোকল্পিত নব্য ভাষ্যকারের ধুতির নিচে ! করুণা হয় বটে । 

যাদের এই মন্ত্রসমূহের বা ব্রাহ্মণের সায়ণভাষ্য নেই এই যুক্তি দেবেন ভেবে মনে মনে অতি আহ্লাদিত হচ্ছেন তাদের জন্য সমবেদনা । কেননা এই একই মন্ত্রসমূহ তৈত্তিরীয় সংহিতা ৭।৪।১৯ এ বিদ্যমান৷ সেখানে সায়ণ ভাষ্যে বলা হয়েছে - 

হেঽশ্ব যস্ত্বং যা চাহং মহিষী তাবাভামুভৌ... রেতো ধারয়তু । 

কল্পঃ ' উৎসক্থ্যোর্গৃদং ধেহীতি প্রজননেন প্রজননং সেংনিধায়' ইতি । 
অর্থাৎ এখানে কল্পসূত্রে প্রমাণ দিয়ে বলা হয়েছে [ অশ্বের প্রজনন অঙ্গকে স্বীয় [ মহিষীর ] প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে হবে । 


ভট্টভাস্কর তার ভাষ্যে বলেছেন - 

মহিষ্যা উপস্থে শেফমাধত্তে - আঽহমজানীত্যনুষ্টুভা ।
অর্থাৎ মহিষী তার উপস্থে শেফ [ শিশ্ন ] ধারণ করবে । 


শতপথ ব্রাহ্মণ প্রবচনকার নিশ্চয়ই এতোটা মূর্খ নন যে পূর্বে সদর্থ করে পরবর্তীতে এহেন জঘন্য অশ্লীলতম অর্থ করবেন । তবে এর প্রকৃত তাৎপর্য কি ? 

যদিও অনেকের মতে কলির সপ্তর্ষির একজন, স্বয়ং শিব ইত্যাদি খ্যাত স্বামী বিবেকানন্দ পূর্বসূরীদের ন্যায়ই মন্তব্য করেছেন - 

বৈদিক অশ্বমেধ যজ্ঞের ব্যাপার স্মরণ কর—‘তদনন্তরং মহিষীং অশ্ব-সন্নিধৌ পাতয়েৎ’ ইত্যাদি! আর হোতা পোতা ব্রহ্মা উদ্গাতা প্রভৃতিরা বেডোল মাতাল হয়ে কেলেঙ্কারী করত। বাবা, জানকী বনে গিয়েছিলেন, রাম একা অশ্বমেধ করলেন—শুনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেম বাবা! এ-কথা সমস্ত ব্রাহ্মণেই আছে—সমস্ত টীকাকার স্বীকার করেছেন। না করবার যো-টি কি!

স্বামী বিবেকানন্দ রচনাবলী » ০৭ম খণ্ড » ০১. পত্রাবলী (পুনরাবৃত্তি) (১১৫-৩৭৪) » ০৫. পত্রাবলী ১৫৫-১৬৪। ১৫৯ নং পত্র । স্বামী ব্রহ্মানন্দকে লিখিত ।


ব্রাহ্মণে কিংবা শ্রৌতে থাকা মানেই তা সম্পূর্ণ সঠিক হয়তো এই বিষয়টি তার মাথায় আধুনিক স্বঘোষিত মহামূর্খ ফিলোসফারদের ন্যায় ছিলো না৷ কিন্তু মদীয় আচার্য মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসক স্বীয় ' ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা 'র শতাব্দী সংস্করণে টীকায় বলেছেন - 

মহীধর যেমন অশ্লীল অর্থ করেছেন তা শতপথেও পাওয়া যায় । তাহলে গ্রন্থকার মহীধরের অর্থই কেন খণ্ডন করলেন ?...  শতপথে উক্ত অশ্লীল অর্থ  "যদধ্রিগোঃ পরিশিষ্টং ভবতি " নির্দেশ করে লেখা হয়েছে । ' পরিশিষ্ট ' শব্দ দ্বারাই স্পষ্ট হয় যে এটি শতপথে পরবর্তী কালের সংযোজন । অন্যথা শতপথকার পূর্বে উত্তম অর্থ প্রদর্শনই করতেন না বরং এই অশ্লীল অর্থই যথাবৎ রেখে দিতেন । এতে স্পষ্ট যে মহীধর পরিশিষ্ট শব্দ ও পুনরুক্তির দিকে লক্ষ্য না রেখে সাধ্বর্থ উপেক্ষা করে অশ্লীলার্থ স্বীকার করেছে । এজন্যই গ্রন্থকার মহীধরভাষ্যেরই সমালোচনা করেছেন, শতপথের নয় কেননা তাতে এই প্রক্ষেপ সংকেত স্পষ্ট । কাত্যায়নাদি শ্রৌতসূত্রেও এই অশ্লীল অর্থের প্রতি সংকেত বিদ্যমান । এতে প্রতীত হয় তার রচনা শতপথের উক্ত অংশ প্রক্ষেপের পশ্চাতে হয়েছে কিংবা শতপথের সাধ্বর্থ দ্যোতক এই শ্রৌত থেকে নিষ্কাশিত করে অশ্লীলার্থপরক বিনিয়োগ যুক্ত করা হয়েছে । 




অতঃ তথাকথিত পরম্পরাবাদীদের তথাকথিত সম্পূর্ণ বেদ যে পরমেশ্বরের বাণীই এই কথা বলার কোন যোগ্যতাই তারা রাখে না এবং পারলে সর্বসম্মুখে তারা এই ভাষ্য ও অশ্লীল অর্থ বিনা বিচারে স্বীকার করে সেটি জানাক । পাশাপাশি আমরা এই সিদ্ধান্তেও আসতে পারি যে শতপথে উল্লেখিত মাত্রেই তা বৈদিক বিধান হবে এমন কোন যুক্তিই নেই । যদি থাকে তবে সাহস ও সামর্থ্য থাকলে যেন এই সম্পূর্ণ ব্রাহ্মণ হরিস্বামীকে টেক্কা দিয়ে পদের অর্থসহ করে দেখায় ওপেন চ্যালেঞ্জ রইলো । করপাত্রী আর জ্বালাপ্রসাদ ভয়ে এই অংশের ভাষ্য মহর্ষির ন্যায় করেছে । কিন্তু সংস্কৃত অংশে ঠিকই এই অশ্লীলতাকে মেনে নিয়েছে । যার অনুবাদ ভণ্ড হিন্দি অনুবাদকরা করেইনি কেননা যদি সেটার অনুবাদ তারা করে তবে সাধারণ সনাতনীগণই এসব বিকৃতচারীদের মুখে পাদুকা ছুড়ে মারবে । 

যথা করপাত্রী - 

সংস্কারার্থমেব তদুপস্থস্য মহীষ্যা স্বযোনিপ্রদেশে ধারণম্... উব্বটমহীধরদয়সস্তু শ্রুত্যনুসারেণৈব কঃ কং প্রতি বক্তীতি স্পষ্টমুক্তবন্তঃ... অশ্লীলভাষণমেবোক্তমন্ত্রাণাং ব্যাখ্যানং যুক্তম্ । 

অর্থাৎ - সংস্কারের জন্যই নিজের মহিষী নিজের যোনিতে লিঙ্গ ধারণ করেন... উবট মহীধরের অর্থ শ্রুতি অনুযায়ী স্পষ্ট... [ এখানে শতপথের যে বিকৃত অংশ আমরা সমালোচনা করেছি সেগুলোই প্রমাণ হিসেবে দিয়েছে ]....অশ্লীলভাষণ মূলতঃ উক্ত মন্ত্রের ব্যাখ্যা হিসেবে প্রযুক্ত । 




জ্বালাপ্রসাদও এখানে হিন্দিতে ভিন্ন করে প্রমাণে ঠিকই সমর্থন করেছে -




বঙ্গীয় পৌরাণিকদের অত্যন্ত প্রিয় সত্যব্রত সামশ্রমী মহীধর ভাষ্যের অনুবাদ করেছেন - 

২০ কণ্ডিকা।
প্রথম মন্ত্রটি পাঠ করত ঐ শয়ানা মহিষী ঐ অশ্বের পশ্চাৎ পাদ-দ্বয়ের মধ্যে স্বীয় পাদ-দ্বয় প্রবেশ করাইবে—
অশ্ব ! তোমার এই পাদ-দ্বয়ের মধ্যে আমার এই পাদ-দ্বয় প্রবেশ করাইয়া পাদ চতুষ্টয়ত্ব সম্পন্ন করি। ১
অধ্বর্যু, দ্বিতীয় মন্ত্র পাঠ করত অধিবাসের দ্বারা তাহাদিগকে আচ্ছাদিত করিবে–
হে অশ্ব ও মহিষী ! তোমরা উভয়ে একত্র এই স্বর্গলোকে আচ্ছাদিত হও। ২ 
মহিষী তৃতীয় মন্ত্র পাঠ করত অশ্ব-শিশ্ন আকর্ষণ পূর্ব্বক স্বীয় যোনিতে স্থাপন করিবে-
রেতঃপ্রদ, ফলবর্ষিতা, বাজী রেতঃ প্রদান করুন। ৩

হে ফলর্বর্ষিন ! অশ্ব ! মহিষী স্বীয় উপস্থ উর্দ্ধে উত্তোলিত করিয়াছেন , তুমি উহাতে শিশ্ন চালনা কর ; স্ত্রী জাতির ইহাই প্রধান ভোগ ও জীবন ।





 দূর্গাদাস লাহিড়ীর জ্ঞানবেদ থেকে আধ্যাত্মিক অর্থ দেখিয়ে মুখ লুকানো চেষ্টা করে আবার শ্রৌত বা বিধি নিয়ে যারা আদিখ্যেতা করে তাদের মুখে এটা ছুড়ে দিতে পাঠক ভুলবেন না যেন । 

অলমিতি৷