বর্তমান সামাজিক অবকাঠামোতে তথাকথিত চণ্ডালদের অস্পৃশ্য ধরা হয় । চণ্ডাল বলতে প্রচলিত স্মৃত্যাদিতে ব্রাহ্মণীর গর্ভে শূদ্রের ঔরসে উৎপন্ন সন্তানকে বোঝানো হয় ।
মনুসংহিতা ১০।১২ = মনুষ্যদের মধ্যে চণ্ডাল অধম । মনুসংহিতা ১০।১৬ = চণ্ডাল নরাধম ।
মনুসংহিতা ১০।৩০ = শূদ্র ব্রাহ্মণীতে বাহ্য অর্থাৎ নিকৃষ্ট চণ্ডাল নামক সন্তানের জন্ম দেয় ।
অর্থাৎ এখানে চণ্ডাল কোন গুণ বা কর্মভিত্তিক তথাকথিত জাতি না । বরং জন্মগত একটি জাতি তৈরী করা হয়েছে ।
বশিষ্ঠ সংহিতা ১৮।১ = চণ্ডাল ব্রাহ্মণীর গর্ভে
শূদ্রের ঔরসে উৎপন্ন ।
এরা অস্পৃশ্য হিসেবে পরিগণিত । মনুসংহিতার ১০ম অধ্যায়ে বলা হয়েছে -
চণ্ডালশ্বপচানাং তু বহির্গ্রামাৎপ্রতিশ্রয়ঃ ।
অপপাত্রাশ্চ কর্তব্যা ধনং এষাং শ্বগর্দভম্ । । ১০.৫১ । ।
বাসাংসি মৃতচৈলানি ভিন্নভাণ্ডেষু ভোজনম্ ।
কার্ষ্ণায়সং অলঙ্কারঃ পরিব্রজ্যা চ নিত্যশঃ । । ১০.৫২ । ।
ন তৈঃ সময়ং অন্বিচ্ছেৎপুরুষো ধর্মং আচরন্ ।
ব্যবহারো মিথস্তেষাং বিবাহঃ সদৃশৈঃ সহ । । ১০.৫৩ । ।
অন্নং এষাং পরাধীনং দেয়ং স্যাদ্ভিন্নভাজনে ।
রাত্রৌ ন বিচরেয়ুস্তে গ্রামেষু নগরেষু চ । । ১০.৫৪ । ।
দিবা চরেয়ুঃ কার্যার্থং চিহ্নিতা রাজশাসনৈঃ ।
অবান্ধবং শবং চৈব নির্হরেয়ুরিতি স্থিতিঃ । । ১০.৫৫ । ।
অপপাত্রাশ্চ কর্তব্যা ধনং এষাং শ্বগর্দভম্ । । ১০.৫১ । ।
বাসাংসি মৃতচৈলানি ভিন্নভাণ্ডেষু ভোজনম্ ।
কার্ষ্ণায়সং অলঙ্কারঃ পরিব্রজ্যা চ নিত্যশঃ । । ১০.৫২ । ।
ন তৈঃ সময়ং অন্বিচ্ছেৎপুরুষো ধর্মং আচরন্ ।
ব্যবহারো মিথস্তেষাং বিবাহঃ সদৃশৈঃ সহ । । ১০.৫৩ । ।
অন্নং এষাং পরাধীনং দেয়ং স্যাদ্ভিন্নভাজনে ।
রাত্রৌ ন বিচরেয়ুস্তে গ্রামেষু নগরেষু চ । । ১০.৫৪ । ।
দিবা চরেয়ুঃ কার্যার্থং চিহ্নিতা রাজশাসনৈঃ ।
অবান্ধবং শবং চৈব নির্হরেয়ুরিতি স্থিতিঃ । । ১০.৫৫ । ।
অনুবাদ : চণ্ডাল, শ্বপচ প্রভৃতি জাতির বাসস্থান হবে গ্রামের বাইরে। এইসব জাতিকে‘অপপাত্র' করে দিতে হয়; কুকুর এবং গাধা হবে তাদের ধনস্বরূপ।। ৫১৷৷
অনুবাদ : মৃত লোকের কাপড় এদের আচ্ছাদন (পোশাক) হবে; এরা ভাঙা পাত্রে ভোজন করবে; এদের অলঙ্কার হবে লৌহনির্মিত; এবং এরা সকল সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াবে [অর্থাৎ একই স্থানে বাস করবে না।। ৫২।।
অনুবাদ : সাধু ব্যক্তিরা যখন বৈধ কর্মাদির অনুষ্ঠান করবেন, তখন ঐ চণ্ডাল প্রভৃতির সাথে কোনরকম মেলামেশা (সময় মিলন) করবেন না। তাদের পরস্পরের মধ্যেই আচারব্যবহার (বা ঋণাদানানাদি ব্যবহার) সীমাবদ্ধ থাকবে; এদের বিবাহ স্বজাতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে৷৷ ৫৩৷৷
অনুবাদ : চণ্ডাল প্রভৃতির অন্ন পরাধীন অর্থাৎ সাক্ষাৎসম্বন্ধে এদের পাত্রে অন্ন দেওয়া চলবে না, কিন্তু [আগে ৫১ নং শ্লোকে যেমন বলা হয়েছে, সেইভাবে] মাঝখানে ভৃত্যাদির ব্যবধান রেখে ঐ ভৃত্যশ্রেণীর কারোর পাত্রে অন্ন রেখে ঐ অন্ন চণ্ডাল প্রভৃতিকে দিতে হবে। তারা রাত্রিকালে গ্রামে বা নগরে চলাফেরা করবে না [কারণ, তাদের স্পর্শ সাধু ব্যক্তিদের গায়ে লেগে যেতে পারে।]।। ৫৪।।
অনুবাদ : ঐ সব চণ্ডাল প্রভৃতি জাতিরা রাজার দ্বারা নির্দিষ্ট কোনও বিশেষ চিহ্ণ ধারণ করে ক্রয়বিক্রয় প্রভৃতি কাজের জন্য দিনের বেলায় বিচরণ করবে। যে সমস্ত শব বান্ধবশূন্য [অর্থাৎ অনাথ] সেগুলিকে ঐ চণ্ডাল প্রভৃতি জাতিরা সৎকার করবে [বা গ্রাম থেকে বাইরে বহন করে নিয়ে যাবে], এ-ই হ’ল নিয়ম।। ৫৫।
পূর্বপক্ষঃ চণ্ডালরা চুরি ডাকাতি করে , অপরিষ্কার থাকে , দূষিত আহার করে । তাদের দুশ্চরিত্রের জন্য তারা অন্যদের খাদ্যে বিষ মেশাতেও পারে বা তাদের স্পর্শে খাবার রোগজীবাণুগ্রস্থ হতে পারে । তাই চণ্ডালের স্পৃষ্ট খাদ্য ত্যাজ্য ।
উত্তরপক্ষঃ
১। ভিন্ন স্ত্রীতে গমন সততই অবৈধ ও ব্যভিচারের জন্য দণ্ডনীয় । যেখানে অনুলোমজ সন্তান যদি বিহিত হয় [ ১০।৪১ ] প্রতিলোমজ কেন আলাদা হবে ? উভয়ই ব্যভিচার ও উভয়ই অমান্য । তাই উক্ত বিধান সম্পূর্ণ একপাক্ষিক ও মৌলিক বৈদিক মান্যতা বিরুদ্ধ ।
২। বিরোধী কাজ দেখিতে প্রতিলোমজ জাতি থেকে বিপদ আশঙ্কা বা অশুচি দেখাচ্ছেন । কিন্তু এটি শুভংকরের ফাঁকি মাত্র ! কেননা ১০।৪৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে কোন কোন জাতি কি কাজ করবে । অর্থাৎ এখানে আগে জন্ম অনুযায়ী ধরে তারপর তার কাজ ফিক্সড করে দেওয়া হচ্ছে ।
৩। ১০ম অধ্যায়ে বলা হচ্ছে শ্লোক ৪৭ = সূত, বৈদেহ, মাগধ ; ৪৮ = নিষাদ , আয়োগব, মেদ, অন্ধ্র, চুঞ্চু, মুদগ ; ৪৯ = ক্ষত্তা, উগ্র, পুক্কস, ধিগ্বণ, বেণ ; ৫০ = উপরের সব প্রতিলোমজ হাতি গ্রামের প্রধান গাছ বা শ্মশানে বা পাহাড় বা উপবনের নিকটে বসবাস করবে । উক্ত শ্লোক্ব কার কি কাজ সেটিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ।
৪। অতঃ আমরা সামগ্রিকভাবে এটাই প্রমাণ পাচ্ছি যে প্রতিলোমজদের পূর্বেই সমাহ চ্যূত করে গ্রামের বাইরে রাখা হচ্ছে [ ১০।৫০ ]
যেহেতু তাদের জন্মের পরই জাতি নির্দিষ্ট তাই এখানে অন্যকোনভাবে তাদের কাজকে দোষ হিসেবে দেখানোর কোন সুযোগ নেই । বিরোধীগণ বলছেন তাদের কাজের জন্য তাদের অস্পৃশ্য বা স্পৃষ্ট অন্নাদি নিষেধ করা হচ্ছে ।
তা মহাশয় ! যাকে ইতোমধ্যেই জন্মের পর থেকেই জাত ও মৃত লোকের পোশাক পরিধান , ভাঙা পাত্র ভোজন , লোহার অলংকার [ ১০।৫২, ৫৬] দিচ্ছেন বিধান হিসেবে তারা কোন যুক্তিতে উত্তম ও পরিষ্কার থাকতে পারবে বলবেন কি ?
আপনার যুক্তিতে এরা অপরিষ্কার তাই বিষ দিতে পারে বলে অগ্রাহ্য ।
তাদের চোর ডাকাত বলে প্রকৃতপক্ষে মানসিকভাবে আপনারাই যে বড় চোর প্রমাণ দিলেন । কেননা ১০।৫৬ অনুযায়ী তারা রাজার আদেশে বধ করবে । অর্থাৎ জল্লাদ হবে । কোন চোর ডাকাত না ।
অথচ ১০।৫৩ তো তাদের আলাদাই করে দিয়েছে সমাজ থেকে । আর ১০।৫৪ আপনার কথার বিপরীত অর্থাৎ চণ্ডালদেরই আহার দিতে বলা হচ্ছে ভৃত্যের পাত্র ! অর্থাৎ আপনি আগেই তাদের সমাজ থেকে বের করে দিয়ে তারপর তাদের প্রতি কাল্পনিক আরোপ দিচ্ছেন ! ধিক ধিক ধিক !
পাঠক ! দেখুন , বুঝুন । কারা পরবর্তীকালে রচিত গ্রন্থাদিকে কৌশলে ছলেবলে টিকিয়ে রেখে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছে ! কি স্বার্থ ও লাভ তাদের ? বিশাল সনাতনীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করে যে জাতপাত ও মহাভাঙনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলো যারা তাদেরই উত্তরসূরী এরা । তাই আসুন ও শক্তভাবে এদের প্রতিরোধ করুন ।
বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥
গীতা ৫।১৮
অর্থ:-পণ্ডিত ব্যক্তিরা বিদ্যা ও বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণকে এবং গোরু, হাতি, কুকুর ও চণ্ডালকেও সমান দৃষ্টিতে দেখেন।
পুরাণে ও স্মৃতিতে শূদ্র চণ্ডালের প্রতি বেদ বিরুদ্ধ আচরণ - http://back2thevedas.blogspot.com/2022/04/blog-post_1.html?m=1
ইত্যোম্
0 মন্তব্য(গুলি)