ओ३म्
নমস্কার
বেদের শাখা সম্বন্ধে বিচার তথা মহর্ষি দয়ানন্দ স্বীকৃত শাখা স্বরূপের সিদ্ধান্তের উপর সত্যব্রত সামশ্রমীর মিথ্যা আরোপের খণ্ডন
বেদ এবং শাখা
শাখার স্বরূপ
শাখা সমূহ বেদের ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ, এমনটা মহর্ষি দয়ানন্দ জীর মন্তব্য (( বিস্তারিত: তাঁর রচিত ঋগ্বেদাদি ভাষ্য ভূমিকা গ্রন্থ )) অর্থাৎ, চার বেদ মূল এবং ১১২৭টি এই চার মূল সংহিতার শাখা বা ব্যাখ্যান গ্রন্থ ।
শাখা সমূহের আনুপূর্বী অনিত্য, " য়া ত্বসৌ বর্ণানুপূর্বো সাऽনিত্যা " ( অ. ৪/৩/১০১ মহাভাষ্য ) এটা মহাভাষ্যকারের মন্তব্য এবং উদাহরণ হিসেবে কাঠকম্ কালাপকম্, মৌদকম্, পৈপ্পালাদকম্ এর উল্লেখ রয়েছে । যা অতি স্পষ্টভাবে শাখা গ্রন্থ । বেদের আনুপূর্বীকে মহর্ষি পতঞ্জলি নিত্য মেনেছেন – " স্বরো নিয়ত আম্নায়েऽস্যবামশব্দস্য, বর্ণানুপূর্বো খল্বব্যাম্নায়ে নিয়তা অস্যবামশব্দস্য " ( অ. ৫/২/৫৯ মহাভাষ্যে ) ভগবান পতঞ্জলি কৃত এই দুটি প্রমাণ দ্বারা বেদ এবং শাখাগ্রন্থের ভেদ অতীব স্পষ্টভাবে দৃঢ় প্রমাণিত হয় এবং সিদ্ধ হয় ।
" পুরুষবিদ্যাऽনিত্যত্বাৎ কর্মসম্পত্তির্মন্ত্রো বেদে " ( নিরুক্ত. ১/১ ) তথা " নিয়তবাচো য়ুক্তয়ো নিয়তানুপূর্ব্যা ভবন্তি " ( নিরুক্ত. ১/১৬ ) নিরুক্তের এই বচনদ্বয় দ্বারাও বেদের আনুপূর্বী নিত্য প্রমাণিত হয় । যদ্যপি শাখার বিষয়ে মহর্ষি যাস্ক সরাসরি কিছু বর্ণনা করেন নাই, তথাপি " য়দরুদত্ত দ্রুদ্রস্য রুদ্রত্বমিতি কাঠকম্, য়দরোদীৎ তদ্রুদ্রস্য রুদ্রত্বমিতি হারিদ্রবিকম্ " ( নিরুক্ত. ১০/৫ ) এই উদাহরণ ব্যক্ত হয় যে, এখানে অর্থের সমানতা হওয়ার পরও শাখা সমূহের বর্ণানুপূর্বীর ভেদ দর্শানোর জন্যই মহর্ষি যাস্ক দুটি ভিন্ন-ভিন্ন উদাহরণ দর্শায়িত করেছেন । নিরুক্তের উক্ত অংশের ব্যাখ্যায় দুর্গাচার্য লিখেন –
" স এবার্থঃ, কেবলং শাখান্তরমন্যৎ " অর্থাৎ, অর্থ সমান, কেবল শাখাভেদ দ্বারা বর্ণানুপূর্বীর ভেদ বিদ্যমান ।
নিরুক্ত এই অংশের সাথে যদি মহাভাষ্যকারের " য়োऽসাবর্য়ঃ স নিত্যঃ, য়া ত্বসৌ বর্ণানুপূর্বো সাऽনিত্যা "
এই মন্তব্যের সহিত সামঞ্জস্য করা হয় তাহলে মহর্ষি যাস্কের অভিপ্রায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি মূল বেদের আনুপূর্বীকে নিত্য এবং শাখাসমূহের আনুপূর্বীকে অনিত্য মেনেছেন ।
শাখা সমূহ ঋষি প্রোক্ত এবং এগুলোর আনুপূর্বী অনিত্য । এর পক্ষে আরও একটি দৃঢ় প্রমাণ –
মহাভাষ্যকার ভগবান পতঞ্জলি " অনুবাদে চরণানাম্ " ( অ. ২/৪/৩ ) এর ভাষ্যে বর্ণনা করেন — " অনুবদতে কঠঃ কলাপস্য " অর্থাৎ, কঠ কলাপের প্রবচন অনুবাদ করেছেন ।
এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কঠাদি শাখা সমূহ ঋষিগণের প্রবচন এবং তার মধ্যে কোনো-কোনো শাখা পরস্পর পর্যাপ্ত সমানতা ।
- এখন বিচার্য বিষয় এই যে, শাখা ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ, তা কিভাবে জানা সম্ভব ?
এর উত্তর, যখন অত্যন্ত সূক্ষ্মাত্মক ভাবে এই শাখা সমূহের অধ্যয়ন তথা গবেষণা করা হবে তখন। এগুলোর ভিন্ন-ভিন্ন পাঠসমূহের পর্যবেক্ষণ দ্বারা এই বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাবে । এর পক্ষে অনেক উদাহরণ দ্রষ্টব্য —
" তেন ব্যাখ্যাতং তদধ্যাপিতং বা প্রোক্তমিত্যুচ্যতে "
( অ. ৪/৩/১০১ । ন্যাস পৃষ্ঠা. ১০০৫ )
এই বচন স্পষ্ট অর্থ এই যে, কঠ, কলাপ, পৈপ্পলাদ আদি শাখা সমূহ মূল বেদের ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ । প্রোক্তগ্রন্থ সেটাই যেটা ব্যাখ্যান রূপে অধ্যয়ন করানো হয় । প্রবচন এবং ব্যাখ্যান সমানার্থক শব্দ, এমনটা ন্যাসকারের মন্তব্য ।
তাৎপর্য এই যে, ঋগ্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব এই চার বেদ স্বতঃ প্রমাণ, এবং শাখা সমূহ প্রোক্ত হওয়ায় তা পরতঃ প্রমাণ, বেদ এবং শাখা গ্রন্থের ভেদ এটাই ; যা সংহিতা নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে ।
এখন এই শাখা গ্রন্থগুলোর অভ্যন্তরীণ সাক্ষী উপস্থিত করা হচ্ছে, এ দ্বারা আরও অধিক স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, শাখা সমূহ স্বয়ং তার স্বরূপ সম্বন্ধে কি দর্শিয়েছে ।
কাঠক, মৈত্রায়ণী আদি সংহিতায় চার বেদের নাম স্পষ্ট প্রতীয়মান —
ঋক্সাময়োরেবাধ্যভিষিচ্যতে ।।
( কাঠক. সংহিতা. ৩৭/৩ )
য়জুর্ভী রায়স্পোষে সমিষা মদেম ।।
( কাঠক. সংহিতা. ২/৪ )
আশীর্বা অথর্বভিঃ ।।
( কাঠক. সংহিতা. ৫/৪ )
এই প্রকারে কাঠক সংহিতায় অন্যত্রও চার বেদের নামোল্লেখ তথা বিভাগ স্পষ্ট প্রতীয়মান ।
এতটুকুই নয়, বরং কঠ সংহিতার প্রবচনকর্ত্তার মতানুযায়ী ঋষি মন্ত্রের দ্রষ্টা ছিলেন এবং সেই ঋষি মন্ত্রের প্রতীক উল্লেখ করে এই সূক্তের ঋষি বামদেব, এমনটা মন্তব্য করেছেন । যেমন –
" বামদেবস্যৈতৎ পঞ্চদশং রক্ষোধ্নং সামিধেন্যো ভবন্তি…….. । স বামদেব উখ্যমগ্নিমবিভস্তমবজক্ষত স এতৎ সূক্তমপশ্যৎ " কৃণুষ্ব পাজঃ প্রসিতিং ন পৃথ্বীমিতি " ( কাঠক সংহিতা. ১০/৫ )
অর্থাৎ, " কৃণুষ্ব পাজঃ " এই সূক্তের দ্রষ্টা বামদেব ঋষি । যা স্বয়ং বেদের প্রতীক উল্লেখ করে তাঁকে ঋষি সম্বোধন করছে, সেই গ্রন্থ মূল বেদ কিভাবে হতে পারে ?
আরেকটি শঙ্কার উপর বিচার করা সমুচিত–
গোপথ ব্রাহ্মণ ( পূর্বার্ধ ১/২৯ ) তে অথর্ববেদ এর আরম্ভ " শন্নো দেবী " এই মন্ত্র দ্বারা হয়, এমনটা মানা হয়েছে । যখন ঋগ্, যজুঃ , সাম এর আরম্ভিক মন্ত্রের পাঠ যেমনভাবে সর্বশাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে তেমনিভাবে বর্তমানে আমাদের নিকট উপলব্ধ, তাহলে অথর্ববেদ এর প্রথম মন্ত্র " শন্নো দেবী " কেন অমান্য হবে ? এতটুকুই নয় । মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি ঋষিও মহাভাষ্যের আরম্ভে লৌকিক বৈদিক শব্দসমূহের ভেদ দর্শানোর সময় ঋগ্, যজুঃ, সাম বেদের আরম্ভের পাঠ সেটাই উল্লেখ করেছেন যা বর্তমানে উপলব্ধ । সেখানেও অথর্ববেদ এর পাঠ উনি " শন্নো দেবী " উল্লেখ করেছেন । এ দ্বারা বোধগম্য হয় যে, অথর্ববেদ এর আরম্ভ " শন্নো দেবী " দ্বারাই হওয়া উচিত ।
সমাধান —
" তেন প্রোক্তম্ " ( অ. ৪/৩/১০১ ) এই সূত্রের ভাষ্য –
" য়া ত্বসৌ বর্ণানুপূর্বী সাऽনিত্যা । তদ্ভেদাচ্চৈতদ্ ভবতি কাঠকম্, কালাপকম্, মৌদকম্, পৈপ্পলাদকমিতি "
মহাভাষ্যের এই বচন দ্বারা স্পষ্ট সিদ্ধ হয় –
ক. কাঠক, কালাপক, মৌদক, পৈপ্পলাদাদি প্রোক্ত, অর্থাৎ ঋষিগণ দ্বারা প্রবচন বা ঋষিকৃত ।
খ. এই কাঠক, পৈপ্পলাদি শাখা গ্রন্থ, বেদ নয় । কেননা, মহাভাষ্যকার এগুলোর আনুপূর্বী অনিত্য মেনেছেন ।
গ. ঋগ্, যজুঃ, সাম এবং অথর্বের আনুপূর্বীকে " স্বরো নিয়ত আম্নায়েऽস্যবামশব্দস্য । বর্ণানুপূর্বী খল্বব্যাম্নায়ে নিয়তা " ( অ. ৫/২/৫৯ মহাভাষ্য ) এই প্রমাণ দ্বারা মহাভাষ্যকার নিত্যই মেনেছেন অনিত্য কদাপি নয় ।
ঘ. প্রোক্ত, ব্যাখ্যাত, প্রবচন এবং ব্যাখ্যান পর্যায়বাচী শব্দ, যা ন্যাসকার অভিনবগুপ্তের মন্তব্য ।
এইসব প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হয় যে, পতঞ্জলি মুনি পৈপ্পলাদ ঋষির শাখা মেনেছেন, এর আনুপূর্বীকে অনিত্য মেনেছেন পরন্তু বেদ মানতেন না ।
রইল প্রারম্ভে " শন্নো দেবী " বিষয়ে ।
মহাভাষ্যের আরম্ভে বৈদিক শব্দসমূহের উদাহরণ মাত্র দর্শানো অভিপ্রেত । উক্ত স্থানে বেদের আরম্ভিক প্রতীক দর্শানো মুখ্য নয় । যদি তা বেদের আরম্ভিক প্রতীক মানা হয় তাহলে মহর্ষি পতঞ্জলির স্ববচনেই পরস্পর বিরোধ দেখা যাবে ।
অতঃ মহাভাষ্যের উক্ত স্থানে লৌকিক বৈদিক শব্দসমূহের ভেদমাত্র দর্শানো অভিপ্রেত ছিলো ।
গোপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখিত " শন্নো দেবী " পাঠ পৈপ্পলাদ সংহিতার , যা ছান্দোগ্য মন্ত্র ভাষ্যকার গুণবিষ্ণু মেনেছেন । পৈপ্পলাদ শাখা মহাভাষ্যকারের মন্তব্য অনুসারে ঋষি প্রোক্ত, এর আনুপূর্বী অনিত্য । অতঃ গোপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখিত " শন্নো দেবী " পাঠ দ্বারা অথর্ববেদের আরম্ভ এর পৈপ্পলাদ শাখার ব্রাহ্মণ হওয়ার দরুণ বা কোনো অবান্তর শাখার আরম্ভিক পাঠ এমন, এমনটাই মানা যুক্তিসঙ্গত ।
এখানে একটি বিষয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ যে, অথর্ববেদ এর প্রারম্ভে " য়ে ত্রিষপ্তা " আদি পাঠ শ্রৌত, গৃহ্য, অথর্ব, বৃহৎসর্বানুক্রমণী তথা অন্য অনেক স্থলে উপলব্ধ ।
সুতরাং, শাখা সমূহ ঋষি প্রোক্ত এবং তা মূল চার সংহিতার ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ ।
শাখাগ্রন্থ এবং বেদার্থ
শাখা সমূহ মূল বেদের ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ, যা পূর্বোক্ত লেখনীতে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে ।
সম্ভবত এই শাখাগুলোর থেকে কোনো একটা পদকারী পূর্বেই করেছেন, কিন্তু অনেকগুলো পদকারীর পরবর্তীতে কৃত প্রতীত হচ্ছে। যে সময়েই রচনা হোক না কেনো, শতপথাদি শাস্ত্রানুসারে কালান্তরে শাখা সমূহে বহুত সংখ্যক মনুষ্য কৃত বিভিন্ন অর্থের প্রভাব পড়েছে তথা বিবিধ পাঠ ভেদ বিদ্যমান এমনটা স্পষ্ট প্রতীয়মান ।
অর্থাৎ, মন্ত্র দ্বারা মন্ত্রের অর্থ বোধগম্য তথা শাখা সমূহ বিস্পষ্টার্থদ্যোতক শব্দ দ্বারা অর্থের প্রতিপাদন করে । সম্পূর্ণ শাখা যজ্ঞের জন্য রচিত হয়েছে । এর একাংশিক যাজ্ঞিক অর্থের সাথে সম্বন্ধযুক্ত ।
ঋগ্বেদ: ১০/৭১/৬ নং মন্ত্রে " সচিবিদং সখায়ং " পাঠের স্থানে তৈত্তিরীয় আরণ্যকে এই মন্ত্রের ব্যাখ্যানে " সখিবিদং সখায়ং " ( তৈ. আরণ্যক. ১/৩/১ ) পাঠ উপলব্ধ ।
যজুর্বেদ ১/১৮ নং মন্ত্রের " ভ্রাতৃব্যস্য বধায় " স্থানে কাণ্ব সংহিতার ১/৬/২,৩ নং-এ " দ্বিষতো বধায় " এমন পাঠ বিদ্যমান । এখানে স্পষ্ট দৃশ্যমান যে, এই দুটি স্থলে এক শব্দের অর্থ অপরটিতে দর্শানো হয়েছে । যদ্যপি এমন প্রচুর স্থল দর্শানো সম্ভব, তথাপি শাখা সমূহ দ্বারা বেদার্থে অতি অল্প সহায়তা পাওয়া সম্ভব ।
বেঙ্কটমাধবও তার ঋগ্ভাষ্যানুক্রমণীর ৭৭ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন –
" অধ্যবস্যন্তি মন্ত্রার্থানেবং মন্ত্রান্তরৈরপি ।
শাখাস্বন্যাসু পঠিতৈর্বিস্পষ্টার্থৈর্মনীষিণঃ ।।
- মহর্ষি দয়ানন্দ স্বীকৃত শাখা স্বরূপের উপর অযৌক্তিক মিথ্যা আরোপের সমাধান
ঐতরেয়ালোচন ১২৭ নং পৃষ্ঠায় সত্যব্রত সামশ্রমী মহর্ষি দয়ানন্দ জী দ্বারা লিখিত " শাখা বেদব্যাখ্যান " প্রবন্ধের উপর অযৌক্তিক, মিথ্যা আরোপ করে সামশ্রমী লিখেছে –
" হন্ত কা নাম সংহিতা শাখেতি ব্যপদেশশুন্যা তেন মহাত্মনোররীকৃতা, য়স্যা মূলবেদত্বং মত্বা শাখেতি প্রসিদ্ধানামন্যাসাং তদ্ব্যাখ্যানগ্রন্থত্বং মন্তব্যং ভবেদিতি ত্বস্মাকমজ্ঞেয়মেব "
অর্থাৎ – স্বামী দয়ানন্দ কোনটিকে মূলবেদ মেনেছেন, যেটিতে শাখাশব্দের ব্যবহার হতো না, আর যেটিকে মূল মেনে অন্য শাখাসমূহকে তার ব্যাখ্যানরূপ গ্রন্থ মানা যেতে পারে।
এই আক্ষেপের দুই ভাগ আছে।
- একটি তো এই যে, মূল বেদ কোনটিই নয়।
- দ্বিতীয়টি এমন কোন সংহিতা নেই, যার শাখাশব্দ রূপে ব্যবহার না হয়।
এখন তথাকথিত বৈদিক সতব্রত সামশ্রমীর এই দুটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন আরোপের খণ্ডন করা হল –
ক. শতপথ ব্রাহ্মণের প্রবক্তা যাজ্ঞবল্ক্য বর্ণনা করেছেন –
" তদু হৈকऽন্বাহুঃ । হোতা য়ো বিশ্ববেদস ইতি । নেদরমিত্যাত্মানং ব্রবাণীতি তদু তথা না ব্রূ য়ান্মানুষং হ তে য়জ্ঞে কুর্বন্তি । ব্যৃদ্ধং বৈ তদ্যজ্ঞস্য য়ন্মানুষং নেদ্ ব্যৃদ্ধং য়জ্ঞে করবাণীতি তস্মাদ্ য়থৈবর্চানূক্তমেবানুব্রূয়াদ্ধোতরং বিশ্ববেদসমিতি " [ শতপথ. ১/৪/১/৩৫ ( আজমের সংস্করণ ) ] [ তুলনা. কাণ্ব. শতপথ. ২/৩/৪/২৫ ]
ভাবার্থ হলো, কোনো শাখাসম্প্রদায়ী [ 1 ], " হোতা য়ো বিশ্ববেদসঃ " এই পাঠ পড়ে থাকে । এমনটা অনুচিত । উক্ত পাঠ মনুষ্যকৃত পাঠ । যজ্ঞে এটা মানুষ পাঠ করে থাকে । যজ্ঞে মানুষপাঠ উচ্চারণে যজ্ঞের হীনতা হয় । যজ্ঞে কোনোরূপ হীনতা যেনো না হয়, এজন্যে ঋচার পাঠ যেরূপ বিদ্যমান, তেমনটাই উচ্চারণ আবশ্যক " হোতারং বিশ্ববেদসম্ " ( ঋগ্বেদ. ১/১২/১ )
এই প্রমাণ দ্বারা দুইটি বিষয় সিদ্ধ হয় –
১. যত শাখার প্রবচন হয়েছে তা সব মনুষ্যকৃত ( মনুষ্যপ্রোক্ত বা মনুষ্যসম্বন্ধ দ্বারা যুক্ত ) ।
২. কিছু ঋকপাঠ এমন যে, যাতে মনুষ্যর কোনো সম্বন্ধ নেই এবং সেটাই মনুষ্যসমন্ধ রহিত মূলবেদ ।
শতপথের উক্ত অংশের ব্যাখ্যায় সায়ণ বর্ণনা করেছে –
" হোতা য় ইতি পাঠবিপরিণামস্য মনুষ্যবুদ্ধিপ্রভবতয়া মানুষত্বম্ । য়থৈব বেদে পঠিতং তথৈবানুবক্তব্যমিত্যুপসংহরতি তস্মাদিতি । কীদ্দগ্বিধং তহি বেদে পঠিতমিতি তদাহ হোতারমিতি " ( শতপথ. ১/৪/১/৩৫ – সায়ণ ভাষ্য )
অর্থাৎ, সায়ণও " হোতা য়ো বিশ্ববেদসঃ " শাখান্তরের এই পাঠকে মনুষ্যকৃত মেনেছে ।
এবং " হোতারং বিশ্ববেদসম্ " অংশকে বেদের পাঠ হিসেবে মান্যতা দিয়েছে ।
বিদিত আছে যে, শতপথ ব্রাহ্মণে " তদু তথা ন ব্রূয়াৎ " , তদু তথা ন কুর্য়াৎ এমন বচন, শতপথ ব্রাহ্মণের আজমের সংস্করণ ) পৃষ্ঠা. ৮, ১৫, ২৩, ২৫, ২৯, ৩৫, ৩৯, ৫০, ৬৮, ১০২, ১৩৭, ১৩৮, ১৯৭, ২৭৭ আদি প্রায় ১৫টি স্থানে উদ্ধৃত রয়েছে । এইসবে স্থানে শাখাগত পাঠ সমূহেরই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে । এর মধ্যে মুখ্যতয়া তৈত্তিরীয় সংহিতার । এ বিষয়ে বিদ্বানগণের আরও অধিক বিচার করা আবশ্যক ।
খ. শতপথ ব্রাহ্মণের সর্ব প্রাচীন ভাষ্যকার হরিস্বামী ( ৬৩৯ সন ) যিনি স্কন্দস্বামীর শিষ্য ছিলেন, শতপথ ব্রাহ্মণ ভাষ্যের উপোদ্ঘাত এর প্রারম্ভে বর্ণনা করেছেন –
" বেদস্যাপৌরুষেয়ত্বেন স্বতঃ প্রামাণ্যে সিদ্ধে তচ্ছাখানামপি তদ্ভেতুত্বাৎ প্রামাণ্যমিতি বাদরায়ণাদিভিঃ প্রতিপাদিতম্ " [ শতপথ হরিস্বামী ভাষ্য ]
অর্থাৎ, বেদ অপৌরুষেয় হওয়ার দরুণ তা স্বতঃপ্রামাণ্য সিদ্ধ । বেদের শাখা সমূহেরও প্রামাণ্য তদ্ধেতুনা দ্বারা অর্থাৎ, বেদের অনুকূল হওয়ায় বাদরায়ণাদি কর্তৃক স্বীকৃত ।
হরিস্বামীর এই বচন থেকে দুটো বিষয় স্পষ্ট হয়, এক তো এই যে অপৌরুষেয় নিজের পৃথক সত্তা রাখে এবং শাখা সমূহ তা থেকে ভিন্ন। হরিস্বামী বেদকে শাখা থেকে ভিন্ন মানতেন ।
দ্বিতীয়ত, তাঁর মতে সেই সব শাখার প্রামাণ্যও বেদানুকূল হওয়ার জন্যে স্বীকার করা হয়ে থাকে ।
উপর্যুক্ত দুটি প্রমাণ দ্বারা দেদীপ্যমান সূর্যের ন্যায় সমস্ত অন্ধকার দূরীভূত হয়ে মূল বিষয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শতপথকার তথা হরিস্বামীর মন্তব্য অনুসারে শাখা সমূহের অতিরিক্ত মূল বেদ অবশ্যই বিদ্যমান ছিলো ।
এই বিষয়ে অন্য প্রমাণও দর্শানো হচ্ছে –
১. " ঋগ্যজুঃ সামাথর্বাণশ্চত্বারো বেদঃ সাঙ্গা সশাখাশ্চত্বারঃ পাদা ভবন্তি " ।।
[ নৃসিংহপূর্বতাপিনী উপনিষদ ]
অর্থাৎ, ঋগ্, যজুঃ, সাম এবং অথর্ব চার বেদ, অঙ্গ সমূহের সহিত, শাখা সমূহের সহিত চার পাদ বিদ্যমান ।
২. এতদ্ বৃহজ্জাবালমধীতে স ঋচোऽধীতে স য়জুংষ্যধীতে স সামান্যধীতে সোऽথর্বাণমধীতে সোऽঙ্গিরসমধীতে স শাখা অধীতে স কল্পানধীতে " ।।
[ বৃহজ্জাবালোপনিষদ্ ]
উক্ত শ্লোকেও শাখা এবং কল্প আদি শাস্ত্রকে বেদ থেকে পৃথক হিসেবে গণনা করা হয়েছে ।
অতঃ বেদ এবং শাখা সমূহ ভিন্ন-ভিন্ন বিদ্যমান ছিলো, এই পরম্পরা ছিলো ।
এখন মূর্খ সত্যব্রতের দ্বিতীয় আক্ষেপ খণ্ডন —
বৈদিক সাহিত্যে " শাখা " শব্দের প্রয়োগ কি কি কারণে হতো, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য বর্তমানে অপ্রাপ্য । অবশ্য এই দুটি কারণ এই বিষয়ে নির্দেশ করে ; প্রথমতঃ পাঠভেদাদি প্রয়োগ করে যে অপূর্ব প্রবচন করা হতো, তা শাখা রূপে প্রতিষ্ঠিত হতো, যথাঃ তৈত্তিরীয় সংহিতা, কাঠক সংহিতা, মৈত্রায়ণী সংহিতা তথা কাণ্ব সংহিতাদি । দ্বিতীয়ত শাখার শব্দের ব্যবহার মূল গ্রন্থে কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন ব্যতিরকে তার পদপাঠ করার মাধ্যমেও পদকারের নাম সেই সংহিতার সহিত যুক্ত হয়ে যায়। এর উদাহরণ ঋগ্বেদ এর শাকল সংহিতা । শাকল্য তাঁর সংহিতা পাঠে কোনোরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্দ্ধন করেছেন এমন কোনো প্রমাণ সমগ্র বৈদিক সাহিত্যে উপলব্ধ নয় । হ্যাঁ, নিরুক্ত. ৬/২৮-এ উল্লেখিত " বা ইতি চ য় ইতি চ চকার শাকল্যঃ " এই পাঠ দ্বারা ঋগ্বেদের পদপাঠের কর্তৃত্ব শাকল্যকৃত সিদ্ধ হয়েছে, পুরাণেও এই শাকল্যকে " পদবিত্তম " নামে উল্লেখ করা হয়েছে । পদপাঠ এর কর্ত্তা হওয়ার দরুণ ঋক্সংহিতার সহিত শাকল নাম যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে এবং সেটি শাকলসংহিতা বা শাকলশাখা নামে বিস্তার লাভ করে ( অনেকেই শাকলকে শাকল সংহিতার প্রবচন কর্ত্তা হিসেবে অভিহিত করে থাকে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ অপ্রামাণিক এবং ভ্রান্ত ) । কোনো সংহিতার পদপাঠ মাত্র করার ফলেও তাতে শাখা শব্দের ব্যবহার এবং প্রযুক্ত হয়ে থাকে, এর পক্ষে একটি অতি স্পষ্ট প্রমাণ দর্শানো হচ্ছে -
" উখঃ শাখামিমাং প্রাহ আত্রেয়ায় যশস্বিনে ।
তেন শাখা প্রণীতেয়মাত্রেয়ীতি এ সোচ্যতে ।।
য়স্যাঃ পদকৃদাত্রেয়ো বৃত্তিকারস্তু কুণ্ডিনঃ ।
তাং বিদ্বাংসো মহাভাগাং ভদ্রমশ্নুবতে মহৎ ।।
[ তৈ. স. ভট্টভাস্কর কৃত ভাষ্য ; ভাগ: ১– তৈত্তিরীয় কাণ্ডানুক্রম পৃষ্ঠা. ৯ ; শ্লোক ২৬, ২৭ ।। ]
অর্থাৎ, তিত্তিরি এই তৈত্তিরীয় সংহিতা উখ-কে অধ্যয়ন করিয়েছেন। । তিনি এই শাখা আত্রেয়-কে পড়িয়েছেন । আত্রেয় দ্বারা রচিত হেতু এই শাখা আত্রেয়ী হিসেবে অভিহিত,যার পদকার আত্রেয় এবং বৃত্তিকার কুণ্ডিন ।
এই প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হয় যে, আত্রেয় দ্বারা পদপাঠ করার ফলে এই তৈত্তিরীয় সংহিতা আত্রেয়ী সংহিতার নামেও প্রসিদ্ধ এবং প্রসার হয়েছে । তদনুসারে শাকল সংহিতাকে এরূপ বুঝতে হবে ।
এই প্রকারে যজুর্বেদ এর মত শাখা উপলব্ধ, তার মধ্যে কৃষ্ণযজুর্বেদগণ-এ স্পষ্ট প্রতীক উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যান উপলব্ধ হওয়ার দরুণ
এর বেদত্ব কোনো প্রকারেই সিদ্ধ হতে পারে না ।
শুক্ল যজুর্বেদ এর দুটি সংহিতা বর্তমানে উপলব্ধ, তার মধ্যে কাণ্বসংহিতায় পাঠভেদ দ্বারা মন্ত্র ব্যাখ্যানের প্রমাণ থাকায় তা মূল সংহিতা নয় । মাধ্যন্দিনী সংহিতাই মূল যজুর্বেদ ।
এর পক্ষে একটি প্রমাণ উপস্থিত —
Government Oriental Manuscript Library, Madras এর সূচীপত্র ভাগ III পৃষ্ঠা ৩৪২৬, গ্রন্থ নং ২৪৪৬-এ " মাধ্যন্দিনশাখাবিষয়ঃ " নামে একটি গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে । যা এই গ্রন্থের বাস্তবিক নাম নয় । পুস্তকের আদ্যন্ত খণ্ডিত হওয়ার দরুণ প্রকৃত নাম অজ্ঞাত । এই পুস্তকের কিছু পাঠ উপর্যুক্ত পৃষ্ঠায় নিম্ন প্রকারে উদ্ধৃত ——
" অথ পঞ্চদশশাখাসু মাধ্যন্দিনশাখা মুখ্যেতি বেদিতব্যা । য়দুক্তং বৃহন্নারদীয়ে –
" যজুর্বেদমহাকল্পতরোরেকোত্তরং শতম্ । শাখা তত্র শিখাকারা দশ পঞ্চাথ শুক্লগাঃ ।। "
তথা চেদং হোলীরভাষ্যম্ –
" য়জুর্বেদস্য মূলং হি ভেদো মাধ্যন্দিনীয়কঃ । সর্বাক্রমণী তস্যাঃ কাত্যায়নকৃতা তু সা ।। "
তস্মান্মাধ্যন্দিনীয়শাখা এব পঞ্চদশসু বাজসনেয়শাখাসু মুখ্যা সর্বসাধারণা চ ।।
অত এব বশিষ্ঠেনোক্তম্ — " মাধ্যন্দিনী তু য়া শাখা সর্বসাধারণী তু সা " ।।
অত এব বশিষ্ঠেনোক্তম্ – " মাধ্যন্দিনী তু য়া শাখা সর্বসাধারণো তু সা " ।।
অর্থাৎ — শুক্ল যজুর্বেদ এর পনেরোটি শাখার মধ্যে মাধ্যন্দিন শাখাই মুখ্য তথা প্রধান । বৃহন্নারদীয়-তে বলা হয়েছে – " যজুর্বেদরূপী মহাবৃক্ষের ১০১টি শাখা বিদ্যমান । এর মধ্যে পনেরোটি শুক্ল শাখা শিখাকার অর্থাৎ, সর্বোচ্চ ।
হোলীর ভাষ্যে উল্লেখ রয়েছে - " যজুর্বেদ এর মূল মাধ্যন্দিনীয় সংজ্ঞক । কাত্যায়ন যার সর্বানুক্রমণী রচনা করেছেন । এ কারণে মাধ্যন্দিনীয় শাখাই পনেরোটি বাজসনেয় শাখার মধ্যে মুখ্য এবং সর্বসাধারণ ।
মহর্ষি বশিষ্ঠও বলেছেন – " মাধ্যন্দিনী শাখা সর্বসাধারণ রূপে পরিচিত ।
এই উপর্যুক্ত গ্রন্থ প্রায় ৪৯০ বর্ষ প্রাচীন । এতে উদ্ধৃত হোলীর ভাষ্য যজুঃসর্বানুক্রমণীর ভাষ্য বিদ্যমান ।
উপরোক্ত প্রমাণাদি দ্বারা সিদ্ধ হয় যে, আজ থেকে শত শত বর্ষ পূর্ব পর্যন্ত মাধ্যন্দিন শাখাই মূল যজুর্বেদ সংহিতা হিসেবে বিদ্বানগণের নিকট মান্য ছিলো । বর্তমানেও এমন অনেক হস্তলেখ উপলব্ধ, যার অন্তে এ শাখাকে মাধ্যন্দিন নাম দ্বারা উল্লেখ না থেকে বাজসনেয়ী সংহিতা নামে উল্লৈখ করা থাকে । এটা সম্ভব যে, শাকল সংহিতার ন্যায় মাধ্যন্দিনও এই সংহিতার পদকার বিদ্যমান ছিলেন এবং তাঁর নাম দ্বারা এই মাধ্যন্দিনীয় শাখার প্রচলন ছিলো । এরূপ সামবেদ তথা অথর্ববেদের ক্ষেত্রেও দ্রষ্টব্য ।
উপলব্ধ শাখা গ্রন্থসমূহের গম্ভীর অধ্যয়ন দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বিভিন্ন শাখার মন্ত্রপাঠও পর্যাপ্ত পাঠান্তর বিদ্যমান ।
সেই পাঠান্তর সমূহের সূক্ষ্ম বিবেচনা করার পর স্পষ্ট প্রতীয়মান হবে যে, কোনো সংহিতায় শব্দে ক্লিষ্ট বা অস্পষ্টার্থক বিদ্যমান, তো অপর আরেকটি সংহিতায় সেই স্থানের শব্দে যে পদ প্রযুক্ত হয়েছে তা অধিক স্পষ্টার্থক । শাখার প্রবচন কর্ত্তাগণ বিভিন্ন স্থানে এই প্রকার পাঠান্তর [ 2 ] দর্শানো হেতু মন্ত্রের ভাবকে ব্যক্ত করার প্রচেষ্টা করেছেন । তৈত্তিরীয়, মৈত্রায়ণী, কঠ, কপিষ্ঠল এই সংহিতা গুলো স্পষ্টভাবে শাখা, কেননা এই সংহিতা গুলোতে অনেক মন্ত্রে প্রতীক উল্লেখ পূর্বক ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং ব্রাহ্মণভাগ সংমিশ্রণও প্রত্যক্ষ উপলব্ধ হয় ।
বাকি রইলো কাণ্ব তথা মাধ্যন্দিনীয় ।
১. মাধ্যন্দিনীয় সংহিতায় " ভ্রাতৃব্যস্য বধায় " ( ১/১৮ ) পাঠ এবং কাণ্ব সংহিতার এই স্থানে " দ্বিষতো বধায় " পাঠ বিদ্যমান ।
২. মাধ্যন্দিনীয় ৯/৪০ নং মন্ত্রে " এষ বো অমী রাজা " পাঠ ; অপরদিকে কাণ্ব সংহিতায় উক্ত মন্ত্রের স্থানে " এষ ডঃ কুরবো রাজৈষ পঞ্চালা রাজা " ( ১১/৩/৩ ) পাঠ বিদ্যমান ।
এই দুটির প্রথমটিতে " ভ্রাতৃব্যস্য " পাঠ অপেক্ষা " দ্বিষতঃ " পাঠ অধিক স্পষ্টার্থক ।
দ্বিতীয় উদাহরণে মাধ্যন্দিন সংহিতার পাঠ " অমী রাজা " রয়েছে । " অমী " সর্বনাম পদ । এই মন্ত্রের বিনিয়োগ রাজসূয় যজ্ঞে হয়ে থাকে । অতঃ মাধ্যন্দিন'র পাঠ সব রাজার প্রতি সমান গুরুত্বপূর্ণ । পরন্তু কাণ্বসংহিতায় উল্লেখিত " কুরবঃ " তথা " পঞ্চালাঃ " এই বিশেষ পদ পঠিত । কাণ্বশাখার প্রচার কুরু তথা পাঞ্চালদেশে অধিকতর ছিলো, অতঃ এই সংহিতায় সেই পদের প্রয়োগ বিদ্যমান । কাণ্ব পাঠ এই দুই দেশের রাজার সহিত সম্বন্ধযুক্ত ছিলো । অন্য দেশের রাজাগণ তাদের রাজসূয় যজ্ঞে কাণ্বমন্ত্র ব্যবহার করে পারবে না ।
এ কারণে পূর্বোল্লিখিত উদাহরণ দ্বারা অতীব স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, মাধ্যন্দিন পাঠ মূল পাঠ এবং সর্বসাধারণের জন্য ।
এই প্রকারে শাখা সমূহের প্রোক্ত, ব্যাখ্যান বিষয়ে তথা এর বমূল বিশেষত্ব দর্শানো হলো । বৈদিক পরম্পরার সমগ্র ঋষি-মহর্ষি-মুনিগণের প্রমাণুসারে মূল চার সংহিতা ব্যতীত সমস্ত শাখা অনিত্য ।
শতপথকারের মতানুসারে শাখা সমূহ মনুষ্যপ্রোক্ত । শতপথের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষ্যকার আচার্য হরিস্বামী বেদকে স্বতঃপ্রমাণ মেনেছেন এবং শাখা সমূহকে পরতঃপ্রমাণ । বর্তমানে উপলব্ধ শাকল সংহিতা তথা মাধ্যন্দিনীয়-ই মূল বেদ ।
অতঃ মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত সিদ্ধান্তের উপর বঙ্গীয় তথাকথিত বিদ্বান সত্যব্রত সামশ্রমীর আরোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, মিথ্যা, কপোল কল্পিত, ভ্রান্ত তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান ।
বিদুষাং বশংবদঃ
নমস্কার🙏
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক
0 মন্তব্য(গুলি)