https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

মন্যুসূক্তের কপোলকল্পিত ভাষ্য - নৃসিংহভ্রান্তিবিলাস

Tuesday, May 24, 2022

 


সম্প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে ঋগ্বেদ ১০।৮৩-৮৪ ও অথর্ববেদ ৬।৪২ এর মন্যুসূক্তে যাতে পৌরাণিক বা বৈদিক কোন প্রখ্যাত বেদ ভাষ্যকার ই কখনো খুঁজে পাননি, কল্পনা করতে পারেননি সেই জিনিস খুঁজে পেয়েছে কিছু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী আর তা হলো নৃসিংহ অবতার! হঠাৎ মনে পড়ে গেল ইংরেজদের কথা, তাদের কেউ কেউ বেদে খুঁজে পেয়েছিল গ্রীক দেবতা জিউসকে কারণ বেদেও ইন্দ্রিয়ের চালনাকারী পরমাত্মার শক্তিকে বজ্রের শক্তির উপমায় বিশেষায়িত করা হয়েছে, অপরদিকে গ্রীক পুরাণে জিউস বজ্রের দেবতা, হয়ে গেল বেদে জিউস আছে!
ঠিক একইভাবে বেদের মন্যুসূক্তে আর কোন পৌরাণিক বা বৈদিক ভাষ্যকার নৃসিংহের ছিঁটেফোঁটা না পেলেও কিছু সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি নিজেদের মতপথকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য সেই সূক্তে জোর করে নৃসিংহদেবকে খুঁজে পাচ্ছেন। তারা জীবনে কখনো বেদ পড়েন না, বেদ অনুবাদও কখনও তাদের আচার্যরা করতেন না, কেবল যে দুই একটি সূক্তে জোর করে নিজেদের মাননীয় অবতারকে ঢুকানো যায় সেরকম দুই একটি সূক্তকে মনগড়া অনুবাদ করেছেন নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে।
 
🏵️ মন্যসূক্তে নৃসিংহ অবতার কে খুঁজে পেল? উত্তর হলো মধ্ব সম্প্রদায়ের ধীরেন্দ্রতীর্থ নামক এক ব্যক্তি এই ভাষ্য করেছেন । যদিও তাদের মূল গুরু শ্রীল মধ্ব নিজেই বেদের ১০২৪ টি সূক্তের মধ্যে মাত্র ৪০ টি সূক্তই ভাষ্য করেছেন সেখানে তাদের সম্প্রদায় থেকে এমন খড়কুটোর মত ভাষ্য আসাটাই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয় এই মাত্র ৪০ সূক্তের ভাষ্য ভারতবর্ষের কোথাও কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বীকৃত নয়, কোথাও সিলেবাসে জায়গাও পায়নি এতই অগ্রহণযোগ্য সেই ভাষ্যটি। শ্রীল মধ্বের সেই ভাষ্যের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকাতেই তার কারণ দেয়া আছে-
 
Though to know the proper
meaning of vedics one generally relies on Yaska's Nirukta and Panini's Vyakarana Sri Madhva depends on Nirukti composed by Vyasa.
অর্থাৎ বেদ ভাষ্য করতে হলে সাধারণত যেটা নিয়ম তা হলো বৈদিক ব্যাকরণ, ঋষি যাস্কের নিরুক্ত ও পাণিনির ব্যাকরণের প্রমাণ দিয়ে করতে হয় প্রতিটি শব্দের অর্থ করতে। কিন্তু মধ্ব তার কোন ধার ই ধারেননি। বেদের অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি ব্যাসের নিরুক্তি নামক একটি কাল্পনিক বইয়ের অনুসরণ করেছেন যেখানে নির্মোহ ইতিহাস বলছে ব্যাসদেব এই নামে কোন বই ই লেখেন নি। অর্থাৎ বেদে নিজেদের সম্প্রদায়ের জিনিসপত্র দেখাতে গিয়ে সব ব্যাকরণ, পাণিনি, নিরুক্ত বাদ দিয়ে মনগড়া ভাষ্য করেছেন আর তাই বেদাঙ্গবিরোধী হওয়ায় ভারতবর্ষের কোথাও ই কেবল আধ্যাত্মিক এই ভাষ্য গ্রহণযোগ্য হয়নি।
 
অপরদিকে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সহ আর্য সমাজ পণ্ডিতদের নিরুক্ত ও পাণিনিসূত্র অনুসরণকারী সম্পূর্ণ ৪ বেদের বিখ্যাত ভাষ্যসমূহ বিখ্যাত সকল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত যা আমরা আগেই দেখিয়েছিলাম।
 
💥 তাহলে মন্যুসূক্ত আসলে কী? মূলতঃ মন্যুসূক্তের ঋগ্বেদোক্ত অর্থ স্বাভিমান বা আত্মতেজ । আধিভৌতিক অর্থে তা শত্রুদের প্রতি নৈতিক ক্রোধ , আধিদৈবিক অর্থে প্রচণ্ড উত্তাম ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পাপপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে অদম্য আত্মবল নির্দেশ করে । এভাবেই বেদের প্রতিটি মন্ত্রের ত্রিবিধ অর্থ হয় যা নিচের লিংকে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারবেন।
 
বেদার্থের‌ ত্রিবিধ‌ তথা‌ চতুর্বিধ প্রক্রিয়া = http://back2thevedas.blogspot.com/.../blog-post_21.html...
মন্যুসূক্ত সম্পূর্ণ নিরুক্ত, পাণিনি, বেদাঙ্গাদির প্রমাণসহ সংস্কৃত - হিন্দি ও ইংরেজিতে পড়ে নিন নিচের লিংকে, কোথাও নৃসিংহের নামগন্ধও নেই= https://vedicscriptures.in/rigveda/10/84/1
 
🏵️ এখন আসুন সেই নিরুক্ত, নিঘন্টু বা বৈদিক ব্যাকরণ যার অনুসরণ করে বেদের শব্দগুলোর অর্থ করতে হয় সেই নিরুক্ত, নিঘন্টুতে কী বলা আছে মন্যু নিয়ে তা দেখে নিই। নিঘণ্টু ২।১৩, নিরুক্ত ১০।১৯ অনুযায়ী মন্যু শব্দের অর্থ ক্রোধ । আবার নিরুক্ত ১০।১৯ ও নিঘণ্টু ২।৬ অনুযায়ী তা ক্রোধ, কান্তিকর্ম [ নিঘ০ ২।৬ দীপ্তি] ও বধকর্মাদিও হয় ৷ মন্ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন এই শব্দ। এই ক্রোধ কিভাবে নৃসিংহ হয় তা মূর্খ ব্যতীত কল্পনা করা অসম্ভব! এভাবে তো বেদে মৎস্য শব্দটি থাকলে মৎস্য অবতার , গোরু শব্দটি থাকলে শিবের নন্দী আর মধুর উল্লেখ থাকলে শ্রীল মধ্বকেও খুঁজে পাওয়া যাবে! কয়েকবছর আগে খ্রিষ্টান মিশনারীরা বেদে ঈশ্বরের পুত্র শব্দ দুটি পেয়ে প্রচার করা শুরু করেছিল যে বেদে যিশুর কথা বলা আছে অনেকটা সেরকম বিষয়! ক্রোধ মানেই নৃসিংহ এরকম হাস্যকর কল্পনার বিষয়ে কী ই বা বলা যায়! এখনতো তাহলে শৈব ভক্তরা যদি বলে মন্যু বা ক্রোধ অর্থ এখানে শরভাবতার , শিবের রুদ্রস্বরূপ কিংবা বীরভদ্র আছে তবে তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে না ? 
 
আপনি কি জানেন ক্রোধ শব্দের ইংরেজি অর্থ Fury, কিন্তু কেন? কারণ গ্রীক পুরাণে ক্রোধের দেবতা ছিলেন Lyssa যার অপরনাম Fury, তাহলে তারা তো দাবী করবে মন্যুসূক্তে আসলে দেবতা Lyssa এর নাম আছে! আবার Lyssa এর অপর নাম Rabies যে নাম থেকে জলাতঙ্ক রোগের ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই রোগেও রোগী খুব রাগী,বিরক্ত থাকেন। তাহলে এখন ডাক্তাররা বলবে বেদের মন্যুসূক্তে জলাতঙ্ক রোগের কথাও আছে! এভাবেই হাস্যকর উপায়ে কোন ব্যাকরণিক প্রমাণ না দেখিয়ে ক্রোধ দেখলেই তার অর্থ নৃসিংহ, বজ্র দেখলেই জিউস, ঈশ্বরের পুত্র দেখলেই যিশু অর্থ করলে বেদে পৃথিবীর সবার নাম ই পাওয়া যাবে!
 
💥 হাস্যকর এইসব কথার আরেকটি চরম দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি । অথর্ববেদেও মন্যু আছে সেখানে বলা হয়েছে যে মানব যেন মন্যু ত্যাগ করে । অর্থাৎ এখানে ক্রোধই হলো অর্থ । চলুন খুব সুন্দর এই মন্ত্রটি দেখে নিই আগে-
ঋষি: - ভৃগ্বঙ্গিরা
দেবতা - মন্যুঃ
ছন্দঃ - ভুরিগনুষ্টুপ্
সূক্তম্ - পরস্পরচিত্তৈদীকরণ সূক্ত
অব জ্যামিব ধন্বনো মন্যুং তনোমি তে হৃদঃ।
যথা সংমনসৌ ভূত্বা সখায়াবিব সচাবহৈ ॥
(জ্যাম্) অ০ ১।১।৩। মৌর্বীম্ (ইব) যথা (ধন্বনঃ) ধনুষঃ (মন্যুম্) ক্রোধম্ (অব তনোমি) অবরোপয়ামি। অবতরামি (তে) তব (হৃদঃ) হৃদয়াৎ (যথা) যেন প্রকারেণ (সংমনসৌ) সমানমনস্কৌ পরস্পরানুরাগিণৌ (ভূত্বা) (সখায়ৌ) সুহৃদৌ (সচাবহৈ) ষচ সমবায়ে−লোট্। সমবেতৌ নিত্যসংগতৌ ভবাব ॥
Subject - Freedom from Anger
Meaning -
I relax the tension of anger from your mind like releasing the string from the bow so that you and I, being good and happy at heart, may live together like friends.
অর্থাৎ ধনু হতে যেমন বাণ নিক্ষেপ হয় ঠিক তেমনি আমরা যেন হৃদয় হতে ক্রোধকে নিক্ষেপ করে ফেলে পরস্পর সুখে-শান্তিতে মিত্রের ন্যায় বাস করতে পারি।
এখানে মন্যু মানে নৃসিংহ হলে কথাটির অর্থ দাঁড়াত হে মানব, তোমরা নৃসিংহকে ত্যাগ করো 😂 এভাবেই প্রকরণ না বুঝেই, বিখ্যাত সব বেদভাষ্যকারদের না মেনে, নিরুক্ত, পাণিনি ব্যাকরণ কিছুর ধার না ধেরে হঠাৎ করে শত শত বছর পর বেদের একটা সূক্ত ভাষ্য করতে গেলে লেজেগোবরে লেগে যায় আর তা গবেষক মহল দ্বারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
 
🏵️ এবার চলুন আমরা দেখে নিই বিখ্যাত সব বৈদিক, পৌরাণিক, অদ্বৈতবাদী বেদ ভাষ্যকারগণ যাদের ভাষ্য গবেষক মহলে স্বীকৃত তাঁরা এই মন্যুসূক্তে মন্যুর অর্থ কী করেছেন-
 
💥 মন্যুঃ 💥
দুর্গাচার্য - ঋগ্বেদ ১০.৮৯.৬ ও নিরুক্ত ৫.৩, অর্থ করেছেন -ক্রোধঃ ।
স্কন্দস্বামী ও মুদ্গল- ঋগ্বেদ ১০.৩৪.১৪, নিরুক্ত ১.৫, অর্থ- ক্রোধঃ, ঋগ্বেদ ১০.৮৯.৬ ও নিরুক্ত ৫.৩, অর্থ- ক্রোধঃ।
উদ্গীথ- ঋগ্বেদ ১০.৮৩.২ -মন্যুঃ ইন্দ্রঃ । মন্যুরেব ইন্দ্ররূপেণ অবস্থিত ইত্যর্থঃ, ১০.৮৩.২ মন্যুঃ এব আস দেবঃ । মন্যুরেব বভূব অন্যোঽপি দেবঃ । অন্যদেবরূপেণ মন্যুরেব অবস্থিত ইত্যর্থঃ, ১০.৮৩.২ মন্যুঃ হোতা। মন্যুরেব হোতা ঋত্বিগিত্যর্থঃ ।
বেংকটমাধব- ১.২৪.৬ শত্রূণামভিমননং চ, ২.২৪.১৪ ক্রোধো ভবতি, ৭.৮৬.৬ মন্যুঃ ব্রাহ্মণাদীনাং হনননিমিত্তভূতঃ, ৮.৪৮.৮ অভিমন্তা চ, ৮.৭১.২ ক্রোধঃ, ১০.৮৩.২ মন্যুঃ এব ইন্দ্রঃ, ১০.৮৩.২ মন্যুঃ এব আস সর্ব: দেবঃ, ১০.৮৯.৬ ক্রোধঃ ।
সবচেয়ে বিখ্যাত পৌরাণিক ও অদ্বৈতবাদী ভাষ্যকার সায়ণাচার্য যার ভাষ্য সকল পৌরাণিকদের সর্বমান্য- ২.২৪.১৪ মননসাধনো মন্ত্রঃ ক্রোধো বা, ৭.৮৬.৬ ক্রোধশ্চ গুর্বাদিবিষয়ঃ সন্ননর্থহেতুঃ, ৮.৬.১৩ ক্রোধঃ, ৮.৪৮.৮ ক্রোধঃ ক্রুদ্ধো বা অলর্তি। তাদৃশস্যোভয়বিধস্য, ৮.৭১.২ ক্রোধঃ, ১০.৩৪.১৪ ক্রোধঃ, ১০.৮৩.২, ১০.৮৩.২, ১০.৮৩.২ এব, ১০.৮৪.৭ চ, ১০.৮৯.৬ ক্রোধঃ ।
(দ০) ২.২৪.১৪ ক্রোধঃ ।
 
💥 মন্যুম্ 💥
স্কন্দস্বামী- ১.২৪.৬ ক্রোধম্, ১.১০৪.২ যে স্তোতার: ক্রোধম্।
উদ্গীথ-১০.৩৫.৪ ক্রোধম্, ১০.৮৩.২ কারণাবস্থিতম্
বেংকটমাধব-১.১০৪.২ মননম্, ৪.১৭.১০ ক্রোধম্, ৬.২৫.২ মন্যুম্ চ তস্য, ৭.১৮.১৬ ক্রোধম্, ৭.৬০.১১ তস্য শত্রোঃ ক্রোধম্, ৭.৬১.১ মনঃ, ৮.৪.৫ অভিমন্তারং শত্রুম্, ৮.১৯.১৫ ক্রোধম্, ৮.৭৮.৬ ক্রোধম্, ৯.৯৭.৮ অভিমন্তারম্, ১০.৩৫.৪ ক্রোধম্, ১০.১২৮.৬ ক্রোধম্, ১০.১৫২.৩ ক্রোধম্।
সায়ণাচার্য- ১.২৪.৬ ত্বদীয়ং কোপমপি, ১.১০৪.২ ক্রোধম্, ২.২৩.১২ ক্রোধং জ্ঞানং বা, ৪.১৭.১০ কোপম্, ৫.৭.১০ মননসাধনং স্তোত্রম্, ৬.২৫.২ সংগ্রামাদিষু বিদ্যমানং কোপম্, ৭.১৮.১৬ ক্রোধম্, ৭.৩৬.৪ কোপম্, ৭.৬০.১১ স্তোত্রম্, ৭.৬১.১ স্তোত্রং কর্ম বা, ৮.৪.৫ পরকীয়ং ক্রোধম্, ৮.১৯.১৫ ক্রোধং যচ্চ দ্যুম্নমভিভবেৎ তদাহরেত্যন্বয়ঃ । 'ধ্যৈ চ' ইতি পৃষোদরাদিপাঠাৎ দুরো রেফস্যোত্বং উত্তরপদাদেষ্টুত্বং চ,৮.৭৮.৬ ক্রোধম্। কেষাম্, ৯.৯৭.৮ শত্রূনভিমন্যমানং সোমম্, ১০.৩৫.৪ ক্রোধম্, ১০.৮৩.২ এব দেবম্, ক্রোধমপি বিনাশয়, ১০.১২৮.৬ ক্রোধম্, ১০.১৫২.৩।
(মু০) ১.২৪.৬ ত্বদীয়ং কোপমপি, ১.১০৪.২ ক্রোধম্।
দয়ানন্দ সরস্বতী- ১.২৪.৬ দুষ্টান্ প্রাণিনঃ প্রতি যঃ ক্রোধস্তম্, ১.১০৪.২ ক্রোধম্। মন্যুরিতি ক্রোধনামসু পঠিতম্ । (নিঘন্টু ০২.১৩), ২.২৩.১২ ক্রোধম্, ৪.১৭.১০ ক্রোধম্, ৫.৭.১০ ক্রোধম্, ৬.২৫.২ ক্রোধম্, ৭.১৮.১৬ ক্রোধম্, ৭.৩৬.৪ ক্রোধম্, ৭.৬০.১১ ক্রোধম্ ৭.৬১.১ ক্রোধম্।
 
অর্থাৎ সকল বিখ্যাত ও গবেষক মহলে স্বীকৃত ও পরম্পরাবাদী বেদভাষ্যকারদের মতেই মন্যু অর্থ ক্রোধ। তাদের কেউই সমর্থন করেননি মন্যু অর্থ নৃসিংহ। সুতরাং পরম্পরা অনুযায়ীই এখানে নৃসিংহের নামগন্ধ নেই তা প্রমাণিত।
 
💥 একজন দাবী করেছেন মহাভারতে নাকি পাণ্ডুপুত্র ভীম নৃসিংহ দেবের নিকট এই মন্যসূক্ত পাঠ করে স্তুতি করেছেন! এই কাল্পনিক ওহীটা কি স্বপ্নে এসে ধীরেন্দ্রতীর্থকে কেউ দিয়ে গেছে! বাস্তবে মহাভারতে এরকম কোন কথা ই নেই। প্রমাণ দিন তো মহাভারতের কোথায় এই সূক্ত দ্বারা ভীম দ্বারা স্তুতির উল্লেখ আছে! আপনার সুবিধার জন্য মহাভারতের ইংরেজি অনুবাদ ও বিখ্যাত মহাভারত টীকাকার নীলকণ্ঠের টীকাসহ মহাভারত লিংক দিয়ে দেয়া হলো। দেখি খুঁজে দেখান কোন জায়গায় এই কাল্পনিক কথা আপনি পেয়েছেন!
 
ইংরেজি অনুবাদ - https://www.sacred-texts.com/hin/m02/m02067.htm
নীলকণ্ঠ টীকাসহ - https://archive.org/.../mahabharata_nilakanthas...
 
💥 আরেকটি মজার বিষয় হলো পুরাণে অস্বাভাবিক অসংগতি, একই পুরাণে একই গল্প কয়েকরকমভাবে লেখা হয়েছে আজগুবি গল্পের মতো আর তাকে ঢাকতেই অনেকে বলেন পুরাণের একেককাহিনী একেক কল্পের বলে ভিন্ন ভিন্নভাবে লেখা । পূর্বোক্ত নৃসিংহ অবতারের পুরাণের কাহিনীতেও একই যুক্তি প্রদর্শন করেছেন তারা । মৎস্যপুরাণে যেখানে কোন স্তম্ভ ভেঙে নৃসিংহের বের হবার কথা নেই, নৃসিংহ পুরাণেরও কোন কোন সংস্করণে নেই, কিন্তু ভাগবত পুরাণে আছে সেই সাংঘর্ষিকতাকে আড়াল করতে তারা বললেন কল্পভেদে ঘটনা ভিন্নভাবে ঘটে বলে পুরাণের কাহিনী ভিন্ন । আবার এখন তারাই ধরা খেয়ে বলছেন সব কল্পেই নাকি কাহিনী একই, প্রতি কল্পেই নাকি ভগবান তার পার্ষদদের সাথে একইরূপ লীলা প্রকাশ করেন! এই ধরনের পরিহাস , প্রলাপোক্তি কিংবা জ্বাজ্জল্যমান ভণ্ডামি করতে বিবেকে না বাঁধা দুঃখজনক। নাকি পরান্ন ধ্বংস করতে করতে সেটাও অগ্ন্যাহুতি দিয়েছেন ? আবার তাদের কেউ কেউ এই দাবী করেছেন যে ব্রাহ্মণ গ্রন্থেই নাকি ভগবানের প্রতি কল্পে এসে এই একই লীলা করার কথা বলা হয়েছে! ব্রাহ্মণের নামে মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে নিজেদের একদম কলিযুগীয় বৈষ্ণব প্রমাণ না করলে কি একেবারেই চলছিলো না ? আপনাদের প্রতি প্রকাশ্য আহ্বান রইলো প্রতি কল্পে একই ঘটনা ঘটবে তার প্রমাণ বাক্য ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করবেন । 
 
💥 তারা আবার এখানে নিজেরাই স্বীকার করেছেন বেদের মন্ত্রের ত্রিবিধ প্রকার অর্থ আছে।কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো মায়াবাদীরা কখনোই ত্রিবিধ অর্থ মানেননি, কেবল যাজ্ঞিক অর্থকেই সঠিক বলেছেন! আজ ধরা খেয়ে তারাও লাইনে এসেছেন এবং ত্রিবিধ অর্থের কথা বলছেন। করপাত্রী মহারাজ যদিও তার ভাষ্যের ভূমিকাতে উল্লেখ করার পর স্বপ্নাবেশে স্বপ্নদোষেও তথাকথিত আধ্যাত্মিক অর্থ করেছেন স্বীয় পূর্ব মন্তব্য অগ্রাহ্য করে কিন্তু মধ্ব যেহেতু ঋগ্বেদ ১।১ বিষ্ণুপরক ভাষ্য করেছেন তাই এখানে এখন অবশ্য তাদের ত্রিবিধ না মেনে উপায় নেই। করপাত্রী মহারাজের সেইসব ভুল ভাষ্যের খণ্ডন আমরা আগেই করেছি, লিংক দেয়া হলো।
 
করপাত্রী বেদে ইতিহাস খণ্ডন http://back2thevedas.blogspot.com/.../blog-post_28.html...
যজুর্বেদ ৩।৬ নিয়ে করপাত্রীর আক্ষেপের সমূলে উৎপাটন http://back2thevedas.blogspot.com/.../blog-post_19.html...
 
🏵️ কেউ কেউ বলছেন সায়ণ ভাষ্যে বেদে নাকি কুরু -যদু অর্থাৎ মহাভারতের চরিত্রদের কথা আছে কিন্তু পূর্ব মীমাংসায় [ ১।১।৩১] যে "পরন্তু শ্রুতিসামান্যভাম্ " সূত্রটি আমাদের বলছে যে নামমাত্রেই ব্যক্তিবাচক নয়, অর্থাৎ বেদে হৃত্বিক থাকলেই তা হৃত্বিক রোশন না বা দুঃশাসন শব্দটি থাকলেই তার অর্থ মহাভারতের দুঃশাসন নয় বরং শব্দগুলোর শব্দানুকৃতি বা ভিন্ন নির্বচন রয়েছে সেই বিষয়টা ভুলে গেলে চলবে কীভাবে? তাহলে কীভাবে বেদে ধৃতরাষ্ট্র, দূর্যোধন খুঁজে পাই আমরা! আমরা আগেও অসংখ্য লেখাতে দেখিয়েছি যে বেদের শব্দভাণ্ডার থেকেই উপমহাদেশের সব নগর, নদী, ব্যক্তিদের নামকরণ করা হতো তৎকালীন যুগে। তাই বেদে কোন নাম দেখলেই তাকে কোন ঐতিহাসিক ব্যক্তি বা স্থানের নাম মনে করার কোন যুক্তি নেই। এই প্রসঙ্গে আমাদের কয়েকটি লেখাও ব্লগে আছে, পড়ে নেবেন-
 
বেদে কি ইতিহাস আছে ?
 
অর্থাৎ সকল বিখ্যাত ও পরম্পরাগত ভাষ্যের প্রমাণসহ দেখানো হলো যে বেদের মন্যু বা ক্রোধের সাথে গ্রীক দেবতা জিউস, শিবের রূদ্রাবতার, বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতার বা দেবতা Lyssa এর কোন সম্পর্ক নেই, যেমন সম্পর্ক নেই অথর্ববেদের কুন্তাপ সূক্তের সাথে নবী মুহাম্মদ বা অমৃতের পুত্রের সাথে যিশুখ্রিস্টের। মন্যু শব্দের অর্থ স্বাভিমান বা আত্মতেজ । আধিভৌতিক অর্থে তা শত্রুদের প্রতি নৈতিক ক্রোধ , আধিদৈবিক অর্থে প্রচণ্ড উত্তাপ ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পাপপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে অদম্য আত্মবল নির্দেশ করে । বেদে কোন রূপকথার কল্পকাহিনী, ঠাকুরমার ঝুলির গল্প নেই, শিশুদের মতো গল্পকে সত্য ভাবার মায়া সনাতনীরা যত দ্রুত ত্যাগ করবে ততই মঙ্গল।
ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক