অতিপ্রাচীন
কাল থেকে ষড় বেদাঙ্গের একটি অংশ কল্প নামে খ্যাত । অতঃ যে সময়কাল থেকে
বেদাঙ্গের অস্তিত্ব বিদ্যমান, তদ্রূপ কল্প শাস্ত্রেরও অস্তিত্বও
বিদ্যমান । বেদাঙ্গ সাহিত্যে কল্পের স্থান অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ ।
সূক্ষ্মেক্ষিকয়া দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ দ্বারা স্পষ্ট যে, কল্পে
কর্মকাণ্ডীয় বহু বিধি-বিধান, বিধি প্রয়োগানুষ্ঠান তথা সামাজিক প্রথা
পরম্পরার স্পষ্ট এবং সমুচিত রূপে প্রস্তুতিকরণের নিয়ম বিদ্যমান ।
কল্পশাস্ত্র বিনা বেদ মন্ত্রের আধারে যজ্ঞ সম্পাদন সম্ভব নয় । সায়ণের
মন্তব্য - " কল্প্যতে সমর্থ্যতে য়াগপ্রয়োগোত্র " অর্থাৎ, যজ্ঞের
প্রয়োগে সমর্থন অথবা কল্পনা হওয়া কারণে একে কল্প বলা হয় । বিষ্ণুমিত্র
বলেছেন - " কল্পো বেদবিহিতানাং কর্মণামানুপূর্ব্যেণ কল্পনাশাস্ত্রম্
অর্থাৎ, বেদ বিহিত কর্মসমূহের ক্রমপূর্বক ব্যবস্থাকারী শাস্ত্রকে কল্প
বলা হয় ।
কল্পশাস্ত্রকে ৪ প্রকারে ভাগ করা হয়েছে । ১. শ্রৌতসূত্র ২. গৃহ্যসূত্র ৩. ধর্মসূত্র ৪. শূল্বসূত্র
- পাশ্চাত্য ম্লেচ্ছদের কাল্পনিক ভিত্তিহীন চিন্তাভাবনা —
উপলব্ধ ব্রাহ্মণ শাস্ত্রগুলোতে অঙ্গসমূহের উল্লেখ [ 1 ] থাকার ফলে প্রমাণিত হয় যে, ৫০টিরও বেশি কল্প শাস্ত্র বর্তমানে উপলব্ধ ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোর পূর্বে বিদ্যমান ছিলো ।
তৈত্তিরীয় তথা কাঠক ব্রাহ্মণ শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে কল্প শাস্ত্রের উল্লেখ উপলব্ধ । [
2 ] অতঃ ভারতীয় বাঙময়ের ইতিহাসে বর্তমানে উপলব্ধ ব্রাহ্মণ শাস্ত্র
গুলোর পরবর্তীতে কোনো সূত্রকাল প্রাদুর্ভাবের কল্পনা ; ইতিহাস এবং
বিদ্যার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মূর্খামী আর কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেওয়া
হয় । ম্যাক্সমুলার, বুহ্যর, ম্যাকডোনাল এবং কীথ প্রভৃতি পাশ্চাত্য
লেখক এমন কাল্পনিক ভিত্তিহীন স্বরচিত মত উপস্থিত করেছে ।
প্রাচীনতার প্রমাণ —
এখন কল্প-বাঙ্ময়ের প্রাচীনতার অকাট্য, প্রবল বিস্তারিত প্রমাণ ক্রমশঃ উপস্থিত করা হবে….
১. বৌধায়ন ধর্মসূত্র ( ভারত যুদ্ধের ২০০-৩০০ বর্ষ পশ্চাৎ ) — ধর্মপর্ষৎ এর উল্লেখ করার সময় বৌধায়ন মুনি কোনো পুরাতন ধর্মশাস্ত্রের উদাহরণ দিয়েছেন —
ক. অথাপ্যুদাদরন্তি —
" চাতুর্বৈদ্যং বিকল্পী চ অঙ্গবিদ্ ধর্মপাঠকঃ "
( ১/১/৮ )
অর্থাৎ, পর্ষৎ-এ অঙ্গবিদ্ও অবস্থান করে ।
তথা শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত পঙিক্তপাবনো এর বিষয়ে বৌধায়ন মুনি লিখেছেন — [ 3 ]
খ. পঞ্চাগ্নিঃ ষড়ঙ্গবিদ্ শীর্ষকঃ…..
ইতি পঙিক্তপাবনাঃ । ( ২/৮/২ )
অর্থাৎ,
পঙিক্ত পাবনো-তে একজন ষড়ঙ্গবিৎ গণনা করা হয়ে থাকে । পঙিক্তপাবনো-তে
ষড়ঙ্গবিৎ এর পরিগণন বৌধায়ন মুনির কোনো প্রকার নবীন কল্পনা ছিলো না ।
এই পরম্পরা বৌধায়ন থেকে একশত-দুইশত বর্ষ পূর্বেও আরম্ভ হয় নাই,
প্রত্যুত শ্রাদ্ধ অতি প্রাচীনকাল থেকে চলমান । বস্তুতঃ কল্প শাস্ত্রের
প্রবচন কর্তা অত্যন্ত প্রাচীনকালেও বিদ্যমান ছিলো ।
২. পাণিনি মুনি ( ভারত যুদ্ধের ২০০ বর্ষ পশ্চাৎ ) —
বৌধায়ন
মুনির জ্যেষ্ঠ, কিন্তু তাঁর সমকালীন এবং শৌনক কুলপতির কিছু সময়ের
উত্তরবর্তীকালের মুনি পণিন্ এর পুত্র এবং উপগোত্রকার পাণিনি মুনির দুইটি
সূত্র —
ক. কাশ্যপকৌশিকাভ্যামৃষিভ্যাং ণিনিঃ ।
( ৪/৩/১০৩ )
অর্থাৎ, কাশ্যপ এবং কৌশিক ঋষিগণের কল্পগুলোতে " তেন প্রোক্ত " বিষয়ে ণিনি প্রত্যয় হয়ে থাকে ।
এই সূত্রের উপর কাশিকাকার জয়াদিত্য ভাষ্য করেন —
কাশ্যপ ঋষি প্রোক্ত কল্পের অধ্যেতা
"
কাশ্যপিনঃ " প্রবচন দিতেন এবং বর্তমানকালীন গোত্রকাশ্যপ দ্বারা রচিত
গ্রন্থ বা সংহিতাকে " কাশ্যপীয়ম্ " অথবা " কাশ্যপীয়া বলা হয় ।
সূক্ষ্ম
নিদর্শন — কাশ্যপ কল্পের রচয়িতা মহর্ষি কশ্যপের ঔরস পুত্র ছিলেন ।
তিনি কোনো গোত্র-কাশ্যপ ( কাশ্যপ গোত্রের অধিকারী ) আচার্য ছিলেন না ।
ইতিহাস অনুসারে কশ্যপ এবং তাঁর গোত্র প্রবর্তক অপত্য কাশ্যপের কাল ভারত যুদ্ধের সহস্র বর্ষ পূর্ব ছিলো ।
অতঃ ম্যাক্সমুলার দ্বারা কাল্পনিক নির্ধারিত নির্দিষ্ট সূত্রকালের কল্পনা সম্পূর্ণ নিরাধার, ভিত্তিহীন, অসিদ্ধ এবং মিথ্যা প্রলাপ ।
পাণিনির সূত্রে নির্দিষ্ট কল্পকার কৌশিক ঋষি হলেন প্রসিদ্ধ কুশিক-পৌত্র বিশ্বামিত্র ।
এই কাশ্যপ ইন্দ্রের সাক্ষাৎ শিষ্য ছিলেন এই কাশ্যপ । [ 4 ]
অনন্ত
কাল পর্যন্ত দেবাসুর সংগ্রামে ব্যাপ্ত হওয়ার কারণে যখন বেদ জ্ঞান
ইন্দ্রের বিস্মৃত হয়ে যায়, তখন তিনি তাঁর শিষ্য কৌশিক বিশ্বামিত্রের
মাধ্যমে পুনঃ বেদাধ্যয়ন করেন । এই কারণে ইন্দ্রকে কৌশিক বলা হয় । [ 5 ] এই কৌশিক বিশ্বামিত্রের সময়কালও ভারত যুদ্ধের সহস্র বর্ষ পূর্বে ।
পাণিনির দ্বিতীয় সূত্র —
খ. পুরাণপ্রোক্তেষু ব্রাহ্মণকল্পেষু ।
( ৪/৩/১০৫ )
অর্থাৎ, যদি ব্রাহ্মণ এবং কল্প প্রাচীন আচার্য প্রোক্ত হয়, তাহলে তৃতীয়া সমর্থ প্রাতিপদিকো দ্বারা ণিনি প্রত্যয় হয় ।
যথা --
প্রাচীন কল্প — পৈঙ্গীকল্পঃ
অর্বাচীন কল্প — আশ্মরথঃ কল্পঃ
এখানে
প্রাচীন আচার্য প্রোক্ত হওয়ার কারণে পৈঙ্গী-তে ণিনি প্রত্যয়ের প্রয়োগ
হয়েছে এবং অর্বাচীন প্রোক্ত আশ্মরথ-এ ণিনি এর প্রয়োগ না হয়ে অণু এর
প্রয়োগ হয়েছে ।
পাশ্চাত্য গবেষক Martin Haug দ্বারা ম্যাক্সমুলারের নিরাকরণ —
ঐতরেয় ব্রাহ্মণের সম্পাদক মার্টিন হাগ লিখেন —
" The strict distinction between a Brahmana and Sutra period is, on a closer inquiry hardly tenable. "
( ঐতরেয় ব্রাহ্মণ. ভাগ ১. ভূমিকা )
অর্থাৎ, গভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ এবং সূত্র-কাল এর সুস্থির অন্তর অসিদ্ধ প্রতীত হয় ।
প্রোক্ত বাঙময়
— পাণিনি প্রাচীন বাঙময়কে দৃষ্ট, প্রোক্ত, কৃত, উপজ্ঞাত এবং ব্যাখ্যান
এই পাঁচটি বিভাগে বিভক্ত করেছেন । দৃষ্ট এবং প্রোক্ত গ্রন্থের মধ্যে মহান
ভেদ লক্ষণীয় । পাশ্চাত্য ম্লেচ্ছগণ '' প্রোক্ত " শব্দের অর্থই বুঝতে অক্ষম ।
এ কারণে তারা অনেক ভ্রান্ত, ভিত্তিহীন কল্পনা করেছে ।
পাণিনি আদি অনুসারে কল্পকারগণের পৌর্বাপর্য —
পাণিনি
প্রদর্শিত এই নিয়মগুলো এবং ভারতীয় ইতিহাসের দৃষ্টি দ্বারা কল্প-তন্ত্রের
পৌর্বাপর্য বিভিন্ন প্রকারে স্পষ্ট করা যায় এবং এর ঐতিহাসিক কালও
নির্ণয় করা যায় ।
১. কাশ্যপ — কৌশিক কল্প
২. হারীত — দেবল আদির ধর্ম সূত্রের
৩. পৈঙ্গী — আরূণপরাজী কল্প
৪. ঔপমন্যব — গৌতমকল্প
( ভারত যুদ্ধের ৪০০ বর্ষ পূর্ব )
৫. শাঙ্খায়ন, চরক, আহ্বরক, কাঠক, মানব আদি কল্প
৬. আশ্মরথ, আলেখন -- শালীকি আদির কল্প
৭. যাস্ক কল্প ( ভারত যুদ্ধকাল )
৮. আপস্তম্ব, ভারদ্বাজ, সত্যাষাঢ় আদি কল্প
( ভারত যুদ্ধের ৫০ বর্ষ পশ্চাৎ )
৯. শাম্বব্যকল্প, ভারত সংহিতা, মহাভারত সংহিতা
১০. শৌনক কল্প ( ভারত যুদ্ধের ১৫০ বর্ষ পশ্চাৎ )
১১. পাণিনি ( ভারত যুদ্ধের ২০০ বর্ষ পশ্চাৎ )
১২. আশ্বলায়ন, কাত্যায়ন, বৌধায়ন আদি কল্প ( ভারত যুদ্ধের ২০০ বর্ষ পশ্চাৎ )
এখন এই নামের উপর অতি সংক্ষিপ্ত টিপ্পন ক্রমশঃ দেওয়া হবে ।
১. পাণিনীয় গণপাঠ ৪/১/১০৫ নং সূত্রে কশ্যপ এবং কুশিক এই দুটি নামের উল্লেখ একত্রে রয়েছে । এ দ্বারা গোত্র অর্থে
" অঞ্ " প্রত্যয় হয়ে কাশ্যপ এবং কৌশিক পদ নিষ্পন্ন হয় । মহর্ষি পাণিনি ৪/১/১০৩ নং সূত্রে এই নাম গুলোর সাথে ঋষি পদের প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রাচীনতার স্পষ্ট সংকেত দিয়েছেন ।
বিশ্বামিত্রকে কৌশিক সম্বোধন করা হয় । বিশ্বামিত্র ঋষি ছিলেন । পাণিনি ৬/৩/১৩০ নং সূত্রেও বিশ্বামিত্রকে ঋষি হিসেবে উল্লেখ করেছেন ।
২. হারীত-দেবল — সাংখ্যসপ্ততি এর ৭১ নং কারিকার ব্যাখ্যায় যুক্তিদীপিকায় বর্ণিত —
"
হারীত বাদ্ধলি কৈরাত পৌরিক ঋষভেশ্বর পঞ্চাধিকরণ পতঞ্জলি বার্ষগণ্য
কৌণ্ডিন্য মুকাদিক শিষ্য পরম্পরাগতং ভগবান্ ঈশ্বরকৃষ্ণশ্ব "
অর্থাৎ,
দশমকুমার ভগবান পঞ্চশিখ এর পরবর্তী সাংখ্য জ্ঞান হারীত, বাদ্ধলি,
পতঞ্জলি এবং বার্ষগণ্য আদি দ্বারা ঈশ্বরকৃষ্ণ পর্যন্ত পৌঁছায় ।
সাংখ্যসপ্ততি এর ৭২ নং কারিকার ব্যাখ্যায় আচার্য মাঠর বর্ণনা করেন —
"
কপিলাদাসুরিণা প্রাপ্তম্…… । ততঃ পঞ্চশিখেন । তস্মাদ্
ভার্গব-উলুক-বাল্মীকি-হারীত-দেবলপ্রভৃতী-নামাগতম্ । তত ঈশ্বরকৃষ্ণেন
প্রাপ্তম্ "
অর্থাৎ,
পঞ্চশিখ থেকে উলুক ( বৈশেষিক শাখপ্রবক্তা ), বাল্মীকি ( রামায়ণকর্তা
তথা য়াজুষ আচার্য ), হারীত ( ধর্মসূত্র তথা আয়ুর্বেদ সংহিতার
প্রবক্তা ) তথা দেবল
( ধর্মসূত্র প্রবক্তা ) প্রভৃতিগণ সাংখ্য জ্ঞান পেয়েছিলেন ।
হারীত
ধর্মসূত্র এবং সাংখ্য — হারীত ধর্মসূত্র একটি সুবিশাল গ্রন্থ । এ
গ্রন্থের বড় বড় উদাহরণ ধর্মশাস্ত্রের নিবন্ধ গ্রন্থে উপলব্ধ । কৃত্য
কল্পতরু এর মোক্ষকাণ্ডে হারীত ধর্মসূত্রে সাংখ্য-যোগ বিষয়ক অনেক বচনের
উল্লেখ এখনও বিদ্যমান । [ 6 ]
হারীত এর ধর্ম সূত্রস্থ মোক্ষ প্রকরণের উল্লেখ মহাভারত শান্তিপর্ব ২৮৪ নং অধ্যায়ে বিদ্যমান —
" হারীতেন পুরাগীতং তং নিবোধ য়ুধিষ্ঠির ।
ন হিংস্যাৎ সর্বভুতানি মৈত্রায়ণগতিশ্বরেৎ "।
অর্থাৎ,
পূর্বকালে হারীত যা প্রবচন দিয়েছিলেন তা জানো যুধিষ্ঠির । সমস্ত
প্রাণীকে কষ্ট যেনো না দেওয়া হয়, মিত্রতা দ্বারা যেনো তাদের সহিত
ব্যবহার করা হয় ।
হারীত
ভারত যুদ্ধ থেকে শতবর্ষ পূর্বে জীবিত ছিলেন । তাঁর রচিত আয়ুর্বেদ
সংহিতা প্রসিদ্ধ । বৌধায়ন ধর্মসূত্র এবং তাঁর পূর্ববর্তী আপস্তম্ব
ধর্মসূত্রে হারীত স্মৃতির উল্লেখ রয়েছে ।
দেবল ধর্মসূত্র — দেবল মহর্ষি হারীতের সময়কালীন ঋষি । তিনি দেবলোক এবং মনুষ্যলোক এই দুই লোকেই বিচরণ করতেন । মহাভাষ্য ১/৩/৫৪ নং সূত্রে একটি প্রাচীন বচনের উল্লেখ রয়েছে —
" উভৌ লোকৌ সংচরস ইমং চামুং চ দেবল "। [ 7 ]
দেবল
ধর্মসূত্রের সাংখ্যবিষয়ক বচন কৃত্যকল্পতরু এর মোক্ষকাণ্ডে প্রচুর
উল্লেখ রয়েছে । দেবল এর সাংখ্য-যোগ বিষয়ক মতের খণ্ডন আচার্য শঙ্কর তার শারীরক সূত্র ভাষ্যে নিম্নলিখিত শব্দসমূহ দ্বারা করেছে —
" দেবল প্রভৃতিমিশ্ব কৈশ্বিদ্ --
ধর্মসূত্রকারৈঃ স্বগ্রন্থৈষ্বাশ্রিতঃ " । ১/৪/২৮।।
" বেদানুসারিমিশ্ব কৈশ্বিচ্ছিষ্টৈ
কৈনচিদংশেন পরিগৃহীতত্বাৎ " । ২/১/১২ ।।
এর উপর রত্নপ্রভাকর লিখেন —
" শিষ্টেঃ দেবলাদিভিঃ " ।
দেবল রচিত ধর্মসূত্র শ্লোকের উল্লেখ মহাভারত এবং পঞ্চতন্ত্র আদি গ্রন্থে উপলব্ধ ।
নিঃসন্দেহে হারীত এবং দেবল তথা তাঁদের ধর্মসূত্র ভারত যুদ্ধের শতবর্ষ পূর্বেই রচনা হয়েছে ।
কাণের দেবল-কাল বিষয়ক মত —
"
Apararka and citi verses from Devala on parti tion, inheritance, the
Smriti Chandrika on woman's power over stridhawa these show that Devala,
the jurist, flo urished about the same time as the great jurists
Brihaspti and Katyayana (p. 121) Brihaspati must have flourish ed
between 200 ann 400 A. D. "
অর্থাৎ, দেবল এর সময়কাল ২০০-৪০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ।
কাণের ভ্রান্তি — সাংখ্য পরম্পরায় হারীত এবং অসিত দেবল একই সময়কালীন ।
হারীত
ধর্মসূত্রের সময়কাল কাণে তার বইতে সরাসরি উল্লেখ করেন নাই, তথাপি সে
এই ধর্মসূত্রের সময়কাল গৌতম ধর্মসূত্রের পরবর্তীকাল মেনেছে । এই বিষয়
ভারতীয় ইতিহাসের সর্বদা বিরুদ্ধ ।
ভ্রান্তি প্রদর্শক হেতু — এখন ১৩টি প্রমাণ দ্বারা কাণের ভ্রান্তি দর্শানো হচ্ছে —
১. যেসব বিদ্বান দেবল ধর্মসূত্রের উদ্ধৃত পাঠসমূহে সাংখ্য [ 8 ], যোগ [ 9 ] জ্ঞানের শোভা পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা জানতেন যে, সাংখ্যাচার্য দেবলই ধর্মসূত্রের প্রবক্তা ছিলেন ।
২. সাংখ্য জ্ঞাতা দেবল অসিত পুত্র দেবল ছিলেন । অসিত স্বয়ং যোগাচার্য ছিলেন ।
তাঁর পুত্রও সাংখ্য এবং যোগ শাস্ত্রের মহান আচার্য হয়েছিলেন ।
বায়ু পুরাণ অধ্যায় ৭২ —
" অসিতস্যৈকপর্ণী তু পত্নী সাধ্বী দৃঢ়ব্রতা ।
দত্তা হিমবতা তস্মৈ য়োগাচার্য়ায় ধীমতে ।
দেবল সুষুবে সা তু ব্রহ্মিষ্ঠং মানসং সুতম্
[ 10 ]
৩. বায়ু পুরাণ ২৩ অধ্যায় অনুসারে দেবল ত্রেতার ২৩নং পরাবত্তে — অর্থাৎ, দাশরথি রামের পূর্ববর্তী তিনি ।।
৪. অসিত দেবল [ 11 ] এবং কতিপয় যাজ্ঞিকগণের সংবাদ জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ ১/২৩৩ নং-এ উল্লেখ রয়েছে । পুনঃ জৈ.ব্রা. ৩/২৭০ নং-এও অসিত দেবলের উল্লেখ রয়েছে ।
৫.
অসিত এবং অসিত দেবল দুইজনই দীর্ঘজীবী ছিলেন । পঞ্চশিখ দ্বারা
শিষ্যত্বের জন্য দেবল দীর্ঘজীবন প্রাপ্ত হওয়ার রহস্য জ্ঞাত হয়েছিলেন
। মহাভারত শল্যপর্ব ৫১তম অধ্যায় অনুসারে জৈগীষব্য এর যোগ ঐশ্বর্য দেখে দেবল পরিব্রাজক অর্থাৎ ভিক্ষু [ 12 ] হয়েছিলেন । এই কারণেও তিনি দীর্ঘজীবী ছিলেন । জৈগীষব্য এবং অসিত দেবল সংবাদ মহাভারত শান্তিপর্ব ২৩৬ তম অধ্যায়ে উপলব্ধ ।
৬.
অসিত কশ্যপ পুত্র ছিলেন । তিনি দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্যই ভিক্ষু আচার্য
মদন্ত অশ্বঘোষ তথাগত বুদ্ধের জন্ম সময়ে উপস্থিত ছিলেন এমনটা লিখিত
রয়েছে বুদ্ধ চরিতে ; [ 13 ] এ তথ্য কতটুকু সত্য তা বিবেচ্য বিষয় ।
৭. গীতায় অর্জুনও অসিত দেবলের বর্ণনা করেছেন । [ 14 ]
৮. দেবলের ব্রহ্মবাদিনী পুত্রী ব্রহ্মদত্ত পাঞ্চালের ভার্যা ছিলেন । হরিবংশ ১/২৩নং অধ্যায় —
" ব্রহ্মদত্তস্য ভার্যা তু দেবলম্যাত্মজাভবৎ" ।
অসিতস্য হি দুর্ধষো সন্নতির্নাম নামতঃ ।।
৯. বরাহমিহির তাঁর রচিত বৃহৎ সংহিতায় দেবলের জ্যোতিষ বিষয়ক মতের উল্লেখ করেছেন । বরাহমিহির প্রাচীন আচার্য ঋষিপুত্রেরও উল্লেখ বৃহৎ সংহিতা ৪৫/৮২ নং-এ করেছেন । ঋষিপুত্র দেবলকেও স্মরণ করেছেন । [ 15 ]
১০. দেবলের জ্যোতিষ শাস্ত্রের শ্লোক অদ্ভুতসাগর ১০৬ নং পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত রয়েছে ।
অসিত নামেও অনেক শ্লোক অদ্ভুতসাগর গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে । [ 16 ]
এসব প্রমাণ দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, অসিত এবং দেবলের জ্যোতিষ গ্রন্থ অবশ্যই বিদ্যমান ছিলো ।
১১. অতঃ অসিত দেবল অতি প্রাচীন শাস্ত্রকার ছিলেন । তাঁদের ধর্মসূত্র খ্রিষ্টীয়
২০০-৪০০ অব্দে রচনা মানার অভিপ্রায় ইতিহাসের কলেবর নষ্ট করা । দেবল একজন কাশ্যপ ছিলেন ।
১২. যদি কেউ মন্তব্য করে যে, কোনো ব্যক্তি পরবর্তীতে অসিত-দেবলের নামে ধর্মসূত্র রচনা করেছেন, এমনটাও অসম্ভব ।
আর্যাবর্তের
সমস্ত বিদ্বান এ গ্রন্থকে দেবলপ্রোক্ত মেনেছেন । এমন গণ্ডমূর্খ, কুট,
জ্ঞানহীন ব্যক্তির এরূপ ভিত্তিহীন, প্রমাণ শূন্য, কাল্পনিক মন্তব্যের
জন্য দণ্ড অবশ্যই প্রয়োজন ।
১৩.
কেউ যদি দীর্ঘজীবন বিষয়টি অসত্য মনে করে তাহলে সেটা তার অজ্ঞানতার
পরিচয় । পরম প্রামাণিক আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ঋষিগণের দীর্ঘজীবনকে মান্যতা
দিয়েছে ।
উপরোক্ত প্রমাণসমূহ দ্বারা সিদ্ধ হয় যে হারীত এবং দেবলের ধর্মসূত্র ভারত যুদ্ধ থেকে সহস্রবর্ষ পূর্বে তথা পুরাণ-প্রোক্ত ঐতরেয় আদি ব্রাহ্মণ গুলোরও পূর্বে রচিত হয়েছিলো । [ 17 ]
কাণের
ভ্রান্ত, ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত খণ্ডন করা হল ; একই সাথে ম্যাক্সমুলার
প্রভৃতির ভিত্তিহীন সিদ্ধান্ত এই যে, ঐতরেয়, তাণ্ড্য এবং শতপথ আদি
উপলব্ধ ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোর পরবর্তী কোনো সূত্র যুগের আরম্ভ হয়েছে ।
এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্তও সর্বথা খণ্ডিত হল ।
নিঃসন্দেহে
বর্তমানে উপলব্ধ ব্রাহ্মণ গ্রন্থ গুলোর রচনাকালের সহস্র বর্ষ পূর্বেও
কল্প তন্ত্র বিদ্যমান ছিলো, এবং সূত্রকালের কোনো স্বতন্ত্র কাল ছিলো না ।
মহোপাধ্যায় শ্রী বাসুদেবশরণ অগ্রবাল জীর মত —
কল্পসূত্রের বিষয়ে পশ্চিমা ম্লেচ্ছ লেখকদের অনুসরণ করে তিনি লিখেন -
ক.
The Charana began as an educational institution following a particular
Sakha text, in course of time it developed its full literature
comprising Brahmana, Aranyaka and Upanishad texts, Kalpa or Srauta
Sutras (cf.পুরাণপ্রোক্তেষু ব্রাহ্মণকল্পেষু ৪/৩১০/৫) and later on even
its Dharmasutra to which Panini refers in the sutra চরণেভ্যো ধর্মবৎ (
৪/২/৪৬ ).
( p. 286 )
খ.
Panini refers to works of two older Rishis named Kasyapa and Kausika (
কাশ্যপ - ৪/৩/১০৩ ), which Katyayana takes to be Kalpa works. These were
studied in Vedic Charanas by students called after them কাশ্যপিনঃ and
কৌশিকিনঃ— It is also pointed out that the literary activity of these two
old Scholars was confined to their Kalpa Sutra only round which centred
a group of their student and teachers কাশ্যপকৌশিকগ্রহণং চ কল্পে
নিয়মার্থম্ ২/২৮৬
(p. 324)
ক.
অর্থাৎ, যত দিন বৈদিক চরণ সমূহের সংগঠন দৃঢ় ছিলো, নামকরণে এই পদ্ধতিরই
প্রচলন ছিলো । পরবর্তীতে বৈদিক চরণ সমূহের অন্তর্গত কল্প সাহিত্যেরও
রচনা হয়, যার মধ্যে শ্রৌত সূত্র আদি বিদ্যমান ছিলো ( পুরাণপ্রোক্তেষু
ব্রাহ্মণকল্পেষু ৪/৩১০/৫) । কিছু চরণের মধ্যে ধর্মসূত্রেরও রচনা হয়েছিলো
( চরণেভ্যো ধর্মবৎ ৪/২/৪৬ )
খ. ….. স্বয়ং সূত্রকার কাশ্যপ এবং কৌশিক ঋষির দুটি চরণের উল্লেখ করেছেন — কাশ্যপিনঃ, কৌশিকিনঃ ।
যার
মধ্যে কাত্যায়নের মত দ্বারা কল্পসূত্রের অধ্যয়ন করা হয়ে থাকে । এই চরণ
সমূহের নিকট তাদের ছন্দ এবং ব্রাহ্মণ গ্রন্থ ছিলো না ( কাশ্যপকৌশিকগ্রহণং
চ কল্পে নিয়মার্থম্ ২/২৮৬ ) ।
অগ্রবাল জীর উপরোক্ত মতের বিশ্লেষণ
ক. ১. বিশিষ্ট শাখাপাঠের অনুসরণ করে চরম তৈরি করেছে ।
২. যুগান্তরে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ শাস্ত্র, কল্প অথবা শ্রৌতসূত্রের বিকাশ হয়েছে ।
৩. শ্রৌতসূত্রের রচনার পরবর্তীকালে ধর্মসূত্রও রচিত হয়েছে ।
খ. ১. কাশ্যপ এবং কৌশিক নামক অতি প্রাচীন দুইজন ঋষির গ্রন্থ বিদ্যমান ছিলো । কাত্যায়ন অনুসারে তা কল্পসূত্র ছিলো ।
২. এটা বৈদিক চরণ দ্বারা অধ্যয়ন করা হয়ে থাকে ।
খণ্ডন --
১.
বস্তুতঃ চরণ এর অবান্তর ভেদ শাখা সমূহ হয়ে থাকে, চরণ শাখা সমূহের
অন্তর্গত কদাপি অসম্ভব । অগ্রবাল জী লিখেছেন চরণ শাখার অন্তর্গত যা সর্বথা
ভিত্তিহীন, অসত্য । এই উক্তি তার নির্বোধের পরিচয় প্রকাশ করে ।
বাজসনেয়
চরণ-এ কাণ্ব, মাধ্যন্দিন আদি শাখা সমূহ পরিগণিত হয় । কণ্ব আদি শাখাকার
বাজসনেয় যাজ্ঞবল্ক্যের শিষ্য ছিলেন । অতঃ শাখা সমূহ চরণের অন্তর্গত ।
২. যুগান্তরে তত্তৎ চরণের ব্রাহ্মণ শাস্ত্র এবং কল্পসূত্রের বিকাশ প্রাপ্ত । এই উক্তিও পশ্চিমাদের অনুসরণের ফসল ।
বিভিন্ন
শাখাসমূহর কল্পসূত্রের প্রবচন বিভিন্ন সময়ে পর পর হয়েছে, এই কথনে কোনো
দোষ নাই । কিন্তু " কল্পসূত্রের বিকাস প্রাপ্ত হয় " এই অংশটুকু সম্পূর্ণ
ভ্রান্ত এবং ভিত্তিহীন । প্রত্যেক শাখার কল্প পুরাতন কল্প গুলোর আধারে
প্রোক্ত হয়ে থাকে ।
উপর্যুক্ত
লেখনীর " খ " ভাগে অগ্রবাল জী পাণিনির প্রমাণ দ্বারা মেনেছেন কাশ্যপ এবং
কৌশিক নামক দুইজন অতি প্রাচীন ঋষির কল্পসূত্র বিদ্যমান ছিলো । এই কল্পসূত্র
দুইটি ছিলো এমনটা নয় । অন্য ঋষিগণেরও কল্পসূত্র ছিলো । আর্যাবর্তের
ইতিহাসে ষড়ঙ্গ শাস্ত্রের প্রথম প্রবক্তা বৃহস্পতি । তিনি অত্যন্ত প্রাচীন
কল্পগুলোর সাহায্যে দক্ষ প্রজাপতি, বৈবস্বত মনু, ইক্ষ্বাকু, ভরত চক্রবর্তী
এবং অজেয় দশরথ আদি মহাপুরুষগণ যজ্ঞ করেছেন । এই কল্পসূত্র গুলোর আধারে
পরবর্তী কল্পসূত্র গুলোর প্রবচন হয়েছে । এবং উত্তরোত্তর কালে তা সংক্ষিপ্ত
আকারে করা হয়েছে । অতঃ এই অংশটুকুর কোনো ভিত্তি নাই যে কল্প-বাঙ্ময়
বিকাশানুসারে প্রাপ্ত হয়েছে ।
অগ্রবাল জীর আরেকটি ভুল —
কশ্যপ
এবং কৌশিক এই দুইজনের কল্পসূত্র বৈদিক চরণসমূহে অধ্যয়ন করা হতো, এমনটা
লেখার পর অগ্রবাল জীর এটা লেখা সম্পূর্ণ উপহাসজনক যে, এই দুইজনের কার্য
কল্পসূত্র পর্যন্তই সীমিত ছিলো -- " কল্পে নিয়মার্থম্ " । অগ্রবালের এই
দুটি লেখের একটি অবশ্যই অসিদ্ধ এবং সে কাত্যায়নের বার্তিক থেকে যে
প্রমাণ দিয়েছে, তদনুসার তার প্রথম লেখই খণ্ডিত হয়ে যায় ।
অগ্রবাল জীর বইতে প্রচুর ভিত্তিহীন, অপ্রামাণিক গল্পের ছড়াছড়ি এবং পশ্চিমা ম্লেচ্ছদের ছাপ বিদ্যমান ।
৩. পৈঙ্গা আরুণপরাজী কল্প —
পিঙ্গ দ্বারা প্রোক্ত কল্পকে পৈঙ্গী কল্প বলা হয় ।
যথা —
" পিঙ্গেন প্রোক্তঃ কল্পঃ পৈঙ্গী কল্পঃ " ।
[ শাকটায়ন ব্যাক. বৃত্তি ৩/১/১৭৫ ।। ]
পিঙ্গ
অত্যন্ত প্রাচীন আচার্য ছিলেন । পৈঙ্গ্য আচার্যের উল্লেখ ব্রাহ্মণ
শাস্ত্রে রয়েছে । তিনি পিঙ্গ এর বংশধর ছিলেন । অতঃ ব্রাহ্মণ
শাস্ত্রগুলোতে স্মৃত আচার্য থেকে বহুত পূর্বে হওয়ার কারণে পিঙ্গ অত্যন্ত
প্রাচীন আচার্য ছিলেন ।
অরূণপরাজী কল্পও প্রাচীন কল্পের অন্তর্গত ।
৪. ঔপমন্যব কল্প —
ঔপমন্যবের বংশপরম্পরা যথাক্রমে:
বসিষ্ঠ
ইন্দ্রপ্রমতি= কুণি
বসু
উপমন্যু
ঔপমন্যব




আয়োদ ধৌম্য এর তিন শিষ্য —
আয়াদ ধৌম্য এর তিন শিষ্য ছিলেন -- উপমন্যু, আরুণি এবং বেদ ।
বৌধায়ন শ্রৌত সূত্র ২১/৩-এ আচার্য ঔপমন্যব এর মত স্মৃত রয়েছে —
" অত্রো হ স্মাদ ঔপমন্যবঃ - তুষৈশ্ব নিষ্কাসেন চাবভৃথমেবেয়াৎ ইতি " ।
এই প্রকারে বৌধায়ন শ্রৌত ২৩/৭-এ ঔপমন্যব এর মতের উল্লেখ রয়েছে ।
পাণিনির কাল বিষয়ে অগ্রবালের বদতোব্যাঘাত —
মহর্ষি
পাণিনি বৈদিক বাঙময়ের একটি আধার স্তম্ভ । তিনি বৈদিক বাঙময় এবং
ইতিহাসের পারঙ্গত প্রকাণ্ড মহান পণ্ডিত ছিলেন । তাঁর সময়কাল নিয়ে
মিথ্যাচার করা সম্পূর্ণ দণ্ডনীয় কর্ম, মহাপাপ । অগ্রবাল পাণিনির কাল
খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী মেনেছে । এক্ষেত্রে সে ইতিহাসের মূল
সূত্র গুলোর বিন্দুমাত্র স্পর্শ করে না ।
পাণিনির কাল-জ্ঞানের মূল সূত্র —
পাণিনির
সূত্রের উপর মহর্ষি কাত্যায়ন বার্তিক রচনা করেছেন । সেই কাত্যায়নই
কর্মপ্রদীপ, ঋকসর্বানুক্রমণী, ভ্রাজসংজ্ঞক শ্লোক, উপগ্রন্থ এবং য়াজুষ কল্প
সূত্র আদি রচনা করেছেন । ষড়গুরু শিষ্য এই ইতিহাসকে সুরক্ষিত রেখেছেন ।
কর্মপ্রদীপ তথা ব্যাকরণ বার্তিকের কর্তা একই ক্যাত্যায়ন —
মহাবলের পুত্র বঙ্গীয় ছন্দোগ ভট্টনারায়ণ তাঁর গোভিল গৃহ্যসূত্রের ভাষ্যে লিখেছেন --
ক. তথা চ বাক্যার্থবিদ্ভিরুক্তম্ —
অল্পানাং য়ো বিঘাতঃ স্যাৎ স বাধো বহুভিঃ স্মৃতঃ ।
প্রাণসম্মিত ইত্যাদিবোসিষ্ঠঃ বাধিতং য়থা ।।
[ গো.গৃ.ভাষ্য. ৩/১০/৬ ]
খ. তথা চ বাক্যার্থবিদ্ভিরুক্তম্ —
বিধির্য়োনুষ্ঠিতঃ পূর্ব ক্রিয়তে নেহ সাম্প্রতম্ ।
পুরাকল্পঃ স য়দ্ভজ্ঞ্ব বিধবায়া নিয়োজনম্ ।।
[ গো.গৃ.ভা. ৪/১/২১ ]
গ. তথা চ বাক্যার্থবিদ্ভিরুক্তম্ —
লিঙ্গাদপি বিধির্জ্ঞেয়ো দর্ভষু বিকারো য়থা ।
[ গো.গৃ.ভা. ৪/২/৯ ]
এই উদ্ধৃত সমূহের মধ্যে প্রথম প্রমাণ
" কর্মপ্রদীপ " ৩/৯/১৬ নং শ্লোকের ।
বাক্যার্থবিদ্ — বার্তিককার এবং বাক্যকার সমানার্থক শব্দ এটা সকলেই জানে । ভট্ট কুমারিলও এটা মানতেন ( মীমাংসাবার্তিক ১/৩/৮ ) ।
কাশিকা বৃত্তির ব্যাখ্যাতা রামদেব মিশ্র বর্ণনা করেছেন —
" ইহ কাত্যায়নপ্রণীতানাং বাক্যানাং পতঞ্জলিপ্রণীতং বিবরণম্ "
অতঃ
কাত্যায়ন মুনিই বাক্যার্থবিদ্ এর রচয়িতা । ফলতঃ ছন্দেগ সম্প্রদায়ের
বিশিষ্ট জ্ঞাতা ভট্টনারায়ণ দ্বারা রচিত বাক্যার্থবিদ্ এমনটা সম্বোধন করে
কাত্যায়নের কর্মপ্রদীপের বচন উদ্ধৃত করা নির্দেশ করে যে তাঁর জ্ঞাত
পরম্পরা অনুযায়ী বার্তিককার কাত্যায়ন এবং কর্মপ্রদীপকার কাত্যায়ন
একজনই ব্যক্তি ।
ভাষ্যকার মহর্ষি পতঞ্জলি বর্ণনা করেছেন —
" অনৃচোমাণবে, বহ্বৃশ্বরণারখ্যায়াম্ " ।
[ ৫/৪/১৫৪ বা. ]
এই শ্লোক কর্মপ্রদীপস্থ একটি শ্লোকের প্রথম চরণের ধ্বনি অনুকরণের উপর বর্ণিত হয়েছে । যথা —
" অণৃচো মাণবো জ্ঞেয়ঃ " ।
[ কর্মপ্রদীপ খণ্ড. ২৭/১১ ]
কাণে দ্বারা কল্পিত কাত্যায়ন রচিত কর্মপ্রদীপ এর সময়কাল —
পশ্চিমা
ম্লেচ্ছদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এবং অনুসরণ করে কাণে তার রচিত
ধর্মশাস্ত্রের ইতিহাস বইতে কর্মপ্রদীপের সময়কাল খ্রিষ্টীয় ৪র্থ থেকে
৬ষ্ঠ শতাব্দীর ভেতর মেনেছে —
" Hence it may be said that Katyayana flourished between the 4th and 6th century A. D. ( p. 228 ). "
কাণে
ষড়গুরুশিষ্যের মতও উল্লেখ করে নাই । পাশ্চাত্য ম্লেচ্ছদের অনুসরণের
জন্য কাত্যায়নের সত্য সময়কালও লুকিয়ে রাখার বৃথা প্রচেষ্টা করেছে ।
পক্ষপাত
ত্যাগ করে সে যদি ক্যাত্যায়নের সময়কাল মহাভাষ্যকার পতঞ্জলি থেকে
কিছু সময়কাল পূর্বে মানতো তাহলে মানব, বৃহস্পতি, নারদ এবং
যাজ্ঞবল্ক্যের প্রধান সময়কালের কিছুটা ধারে যেতে পারতো । বস্তুতঃ তার
দ্বারা রচিত ইতিহাসের কালনির্দেশ সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ কাল্পনিক, ভিত্তিহীন
এবং সর্বথা অমান্য ।
ভট্টনারায়ণ স্পষ্ট বলেছেন বার্তিককার কাত্যায়নই কর্মপ্রদীপের কর্তা । তিনি ষড়গুরুশিষ্যের কথনকে সিদ্ধ করেছেন ।
কাণে
এটাও কল্পনা করে নাই যে, কোনো ব্যক্তি কোনো গ্রন্থ রচনা করে তা
কাত্যায়নের নাম দ্বারা প্রসিদ্ধ করে দিয়েছে । আর্যশাসনে কূট গ্রন্থ
লেখককে কঠোর দণ্ড দেওয়া হয়ে থাকে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই
কৌটিল্য প্রভৃতি শাস্ত্রকারগণ যদি কূট শাসন রচনাকারীদের দণ্ড প্রদান
করে থাকেন, তাহলে কূট গ্রন্থ রচনাকারীও এই দণ্ডের অধিকতর প্রদান হয়ে
থাকে ।
ত্রিকাণ্ডমণ্ডনের
কর্তা ভাস্কর সোমযোজীও য়াজুষ শ্রৌতকার কর্মপ্রদীপকার কাত্যায়ন
নামে দুইজন ভিন্ন ব্যক্তির হওয়ার কোনো প্রমাণের সংকেত দেয় নাই ।
ভগবান শৌনকের শিষ্য কাত্যায়ন —
মহামুনি কাত্যায়ন ভগবান শৌনকের শিষ্য ছিলেন । ষড়গুরুশিষ্য এই ঐতিহাসিক তথ্য প্রবলভাবে সুরক্ষিত রেখেছেন ।
মহর্ষি শৌনকের সময়কাল —
কুলপতি শৌনক ভারত যুদ্ধের সময়কালের কিছু পূর্ব থেকে যুদ্ধের পরবর্তী ২০০ বর্ষ পশ্চাৎ জীবিত ছিলেন ।
ম্লেচ্ছ গোল্ডস্টুকারের মিথ্যা, ভিত্তিহীন মত —
জার্মানবাসী
গোল্ডস্টুকার এই ভিত্তিহীন মত দিয়েছে যে, কাত্যায়ন পাণিনির
সূত্রগুলোতে দশ সহস্র অপবাদ প্রদর্শিত করেছে । পাণিনির মতো প্রকাণ্ড,
সূক্ষ্মদর্শী মহান বিদ্বান, যিনি মহাভাষ্যকার ঋষি নামে বিখ্যাত তিনি
তাঁর সূত্র রচনায় এতো অপবাদ কখনই বিন্দুমাত্র দর্শিত করবেন না ।
গোল্ডস্টুকার
আরও লিখে, পাণিনি থেকে কাত্যায়ন কাল মধ্যবর্তী বৃহৎ ব্যবধান রয়েছে
। এই ব্যবধানে ভাষায় নতুন নতুন অনেক সহস্র শব্দের প্রয়োগ হয়েছে ।
কাত্যায়ন শব্দের পুরানো রূপ ত্যাগ করে নতুন রূপের জন্য বার্তিক রচনা
করেছেন ।
তথা
যেই শব্দের অর্থে পরিবর্তন এসেছে, এবং নতুন বাঙময়ে, যা পাণিনির কালে
অনুপস্থিত ছিলো, যে অর্থের প্রয়োগ বিদ্যমান ছিলো, কাত্যায়ন সেই সবকিছুর
জন্য নতুন বার্তিক রচনা করেন ।
গোল্ডস্টুকারের ভিত্তিহীন মত খণ্ডন —
শব্দসমূহকে
সাধু মান্যকারী বিদ্বানগণ সংস্কৃত ভাষায় শব্দকে মৌলিক নতুন রূপে তৈরি বা
রচনা করার পক্ষ স্বীকার করেন, এটা আর্য ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ এবং
ভিত্তিহীন । সংজ্ঞাশব্দ এবং সাংকেতিক শব্দসমূহ সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়,
পরন্তু তা ভাষার অঙ্গ নয় । অতঃ গোল্ডস্টুকারের অনুমান সর্বদা ভিত্তিহীন
এবং সম্পূর্ণ মিথ্যাচার । বস্তুতঃ মহর্ষি পাণিনি প্রাচীন ভাষার অতি
সংক্ষিপ্ত ব্যাকরণ রচনা করেছেন । কাত্যায়নের ইচ্ছা ছিলো যে সেই
ব্যাকরণে উল্লেখিত প্রাচীন ভাষার পাশাপাশি জনসাধারণে প্রযুক্ত কিছু অন্য
শব্দসমূহেরও সমাবেশ হওয়া উচিত । অতঃ তিনি তাঁর রচিত বার্তিকে অনেক
উপযুক্ত শব্দের জন্য নিয়ম রচিত করেছেন ।
উপসংহার
ত্রৈতার
প্রারম্ভেই বেদের অঙ্গ কল্পের সৃষ্টি এবং প্রবচন শুরু হয়েছিলো ।
তদনুসার বিভিন্ন সময়ে অনেক ঋষিগণ এবং আচার্যগণ প্রায়ঃ তাঁদের নিজ নিজ
শাখা দ্বারা সম্বদ্ধ অনেক কল্প শাস্ত্রের প্রবচন করেছেন । মহাভারত
সময়কালের আশেপাশেও অনেক কল্প শাস্ত্র প্রোক্ত হয়েছে এবং পাণিনির
উত্তরবর্তী বৌধায়ন মুনি অন্তিম কল্প শাস্ত্রের প্রবচন করেছেন ।
সমগ্র আর্যাবর্তের ইতিহাসে এই উক্তি বা কথনই প্রবল সাক্ষ্য দেয় এবং এটাই সম্পূর্ণ প্রামাণ্য ইতিহাস ।
-- বিদুষাং বশংবদঃ
নমস্কার




- তৈ. আরণ্যক ২/৯ ।। গো. ব্রা. পূর্বভাগ. ১/২৭ " ষড়ঙ্গবিদস্তৎ তথাऽধীমহে " ।
2. কল্পতন্ত্রাণি তন্বানাহঃ সংস্থাশ্ব সর্বজ্ঞঃ । তৈ.ব্রা. ৩/১২/৯ ।।
কল্পাঃ কল্পসূত্রাণীতি, ভট্টভাস্করঃ । ত্রিধাবদ্ধো মন্ত্রব্রাহ্মণকল্পৈঃ । কাঠক সংকলন ।।
3. বর্তমানে প্রচলিত শ্রাদ্ধ শব্দ দ্বারা উল্লেখিত শ্রাদ্ধ শব্দের ভেদ কতটুকু তা এখনও অজ্ঞাত ।
4. বিশ্বামিত্র ইন্দ্রাৎ । শা. আরণ্যক. ১৫০/১ ।।
5. য়দ্ধ বা অসুরৈমহাসংগ্রামং সংয়েতে তদ্ভ বেদান্ নিরাচকার ।
তান্ হ বা বিশ্বামিত্রাদধিজ্ঞগে । ততো হ বৈ কৌশিকঃ । জৈমিনি ব্রাহ্মণ. ২/৭৯ ।।
6. দ্রষ্টব্য: য়তিধর্ম । যোগসূত্রের ব্যাস ভাষ্য ২/৩০ নং সূত্রেও বিদ্যমান ।
7. এই উক্তি কাশিকা ১/৩/৫৮ তথা চান্দ্রবৃত্তি ১/৪/১০৭ নং-এ উপলব্ধ
8. কৃত্যকল্পতরু, মোক্ষকাণ্ড
9. কৃত্যকল্পতরু, মোক্ষকাণ্ড
10. অসিত এবং দেবলের বংশবৃক্ষ নিয়ে কবিরাজ সুরমচন্দ্র কৃত
" আয়ুর্বেদ কা ইতিহাস " দ্রষ্টব্য
11. মহোপাধ্যায় রঘুবীর জী কৃত পাঠ -
" অসিতো দৈবলঃ " । তাঁর সম্পূর্ণ কোশে " দেবলঃ " পাঠই বিদ্যমান ।
এই পাঠই শুদ্ধ ।
12. কৃত্য কল্পতরু, মোক্ষকাণ্ডে উদ্ধৃত বচনানুসারে দেবল নিজেও সন্ন্যাসীর জন্য ভিক্ষু শব্দের প্রয়োগ করেছেন ।
13. বুদ্ধচরিত ১/৪৯, ৮৬ ।। ৮/৮৪ ।। তথা সৌন্দরানন্দ ৭/৩২ ।।
14. গীতা. ১০/১৩
15. অদ্ভুদসাগর
16. অদ্ভুদসাগর
17. " অধীয়ত দেবরাতো রিক্থয়োরুভয়োর্ঋষিঃ । জহ্নুনাং চাধিপত্যে দৈব রেদে চ গাথিনাম্ ।। ইতি ।। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩৩/৬
এখানে " অধীয়ত " শব্দের অর্থ ধর্মশাস্ত্রকারদের স্মরণে ব্যবহৃত হয় ।
0 মন্তব্য(গুলি)