একটি মেয়ের মাসিক শুরু হয় ১২-১৩ বছর বয়সে এবং মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়। এই ডিম্বাণু সাধারণত দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের থলি থেকে ডিম্ববাহী নালীতে আসে। এই সময়ে যদি যৌনমিলন হয়, তাহলে পুরুষের শুক্রাণু যোনিপথ দিয়ে ডিম্ববাহী নালীতে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার ফলে ভ্রুণ তৈরি হয়। একে গর্ভধারণ বলে। এই ভ্রুণ কয়েক দিন পর জরায়ুতে এসে পৌঁছে এবং সেখানে বড় হয়ে শিশুতে পরিণত হয়। ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান নিলে মা ও সন্তানের ঝুঁকি থাকার কারণে মেয়েদের গর্ভবতী /সন্তান ধারণ করা উচিত নয়।
এ সময় শিশুটি একটি গর্ভ-ফুলের (ফুল) মাধ্যমে মায়ের জরায়ুর সাথে যুক্ত থাকে এবং গর্ভ-ফুলের মধ্য দিয়ে শিশু মায়ের কাছ থেকে পুষ্টি পায়। সাধারণত ৯ মাস ৭ দিন এভাবে মায়ের জরায়ুতে কাটানোর পর মায়ের প্রসব ব্যথা ওঠে এবং শিশু যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। কিন্তু পুরাণে গর্ভ বিজ্ঞান সম্পর্কে নানা কল্পনা করা হয়েছে । আসুন দেখি -
মৎস্য পুরাণ ৩৯.১০ - পুরুষের শুক্র ফুলের রসের সাথে মিশে পরে রজঃস্রাব প্রাপ্ত হয়ে গর্ভে পরিণত হয় ।
অনেকে বলতে পারে এখানে রজঃ বলতে তাতে বিদ্যমান ডিম্বাণুর কথা বলা হয়েছে । কিন্তু বরাহপুরাণে স্পষ্টভাবেই শোণিত=রক্তের উল্লেখ আছে ।
বরাহ পুরাণ ১২৫.১৪
বায়ু পুরাণ ১৪.১৮-২৩ = প্রথমতঃ মিলিত শুক্রশোণিত কললাকার ধারণ :- করত করে; পরে কালবশে তাহা বুদ্বুদাকার প্রাপ্ত হয় । পাপ চক্রম্যস্ত মৃৎপিণ্ড যেমন চক্রাবর্ত্তে বিঘূর্ণিত ওকুলালকর দ্বারা পরিবর্ত্তিত হইয়া ঘট শরাবাদি নানাকার ধারণ করে, আত্মাও তদ্রুপ বায়ু দ্বারা পরিচালিত হইয়া কালবশে অস্থিযুক্ত বিবিধ মনঃসম্পন্ন মানুষরূপ সমুৎপন্ন হয়েন। বায়ু সেই সকল আশ্রয় করিয়া থাকে। বায়ু হইতে জলের উৎপত্তি হয়। জল হইতে প্রাণ এবং প্রাণ হইতে শুক্র জন্মে। ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ রক্ত ও চতুৰ্দ্দশ ভাগ শুক্র একত্র মিলিত হইয়া সমুদায় অর্দ্ধ পল পরিমাণে গর্ভাশয়ে নিষিক্ত হইলে তদুৎপন্ন গর্ভ পঞ্চ বায়ু দ্বারা আবৃত হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি খণ্ড ১৩৬.১২৮-১২৯ -
লক্ষ্যণীয় এখানে কোথাও শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর উল্লেখই নেই । বরং শুক্র - শোণিতের উল্লেখ আছে । অর্থাৎ পৌরাণিকদের মতে সম্পূর্ণ শুক্র ও রক্ত মিশে গর্ভ হয় যা কিনা সম্পূর্ণ ভুল । এখানে শুক্র=বীর্য , কোনভাবেই শুক্রাণু নয় । কেননা বায়ু পুরাণে স্পষ্টভাবে ২৩ ভাগ রজ ও ১৪ ভাগ শুক্রের মিশ্রণের কথা বলেছে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একটি মাত্র ডিম্বাণু একটি শুক্রাণু দ্বারাই নিষিক্ত হয় । সমগ্র শোণিত বা শুক্র দ্বারা কখনোই নয় । বিস্তারিত -
তথাকথিত গর্ভ উপনিষদে লেখা রক্ত থেকে মাংস হয় , বীর্য ও রক্ত মিলে গর্ভ নির্মাণ হয় -
বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে পদ্মপুরাণে আমরা পাই ।
পদ্মপুরাণ ভূমিখণ্ড ৬৬.২৮-৩১
ভাগবত পুরাণ ৩.৩১.২-৫ =বীর্য ও শোণিতের মিশ্রণে গর্ভ হয় ।
এখানে আমরা ভাগবত পুরাণ ও প্রকৃতভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্যের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করবো ~
ভাগবত - প্রকৃত বিজ্ঞান
[ মস্তক গঠন ] ১ম মাস- ১মাস ৩ সপ্তাহ
[ নখ ] ৩য় মাস - ২মাস ২ সপ্তাহ হাতের ও সাড়ে ৩ মাসে পায়ের
[ আঙুল , নাসারন্ধ্র , জননাঙ্গ ] ৩য় মাস - আঙুল ২ মাস, নাসারন্ধ্র প্রায় ২ মাস, পায়ের আঙুল ২মাস ১ সপ্তাহ, জননাঙ্গ ২মাস ৩ সপ্তাহ
শুধু তাই নয় , ভাগবতে বলা হয়েছে শিশু নাকি কৃমি - কীটের জন্মস্থান বিষ্ঠা ও মূত্রের গর্তে শুয়ে থাকে যা কিনা সম্পূর্ণ ভুল ।
ভাগবত ৩.৩১.৫
তারপরে রয়েছে আরেকটি মহা অবৈজ্ঞানিক কথা সে সেই কৃমি - কীট নাকি শিশুকে সারাদেহে কামড়াতে থাকে । শিশু যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যায় ।
ভাগবত ৩.৩১.৬
অর্থাৎ যারা কিনা এই অধ্যায়ের ১ম শ্লোক দিয়ে বিজ্ঞান দেখাতে যায় তারা কত বড় মিথ্যাচারী সহজেই প্রমাণ হয়ে গেলো । অমরার কথা অনেক জায়গাতে আছে যা কিনা দৃশ্যমান বিষয় । অমরা বেদে ও চরকাদিতেও আছে । পাশাপাশি ভুমিষ্ঠ শিশুতেও তা লক্ষ্যণীয় । মার্কেণ্ডেয় পুরাণের ১১ অধ্যায়ে বলা অমরা অন্ত্রগহ্বরের সাথে সংযুক্ত যা ভুল । অমরা যুক্ত থাকে জরায়ু প্রাচীরে ।
একইভাবে রজে বীজ নিক্ষেপ করলেই শিশু হয় না । বায়ু পুরাণ দ্বারা আওরা পূর্বেই তা প্রমাণ করেছি যে পুরাণের রজঃ সম্পূর্ণ আলাদা । এটা শোণিতই ।
ভাগবতের ৩.৩১.১ এও একই কথা আছে । এ দ্বারা অপ্রাকৃত কোন অভূতপূর্ব বিজ্ঞান প্রমাণ হয় না ।
0 মন্তব্য(গুলি)