https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদ মন্ত্রের দেবতা নিয়ে পৌরাণিক আক্ষেপ নিবারণ

Wednesday, September 21, 2022

 


বেদমন্ত্রে উল্লেখিত দেবতা বলতে অনেকে মনে করেন হয়ত এটা কোন পৌরাণিক দেবতা বুঝাচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। অনেক পৌরাণিক মন্ত্রের দেবতা নিয়ে নিজের মতকে পুষ্ট করতে চান। কিন্তু বেদমন্ত্রে উক্ত দেবতা হল সেই মন্ত্রের আলোচ্য বিষয় বা আলোচ্য গুণ। এবিষয়ে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে তা বিস্তারিত ভাবে নিম্নে আলোচনা করব।
 
👉 আক্ষেপকারীর বক্তব্য 👈
———————————
(1️⃣) দেবতা বলতে কোন বিগ্রহাদি ( শরীরধারী ) চেতন ব্যক্তির নাম । যিনি আকাশ আদিতে থাকেন এবং নিজের কাজ করে থাকেন ।
(2️⃣) তথাকথিত বেদের দেবতা বিষয়ে সর্বানুক্রমণী এবং বৃহদ্দেবতা একমাত্র এরাই পরমপ্রমাণ , অর্থাৎ এদের ভিন্ন মানা বা উল্লেখ করা অশুদ্ধ হয়।
(3️⃣) মন্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় দেবতা নয়।
(4️⃣) মন্ত্রে দর্শিত ' অগ্নি ' আদি পদ দেবতা হিসেবে চিহ্নিত হয়, কিন্তু সেইসব পদের অর্থ দেবতা হতে পাড়ে না।
(5️⃣) মন্ত্রের দেবতা এবং ছন্দঃও ঈশ্বরীয় অর্থাৎ নিত্য হয়।
 
👉আমাদের প্রত্যুত্তর 👈
——————————
সর্বানুক্রমণী (২/৫) এ লিখিত হয় 
 
" যা তেনোচ্যতে সা দেবতা "। 
 
এতে ষড্গুরুশিষ্য বলেন 
 
" তেন বাক্যেন য়ত প্রতিপাদ্যং বস্তু সা দেবতা " অর্থাৎ মন্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় ই দেবতা। 
 
" যৎকাম ঋষির্যস্যাং দেবতায়ামার্থপত্যমিচ্ছন্ স্তুতি প্রযুঙকতে তদ্দৈবতঃ স মন্ত্রো ভবতি " ( নিরু০ ৭/১) ।
অর্থাৎ — যে কামনা ভুক্ত ঋষি ' আমি এই অর্থের স্বামী ' এরূপ কামনা দ্বারা যে দেবতার স্তুতি করেন, সেই দেবতার নাম দিয়েই উক্ত মন্ত্রের দেবতা হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
 
এখানে স্পষ্ট হয় যে, মুসলমানদের ফেরেশতার স্বরূপ বিগ্রহধারী (শরীরধারী) দেবতাদের ত বেদে কোন স্থান নেই। নব্য এবং প্রাচীন মীমাংসকগণ এই বিগ্রহধারী ( শরীরধারী) দেবতার স্পষ্ট খণ্ডন করেছেন
" কা পুনরিয়ং দেবতা নাম ?.... যা এতা ইতিহাসপুরাণেণ্বাত্যাদ্যাঃ সঙ্কীর্ত্ত্যন্তে নাকসদস্তা দেবতা ইতি ? উচ্যতে। তাসু দেবতাসু অহরাদীনাং শার্দু লাদীনাং বা ন সঙগ্রহঃ। স্মর্যতে চ কালবাচিনাং দেবতাত্বং কালেভ্যো ভববদিতি, মাসো দেবতা সংবৎসরো দেবতেতি।অপরং মতং, যেষু দেবতাশব্দো মন্ত্রব্রাহ্মণে শ্রুয়তে, ' অগ্নির্দেবতা বাতো দেবতা সুর্যো দেবতা চন্দ্রমা দেবতা ' ইত্যেবমাদিষু তেऽত্র দেবতাশব্দেনোচ্যন্ত ইতি। তত্রাপ্যহরাদীনামনুপসংগ্রহ এব..... সুর্ক্তানামমুর্ক্তানাং চেতনানাম নামচেতনানাং শ্রুত্যা কিঞ্চিদর্থ প্রতি তাদর্ধ্যেন সঙ্কল্পনীয়ানাং দেবতাত্বং ভবিষ্যতি। সামান্যবচনত্বং চোপপৎস্যতে।...... দেবতায়াশ্চ যজ্ঞসাধণভাবো ন রূপেন ভবতি। কেন তর্হি ? সম্বন্ধিনা শব্দেন। যথাऽধ্বর্যুর্হস্তাম্যামুপকরোতি, এবং দেবতা শব্দেনোপকরোতি। যথা হোতুঃ পাণৌ দ্বির্লেপনোপস্তুণাতীতি, পাণিসম্বন্ধেऽপি হোতৈবোপকরোতি, এবং সম্বন্ধিনা শব্দেনোপকুর্বতী দেবতা উপকারিণী গম্যতে। দেবতাযামপ্যুপকারিণ্যাং চোদিতায়াং শব্দস্মৈব যজ্ঞে সমবায়ঃ.... শব্দ এব হবিষা সম্বদ্ধযতে, তৎসম্বন্ধাদর্থোऽপি দেবতা ভবিণ্যতি। যস্য হি শব্দো হবিষা তাদর্থেন সম্বন্ধযতে, সা দেবতা। শব্দে কার্যস্যাসম্ভবাদর্থে কার্য বিজ্ঞায়তে। ইহ তু শব্দ এব কার্য সম্ভবতি। " ( মীমাংসা ১০/৪/২৩ শাবরভাষ্যে দেবতাভিধানাধিকরণে এবং ৯/১/৮ দ্রষ্টব্য ) 
 
এখানে বিগ্রহাদি দেবতার স্পষ্ট খণ্ডন করে শব্দময় দেবতা মানা হয়েছে। এ বিষয়ে খণ্ডদেব তার গ্রন্থ ' ভাট্টদীপিকা ' তে উল্লেখ করেন — 
 
" অতঃ কথমপি ন বিগ্রহাদিস্বীকারঃ। কিন্তু শব্দমাত্রং দেবতা। অর্থস্তু প্রাতিপদিকানুরোধাত্ চেতনোऽচেতনো বা কশ্চিত স্বীক্রিয়তে। ন তু বিগ্রহাদিমান। উপাসনাদৌ পরং ধ্যানমাত্রমাহার্য তস্যেতি জৈমিনিমতনিষ্কর্ষঃ। মম ত্বেবং বদতোऽপি বাণী দুষ্যতীতি হরিস্মরণমেব শরণম " ( ভাট্টদীপিকা : ৯/১/৪ অধিকরণ পৃ০ ৫৩) ।
অর্থাৎ — দেবতা বিষয়ে কোন প্রকার বিগ্রহ শরীর আদি মানা যাবে না। ( মীমাংসাকারী মত) শব্দমাত্রই দেবতা হয়, অর্থের প্রাতিপদিক হিসেবে চেতন অথবা অচেতন উভয় হতে পাড়ে। তবে মূর্তি স্বরূপ দেবতা মানা যাবে না। উপাসনার সময় তাঁর পরমেশ্বর চিন্তন ( বিনা মূর্তিতে) করা হয়ে থাকে, এটাই জৈমিনির মতের নিষ্কর্ষ। এসব সত্য বলার জন্য যদি আমার পাপ হয়, তার জন্য পরমেশ্বরের স্মরণ করাই যথেষ্ট।
 
এখানে এটাও ধ্যানযোগ্য যে শতপথ ব্রাহ্মণ ( ৯/৪/২/১৫) " যস্যৈ বৈ দেবতায়ৈ হবিগৃহ্যতে সা দেবতা ন সা যস্যৈ ন গৃহ্যতে " অর্থাৎ যার জন্য ' হবিঃ ' দেওয়া হবে, তাকেই দেবতা বলা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে মীমাংসা শাবরভাষ্য ( চৌখম্বা সংস্করণ ) ১০/৪/২২ পৃ০ ৯৭ তে বর্ণিত " যস্য বাচকমুদ্দিশ্য স্মৃত্বা বা হবিস্ত্যক্ষ্যামীতি সংকল্পঃ ক্রিয়তে সা দেবতা ভবতি তত্র " অর্থাৎ — যার জন্য ' হবিঃ ' দেওয়া হয়, তাকেই দেবতা বলা হয়, ইত্যাদি। হোক ব্রাহ্মণ তথা শ্রৌত স্মার্ক্ত প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জ্ঞাত কে বলতে পাড়ে যে ' শাখা ' কে হবিঃ দেওয়া হয়ে থাকে। কোন সর্ব অনভিজ্ঞ পুরুষ ই এরূপ বলার সাহস করতে পাড়ে। 
 
💥 তথা আক্ষেপণ সমূহের প্রত্যুত্তর পর্যায়ক্রমে নিম্নে বর্ণিত — 
 
(১) উক্ত উদাহরণ এখানে উপস্থিত করার অভিপ্রায় যে, দেবতা বলতে শরীর ধারী কাউকে বোঝায় তা শুধু কল্পনা মাত্র। এসব শরীরধারী দেবতার ধারণা অনেক নবীন। খণ্ডদেব নিজেও বলেন দেবতা কোন সময় শরীরধারী হতে পাড়ে না এবং তা মীমাংসাকারীর মতও বটে। এরফলে এটাই সিদ্ধ হয় বিগ্রহধারী ( শরীরধারী অথবা মুসলমানদের ফেরেশতা মত) দেবতা কোনমতেই বেদমন্ত্রের উল্লেখিত দেবতা হতে পাড়ে না। মন্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয় কেই দেবতা বলে। 
 
(২) সর্বানুক্রমণীতে ভিন্ন ভিন্ন দেবতা হতে পাড়ে। ঋ০ ৫/৪২/১৪ এর এক মন্ত্রেই ভিন্ন - ভিন্ন আচার্যগণ ভিন্ন - ভিন্ন দেবতা মেনেছেন, যা সর্বানুক্রমণীতে নেই ( দেখো বিবরণ পৃ০ ২) । যারা মন্ত্রের দেবতাকে নিত্য মানেন তথা মন্ত্রগতপদ কে দেবতা মানেন, এরূপ ব্যক্তিগণ এবিষয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে বিচার করলে তাঁদেরও ভ্রমভঙ্গ হবে আশা করি।
 
(৩) মন্ত্রে প্রতিপাদ্য বিষয় সম্বন্ধই দেবতা তা উপরে দর্শানো হয়েছে। 
 
(৪) মন্ত্রে আগত পদ ঐ দেবতা এরূপ তথ্য সঠিক নয়। পাঠক দেখতে পাড়েন, " অঞ্জন্তি ত্বামধ্বরে০ " ( ঋ০ ৩/৮/১) উক্ত সূক্তের আদি অন্ত তথা মধ্যে ' বনস্পতি ' এরূপ সম্বোধিত পদ কয়েকবার এসেছে, কিন্তু ঋকসর্বানুক্রমণীতে এই সূক্তের দেবতা ( দুএক মন্ত্র বাদে) ' যুপস্তুতি ' মানা হয়েছে। এখানে নিরু০ ৮/১৭ এতে ' বনস্পতি ' দেবতার বর্ণন করতে গিয়ে যাস্ক উল্লেখ করেন। — " তত্ কো বনস্পতিঃ ' ? যুপ ইতি কাত্থক্যঃ, অগ্নিরিতি শাকপুণিঃ " এতে স্পষ্ট হয় যে ' যুপ ' এবং ' অগ্নি ' এই দুই ' বনস্পতি ' পদের অর্থ হয়। এরজন্য বৃহদ্দেবতাকার ' যুপ ' এবং ' অগ্নি ' উভয় কে সূক্তের দেবতা হিসেবে মেনেছেন। ( বৃ০ পৃ০ ৪/১০০) 
 
আমার এই এক উদাহরণ দ্বারা সিদ্ধ হয় যে মন্ত্রে আগত পদ ই দেবতা তা সত্য নয়। যদিও এই অবস্থায় নিয়ত না অনিয়ত তা পাঠক স্বয়ং বিচার করে দেখবেন। 
 
⚠️ যেসব লোক মন্ত্রের বিষয়কে দেবতা মানেন না তাদের প্রতি জিজ্ঞাসা — 
 
ঋ০ ১/১৮/৫ দক্ষিণা। ঋ০ ১/১২৬/৬-৭ জায়াপত্যোঃ সংবাদঃ। ঋ০ ৪/৫০/৭-৯ পুরোধাতুঃ কর্মপ্রশংসা। ঋ০ ৪/৫৭/৪ কৃষিঃ। ঋ০ ৪/৪৭/২৬ ভাববৃক্তম। ইত্যাদি দেবতা সর্বানুক্রমণী এবং বৃহদ্দেবতা আদিতে বলা হয়েছে কি না ? এবং তা বিষয় অনুযায়ী হয় কি না ? বা, এগুলা মাত্র উদাহরণ স্বরূপ। পরিগমণের জন্য এরকম শতাধিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পাড়ে। এখন রইল পর্যায়বাচী বা শব্দের অর্থ দেবতা হয় কি না তা নির্ণয়।
 
♦সর্বানুক্রমণী এবং বৃহদ্দেবতায়
———————————————
দেবতা ভেদ ♦
——————
ঋ০ ২/৩৩/১১ এর দেবতা সর্বা০ ' ইন্দ্র ' বৃহ০ ' 'ভৃগু।
ঋ০ ২/৪২/৪৩ এর দেবতা সর্বা০ ' শকুন্ত ' বৃহ০ ' কপিঞ্জলরুপী ইন্দ্র: '।
ঋ০ ৬/৭৫/৮ এর দেবতা সর্বা০ ' রথ ' বৃহ০ ' আয়ুধাগারম্ '।
ঋ০ ৬/৭৫/১৩ এর দেবতা সর্বা০ ' প্রতোদ ' বৃহ০ ' কশা '।
ঋ০ ৬/৭৫/১৪ এর দেবতা সর্বা০ ' ইস্তঘ্ন ' বৃহ০ ' ইস্তত্রান '।
ঋ০ ৬/৭/৫৩ এর দেবতা সর্বা০ ' দ্যাবাপৃথিবী ' বৃহ০ ' রোদসী ' ।
এখানে ' প্রতোদ ' ' কশা ' ' হস্তঘ্ন ' ' হস্তত্রাণ ' ' দ্যাবাপৃথিবী ' এবং ' রোদসী ' এখানে এই শব্দ স্পষ্টত পর্যায়বাচী নয় কি ?
 
এখানে একথাও ধ্যান যোগ্য যে সর্বানুক্রমণী এবং বৃহদ্দেবতায় দেবতা বিষয়ে অনেক মতভেদ আছে। ঋ০ ১/৫০ সর্বনুক্রমণীতে ' সূর্য ' দেবতা মানা হয়েছে, কিন্তু বৃহদ্দেবতায় সেই মন্ত্রের দেবতা ' বরুণ ' মানা হয়েছে। এরূপ অনেক উদাহরণ আছে। নিরুক্তাকার যেভাবে ' অগ্নি ' এবং ' জাতবেদাঃ ' কে ভিন্ন ভিন্ন দেবতা মেনেছেন। যদিও যাজ্ঞিকপ্রক্রিয়ায় মীমাংসকের মতানুসারে ' ইন্দ্র ' এবং ' মহেন্দ্র ' উভয় ভিন্ন ভিন্ন দেবতা হয়। যেরূপ মীমাংসা০ ২/১/১৬ স্পষ্ট লিখা আছে " তস্মাদ দেবতান্তরমিন্দ্রাদ্ মহেন্দ্রঃ "।
আমার বক্তব্য এই যে, যদি কোন মন্ত্রের পদ ' ইন্দ্র ' হয় এবং পরবর্তী মন্ত্রে ' বৃত্রহা ইন্দ্র ' হয় তারফলে বিশেষণপদ ঘটার দরুন ' ইন্দ্র ' এর ভিন্ন দেবতা মানতে হবে , এক নয়। ততপ্রকার দেবতাভেদ দ্বারা সর্বানুক্রমণী এবং বৃহদ্দেবতা পরিপূর্ণ হয়ে আছে । এছাড়া আমি এখানে দ্বিতীয় প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করব। ঋ০ ১/৯৪/১-৬ এর দেবতা সর্বানুক্রমণীতে ' অগ্নি ' মেনেছেন, অন্যদিকে বৃহদ্দেবতায় ' জাতবেদাঃ '। এরূপ উদাহরণ ঋ০ ১/১৪০ তথা ঋ০ ২/২ ছাড়াও অসংখ্য স্থানে আছে। ' অগ্নি ' এবং ' জাতবেদাঃ ' ; নিরুক্তাকারের মতানুসারে ভিন্ন-ভিন্ন দেবতা ( দেখেন নিরু০ অ০ ৭) । ঋ০ ১/৫০/৬ এতে নিরুক্তাকার ' বরুণ ' দেবতা মানেন, সর্বানুক্রমণী ' সূর্য '। ঋ০ ৬/১৪,১৫ এর নিরুক্তে ( ১২/১৮) ' পুষা ' দেবতা মানেন, সর্বানুক্রমণীতে ' বিশ্বেদেবা '। ঋ০ ১০/১৮৫/২০ তে নিরুক্ত ' সূর্য ' দেবতা মানেন, কিন্তু সর্বানুক্রমণীতে দেবতা ' আশী প্রায়ঃ ' উল্লেখিত। পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি, নিরুক্ত এবং সর্বানুক্রমণীতে মন্ত্রে কীভাবে দেবতার স্পষ্ট ভেদ দর্শিত। 
 
যদি উক্ত ভিন্ন ভিন্ন দেবতাকে ভিন্ন ভিন্ন মতের বিকল্প হিসেবে মানা যেতে পাড়ে ; তাহলে আচার্য দয়ানন্দের দর্শিত দেবতা কেন বিকল্প হিসেবে মানা যেতে পাড়ে না ? 
 
ঋ০ ২/৩০/৮ ' সরস্বতী ' ইতি সর্বানুক্রমণী, ' মধ্যমা বাগিতি ' বৃহদ্দেবতা। 
 
পাঠক দেখেন, যে কীভাবে একি মন্ত্রের (ঋ০ ১০/৮৫/১৯) দেবতা সর্বানুক্রমনী আদি মতে ' চন্দ্রমা ' হয়। সেই মন্ত্রের দেবতা তৈত্তিরীয় সংহিতা - বৌধায়ন শ্রৌতসূত্র - সত্যাষাঢ শ্রৌতসূত্রাদি মতানুসারে ' আদিত্য ' এবং যাস্ক তথা বররুচি আদির মতে চন্দ্রমা এবং আদিত্য উভয় দেবতা । এরূপ ভাবে ' প্রসুষ্টুতিম্ '( ঋ০ ৫/৪২/১৪) এই এক মন্ত্রে শাকমুণী মতে ' ইডস্পতিঃ ' দেবতা, গালব এর মতে ' অগ্নি ' যাস্কের মতে পুষা, শৌনকের মতে ' ইন্দ্র ' এবং ভাগুরি মতে ' বৈশ্বানর '। এখানে শুধু ' ইডস্পতি ' পদ মন্ত্রে আছে, অন্য কোন পদ এই মন্ত্রে আসে নি। জিজ্ঞাসা রইলঃ, যখন দেবতাবাদের বিধায়ক ( বাদির মতানুসারে) হিসেবে পরিচিত গ্রন্থ এরূপ মতপ্রকাশ করে, তা হলে কেন না মানা যায়। দেবতা নিত্য ঈশ্বরত্ব, এরূপ যারা বলে বা বুঝে তাদের সম্পর্কে আর কি বলব, উনাদের বেদার্থ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতাই এসবের কারণ।
এরূপ অবস্থা আদিষ্টদেবতা মন্ত্রেরও, অনাদিষ্ট দেবতা মন্ত্র সম্পর্কে আর কি বলব। ' অপি বা সা কামদেবতা স্যাত ' (নিরু০ ৭/৪) এখানে প্রকরণাদিতে যথেষ্ট সুসঙ্গত দেবতা হতে পাড়ে। অন্যথা ' নৈরুক্তঃশকনোতি দৈবতং জ্ঞাতুম ' ( স্কন্দঃ ভা০ ১ পৃ০ ১০৮) নিরুক্ত সম্পর্কে জ্ঞাতগণ ঐ দেবতা নির্ণয় করতে সক্ষম। এই কথা বলার তাৎপর্য কী হতে পাড়ে। বিনিয়োগভেদ দ্বারা দেবতাভেদ হয়ে থাকে, একথাও এখানে ধ্যান রাখা উচিত ( দেখো দূর্গ টী০ ২/৮ পৃ০ ১২৬।) 
 
যেসব মহানুভব ব্যক্তিগণ মন্ত্রে লিঙ্গ = দেবতাবাচক পদের দর্শনমাত্র দেবতার জ্ঞান তৎকাল হয়ে থাকে। এর জন্য কোন তপস্যা বা অগাধ পাণ্ডিত্যের আবশ্যকতা নেই এরূপ মানা হয়। এর জন্য আমরা যাস্কের একটি প্রমাণ উপস্থাপন করব। 
 
" অথাপি যাজ্ঞে দৈবতেন বহবঃ প্রদেশা ভবন্তি। তদেতেনোপেক্ষিতব্যম্। তে চেদ বূযুর্লিঙ্গজ্ঞা অত্র স্ম ইতি। ' ইন্দং ন ত্বা শবসা দেবতা বায়ুং পৃণন্তি ' ( ঋ০ ৬/৪/৭)
' বায়ুলিঙ্গ চেন্দ্রলিঙ্গ চাগ্নেয়ে মন্ত্রে ' ( নিরু০ ১/১৭)
অর্থাৎ — যজ্ঞকর্মে দেবতানির্দেশ দ্বারা বিধান করা হয়, যেরূপ ' ইন্দ্রয়া গার্হপত্যমুপতিষ্ঠতে ' ইত্যাদি।
 
 নিরুক্তশাস্ত্রের গভীর অনুশীলন বিনা দেবতা বিষয়ে যথার্থ জ্ঞান ( অর্থাৎ কে গৌণ দেবতা এবং কে অগৌণ) হতে পারে না। যদি কেউ বলে আমরা লিঙ্গ ( দেবতা বাচক পদ) সম্পর্কে অবগত, তাই যাস্ক দুটি মন্ত্র উদধৃত করে জিজ্ঞাসা করেন - " ' ইন্দ্রং ন ত্বা " ( ঋ০ ৬/৪/৭) অগ্নি দেবতাভুক্ত মন্ত্রে বায়ু তথা ইন্দ্র তথা ' অগ্নিরিব মন্যো ' ( ঋ০ ১০/৮৪/২) ' মন্যু ' দেবতাসমূহ মন্ত্রে ' অগ্নি ' এর লিঙ্গ দর্শিত হয়। বল এখানে কে দেবতা হয় ? অর্থাৎ এখানে মন্ত্রে আগত পদ বলতে দেবতা বুঝায় না। 
 
একথা সেইসব মন্ত্রের বিষয়ে বর্ণিত যারা আদিষ্ট দেবতা হয়। যখন এখানে দেবতাবাচক পদের দর্শনমাত্র দেবতার নিশ্চয় হতে পাড়ে না, তাহলে অনাদিষ্ট ভুক্ত মন্ত্রের দেবতার নির্ণয় বিনা যোগবল তথা তপবল দ্বারা অর্থ না জেনে কীভাবে নিশ্চয় হতে পাড়ে ? এরজন্য ঋগ্বেদ এর ভাষ্যকার বেঙ্কটমাধব তাঁর দেবতাক্রমণীতে লিখেন — 
 
" দেবতাক্ত্ববিজ্ঞানং মহতা তপসা ভবেত্। শক্যতে কিমস্মাভির্যাথাতথ্যেন ভাষিতুম্। ( পৃষ্টা ৫৫) 
 
পুনঃ বলেন — 
 
" ন প্রত্যক্ষমনৃষেরস্তি মন্ত্রম ∥
যোগেন দাক্ষ্যেণ দমেন বুদ্ধয়া বাহুশ্রুত্যেন তপসা নিয়োগৈঃ। উপাস্যাস্তাঃ কৃতস্নশো দেবতাঃ ∥ ( বৃহ০ ৮/১২৯, ১৩০)
অর্থাৎ — মন্ত্রে অনৃষির প্রত্যক্ষ হয় না, যোগ, দম ( ইন্দ্রিয়নিগ্রহ), ব্যপক পাণ্ডিত্য তথা তপ আদি দ্বারা সমস্ত দেবতার জ্ঞান ধারণে ব্রত হওয়া উচিত। 
 
এখানে এটাও জানা উচিত, যে যাস্ক দৈবতকাণ্ডে প্রধানস্তুতি গুলোর দেবতা নিরুপণ করেছেন। যেমন নিপাত ( গৌণ) দেবতাদের বিষয়ে নিরু০ ১/২০ এ নির্দেশ করেছেন। নিরুক্তাকার যেমন দেবতার তিন প্রকার ভেদ করেছেন, যাতে ' পৃথিবী ' এবং ' ত্বষ্টা ' কে পৃথিবীস্থানীয় মধ্যমস্থানীয় এবং দ্যুস্থানীয় মেনেছেন। নিশ্চয় তিন স্থানে ' পৃথিবী ' এবং ' ত্বষ্টা ' স্বরূপে ভেদ আছে। বরুণ , যম, সবিতা এবং উষা উক্ত চার দেবতা সম্পর্কে নিরুক্তাকার মধ্যমস্থানীয় এবং দ্যুস্থানীয় অর্থাৎ দো মেনেছেন। নির্বাচনের আধারে এই শব্দ পৃথিবী স্থানীয়, তাই শেষ দুই স্থান বিশেষ্য - বিশেষণবাচক হওয়ার দরুন নির্বাচনের আধার দ্বারাই যুক্ত হবে। সেরূপ ভাবেই মধ্যমস্থানীয় এবং দ্যু স্থানীয় বিষয়েও একইভাবে বোঝা উচিত। সে জন্যই যাস্ক এই শব্দকে নির্বচন করেছেন। নির্বচনের ফলে এটাই সিদ্ধ হয় যে, এই শব্দ বিশেষণবাচক ও হয় এবং বিশেষ্য বাচক হয় । এক আত্মাকে মুখ্য দেবতা মেনে পৃথিবীস্থানীয়, মধ্যমস্থানীয় এবং দ্যুস্থানীয় দেবতা নিরুপণ করা হয়। এই সবের সমন্বয় বিশেষ্য-বিশেষণবাদের নির্বচনের আধারে অধিভুক্ত হয়ে থাকে।