https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

থিওসফিক্যাল সোসাইটি ও মহর্ষি দয়ানন্দের মূর্তিভঞ্জন বিষয়ক মিথ্যাচারের জবাব

Tuesday, September 6, 2022

 


 হেলেনা ব্লাভাটস্কি ও থিওসফিক্যাল সোসাইটির বই থেকে মহর্ষি দয়ানন্দ সম্পর্কিত গুজবের জবাব

থিওসফিক্যাল সোসাইটি একটি পাশ্চাত্য ভাবধারায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠন, যা ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। থিওসফিক্যাল সোসাইটি এমন সংগঠন যেখানকার প্রতিষ্ঠাতা সভ্যরা মূলত ভারতীয় দর্শন, সুফিবাদ, মিশরীয় ধর্ম, ইহুদিধর্ম, পশ্চিমা প্যাগান ধর্ম সবকিছু মিলিয়ে খিচুড়ি পাকিয়ে একটা নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাদের লোগো দেখলেই তাদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়। লোগোতে ওম্ , স্বস্তিকা, ইহুদিদের স্টার অফ ডেভিড, মিশরীয়দের দুটো প্রতীক রয়েছে।
 

 
এই সমিতির সূচনা নিউইয়র্কে রুশ লেখিকা হেলেনা ব্লাভাটস্কি, কর্নেল অলকট সহ ১৬ জন মিলে করেন। থিওসফিক্যাল সোসাইটির মূলনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে এই সমন্বয়বাদ ও নতুন মতবাদ গঠনের চিন্তা।
 
To form a nucleus of the universal brotherhood of humanity without distinction of race, creed, sex, caste, or colour.
To encourage the study of comparative religion, philosophy, and science.
To investigate the unexplained laws of nature and the powers latent in man.
 
পরবর্তীতে ব্লাভাটস্কির মৃত্যুর পর থিওসফিক্যাল সোসাইটির ভেতরে দুই ভাগ হয় যার এক ভাগ চেন্নাইয়ে নিজেদের কার্যালয় খোলে। সেই ভাগের প্রধান ছিলেন অ্যানি বেসান্ত ( তিনি ভারতীয় কংগ্রেস পার্টি) প্রতিষ্ঠা করেন।
 
হেলেনা ব্লাভাটস্কি ভারতে থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করার পর প্রথম আসেন ১৮৭৯ সালে। তার কিছুকাল আগেই কাশী শাস্ত্রার্থ এবং তৎকালীন বিচারধারার জন্য ভারতে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ধার্মিক মহলে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। ব্লাভাটস্কি নিজেও একেশ্বরবাদ, বর্ণবৈষম্যের বিরোধ, নারী অধিকার প্রভৃতি প্রশ্নে দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দ্বারা প্রথমদিকে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং মনে করেছিলেন, থিওসফিক্যাল সোসাইটি ও আর্যসমাজ একসাথে এগোতে পারে। তাই তিনি এসময় যখন ভারতে আসেন, তখন মহর্ষি দয়ানন্দ ও আর্যসমাজের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এমনকি ২২ মে ১৮৭৮ সালে তারা খৃস্টধর্মের খণ্ডনপূর্বক আর্যসমাজের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন, এই ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কের মূলসূত্র মুম্বাই আর্যসমাজের তৎকালীন সভাপতি হরিচাঁদ চিন্তামন।
 
কিন্তু তারা আর্যসমাজের বেদবাদী চিন্তাধারা, আব্রাহিমিক বিরোধিতা সহ অনেক প্রশ্নেই আলাদা ছিলেন এবং তারা হঠযোগ, ভূতপ্রেত ইত্যাদি বিশ্বাস করতেন। তার ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেই ঐক্যসূত্র লোপ পায় এবং ১৮৮০ সাল নাগাদ দুটো সংগঠন আলাদা হয়ে যায়, যখন তারা শ্রীলঙ্কায় গিয়ে বৌদ্ধধর্মও গ্রহণ করেন। ১৮৮২ সাল থেকে মহর্ষি দয়ানন্দ থিওসফিক্যাল সোসাইটির সিদ্ধান্তগত খণ্ডন ও সর্বধর্ম সমন্বয় সহ নানা ব্যাপারে এদের নিন্দা করে নিয়মিত রচনা করেন। হরিচাঁদ চিন্তামনকেও আর্যসমাজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
 
তখনকার প্রেক্ষাপটে আর্যসমাজ মাত্র ৩ বছর হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (১৮৭৫ এ প্রতিষ্ঠিত হয়)। সেখানে আর্যসমাজের একজন নেতার মাধ্যমে তারা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর সাথে দেখা করেন এবং নিজ সংগঠনকে আর্যসমাজের অধিভুক্ত করেন। পরবর্তীতে সর্বমত সমন্বয়জনিত বিরোধে মাত্র দেড় বছরেই আবার আলাদা হয়ে যায় উভয় সংগঠন। সদ্য ৩ বছর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন হিসেবে আর্যসমাজের ভিত্তি তখন এতটা মজবুত ছিল না। সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে এমন ভুল সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক যেকোনো সংগঠনের ক্ষেত্রেই।
 
তবে আজকের বিষয় মূলত অন্য। সম্প্রতি আমরা দেখছি হেলেনা ব্লাভাটস্কির লেখা একটি বইয়ে মহর্ষি দয়ানন্দকে নিয়ে লেখা একটি অংশ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বইটির নাম, "
From the Caves and Jungles of Hindostan" যা মূলত তার ভারতে ভ্রমণকালীন ভ্রমণবৃত্তান্তের কাল্পনিক রূপ, এই বৃত্তান্ত রাশিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত হয় Radda Bai ছদ্মনামে। পরবর্তীতে গ্রন্থাকারে রুশ হয়ে ইংরেজিতে তা অনুবাদ হয়। এই বইয়ে ব্লাভাটস্কি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বিষয়ে এক কাল্পনিক বর্ণনা দেন, " তিনি কোনো এক আর্যসমাজের অনুসারীর কাছে এই ব্যাপারে শোনেন এবং সেও আরেকজনের কাছে শুনেছে (থার্ড পারসন একাউন্ট) যে, কাশীতে দয়ানন্দ সরস্বতী ১০০ মূর্তি ভাঙেন।" এটি যে সর্বৈব মিথ্যা ও হেলেনা ব্লাভাটস্কির একান্ত কল্পনা‌ তা আমরা দেখব।
 
প্রথমত, মাদাম ব্লাভাটস্কি নিজেই বলে গেছেন, এটা কোনো বাস্তব দিক থেকে গ্রহণযোগ্য কাজ নয়। 
 
My letters were written in leisure moments, more for amusement than with any serious design.
 
 

 
অর্থাৎ তিনি এই বইয়ে থাকা চিঠিগুলো নেহাত অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য লিখেছেন। কোনো সিরিয়াস উদ্দেশ্যে নয়।
 
Much of the book is exactly true, I would rather claim kindly judgement for it, as a romance of travel, than incur the critical risks that haunt an avowedly serious work.
 
 

 
যদিও এই বইয়ের কাহিনীর অনেকাংশই সত্য, তারপরেও আমি বলব যে, এই বইটি রোমাঞ্চকর ভ্রমণকাহিনী হিসেবেই বিবেচনা করে পড়তে, কোনো সিরিয়াস কাজ হিসেবে বিবেচনা করে সমালোচনার ঝুঁকি না বাড়িয়ে। মাদাম ব্লাভাটস্কি নিজেই জানতেন যে, তিনি কাহিনীর মূলভাব ঠিক থাকলেও অনেককিছুই নিজে থেকে কাল্পনিক ভাবে যোগ করেছেন। তাই তিনি সমালোচনার ভেতর না পড়তে চেয়ে, এই বইকে রোমাঞ্চকর কাহিনী বলেই চালিয়ে দিয়েছেন। 
 
বিখ্যাত রুশ সাহিত্য সমালোচক সলোভিয়ভ তার "A modern Priestess of Isis"‌ বইতে বলেছেন, 
 
Only, of course, the reader of the interesting narrative of Radda Bay must look on them as romance and fancy, and must on no account take on trust the facts and statements given by the author.
 
 

 

অর্থাৎ এই বইতে রাধাবাঈয়ের (হেলেনা ব্লাভাস্টস্কি) বর্ণনা পড়ার সময় পাঠক যেন একে রোমাঞ্চক ও কল্পনা বলেই ধরে নেন। লেখকের তথ্য ও বিবৃতিকে বাস্তব হিসেবে যেন কখনোই না মানেন।
এমনকি থিওসফিক্যাল সোসাইটির বইতেও হেলেনা ব্লাভাটস্কির এই বইয়ের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিশ্য করা হয়েছে। 
 
 
When Daylight comes বইয়ে Howard Murphet বলেছেন,
 
 but this book is not a strictly factual account of her experiences ir is rather imaginative concoction of fact and fiction, written in a style that established her literary reputation with Russian editor.
 
 

 

অর্থাৎ, এই বইটি তার ভ্রমণবৃত্তান্তের একদম নথিবদ্ধ বর্ণনা নয়। বরং বইয়ের অনেকাংশই বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণ, রুশ সম্পাদকদের আকৃষ্ট করবার মতো করে লেখা।
 
অতএব, আমরা প্রাইমারি সোর্স (ব্লাভাটস্কি নিজেই), সেকেন্ডারি সোর্স (থিওসফিক্যাল সোসাইটি) ও টার্শিয়ারি সোর্স (রুশ সমালোচক) তিনভাবেই এই বইয়ের ঘটনায় লেখিকার নেয়া কাল্পনিক তার আশ্রয়ের প্রমাণ দিলাম। লেখিকা এই বইয়ে নিজের নাম ও ছদ্মনাম নিয়েছেন, এমনকি তৎকালীন সময়ে যাদের সাথে দেখা হয়েছে, বেশকিছু ব্যক্তির নামও কাল্পনিক। 
 
 
কাজেই মহর্ষি দয়ানন্দকে নিয়ে লেখা কাহিনীও যে লেখিকার কাল্পনিক তাতেও সন্দেহ নেই।
এছাড়া আরো কিছু পয়েন্ট এখানে বিচার করবার মতো।
 
১. মহর্ষি দয়ানন্দের কাশী শাস্ত্রার্থে বিজয় ও তৎপরবর্তী ঘটনা তৎকালীন সব বিখ্যাত উত্তর ভারতীয় ইংরেজি সংবাদপত্রেই এসেছে। কাশী শাস্ত্রার্থের ঘটনা খৃস্টিয়ান ইন্টেলেন্সিয়ার, দ্য পাইওনিয়ারের মত পত্রিকায় স্পষ্টভাবেই এসেছে। সেসব কোথাও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। বা কোনো পত্রিকাতেও এই ব্যাপারে লেখা পাওয়া যায় না।
 
 
 
 
২. তৎকালীন কাশীতে যারা ছিলেন, বিশুদ্ধানন্দ, তারানাথ; তাদের কোনো বৃত্তান্ততেও এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। কোনো পৌরাণিক সোর্স বা ব্রাহ্মসমাজ সহ সমকালীন অন্য সংগঠনের সোর্সেও পাওয়া যায় না এই ঘটনার উল্লেখ।