https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

' বিষ্ণু ' সম্পর্কে বৈদিক তাৎপর্য

Saturday, December 3, 2022

 


বেদ তথা বৈদিক শাস্ত্রে আমরা বিষ্ণু এবং অন্যান্য বৈদিক পদের উল্লেখ পাই। যা সাধারণত বর্তমান বৈষ্ণব সমাজ তাদের নিজ স্বতন্ত্র মত প্রকাশে ব্যবহার করে থাকে। বৈদিক গ্রন্থে সেই সব পদ তথা শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করে পুরাণ সহ কিছু নব্য গ্রন্থের মাধ্যমে বিভিন্ন আখ্যান রচনা করা হয়েছে । বর্তমানে সেই সব বৈদিক পদের পৌরাণিক ব্যাখ্যায় বিভিন্ন অনাচার সৃষ্টি হয়েছে। যার নিরোধ করা সনাতন সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরী। আজ আমরা সেই সব পদের বৈদিক অর্থ শাস্ত্রীয় ভাবে নিরূপণ করব।
  • 🔶 বিষ্ণু শব্দের উৎপত্তি 🔶
------------------------------
বিষ্ণু পদের উৎপত্তি (বি+ক্রম) ধাতু অনুসারে হয়ে থাকে । এখানে ক্রম ধাতুর মুখ্য ভাবে ব্যবহার হয় যার অর্থ পাণিনীয় সূত্র অনুসারে " পাঁ রাখা " অর্থে বুঝায়। এবিষয়ে সূত্র " ক্রমু পাদবিক্ষেপে " তথা " বেঃ পাদবিহরণ " ( ১/৭/৪১)। এথেকে অনেকে বিষ্ণু পদের সাথে পা থাকার ভ্রম তৌরি করে অনর্থক সাকার রূপের কল্পনা করে থাকেন। পড়ন্তু এবিষয়ে সূত্রকার বিস্তারিত বর্ণন করে ভ্রম নিবারণ করেছেন। যথা —
" বৃত্তিসর্গতায়নেষু ক্রমঃ ∥ ১/৩/৩৮ ∥ বৃত্তিরপ্রতিবন্ধঃ। ঋচিক্রমতে বুদ্ধিঃ। ন প্রতিহন্যত ইত্যর্থঃ। সর্গে ব্যাকরণধ্যয়নায় ক্রমতে উৎসহতে। ক্রমন্তেऽস্মিন শাস্ত্রাণি। স্ফীতীভবন্তীত্যর্থঃ।
" আঙ্ওদৃমতে ∥ ১/৩/৪০ ∥ আক্রমতে সূর্য উদয়ত ইত্যর্থঃ। "
পাদ বিক্ষেপের অতিরিক্ত বৃত্তি, সর্গ, তায়ন, উদ্গমন আদি অর্থও হয়ে থাকে, এবং সেই সব অর্থের অনেকার্থক প্রয়োগ হয়ে থাকে। তাই সেই অনেকার্থতা মনে রেখেই অর্থ করা উচিত। 
 
  • 🔶 বিষ্ণু নামের অর্থ 🔶
-----------------------
বিষ্ণু নাম সম্বন্ধে বিভিন্ন অর্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সবের মধ্যকার কিছু অর্থের উল্লেখ আমরা এখানে করব।
 
👉 বিষ্ণু নাম সূর্য অর্থে — 
 
" তত্র বিষ্ণুশ্চ শক্রশ্চ জজ্ঞাতে পুনরেব চ। অর্যমা চৈব ধাতা চ ত্বষ্টা পুষা তথৈব চ ∥ " ১৩১
" বিবস্বান সবিতা চৈব মিত্রো বরুণ এব চ। অংশো ভগশ্চাদিতিজা আদিত্যা দ্বাদশ স্মৃতাঃ ∥ ১৩২ ( বিষ্ণুপুরাণ অধ্যায় ২৪ - প্রথম অংশ - জীবানন্দ বিদ্যাসাগর প্রকাশিত ১৮৮২ ইং কলকাতা) ।
 
অর্থাৎ - বিষ্ণু, শুক্র, অর্যমা, ধাতা, ত্বষ্টা, পুষা, বিবস্বান, সবিতা, মিত্র, বরুণ, অংশ এবং ভগ। এই দ্বাদশ নাম সূর্যের হয়ে থাকে। এখন মহাভারতের প্রমাণ দেখব - 
 
" ধাতাऽর্যমা চ মিত্রশ্চ বরুণোऽশো ভগস্তথা ∥ " ৬৫।
" ইন্দ্রো বিবস্বান্ পুষা চ ত্বষ্টা চ সবিতা তথা। 
পর্জন্যশ্চৈব বিষ্ণুশ্চ আদিত্যা দ্বাদশ স্মৃতাঃ " ৬৬ ∥ "
 ( আদিপর্ব অধ্যায় ১২৩ । গীতা প্রেস ১২২। ৬৬-৬৭)।
 
উক্ত দুইটি প্রমাণ দ্বারা এটা সিদ্ধ হয় যে আদিকালে সূর্যের নাম বিষ্ণু অর্থে ব্যবহৃত হত। 
 
" ত্বষ্টা। সবিতা। ভগঃ। সূর্য। পুষা। বিষ্ণুঃ। বিশ্বানরঃ। বরুণ। "
 (নিঘণ্টু : ৪/৬) 
 
এর উপর ভাষ্য রচিত করা যাস্কাচার্য বিষ্ণু শব্দের অর্থ সূর্য অর্থ করেছেন। এবিষয়ে বেদের অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। যার মধ্য থেকে একটির উল্লেখ আমরা এখানে করব — 
 
ইরাবতী ধেনুমতী হি ভুতং সুয়বসিনী মনুষে দশস্যা। 
ব্যস্তভনা রোদসী বিষ্ণবেতে দাধর্থ পৃথিবীমভিতো ময়ুখৈঃ ∥ 
( ঋ০ ৭/৯৯/৩)
(বিষ্ণো) হে সূর্য আপনি (এতে+রোদসী) এই দ্যুলোক এবং ভূলোককে (ব্যস্তভনাঃ) নিজের আওতাধীন রেখেছেন এবং (ময়ুখৈঃ) নিজের অনন্ত কিরণ তথা আকর্ষণ শক্তি দ্বারা (পৃথিবীম) পৃথিবীকে ( অভিতঃ) চারি দিক থেকে (দাধর্থ) ধারণ করে আছেন।
 
👉 বিষ্ণু নাম অন্তরিক্ষ অর্থে —
 
বিয়দ্ বিষ্ণুপদং বাপি পুংস্যাকাশবিহাযসী 
 ( অমরকোষ : প্রথম কাণ্ড - ব্যোমবর্গ০ ২)
এখানে বিষ্ণু নাম সমুদ্র তথা অন্তরিক্ষ অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে । তাছাড়াও বিষ্ণু শব্দের আরো কিছু নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। যজ্ঞ, অন্তরিক্ষ, সমুদ্র, সাগর ইত্যাদি শব্দে বিষ্ণু অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণ মিলে। নিম্নে এবিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
 
  • 🔶 বিষ্ণু এবং তাঁর বাহন গরুড় 🔶
---------------------------------------
বৈষ্ণব সমাজে গরুড় বিষ্ণুর বাহন হিসেবে পরিচিত। সেই গরুড় সম্পর্কে বৈষ্ণব সমাজে রয়েছে বহুল পৌরাণিক আখ্যান। তাই গরুড় নিয়ে বেদ তথা বেদাদি শাস্ত্রের বিভিন্ন ব্যাখ্যান নিয়ে এখানে আমরা আলোচনা করে, এর গূহ্য অর্থ নির্ণয় করব।
 
খেদয়ঃ। কিরণাঃ। গাবঃ। রশ্ময়ঃ। অভীশবঃ। দীধিতয়ঃ। গভস্তয়ঃ। বনম্। উস্ত্রাঃ। বসবঃ। মরীচপাঃ। ময়ুখাঃ। সমঋষয়ঃ। সাধ্যা। সুপর্ণা। ইতি পঞ্চদশ রশ্মিনামানি। (নিঘণ্টু - ১/৫)
 
অর্থাৎ - খেদি, কিরণ, গো, রশ্মি, অভিশু, দীধিতি, গভস্তি, বন, উস্ত্র, বসু, মরীচি, ময়ুখ, সমঋষি, সাধ্য এবং সুপর্ণ। এই ২৫ টি নাম সূর্যের কিরণের অর্থে হয়। আমরা জানি সুপর্ণ অর্থ গরুড় হয়। এখানে নিঘণ্টুতে আমরা কিরণ এবং রশ্মি অর্থের সমার্থকে সুপর্ণ পদেরও উল্লেখ পাই। যাতে গরুড় শব্দের অর্থ সূর্যের কিরণ এরূপ প্রতীত হয়। এবিষয়ে নিরুক্তকার বেদমন্ত্রের উল্লেখ করেন — 
 
বয়ঃ সুপর্ণা উপ সেদুরিন্দ্রং প্রিয়মেধা ঋষয়ো নাধমানাঃ। 
অপ ধ্বান্তমূর্ণুহি পুর্ধি চক্ষুর্মুমুগ্ধ্যস্মান নিধয়েব বদ্ধান্ ∥ 
(নিরুক্ত : ৪/১/৩ ; ঋগ্বেদ : ১০/৭৬/১১)
অর্থাৎ : (বয়:) অতি গমনশীল (সুপর্ণা) কিরণ (ইন্দ্রম) সূর্যের নিকট (উপ+সেদু) পৌছায়। (নাধমানাঃ) প্রার্থনা করি যে অর্থাৎ সূর্যের কাছে প্রার্থনা করার জন্য কিরণ সূর্যের সমীপে যায়, সেই কিরণ কিরূপ (প্রিয়মেধা) যজ্ঞপ্রিয়, কারণ সূর্যের উদয় বিনা যজ্ঞ হয় না। পুন: কিরূপ (ঋষয়) যেরূপ বশিষ্ঠ আদি ঋষি জ্ঞানের প্রকাশ করে থাকেন, সেরূপ কিরণ অন্ধকারের বিনাশ করে সব পদার্থের রূপকে প্রকাশ করে। হে স্বামিন ! (ধ্বান্তম) অন্ধকারকে (অপ + ঊর্ণুহি) দূর করেন। (চক্ষু) প্রাণীমাত্র তার চুখের জ্যোতি দ্বারা (পুর্ধি) পূর্ণ করেন। এবং (নিধয় + অব বদ্ধান) যেরূপ পক্ষী খাঁচায় বদ্ধ থাকে, তদ্রূপ আপনার মণ্ডলে বদ্ধ আমাদের (অস্মান) মর্তলোকে যাওয়ার জন্য (মুমুগ্ধি) ছেড়ে দিন।
 
যাস্কাচার্য সুপর্ণ অর্থ " সুপর্ণা আদিত্যরশ্ময় " বলে উল্লেখ করেন। অর্থা সুপর্ণ সূর্যের কিরণের নাম হয়ে থাকে। এছাড়াও পুনঃ উল্লেখ করেন যে — 
 
যত্রা সুপর্ণা অমৃতস্য ভাগমনিমেষং বিদথাভি স্বরন্তি। 
ইনো বিশ্বস্য ভুবনস্য গোপঃ স মা ধীরঃ পাকমত্রা বিবেশ ∥ 
(ঋগ্বেদ: ১/১৬৪/২১) 
 
এখানেও যাস্কাচার্য উক্ত মন্ত্রে " সুপর্ণাঃ সুপতনা আদিত্যরশ্ময়ঃ " যথা, সূর্যের কিরণের নাম সুপর্ণ।
 
👉 সুপর্ণ শব্দ গরুড় অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
 
গরুত্মান গরুডস্তার্ক্ষো বৈনতেয়ঃ খগেশ্বরঃ। 
নাগান্তকো বিষ্ণুরথঃ সুপর্ণঃ পত্রগাশন ∥ 
(অমরকোষ : ১/২৯)
অর্থাৎ : গরুত্মান, গরুড়, তার্ক্ষ, বৈনতেয়, খগেশ্বর, নাগান্তক, বিষ্ণুরথঃ, সুপর্ণ এবং পত্রগাশন — এইসব নাম গরুড় পক্ষীর হয়। 
 
  • 🔶 বিষ্ণু অর্থে সমুদ্র 🔶
------------------------
অম্বরম্। বিয়ত্। ব্যোম। বর্হিঃ। ধন্বঃ। অন্তরিক্ষম্। আকাশম্। আপঃ। পৃথিবী। ভুঃ। স্বয়ম্ভুঃ। অধ্বা। পুষ্করম্। সগরঃ। সমুদ্রঃ। অধ্বরম্। ইতি ষোডশান্তরিক্ষনামানি। (নিঘণ্টু : ১/৩)
অর্থাৎ : অম্বর, বিয়ত, ব্যোম, বর্হি, ধন্ব, অন্তরিক্ষ, আকাশ, আপ, পৃথিবী, ভূ, স্বয়ম্ভু, অধ্বা, পুষ্কর, সগর, সমুদ্র এবং অধ্বর উক্ত ১৬ (ষোল) টি নাম আকাশের হয়ে থাকে। 
 
তত্র সমুদ্র ইত্যেতত্ পার্থিবেন সমুদ্রেণ সন্দিহ্ণতে। সমুদ্রঃ কস্মাত্ সমুদদ্রবন্ত্যস্মাদাপঃ সমভিদ্রবন্ত্যেনমাপঃ সম্মোদন্তেऽ স্মিন ভূতানি সমুদকো ভবতি সমুনত্তীতি বা ∥ (নিরুক্ত: ২/৩/১০)
অর্থাৎ : পৃথিবীতে যত জল সমূহ স্থান আছে, তাকেও সমুদ্র বলে থাকে । সেহেতু যাস্কাচার্য উদ্ধৃত করেন, (পার্থিবেণ সমুদ্রেণ) পৃথিবীস্থ সমুদ্রের সাথে আকাশের সমুদ্রের সংযোগ হয়ে থাকে । কারণ সমুদ্র শব্দের অর্থ প্রায়ঃ উভয় দুই ক্ষেত্রে একই হয়ে থাকে। (সমুদদ্রবন্তি + অস্মাত + আপ) যেখান থেকে জল দ্রবীভূত হয়ে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়। তথা আকাশ থেকে (সমভিদ্রবন্তি + এনম + আপঃ) যেখান থেকে জল প্রাপ্ত হয়। মেঘরূপে আকাশে জল প্রাপ্ত হয়। (সম্মোদন্তে + অস্মিন + ভুতানি) যাতে প্রাণ আনন্দ লাভ করে থাকে। 
 
আকাশে পক্ষীগণ বিলাশ করে। (সমুদকঃ + ভবতী) যাতে বহুল জল উৎপন্ন হয়। (সমুনত্তি + বা) যা কিছু আদ্র করে, ইত্যাদি শব্দ সমুদ্র অর্থে প্রতীত হয়। এবং তা সাগর অর্থেও ব্যবহৃত হতে পাড়ে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় সমুদ্র নাম আকাশেরও হতে পাড়ে। এবিষয়ে আমরা কিছু মন্ত্রের উদাহরণ দেখব : — 
 
একঃ সুপর্ণঃ স সমুদ্রমা বিবেশ স ইদং বিশ্বং ভুবনং বি চষ্টে। 
তং পাকেন মনসাপশ্যমন্তিতস্তং মাতা রেলিহ স উ রেলিহ মাতরম্ ∥ 
(ঋগ্বেদ : ১০/১১৪/৪)
সায়ণভাষ্যম : একঃ সর্বকার্যেষ্বসহায়ঃ সুপর্ণঃ সুপতনো মধ্যমস্থানো দেবঃ সমুদ্রম্ অন্তরিক্ষম্ আবিবেশ আবিশতি। আবিশ্য চ স ইদং বিশ্বং সর্ব ভুবনং ভূতজাতং বিচষ্টে অনুগ্রাহ্যতয়াऽভিপশ্যতে। তমেবং রূপং দেবং পাকেন পরিপক্বেন মনসা অন্তিতঃ সমীপেऽ হমপশ্যমদর্শম। কিঞ্চ মাতা উদকানাং নির্মাত্রী মাধ্যমিকা বাক্ তাং রেল্লিহ আস্বাদয়তি। উপজীবনমাত্রমন্ত্র লক্ষ্যতে। স উ স খলু মাতরং বাচং রেল্লিহ লেঢি। তামেবোপজীবতি " লিহ আস্বাদনে "। 
 
অথ দুর্গাচার্যভাষ্যম : এক এব অদ্বিতীয়ো যস্য পতনে গমনে প্রতিমানং অন্যদ দ্বিতীয়ং নাস্তি। স সুপর্ণঃ সুপতনো বায়ুঃ সমুদ্রম্ অন্তরিক্ষম নিত্যং আবিবেশ্ আবিশতি ন কদাচিদব্যনাবিষ্টস্তত্র। স চ পুনঃ সর্বভূতানুপ্রবেশী তদাবিশ্য বিশ্বং ভুবনে সর্বাণি ইমানি ভুতানি বিচষ্টে অভিবিপশ্যতি। যথা দ্রষ্টব্যানি। তমেবং বর্তমানং অহং পাকেন মনসা বিপক্বপ্রজ্ঞানেন সর্বগতমপি সন্তম্ অন্তিতঃ অন্তিকম্ ইব অপশ্যম ঋষির্দৃষ্টদেবতাসতত্বঃ, কস্মৈ চিদাচক্ষাণো ব্রবীতি। তং মাতা রেলিহ স উ রেলিহ মাতরম্। মাতা মাধ্যমিকা বাক্ তমুপজীবতি। পরস্পরাশ্রয়ত্বাত্তয়োর্বৃত্তেরধ্যাত্মবদিতি। ইতি। 
 
ভাষ্যকার সায়ণ আদি অনুসার পদার্থ : (এক + সুপর্ণ) এক অর্থাৎ অসহায়, সুন্দর পতনশীল বায়ু সর্বদা (সমুদ্রম + আবিবেশ) আকাশে অবস্থিত হয়ে (সঃ) সেই বায়ু (বিশ্বং ভূবনং) এই সম্পূর্ণ প্রাণীকূলকে (বিচষ্টে) প্রতিকূল দৃষ্টিতে দেখে থাকেন। (তম্) তাকে (অন্তিতঃ) তার সমীপে হয়ে (পাকেন + মনসা) পরিপক্ব মনের দ্বারা (অপশ্যম্) দেখে থাকি । (তম্) তাকে (মাতা) জল নির্মাণ করা মাধ্যমিকা বাক্, মেঘস্থ বিদ্যুৎ (রেল্লিহ) চেয়ে থাকে এবং (সঃ + উ) সে বিদ্যুৎ কে (রেল্লিহ) চেয়ে থাকে। অর্থাৎ একে ওপরকে চেয়ে থাকে। এবিষয়ে পুনঃ উল্লেখ হয় — 
 
সহস্ত্রশৃংগো বৃষভো য়ঃ সমুদ্রাদুদাচরত্। (অথর্ববেদ : ৪/৫/১)।
অর্থাৎ : যে সহস্র শিং যুক্ত, বর্ষণকারী করা সেই সূর্য (সমুদ্রান) আকাশ থেকে উদিত হোন। সূর্যের উদয় আকাশ থেকে হয়ে থাকে, তাই এখানে সমুদ্র শব্দ আকাশ অর্থেই হতে পাড়ে । পুনঃ 
 
সো অর্ণবো ন নদ্যঃ সমুদ্রিয়ঃ প্রতি গৃভণাতি বিশ্রিতা বরীমভিঃ। 
ইন্দ্রঃ সোমস্য পীতয়ে বৃষায়তে সনাত্ স যুধ্ম ঔজসা পনস্যতে ∥ 
ঋগ্বেদ : ১/৫৫/২
অর্থাৎ : এখানে সায়ণাচার্য " সমুদ্রিম " পদের অর্থ (সমুদ্রিয়ঃ) " সমুদদ্রবন্ত্যস্মাদাপ ইতি সমুদ্রমন্তরিক্ষং তত্রভবঃ সমুদ্রিয়ঃ " অন্তরিক্ষ ব্যাপি করেন। অর্থাৎ সমুদ্র যা অন্তরিক্ষে ব্যাপ্ত তাকে " সমুদ্রিয় " বলে থাকে। এখানে এটাও দ্রষ্টব্য যে ; যখন বিষ্ণু শব্দের অর্থ সূর্য হয় তখন বিষ্ণু সমুদ্র অর্থাৎ অন্তরিক্ষে (আকাশে) নিবাস করত। পরবর্তীতে যখন বিষ্ণুকে স্বতন্ত্র দেবতা হিসেবে তৈরি করা হয়, তখন তাকে পৃথিবীস্থ সমুদ্র (জলাশয়) মানা উচিত। এছাড়াও বিষ্ণু অর্থ সাগর অর্থেও হয় — 
 
আর্ষ্টিষেণো হোত্রমৃষির্নিষীদন্ দেবাপির্দেবসুমতিং চিকিৎবান্। 
স উত্তরস্মাদধরং সমুদ্রমপো দিব্যা অসৃজদ বর্ষ্যা অভি ∥ 
(নিরুক্ত : ২/৩/১১)
অর্থাৎ : উপরিস্থ আকাশ দ্বারা অধঃ সমুদ্রকে অর্থাৎ পৃথিবীস্থ সাগরকে সূর্য বানিয়েছে। এই আকাশ - সাগর দ্বারা পৃথিবীস্থ সমুদ্র অর্থ করা হয়েছে। যথা " সগরস্যাপত্যং সাগরঃ " সাগরের পুত্রকে সমুদ্র বলে থাকে। 

  • 🔶 বিষ্ণু শব্দার্থ এবং বিষ্ণুসূক্ত 🔶
--------------------------------------
অথ যদ্ধিষিতো ভবতি তদ্ বিষ্ণুভর্বতি। বিষ্ণুর্বিশতের্বা ব্যশ্নোতের্বা ∥ (নিরুক্ত : ১২/২/১৯)।
অথাস্যোপরিভাষ্যম্ — অথ যত্ যদা বিষিতঃ ব্যাসোऽযমেব সূর্যো রশ্মিভির্ভবতি তত্তদা বিষ্ণুর্ভবতি। বিশতের্বা যদা বিষ্টঃ প্রবিষ্টঃ সর্বতো রশ্মিভির্ভবতি তদা বিষ্ণুর্ভবতি। ব্যশ্নোতের্বা বিপুর্বস্য বাশ্নোতেঃ, যদারশ্মিভিরতিশয়েনায়ং ব্যাসো ভবতি ব্যাপ্নোতি বা রশ্মিভিরয়ং সর্ব, তদা বিষ্ণুরাদিত্যো ভবতি।
 
অর্থাৎ : যদ্যপি বৈদিক ভাষায় বিষ্ণু শব্দ অনেকার্থক তথাপি যে বিষ্ণু শব্দ নিয়ে বামন কাহানী সৃষ্টি হয়েছে সেই শব্দের আদিত্য অর্থ সূর্য হয়। এতে যাস্কাচার্য প্রমাণ — সূর্য তার নিজ (রশ্মিভিঃ) কিরণে ব্যাপ্ত হয়ে যখন পূর্ণ রূপ লাভ করে তখন তাকে বিষ্ণু বলে। " বিশ প্রবেশনে " ধাতু দ্বারা এই শব্দের অর্থ সিদ্ধ হয়। যখন সূর্য কিরণ দ্বারা সর্বত্র প্রবিষ্ট হয় তখন তাকে বিষ্ণু বলে। অথবা " বি + অশ " ধাতু দ্বারাও বিষ্ণু শব্দ সিদ্ধ হয়। এরও তাৎপর্য এটাও হয়, কিরণ যখন পূর্ণ ব্যপ্ত হয় তখন তাকে সূর্য বলে। 
 
এখানে যাস্কাচার্যের অভিমত হল যথায় সূর্য সর্বদা কিরণ দ্বারা যুক্ত থাকে থাকে, পড়ন্তু পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য আমরা তাকে সর্বদা দেখতে পাড়ি না। যথা যেসময় সূর্য তার নিজ সম্পূর্ণ কিরণে পরিপূর্ণ হয় তথা দ্যুলোক, অন্তরিক্ষ পৃথিবী সর্বত্র প্রকীর্ণ হয়, সেই অবস্থায় সূর্যের নাম বিষ্ণু হয়ে থাকে। এবিষয়ে যাস্কাচার্য এক বৈদিক উদাহরণ পেশ করেন, যেখানে বিষ্ণু শব্দের অর্থ সূর্য প্রতীত হয়। এবং স্বয়ং এর অর্থও করে থাকেন। যথা : — 
 
ইদম্ বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নিদধে পদম্। সমুঢ্মস্য পাংসুরে ∥ যদি কিঞ্চ তদ্ধিক্রমতে বিষ্ণুস্ত্রিধা নিধত্তে পদং ত্রেধা ভাবায় পৃথিব্যামন্তরিক্ষে দিবীতি শাকপুণিঃ। সমারোহণে বিষ্ণুপদে গয়শিরসীত্যৌর্ণনাভঃ। সমুল্লহমস্য পাংসুরে ব্যায়নেऽন্তরিক্ষে পদং ন দৃশ্যতে। অপি বোপমার্থে স্যাত সমুল্লহমস্য পাংসুল ইব পদং ন দৃশ্যত ইতি।
 
এবিষয়ে দুর্গাচার্য ভাষ্য নিম্ন প্রকার : — 
 
যদিদং কিঞ্চিদ বিভাগেনাবস্থিতং তদ্ধিক্রমতে বিষ্ণুঃ আদিত্যঃ। কথমিতি ? যত আহ " ত্রেধা নিদধে পদম্ " নিধত্তে পদং নিধানং পদৈঃ। ক্ব ? তত্র তাবত্ পৃথিব্যামন্তরিক্ষে দিবীতি শাকপুণিঃ। পার্থিবোऽগ্নির্ভত্বা পৃথিব্যাং যৎকিঞ্চিদস্তি তদ্ধিক্রমতে তদধিতিষ্ঠতি। অন্তরিক্ষে বিদ্যুদাত্মনা। দিবি সূর্যাত্মনা। যদুক্তম। তমু অকৃণ্বন্ ত্রেধা ভুবে কম্। ইতি। সমারোহণে। উদয়গিরাবুদ্যন পদমেকং নিধত্তে। বিষ্ণুপদে মাধ্যন্দিনেऽন্তরিক্ষে। গয়শিরসি অস্তংগিরৌ। ইত্যৌর্ণনাভ আচার্যো মন্যতে এবম্। সমুল্লহমস্য পাংসুরে অস্মিন ব্যায়নে এতস্মিন্ অন্তরিক্ষে সর্বভূতবৃদ্ধিহেতৌ যন্মধ্যদিনং পদং বিদ্যুদাখ্যং পদং তত্ সমুল্লহম্ অন্তর্হিতং ন নিত্যং বৃশ্যতে। তদুক্তম্। স্বপ্নমেতন্মধ্যমং জ্যোতিরনিত্যদর্শনম্। ইতি।
অপি বোপমার্থে স্যাত সমুল্লহমিব পাংসুলে পদং ন দৃশ্যতে ইতি। যথা পাংসুলে প্রদেশো পদং ন্যস্তমুৎক্ষেপণসমনন্তরমেব পাংশুভিরাকীর্ণত্বাত্ ন দৃশ্যতে এবমস্য মধ্যমং বিদ্যুদাত্মকং পদমাবিষ্কৃতিসমকালমেব ব্যবধীয়যে নাবতিষ্ঠত ইত্যর্থঃ। ইতি।
 
অর্থাৎ : (বিষ্ণু) আদিত্য = সূর্য (ইদম্) যা কিছু এই বিভাগে স্থিত, সেই সব (বিক্রমতে) নিজ কিরণে ব্যাপ্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ পৃথিবী, অন্তরিক্ষ, দ্যুলোক, যা পৃথক পৃথক প্রতীত হয় , সেই সবে সূর্য বিস্তৃত হয়। ( ত্রেধা নিদর্ধে পদম্) সেই সূর্য তিন স্থানে তার কিরণকে স্থাপিত করে থাকে। সেই তিন স্থান কি কি সে বিষয়ে আচার্য যাস্ক উদ্ধৃত করেন। (পৃথিব্যাম) পৃথিবী,অন্তরিক্ষ এবং দ্যুলোকে সে বিষ্ণু হিসেবে থাকে। অর্থাৎ সূর্যের কিরণ উক্ত তিন স্থানে বিস্তৃত থাকে। এটা শাকপুণি আচার্যের মত বলে। এবিষয়ে ঔর্ণনাভ বলেন বিষ্ণু = সূর্য (সমারোহণে) উদয়গিরি তে উদিত সূর্যের দিকে একটি পা রাখেন। (মধ্যন্দিন) অন্তরিক্ষে এক পা রাখা হয়। (গয়শিরসি) এবং অস্তাচলে এক পা রাখা হয়। (পাংসুরে) উক্ত অন্তরিক্ষের (অস্য) এই সূর্যে (সমুঢম) এক পা লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ দেখা যায় না। যেরূপ মাটিতে লুকায়িত পা সহজে দেখা যায় না সেরূপ তাও দেখা যায় না। দূর্গাচার্যও বিষ্ণু অর্থ সূর্য করেছেন।
 
💢 অথঃ বিষ্ণুসূক্ত —
অতো দেবা অবন্তু তো যতো বিষ্ণুর্বিচক্রমে। পৃথিব্যায়াঃ সমধামভিঃ ∥ ১৬
ত্রীণি পদা বিচক্রমে বিষ্ণুর্গোপা অদাভ্যঃ। অতো ধর্মাণি ধারয়ন্ ∥ ১৭
বিষ্ণোঃ কর্মাণি পশ্যত যতো ব্রতানি পস্পশে। ইন্দ্রস্য যুজ্যঃ সখা ∥ ১৮
তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদ সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাতত্ ∥ ১৯
তদ্বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংসঃ সমিন্ধতে। বিষ্ণোর্যৎপরমং পদম্ ∥ ২০
(ঋ০ ১/২২/১৬-২০) 
 
অর্থাৎ : (বিষ্ণুঃ) সূর্য (সসধামভিঃ) নিজের সাত প্রকারের কিরণ দ্বারা জগতের ভরণ পোষণ করা (যত + পৃথিব্যাঃ) পৃথিবী থেকে দ্যুলোক সর্বত্র (বিচক্রমে) বিশেষ রূপে ভ্রমণ করে থাকে (অতঃ) এর দ্বারা (নঃ) আমাদের (দেবাঃ) পৃথিবী সহ বৃহস্পতি শুক্র আদি নক্ষত্র এবং বায়ু আদি অন্য নক্ষত্র দেব তিন লোককে (অবন্তু) রক্ষা করেন। 
 
অর্থাৎ : (অদাভ্যঃ) অহিংস্য, অবিনশ্বর, (গোপাঃ) তিনি তার ত্যাজ দ্বারা জগতকে রক্ষা করা (বিষ্ণুঃ) সূর্য (ত্রীণি + পদা) পদ = স্থান — পৃথিবী, অন্তরিক্ষ এবং দ্যুলোক উক্ত তিন জায়গায় (বিচক্রমে) ভ্রমন করে থাকেন। (অতঃ) উক্ত ভ্রমণে (ধর্মাণি) প্রজাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের ধর্মের (ধারয়ন্) পোষণ করে থাকেন। সূর্য উদয়ের পড় থেকেই মানব ধর্ম-কর্ম করা শুরু করে, তাই এখানে সূর্যই ধর্মের পোষক। ( ত্রীণি + পদা) তিনি তিন পা দ্বারা চলমান থাকেন। এখানে তিন পদ পৃথিবী অন্তরিক্ষ দ্যুলোকে চলমান থাকা বলা হয়েছে।
 
অর্থাৎ : হে মনুষ্য (বিষ্ণোঃ) সূর্যের (সদা) সর্বদা (কর্মাণি) পালন আদি কর্ম সমূহ (পশ্যত) দেখো (যতঃ) যাতে (ব্রতানিঃ) ব্রত= ধর্মকর্ম (পস্পশে) করে থাকে। যে সূর্য (ইন্দ্রস্য) বায়ুর (যুজ্যঃ) যোগ্য অনুকূল (সখা) মিত্র হয়। 
 
অর্থাৎ : (সুরয়ঃ) বিদ্বান (সদা) সর্বদা (বিষ্ণোঃ) সূর্যকে (তত্) তার (পরমম্) উৎকৃষ্ট (পদম্) পদকে (পশ্যন্তি) দেখে থাকে, বিদ্বান সূর্যের তত্ত্বকে জেনে থাকেন। এবিষয়ে দৃষ্টান্ত দেন যে (দিবি + ইব) যেরূপ আকাশে (আততম্) সব প্রকার বিস্তৃত পদার্থ (চক্ষুঃ) চোখ সব কিছু দেখে থাকে। সেহেতু বিদ্বান কোন অবরোধ বিনা সব পদার্থ অবলক্ষণ করে থাকেন। 
 
অর্থাৎ : (বিষ্ণোঃ + যত্ + পরমং + পদম্) বিষ্ণুর যে পরম পদ আছে (তত্) তাকে (বিপন্যবঃ) সদা স্তুতি প্রার্থনা করা তথা বিশ্বজগৎকে যে সর্বদা মিথ্যা জঞ্জাল থেকে মুক্ত রাখে এবং (জাগৃবাংসঃ) যে জাগরণ করে (বিপ্রাসঃ) সেই মেধাবীকে (সমিন্ধতে) প্রকাশিত করে থাকেন।
 
এছাড়াও এই মন্ত্র ঈশ্বরপক্ষেও হয়ে থাকে। বিষ্ণু নাম ব্রহ্মেরও হয়ে থাকে। অনেকে বলবে এখানে " সসধাম " এবং " ত্রিপদ " আদি শব্দের অর্থ কি হবে। এবিষয়ে আমরা বলব, ঈশ্বরপক্ষে " সম " শব্দ " সর্পণশীল " অর্থাৎ চলে থাকা অর্থ হবে। যে অর্থ " জগৎ " এবং " সংসার " শব্দের অর্থ হয়, সেই অর্থ যা " সম " পদেরও হয়ে থাকে। এই শব্দ নিয়ে অন্য আচার্যগণও " সম " শব্দের প্রয়োগ করেছেন এবং " ত্রিপদ " শব্দের অর্থ তিন স্থান করেছেন। 
 
  • 🔶 যজ্ঞবাচক বিষ্ণুশব্দ 🔶
----------------------------
দিবি বিষ্ণুর্ব্যক্রক্ষস্ত জাগতেন চ্ছন্দসা ততো নির্ভক্তো যোऽস্মান্দ্বেষ্টি য চ বয় দ্বিষ্মোऽন্তরিক্ষে বিষ্ণুর্ব্যক্রক্ষস্ত ত্রৈষ্টুভেন চ্ছন্দসা ততো নির্ভক্তো যোऽস্নান্দ্বেষ্টি যং চ বয়ং দ্বিষ্মোऽস্মাদত্রাদস্যৈ প্রতিষ্ঠায়াऽঅগন্ম স্বঃ সং জ্যোতিষাভুম্ ∥ (যজুর্বেদ : ২/২৫)। 
 
অর্থাৎ : (বিষ্ণুঃ) যজ্ঞ (জাগতেন + ছন্দসা) জগতী ছন্দ দ্বারা অনুষ্টীয়মান হয়, তথা যে যজ্ঞ জগতী ছন্দে মন্ত্র পাঠ করা হয় (দিবি) দ্যুলোককে (ব্যক্রংস্ত) প্রাপ্ত হয়ে থাকে (তত্) তাতে যথা, যজ্ঞ পুরো দমে শুরু হবার পর (নির্ভক) দুষ্ট তথা ক্ষতিকারক সব পদার্থের বিনাশ ঘটে (যঃ) যেই দুষ্ট বায়ু আদি বস্তু (অস্মান) জীবের মধ্যে (দ্বেষ্টিঃ) দ্বেষ ভাব রেখে থাকে এবং (বয়ম্ + চ) আমরা (যম্) যাকে (দ্বিষ্মঃ) বা যাদের উপর দ্বেষ রাখি তারা যেন যজ্ঞ দ্বারা বিনষ্ট হয়ে যায়। যথা, আমরা যজ্ঞে যা আহুতি দেই সেই ঔষধি উপকরণ যজ্ঞের দ্বারা বায়ুতে মিশ্রিত হয়ে ক্ষতিকর সব রোগ জীবানুর উৎপত্তি স্থল ধ্বংস করে দেয়। (বিষ্ণুঃ) যজ্ঞ (ত্রৈষ্টুভেন + ছন্দসা) ত্রিষ্টুপ ছন্দ দ্বারা যজ্ঞ অনুষ্ঠিত করা (অন্তরিক্ষে) অন্তরিক্ষ লোকে (ব্যক্রংস্ত) প্রতীত হয়ে থাকে। (তত্ + নির্ভক্ত) পূর্ববত। (বিষ্ণু) যজ্ঞ (গায়ত্রেণ + ছন্দসা) গায়েত্রী ছন্দ দ্বারা অনুষ্ঠিত (পৃথিব্যাম) পৃথিবীলোকে (ব্যক্রংস্ত) বিস্তৃত হয়ে যায়। (তত্ + নির্ভক্ত) পূর্ববত। (অস্মান + অন্নাত) জগতে প্রত্যক্ষত দৃশ্যমান যেসব অন্ন, অর্থাৎ খাদ্য সামগ্রী হয়। (অস্যৈ + প্রতিষ্ঠায়ৈ) এই প্রত্যক্ষ উপাদানের প্রতিষ্ঠার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান করা হয়। যজ্ঞ দ্বারা মনুষ্য (স্বঃ) সুখ (অগন্ম) পেয়ে থাকে এবং (জ্যোতিষাঃ) ঈশ্বরীয়জ্যোতি = প্রকাশ দ্বারা (সম্ + অভুম) সঙ্গত হয়ে থাকে। যথা, যজ্ঞ দ্বারা ইহলোক এবং পরলোক উভয় কার্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। 
 
এই মন্ত্রে বিষ্ণু শব্দের অর্থ মহিধর " বিষ্ণুর্যজ্ঞপুরুষ " যজ্ঞ করে থাকেন। এছাড়া শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী " যো বেবেষ্টি ব্যাপ্নোতি অন্তরিক্ষস্থবায্বাদিপদার্থান স যজ্ঞঃ।" " যজ্ঞ বৈ বিষ্ণু " তথা শতপথ ব্রাহ্মণও একই ভাবে যজ্ঞ অর্থ বিষ্ণু করে থাকেন। এ বিষয়ে আরো একটি মন্ত্রের উদাহরণ দেখে নিব — 
 
বিষ্ণোঃ ক্রমোऽসি সপত্নহা গায়ত্রং ছন্দऽ আরোহ পৃথিবীমনু বিক্রমস্ব বিষ্ণোঃ ক্রমোऽস্যভিমাতিহা ত্রৈষ্টুভং ছন্দऽ আরোহান্তরিক্ষমনু বিক্রমস্ব বিষ্ণোঃ ক্রমোऽস্যরাতীযতো হন্তা জাগতং ছন্দऽআরোহ দিবমনু বিক্রমস্ব। বিষ্ণোঃ ক্রমোऽসি শত্রুযতো হন্তাऽনুষ্টুভং ছন্দऽ আরোহ বিশোऽনু বিক্রমস্ব। (যজুর্বেদ : ১২/৫)।
অর্থাৎ : আপনি (বিষ্ণু + ক্রম + অস্তি) যজ্ঞের পরিচালক হোন, সেই জন্য (সপত্নহা) জীবের আরোগ্য যে নষ্ট করে সেই সব কিছুর বিনাশ আপনি করেন। হে যজ্ঞক্রম (গায়ত্রম + ছন্দ + আরোহ) গায়ত্রী ছন্দ দ্বারা প্রাপ্ত হোন (অনু) তৎপশ্চাত (পৃথিবীম্) পৃথিবীতে (বিক্রমস্ব) বিস্তৃত হয়। আপনি (বিষ্ণো + ক্রম + অসি) যজ্ঞের পরিচালক, সেই হেতু (অভিমাতিহা) ঘাতক পাপ সমূহকে তুমি নষ্ট কর। (ত্রৈষ্টুভং + ছন্দঃ + আরোহ) আপনি ত্রিষ্টুপ ছন্দকে প্রাপ্ত করান (অনু) পশ্চাৎ (অন্তরিক্ষম + বিক্রমস্ব) অন্তরিক্ষ লোকে ব্যাস করেন। পুনঃ (বিষ্ণোঃ + ক্রমঃ + অসি) আপনি বিষ্ণুর ক্রম হোন। সেহেতু (অরাতীয়তঃ + হন্তা) শত্রুর হনন করে থাকেন। (জাগতম্ + ছন্দঃ + আরোহ) জগতী ছন্দকে প্রাপ্ত করে (অনু) পশ্চাৎ (দিবম্) দ্যুলোক পর্যন্ত (বিক্রমস্ব) বিস্তৃত হয়ে যায়। পুনঃ (বিষ্ণোঃ + ক্রমঃ + অসি) আপনি যজ্ঞের ক্রম হোন। সে জন্য (শত্রুয়তঃ ) শত্রুদের (হন্তা) নাশ করে থাকেন। (অনুষ্টুভং + ছন্দ + আরোহ) অনুষ্টুভ ছন্দ প্রাপ্ত করান। (অনু) তৎপশ্চাৎ (দিশঃ) সব দিশার মধ্যে (বিক্রমস্ব) ছড়িয়ে যায়। 
 
এই বিষ্ণু শতপথ ব্রাহ্মণের বিভিন্ন আখ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে মূলত দেবাসুরের যুদ্ধের কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বিষ্ণু পদের ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্নে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে — 
 
তদ্বৈ দেবা শুশ্রুবুঃ। বিভজন্তে হ বা ইমামসুরাঃ পৃথিবীং প্রেত তদেষ্যামো যত্রেমামসুরা বিভজন্তে কে তত্ঃ স্যাম যদস্যৈ ন ভজেমহীতি তে যজ্ঞমেব বিষ্ণুং পুরষ্কৃত্যেয়ুঃ। (শত০ ১/২/৫/৩)
অর্থাৎ : দেবগণ পরস্পর শুনেন যে অসুরদল এই পৃথিবী নিজেদের মধ্যে ভাগ করতেছেন। তখন দেবগণ সেই জায়গায় উপস্থিত হন যেখানে অসুরগণ ভাগ বিনিময় করতেছে। তারা যদি এই পৃথিবী ভূ অংশে ভাগ না পায় তাহলে তাদের কি হবে এনিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা হয়। সেই যজ্ঞস্বরূপ বিষ্ণুকে সাক্ষী রেখে দেবগণ সামনে এগুতে থাকে । 
 
তে হোচুঃ। অনু নোऽস্যাং পৃথিব্যামা ভজতাস্ত্বেব নোऽপ্যস্যাং ভাগ ইতি। তে হাসুরা অসুয়ন্ত ইবোচুর্যাবদেবৈষ বিষ্ণোরভিশেতে তাবদ্বো দদ্ম ইতি। (শত০ : ১/২/৫/৪
বামনো হ বিষ্ণুরাম। তদ্দেবা ন জিহীডিরে মহদ্বৈ নোऽদুর্যে নো যজ্ঞসম্মিতমদুরিতি। (শত০ ১/২/৫/৫)
তে প্রাঞ্চং বিষ্ণুং নিপাদ্য। চ্ছন্দোভিরভিতঃ পর্যগৃহ্ণন্। গায়ত্রেণ ত্বা চ্ছন্দসা পরিগৃহ্নামীতি দক্ষিণতস্ত্রৈষ্টুভেন ত্বা চ্ছন্দসা পরিগৃহ্নামীতি পশ্চাজ্জাগতেন ত্বা ছন্দসা পরিগৃহ্নামীত্যুত্তরতঃ। (শত০ ১/২/৫/৬)
অর্থাৎ : দেবগণ বলেন, এই পৃথিবীতে আমাদেরও প্রাপ্য ভাগ দেন, কারণ এই পৃথিবীতে আমাদেরও ভাগ আছে। দেবগণের এই কথা শুনে অসুরগণ ইর্ষান্বিত হয়ে বলেন যে, যতটুকু জায়গা জুড়ে এই বিষ্ণু শয়নরত আছে ততটুকু জায়গা আপনাদের দিতে পারি। এর বেশী নয়। ৪।
নিশ্চয় তখন বিষ্ণু বামন, তথা আকারে ছোট ছিল। অসুরের এরূপ উত্তরে দেবগণ অসন্তুষ্ট হয় নি। বরং প্রতুত্ত্যরে দেবগণ অসুরদের বলেন যে, অসুররা তাদেরকে অনেক কিছুই দিয়েছে। তারা যজ্ঞ স্বরূপ (যজ্ঞের বরাবর) দিয়েছেন। ৫। 
 
এই প্রকার দেবগণ বিষ্ণুকে পূর্বদিকে স্থাপিত করে বৈদিক ছন্দ দ্বারা চারদিক থেকে ঘেরে ফেলা শুরু করে। যজুর্বেদ অধ্যায় ১ মন্ত্র ২৭ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, যথা : " গায়ত্রেণ ত্বা ছন্দসা পরিগৃহ্ণামি " আপনাকে গায়ত্রী ছন্দ দ্বারা আহ্বান করি । আপনাকে ত্রিষ্টুপ ছন্দ দ্বারা পশ্চিমে ঘিরে থাকি " জাগতে তত্বা ছন্দসা পরিগৃহ্নামি " যথা : জগতী ছন্দ দ্বারা আপনাকে ঘিরে থাকি। এই বলে উত্তর দিক ঘিরে ফেলে। এরূপ ভাবে বিষ্ণুকে চারিদিক দিয়ে ছন্দঃ দ্বারা পরিশিষ্ট করে এবং পূর্বদিকে অগ্নি প্রজ্বলিত করে তার সাথে সাথে শ্রম তথা আহুতি করা শুরু করে। এর দ্বারা দেবগণ পুরো পৃথিবীতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়। ৬ । 
 
  • 🔶 অদিতি এবং বিষ্ণু 🔶
---------------------------
পুরাণের মধ্যে উল্লেখ আছে যে অদিতির গর্ভে বামন বিষ্ণুর উৎপত্তি হয়ে থাকে। এখানে এটাও বিচারণীয় যে, এখানেও কারণ সূর্য হয়ে থাকে। অদিতি শব্দের অর্থ নিয়ে স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা রয়েছে। এখানে এটি বিচার্যবিষয় যে, বেদে সূর্যকে অদিতিপুত্র বলা হয়েছে। এই কারণেও সূর্যকে আদিত্য বলা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে যাস্কাচার্য বলেন — 
 
আদিত্যঃ কস্মাদঃ আদত্তে রসান্। আদত্তে ভাসং জ্যৌতিষামাদীমো ভাসেতি বা। অদিতেঃ পুত্র ইতি বা ∥ (নিঃ ২/১৩)
অর্থাৎ : সূর্যকে আদিত্য কেন বলা হয় ? (আদত্তে + রসান্) সব রসকে খিঁচে ফেলে। অথবা (আদত্তে + ভাসম্ + জ্যোতিষাম্) সূর্যোদয় হওয়ার পর চন্দ্র নক্ষত্রাদি জ্যোতিষমান পদার্থ মলিন হয়ে যায়। অথবা (আদীপ্তঃ + ভায়াঃ) জ্যোতি দ্বারা সে আবৃত হয়। অথবা (আদিতেঃ + পুত্রঃ) অদিতির পুত্র হওয়ার ফলে সূর্যকে আদিত্য বলে থাকে। 
 
এমন অনেক বেদমন্ত্রে " অদিতিপুত্রঃ " এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এমন কিছু মন্ত্র নিছে উল্লেখ করা হয়েছে। — 
 
তে হি পুত্রাসো অদিতেঃ প্র জীবসে মর্ত্যায়। জ্যোতির্যচ্ছন্ত্যজস্ত্রম। (যজুঃ ৩/৩৪)
অর্থাৎ : (অদিতেঃ) অদিতির (তে হি + পুত্রাসঃ) সে পুত্র, অর্থাৎ আদিত্য (মর্ত্যায়) মনুষ্যদের (জীবসে) বাঁচার জন্য (অজস্ত্রম + জ্যোতিঃ) প্রচুর জ্যোতি সর্বদা (প্রঃ + যচ্ছন্তি) দিয়ে থাকে।
 
দূরেদৃশে দেবজানায় কেতবে দিবস্পুত্রায় সূর্যায় শংমত। (যজু০ ৪/৩৫)
অর্থাৎ : (দূরেদৃশে) যা দূর দেখা যায় অথবা যা দুরুস্ত হওয়ার পরেও দৃশ্যমান হয় (দেবজাতায়) দেব — পরমাত্মা দ্বারা যা উৎপন্ন (কেতবে) এবং যারা প্রকাশস্বরূপ (দিবস্পুত্রায়) দ্যৌ, দ্যুলোকের পুত্র (সূর্যায়) সূর্য হয়, এবং তার গুণ স্বমূহকে, হে মনুষ্য (শংসত) প্রকাশিত করো। 
 
অষ্টৌ পূত্রাসৌ অদিতের্যে জাতাস্তন্ব স্পরি। দেবা উপ প্রৈৎসসভিঃ পরা মার্তাণ্ডমাস্যত্ ∥ (ঋ০ ১০/৭২/৮)
অর্থাৎ : (অষ্টৌ + পুত্রাস) আট পুত্র (যে) যা (অদিতেঃ) অদিতির (ত্ন্বস্পরি) শরীর থেকে (জাতাঃ) উৎপন্ন হয়, এরমধ্যে (সমভিঃ) সাত পুত্রের সাথে সেই অদিতি (দেবান উপপ্রৈত) দেবতাকে প্রাপ্ত করে থাকে এবং অষ্টম (মার্তাণ্ডম) সূর্যকে (পরা + আস্যত্) সর্ব উপরে স্থাপন করে । 
 
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
 
♦ ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম♦