https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

রুদ্র কে ? বৈদিক তাৎপর্য নির্ণয়

Tuesday, December 13, 2022

 


বেদ তথা বৈদিক শাস্ত্রের একাধিক জায়গায় আমরা রূদ্র, মহাদেব, শিব ইত্যাদি শব্দের উল্লেখ দেখতে পাই। সেই সব শব্দ তথা পদ নিয়ে পৌরাণিক স্বঃ স্বঃ মতাবলম্বী বিভিন্ন অপব্যাখ্যার রচনা করেন। বিশেষত পুরাণের বিভিন্ন অরূচিকর মিথ্যাচার কাহিনী। সেই সব মিথ্যা কাহিনী এবং অপপ্রচার সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা জানতে, সেই সব পদের বৈদিক অর্থ নির্ণয় অতিব জরুরি। তাই এখানে সেই সব পদগুলোর পিছনে অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা করব।
 
💢 রুদ্র শব্দের ব্যুৎপত্তি 💢
----------------------------
নিরুক্ত আদি বৈদিক গ্রন্থে রূদ্র শব্দের অর্থ ' বিদ্যুৎ ' তথা ' বজ্রপাত ' করা হয়েছে। —
 
রুদ্রো রৌতীতি সতো রোরুয়মাণো দ্রবতীতি বা রোদয়তের্বা। যদরুদত্ তদ্রুদ্রস্য রুদ্রত্বমিতি কাঠকম্। যদরোদীত্তদ্রুদ্রস্য রুদ্রত্বমিতি হারিদ্রবিকম্। (নিরু০ ১০/৬)
বৃহদ্দেবতায় উক্ত বিদ্যুৎ শব্দের অর্থ রুদ্র করা হয়েছে।
অরোদীদন্তরিক্ষে যদ্বিদ্যুদ্ বৃষ্টিং দদত্রৃণাম্। চতুর্ভিঋষিভিস্তেন রুদ্র ইত্যাভিসংস্তুতঃ। (২/৩৫)।
 
অর্থাৎ : যে কারণে অন্তরিক্ষে এই বজ্রদেব ক্রন্দিত হয়ে থাকেন এবং মনুষ্যের হিতার্থে বৃষ্টি বর্ষণ প্রদান করে থাকেন তাই তাকে (পরমেশ্বরকে) রুদ্র বলা হয়ে থাকে। যাস্কাচার্য একে তিন ধাতু দ্বারা সিদ্ধ করেন। (রৌতি= রু শব্দে) শব্দার্থে, " রু " ধাতু থেকে " রু " এবং দু = গতৌ গত্যর্থক " দ্রু ", এই দুই ধাতু দ্বারা রুদ্র সিদ্ধ হয়। রুদ্র ধাতু থেকেও রুদ্র সিদ্ধ হয়ে থাকে। এবিষয়ে ব্যকরণের মত উল্লেখ্য। 
 
💢 রুদ্র এবং নিবাস স্থান পর্বত 💢
------------------------------------------
সাধারণত শৈব তথা পৌরাণিক মান্যতা ভুক্ত সমাজ কৈলাশ পর্বতে শিব তথা রুদ্রের অবস্থান থাকার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু বৈদিক শব্দার্থে এবং শাস্ত্রাদিতে সেই সব পর্বত আদি শব্দের অর্থ ভিন্ন এবং ব্যাপক অর্থ নির্দেশ করে। 
 
অদ্রিঃ। গ্রাবাঃ। গোত্রাঃ। বলঃ। অশ্নঃ। পুরুভোজঃ। বলিশানঃ। অশ্মা । পর্বতঃ। গিরিঃ। ব্রজঃ। চরুঃ। বরাহঃ। শম্বরঃ। রৌহিণঃ। রৈবতঃ। ফলিগঃ। উপরঃ। উপলঃ। চমসঃ। অহিঃ। অভ্রম্। বলাহকঃ। মেঘঃ। দৃতিঃ। ঔদনঃ। বৃষন্ধিঃ। বৃত্রঃ। অসুরঃ। কোশ। ইতি ত্রিংশন্মেঘনামানি। (নিঘণ্টু : ১/১০)।
 
অর্থাৎ - অন্যতম বৈদিক কোষ নিঘণ্টুতে অদ্রি, গ্রাবা, গোত্র, অশ্মা, পর্বত, গিরি আদি সব মেঘের নাম হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে এইসব নাম পর্বত তথা পাহাড়ের হয়ে থাকে।
 
মহীধ্রে শিখরি ক্ষ্মাভৃদহার্য্যধরপর্বতাঃ। 
অদ্রিগোত্রগিরিগ্রাবাऽচলশৌলশিলোচ্চয়াঃ। 
(অমরকোষ : দ্বিতীয় কাণ্ড, শৈলবর্গ - ৩/১)
অর্থাৎ - মহিধ্র, শিখরী, ক্ষ্মাভৃত, অহার্য্য, ধর, পর্বত, অদ্রি,গোত্র, গিরি,গ্রাবা, অচল, শৌল, শিলোচ্চয় — উক্ত ১৩ ( তেরো) নাম পাহাড়ের হয়ে থাকে। এখন মেঘের অর্বাচীন নাম গুলো দেখব।
 
অভ্রং মেঘো বারিবাহঃ স্তনয়িত্রুর্বলাহকঃ। 
ধারাধরো জলধরস্তডিত্বান্ বারিদোऽম্বুভৃত। 
ঘনজীমূনমুদিরজলমুগ্ধূময়োনয়ঃ ∥ (অমর০ প্রথম কাণ্ড : দিগ্বর্গ - ৩/৬)।
অর্থাৎ - অভ্র, মেঘ, বারিবাহ, স্তনযিত্রু, বলাহক, ধারাধর, জলধর, তডিত্বান, বারিদ, অম্বুভৃত, ঘন, জীমূত, মুদির, জলমুক এবং ধূমযোনি — উক্ত পনেরো (১৫) নাম মেঘের হয়ে থাকে। 
 
বর্তমানকালের অভিধানে মেঘ শব্দের অর্থে অদ্রি, পর্বত, গোত্র, অশ্মা, আদি শব্দ পাওয়া যায় না। সেই কারণে বৈদিক এবং লৌকিক অর্থের প্রবল বিভেদ পাওয়া যায়। 
 
মেঘনামানি উত্তরাণি ত্রিংশত্। মেঘঃ কস্মান্মহেতীতি সতঃ। আ উপর উপল ইত্যেতাভ্যাং সাধারণানি পর্বতনামভিঃ। (নি০ ২/৪/২১)।
অর্থাৎ - যাস্কাচার্য মেঘ নামের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মেঘের ৩০ টি অর্থ করেছেন। সেখানে অদ্রি থেকে উপরোক্ত ১৭ নাম মেঘ এবং পর্বত উভয়ের হয়ে থাকে। পুনঃ তিনি এই নামের ব্যাখ্যান করতে গিয়ে বলেন [ মেঘোऽপি গিরিরেতস্মাদেব। - নিরুক্ত : ১:৩০ ] অর্থাৎ - এই কারণে মেঘের নামে " গিরি " বলে থাকে। আজকাল " গিরি " কেবল পর্বত অর্থে ব্যবহৃত হয়। 
 
গিরৌ মেঘে স্থিতৌ বৃষ্টিদ্বারেণ শং তনোতীতি ' গিরিশন্ত ' ∥ (যজু০ মহি০ ভাষ্য০ ১৬/২)।
যথা : যজুর্বেদের ষোলতম অধ্যায়ের দ্বিতীয় মন্ত্রের ব্যাখ্যায় মহিধর " গিরি " শব্দের অর্থ মেঘ করেছেন। এছাড়াও পর্বত, অদ্রি আদি শব্দের অর্থ মেঘ প্রায় সব ভাষ্যকার করেছেন । 
 
 
বল্লিত্থা পর্বতানাং খিদ্রং বিভর্ষি পৃথিবি। প্র যা ভুমিং প্রবত্বতি মহ্ণা জিনোষি মহিনি। (নি০ : ১১/৩৭)।
মহান্তমিন্দ্রং পর্বতং বিয়দ্বঃ সৃজো বিধারা অব দানবং ইন। (নি০ ৪/৭)
যাস্কাচার্য উক্ত দুই স্থানে " পর্বতানাং মেঘানাং " এবং " পর্বতং মেঘম্ " পর্বত শব্দের অর্থ মেঘ করেছেন।
ইন্দ্রো দীর্ঘায় চক্ষম্ আসূর্য রোহয়দ্দিবি। বি গোভিরদ্রিমৈরয়ত্ ∥ (ঋ০ সা০ ভা০ ১/৭/৩)
যথাঃ - উক্ত মন্ত্রের ভাষ্যে সায়ণাচার্য অদ্রি শব্দের অর্থ মেঘ করেছেন। 
 
💢 রুদ্র এবং বৃষবাহন 💢
----------------------------
" ইগুপধজ্ঞাপ্রীকিরঃ কঃ " (৩/১/১৩৫)। উক্ত সূত্র অনুসারে বৃষ ধাতু দ্বারা ' ক ' প্রত্যয় হয়ে বৃষ শব্দ সিদ্ধ হয় এবং বৃষভ হয়ে থাকে। যাস্কাচার্য বৃষ এবং বৃষভের একি ধাতু " বৃষ সেচা " মেনেছেন। 
 
প্র নু মহিত্বং বৃষভস্য বোচং যং পুরবো বৃত্রহরণং সচন্তে। বৈশ্বানরো দস্যুমগ্নির্জঘন্বাঁ অধুনোৎকাষ্ঠা অব শম্বরং ভেত্। (ঋ০ ১/৫৯/৬)।
যাস্কাচার্য উক্ত ঋচার ব্যাখ্যায় বলেন " বৃষভস্য বর্ষিতুরপাং " বৃষভ শব্দের অর্থ জলের বর্ষণকারী অর্থ করেন। পুনঃ — 
 
বৃষভঃ প্রজাং বর্ষতীতি বাতি বৃহতি রেত ইতি বা তদ্ বৃষকর্মা বর্ষণাদ্ বৃষভঃ। তস্যৈষা ভবতি ∥ (নি০ ৯/২২)
অর্থাৎ - উপরোক্ত অনেক প্রমাণ দ্বারা সিদ্ধ হয় বৃষভ বা বৃষ বর্ষণকারীকে পদার্থকে বলে থাকে। রুদ্র অর্থাৎ বজ্রদেবের বাহন বৃষভ, অর্থাৎ বর্ষণকারী মেঘ হয় । 
 
💢 মেঘবাচক বৃষভ শব্দ 💢
--------------------------------
অচ্ছা বদ্ তবসে গীর্ভিরাভিঃ স্তুহি পর্জন্যং নমসা বিবাস। 
কনিক্রদদ্ বৃষভো জীরদানু রেতো দধাত্যোষধীষু গর্ভম্। 
(ঋ০ ৫/৮৩/১)।
 
অর্থাৎ - ঈশ্বর বিদ্বানদের প্রতি বলেন - হে বিদ্বজ্জন ! আপনি (তবসম্) বলবান (পর্জন্যম) মেঘকে (অচ্ছ) প্রাপ্ত করে (আভিঃ গীর্ভিঃ) আমার উপদেশ অনুসারে (স্তুহি) মেঘের গুণকে প্রকাশিত করো (নমসা) প্রবল নম্রতার সহিত (বিবাস) মেঘ সম্বন্ধিত বিদ্যার অধ্যয়নে শ্রদ্ধাশীল হও । যে পর্যন্ত (কনিক্রদদ্) অত্যন্ত গর্জন করে (বৃষভঃ) বর্ষণ করে থাকে (জীরদানুঃ) এবং শীঘ্র দান করে থাকেন (ঔষধীষু) যতপ্রকার ঔষধি বনস্পতি আছে। সেই ঔষধির (গর্ভম্ + রেতঃ) বীজরূপ জলকে (দধাতি) স্থাপিত করো। 
 
তিস্ত্রো বাচঃ প্র বদ জ্যোতিরগ্রা যা এতদ্ দুর্হে মধুদোঘমূধঃ। 
স বৎসং কৃণ্বনার্ভমোষধীনাং সদ্যো জাতো বৃষভো রোরবীতি ∥ ১ ∥
স রেতোধা বৃষভঃ শশ্বতীনাং তস্মিত্নাত্মা জগতস্তস্থুষশ্রু। 
তন্ম ঋতং পাতু শতশারদায় যুয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ∥ ২ ∥ (ঋ০ ৭/১০১) 
 
অর্থাৎ - (জ্যোতিরর্গ্রাঃ) বিদ্যুৎ যার আগে আগে হয়, এরূপ (তিস্ত্রঃ বাচঃ) তিন প্রকারের ইঢ়া, সরস্বতী, ভারতী বাণী (প্রবদ = প্রবদন্তি) বাজতেছে (যাঃ) বাণী যেখানে (এতত্) সেই (মধুদোঘম্) মধুর জলপ্রদ (ঊধঃ) মেঘ রূপ স্তুপকে (দুহে) আগমন করেন (সঃ) সেই মেঘের (বৎসম) সাথে থাকা বাচ্চা বিদ্যুৎ স্বরূপ অগ্নিকে (কৃণ্বন) প্রকট করতে গিয়ে এবং তাকে (ঔষধিনাম) ব্রীহি, লতা আদি বনস্পতি প্রভৃতির (গর্ভম) গর্ভ হয়ে (সদ্যঃ) শীঘ্র (জাতঃ) চারিদিকে উৎপন্ন হয়ে (বৃষভঃ) বর্ষিত হয়ে (রোরবীতি) প্রকট রূপে আওয়াজ করতেছে। ∥ ১ ∥ 
 
(সঃ) সেই মেঘ (শশ্বতীনাম) নানাবিধ ঔষধির (রেতোধাঃ) জলবিধাতা এবং (বৃষভ) সেচক করে থাকে। (তস্মিন) ভূত মেঘে আশ্রিত (জগত + তস্থুষঃ) স্থাবর সঙ্গমের (আত্না) শরীর হয়ে থাকে। (তত্ + ঋতম) সেই মেঘে নিঃসৃত জল (শতশারদায়) শত বর্ষ জীবন ধারায় (মা) আমাকে (পাতু) পালন করে। যেরূপ প্রকার সব প্রাকৃত বিষয়বস্তু আমাদের রক্ষা করে, সেরূপ প্রকার হে মনুষ্য ! (সুয়ম্) আপনারা (সদা) সর্বদা (নঃ) আমাদের (স্বস্তিভিঃ) বিভিন্ন কল্যাণকারী উপায়ে রক্ষা করো। এবং আমরাও আপনাদের বিভিন্ন প্রকারে রক্ষা করব। এভাবে উভয়ে একে অপরকে রক্ষা করব। ∥ ২ ∥ 
 
কিন্তু বর্তমান কালের সংস্কৃত বিধানে বৃষ শব্দের পশু তথা মহিষ বাচক অর্থ করা হয়েছে। 
 
উক্ষা ভদ্রো বলীবর্দ ঋষভো বৃষভো বৃষঃ ∥ (অমর০ দ্বিতীয় কাণ্ড - বৈশ্যবর্গ : ৯/৫৯)
শুকলে মূষিকে শ্রেষ্ঠে সুকৃতে বৃষভে বৃষঃ ∥ (অমর০ তৃতীয় কাণ্ড - নানার্থবর্গ : ৩/২২০) 
 
💢 রুদ্র এবং পিনাক 💢
---------------------------
পুরাণ অনুসারে মহাদেবের এক অন্যতম অস্ত্রের নাম পিনাক হয় । যাস্কাচার্যের নিরুক্ত (৩/২১) অনুসারে পিনাক বলতে " পিনাকং প্রতিপিনষ্ঠি অনেন " অর্থাৎ : যার দ্বারা কোন কিছু পেষানো হয়। যেরূপ মানুষ গম আদি খাদ্য দ্রব্য পেষার জন্য বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে।
 
এতত্তে রুদ্রাবসং তেন পরো মুজবতোऽ তীহি। 
অবতত ধন্বা পিনাকাবসঃ কৃত্তিবাসা অহিসত্র শিবোऽ তীহি ∥ 
(যজু০ ৩/৬১)
অর্থাৎ - (রুদ্র) হে অশনিদেব (তে) আপনি (এতত্) এই (অবসম্) বর্ষণ যেন আমাদের জন্য রক্ষাকারী হয়। (তেন) সেইজন্য সর্বদা (মুজবতঃ) প্রতিবন্ধকতা (অতীহি) অতিক্রমণ তথা ত্যাগ করে। (পরঃ) আপনি অতিশয় শ্লাঘনীয় এবং আপনি (অবততধন্বা) বিদ্যুৎ রূপ ধনুষ বিরহিত (পিনাকাবসঃ) পিনাকশক্তি যুক্ত (কৃতিবাসাঃ) শ্যামঘটা রূপ, চর্মবিভূষিত হোন (অহিংসন্ + নঃ) আমরা যেন কোন জীবকে হিংসা না করি তথা (শিবঃ) কল্যাণস্বরূপ হই (অতীহি) এবং আমরা যেন তাদের বারম্বার প্রাপ্ত হই। 
 
💢 রুদ্র এবং অম্বিকা 💢
---------------------------
পুরাণ অনুসারে মহাদেবের শক্তি অম্বিকা দেবী হয়ে থাকেন। এবিষয়ে অমরকোষ দ্রষ্টব্য — 
 
অপর্ণা পার্বতী দুর্গা মৃডানী চণ্ডিকাম্বিকা। (অমর০ প্রথম কাণ্ড : স্বর্গবর্গ - ১/৩৭)।
যদিও পুরাণ এবং তন্ত্রে এবিষয়ে অনেক আখ্যান বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু যজুর্বেদ ভাষ্য কর্তা মহীধর অম্বিকাকে " রুদ্র - ভগ্নি " অর্থ করেছেন। — 
 
এষ তে রুদ্র ভাগঃ সহ স্বস্ত্রাম্বিকয়া তং জুষস্ব স্বাহা। 
এষ তে রুদ্র ভাগ আখুস্তে পশুঃ ∥ (যজুঃ ৩/৫৭)।
 
উক্ত মন্ত্রের ভাষ্য মহীধর নিম্নপ্রকার করেন —
 
যিনি অজস্র বিরোধী শত্রুদের কান্নার কারণ হোন তিনি রুদ্র। হে রুদ্র ! আপনি ভগিনী অম্বিকার সাথে আমাদের দানকত পুরোডাশ গ্রহণ করেন। এই পুরোডাশ আপনার গ্রহণীয় হয় । আপনার জন্য মুকপশু সমর্পিত হয়। — মহীধর এখানেও অম্বিকাকে রুদ্রের বোন হিসাবে প্রদর্শিত করেন।
 
স্বসা : স্বসা শব্দের অর্থ শুধু ভগিনী অর্থেই হয় না। বরং বেদে সাথে থাকা বা গমনশীল পদার্থকেও স্বসা বলা হয়। যথা —
 
মাতুদিধিষুমব্রবং স্বসুর্জারঃ শৃণোতু নঃ। ভ্রাতেন্দ্রস্য সখা মম ∥ (ঋ০ ৬/৫৫/৫)। 
 
উপরোক্ত মন্ত্রের ব্যাখ্যা যাস্ক নিম্নরূপ করেন - 
 
উষসমস্য স্বসারমাহ সাহচর্যাদ্বা রসহরণাদ্বা। (নিরু০ ৩/১৬/৬)।
 
অর্থাৎ - সূর্যের স্বসা উষা (প্রাতঃকাল) হয়, কারণ উভয়ে সর্বদা একসাথে থাকে। সূর্যের কোন বোন নেই, পুনঃ প্রাতঃকাল, অর্থাৎ উষা তার স্বসা হল কীভাবে ? এর দ্বারা প্রমাণ হয় মনুষ্যদের মত এই স্বসা অর্থ বোন হয় না।
 
প্রাণায় স্বাহাপানায় স্বাহা ব্যানায় স্বাহা। 
অম্বে অম্বিকেऽম্বালিকে ন মা নয়তি কঞ্চন। 
সমস্ত্যশ্বকঃ সুভদ্রিকাং কাম্পীলবাসিনীম ∥ (যজু০ ২৩/১৮)
যথা : উক্ত মন্ত্রে অম্বা, অম্বিকা, এবং অম্বালিকা শব্দ ক্রমশঃ মাতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বাচক অর্থ হয়। আচার্যকৃত ভাষ্যে অম্বা শব্দের দ্বারাপ অম্বিকা অর্থ হয়। এমনকি মাতা অর্থেও এর ব্যবহার পাওয়া যায়।
 
💢 রুদ্র এবং সতী 💢
---------------------
শৈব পুরাণের উল্লেখযোগ্য এক আখ্যান হল শিব এবং সতী সাথে দক্ষ প্রজাপতির সংঘর্ষ। তথা সতীর দেহত্যাগ । কিন্তু এখানে দক্ষ আসলে কে সে নিয়ে বৈদিক ব্যাখ্যা নিরুক্তে পাওয়া যায় । 
 
আদিত্যো দক্ষ ইত্যাহুঃ। আদিত্যমধ্যে চ স্তুতঃ। (নিরু০ দৈ০ ৫/২৩/২)
অর্থাৎ : যাস্কাচার্য বলেন, দক্ষ নাম সূর্যের হয়ে থাকে। দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে এক নাম দক্ষ হয়ে থাকে। 
 
💢 অগ্নিবাচক রুদ্র শব্দ 💢
-----------------------------
অগ্নিরপি রুদ্র উচ্যতে। তস্যৈষা ভবতি। জরাবোধ তদ্বিবিডঢি বিশেবিশে যজ্ঞিযায়। 
স্তোমং রুদ্রায় দৃশীকম্ ∥ (নি০ দৈ০ ৪/৮)।
 
" জরাবোধ " মন্ত্রের ব্যাখ্যায় যাস্কাচার্য রুদ্রের অর্থ অগ্নি করা হয়েছে। দূর্গাচার্য এর অর্থ করেন, যথা - 
 
হে ভগবান অগ্নি আপনি (জরা) স্তুতি করি তাকে (বোধ) বোঝেন। অথবা (জরাবোধ) স্তুতি দ্বারা যজমানের প্রয়োজন বোঝেন এবং দেবতাদের বোঝানোর জন্য আপনি অগ্নি (যজ্ঞিযায়) যজ্ঞ সম্পাদন করেন (বিশে+বিশে) মনুষ্যের জন্য (তত্) সেই কার্যকে (বিবিড্ডি) করো। যাকে যাকে আপনি উচিত মনেকরেন। তাকে (রুদ্রায়) আপনার জন্য মনুষ্য (দৃশীকম্) দর্শনীয়, উত্তম (স্তোমম্) স্তুতি উচ্চারণ করবে। (রুদ্রায় রুদ্রায় অগ্নয়ে) ক্রুর অগ্নিকে রুদ্র বলে থাকে। 
 
অগ্নিং সুম্নায় দধিরে পুরো জনা বাজশ্রবসমিহ বৃক্তবর্হিষঃ। 
যতস্ত্রুচং সুরুচং বিশ্বদৈব্যং রুদ্রং যজ্ঞানাং সাধদিষ্টিমপসাম ∥ (ঋ০ ৩/২/৫)।
 
অর্থাৎ : (বৃক্তবর্হিষ) কুশাসনে বিছিয়ে আছেন তিনি (যতস্ত্রুচঃ) হাতে স্তুতি করতে (জনাঃ) যজ্ঞ কর্তা ঋত্বিক (সুম্নায়) সুখার্থ (ইহ) সেখানে (অগ্নিম) অগ্নির (পুরঃ) সামনে (দধিরে) রেখে হোমকর্ম করতেছেন। অগ্নি কিরূপ হোন ? (বাজশ্রবসম্) প্রত্যেক বস্তুতে গতি দেন যিনি (সুরুচম) সুন্দর (বিশ্বদৈব্যম) সব পদার্থে সুখ পৌছান যিনি (রুদ্রম্) শীত অন্ধকার জনিত দুঃখ নাশ করেন যিনি (অপসাম্) কর্মবান্ (যজ্ঞানাম) যজমানের (সাধদিষ্টিম্) ইষ্টকার্য সিদ্ধ করেন। 
 
আ বো রাজানমধ্বরস্য রুদ্রং হোতারং সত্যযজ্ঞং রোদস্যোঃ। 
অগ্নিং পুরা তনযিত্নোরচিত্তাদ্ধিরণ্যরূপমবসে কৃণুধ্বম ∥ (ঋ০ ৪/৩/১)।
অর্থাৎ : ঈশ্বর উপদেশ করেন, হে মনুষ্য ! আপনি (বঃ + অবসে) নিজ রক্ষার্থে (তনযিত্নোঃ) বিদ্যুৎ সমান কস্মাত উপস্থিত হওয়া (অচিত্তাত) মরন থেকে (পুরা) প্রথমে (অগ্নিম + আকৃণুধ্বম্) অগ্নিকে বিবিধ কর্মে সম্পাদন করো (অধ্বরস্য + রাজানম্) যজ্ঞের অধিপতি (রুদ্রম) শব্দ করতে করতে বৃদ্ধি হওয়া (হোতারম্) হোতা (রোদস্যোঃ) দ্যুলোক এবং পৃথিবীলোকে (সত্যযজম্) পরমাত্মার গুণ প্রকট করেন যিনি (হিরণ্যরূপম্) হিরণ্যবত্ দেদীপ্যমান। এখানেও রুদ্র শব্দ অগ্নিবাচক বিশেষণ হয়ে থাকে। 
 
💢 রুদ্র এবং বিদ্যুৎ 💢
---------------------------
যা তে বিদ্যুদবসৃষ্টা দিবস্পরি ক্ষ্ময়া চরতি পরি সা বৃণক্তু নঃ। 
সহস্ত্রং তে স্বপিবাত ভেষজা মা নস্তোকেষু তনযেষু রীরিষঃ ∥ (ঋ০ ৭/৪৬/৩)।
অর্থাৎ : হে ইন্দ্র ! তোমার (দিবঃ + পরি) অন্তরিক্ষ থেকে (অবসৃষ্টা) দূরে অবস্থিত (বিদ্যুৎ) বিদ্যুৎ = বজ্র হয় এবং যে (ক্ষ্ময়া + চরতি) পৃথিবীতে বিচরণ করতেছে অর্থাৎ আকাশে বিরাজিত যে সব বজ্র পৃথিবীতে আছড়ে পড়তেছে (সাঃ) সে (নঃ) তাকে (পরি + বৃণক্তু) যেন ছেড়ে দেয়, আমাদের যেন হিংসা না করে (স্বপিবাত) হে ঘুমন্ত প্রাণীদের জাগানো রুদ্র (তে) তোমার যে (সহস্রম+ভেষজা) সহস্র প্রকার ঔষধ আছে, তা আমাদের প্রাপ্ত করান। হে রুদ্র (নঃ) আমাদের (নোকেষু) পুত্র কে (তনযেষু) পৌত্রের (মা + রীরিষঃ) মত মার। অসংখ্যাতা 
 
সহস্ত্রাণি যে রুদ্রা অধিভুম্যাম।
তেষাসহস্ত্রযোজনে ধন্বানি তন্মসি ∥ (যজু০ ১৬/৫৪)।
 
অর্থাৎ : (অসংখ্যাতা) অসংখ্যাত (সহস্ত্রাণি) সহস্ত্র (যে) যত (রুদ্রাঃ) বজ্র (অধিভুম্যায়) পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে (তেষাম) তাকে (ধন্বানি) সেই ধনুষকে (সহস্ত্রযোজনে) সহস্ত্রযোজন দূরে (অব+তন্মসি) ফেলে দাও। 
 
যেऽত্রেষু বিবিধ্যন্তি পাত্রেষু পিবতো জনান্। 
তেষাসহস্ত্রযোজনেऽব ধন্বানি তন্মসি ∥ (যজু০ ১৬/৬২)।
 
অর্থাৎ : (যে) সেই রুদ্র (অন্নেষু) অন্নকে (পাত্রেষু) পাত্রের মধ্যে পড়া (পিবত + জনান্) সেই খাওয়া দাওয়া করা প্রাণীকে (বিবিধ্যন্তি) তাড়না করে থাকে। তার ধনুষকে সহস্ত্র যোজন দূরে ফেলে দাও।
 
যে তীর্থানি প্রচরন্তি সৃকাহস্তা নিষঙ্গিণঃ। 
তেষা সহস্ত্রযোজনেऽব ধন্বানি তন্মসি ∥ (যজু০ ১৬/৬২)।
 
অর্থাৎ : যে রুদ্র আমাদের সরোবর, নদী আদি স্থানে পতিত হয়, তাকে তুমি দূর করো। 
 
এষ তে রুদ্র ভাগঃ সহ স্বস্ত্রাম্বিকায়া তং জুষস্ব স্বাহা। 
এষ তে রুদ্র ভাগ আখুস্তে পশুঃ ∥ (যজু০ ৩/৫৭)।
 
উক্ত মন্ত্রের ভাষ্যে মহীধর ব্যাখ্যা করেন যথা — 
 
যোऽ য়ং রুদ্রাখ্যঃ ক্রুরো দেবস্তস্য বিরোধিনং হন্তুমিচ্ছা ভবতি তদানয়া ভগিন্যা ক্রুরদেবতয়া সাধনভুতয়া তং হিনস্তি। সা চাম্বিকা শরদ্রুপং প্রাপ্য জরাদিকমূৎপাদ্য তং বিরোধিনং হন্তি।
 
অর্থাৎ : যে সেই রুদ্র নামক ক্রুর দেব হোন, তার যখন শত্রুকে মারবার ইচ্ছা হয়ে থাকে তখন তার ভগিনী অম্বিকাকে অস্ত্র বানিয়ে মেরে থাকেন। এবং সেই অম্বিকা শরদ্রুপ ধর, জ্বর আদি রোগ উৎপন্ন করে শত্রুের বিনাশ করেন। এখানেও মহীধর রুদ্র এবং অম্বিকা নাম ক্রুর করেছেন। এরকম অনেক প্রমাণ দ্বারা এটা প্রমাণ হয় যে রুদ্র নাম বজ্রের হয়ে থাকে। 
 
💢 রুদ্রের উৎপত্তি এবং শতপথ ব্রাহ্মণ 💢
-------------------------------------------------
যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণে রুদ্র সম্পর্কে মনোহর তথা রুচিকর আখ্যান দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। যথা — 
 
অভুদ্বা ইয়ং প্রতিষ্ঠেতি। তদ্ ভূমিরভবত্তামপ্রথয়যত্। সা চ পতিঃ সংবৎসরাযাদীক্ষন্ত ভূতানাং পৃথিব্যভবত্ তস্যামস্যাং প্রতিষ্ঠায়াং ভূতানি চ ভূতানাং পতির্গৃহপতিরাসীত। উষাঃ পত্নী। তদ্যানি তানি ভুতানি ঋতবস্তে। অথ যঃ স ভুতানাং পতিঃ সংবৎসরঃ সোऽথ যা ভূতানি ঋতবস্তে সোষাঃ পত্নী ঔষসী সা তানীমানি ভূতানি চ ভূতানাং চ পতিঃ সংবৎসর উষসি রেতোऽসিঞ্চন্তস কুমারোऽজায়ত। সোऽরোদীত্ ∥ (শত০ ৬/১/৩/৭-৮)।
অর্থাৎ : এখানে আগ্নেয় শক্তির ব্যাপকতা দর্শানো হয়েছে। এটাতে সন্দেহ নেই যে, সৃষ্টিতত্ত্ববিদ বিজ্ঞানী তারা নিমিত্তকারণ ঈশ্বরকে ছেড়ে সৃষ্টিজগতের মূখ্য কারণ ভৌতিক সূর্যকে মনে করেন। ক্রমশঃ সেই সূর্যাগ্নি থেকে এক পার্থিব গোলক বাহির হয়ে কয়েক লক্ষ বছর পর অনন্ত অসংখ্য প্রাণীর সৃষ্টি তথা বাসের যোগ্য হয়। তাতে পর্বত, সমুদ্র, বনস্পতি, ঔষধি, পর্জন্য, বিবিধ পশু, পক্ষী , মনুষ্যাদি উৎপন্ন হয়। এই পৃথিবী থেকে বহুত দূর সূর্য স্থাপিত হয়। সেখান থেকে সে উষ্ণতা বিতরণ করতে থাকে। নিজ নিজ ক্ষমতা অনুসারে সৃষ্টির প্রত্যেক পদার্থ উষ্ণতা গ্রহণ করতে থাকে। সেই থেকে এক কুমার উৎপন্ন হয়। সে কাঁদতে থাকে। 
 
তং প্রজাপতিরব্রবীত। কুমার ! কিং রোদিষি। সোऽব্রবীত। নাম মে ধেহীতি ∥ ৯ ∥ তমব্রবীদ রুদ্রোऽসি ইতি। তদ্যদস্য তত্রাম অকরোদ্ অগ্নিস্তদ্রুপমভবত্। অগ্নির্বে রুদ্রো যদরোদীত্ । তস্মাদ রুদ্রঃ। সোऽব্রবীত্। জ্যাযান্বা অতোऽস্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি ∥ ১০ ∥ তমব্রবীত্। সর্বোऽসীতি। যদ্যদস্য তত্রামাকরোত্। আপস্তদ্রুপমভবত্রাপো বৈ সর্বঃ। অদ্ভযো হীদ সর্ব জায়তে। সোऽব্রবীত। জ্যাযান্বা অতোऽস্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি ∥ ১১ ∥
অর্থাৎ : প্রজাপতি বলেন - হে কুমার ! তুমি কেন কাঁদছ ? সে বলল আমার একটি নাম দিন। আমার একটি নামে রাখেন। ∥ ৯ ∥ প্রজাপতি বলেন - তুমার নাম " রুদ্র "। তার এই রুদ্র নাম শুদ্ধ "অগ্নি" বাচক হয়। অগ্নিই রুদ্র হয়। যার জন্য সে কাঁদতে থাকে অতঃ সেই রুদ্র বলতে থাকেন। তৎপশ্চাৎ প্রজাপতি দ্বারা সেই কুমার বলতে লাগে নিশ্চয় আমি এতে ' জ্যায়ান ' অধিক হই, আমাকে অন্য অন্য একটি নামও দেন ∥ ১০ ∥ প্রজাপতি বলেন - তুমি সর্ব। তার এই সর্ব নাম জলে ব্যপকতা এবং জল দায়িত্ব সূচক, কারণ জল থেকেই সব জীব উৎপন্ন হয়। পুনঃ সেই কুমার বলে - আমি এর থেকেও ' জ্যায়ান ' - অধিক হই, আমার আরো অন্য কোন নাম দেন।
 
— উক্ত শতপথের আখ্যান থেকেও প্রমাণ হয় রুদ্রের অর্থগত নাম অগ্নি।
 
বাংলাদেশ অগ্নিবীর 
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম