https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

সত্যার্থ প্রকাশে ধাত্রী ও দুগ্ধপান শঙ্কা নিবারণ

Thursday, March 16, 2023

আলোচ্য প্রসঙ্গ সত্যার্থ প্রকাশের ৩য় সমুল্লাসের অন্তর্গত । মূলপাঠ সূক্ষ্মভাবে যদি আমরা দেখি তবে - 


যখন সন্তান জন্মাবে তখন নাড়ীচ্ছেদন করে উত্তম সুগন্ধি জলে শিশুকে স্নান করিয়ে ও স্ত্রীকেও স্নান করিয়ে সুগন্ধি ঘৃতাদির দ্বারা হোম করবে এবং স্ত্রীর স্নান-আহারের যথোচিত ব্যবস্থা করবে যেন শিশু ও স্ত্রী শরীর ক্রমশঃ আরোগ্য ও পুষ্ট হতে থাকে। শিশুর মাতা অথবা ধাত্রী এমন খাদ্য গ্রহণ করবে যেন স্তন্যদুগ্ধেও উত্তম গুণ লাভ হয়। ছয় দিন পর্যন্ত শিশুকে প্রসূতির স্তন্য পান করাবে। তারপরে ধাত্রী পান করাবে। কিন্তু মাতা-পিতা ধাত্রীকে উত্তম খাদ্য ও পানীয় দিবে। যদি কেউ দরিদ্র, ধাত্রী রাখতে অসমর্থ হয় তবে গো বা ছাগদুগ্ধে উত্তম ওষধি যা বুদ্ধি, পরাক্রম ও আরোগ্যকর তা শুদ্ধ জলে ভিজিয়ে, সিদ্ধ করে, ছেঁকে নিয়ে দুধের সাথে উপযুক্ত মাত্রায় জল মিশিয়ে শিশুকে পান করাবে। 

প্রসবের পর শিশু ও তার মাতাকে বিশুদ্ধ বায়ুযুক্ত ভিন্ন স্থানে রাখবে; সেখানে সুগন্ধিত এবং দর্শনীয় পদার্থও রাখবে। যেখানের বায়ু শুদ্ধ সেখানেই প্রসূতির ভ্রমণ করা উচিত। যেখানে ধাত্রী, গাভী, ছাগী প্রভৃতির দুধ পাওয়া যাবে না, সেখানে যেমন করা উচিত মনে হবে তেমন করবে। প্রসূতির দেহাংশ হতে শিশুর শরীর গঠিত হয় এর ফলে প্রসবকালে প্রসূতি দূর্বল হয়ে পড়ে তাই প্রসূতি শিশুকে স্তন্য পান করাবে না। দুধ বন্ধ করার জন্য স্তনের ছিদ্রের উপর এমন ওষধির প্রলেপ দিবে, যাতে দুগ্ধ নিঃসৃত না হয়। এমন করলে প্রসূতি দ্বিতীয় মাসে পুনরায় সুস্থ, সবল ও যুবতী হয়ে উঠবে। ততক্ষণ পর্যন্ত পুরুষ ব্রহ্মচর্য দ্বারা বীর্য নিরোধ করবে। স্ত্রী- পুরুষ যারা এমন করবে তাদের উত্তম সন্তান, দীর্ঘায়ু, বল, পরাক্রম বৃদ্ধি হতে থাকবে যার ফলে সমস্ত সন্তানও উত্তম বল-পরাক্রমযুক্ত, দীর্ঘায়ু ও ধার্মিক হবে। স্ত্রী যোনি সঙ্কোচন, শোধন এবং পুরুষ বীর্যস্তম্ভন করবে। এমন করলে পুনরায় যত সন্তান জন্ম হবে তারাও উৎকৃষ্ট হবে।


এখানে ২ টি বিষয়ে আপত্তি করা হয় । যথাক্রমে - 

১) প্রসূতি অর্থাৎ মাতৃদুগ্ধের পান নিষিদ্ধ করা হয়েছে 

২) ধাত্রীর প্রসঙ্গ বেদবিরুদ্ধ 

 

আমরা ধাপে ধাপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো -

  • প্রথমে প্রসূতির দুগ্ধ পান নিষিদ্ধ কিনা ?  


মহর্ষি কোথাও বলেননি যে প্রসূতির স্তন্য পান করাই যাবে না । বরং প্রথম ৬ দিন অব্দি মাতার দুগ্ধ পানের উল্লেখ আছে । 

 শিশুর মাতা অথবা ধাত্রী এমন খাদ্য গ্রহণ করবে যেন স্তন্যদুগ্ধেও উত্তম গুণ লাভ হয়। ছয় দিন পর্যন্ত শিশুকে প্রসূতির স্তন্য পান করাবে।

ধাত্রী ও প্রলেপ দ্বিতীয়বার তখনই এসেছে যখন প্রসূতি দূর্বল থাকে । স্তনে প্রলেপের উল্লেখ ঠিক তখনই এসেছে ।

প্রসূতির দেহাংশ হতে শিশুর শরীর গঠিত হয় এর ফলে প্রসবকালে প্রসূতি দূর্বল হয়ে পড়ে তাই প্রসূতি শিশুকে স্তন্য পান করাবে না। দুধ বন্ধ করার জন্য স্তনের ছিদ্রের উপর এমন ওষধির প্রলেপ দিবে, যাতে দুগ্ধ নিঃসৃত না হয়। এমন করলে প্রসূতি দ্বিতীয় মাসে পুনরায় সুস্থ, সবল ও যুবতী হয়ে উঠবে।

ধাত্রী না রাখতে পারলে পশ্বাদির দুগ্ধের উল্লেখ আছে । এরপরে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কিনা অপপ্রচারকারীগণ উল্লেখ করেন না তা হলো

 ' যেখানে ধাত্রী, গাভী, ছাগী প্রভৃতির দুধ পাওয়া যাবে না, সেখানে যেমন করা উচিত মনে হবে তেমন করবে।

অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক । মহর্ষি ধাত্রীর উল্লেখ করেছেন তা বৈকল্পিক । নতুবা বিধি হলে সংস্কারবিধিতে অবশ্যই উল্লেখ থাকতো । বরং মহর্ষি জাতকর্ম প্রকরণে প্রসূতার স্তন্যদানেরই বিধি উল্লেখ করেছেন ।

 

 

' মাতা অথবা ধাত্রী ' এখানে ' অথবা ' পদটি বৈকল্পিক ব্যবস্থাই বোঝায় । 

কিছু পাঠক ' তারপরে ধাত্রী পান করাবে ' এই বাক্যে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন । কিন্তু তারা এটা ভুলে যান যে আগের বাক্যে ' অথবা ' দিয়ে যে বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে তার দ্বিতীয় পক্ষ পূর্তির জন্যই এই বাক্যের অবতারণা । 

 শিশুর মাতা অথবা ধাত্রী এমন খাদ্য গ্রহণ করবে যেন স্তন্যদুগ্ধেও উত্তম গুণ লাভ হয়।

ড. সুরেন্দ্রকুমারও এই অংশে বৈকল্পিক বিধান রয়েছে বলেই মতামত দিয়েছেন । 


সব থেকে বড় প্রমাণ এই গ্রন্থেরই ৪র্থ সমুল্লাসে রয়েছে ' পরে শিশুকে মাতার হাতে দেবে । শিশু দুধ পান করতে চাইলে মা তাকে স্তন্যদান করবে । মায়ের দুধ না থাকলে কোন স্ত্রীলোককে পরীক্ষা করে শিশুকে তার স্তন পান করাবে । 'এরপরে ধাত্রী নিযুক্তের কথা যা আছে সেটাও স্ত্রীকে [ অর্থাৎ শিশুর মাতা ] নিযুক্ত করার কথা আছে । অর্থাৎ ধাত্রী যদি রাখাও লাগে তবে তা সম্পূর্ণ শিশুর মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে কেননা মহর্ষি পূর্বে যে প্রসূতির দুর্বল শরীরের কথা বলেছেন তা স্বয়ং প্রসূতি বিনা কে-ই বা বুঝতে পারবে । স্তনে প্রলেপও সেই অনুযায়ী স্ত্রীর স্বেচ্ছায় শারীরিক সুবিধা অনুযায়ী হবে । 

 


অর্থাৎ মহর্ষির যে বিকল্প, প্রসূতির শারীরিক দূর্বলতার জন্য ধাত্রীর বিধান করেছেন তা প্রমাণিত। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত যে নিষেধ বলে যে প্রতীয়মান হয় বা স্তন্য অতিরিক্ত ক্ষরণ রোধ করে পূর্বোক্ত দূর্বল প্রসূতার জন্যই স্তনে ঔষধ প্রলেপন বিধি প্রযুক্ত হয়েছে । যদি স্ত্রী চায় তবে ধাত্রী ও প্রলেপাদি হবে নতুবা নয় । এই বৈকল্পিক বিধি মহর্ষি কখনোই সর্বজনীন বা বাধ্যতামূলক বলেননি । 


  • দ্বিতীয় প্রসঙ্গ এই বিধান বেদানুকূল কিনা ।

উক্ত বিষয়ে আমরা একটি বিখ্যাত শাস্ত্রার্থের অংশ দেখে নেবো যেখানে পৌরাণিকরা এই বিষয়ে পরাজিত হয়েছিলো - 


শাস্ত্রার্থ বিষয়ঃ সত্যার্থ প্রকাশ কি বেদ বিরুদ্ধ?

স্থানঃ বাঁকনের (জেলা অলীগড়, উত্তর প্রদেশ)

দিনাঙ্কঃ ৪ জুন, সন ১৯৬০ ই০

আর্য সমাজের পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্ত্তাঃ পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী 

পৌরাণিক পক্ষ থেকে শাস্ত্রার্থকর্ত্তাঃ পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর

প্রধানঃ শ্রী স্বামী মুনিশ্বরানন্দ জী  (বর্তমান নিবাসী - গাজিয়াবাদ)

পণ্ডিত ভীমসেন জী প্রতিবাদী ভয়ংকর -

সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে লেখা আছে শিশুকে তার মাতা ছয় দিন দুগ্ধপান করাবে, পশ্চাৎ ধাই। এটা বেদ বিরুদ্ধ।

🟠 পণ্ডিত ঠাকুর অমর সিংহ জী শাস্ত্রার্থ কেশরী -

বলুন কোন বেদ মন্ত্রের বিরুদ্ধে? সত্যার্থ প্রকাশের মধ্যে এটা কোথাও লেখা নেই যে, যেই ঘরে ধাই দুগ্ধপান করাবে না সেই ঘরের সবাই নরকে চলে যাবে, সহজ সরলভাবে এটা লেখা আছে যে যদি মাতার দুগ্ধ বাদ দিয়ে শিশুকে ধাইয়ের দুগ্ধ পান করানো হয় তাহলে মাতা শীঘ্র সুস্থ আর বলবতী হয়ে যাবে। যারা ধাইয়ের প্রবন্ধ করতে পারবে না তারা গাভী বা ছাগ আদির দুগ্ধ পান করাবে, যারা গাভী বা ছাগেরও প্রবন্ধ করতে পারবে না তারা যেমনটা সম্ভব তেমনটি করবে, অভিপ্রায় হল যে তারা মাতার দুগ্ধই পান করাবে। ধাই দুগ্ধপান করাবে, এটা সুশ্রুতের শারীরিক স্থানে আর চরক শারীরিক স্থানের মধ্যেও আছে, নোট করুন আর প্রমাণ নিন - আমি কোনো কথাই বিনা প্রমাণে বলি না।

        চরক সংহিতার শারীরস্থানের ৮।৪৫ এর মধ্যেও নবজাতকের জন্য ধাত্রীর কথা এভাবে বলা হচ্ছে, "অতো ধাত্রীপরীক্ষামুপদেক্ষ্যামঃ। অথ ব্রূয়াদ্ ধাত্রীমানয়েতি সমানবর্ণাং যৌবনস্থাং...." অর্থাৎ অতঃপর ধাত্রী পরীক্ষার বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি। কুমারের আয়ুপরীক্ষার পর ধাত্রী আনয়ন করবে। যে ধাত্রী সমানবর্ণা, যুবতী....(এরপর ধাত্রীর বিস্তারিত বর্ণনা)।

 


অভিপ্রায় এটা হল যে, যার বালক আছে এবং যার বালক জীবিত আছে, আর যার পর্যাপ্ত মাত্রায় দুগ্ধ আছে। শ্রী রামচন্দ্র জীরও ধাই ছিল।বাল্মীকি রামায়ণ  অযোধ্যাকাণ্ড ৭.৭ - 


 রামায়ণের ন্যায় মহাভারতেও ধাত্রী রাখার প্রমাণ রয়েছে। রাজা সৃঞ্জয় নিজের পুত্রের জন্য ধাত্রী রেখেছিলেন– 

"ততো ভাগীরথীতীরে কদাচিন্নিরেজনে বনে। 

ধাত্রীদ্বিতীয়ী বালঃ স ক্রীড়ার্থং পর্যধাবত।।"

অর্থাৎ তখন কখনও নির্জন বনে ভগীরথীর তীরে সেই বালক ধাত্রীর সাথে খেলাধুলা করার জন্য দৌড়াতে লাগল। 

[মহাভারত – শান্তিপর্ব অধ্যায় ৩১ শ্লোক ৩১ ]

 


আপনি সব কথাকেই বেদ বিরুদ্ধ বলে দেন অথচ বেদ মন্ত্র একটাও বলেন না, যার দ্বারা এটা বোঝা যাবে যে এটা অমুক বেদ মন্ত্রের বিরুদ্ধে। আপনার কাছে তো বেদ মন্ত্র নেই কিন্তু আমি এরজন্যও বেদ মন্ত্র দিচ্ছি, দেখুন তথা ধ্যান দিয়ে শুনুন -

         নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকঁ 

                          সমীচী। (যজুঃ ১২|২)

আরও দেখতে চান তো আপনি য়জুর্বেদ অধ্যায় ১৭ মন্ত্র ৭০ টি দেখুন, যার মধ্যে বলা হয়েছে যে দুই স্ত্রী একটি শিশুকে এক মনে দুগ্ধপান করায়। দুই স্ত্রী মাতা আর ধাই হবে, আর কেউ না।

 

উপমা নিয়ে যদি কারো আপত্তি থাকে পণ্ডিত বুদ্ধদেবের ব্যাখ্যা পড়তে পারেন -

 

 

এবার দেখি এই ধাত্রী রাখার বিধান কোথায় রয়েছে। আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলে খ্যাত চরক ও সুশ্রুত সংহিতাতেই এর প্রমাণ রয়েছে। সুশ্রুত সংহিতার শারীরস্থানের ১০ অধ্যায়ের ২২ নং শ্লোকে রয়েছে, "ততো যথাবর্ণং ধাত্রীমুপেয়াম্মধ্যমপ্রমাণাং মধ্যবয়সমরোগাং..." অর্থাৎ অনন্তর (নামকরণের পর) বালকের আরোগ্য ও বলবৃদ্ধির জন্য সমানবর্ণা ধাত্রী আনয়ন করবে। ধাত্রী মধ্যপ্রমাণা, মধ্যবয়স্কা, আরোগ্য, শীতলবতী....(এভাবে বিস্তারিত ধাত্রীর বর্ণনা দেওয়া আছে)

 আর পৌরাণিকদের দেবতা কার্তিক তো নিজ মাতা ব্যতীত অন্য ছয়জন কৃত্তিকার দুগ্ধ পান করে বড় হয়েছেন। বিশ্বাস না হলে শিবপুরাণের রুদ্রসংহিতার কুমারখণ্ডের ৩/২৯-৩১ শ্লোক দেখুন।

 


শেষ করবো মাতৃদুগ্ধ নিয়ে মহর্ষির অমূল্য কিছু বচন দিয়ে - 

যজুর্বেদ ৮.৫১ 

যজুর্বেদ ১৭.৮৭ 

ঋগ্বেদ ১.১৬৪.৪৯