সন্ধ্যোপাসনা নিয়ে অধুনা শঙ্কাসমূহ অধিকাংশই অমূলক কিংবা বিদ্বেষবশতঃ প্রস্তুতকৃত । আমরা পূর্ব নিবন্ধে দুটি বিষয় প্রদর্শন করেছিলাম -
১। আর্যসমাজ কোন কোন শাস্ত্রকে প্রামাণ্য মানে
২। হোমের ক্ষেত্রে স্মার্তবিধানের বাক্য সরাসরি বেদে না থাকলেও বেদানুকূল বিধায় কিভাবে ঔপচারিকরূপে ' মন্ত্র ' সংজ্ঞা প্রাপ্ত হয়
সুতরাং এই নিবন্ধে আমরা মহর্ষি প্রণীত সন্ধ্যোপাসনার বিধির গৃহ্যসূত্র বাক্য কিভাবে ' মন্ত্র ' বলা হলো তা পুনর্বার কথন করে চর্বিত চর্বণ করবো না । সংস্কারবিধিতে মহর্ষি শুরুতেই যে বেদাদি অর্থ বেদ ও ঋষি প্রণীত শাস্ত্রের বেদানুকূল বিধি প্রমাণ মেনেছেন তা আমরা দেখেছি । এবার আমরা গৃহ্যসূত্র বাক্যও যে বেদানুকূল ও আর্ষ পরম্পরার তার প্রমাণ দেখবো ।
- ইন্দ্রিয়স্পর্শ প্রকরণঃ
প্রমাণঃ
১. অথর্ববেদ ১৯.৬০.১-২
২. ঋগ্বেদ ৩.৫৩.১৮
- মার্জনমন্ত্র প্রকরণঃ
প্রমাণঃ
(ওম্ ভূঃ পুনাতু শিরসি ইত্যাদি) । ওঙ্কার, ভূঃ, ভুবঃ এবং স্বঃ —এগুলোর অর্থ, গায়ত্রী মন্ত্রের অর্থের মধ্যে, পরে আলোচনা করা হয়েছে । (মহঃ) সর্বোচ্চ, মহান এবং সকলের পূজ্য হওয়ার কারনে পরমেশ্বরকে ‘মহ’ বলা হয় । (জনঃ) সমগ্র জগতের উৎপাদক হওয়ার কারণে পরমেশ্বরের ‘জন’ নামটি হয়েছে । (তপঃ) দুষ্টদের শাস্তি প্রদানকারী এবং স্বয়ং জ্ঞানস্বরূপ হওয়ায় ঈশ্বরকে ‘তপ’ বলা হয়; কারণ "যস্য জ্ঞানময়ং তপঃ" [ মুণ্ডুক॰ ১। ১। ৯ ] ইত্যাদি উপনিষদের বাক্য এই ব্যাপারে প্রমাণ স্বরূপ । (সত্যম্) অবিনাশী হওয়ার জন্যে পরমেশ্বরের আরেকটি নাম হচ্ছেঃ ‘সত্য’ । আর, সর্ববৃহৎ ও সর্বব্যাপক হওয়ার পরমেশ্বরের নাম "ব্রহ্ম" । অর্থাৎ, পূর্ব মন্ত্রোক্ত সকল নামই সেই জগতপতি পরমেশ্বরের ।
অথ মহাব্যাহৃত্যর্থাঃ সংক্ষেপতঃ—
“ভূরিতি বৈ প্রাণঃ । ভুবরিত্যপানঃ । স্বরিতি ব্যানঃ ॥ ইতি [ তৈত্তেরীয় উপনিষৎ বচনম্ ১। ৫। ৩ ] ॥” (ভূঃ) প্রাণয়তি জীবয়তি সর্বান্ প্রাণিনঃ স প্রাণঃ, প্রাণাদপি প্রিয়স্বরূপো বা, স চেশ্বর এব । অয়মর্থো ভূশব্দস্য জ্ঞেয়ঃ । (ভুবঃ) যো মুমুক্ষূণাং মুক্তানাং স্বসেবকানাং ধর্মাত্মনাং সর্বং দুঃখমপানয়তি দূরীকরোতি সোঽপানো দয়ালুরীশ্বরোঽস্তি । অয়ং ভুবঃশব্দার্থোঽস্তীতি বোধ্যম্ । (স্বঃ) যদভিব্যাপ্য ব্যানয়তি চেষ্টয়তি প্রাণাদি সকলং জগৎ স ব্যানঃ, সর্বাধিষ্ঠানং বৃহদ্ ব্রহ্মেতি । খল্বয়ং স্বঃশব্দার্থোঽস্তীতি মন্তব্যম্ । এতদাদ্যর্থা মহাব্যাহৃতীনাং জ্ঞাতব্যাঃ ।
এখন সংক্ষেপে মহাব্যাহৃতি সমূহের অর্থ লেখা হচ্ছেঃ— (ভূরিতি বৈ প্রাণঃ) যিনি সমগ্র জগতের জীবন ধারণের একমাত্র কারণ, আর প্রাণের চেয়ে প্রিয়, এজন্যে পরমেশ্বরের নাম ‘ভূঃ’ হয় । (ভুবরিত্যপানঃ) যিনি মুক্তি লাভের ইচ্ছুকদের, মুক্তি এবং স্বীয় সেবক ধর্মাত্মাদিগকে, সকল দুঃখ থেকে পৃথক করে সর্বদা সুখে রাখেন, এইজন্যই পরমেশ্বরের নাম ‘ভুবঃ’ । (স্বরিতি ব্যানঃ) যিনি সমগ্র জগতে সর্বব্যাপক হয়ে সবাইকে নিয়ম শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করেন, আর সকলের একমাত্র আশ্রয় স্থল তথা সুখস্বরূপ, এজন্যে পরমেশ্বরের নাম ‘স্বঃ’ হয় । এভাবে মহাব্যাহৃতিসমূহের সংক্ষিপ্ত অর্থ লেখা হলো।
ভূঃ = প্রাণ
১. অথর্ববেদ ১১.৪.১ = প্রাণায় নমো যস্য সর্বমিদং বশে। যো ভূতঃ সর্বস্যেশ্বরো যস্মিন্ত্সর্বং প্রতিষ্ঠিতম্ ॥
ভূবঃ = ত্রাতা, দুঃখহারক
ঋগ্বেদ ১।৯৯।১
ঋগ্বেদ ১।১০২।৩
স্বঃ = সুখস্বরূপ
ঋগ্বেদ ৮।৯৮।১১
ঋগ্বেদ ৯।১১৩।১১
ছান্দোগ্য ৭।২৩।১
মহঃ = মহান
ঋগ্বেদ ৫।১৩।১
বৃহদারণ্যক ৪।৪।২২
জনঃ = জনক, উৎপাদক
ঋগ্বেদ ১০।৮২।৩
তপঃ = দুষ্টসংহারক, জ্ঞানস্বরূপ
ঋগ্বেদ ১০।১২৯।৩
ঋগ্বেদ ১০।১৬৭।১
সত্যং = সত্যস্বরূপ
ঋগ্বেদ ১০।১৯০।১
তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২।১। ২
খং = ওঁ খংব্রহ্ম" (যজু০ ৪০। ১৭) অর্থাৎ ওঙ্কারই আকাশ সদৃশ ব্যাপক ব্রহ্ম ।
"ওম্ইতিব্রহ্ম"(তৈত্তে০ উপ০ ১। ৮। ১) অর্থাৎ এই ওঙ্কারই ব্রহ্ম ।
"একাক্ষরংপরংব্রহ্ম" (মনু০ ২। ৮৩) অর্থাৎ একাক্ষর ওঙ্কারই পরব্রহ্মস্বরূপ
"তস্য বাচকঃ প্রণবঃ" (যোগদর্শন ১। ২৭) অর্থাৎ সেই ঈশ্বরের বোধক বা মূখ্য নাম "ওম্"
মহর্ষি দয়ানন্দ এসকল শাস্ত্রবাক্যের
সমর্থন করেই, ওঙ্কার (ॐ) কে পরমেশ্বরের সকল নামের মধ্যে সর্বোত্তম নাম বলেছেন
গাত্রমার্জনে জল প্রয়োগ মনুস্মৃতিতেও [ ৫।১০৯ ] আছে -
পৌরাণিকগণ কোন যুক্তিতে বিরোধ করে তা অজানা । তাদের 'যজুর্বেদীয় ত্রিকাল সন্ধ্যা'তেই একই পদ্ধতি আছে -
'চতুর্বিশতি গায়ত্রী' নামে বারাণসীর বইতে যে গায়ত্রী মন্ত্র থাকে এগুলো কোন বেদের বা কোন শ্রৌতগ্রন্থের ?
জ্বালাপ্রসাদ শাস্ত্রীর " চতুর্বিংশতিগায়ত্রী"র গোপাল গায়ত্রী কোন বেদের ?
মহাবিজ্ঞানময় গরুড় পুরাণের পূর্বখণ্ড ২৭.১ তে সাপের বিষ ঝাড়ার মন্ত্র যা রয়েছে তা কোন বেদের ?
বেদে নাকি সরস্বতীর রূপ বর্ণন ও ত্রিদেব দ্বারা পূজিত বলা আছে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি০ ৪.৪৬-৪৯ অনুযায়ী । কোথায় আছে দেখাবেন ?
এই পুরাণ আরো বলছে শ্রীং হ্রীং সরস্বত্যৈ স্বাহা - বেদে প্রসিদ্ধ [ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রকৃতি০ ৪.৫১-৫২] , কোথায় আছে ভ্রাতা ?
শুধু তাই নয় সামবেদের নামে মিথ্যা মন্ত্রও এরা উদ্ধৃত করেছে [ ব্রহ্মবৈ০ পু০ শ্রীকৃষ্ণ খণ্ড০ ৭৮.২৩-২৪ ]
আমরা আচমন করি বেদমন্ত্র দ্বারা , গৃহ্য বা অন্যাদি বাক্যেও যে আছে ঔপচারিকরূপে সেটাও আমরা প্রমাণ করেছি । তা প্রিয় ভ্রাতাগণ আপনাদের করপাত্রী স্বামী বা নিজেরা যে আচমন করেন এই "মন্ত্র" বেদে আছে কোথায় বা তখন কেন মন্ত্র বলেন ?
পৌরাণিকরা এতটাই অভাগা আর দুষ্টপ্রকৃতির যে তারা গায়ত্রী মন্ত্রকেও শাপযুক্ত বলেছে ও শাপমুক্ত করার বিধি দিয়েছে , করপাত্রী স্বামী নিজের "সন্ধ্যোপাসনাবিধি" বইতে লিখেছে ব্রহ্মা , বশিষ্ঠ আর বিশ্বামিত্র গায়ত্রী মন্ত্রকে অভিশাপ দিয়েছিলেন , তাই আগে গায়ত্রীকে শাপমুক্ত করে তারপর জপ করতে হবে ।
মহামন্ত্র গায়ত্রী সম্পর্কে যেসব পৌরাণিকরা এসব করতে পারে তাদের তথাকথিত শাস্ত্রীয়তার পরিধি ও যৌক্তিকতা সহজেই অনুমেয় । কখনোই তাদের বাস্তবে কোন ধর্মীয় তত্ত্ব বিচার বা সিদ্ধান্ত প্রদানে পাবেন না । এদের প্রতিটা সিদ্ধান্ত অস্পষ্ট ও দ্বিধান্বিত থাকে কেননা মূলতঃ পৌরাণিকদের মধ্যে এসব শ্রেণী শুধুমাত্র বিরোধ করতেই আগ্রহী । প্রকৃতপক্ষে ধর্মের বাস এদের মধ্যেই নেই । অধিকন্তু অন্যাদি এতো মত যেখানে স্বীয় গুরুকে ঈশ্বর বা নানাভেদাভেদ, অবৈদিক মত চালাচ্ছে তাতেও তারা নীরব । কারণ সহজ, কেননা এতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।
সম্মানিত পাঠকগণ । এসব ধূর্ত থেকে সচেতন থেকে নিজ ইষ্টদেবের উপাসনায় মগ্ন হবেন ও বেদ বিরোধী এসব পাষণ্ড দুরাচারীদের বর্জন করবেন এই কামনা করি ।
ইত্যোম্
0 মন্তব্য(গুলি)