মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশের ৪র্থ সমুল্লাসে পঞ্চমহাযজ্ঞবিধি ব্যাখ্যা করেছেন । সেখানে ক্রমান্বয়ে তিনি দেবতর্পণ, ঋষি তর্পণ, পিতৃ তর্পণ ও বলিবৈশ্বদেব যজ্ঞ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ।
- দেবতর্পণ -
মূলতঃ এটি কোন বিধি নয় । মহর্ষি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যে কল্পাদিতে যে ব্রহ্মাদি নাম , দেব, শ্রাদ্ধ শব্দ পাওয়া যায় তার প্রকৃত তাৎপর্য কি । অপপ্রচারকারী কখনোই দেখাতে পারবে না এই বাক্যগুলো যজ্ঞে মহর্ষি ব্যবহার করতে বলেছেন । আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ৩।৪।১ এর আধারে মহর্ষি শুদ্ধ বিধি কি প্রকার হতে পারে তা নমুনা দিয়েছেন মাত্র -
- ঋষিতর্পণ
এখানেও পূর্বোক্ত যুক্তি প্রযোজ্য । আহুতির উল্লেখ নেই । আধার আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ৩।৪।২ -
- পিতৃতর্পণ
প্রাগুক্ত । উল্লেখ আশ্বলায়নে আমরা দেখেছি ' তৃপ্যন্তু , তৃপ্যতু , তৃপ্যতাম্ ' ব্যবহারের উল্লেখ ।
মূলতঃ যজুর্বেদের অধ্যায় ১৯ ও মনুস্মৃতির অধ্যায় ৩ এ পিতরগণের যে নাম উল্লেখ আছে তার তাৎপর্য প্রদর্শনের পূর্বে মহর্ষি পিতরগণের সংজ্ঞাবাচক শব্দসমূহ তালিকা আকারে প্রকাশ করেছেন ।
মহর্ষি কোথাও না এগুলোকে বেদের মন্ত্র বা ঔপচারিকরূপেও মন্ত্র হিসেবে বলেননি । যদি কারো সামর্থ্য থাকে তবে মহর্ষি এগুলো বেদের মন্ত্র বলেছেন এবং আহুতির কথা বলেছেন প্রদর্শন করুক ।
মূল হিন্দি আদিতে এখানে যে রেফারেন্স তা মূলতঃ টীকাকারগণ অপপ্রচারকারী যেসব গণ্ডমূর্খ আছে তাদের জন্য দেখিয়েছেন । বাংলায় ভ্রান্তিবশতঃ তা মূল পাঠে আছে । উল্লেখ্য বাংলায় যে পারাশরের উল্লেখ আছে বৃহৎ পারাশর স্মৃতিতেও [ ৭.১৬৭.১৬৮] দ্বাদশ পিতরের উল্লেখ আছে -
কিন্তু অপপ্রচারকারীগণ সেটিকে এড়িয়ে বানানো মন্ত্র দাবি করলেও এর প্রয়োগ আছে কিনা তা দেখায়নি । কেননা বিদ্বেষ ও কটুবাক্যপূর্ণ মস্তিষ্কে আর কি বিদ্যমান থাকবে ।
এখানে কোথাও তিনি এগুলোকে বেদমন্ত্র হিসেবে লিখেননি এবং এই মন্ত্রে আহুতির কথাও বলেননি ।মহর্ষি মূলতঃ কল্পাদির বিধানকেই বেদানুকূল কিভাবে গৃহীত হবে এবং বেদ বিরোধী বিধানের প্রতিস্থাপনে বৈদিক মূল প্রদর্শন করেছেন ।
পূর্বপক্ষঃ বেদের বা সংহিতাতেই মন্ত্র থাকে - আর্যসমাজীদের দাবি । তাহলে এগুলো মন্ত্র কি রূপে ?
উত্তরপক্ষঃ ঔপচারিকরূপে । যেমন গোপথ ব্রাহ্মণ [ পূর্ব০ ২.১০ ] চারবেদের সাথে, অনুশাসন [ স্মৃতি আদি ধর্মশাস্ত্র ] ,পৌরুষেয় কল্পের ও অন্যাদি গ্রন্থের উল্লেখ আছে যা কিনা অগ্নিহোত্রে সকলে একত্রে ' যজ্ঞ ' সংজ্ঞা লাভ করে । একইভাবে ব্যবহৃত বাক্যও মন্ত্র সংজ্ঞা পায় ।
কল্প যে পৌরুষেয় তা মীমাংসা দর্শনেও [ ১.৩.১৪] উল্লেখিত । বৈদিক বা পৌরাণিক উভয় পক্ষই তা স্বীকার করে ।
অতঃ কল্পবাক্যকে মন্ত্র বলা কেন হচ্ছে এটা যেমন কেবল আর্যসমাজীদের জিজ্ঞাসা করা যায় না তেমনি পৌরাণিকরাও এর থেকে আলাদা হতে পারবে না । যদি তাদের আমাদের সংজ্ঞায় সমস্যা থাকে তবে আগে নিজেদের বিধি আলোচনা করে নিক । কেননা এটা ব্রাহ্মণ না যে বেদ সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ থাকবে । মূলতঃ যজ্ঞে প্রযুক্ত এসকল বাক্য বেদানুকূল বিধায় ' মন্ত্র ' ঔপচারিক বা পরিভাষা রূপে সংজ্ঞায়িত হয় । আর পরিভাষা বা ঔপচারিক রূপ কখনোই মূলের সমান গৃহীত হয় না ।
- আরো পড়ুন - আর্যসমাজ কোন কোন গ্রন্থ প্রামাণ্য মানে ?
বলিবৈশ্বদেব যজ্ঞের বাক্যসমূহ নিম্নরূপ -
ওখানে কেন ' মন্ত্র ' বলা হয়েছে তা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি । এবার আমরা এর উৎস যদি দেখি তবে আমরা দেখতে পাই মহর্ষি সরাসরি মনুস্মৃতি ৩।৮৫-৮৬ এর আলোকে এই বিধান দিয়েছেন -
বাংলা প্রচলিত অনুবাদ -
খাদ্যাদি প্রদানের ' মন্ত্র ' সমূহ নিম্নরূপ -
মূল উৎস মনুস্মৃতি ৩।৮৭-৯১
প্রচলিত বাংলা অনুবাদ
অপপ্রচারকারীগণ যদি সংস্কারবিধির বলিবৈশ্বদেব প্রকরণখানাও পড়তো তবেও এই শংকা তারা করতো না ।
ইত্যোম্
0 মন্তব্য(গুলি)