https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

সত্যার্থ প্রকাশে বাইবেল খণ্ডন ও অনুবাদ নিয়ে খ্রিস্টানদের জালিয়াতির পর্দাফাঁস

Sunday, July 23, 2023

 
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বিরচিত অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশের ত্রয়োদশ সমুল্লাসের নাম "অথ কৃশ্চীনাখ্যমতবিষয়ং ব্যাখ্যাস্যাম্" । মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীই স্বাধীনতা পূর্ব ইংরেজ শাসিত ভারতে প্রথম ব্যক্তি যিনি কিনা দৃঢ়ভাবে লিখিত আকারে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাইবেল খণ্ডন করে তাদের প্রতি নিজের অহৈতুকী কৃপা প্রদর্শন করে বেদের আলোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ।

খ্রিস্টান মিশনরীরা বেদ অনুবাদে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বেদের ভুল অনুবাদ করেছিলো এবং সেই অনুবাদের উপর ভিত্তি করে একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিলো তা আপনারা আমার পূর্ব একটি নিবন্ধে পড়েছেন । খ্রিস্টান মিশনারীগণ দাবি করেন মহর্ষি স্বীয় গ্রন্থে যে অনুবাদ গ্রহণ করেছেন তা ভুল এবং ত্রুটিপূর্ণ ।

প্রকৃতপক্ষে মহর্ষি যা নিয়েছে মূল অনুযায়ী এবং তার দেবনাগরী হরফে যে অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো তার আলোকেই লিখেছেন ৷ এরপরেও তাঁর ত্রুটি প্রদর্শন করার দুঃসাহস মিশনারীদের নিকট শোভনীয় নয় । পক্ষান্তরে আমরা দেখতে পাই মিশনারীদের নিজেদের গ্রন্থের তথাকথিত প্রামাণিক অনুবাদই কোন রকম সঙ্গতিসম্পন্ন নয় । এমতাবস্থায় তাদের আমাদের গ্রন্থের অনুবাদ বিষয়ে মন্তব্য করা কেবল পরিহাসযোগ্য নয় বরং ধূলিকণাবৎ উপেক্ষণীয়ও বটে ।
আজকে আমরা খ্রিস্টানদের প্রামাণিক কিছু স্বীকৃত সংস্করণ থেকেই অনুবাদে বিস্তর বিকৃতি ও লুকোচুরি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো যেন সত্যার্থ প্রকাশে বাইবেল অনুবাদ নিয়ে কোন বক্তব্যে আপনারা বিভ্রান্ত না হন -

  • 💜 আমরা যে সংস্করণগুলো ব্যবহার করবো -
i. কিং জেমস ভার্শন (King James Version: KJV)
ii. অথোরাইজড ভার্শন (Authorized Version: AV)
iii. রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন (Revised Standard Version: RSV)
iv. জুবীলি
v. কেরি
vi. পবিত্র বাইবেল ২০০০, ২০০৬ [ বাইবেল একাডেমি বাংলাদেশ ]
vii. কিতাবুল মোকাদ্দস ২০১৩
💯[ ১ ] ‘গীতসংহিতা’ বা জবুর শরীফের ৮২।৬
👉 KJV +AV - “I have said, Ye are gods; and all of you are children of the Most High”: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, এবং তোমাদের সকলেই শ্রেষ্ঠতমের সন্তান’’।
👉 RSV-এর ভাষ্য নিম্নরূপ: “I say, you are gods, sons of the Most High, all of you” : ‘‘আমি বলি, তোমরা ঈশ্বর, শ্রেষ্ঠতমের পুত্র, তোমরা সকলেই’’।
👉কেরি: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঈশ্বর, তোমরা সকলে পরাৎপরের সন্তান।’’
👉জুবিলী: ‘‘আমি বলেছি, তোমরা ঐশীজীব! তোমরা সবাই পরাৎপরের সন্তান।’’
👉পবিত্র বাইবেল ২০০০: ‘‘আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন ঈশ্বর, তোমরা সবাই মহান ঈশ্বরের সন্তান।’’
👉কিতাবুল মোকাদ্দস ২০০৬: ‘‘আমি বলেছিলাম, তোমরা যেন আল্লাহ, তোমরা সবাই আল্লাহ তা’লার সন্তান।’’
👉কিতাবুল মোকাদ্দস ২০১৩: ‘‘আমিই বলেছি, তোমরা দেবতা, তোমরা সকলে সর্বশক্তিমানের সন্তান।’’
✅ সমালোচনাঃ মূল ইংরেজি পাঠ থেকে সুস্পষ্ট যে, এখানে মানুষদেরকে, সকল মানুষকে সুস্পষ্টভাবে ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছে। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, বাইবেলীয় পরিভাষায় কাউকে ঈশ্বর বলা বা ঈশ্বরের পুত্র বলা দ্বারা কোনো দেবত্ব বা ঈশ্বরত্ব বুঝায় না; বরং ঈশ্বরের দাস ও সৃষ্টি বুঝায়। কেরির বাংলা অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। তবে অন্যান্য অনুবাদে মানুষকে ঈশ্বর বলার বিষয়টা অস্পষ্ট করা হয়েছে। জুবিলী বাইবেল ও মুকাদ্দস-১৩ ‘ঐশীজীব’ ও ‘দেবতা’ শব্দ ব্যবহার করেছে। আর অন্য দুই অনুবাদে ‘যেন’ শব্দটা অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে।
💯 [২] বাইবেলের Proverbs নামের পুস্তকটার বাংলা নাম কেরি বাইবেলে ‘হিতোপদেশ’, জুবিলী বাইবেলে ‘প্রবচনমালা’ এবং কিতাবুল মোকাদ্দসে ‘মেসাল’। এ পুস্তকের ২৬ অধ্যায়ের ৪ ও ৫ শ্লোক নিম্নরূপ:
‘‘Answer not a fool according to his folly, lest thou also be like unto him. Answer a fool according to his folly, lest he be wise in his own conceit’’: ‘‘মুর্খকে উত্তর দিও না তার মুর্খতা অনুসারে; পাছে তুমিও তার মতই হয়ে যাও। মুর্খকে উত্তর দাও তার মুর্খতা অনুসারে; পাছে সে তার অহমিকায় জ্ঞানী হয়।’’
👉 কেরির অনুবাদ: ‘‘(৪) হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দিও না, পাছে তুমিও তাহার সদৃশ হও। (৫) হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দেও, পাছে সে নিজের দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হয়।’’
👉কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ কেরির অনুরূপ।
👉 জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘নির্বোধকে তার মুর্খতা অনুসারে উত্তর দিয়ো না, পাছে তুমিও তার মত হও। নির্বোধকে তার মুর্খতা অনুসারেই উত্তর দাও, পাছে সে নিজেকে প্রজ্ঞাবান মনে করে।’’
👉এর বিপরীতে পবিত্র বাইবেল ২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনকে তার বোকামি অনুসারে জবাব দিয়ো না, জবাব দিলে তুমিও তার মত হয়ে যাবে। প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনকে তার বোকামি অনুসারে জবাব দিয়ো, তা না হলে সে তার নিজের চোখে নিজেকে জ্ঞানী মনে করবে।’’
✅সমালোচনাঃ এখানে ‘প্রয়োজন বোধে’ শব্দদুটো সংযোজন করা হয়েছে। বস্ত্তত বাইবেল সমালোচকরা এ দুটো শ্লোককে বাইবেলীয় বৈপরীত্যের সুস্পষ্ট নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ, একই পুস্তকের একই অধ্যায়ের পাশাপাশি দুটো শ্লোকে সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দুটো আদেশ দেওয়া হয়েছে: প্রথম আদেশ: নির্বোধকে তার নির্বুদ্ধিতা অনুসারে উত্তর দিয়ো না। দ্বিতীয় আদেশ: নির্বোধকে তার নির্বুদ্ধিতা অনুসারে উত্তর দাও।
খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা বিভিন্নভাবে এ বৈপরীত্যের উত্তর প্রদান করেছেন। কিন্তু কেউই গ্রন্থের মধ্যে দুটো শব্দ সংযোজন করার সাহসিকতা দেখাননি। কিন্তু বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসের অনুবাদকরা সে সাহস দেখালেন। প্রাচীন কাল থেকে খ্রিষ্টান ধর্মগুরুরা এরূপ সংযোজনের সময় বন্ধনী ব্যবহার করতেন। বাংলা কিতাবুল মোকাদ্দসের সম্পাদকরা ‘প্রয়োজন বোধে’ দুটো শব্দ পবিত্র পুস্তকের মধ্যে সংযোজন করার জন্য এরূপ কোনো বন্ধনীরও ‘প্রয়োজন বোধ’ করেননি।
💯 [৩] মথি ৫।৩৯
👉 KJV:“ye resist not evil...” (তোমরা দুষ্ট/পাপী/মন্দ/বদমাইশ লোককে প্রতিরোধ করো না)
👉 RSV: Do not resist one who is evil... (যে ব্যক্তি দুষ্ট/ মন্দ/ পাপী/ বদমাইশ তাকে তোমরা প্রতিরোধ করো না।)
👉 কেরি ও কিতাবুল মোকদ্দস-২০১৩: ‘‘তোমরা দুষ্টের প্রতিরোধ করিও না; (বরং যে কেউ তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল তাহার দিকে ফিরাইয়া দেও।)’’ জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘দুর্জনকে প্রতিরোধ করো না...।’’
👉 এর বিপরীতে পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই করো না...’’
✅ সমালোচনাঃ পাঠক হয়ত বলবেন, অর্থ তো কাছাকাছিই! কিন্তু ধর্মগ্রন্থের মূল পাঠে কি লেখা আছে? ‘‘তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই করো না’’? এ কথাটার ইংরেজি কী? পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে এরূপ সংযোজন ও বিয়োজন কি অনুবাদের বিশ্বস্ততা ও ধর্মগ্রন্থের পবিত্রতা রক্ষা করে?
প্রকৃত বিষয় হল, যীশুর এ বাক্যটা অনেক সমালোচনা কুড়িয়েছে। দুষ্টকে প্রতিরোধ না করলে সমাজ টিকবে কি করে? সম্ভবত এজন্য অনুবাদকরা অর্থকে সহনীয় করার চেষ্টা করেছেন। তবে এতে পবিত্র পুস্তকের অর্থ বিকৃতি ছাড়া কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ এক্ষেত্রেও প্রশ্ন একই থাকে। আমাদের সন্তানদেরকে কি আমরা এটাই শিক্ষা দেব? তোমাদের কেউ মারলে, অত্যাচার করলে, ধর্ষণ করলে, পকেট মারলে.... তোমরা তার বিরুদ্ধে কিছুই বলবে না? বরং আরেকবার অপরাধটা করার সুযোগ দেবে?
[ ৪ ]
‘লূক’ ৯/২৮:
👉 KJV: And it came to pass about an eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up into a mountain to pray.
👉 RSV: Now about eight days after these sayings, he took Peter and John and James, and went up on the mountain to pray.
👉 কেরির অনুবাদ: এই সকল কথা বলিবার পরে, অনুমান আট দিন গত হইলে তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে লইয়া প্রার্থনা করিবার জন্য পর্বতে উঠিলেন।’’
👉 জুবিলী বাইবেল ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ সংস্করণের অনুবাদেও ‘আনুমানিক আট দিন’ বলা হয়েছে।
★ কিন্তু পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬-এ (eight days)-এর অনুবাদে ‘এক সপ্তাহ’ বলা হয়েছে।
👉 পবিত্র বাইবেল-২০০০: ‘‘এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তা পরে যীশু প্রার্থনা করবার জন্য পিতর, যোহন ও যাকোবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।’’ কিতাবুল 👉 মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তা পরে ঈসা মুনাজাত করবার জন্য পিতর, ইউহোন্না ও ইয়াকুবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন।’’
✅ সমালোচনাঃ আমরা জানি না, অনুবাদকদের কাছে এক সপ্তাহ এবং আট দিন একই কিনা অথবা তাদের সপ্তাহ আট দিনে হয় কি না! তবে মূল ভাষ্যের ‘৮ দিন’ কথাকে এভাবে ইচ্ছমত প্রায় এক সপ্তা বানানো কখনোই গ্রহণযোগ্য অনুবাদ নয়।
💯 [ ৫ ] যোহন ১২/২৫ ইংরেজিতে নিম্নরূপ:
👉 KJV: “He that loveth his life shall lose it; and he that hateth his life in this world shall keep it unto life eternal”.
👉 RSV: “He wjp loves his life loses it; and he who hates his life in this world will keep it for eternal life.”
উভয় ভার্শনেই অর্থ: ‘‘যে তার নিজ জীবন/ প্রাণ ভালবাসবে সে তা হারাবে; এবং যে এ জগতে তার নিজের জীবন ঘৃণা করবে সে অনন্ত জীবনের জন্য তা সংরক্ষণ করবে।’’
👉কেরির অনুবাদ: ‘‘যে আপন প্রাণ ভালবাসে সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের জন্য তাহা রক্ষা করিবে।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ কেরির অনুবাদের অনুরূপ।
👉 পবিত্র বাইবেল-২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬ নিম্নরূপ: ‘‘যে নিজের প্রাণকে বেশী ভালবাসে সে তার সত্যিকারের জীবন হারায়, কিন্তু যে এই দুনিয়াতে তা করে না সে তার সত্যিকারের জীবন অনন্ত জীবনের জন্য রক্ষা করবে।’’
✅ সমালোচনাঃ আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলানুগ। শুধু ‘হেট’ বা ঘৃণা করাকে ‘অপ্রিয় জ্ঞান করা’ লেখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী অনুবাদ খুবই একেবারেই ভিন্ন অর্থবাহী। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে মূল অর্থ পরিবর্তন করে ‘বেশী’ শব্দটা যোগ করা হয়েছে। একইভাবে মূল বক্তব্য বিনষ্ট করে ‘সত্যিকারের জীবন’ শব্দদু’টো যোগ করা হয়েছে। আর হেট বা ঘৃণা করা শব্দটা বেমালুম চেপে যেয়ে ‘তা না করে’ বলা হয়েছে। ‘তা না করা’ অর্থাৎ কোনো কিছুকে ‘বেশি ভাল না বাসা’ কি ‘হেট’ বা ঘৃণা করার সমার্থক? বিশ্বের কোনো ভাষায় কি তা আছে? কোনো বিবেকবান মানুষ কি তা বলবেন? আমি আমার কোনো বন্ধুকে কম ভালবাসি- এর অর্থ কি আমি তাকে ঘৃণা করি?
কোনো ছাত্র যদি গ্রামার পরীক্ষায় এরূপ স্বাধীন বা স্বেচ্ছাচারী ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ অনুবাদ করে তবে শিক্ষক কিভাবে তার মূল্যায়ন করবেন? কোনো আর্থিক বা রাজনৈতিক ডকুমেন্টের এরূপ অনুবাদ করা হলে তা কি ‘অপরাধ’ বলে গণ্য করা হবে না? এরূপ বিকৃতির কারণ বুঝতে পারা পাঠকের জন্য হয়ত কঠিন হতে পারে। ইঞ্জিলের এ বক্তব্যটা আধুনিক সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচুর সমালোচনা কুড়িয়েছে। কারণ নিজের জীবনকে ভালবাসা সহজাত মানবীয় প্রকৃতি। কাউকে বলা যায় যে, তুমি জীবনের চেয়ে দেশ, রাষ্ট্র, ধর্ম বা ঈশ্বরকে বেশি ভালবাসবে। কিন্তু এ কথা বলা যায় না যে, জীবনকে ভালবাসলেই তুমি চাকরি বা অনন্ত জীবন হারাবে। এজন্য যীশুর নামে কথিত বক্তব্যটা খুবই আপত্তিকর।
অন্যদিকে অনন্ত জীবন লাভ করতে জীবনকে ঘৃণা করতে হবে কথাটাও একই রকম অগ্রহণযোগ্য। কেউ যদি জীবনকে ঘৃণা-ই করে তবে তাকে অনন্তকালের জন্য রক্ষার চেষ্টা করবে কেন? জীবনের প্রতি প্রেমই তো তাকে তা অনন্তকালের জন্য রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে। জীবনের প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুস্থ ও অপ্রকৃতস্থ করে।
বস্তুত যীশুর নামে ইঞ্জিলের মধ্যে লিখিত অনেক কথাই এধরনের প্রান্তিক। দ্বিতীয় শতাব্দীর খ্রিষ্টান সন্ন্যাসী ও জ্ঞানবাদী বা ‘মারফতি’ (gnostic) সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে এসব ‘প্রান্তিক’ আবেগী কথাগুলো খুবই বাজার পেত। সম্ভবত এগুলো যীশুর নামে বানানো কথা। সর্বাবস্থায় এগুলোর ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, কিন্তু মূল বক্তব্যের মধ্যে মানবীয় ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়ে তাকে যীশুর বা ঈশ্বরের কথা বলে চালানো কি ধর্ম, মানবতা, বিবেক বা জাগতিক আইনে গ্রহণযোগ্য?
💯[ ৬ ] করিন্থীয়দের প্রতি প্রেরিত পলের ১ম পত্রের ১৫ অধ্যায়ে পল যীশু খ্রিষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর যে সকল শিষ্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন। ১৫ অধ্যায়ের ৫ম শ্লোকটা
👉 KJV ও RSV এবং সকল বাইবেলে: “And that he was seen of Cephas, then of the twelve”
👉কেরি ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন।’’
👉পবিত্র বাইবেলে ২০০০ এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬: ‘‘আর তিনি পিতরকে এবং পরে তাঁর প্রেরিতদের/ সাহাবীদের দেখা দিয়েছিলেন।’’
✅সমালোচনাঃ প্রথম অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। কিন্তু দ্বিতীয় অনুবাদে ‘the twelve’ বা ‘সেই বারোজন’ পরিবর্তন করে ‘প্রেরিতদের’ এবং ‘সাহাবীদের’ লেখা হয়েছে। এভাবে মূলের পরিবর্তন ছাড়াও অসাধু সম্পাদনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
এখানে সাধু পল ভুল করেছেন। যীশু মৃত্যু থেকে উঠার পরে যখন প্রেরিতদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তখন ‘সেই বারো’ জনের একজন ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা মৃত্যু বরণ করেছিলেন। ফলে প্রেরিতদের সংখ্যা ছিল ১১ জন। এজন্য সাধু পলের কথাটা এখানে ভুল। এ ভুল দ্বারা প্রমাণ হয় যে, সাধু পল পবিত্র আত্মার সাহায্যে তাঁর পত্রগুলো লেখেননি। বরং সাধারণ একজন ধর্ম প্রচারক হিসেবেই লেখেছেন। এজন্য তাঁর ভুল হত। বাহ্যত এ ভুলটা লুকানোর জন্য মূলকে পরিবর্তন করা হয়েছে।
💯[৭] মথি ২৫/১৫ নিম্নরূপ:
👉 KJV: And unto one he gave five talents, to another two, and to another one;
👉 RSV: to one he gave five talents, to another two, and to another one...
👉 কেরি এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত, অন্য জনকে দুই তালন্ত, এবং আর এক জনকে এক তালন্ত ... দিলেন।’’
👉 জুবিলী বাইবেল: ‘‘একজনকে তিনি পাঁচশ’ মোহর, অন্যজনকে দু’শো মোহর, ও আর একজনকে একশ’ মোহর ... দিলেন।’’
👉 পবিত্র বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস: ‘‘তিনি একজনকে পাঁচহাজার, একজনকে দু’হাজার ও একজনকে এক হাজার টাকা দিলেন।’’
✅ সমালোচনাঃ আমরা জানি না, বাইবেল সোসাইটিগুলোর নিকট শত ও হাজার একই সংখ্যা কি না! তবে আমরা দেখছি যে, কেরির অনুবাদ মূলাশ্রয়ী। তালন্ত (talent) যেহেতু প্রাচীন মুদ্রা, সেহেতু টীকায় তা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে ‘এক তালন্ত’-কে ইচ্ছামত ‘এক শত টাকা’ বা ‘এক হাজার টাকা’ বলে অনুবাদ করা মোটেও গ্রহণযোগ্য অনুবাদ বলে গণ্য নয়।
[৮]মার্ক ১৬/১৫:
👉 KJV: Go ye into all the world, and preach the gospel to every creature.
👉 RSV: Go into all the world and preach the gospel to the whole creation
উভয় ভার্শনের অর্থ এক।
👉 কেরি এবং কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩: ‘‘তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার/তবলিগ কর।’’ জুবিলী বাইবেলের অনুবাদ: ‘‘তোমরা বিশ্বজগতে বেরিয়ে পড়, সমস্ত সৃষ্টির কাছে সুসমাচার প্রচার কর।’’
👉 কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস-২০০৬-এর অনুবাদ: ‘‘তোমরা দুনিয়ার সব জায়গায় যাও এবং সব লোকদের কাছে আল্লাহর দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ কর।’’
✅সমালোচনাঃ এখানে every creature/ the whole creation বা ‘প্রত্যেক সৃষ্টি/ সকল সৃষ্টি’ বাক্যাংশের অনুবাদ করা হয়েছে: ‘সব লোকদের’। এ অনুবাদের মাধ্যমে যীশুর মূল নির্দেশ পরিবর্তন করা হয়েছে। সৃষ্টি আর লোক এক নয়। সৃষ্টি অর্থ মানুষ ও অন্যান্য সকল সৃষ্টি। পক্ষান্তরে লোক বলতে মানুষ বুঝানো হয়। ইংরেজিতে সব লোকদের বুঝাতে ‘every man, every person/ all people’ ইত্যাদি বলা হবে।
বাহ্যত এ পরিবর্তনের বাহ্যিক কারণ বাইবেল সমালোচকদের তীর। তারা বলেন, যীশু সকল সৃষ্টির কাছে গসপেল বা ইঞ্জিল প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। আর সৃষ্টি বলতে মাছ, পাখি, সাপ, বিচ্ছু সবই বুঝায়। খ্রিষ্টান প্রচারকরা কখনোই এগুলোর কাছে ইঞ্জিল প্রচার করেন না! এ সমালোচনা থেকে বাঁচতেই সম্ভবত এরূপ বিকৃতি। গ্রহণযোগ্য ধর্মগ্রন্থের জন্য যীশুর নির্দেশকে অবিকৃতি রেখে ব্যাখ্যা করাই কি উত্তম ছিল না?
অতঃ খ্রিস্টান মিশনারীদের নিকট বক্তব্য, স্বীয় গ্রন্থের প্রামাণ্য অনুবাদ প্রদর্শন করে তারপর মহর্ষির খণ্ডনের ভুল যেন প্রদর্শন করে । উক্ত রচনার অর্থ তাদের অনুভূতিতে আঘাত হানা নয় বরং যৌক্তিক ও একাডেমিক গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া ।
অলমিতি ।
 
🖋️
বাংলাদেশ অগ্নিবীর