https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

পশুবলি বিষয়ে শ্রী যুধিষ্ঠির মীমাংসককে নিয়ে নাস্তিক - পৌরাণিকদের মিথ্যাচার খণ্ডন

Thursday, September 14, 2023

 



পূজ্যপাদ মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্রী যুধিষ্ঠির মীমাংসকজী মীমাংসা দর্শনের বিদগ্ধ পণ্ডিত ছিলেন । তিনি মীমাংসা দর্শনের শাবরভাষ্যের অনুবাদ ও তার উপর বিবেচনাত্মক 'বিবরণ' নামে বিশেষ ব্যাখ্যাও করেছেন । পূজ্য আচার্যপাদ আলোচনার সময় প্রচলিত নানা অবধারণার উল্লেখ করেছেন ও তার সপ্রমাণ খণ্ডন বা ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন । অধুনা সময়ে নববৌদ্ধগণ আর্যশাস্ত্রের অপব্যাখ্যায় দিনাতিপাত করছে । বঙ্গনাস্তিকদের সংশয় নামে একটি ওয়েবসাইটে বৌদ্ধ নাস্তিক সুরেন্দ্র কুমার অজ্ঞাতের 'বালুর ভিতের ওপর কি দাঁড়িয়ে আছে হিন্দুধর্ম ' বইয়ের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে । যাতে নাস্তিক সুরেন্দ্র আর্যশাস্ত্রের বিকৃত উদাহরণ দিয়েছে । এমনকি মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত শ্রী যুধিষ্ঠির মীমাংসকজীর বাক্যও খণ্ডিত উদ্ধৃতি দিয়েছে । বাংলার অকালকুষ্মাণ্ড পৌরাণিকমণ্ডলী ভিক্ষান্নজীবীরূপে সেইসব লেখাকেই উপজীব্য করে অপপ্রচারে লিপ্ত । আসুন তাদের সেই মিথ্যাচারের খণ্ডন করি । 

অপপ্রচারঃ এর পরে টিপ্পনী করে মীমাংসক মহাশয় লিখেছেন, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ভ্রান্তি দূরকারী। তিনি লিখেছেন, “ ঐতরেয় ব্রাহ্মণের এই মৃত পশুর মাংসখণ্ড বন্টন এটা স্পষ্ট ঘোষণা করে যে, ঐতরেয়ের মূল প্রবচন কালে (অর্থাৎ যখন এটা প্রথম লেখা হয়েছিল) অথবা শৌনক দ্বারা এর পুনঃসংস্কারের কালে ব্রাহ্মণেরা যজ্ঞে পশুর বলি দিত এবং যজ্ঞশিষ্ট (যজ্ঞের অবশিষ্ট পদার্থ) ভক্ষণ করতো। কেউ একে প্রক্ষেপ বলতে পারেন কিন্তু মীমাংসক মহাশয় একে প্রক্ষেপ (পরবর্তীতে কারো দ্বারা মেশানো) মানতে একেবারেই অস্বীকার করে লিখেছেন, “ অথবা এই পশুবলি এবং যজ্ঞীয়মাংসশেষ ( যজ্ঞের অবশিষ্ট মাংস) ভক্ষণ পরবর্তীকালে প্রক্ষেপ করা হয়ে থাকবে। কিন্তু প্রক্ষেপ মনে করার জন্য কোনো সুদৃঢ় প্রমাণ নেই।" (মীমাংসা শাবরভাষ্যম, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৭৫)


জবাবঃ মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসকজী লিখেছেন -

ঐতরেয় ব্রাহ্মণের এই বধকৃত পশুর মাংস খণ্ডের বণ্টন স্পষ্ট ঘোষিত করে যে ঐতরেয় ব্রাহ্মণের মুল প্রবচনকালে অথবা শৌনক দ্বারা পুনঃসংস্কার কালে যজ্ঞে পশুবলি ও যজ্ঞশিষ্ট প্রসাদরূপে মাংস ব্রাহ্মণরা ভক্ষণ করতেন । অথবা এই পশুবলি ও যজ্ঞীয় মাংসশেষের ভক্ষণ উত্তরকালের প্রক্ষেপ হতে পারে  । কিন্তু প্রক্ষেপ মানার জন্য কোন সুদৃঢ় প্রমাণ নেই । পবিত্র হিংসারহিত অধ্বর = যজ্ঞেও আসুর প্রভাব অথবা বামমার্গীয় প্রভাব পড়েছিলো এমন সম্ভাবনাই অধিকতর যৌক্তিক৷ আমরা প্রথমভাগে শ্রৌতযজ্ঞ মীমাংসা নিবন্ধে প্রাচীন আর্ষ বাঙ্ময় থেকেই সপ্রমাণ উদ্ঘোষিত করেছি যে অতিপুরাকালে যজ্ঞে পশ্বালম্ভন হতো না । যজ্ঞে পশ্বালম্ভন উত্তরকালে আরম্ভ হয়েছিলো ।

[ মীমাংস দর্শন ৩।৭।২৮, বিবরণ, পৃষ্ঠা ১০৭৫]



লক্ষ্যণীয় -

১। যুধিষ্ঠিরজী ঐতরেয় ব্রাহ্মণের মূল বা পরের কাল এভাবে দুটি বিকল্প দিয়েছেন এই প্রকরণ যুক্ত হওয়ার । অর্থাৎ আদি থেকেই ছিলো এর একক সিদ্ধান্ত দেননি ।
২। তিনি আদিবিধানে পশুবধ মানেননি । সুতরাং তিনি পশুবধ সমর্থন করেছেন এটা বলার সুযোগ নেই ।
৩। প্রক্ষিপ্ত কেন না এটার জন্য টীকায় তিনি বলেছেন -

ঐতরেয় ব্রাহ্মণের অন্য অধ্যায়ে অনেক খণ্ড রয়েছে ৷ কিন্তু এই ৭ম পঞ্চিকার এই ৩১তম অধ্যায়ে একটি খণ্ডই রয়েছে৷ আর তাতে পশুর মাংসখণ্ড বিভাগই বর্ণিত হয়েছে । এটি বৈলক্ষণ্য বিচারণীয় ।

 

অর্থাৎ এই প্রকরণ প্রক্ষিপ্ত না । কেননা এই অধ্যায়ে খণ্ড মাত্র একটিই । তবে ' এটি বৈলক্ষণ্য বিচারণীয় ' পদ দ্বারা তিনি এই বিষয়ে যে বিশেষ বিচারের উল্লেখ করেছেন তার পরিপূর্ণ সমাধান আমরা পাই পণ্ডিত শ্রী ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদীজীর গোপথ ব্রাহ্মণে [১.৩.১৮] যেখানে তিনি এর রূপক ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করেছেন ।

 



অপপ্রচারঃ মীমাংসা দর্শনের সূত্র, শমিতা চ শব্দভেদাত্ (৩/৭/২৮) এর ব্যাখ্যার বিবরণে পণ্ডিত যুধিষ্ঠীর মীমাংসক ‘কুতুহলবৃত্তি' পুস্তকের আধারে লিখেছেন – শমিতা তাকে বলা হয় যে ঋত্বিক (যজ্ঞের পুরোহিত) পশুর মুখ নাক প্রভৃতি বন্ধ করে তাকে হত্যা করে। শমিতা দুই প্রকারের হয়। এক সংজ্ঞপনকর্তা (মুখ নাক প্রভৃতি বন্ধ করে যে পশুকে হত্যা করে), দুই বিশসিতা অর্থাৎ যে পশুকে কাটে। ( মীমাংসা শাবরভাষ্য, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০৭৭)


জবাবঃ মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসকজী লিখেছেন -

শমিতা ২ প্রকারের হয় - যজ্ঞপয়িতা = হত্যাকারী এবং বিশসিতা = অঙ্গ কর্তনকারী ।



পাঠক, অপপ্রচারকারীদের অনুবাদে অযাচিতভাবে প্রবেশ করানো শব্দ দিয়ে বুঝতে পারছেন কী পৌরাণিক ও নাস্তিকরা কতটা বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করে ?  পাশাপাশি কুতুহলবৃত্তিকারের উত্থাপন প্রচলিত মত প্রদর্শনে মাত্র । কেননা এই প্রকরণে প্রচলিত মত নিয়েও আলোচনা হচ্ছে যা আমরা পূর্ব খণ্ডনে বলেছি । বিপক্ষ মত উদ্ধৃত করা মানে তা স্বীকার করে নেওয়া এমন চিন্তা একমাত্র মূর্খ ব্যতীত করা সম্ভব নয়  ।

তিনি আরো লিখেছেন -

উক্ত বিচার যজ্ঞে পশ্বালম্ভনের আরম্ভ হওয়ার উত্তরকালেরপুরাকালে যখন পর্যগ্নিকরণের পর পশুমাত্রের উৎসর্গ হয়ে যেতো তখন না পশুভাগ হতো না কোন ভাগ কার এই বিচারের আবশ্যকতা ছিলো আর না শমিতা ঋত্বিকদের মধ্যে অন্যতম  হবে বা পৃথক এই বিচার উপপন্ন হতো । সম্প্রতি উপলভ্যমান শাখা ও ব্রাহ্মণগ্রন্থ প্রোক্তগ্রন্থ । তাই এতে প্রাচীনকালের ব্যবস্থাও ক্বচিদুপলব্ধ হয়  এবং নবীন ব্যবস্থার তো ব্যাখ্যা করেই । মন্ত্রসংহিতাগত যজ্ঞ আধিদৈবিক যজ্ঞ৷ তাতে সৃষ্টিযজ্ঞের অন্তর্ভুক্ত দেবযজ্ঞের সাথে আসুরযজ্ঞেরও বর্ণনা আছে । সেই আধিদৈবিক পশুযাগ নিদর্শনার্থ । নাট্যস্থানীয় যজ্ঞকর্মে পশুবধ সেভাবেই বর্জনীয় যেভাবে নাটকে হত্যা-কর্তন বর্জিত । এজন্য যজ্ঞে পশুদের পর্যাগ্নিকরণের পর উৎসর্গই প্রাচীনকালে হতো । কর্মের পূর্তি যদ্দেবত্যঃ পশুঃ তদ্দেবত্যঃ পুরোডাশঃ নিয়মে পুরোডাশ দ্বারাই করা হতো । বিশেষ আমার শ্রৌতযজ্ঞ মীমাংসা প্রকরণে দেখো ।

[ মীমাংস দর্শন ৩।৭।২৯, বিবরণ, পৃষ্ঠা ১০৭৭] 

 



আশা করি পূজ্যপাদ আচার্যজীর মন্তব্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট । অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন । নতুবা এভাবেই খণ্ডিত হবেন সত্যের সামনে ।

ও৩ম্