https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

সামবেদ কি পুনরুক্তি দোষে দুষ্ট ?

Monday, September 18, 2023

 


সামবেদ একটি মৌলিক বেদ এবং বেদের প্রতিটি মন্ত্রই মৌলিক। কোনো বেদের কোনো মন্ত্র অপর বেদ থেকে সংগৃহীত বা পুনরুক্তি হয়নি। কিন্তু দেখা যায়, সামবেদে কিছু মন্ত্র রয়েছে যেগুলো হুবহু অন্য বেদেও পাওয়া যায়৷ এ থেকে মনে শঙ্কা আসতে পারে সামবেদ কি পুনরুক্ত দোষে দুষ্ট ? এই শঙ্কার সমাধান করার জন্য আমাদের প্রথমে পুনরুক্তের পরিভাষা জানতে হবে। পুনরুক্তের পরিভাষা নির্দেশ করার সময় ন্যায়দর্শন ২।১।৬১ সূত্রের ভাষ্যে ঋষি বাৎস্যায়ন বলেছেন–
 
 "অনর্থকোঽভ্যাসঃ পুনরুক্তম্" অর্থাৎ অনর্থক অভ্যাসকে পুনরুক্ত বলা হয়। "শব্দার্থয়োঃ পুনর্বচনং পুনরুক্তমন্যত্রানুবাদাৎ।" (ন্যা০ দ০ ৫।২।১৪) অর্থাৎ অনুবাদ ব্যতীত শব্দ ও অর্থের পুনর্বচন হল পুনরুক্ত।
বেদ পরমেশ্বর প্রদত্ত। বেদমন্ত্র মাত্রই সার্থক। তাই বেদে পুনরাবৃত্ত মন্ত্র বা মন্ত্র চরণ আদিকে পুনরুক্ত বলা হয় না। বরং এগুলোকে অনুবাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। কেননা–
"অনুবাদোপপত্তেঃ চ।" (ন্যা০ দ০ ২।১।৬১) অর্থাৎ সার্থক আবৃত্তি হলো অনুবাদ। ঋষি বাৎস্যায়ন এই সূত্রের ভাষ্যে বলেছেন–'অর্থবানভ্যাসোঽনুবাদঃ' অর্থাৎ অর্থবান অভ্যাসকে অনুবাদ বলা হয়। অনুবাদ কিসের হয় তা নির্ণয়ে ঋষি গৌতম বলেছেন– "বিধিবিহিতস্য অনুবচনং অনুবাদঃ।" (ন্যা০ দ০ ২।১।৬৬) অর্থাৎ কর্মের বিধির যে বিধান করা হয়েছে তার যে অনুবচন = পরবর্তী বচন তাকে অনুবাদ বলা হয়।
 
এই অনুবচন ও অনুবাদ দুই প্রকারের। এই বিষয়ে ন্যায়দর্শন ২।১।৬৮ ভাষ্যে ঋষি বাৎস্যায়ন বলেছেন– "বিধ্যনুবচনং চানুবাদো বিহিতানুবচনং চ" অর্থাৎ অনুবাদ মূলত বিধি অনুবচন (শব্দানুবাদ) ও বিহিত অনুবচন (অর্থানুবাদ) এই দুই প্রকার।
 
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই অনুবাদের প্রয়োজন কি? অনুবাদের প্রয়োজন স্পষ্ট করার জন্য ঋষি গৌতম বলেছেন– "শীঘ্রতরগমনোপদেশবতভ্যাসাত্ন অবিশেষঃ।" (ন্যা০ দ০ ২।১।৬৮) অর্থাৎ অতি শীঘ্র গমনের উপদেশের ন্যায় আবৃত্তি হওয়াতে অনুবাদে ও পুনরুক্তে ভেদ রয়েছে। "অনুবাদেত্ব পুনরুক্তমর্থবিশেষোপপত্তেঃ।" (ন্যা০ দ০ ৫।২।১৫) অর্থাৎ অনুবাদে নিশ্চিত রূপে বিশেষ অর্থ পাওয়া যাওয়াতে তা পুনরুক্ত হয় না।
 
সহজভাবে বললে, বারংবার আবৃত্তিতে যদি কোনো অর্থ পাওয়া না যায় তবে তাকে পুনরুক্ত বলে। আর যদি অর্থ পাওয়া যায় তবে সেটিকে অনুবাদ বলা হয়। বেদের প্রতিটি মন্ত্র সার্থক। ফলে একই মন্ত্রের কয়েকবার আবৃত্তি হলেও সেটিকে পুনরুক্ত নয়, বরং অনুবাদ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এই অনুবাদের মাধ্যমে মূলত কর্মের বিধির বিধান প্রদান করা হয়৷ পূর্বের অনুরূপ মন্ত্রে যে বিধি প্রদান করা হয়নি তা এই মন্ত্রের আবৃত্তিতে প্রদান করায় এই অনুবাদ সার্থক। আর মূল কথা হলো অনুবাদে বিশেষ অর্থ পাওয়া যায়। যার ফলে বেদার্থের পরিধি বৃদ্ধি পায় ও বেদজ্ঞান বিস্তৃত হয়।
 
এক্ষেত্রে যজুর্বেদের একটি মন্ত্রের মাধ্যমে উদাহরণ দিয়ে বিষয়ে সহজে বোঝানো যাবে৷
 
উরু বিষ্ণো বি ক্রমস্বোরু ক্ষয়ায় নস্কৃধি ।
ঘৃতং ঘৃতয়োনে পিব প্রপ্র য়জ্ঞপতিং তির স্বাহা ॥
এই মন্ত্রটি যজুর্বেদের ৫ম অধ্যায়ের ৩৮ ও ৪১ সংখ্যক মন্ত্র। এখানে যজু ৫।৩৮ মন্ত্রটির তাৎপর্য হলো– ব্যাপক পরমাত্মার নিকট প্রার্থনা করা হচ্ছে, তিনি সর্বব্যাপক হয়ে যেন আমাদের নিবাসের জন্য সামর্থ্য দান করেন ও শিক্ষিত বিদ্বানগণ যেন নিজেকে বারংবার প্রদীপ্ত করেন। যেভাবে ঋত্বিক যজমানের দুঃখ দূর করেন, সেভাবেই স্বাহা শব্দ কথনের মাধ্যমে অধ্যাত্ম আদি ত্রিবিধ যজ্ঞকে পূর্ণ করেন।
 
আবার এই মন্ত্রটিকেই যজু ৫।৪১ মন্ত্রে আবৃত্তি করে যজ্ঞীয় কর্মে সংলগ্ন হওয়ার জন্য প্রেরিত করা হয়েছে। যেভাবে লোকসমাজে প্রেরণা দানের জন্য 'পচতু পচতু ভবান্' = পক্ব করো পক্ব করো - এই অনুবাদ=অভ্যাসপূর্বক প্রেরণা দেওয়া হয়। এই অনুবাদ প্রেরণার ৩ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে -
 
ক্ষিপ্রং পচ্যতাম্ = শীঘ্র পক্ব করো
অঙ্গ পচ্যতাম্ = প্রিয় পক্ব করো
পচ্যতামেব = অবশ্যই পক্ব করো
 
এর সাথে তুলনা করে আমরা প্রথমবার মন্ত্রের মধ্যে অনুবাদের ৩টি প্রয়োজন পেয়ে থাকি -
১. কর্মে শীঘ্রতা
২. কর্মের প্রক্রিয়ায় সংলগ্নতা
৩. কর্মের অনিবার্যতা
 
একেই যজু০ ৫।৪১ এ আবার পুনরাবৃত্তি করে নিম্নলিখিত প্রয়োজন সাধিত হয়েছে -
১. শিক্ষায় শীঘ্রতা
২. পরোপকার ক্রিয়ায় সংলগ্নতা
৩. যজ্ঞীয় কর্মসমূহের অনিবার্যতা
 
তাই, সামবেদ তথা সম্পূর্ণ বেদ পুনরুক্তি দোষ মুক্ত।