
যখন যখন শত্রুর বৃদ্ধি দেখিবে, তখন তখন তাহার ক্ষয় কামনা করিয়া অপরের শিরচ্ছেদ করিয়া বলিপ্রদান করিবে। (৬৭/১৫৪)
এখানে অপরের শিরশ্ছেদের উল্লেখ আছে শত্রুর না ।

ঐ বলিরূপ পশুতে শত্রুর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিবে, ঐ বলির ক্ষয় হইলে শত্রুর বিপদ হয়। (৬৭/১৫৫)
দেখুন পাঠক ! এতোদিন পশুকে নিজের রিপুর প্রতীক বলে এখন পশুকে শত্রুর প্রতীক বানিয়ে বলি দিচ্ছে । শত্রুকে মারার জন্য বেচারা নিরীহ পশুকে মারার কি দরকার ? সরাসরি যুদ্ধে গিয়ে মারলেই তো হয় ।

যব চূর্ণ ময় অথবা মৃন্ময় শত্রুর প্রতিকৃতি করিয়া যথোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক তাহার শিরচ্ছেদন করিয়া বলিপ্রদান করিবে।(৬৭/১৮৭-১৮৮)
… রাজা প্রথমে খড়গকে আমন্ত্রিত করিয়া শত্রুকে বলি প্রদান করিবে অথবা মহিষ বা ছাগকে শত্রু নামে আমন্ত্রিত করিয়া বলি প্রদান করিবে। (৬৭/১৪৯-১৫২)
দেখুন মজা
। খাবার দিয়ে শত্রুর মূর্তি বানিয়ে তারপর সেটার বলি দিতে হবে বা মহিষ/ছাগলকে শত্রুর নামে নিয়ে বলি দিতে হবে । যদি নরবলি মাত্রেই অপরাধীদের দণ্ড হয় এখানে তো অপরাধী বা শত্রু ধরার আগে তার নামেই পশুকে বলি দেওয়া হচ্ছে ।
বলছি মাংসের লোভে জোচ্চুরি আর কত

“ছাগল, শরভ এবং মনুষ্য ইহারা যথাক্রমে বলি, মহাবলি এবং অতিবলি নামে প্রসিদ্ধ।“ (৬৭/৫)
যথাবিধি প্রদত্ত একটি নরবলিতে দেবী সহস্র বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন, আর তিনটি নরবলিতে লক্ষ বছর তৃপ্তি লাভ করেন। (৬৭/১৯)
মনুষ্য মাংস দ্বারা কামাখ্যা দেবী এবং আমার রূপধারী ভৈরব তিন হাজার বৎসর তৃপ্তি লাভ করেন। (৬৭/২০)
নরবলি অতিবলি অর্থাৎ সব থেকে বড় বলি । আর ১ ও ৩টি নরবলিতে দেবী যথাক্রমে ১০০০ ও ১ লাখ বছর তুষ্ট থাকেন । এখানে শত্রুর উল্লেখ নেই ।

পশু-স্ত্রী, পক্ষিণী বিশেষত মনুষ্য স্ত্রীকে কখনোই বলিপ্রদান করিবে না। স্ত্রীকে বলিদান করিলে কর্তা নরকপ্রাপ্ত হয়। (৬৭/১০১)
শত্রু তো শত্রুই । এখানে আবার স্ত্রীকে বলি দেওয়া যাবে না । অর্থাৎ এখানে কিন্তু ছাড় দেওয়া হচ্ছে ।
গণহারে নরবলির উল্লেখ নিচের শ্লোকে পাওয়া যায়-
যেখানে বিশেষ গণনা না করিয়া একেবারে দলে দলে বলি প্রদান করা হয় সেইস্থলে সমুদয় দল একেবারে অর্চিত করিয়া ভক্তি পূর্বক পশু পক্ষীর স্ত্রী এবং মানুষীকে বলি দিতে পারে। (৬৭/১০২)
দেখুন তো এখানে শত্রুর উল্লেখ আছে ?

“শত্রু ভূপতির পুত্র যদি যুদ্ধে বিজিত হয় , তাহা হইলে তাঁহাকে বলি দিতে পারে।“ (৬৭/১০৬-১০৭)
এতোক্ষণ পরে দেখুন । যদি শত্রুর ছেলে হেরে যায় তবে তাকে বলি দেওয়া যাবে । এই হলো অপরাধীর দণ্ড ?

‘মনুষ্যের মস্তকের রুধির দেবীর দক্ষিণদিকে নিবেদন করিবে, ছাগের শিরোরুধির বামদিকে এবং মহিষের শিরোরুধির সম্মুখে নিবেদন করিবে এবং পক্ষীগণের শিরোরুধির বামদিকে নিবেদন করিবে এবং শরীরের শোনিত সম্মুখে নিবেদন করিবে। ’ (৬৭/১১২)
দেখুন রক্তপিয়াসী পিশাচদের লীলা ।

রাজপুত্র, অমাত্য, সচিব এবং সৌপ্তিকগণ রাজার সম্পত্তি ও বিভবের নিমিত্ত নরবলি প্রদান করিবে। (৬৭/১২২)
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট । এখানে রাজার সম্পত্তি আর বৈভবের কামনা করেও নরবলির কথা আছে । এখানে দণ্ডবিধান কোথায় গেলো ? দণ্ড দেওয়া আর ধনসম্পদ কামনা করে নরবলি কি এক কথা ?

কোনোরূপ উপদ্রব উপস্থিত হইলে অথবা যুদ্ধকালে কোনো রাজসম্পর্কীয় পুরুষ ইচ্ছানুসারে মনুষ্যবলি প্রদান করিবে। (৬৭/১২৩)
উপদ্রব হলে ও যুদ্ধের সময় রাজা ইচ্ছামত নরবলি দিবে । বলুন তো এখানে দণ্ডের উল্লেখ কোথায় আছে ?

যদি সাধক দক্ষিণহস্তে মনুষ্যের মস্তক এবং বামহস্তে রুধিরপাত্র গ্রহণ করিয়া রাত্রিজাগরন করে।(৬৭/১৭৮)
তাহা হইলে সে ইহলোকে রাজা হয় এবং অন্তে আমার লোকে গমণ করত গণদিগের অধিপতি হয়।(৬৭/ ১৭৯)
যে সাধক বলিদিগের শিরোরক্ত করদ্বয়ে মাখাইয়া দেবীর সম্মুখে ধ্যানস্থ হইয়া অবস্থান করে।(৬৭/১৮০)
সে ব্যক্তি ইহলোকে সকল কামনার বস্তু লাভ করিয়া অন্তে দেবীলোকে সম্মানিত হয়।(৬৭/১৮১)
আর এদিকে সাধক যদি নরবলি দিয়ে উপরের পদ্ধতি পালন করে তবে সে ইহলোকে রাজা হবে । অর্থাৎ এটা রাজা হওয়ার প্রসেস । এখানে অপরাধীদের দণ্ড কোথায় ? ১৮০-১৮১ শ্লোকে শিরোশক্ত আঙুলে রক্ত মাখিয়ে নাকি ধ্যান করবে ? জীবনে শুনেছেন যে দণ্ড দেওয়ার পর এই পদ্ধতিতে কখনো সাধক কোন কাজ করে ?


অতএব প্রমাণিত যে -
১। কালিকা পুরাণে নরবলি কোন দণ্ড ব্যবস্থা না ।
২। সাধারণ মানুষকেও নরবলি দেওয়া যাবে ।
৩। যুদ্ধে জেতার ইচ্ছায় নরবলি দেওয়া যাবে বা পশুবলি দেওয়া যাবে ।
৪। যুদ্ধে জিতলে বিজিতের ছেলেকে নরবলি দেওয়া যেতে পারে ।
৫। সাধক নরবলি দিয়ে রাজা হতে পারবে । এখানেও অপরাধীর দণ্ডের যুক্তি খাটবে না ।
৬। ধনসম্পদ কামনা করেও নরবলি দেওয়া যাবে । এখানে দণ্ড কোথায় ?
তাই বলবো তন্ত্র অনুযায়ী করছেন ভালো কথা, অযথা বেদের দিকে হাত বাড়ালে বা বেশী বাড়াবাড়ি করলে শাস্ত্রীয় যুক্তির ফলাফল ভালো হবে না ।
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক।।
0 মন্তব্য(গুলি)
Author
সত্যান্বেষী