https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে ত্রিত,নোধা,লোধা,কুৎস,সুপর্ণ,ভগ,সরমা, নাভাক অর্থ কী ?

Wednesday, December 6, 2023

 


আমরা সনাতন বৈদিক শাস্ত্রে বিভিন্ন পদের অর্থ নির্ণয়ে বিভিন্ন সময় ব্যত্যয় ঘটাই। বিশেষকরে বেদ শব্দার্থ নির্ণয়ে সায়ণাদি ভাষ্যকার গণের বিভিন্ন পদের ঐতিহাসিক অর্থ প্রয়োগ করা এর অন্যতম কারণ। উক্ত লিখনিতে আমরা সেইসব নির্দিষ্ট কিছু ইতিহাস পক্ষের অর্থ নির্ণয় করব নিরুক্তাদি গ্রন্থের সাহায্যে।
 
ত্রিত শব্দের অর্থ 
--------------------------------
একই প্রকার ত্রিত ঋ০ ১/১০৫ সূক্তের ঋষি হোন। এবং তা উক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রেই উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে মূল প্রশ্ন হল, মন্ত্রে পাওয়া ঋষিগণের পূর্ব থেকেই কি বেদে উক্ত নাম সমূহ পাওয়া যেত ? বা পঠিত হত ? নাকি পরবর্তীতে সংযুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে সংযুক্ত হলে মন্ত্র ঋষিপুক্ত হয়ে যায় । এবং যদি প্রথম থেকেই পঠিত হয়ে থাকে তাহলে নিত্য মন্ত্রের অনিত্যতা দর্শিত হয়ে যায়। ত্রিত সম্পর্কে যাস্ক বলেন — 
 
" ত্রিতং কুপেऽবহিতমেতত্মুক্তং প্রতিবভৌ " ( ৪/৬) ।
অর্থাৎ : কূপে পড়া ত্রিত কাছে উক্ত সূক্তের দর্শন হয়। ' ত্রিত ' শব্দের পঠন উক্ত সূক্তে হওয়ার পড়েও যাস্কের মত ত্রিতের উক্ত সূক্তের ভান হয়েছে মাত্র। সে সূক্তের প্রণেতা নয়, দ্রষ্টা মাত্র। এরূপ অবস্থায় নিত্য সূক্তের অনিত্য নাম আসার দরুন বাধিত হয় না ? 
 
আমরা পূর্বে যাস্কের মত দেখেছি। নিরুক্তকারের মতে মনুষ্যের জ্ঞান অনিত্য হয়। উক্ত অনিত্যতা কাটানোর উপায়ও মন্ত্র দ্বারা করা হয়েছে। এর জন্য যাস্ক প্রশ্ন তুলেন ; যথায় বেদমন্ত্র নিত্য হওয়া উচিত সেখানে নিত্য বেদে অনিত্য নাম কেনো পাঠ করা হল ? যাস্কের সঙ্গতির নিবারণ এক প্রকারেই করা যাবে। তাহল যদি ' ত্রিত ' শব্দ অনিত্য মানাই না হয় ! আচার্য স্বয়ং উক্ত শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রকাশ করেছেন - 
 
" ত্রিতস্তীর্ণতমো মেধবা বভুব" ( ৪/৬ )
অর্থাৎ : ত্রিত অত্যন্ত মেধাবী বোঝায়।
 
স্বয়ং বেদেই পাওয়া যায়। যথা -
" ত্রিতঃ কুপেऽর্বহিতো দেবান হবত উতয়ে " ( ঋ০ ১/১০৫/১) ।
( সংসারে ) তথা কুপে সাবধান হয়ে যাওয়া ' ত্রিত ' = মেধাবী পুরুষ রক্ষার জন্য দেবতাদের আহ্বান করেন।
 
নিরুক্ত ৪/৬ — নিত্যপক্ষে ত্রিতি নাম শুকলশব্দলক্ষণঃ কর্ম পাশৌস্ত্রিঃ স্বর্গ-নরকমর্ত্যেষু বদ্ধঃ কশ্চিত্ ক্ষেত্রজ্ঞঃ। কর্মজ্ঞানসমুচ্চয়াভাবাদপবর্গমনবাপ্নুবন্ নরকে ঘটিযন্ত্রঘটিতসংসারে বম্ভ্রম্যমাণঃ পরিদেবযাঞ্চক্রে। ( স্কন্দস্বামী)
অর্থাৎ : নিত্য পক্ষে ত্রিত অর্থাৎ শুক্ল ( পূণ্য) শব্দ দ্বারা জানা — স্বর্গ, নরক বা মর্ত লোকে তিন ৩ প্রকারের তথা বদ্ধ ক্ষেত্রজ=আত্মা, কর্ম এবং জ্ঞান একত্রিত না হওয়ার দরুণ মোক্ষ প্রাপ্ত না হয়ে নরকে - ঘটীচক্র রূপে সংসারে যত্রতত্র ভটক বিলাপ করে থাকে। 
 
♂ কুৎস ও কারু শব্দের অর্থ ♂
--------------------------------------------
নিরুক্তকার এরূপ প্রকারেই " কুৎস " তথা " কারু " শব্দের অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন —
(১) " ঋষিঃ কুৎসো ভবতি। কর্ত্তা স্তোমানামিত্যৌপমন্যবঃ। " ( ৩/১১) "
কুৎস এর অর্থ ঋষি হয়ে থাকে । কৃ = কু + ষ্টুঞ = ত্স। তিনি স্তোমো এর কর্তা হোন - এরূপ ঔপমন্যব এর মত।
(২) " কারুরহমস্মি কর্ত্তা স্তোমানাম্ " ( ৬/৬)
এখানে ' কর্তা ' শব্দের অর্থ আবিষ্কার কর্তা বা সাক্ষাৎকর্তা করা উচিত। ইতি পূর্বে আমরা ঔপমন্যবের মত দ্বারা ঋষি শব্দের অর্থ ' স্তোমান ' দেখিয়েছি। এখন তার দ্বারাই কৃত নির্বচন " কর্তা স্তোমানাম্ " এর অর্থ স্তোমোর রচয়িতা করা কদাপি সংগত হবে না। কর্তা শব্দের অর্থ সাক্ষাৎকর্তা বা আবিষ্কার কর্তা করাই অধিক যুক্তিযুক্ত । 
 
♂সুপর্ণ শব্দের অর্থ♂
----------------------------------
" একঃ সুপর্ণঃ স সমুদ্রমা বিবেশ স ইদং বিশ্বং ভুবং বি চষ্টে। তং পাকেন মনসাऽপশ্যমন্তিতস্তং মাতারেল্লহি স ও রেল্লহি মাতরম ১ ∥ "( ঋ০ ১০/১১৪/৪)
নিরুক্তকারের মতে সুপর্ণ ( পাখি) এর অভিপ্রায় ইন্দ্র তথা বজ্র অর্থে হয় । উপরুক্ত মন্ত্রের অর্থ নিম্নরূপ -
এক পাখি ছিল। সে সমুদ্র তথা আকাশে প্রবেশ করে যায়। পুরো ব্রহ্মাণ্ডকে অবলক্ষন করে। তা আমি আমার সরল মনে আশ্চর্য হয়ে দেখেছি। 
 
এখানের নিরুক্তকার লিখেছেন — 
 
একঃ সহায়বান্। অসহায়ো যঃ সর্বকার্যেশু সহায়ান্তরং নাপেক্ষত ইত্যর্থঃ। কোऽসৌ ? সুপর্ণো মধ্যমস্থানঃ। স সমুদ্রমন্তরিক্ষনামৈতত্। তদাবিবেশ আবিশাতি। আবিশ্য চ সঃ স এব ইদং বিশ্বং সর্বম। কি পুনস্তত ? ভুবনং ভুতজাতং বিচষ্টে পশ্যতিকর্মাযম। অভিপশ্যত্যনুগ্রাহ্মতয়া। তমেনমেবংরূপ পাকেন মনসা পরিপক্বেন মনসাऽহমপশ্যং দুরস্থমপি সন্তমন্তিতোऽন্তিকে সত্রিধৌ। তং চ মাতা নির্মাত্রী ওদকানাং মাধ্যমিকা বাক্। রেল্লহি লিহ আস্বাদন ইত্যস্য রূপম। আস্বাদনেন অত্রৌপজীবনমাত্রং লক্ষ্যতে। বৃষ্টিপ্রদানকর্মণি সাহায্যেনো - পজীবতীত্যর্থঃ স ও রেল্লহি মাতরম্। ও ইতি পদপূরণঃ। স মাতরং তামেব মাধ্যমিকাং বাচমুপজীবতি নান্যত কিঞ্চিত্।
অর্থাৎ - মধ্যমস্থানে বিদ্যুৎ, যার কারো সহায়তা অপেক্ষা নেই। অন্তরিক্ষে প্রবেশ করে এই ভুলোকের ভূতজাতকে দেখে। উক্ত সেই দুরস্তকে আমি পরিপক্ব মনের সমীপে দেখি। জলের মাতা মাধ্যমিক কড়ক উক্ত সেই বিদ্যুৎকে আশ্রয় দেন এবং সেই বিদ্যুৎ মাধ্যমিক কড়কের আশ্রয় নেয়।
এখানে বলতে অর্থদ্রষ্টা ঋষির আখ্যানের মাধ্যমে মন্ত্রবিষয়ে ব্যাখ্যায় অর্থ উপলব্ধি তুলনা মূলক সহজ হয়।
এখানেও নিরুক্তকার নিরুক্ত : ১০/ ১২ এতে অর্থ এর উদ্ধৃতি স্বরূপ বর্ণনা করে থাকেন। মন্ত্রাংশের শেষ ভাগের পুনরায় অর্থ করি তথা – 
 
সে ( সুপর্ণ) তার নিজ মা কে চুম্বন করতেছে এবং তাঁর মা তাকে চুম্বন করতেছে।
মন্ত্রে বজ্র চমকানো এবং কড়ককে চুম্বনের অত্যন্ত সুন্দর আলঙ্কারিক অর্থ করা হয়েছে।
 
♂ সরমা শব্দের অর্থ ♂
------------------------------
১১/২৫ " সরমা " সম্বন্ধে পাঠ মধ্যম বাক্ অর্থাৎ বজ্রের কড়ক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সরমা এর সংবাদ ঋ০ ১০/১০৮/১ এতে পাওয়া যায়। উক্ত মন্ত্রের অর্থ নিরুক্তকার এরূপ অর্থে করেছেন যথা -
" দেবশুনীন্দ্রেণ প্রহিতা পণিভিরসুরৈঃ সমুদে। ইত্যাখ্যানম্ "।
অর্থাৎ - ইন্দ্রের পাঠানো কুকুরী ( সরমা) এর পণি - জাতি অসুরের দ্বারা সংবাদ পাওয়া তা আখ্যান মাত্র।
বজ্রের কড়ককে কুতিয়া এর ভাজ স্বরূপ এরূপ বর্ণন স্পষ্টত আখ্যান তথা অলঙ্কার মাত্র। আখ্যান - সময় তথা ঐতিহাসিক পক্ষ এই অলঙ্কার অর্থের পরিবর্তে বাস্তবিক অর্থ তথা সত্যিকারের কুতিয়া অর্থে কল্পনা করে। সামাজিক পক্ষান্তরে ' সরমা ' রাজদূত অর্থাৎ রাজাজ্ঞা বলে অভিহিত হয়। আলঙ্করিক অর্থে তারা রাক্ষসদের থেকে ধন কেড়ে নিয়ে দেবতাদের ফিরিয়ে দেয়। 
 
আকাশে জমে থাকা পানি বজ্রের কড়ক ( তথা শব্দ) এর পড়েই বর্ষণ রূপে ভূমিষ্ট হয়। যা দেবতাদের ধন ছিল যা কৃপন বাদল - বৃত্র তথা মেঘ জমা করে রেখেছিল। 
 
♂ লোধা তথা নোধা শব্দের অর্থ ♂
----------------------------------------------
এই প্রকরণে পঠিত " প্রস্কণ্ব " শব্দের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে ঐতিহাসিক পক্ষগণের মত বিবেচনা করা হবে।
" নোধা ঋষির্ভবতি নবনং দধাতি। "(৪/১৬)।
" ঋষির্নদো ভবতি নদতেঃ স্তুতিকর্মণঃ " (৫/২)।
অর্থাৎ নোধা একজন ঋষি হোন । কারণ তিনি স্তুতিকে ধারণ করেন। ' তদ ' একজন ঋষি হোন। এই শব্দের ব্যুৎপত্তি স্তুত্যর্থক ' নদ ' ধাতু দ্বারা হয়। উক্ত স্থলে নোধা তথা নদ কে ঋষি বিশেষ মানা স্পষ্টত ভুল হয় কারণ নিরুক্তের উক্ত প্রকরণে বর্তমানকালীন " ভবতি " ক্রিয়া প্রযুক্ত হয়। যা বর্ণিত নাম গুলোকে সামান্য অর্থে হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। যাস্কের যেখানে ইতিহাস পক্ষ করার প্রয়োজন দেখা দেয়, সেখানে সে সর্বদা " বভুব " আদি ভূতবাচক ক্রিয়ার প্রয়োগ করেন। এবং যেখানে বিশুদ্ধ নিরুক্ত অনুযায়ী অর্থ করে সামান্য বাচক অর্থ দেখানো হয়, সেখানে সর্বদা " ভবতি " এর প্রয়োগ হয়ে থাকে। যাস্কের উক্ত শৈলী সম্বন্ধে নিরুক্তের কোন সাধারণ পাঠক পর্যন্ত অপরিচিত হওয়ার কথা নয়।
লোধং নয়ন্তি পশুং মন্যমানাঃ। ( ঋ০ ৩/৫৩/২৩)
বেদের উক্ত মন্ত্রের অর্থ যাস্ক নিরুক্তে এরূপ করেন। যথা : -
" ন লুব্ধমৃষিং নয়ন্তি পশুং মন্যমানাংঃ "(৪/১৪) ।
লুব্ধ ঋষিকে পশু মনে করে ( সৈনিকদের বেহুশ করে) নিয়ে যান নি।
এখানে ' লোধ ' এর অর্থ আচার্য লুব্ধ করেছেন, অর্থাৎ স্তুতিলুব্ধঃ, তপোলুব্ধ। এই শব্দ যাস্কের মতে ঋষিদের মত পর্যায় হয়। যদি কোন নাম - বিশেষ অভিপ্রায়ে হত তাহলে লোধের স্থানে লুব্ধের প্রয়োগ করা হত না।
তাছাড়া বেদে লোধ নামক কোন ঋষির নামও পাওয়া যায় না। তার জন্য ' লোধ ' শব্দও যাস্কের দৃষ্টিতে সামান্য বাচক নাম প্রতীত হয়। কোন বিশেষ ঋষির নাম নয়। 
 
♂ নাভাক শব্দের অর্থ ♂
-------------------------------------
নিরুক্ত ১০/৫ এ " নাভাক " শব্দ সম্বন্ধে নিরুক্তকার লিখেছেন —
" ঋষির্নাভাকো বভুব "
নাভাক এক ঋষি হোন।
যাস্ক উক্ত শব্দের নির্বচন করতেন না, কারণ স্বয়ং বেদে বলা হয়েছে " নভন্তামন্যকে সমে "। এর অর্থ যাস্ক এরূপ করেছেন। —
" মা ভুবত্রন্যকে সর্বে, যে তো দ্বিষন্তি দুর্ধিয়ঃ, পাপধিয়ঃ, পাপসঙ্কল্পাঃ। "
বিদ্বেষ করা লোক যেন না থাকে। দুষ্ট পাপ-বুদ্ধি, পাপ-সঙ্কল্প সম্পন্ন লোক যারা থাকলে শুভ বুদ্ধির উদয় হয় না, তাদেরকেই নাভাক বলে।
যাস্ক আরো বলেন —
" এষ এব ভবতি "
অর্থাৎ : তিনিই (পরমেশ্বর) সর্বদা থাকেন।
বেদের " নাভাক " শব্দের অর্থ স্বয়ং বেদে করা হয়েছে। আর সেই অর্থকেই যাস্ক বিস্তৃত করেন। ঐতিহাসিকদের মতানুসারে সে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষ হয়ে থাকে। বেদে তা " ঋষি " অর্থে পাওয়া যায়। ঋষি তাকেই বলে যার উপস্থিতিতে দুরাচারীদের সেখানে থাকা অসম্ভব হয়ে যায়।
 
♂ ভগ শব্দের অর্থ ♂
--------------------------------
নিরুক্ত ১২/১৪ " ভগ " সম্বন্ধে সূর্যের উদয় হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত বলা হয়েছে।
" অন্ধো ভগ ইত্যাহুরনুৎসৃসো ন দৃশ্যতে প্রাশিত্রমস্যাক্ষিণী নির্জঘানেতি চ ব্রাহ্মণম্ "
ভগ অন্ধ ছিল। অপ্রকাশিত হওয়ার দরুন সে দেখত না কিছু। ব্রাহ্মণ গণ বলেন — প্রাশিত্র তার চুখ ফুটিয়ে দেয়।
নিরুক্তকার মত ঐতিহাসিক পক্ষ থেকে কতটুকু পার্থক্য রাখে তা উক্ত ব্যাখ্যায় স্পষ্ট হয়। যাস্কের মতে তা সূর্য হয় যা এখনো উদিত হয় নি। আলঙ্কারিক অর্থ অনুযায়ী সূর্যের প্রাকঃ চোখ ফোটার সময়ের অবস্থা। কিন্তু ঐতিহাসিক পক্ষের মতে সে এক দেবতা যার চোখ ফুটেছে ।
 
সমাপ্তম্
 
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্