https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বৃত্র, বিশ্বকর্মা, সরণ্যু, মিত্রবরুণ বশিষ্ঠ তথা উর্বশী পদের ঐতিহাসিক আক্ষেপ নিবারণ

Wednesday, December 6, 2023

 


বৃত্রের ইতিহাস
----------------------------
নিরুক্তের প্রসিদ্ধ " তৎকো বৃত্রঃ " স্থলে যেখানে ঐতিহাসিক পক্ষের সাথে নিরুক্ত পক্ষের স্পষ্ট বিরোধ দেখা যায়। এছাড়াও নিরুক্তকার ঐতিহাসিক পক্ষের উদ্ভব নিয়ে অত্যন্ত কঠোর ভাবপ্রকাশ করা প্রতীত হয়। এবিষয়ে নিরুক্তকার বলেন —
 
" তৎকো বৃত্রঃ ? মেঘ ইতি নিরুক্তাঃ, ত্বাষ্টোऽসুর ইত্যৈতিহাসিকাঃ । অপাং চ জ্যোতিষশ্চ মিশ্রীভাবকর্মণো বর্ষকর্ম জায়তে তত্রোপমার্থেন যুদ্ধবর্ণা ভবন্তি। অহিবত্তু খলু মন্ত্রবর্ণা ব্রাহ্মণবাদাশ্চ। বিবৃদ্ধয়া শরীরস্য নিবারয়াঞ্চকার। তস্মিন্ হতে প্রসস্যন্দির আপঃ। "(২/১৬)
বৃত্র কে ? নিরুক্তের মতে মেঘ। ঐতিহাসিকদের মতে ত্বষ্টার পুত্র অসুর বিশেষ। 
 
নিরুক্ত এবং ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণের মধ্যে যে মতভেদ আছে তা একটি উদাহরণ দ্বারাই সুস্পষ্ট হয়ে গেল। যা ঐতিহাসিকের মতে কোন ব্যক্তির নাম, সেটা নিরুক্তের মতে সামান্য সংজ্ঞা । যার এখনো বিদ্যমান আছে এবং ভবিষ্যৎ এও থাকবে। নিরুক্তের দৃষ্টিতে মন্ত্র নিত্য হয়। সেখানে অনিত্য ঘটনার বর্ণন থাকা অসম্ভব। ঐতিহাসিক পক্ষ কি করে বিকশিত হয় এ বিষয়ে নিরুক্তকার বলেন —
 
জল (মেঘ) তথা জ্যোতি (বজ্র) এর সংঘাতে বর্ষা হয়। ( এখানে সংঘর্ষ তথা গর্জন আদি ক্রিয়াও হয়)। এর বর্ণন আলঙ্কারিক ভাষায় যুদ্ধের কাহিনী মত বর্ণন করা হয়েছে। মন্ত্রের বর্ণন তথা ব্রাহ্মণের অর্থবাদের প্রকরণে ' অহি ' শব্দ পাওয়া যায়। 
 
" অহি " শব্দ নিঘণ্টুতে মেঘ নামে পঠিত হয়। এছাড়া এর দ্বিতীয় অর্থ সাপ হয় । এবিষয়ে যাস্ক বলেন — 
 
" তদভিবাদিন্যেষর্গ ভবতি "। ২/১৭ 
" দাসপত্নীরহিগোপা অতিষ্ঠন্নিরুদ্ধা আপঃ পণিনেব গাবঃ। অপাং বিলমপিহিতং যদাসীদ বৃত্রং জঘন্বাঁ অপ তদুবার।। " ১ ( ঋ০ ১/৩২/১১)
দাসপত্নীঃ দাসাধিপত্ন্য। দাসো দস্যতেঃ। উপদাসয়তি কর্মাণি। অহিগোপা আতিষ্টত্নাহিতা গুসাঃ। অহিঃ অয়নাত্, এতি অন্তরিক্ষে। অয়মপীতরোऽহিরেতস্নাদেব। নির্হ্নসিতোপসর্গঃ। আহন্তীতি। নিরুদ্ধা আপঃ পণিনেব গাবঃ। পণির্বণিগ ভবতি। পণিঃ পণনাত্। বণিক পণ্যং নেনেক্তিং অপাং বিলমপিহিতং যদাসীত্। বিলং ভরং ভবতি বিভর্তেঃ। বৃত্রং জঘ্নিবান অপববার তত্। বৃত্রো বৃণোতের্বা, বর্ততের্বা, বর্ধতের্বা। যদবৃণোত তদ্ বৃত্রস্য বৃত্রত্বমিতি বিজ্ঞায়তে। যদবর্ত্তত তদ্ বৃত্রস্য বৃত্রত্বমিতি বিজ্ঞায়তে। যদবর্ধত তদ বৃত্রস্য বৃত্রত্বমিতি বিজ্ঞায়তে "।
অর্থাৎ - জলধারা কর্মনাশক অহির আধিপত্যের মধ্যে এসে আটকে ছিল। (ইন্দ্র) বৃত্রকে মেরে জলধারার আটকে যাওয়া রাস্তা খুলে দেন। 
 
দাসঃ কর্মকরঃ শ্রান্ত উপক্ষীণশক্তিঃ, তং বীতশ্রমব্যাবৃত্তি - করণেন পালয়ন্তীতি দাসপত্ন্যঃ। অথবা দাসো মেঘঃ, তস্য পালয়িত্ন্যঃ, তাভিহিং মেঘো ভবতি, তৎকৃতং তস্য মেঘত্বমিত্যর্থঃ। অহিগোপাঃ - অহিমেঘো গোপায়িতা যাসাং তাঃ। অতিষ্টন তিষ্টন্তি, তেন নিরুদ্ধা আপঃ পণিনেব বণিজেব বিক্রয়ার্থে বীথ্যাদৌ গাবঃ, তাসামপাং নির্গমবিলমপিহিতং ঘট্টিতং যদাসীত্, বৃত্রং মেঘং জঘন্বান্, অপ তদুবার অপাবৃতবান্ তদিন্দ্রঃ। ( স্কন্দস্বামী )
অর্থাৎ - দাসপত্নী = দাস অথবা কাজ করেন যে, পরিশ্রান্ত তথা যার শক্তি ক্ষীণ হয়ে গেছে। তার সব দূর্বলতা দূর করে পালনকারী পরমেশ্বর।। অথবা দাস নাম মেঘ অর্থে হয় এবং তার রক্ষাকারী ( জল)। তাঁর থেকেই ত মেঘ তৌরি হয় তথা তাঁর থেকেই মেঘের মেঘত্ব আসে। অহিগোপাঃ = অহি মেঘের নাম হয়। সে যার রক্ষক এরূপ জল মেঘ দ্বারা আটকে থাকে, যেরূপ গোরু বিক্রেতা বাজারে গোরুকে বিক্রি করার জন্য গোরুকে বেধে রাখে। সেই জলের নির্গম স্থল বন্ধ হয়ে ছিল। ইন্দ্র বৃত্রকে মেরে সেই বাধা স্থানের রাস্তা খুলে দেন। 
 
উক্ত রসময় ঘটনা বেদে আলঙ্কারিক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এরূপ বর্ণন শৈলীর নাম, আমরা পূর্বে দেখেছি তাহল আখ্যান। আখ্যানে " অহি " শব্দ পাওয়া যায়। ঋষিদের প্রীতির জন্য এখানে শব্দে অতিতকাল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যক্তিবাচক কথান্তরে রূপ দেওয়া হয়েছে। বেদের উক্ত শৈলীকে ব্রাহ্মণ গ্রন্থ আরো বিস্তারিত করেছে। তথা বেদে মূল বর্ণন করা হয়েছে এবং ব্রাহ্মণ গ্রন্থে পরবর্তীতে অর্থবাদ করা হয়েছে। সেখানে বৃত্রের বিষয়ে বলা হয়েছে — যদবৃণোত, যদবর্ত্তত, যদবর্ধত = সে ঢুকল ; এটা বর্তমান পদ হয়। সে বড় হয়, " তদ্ বৃত্রস্য বৃত্রত্বম " এভাবেই সে বৃত্র হয়েছে। এসব নির্বচন ভূতবাচক হয়। ঐতিহাসিক পক্ষগণ এর থেকেও আরো একধাপ উপড়ে যায়। তারা এই বর্ণনকে " উপমার্থ " তথা আলঙ্কারিক না মেনে বাস্তবিক অর্থে শব্দার্থ করে। মন্ত্রে তথা ব্রাহ্মণ গ্রন্থে অহি বলতে আলঙ্কারিক অর্থই প্রকাশ পেত। ইতিহাস আদিতে তা অসুর বিশেষ হয়ে যায়। ঐতিহাসিক পক্ষগণের উদ্ভবের ইতিহাস এরূপ ভাবেই উল্লেখিত পাওয়া যায়। নিরুক্তকার ব্রাহ্মণের ভূতকালবাচক অর্থ ত্যাগ করেন। ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বলা হয়েছে — 
 
" যদবৃণোত্ তদ্ বৃত্রস্য বৃত্রস্বমিতি, যদবর্ত্তত তদ বৃত্রস্য বৃত্রত্বমিতি, যদবর্ধত তদ্ বৃত্রস্য বৃত্রত্বমিতি। " 
 
নিরুক্তকার যাস্ক বলেছেন —
" বৃত্রো বৃণোতেবা বর্ত্ততের্বা, বর্ধতের্বা। " 
আদিকাল থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি হয়। সে থেকে নিত্য মন্ত্রে অনিত্য ঘটনার প্রবেশ ঘটে। নিরুক্তকার তাই নির্বচন করেছেন, এবং মন্ত্রের অর্থের আশয় বদলে পুনরায় ত্রিকালস্থ নিত্য করেছেন।
 
বিশ্বকর্মা
--------------------
 
" বিশ্বকর্মা " শব্দের অর্থ নিরুক্ত ১০/২৫ সূর্য = আত্মা করে পরবর্তীতে লিখেন—
 
" তত্রেতিহাসমাচক্ষতে। বিশ্বকর্মা ভৌবনঃ সর্বমেধে সর্বাণি ভুতানি জুহবাঞ্চকার। তদভিবাদিন্যেষর্গ ভবতি"
" য হমা বিশ্বা ভুবনানি জুহ্বদৃষ্টির্হোতা ন্যসীদত পিতা নঃ। স আশিষা দ্রবিণমিচ্ছমানঃ প্রথমচ্ছদবরাঁ আ বিবেশ " ১ । ( ঋ০ ১০/৮১/১)।
 
স্কন্দস্বামী উক্ত মন্ত্রের আধিদৈবিক অর্থ এই প্রকারে করেন —
" য ইমা বিশ্বা। যো বিশ্বকর্মা মধ্যম ইমানি সর্বাণি ভূবনানি। ভূবনমিত্যুদকনাম উসকাণু বৃষ্টিলক্ষণানি জুহ্বত প্রক্ষিপত। ঋষিদ্রষ্টা লোকপালত্বাত্ কৃতাকৃতস্য লক্ষণঃ। হোতা আহ্বাতা মেঘানাম। আহ্বাতব্যো বা। ন্যসীদত নিষণ্ণোऽতরিক্ষে। পিতা পিতৃস্থানীয়ঃ পালয়িতা বা নোऽস্মাকম্। স আশিষা জনস্য প্রার্থনপ্যা দ্রবিণং সস্যলক্ষণং ধনমিচ্ছন্। প্রথমচ্ছত্ উৎকৃষ্টং ছাদয়িত্বা মেঘৈরন্তরিক্ষস্যৌদকৈর্বা ভুমেঃ। অবরান্ বৃষ্টিস্থানাদর্বাগ্বর্তিনঃ প্রদেশানন্তরিক্ষদেশাংশ্চ। আবিবেশ বৃষ্ট্যা ব্যাসবানিত্যর্থঃ।
সেই পালক, দ্রষ্টা তথা মেঘের আহ্বান কর্তা, অন্তরিক্ষে স্থিত বিদ্যুৎ জলকে অর্থাৎ বৃষ্টিকে বর্ষণ করেন। সেই সব লোকের প্রার্থনা দ্বারা প্রেরিত হয়ে আকাশকে মেঘ তথা জলের দ্বারা আচ্ছাদিত হয়ে তিনি পৃথিবী এবং আকাশকে বর্ষণ দ্বারা পরিপূর্ণ করেন। 
 
আধ্যাত্মিক পক্ষ এরূপ প্রকার হয় —
 
" যো বিশ্বকর্মা ক্ষেত্রজঃ প্রলয়কালে ইমানি সর্বাণি ভুতজাতানি প্রক্ষিপন। কব্ ? আত্মনি। কুত এতন ? " ব্রহ্ম বৈ স্বয়ম্ভু তপোऽতব্যত তদৈক্ষত ন বৈ তপস্যান্ত্যমস্তি ( নান্যমস্মি) হন্তাহং ভুতেষ্বাত্মানং জুহবানি ভুতানি চাত্মনি " ইতি শ্রুবেঃ সর্বভুতান্যাত্মনি প্রলয়ং নয়ত্রিত্যর্থঃ। ঋষিদ্রষ্টা বিশ্বস্য। হোতা চাত্মনি সর্বভুতানি। ন্যসীদত্ নিষণ্ণঃ প্রলীন আত্মনাপি প্রাণিন কারণাত্মনাবস্থিত ইত্যর্থঃ । পিতা উৎপাদয়িতা নোऽস্মাকম্। স আশিষা আশীঃ শব্দেনাত্রাশীঃ ফলত্বাদতীতায়াং সৃষ্টৌ যৎকৃতং কর্মানুপভুক্তফলং তদুচ্যতে। হেতৌ তৃতীয়া। তেন হেতুনা। ফলভোগার্থমিত্যর্থঃ। দ্রবিণং ধনং পুনঃ সৃষ্টিরূপমিচ্ছন্। উৎকৃষ্ট ছাদয়িতা সর্বস্য। বিকারৈরবরান্ অর্বাগ্বর্তিনঃ। বর্তমানাং সৃষ্টৌ যেऽপিহিতাস্তানিত্যর্থঃ। আবিবেশ স্বত উৎপাদনেন ব্যাসবানিত্যর্থঃ।
তিনি আমাদের পিতা, সর্বদ্রষ্টা, প্রলয় কালের সময় সর্বভূতকে নিজের মধ্যে ধারণকারী পরমেশ্বর। তিনি সর্বচ্ছাদক ( প্রাণীদের মধ্যে) পূর্বজন্মের কৃত কর্মের ফলের ফলদাতা তথা সৃষ্টিকৃত ধনের কামনা করি এবং সৃষ্টির প্রারম্ভ থেকে জীবাত্মায় অবস্থিত সেই স্বয়ম্ভু। 
 
এবিষয়ে ঐতিহাসিকগণ বলেন — ভূবনের পূত্র বিশ্বকর্মা যর্বমেধ যজ্ঞ সব বস্তুকে আহুতি দেওয়া হয়েছে। এতে অন্তত নিজেকেও আহুতি দেয়। এই কথান্তর বলার জন্য এই ঋচা — 
 
যে তত্ত্বদ্রষ্টা যজমান হয়ে এই সমস্ত ভুতজাতকে ( যজ্ঞে) আহুতি দিয়ে থাকে। সে আমাদের পিতা ( আমাদের হৃদমাঝে) বিরাজিত থাকে। সেই বিরাট আত্মা আমাদের শুভ সংকল্প দ্বারা ( অন্যদের জন্য) ধনধান্য কামনা করে নিজের থেকে ছোট বস্তুতেও প্রবেশ করে থাকেন। 
 
" তস্যোত্তরা ভুয়সে নির্বচম্লল্ললনায় " —একে আরো স্পষ্ট করার জন্য এখানে আরো কিছু মন্ত্র উদ্ধৃতি করা হবে" — 
 
" বিশ্বকর্মন হবিষা বাবৃধানঃ স্বয়ং যজস্ব পৃথিবীমূত দ্যাম্। মুদ্মন্ত্বন্যে অভিতো জনাস ইহাস্মাক মধবা সুরিরস্তু।। " ১ ( ঋ০ ১০/৮১/৬) ।
হে যজমান ! পৃথিবী তথা দ্যুলোক উভয়কে নিজ ভোগ এবং তার আকাঙ্ক্ষা কে যজ্ঞে হবি হিসেবে প্রদান কর। দ্বিতীয়ত, এটা দেখে অন্যান্যরাও যেন মুগ্ধ হয়ে যায়। এই যজ্ঞের দ্বারা যেন আমাদের আত্মা সচেতন হয়। 
 
উক্ত মন্ত্রে ' বিশ্বকর্মা ' পদের অর্থ আত্মা এবং পরমাত্মা উভয় পক্ষেই হয়ে থাকে। বিশ্বকর্মা অর্থাৎ সেই আত্মা হয় যে সম্পূর্ণ যজ্ঞের কাজ করে থাকে। তার শরীরের প্রতিটি অণু যেন যজ্ঞে অর্পণ করে। তাকেই ঋষি বলে থাকে। অনেকের জন্য তিনিই বাস্তবে পিতা স্বরূপ। তাঁর হৃদয় থেকে সর্বদা সর্বভূতের জন্য আশীর্বাদ নির্গত হয়। সে সর্বদা সবার মঙ্গলকামনা কারী। সে তাঁর থেকেও ছোট ব্যক্তিদের সম মর্যাদায় আচরণ করে। সে তাঁর নিজের জন্য কিছুই করার ইচ্ছুক নয়। অন্যের সাধন করাই তার জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। যদিও ঈশ্বর দ্বারা এহেন বৃত্তি স্বাভাবিক মানা হয় ; সর্বকর্তার কর্মশক্তির সাধন শক্তি রূপে সেই পরমেশ্বর স্বয়ং সব কার্যের কর্মনাশক হোন। এই ব্রহ্মাণ্ড তাঁর ঐ কর্মযজ্ঞের ফল। দ্যুলোক এবং এই পৃথিবী উভয় সেই যজ্ঞের সামগ্রী। আত্মার হবির কারণে এই যজ্ঞ চেতন যজ্ঞ হয়ে থাকে । এখন সেই আত্মা জীব বিশেষের হোক বা পরমেশ্বর নিজেই। সেই আত্মার উত্তম কর্মের মধ্যেই এই যজ্ঞের যশ লুকিয়ে আছে। এমন উত্তম আত্মত্যাগ দ্বারা কৃত যজ্ঞের ফলে স্বয়ং বিরোধীরাও প্রশংসা করতে বাধ্য হয়। আর যারা প্রতিপক্ষ নয় তাদের বিষয়ে ত প্রশ্নই উঠে না। সাধারণ মনুষ্য নিজেকে পরমেশ্বর কিংবা ঋষির সম মর্যাদাশালী দাবী করতে চায়। ঋষি বলেন — আমি সর্বদা প্রভুর প্রতি সমর্পিত থাকি। সুতরাং ঋষি এই বিশ্বকর্ম সূক্ত সাক্ষাৎকার করেন মাত্র। সেখানে আগত ভুবনের " আহুতি " পদ নিয়েই যত সমস্যা। ঋষি তার নাম উক্ত সূক্তে মাধ্যমে " বিশ্বকর্মা ভৌবন " রেখে দেন। ইতিহাসকারক গণ তা কোন পুরুষ বিশেষ ভৌতিক অগ্নিতে প্রবেশ করা মনে করে থাকেন । যা তাদের অজ্ঞানতার প্রতিফলন ছিল। " সর্বমেঘ " – সর্বস্ব ত্যাগ করা বোঝায়। আত্মার আহুতি দ্বারা সমস্ত জীবনকে অন্যের হিতের জন্য করে দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য। 
 
আধিদৈবিক অর্থে তা সূর্যের গতি বোঝায়। সে এই বিশ্বযজ্ঞে পৃথিবী তথা অন্য গ্রহ উপগ্রহকে আহুতি দিয়েও সন্তুষ্ট হতে পাড়তেছে না। বিরোধীরা নিজের সর্বত্র বিশাল অগ্নি কুণ্ডে ' স্বাহা ' বলে আহুতি দিচ্ছে । 
 
সরণ্যু
-----------
 
ঐতিহাসিক পক্ষের আরো একটি জনপ্রিয় ইতিহাস হল বেদের " সরণ্যু " সম্পর্কে। এবিষয়ে যাস্ক তার নিরুক্তের এবিষয়ে ১২/১০ এ লিখেন — 
 
" তেত্রেতিহাসমাচক্ষতে — ত্বাষ্টী মরণ্যৃর্বিবস্বত আদিত্যাদ যমৌ মিথুনৌ জনয়াঞ্চকার । সা সবর্ণামন্যাং প্রতিনিধাযাশ্বং রূপং কৃত্বা প্রদুদ্রাব। স বিবস্বানাদিত্য আশ্বমেব রূপং কৃত্বা তামনুসৃত্য সম্বভুব। ততোऽশ্বিনৌ জজ্ঞাতে, সবর্ণায়াং মনুঃ। "
এবিষয়ে ইতিহাসকারগণ বলেন — ত্বষ্টার পুত্রী সরণ্যু বিবম্বান্ আদিত্য থেকে দুই যমজ সন্তান - যম এবং যমী জন্ম দেন। সে তার স্ত্রী সবর্ণা, আরেক স্ত্রীকে নিজ স্থানে রেখে তথা ঘোড়ার রূপ ধারণ করে দৌড়ে চলে যায়। বিবস্বন আদিত্যও ঘোড়ার রূপ ধারণ করে তার অনুসরণ করেন এবং সংগম করে। এরদ্বারা সবর্ণা দ্বারা অশ্বী তথা মনুর জন্ম হয়।
 
" তদবিভাদিন্যেষর্গ ভবতি "
এবিষয়ে কথা উক্ত ঋকে পাওয়া যায় —
" ত্বষ্টা দুহিত্রে বহতুং কৃণোতীতীদং বিশ্বং ভুবনং সমেতি। যমস্য মাতা পর্যুহ্মমানা মহো জায়া বিবস্বতো ননাশ "। ( ঋ০ ১০/১৭/১)
ত্বষ্টা পুত্রীকে বিবাহ করেন — এটা শুনে সম্পূর্ণ ভূতজাতী একত্রিত হয়ে যায়। যমের মাতা মহান বিবস্বানের স্ত্রী বিবাহ হইতে না হইতে মারা জান। 
 
নিরুক্তকার মন্ত্রের উক্ত ঐতিহাসিক অর্থ করে পরবর্তীতে নিজের মত পোষণ করেন।
" রাত্রিরাদিত্যস্য (জায়া) আদিত্যোদয়েऽন্তর্ধীযতে "
আদিত্যের স্ত্রী রাত্রি আদিত্যের উদয় হতে না হতে অদৃশ্য হয়ে যায়। এতে জানা যায় যে নিরুক্তকারের মতে সরণ্যু রাত্রির অপরনাম হয়। উপরে বলা হয়েছে : সরণ্যু = সরণাত। সরণ্যু = গতিশীল ( রাত্রি) । বেদোক্ত আখ্যান কেবল রূপক কাহিনী বর্ণন করে। রাত্রি ত্বষ্টার পুত্রী হয় । ত্বষ্টা অগ্নি হয়, যে রাতের দেবতা। সে তার কন্যার বিবাহ উদীয়মান ( বিবস্বান) সূর্যের সাথে দিতেছে। এই সমাচারে সারা বিশ্বে খুশির আলোড়ন বয়ে যায়।
 
নৈরুক্তপক্ষে ত্বস্যামৃচি ত্বষ্টা মধ্যমস্তমোভাগস্তস্য দুহিতাঃ উষাঃ । তেন রাত্রিরূপেণ স্বৈরুদয়ে ( সূর্যোদয়ে) জন্যমানত্বাত্তস্যা বহনং প্রাপণমনুপ্রবেশ আদিত্যে তং স মধ্যমস্ত্বষ্টা রাত্রিরুপ আত্মাপগমনেন করোতি। এতেন কারণেনেদং সর্ব ভুতজাতং সমেতি সংগচ্ছতে স্বৈঃ কর্মভিঃ সম্বধ্যতে। ডদিতায়াং হ্মুপসি অপৈতীদানীং তপ উদেত্যাদিত্য ইত্যেবং মন্যমানাঃ সর্বপ্রাণিন স্বকর্মাণি কর্ত্তু প্রারভন্ত ইত্যর্থঃ। সাপি,যম আদিত্যস্তস্য মাতা সাহচর্যাদ্রহরণাদ্বা মাতৃভুতাঃ। তং প্রতি পর্যুহ্মমানা চ ন কেবলং মাতৃতুতা। কিম্ নহি ? মহো মহতো বিবস্বতোऽভিগমনসামান্যাজায়াভুতা। বিশ্বরূপেণ ননাশ নশ্যতি। ওদ্যত্যাদিত্যে ত্নীয়তে তদাত্মকৈবেত্যর্থঃ। অভিসমাগচ্ছতীতি স্বৈঃ কর্মভিরিতি বাক্যশেষঃ রাত্রিরা - দিত্যস্যেতি চ রাত্রিশব্দেন রাত্রেরেকদেশত্বাদুষাঃ এবোচ্যতে সম্বন্ধত্বাত্। সা চ দেবধর্মেণাদিত্যস্য মাতা। ( স্কন্দস্বামী : ১২/১১) ।
নিরুক্ত পক্ষে উক্ত ঋকের ' ত্বষ্টা ' মধ্য লোকের তপো ভাগের নাম হয়। উষা তার মেয়ে হয়। সূর্যের উদয় হতেই উষা রাত্রি রূপ ত্বষ্টা দ্বারা উৎপন্ন হয়। ত্বষ্টা তার বোন এর অনুপ্রবেশ আদিত্যে করে দেয়। এরদ্বারা সর্ব প্রাণীজগত নিজ নিজ কার্য করতে শুরু করে।……. যমও আদিত্য অর্থে হয়। সে তার মা হয় — সহচর্যের এই রস হরণের কারণ। সে কেবল মা ই নয়, স্ত্রীও হয়।…… নষ্ট হয়ে যাওয়ার অর্থ হল, তার সাথে একীভূত হয়ে তাতেই লীন হয়ে যাওয়া।……. রাত্রির অভিপ্রায় রাত্রির একটি অংশ উষা হয়। সে দেব - ধর্ম আদিত্যের মাতা।
 
মিত্রবরুণ বশিষ্ঠ তথা উর্বশী
---------------------------------------------
নিরুক্ত ৫/১৩ তে উর্বশী শব্দের ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এবিষয়ে নিরুক্তকার বলেন —
" তস্যা দর্শানান্মিত্রাবরুণয়ো রেতশ্চস্কন্দ। তদভিবাদিন্যেষর্গ ভবতি "
" উতাসি মৈত্রাবরুণো বসিষ্ঠোর্বশ্যা ব্রহ্মন মনসোऽধি জাতঃ। দ্রপ্সং স্কন্মং ব্রহ্মণা দৈব্যেন বিশ্বে দেবাঃ পুষ্করে ত্বাদদন্ত ∥ " ( ঋ০ ৭/৩৩/১১ )
অর্থাৎ তাঁর ( উর্বশী) দর্শন দ্বারা মিত্র এবং বরুণের বীর্য স্থলিত হয়ে যায়। এখানে উক্ত ঋকের ইতিহাস বাচক অর্থ সম্বন্ধে বলা হয়েছে 
 
আচার্য যাস্ক উক্ত মন্ত্রের দুই/তিন শব্দের অর্থ নিম্নরূপ করেছেন -  
" উত= অপি। দ্রপ্স = সম্ভৃতঃ, প্সানীয়ো ভবতি। বিশ্বে = সর্বে। পুষ্করম্ = অন্তরিক্ষম, ( হৃদয়কমলম্)। "
 
উর্বশী শব্দের অর্থ দূর্গাচার্য এবং স্কন্দস্বামী উভয় বিদ্যুৎ করেছেন। পূর্বের মন্ত্রেও বিদ্যুৎ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। 
 
" বিদ্যুতো জ্যোতিঃ পরি সঞ্জিহানং মিত্রাবরুণা যদপশ্যতাং ত্বা। তত্তে জন্মোতৈকং বসিষ্ঠাগস্ত্যো যত্ত্বা বিশা আজভার। "
 
আধিদৈবিক পক্ষে স্কন্দ স্বামী নিম্নপ্রকার অর্থ করেছেন - 
 
নিত্যপক্ষে তু উর্বশী বিদ্যুদ্ বশিষ্ঠোऽপ্যাচ্ছাদিত উদকসঙ্ঘাতঃ। বসুনিমিত্তত্বাদ্বা বসুমত্তমঃ। মিত্রাবরুণাবপি বায্বাদিত্যৌ বিশ্বে দেবা রশ্ময়ঃ। একবাক্যতায়ৈ চ যত্তচ্ছব্দাধ্যাহারঃ কর্তব্যঃ। তেনায়মর্থঃ। যত্ পূর্ব তাবত্ পৃথিব্যাং ভবঃ পার্থিব। উত অপ্যসি মৈত্রাবরুণো মিত্রাবরুণাভ্যাং বায্বাদিত্যাভ্যামাকৃষ্টঃ সন্ তৎসম্বন্ধান্মৈত্রাবরুণো মিত্রাবরুণসম্বন্ধীত্যর্থঃ। হে বসিষ্ঠ আচ্ছাদয়িতৃতম বসুনিমিত্তত্বাদ্বা বসুমত্তম উদকসঙ্ঘাত উর্বশ্যা উর্বন্তরিক্ষব্যাপিন্যা বিদ্যুৎঃ। অধি ধাত্বর্থত্বানুবাদী জাত উৎপন্নঃ । হে ব্রহ্মন্ পরিবৃদ্ধ উপচারাদ্বা ব্রহ্মণোऽন্যস্য হেতুভূত ! মনসঃ নিমিত্তলক্ষণা চৈষা পঞ্চমী মনসোবসম্বন্ধাত্ সঙ্কল্পো লক্ষ্যতে। স মিত্রাবরুণবপ্রাণাং সঙ্কল্পনিমিত্তত্বাদিত্যর্থঃ। দ্রপ্সং সংমিতং ভক্ষয়িতব্যম্ চোদকসঙ্ঘাত স্কত্রং মুক্তং ব্রহ্মণা দৈব্যেত দিবি ভবেনাদিত্যেন বিশ্বে দেবা রশ্ময়ো মধ্যমায়া……. প্রাবৃষি পুষ্করেऽন্তরিক্ষে ত্বাং ধারিতবন্ত।
নিত্যপক্ষে উর্বশী শব্দের অর্থ বিদ্যুৎ হয়। বসিষ্ঠ এর অর্থ জল সমূহ হয়ে থাকে। ধন ধনাদি তথা ঐশ্বর্যের কারণ হওয়ার দরুন জল সমূহ কে বসিষ্ঠ বলা হয়। মিত্র এবং বরুণের দ্বারা অভিপ্রায় বায়ু তথা আদিত্যের হয়ে থাকে, এবং " বিশ্বেদেবাঃ " সূর্যের কিরণকে বলে। যত্ এবং তত্ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমরা এই অর্থ পাই — " প্রথমে পৃথিবীতে থাকা কালীন পার্থিব জল মিত্র এবং বরুণ অর্থাৎ বায়ু এবং আদিত্য এক হয়ে যাওয়ার দরুন মিত্রাবরুণ বলা বলা হয়ে থাকে " । অর্থাৎ হে বসিষ্ঠ ! অর্থাৎ পূর্ণ আচ্ছাদন কারী ( বস + আচ্ছাদনে) ধান্যাদ্যৈশ্বর্য এর কারণে ' বসুমত্তম ' বলা বিদ্যুৎ দ্বারা উৎপন্ন মহান জল সমূহ। আকাশে স্থিত সূর্যের রশ্মি দ্বারা পশ্চিম আকাশে তুমার উপর জল স্বরূপ বৃষ্টি বর্ষিত করে সে বর্ষাঋতু ধারণ করে। 
 
সেই বিদ্যুৎ এর আলো কে চারদিকে ছড়িয়ে যেতে মিত্র এবং বরুণ উভয় যা দেখেছেন। হে বসিষ্ঠ ! এটাও তোমার এক জন্মেরি রূপ ছিল যা অগস্ত্য তুমাকে প্রজাদের কাছে নিয়ে যায়। 
 
এর পূর্বে " বহি উতাপি….. " ইত্যাদি মন্ত্র উল্লেখ পাওয়া যায়। যার শব্দার্থ নিম্নপ্রকারঃ — 
 
হে ব্রহ্মবেত্তা বসিষ্ঠ ! তুমি উর্বশীর মন থেকে উৎপত্তি হয়েছ এবং মিত্রাবরুণ এর থেকেও সেরূপ । সেই দিব্য ব্রহ্ম দ্বারা পরিত্যাগ করা ছোট খাটো অংশকেও সব দেবতাগণ হৃদয় সহিত গ্রহণ করেন।
শতপথ ব্রাহ্মণ ১২/৮/২/২৩ এতে " মনো মিত্রাবরুণঃ " = মন মৈত্রাবরুণ হয়। কৌষীতকি ১৮/১৩ " গোসংস্তবৌ বৈ মিত্রাবরুণৈ " অর্থাৎ বাণী এবং স্তুতি, মিত্র এবং বরুণ হয়। শতপথ ব্রাহ্মণে ১৪/৪/৩/১৩ এখানে " মনোऽন্তরিক্ষলোকঃ " এই পাঠ পাওয়া যায়। তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ১৯/৩/৮ " বসিষ্ঠস্য জনিত্রে ( সামনী) ভবতঃ = বসিষ্ঠকে জন্মদানকারী দুই সন্ধিবিশেষ দ্বারা হয়। শতপথ ১৪/৯/২/২ " বাগ্বৈ বসিষ্ঠা = বসিষ্ঠ অর্থ বাণী হয় "। এবং ঐতেরেয় ব্রাহ্মণ ৫/২৩ " বাক বৈ মনশ্চ দেবানাং মিথুনম্ " = বাণী এবং মন উভয় দেবতার অঙ্গ। 
 
উক্ত ব্রাহ্মণ গ্রন্থের আধারে আমরা বসিষ্ঠ কে মন, মিত্র বরুণকে ক্রমশঃ বাণী এবং জ্ঞান, স্তুতি অর্থ ভক্তি অর্থ নির্ধারণ করে থাকে। মনকে উর্বশীর পুত্র তার চঞ্চলতার জন্য বলে থাকে। প্রথমে তাকে বিদ্যুৎ জ্যোতি : অর্থাৎ বজ্রের আলোড়ন বলা হত, অতঃপর উর্বশীর মন থেকে সৃষ্টি - তাও বলা হয়। এছাড়াও প্রথমে বজ্রের তেজ তথা তার মনের অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ বলা হত। মিত্র এবং বরুণের সাহচর্য অন্য শব্দ দ্বারা তার জ্ঞান এবং ভক্তির প্রদান যা অগস্ত্য ( গুরু) এবং কুম্ভের ( গর্ভ) মধ্যে হয়েছিল। এটাও ত তার আরো একটি জন্ম স্বরূপ । দেবতারা তাকে পুষ্কর অর্থাৎ হৃদয়ে ( কমল) রেখেছেন। এবিষয়ে বলা হয়েছে আছে — 
 
" ততো জাতমৃষিমাহুর্বসিষ্ঠম্। "
এই জন্মের পশ্চাৎ বসিষ্ঠকে ঋষি বলতে থাকেন। 
 
মিত্র এবং বরুণ অর্থাৎ জ্ঞান এবং ভক্তি দ্বারা মনে করে রেতঃ = তেজকে ধারণকরে বসিষ্ঠ মান = মাপ - তুলা পূর্ণ পুরুষকে হয়েছেন। এবিষয়ে স্বয়ং বেদে উল্লেখ আছে — 
 
" উকথভৃতং সামভৃত বিভর্তি গ্রাবাণং বিভ্রৎপ্র বদাত্যগ্রে। " ( ঋ০ ৭/৩৩/১৪)।
বাণী দ্বারা তথা সাম দ্বারা সংগৃহীত তেজকে ধারণ করা ( বসিষ্ঠ) পড়ে গিয়ে জ্ঞান উপদেশ করেন।
পূর্ণ শিক্ষা তাকেই বলে যেখানে বুদ্ধি এবং ভাবনাকে উভয়কে একসাথে বিকাশ হয়ে থাকে।
 
এছাড়াও বসিষ্ঠ শব্দের অর্থ সংস্কারবিমুখ মন অর্থেও বুঝায়। হৃদয় অর্থে তার অন্তরিক্ষ বা আকাশ হয়। আর সেখানেই দেবতাদের মন থাকে। এছাড়াও সে উর্বশী হৃদয়ের তরঙ্গ হয়। আচার্যের কৃপায় তার দ্বিতীয় জন্ম লাভ করে। যাতে বেদে " উত " = অপি = এবিষয়ে বারংবার বিস্তারিত ভাবে স্পষ্ট করা হয়। মিত্র এবং বরুণের তেজ, জ্ঞান তথা শ্রদ্ধা দ্বারা প্রাপ্ত শক্তি হয়। বেদে মিত্র এবং বরুণ বিদ্যুৎ এর প্রকাশলে বলে থাকে, কিন্তু সেখানে " জ্যোতি " " ত্বা " বিশেষণ হয়, অর্থাৎ স্বয়ং বসিষ্ঠের চঞ্চলতার কারণকে বজ্রের চমকানো বলা হয়েছে। এর পূর্বে উক্থ তথা সাম্ — ব্রাহ্মণের গ্রন্থের দ্বারা গরু তথা স্তব — আজকালকার ভাষায় জ্ঞান তথা ভক্তি তথা মিত্র বরুণ স্বরূপ রেতসঃ অর্থাৎ শিক্ষা রূপি যজ্ঞ [ রেতো বা অত্র যজ্ঞঃ শ০ ৭/৩/২/৯ ] দ্বারা তার দ্বিতীয় জন্ম হয়। ইতিহাসকার গণের মতে উর্বশী দর্শনমাত্র বরুণের বীর্য দ্বারা বসিষ্ঠের জন্ম হয়। যা তাদের ইচ্ছা/অনিচ্ছাকৃত ভুল। 
 
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্