ও৩ম্
উপবাস ব্রতের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বৈদিক যুগে দর্শপৌর্ণমাস জাতীয় ইষ্টিযজ্ঞের সময় যজমান উপবাস করতেন। কালক্রমে পৌরাণিক যুগে মূর্তিপূজা প্রারম্ভের পর নানা দেবতার পূজা উপলক্ষে নানা তিথিতে উপবাস চলে আসছে। বেশিরভাগ সনাতনীই মনে করেন উপবাসের দিন সম্পূর্ণ নিরাহার আবশ্যক। অনেকে আবার নানা খাদ্য খাওয়ার পক্ষে মত দেন। কেউ ফলমূল খেতে, কেউ তরল খেতে উৎসাহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে উপবাসে কী আহার করা বৈদিক শাস্ত্র অনুমোদিত তা আমরা দেখব।
অষ্টাধ্যায়ীর প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ পাদের ৪৮ তম সূত্র ‘উপান্বধ্যা-বসঃ' অর্থ- উপ, অনু, অধি, আ এই চারটি উপসর্গের সঙ্গে বস্ ধাতুর যোগ হলে বাস ক্রিয়ার আধারের কর্ম সংজ্ঞা হয়। কর্মবাচক শব্দের উত্তর দ্বিতীয়া বিভক্তি হয় এটি মোটামুটি আমাদের সকলেরই জানা। এই সূত্রের উদাহরণ হল গ্রামম্ উপবসতি (গ্রামের নিকটে বাস করে)। গ্রামম্ অনুবসতি/অধিবসতি/আবসতি (গ্রামে বাস করে)।
অষ্টাধ্যায়ীর মহামুনি পতঞ্জলি-কৃত মহাভাষ্যে এই সূত্রের অর্থ বিবরণে বলেছেন,
“বসেরশ্যর্থস্য প্ৰতিষেধঃ৷ (বার্তিক) বসেরশ্যর্থস্য প্রতিষেধো বক্তব্যঃ। গ্রামে উপবসতীতি৷ স তৰ্হি বক্তব্যঃ ন বক্তব্যঃ। নাহত্রোপপূর্বস্য বসেগ্রামোহধিকরণম্ । কস্য তহি ? অনুপসর্গস্য। গ্রামেঽসৌ বসংস্ত্রিরাত্রম্ উপবসতীতি৷”
বঙ্গানুবাদ- অশ্যর্থক বস্ ধাতুর প্রতিষেধ বলতে হবে। গ্রামে উপবসতি। তাহলে সেটি কি বলা প্রয়োজন? না বলার প্রয়োজন নেই। এখানে গ্রাম উপ পূর্বক বস্ ধাতুর অধিকরণ নয়। তাহলে কার অধিকরণ? অনুপসর্গ (বস্ ধাতুর)। গ্রামে বাস করে সে তিন রাত্রি উপবাস করেছে। অশ্যর্থক = অশি+অর্থক।
পাণিনীয় ব্যাকরণে কোনো ধাতুর সঙ্গে 'ই' বর্ণ যোগ করে সেই ধাতুটিকে নির্দেশ করার পদ্ধতি রয়েছে। (দ্রষ্টব্য ‘ইকিশুপৌ ধাতুনির্দেশে' 'রোগাখ্যায়াং গুল্ বহুলম্' (৩.৩.১০৮) সূত্রের মহাভাষ্য অশ্ ধাতুর অর্থ ভোজন।
কাশিকায় উক্ত সূত্রের অর্থ বিবরণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
“বসেরশ্যর্থস্য প্রতিষেধো বক্তব্যঃ। গ্রামে উপবসতি। ভোজননিবৃত্তিং করোতি ইত্যর্থঃ।”
সুতরাং, কাশিকাকার স্পষ্ট উপবসতি শব্দের অর্থ বলেছেন ভোজন নিবৃত্তি- না খাওয়া। অর্থাৎ পাণিনির সূত্রের বার্তিক বা ভাষ্যে পরোক্ষভাবে এবং কাশিকায় প্রত্যক্ষভাবে আমরা ভোজন নিবৃত্তির উল্লেখ পাই।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তৈত্তিরীয় আরণ্যকের ৬.৬২ এর ব্যাখ্যায় (ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা গ্রন্থে) অনশনকে অত্যন্ত কঠিন ও ক্লেশকর তপ বলেছেন।
ভট্ট ভাস্কর এই স্থলে বলেছেন "অনশনেন ক্লেশো লক্ষ্যতে" অনশন দ্বারা ক্লেশ বা কষ্টকে বোঝানো হচ্ছে । পরে আলাদা করে উপবাস আদি লিখেছেন ।
মহর্ষি সামগ্রিকভাবে এখানে কঠিন বলেছেন। মহর্ষি অনশন বিরোধী ছিলেন এরূপ কোনো প্রমাণ নেই।
মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত যুধিষ্ঠিরজী মীমাংসকও ভোজন নিবৃত্তি লিখেছেন অষ্টাধ্যায়ী ১।৪।৪৮ ভাষ্যের অর্থে ।
অষ্টাধ্যায়ী প্রবচন সূত্রে আচার্য সুদর্শনদেব ও ভোজন নিবৃত্তির অর্থ করেছেন।
অতএব, প্রমাণিত এই যে, মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ও অন্যান্য আর্ষ ভাষ্যকারগণের উক্ত সূত্র বা অংশের সিদ্ধান্তে কোনো অসঙ্গতি নেই। সকলেই অনশন বা উপবাস অর্থ আহার নিবৃত্তি করেছেন।
স্বামী সমর্পণানন্দ সরস্বতী আর্যসমাজের শতপথ ব্রাহ্মণের ভাষ্যকার । তিনি প্রতিটি কণ্ডিকা পদার্থসহ ভাষ্য করেছেন । সেখানেও তিনি "অনশনতয়া" = ভোজন ব্যতীতই রেখেছেন ।
সুতরাং, অনশন অর্থ যে ভোজনের নিবৃত্তি এবং উপবাসে অনশন করা হত, তা নিয়ে আর্ষ বিদ্বানগণ নিঃসন্দেহে আমাদের আপত্তির কোনো জায়গা নেই।
এখন প্রশ্ন আসছে উপবাসে অনশন বাধ্যতামূলক কী না!
তার আগে পাঠকদের দর্শপৌর্ণমাস যজ্ঞের সাথে পরিচয় করিয়ে নেই। বৈদিক যুগে বাধ্যতামূলক প্রতি মাসে একবার পূর্ণিমার সময় যে ইষ্টিযজ্ঞ আয়োজিত হত, তাই দর্শপৌর্ণমাস। দর্শপৌর্ণমাসের পূর্বে উপবাস ছিল বাধ্যতামূলক।
গোভিল গৃহ্যসূত্র অনুযায়ী (১।৫),
অথ দর্শপূর্ণমাসয়োঃ ১ সন্ধ্যাং পৌর্ণমাসীমুপবসেৎ ২ উত্তরামিত্যেকে ৩
দর্শপৌর্ণমাস যাগ করতে হলে তার পূৰ্বদিবসে উপবাস করতে হয়। তদ্বিষয়েই বলা হচ্ছে। সন্ধাপৌর্ণমাসী লক্ষ্য করেয সেই দিবস উপবাস করবে; উত্তরা পৌর্ণমাসীতে অর্থাৎ অন্তমিতোদয়া বা উচ্চৈরুদয়াতেই * উপবাস কৰ্তব্য, এমনটিও কতক আচার্য বলেন। অর্থাৎ গোভিলের স্বমস্তে যে দিবস সূর্যোদয়েই পূর্ণিমা আছে, পরে বিকালে বা রাত্রে প্রতিপৎ হোক বা অরুণোদয় পর্যন্তই পূর্ণিমা থাকুক, সেই দিবসই উপবাস কর্তব্য, কোন কোন মতে উদ্ধৱাপৌর্ণমাসী উপবাসের যোগ্য অর্থাৎ যে দিন চতুর্দশী থাকবার পরে সূর্যাস্ত সময়ে অথবা তার পরে পূর্ণিমা হয়, সেই দিবসই উপবাস করবে। ২,৩
গোভিল গৃহ্যসূত্রের ১ম অধ্যায়, ৫ম খণ্ডে উপবাস দিনের আচরণীয় সম্বন্ধে বলা হচ্ছে,
অথ যদহরুপবসথো ভবতি তদহঃ পূর্বাহ্ণ এব প্রাতরাহুতিং হুত্বৈতদগ্নেঃ স্থণ্ডিলং গোময়েন সমন্তং পর্যুপলিম্পতি ১৩
অথৈধ্মানুপকল্পয়তে খাদিরান্বা পালাশান্বা ১৪ খাদিরপালাশালাভে বিভীদকতিল্বকবাধকনীবনিম্বরাজবৃক্ষশাল্মল্যরলুদধিত্থকোবিদারশ্লেষ্মাতকবর্জং সর্ববনস্পতীনামিধ্মো যথার্থং স্যাৎ ১৫
বিশাখানি প্রতি লূনাঃ কুশা বর্হিঃ ১৬
উপমূললূনাঃ পিতৃভ্যঃ ১৭
তেষামলাভে শূকতৃণশরশীর্যবল্বজমুতবনলশ্ণ্ঠুবর্জং সর্বতৃণানি ১৮
আজ্যং স্থালীপাকীয়ান্ব্রীহীন্বা যবান্বা চরুস্থালীং মেক্ষণং স্রুবমনুগুপ্তা অপ ইতি ১৯
যানি চানুকল্পমুদাহরিষ্যামঃ ২০
ন তদহঃ প্রসৃজ্যেত ২১
দূরাদপি গৃহানভ্যেয়াৎ ২২
অন্যতস্তু ধনং ক্রীণীয়ান্ন বিক্রীণীত ২৩
অবহুবাদী স্যাৎ ২৪
সত্যং বিবদিষেৎ ২৫
অথাপরাহ্ণ এবাপ্লুত্যৌপবসথিকং দম্পতী ভুঞ্জীয়াতাং যদেনয়োঃ কাম্যং স্যাৎসর্পির্মিশ্রং স্যাৎকুশলেন ২৬
সে দিবসে এই কয়েকটি নিয়ম বিশেষরূপে প্রতিপালন করতে হবে।
১ম, সে দিন গৃহ ত্যাগ করবে না।
২য়, দূরে থাকলেও তথা হতে নিজালয়ে প্রত্যাগমন করবে।
৩য় অপরের নিকটে ক্রয় করতে পারবে। বরং স্বয়ং কোন বস্তু বিক্রয় করিবে না।
৪র্থ 'মিতভাষী হবে।
৫ম, সম্পূর্ণরূপে সত্য বলতেই ইচ্ছা রাখবে।
অনন্তর স্বামীস্ত্রী উভয়েই বিকালে স্নান করে উপবাসদিনের নিয়মে তাদের যা ইচ্ছা হবে, তাই ঘৃতযোগে, তৃপ্তান্তকরণে ভোজন করবে ॥ ১৩–২৬
অর্থাৎ গোভিলমতে, উপবাসের দিন আহার গ্রহণ করতে আপত্তি নেই।
বরং গোভিলেই বলা হচ্ছে (১।৬) ,
মানতন্তব্যো হোবাচাহুতা বা এতস্য মানুষ্যাহুতির্ভবতি য ঔপবসথিকং নাশ্নাতি ১
অনীশ্বরো হ ক্ষোধুকো ভবত্যকাম্যো জনানাং পাপবসীয়সী হাস্য প্রজা ভবতি ২
য ঔপবসথিকং ভুঙ্ক্ত ঈশ্বরো হ ভবত্যক্ষোধুকঃ কাম্যো জনানাং বসীয়সী হা স্য প্রজা ভবতি ৩
তস্মাদ্যৎকাময়েতৌপবসথিকং ভুঞ্জীয়াতাম্ ৪
অধ এবৈতাং রাত্রিং শয়ীয়াতাম্ ৫
তৌ খলু জাগ্রন্মিশ্রাবেবৈতাং রাত্রিং বিহরেয়াতামিতিহাসমিশ্রেণ বা কেনচিদ্বা ৬
জুগুপ্সেয়াতাং ত্বেবাব্রত্যেভ্যঃ কর্মভ্যঃ ৭
ন প্রবসন্নুপবসেদিত্যাহুঃ ৮
পত্ন্যা ব্রতং ভবতীতি ৯
যথা কাময়েত তথা কুর্যাৎ ১০ এবমেবাহিতাগ্নেরপ্যুপবসথো ভবতি ১১
(১।৬।১-১১)
মানতন্তব্য নামক আচার্য বলেন - "যে যজমান উপবাস দিবসে সে দিবসের নিয়মে ভোজন না করে, তার মনুষ্যোপকারার্থ অনুষ্ঠিত সমস্ত যাগক্রিয়াই নিষ্ফল হয়। পূৰ্বদিন নিরাহার থাকলে পরদিন অতিরিক্ত ক্ষুধা নিবন্ধন মনঃস্থির পূর্বক, যাগকার্য 'নির্বাহে অবশ্য অসমর্থ হবে, জনসাধারণের অপ্রিয় হবে এবং তার পুত্র পৌত্রাদি প্রজাও পাপবুদ্ধির বশীভূত হইবে।
পক্ষে ক্ষুধাশূন্য হয়ে কার্য করলে মন স্থির থাকায় যাগক্রিয়া সমস্তই সুসম্পন্ন হবে ও জনসাধারণের প্রিয়ও হবে এবং তাহার পুত্র পৌত্রাদি প্রজাও বশে থাকবে। অতএব ক্ষুধাতুর হয়ে কোন ক্রিয়া করবে না, স্ত্রীপুরুষ উভয়েই যথেচ্ছ ভোজন করবে।
উপবাস দিবস রাত্রে খট্টাদির ওপরে শয়ন করবে না এবং বৈদিক ইতিহাসের আলোচনাতে বা অন্য লোকের সহিত যে কোন রূপ হোক, ধৰ্মালোচনাতেই রাত্রির আদ্যন্ত কাল জাগ্রতাবস্থাতে অতিবাহিত করবে।
অর্থাৎ সমস্ত রাত্রি নিদ্রিত না থেকে অল্পমাত্র নিদ্রা করিবে এবং স্ত্রীসংসর্গাদি ব্ৰতনাশক কাৰ্য হতে আপনাকে রক্ষা করবে।
***অর্থাৎ উপবাস দিনের বিধান কেবল ব্রহ্মচর্যাদি পালন, নিজ গৃহে অবস্থান, মিত ও সত্যভাষী হওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি আহারের ক্ষেত্রে অনুমোদিত আহার যথেচ্ছা ভক্ষণের অনুমতি রয়েছে। অনূমোদিত আহার কী কী, তা পরিষ্কার করা আছে অন্যত্র (শতপথ ব্রাহ্মণে)। শতপথ ব্রাহ্মণের পৌর্ণমাস প্রকরণে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য উপবাসের আহারের মীমাংসা করেছেন।
অথাতোঽশনানশনস্যৈব । তদুহাষাঢঃ সাবয়সোঽনশনমেব ব্রতং মেনে মনো হ বৈ দেবা মনুষ্যস্যাজানন্তি ত এনমেতদ্ব্রতমুপয়ন্তং বিদুঃ প্রাতর্নো যক্ষ্যত ইতি তেঽস্য বিশ্বে দেবা গৃহানাগচ্ছন্তি তেঽস্য গৃহেষূপবসন্তি স উপবসথঃ - শতপথ ব্রাহ্মণ ১।১।১।৭
অনুবাদঃ এখন অনশনব্রতের কথা প্রারম্ভ হচ্ছে। আচার্য আষাঢ়ের মতে ব্রতে অনশন বাধ্যতামূলক। তাঁর মতানুযায়ী, দেবতাগণ মানবের মন দেখতে পান। যখন মানব অনশনপূর্বক ব্রত পালনে উদ্যত হয়, তার অভিপ্রায় থাকে পরবর্তী দিনে যজ্ঞ ও হবি নিবেদন করবার। এজন্য, সকল দেবশক্তি যজ্ঞের পূর্বদিন তার গৃহে অবস্থান করে। (উপ + বাস), তাই এই দিনকে উপবাস বলা হয়।
Now then of the eating (or) fasting. And on this point shâdha Sâvayasa, on the one hand, was of the opinion that the vow consisted in fasting. For assuredly, (he argued,) the gods see through the mind of man; they know that, when he enters on this vow, he means to sacrifice to them the next morning. The
refore all the gods betake themselves to his house, and abide by (him or the fires, upa-vas) in his house; whence this (day) is called upa-vasatha
refore all the gods betake themselves to his house, and abide by (him or the fires, upa-vas) in his house; whence this (day) is called upa-vasatha
তন্ন্বেবানবকৢপ্তম্ । যো মনুষ্যেষ্বনশ্নৎসু পূর্বোঽশ্নীয়াদথ কিমু যো দেবেষ্বনশ্নৎসু পূর্বোঽশ্নীয়াত্তস্মাদু নৈবাশ্নীয়াৎ - ১।১।১।৮
অনুবাদঃ এটি তো সর্বদাই অনুচিত যে আগন্তুক মানুষের পূর্বে গৃহস্বামী স্বয়ং আহার করবে। সুতরাং, দেবতার আহারের পূর্বে যজমানের আহার তো আরো অনুচিত। এজন্য অনশন করা উচিত।
Now, as it would even be unbecoming for him to take food, before men (who are staying with him as his guests) have eaten; how much more would it be so, if he were to take food before the gods (who are staying with him) have eaten: let him therefore take no food at all.
তদু হোবাচ যাজ্ঞবল্ক্যঃ । যদি নাশ্নাতি পিতৃদেবত্যো ভবতি যদ্যু অশ্নাতি দেবানত্যশ্নাতীতি স যদেবাশিতমনশিতং তদশ্নীয়াদিতি যস্য বৈ হবির্ন গৃহ্ণন্তি তদশিতমনশিতং স যদশ্নাতি তেনাপিতৃদেবত্যো ভবতি যদ্যু তদশ্নাতি যস্য হবির্ন গৃহ্ণন্তি তেনো দেবান্নাত্যশ্নাতি - ১।১।১।৯
অনুবাদঃ অপরপক্ষে যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, "যদি সে যজ্ঞের পূর্বে আহার না করে, সে পিতৃদেবত্য হয়ে যায়। অপরদিকে, যদি সে আহার করে, সে দেবতার অগ্রে আহার করে। অতঃপর তার এমন কিছু আহার করা উচিত, যা আহার করলেও ধর্তব্যের মাঝে পড়ে না। যে খাদ্যদ্রব্য হবি হিসেবে প্রদান করা হয় না, তা আহার করা হলেও অনশনেরই অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং, যখন সে আহার করে, তো তার পিতৃদেবত্য দোষ হয় না। এবং তাঁর সব দেয়া হয় না, তা আহার করলেও দেবতাকে নিবেদনের পর্বে আহারের ভাগী হতে হয় না।"
Yâgñavalkya, on the other hand, said: 'If he does not eat, he thereby becomes a sacrificer to the Manes; and if he does eat, he eats before the gods have eaten: let him therefore eat what, when eaten, counts as not eaten.' For that of which no offering is made, even though it is eaten, is considered as not eaten. When he therefore eats, he does not become a sacrificer to the Manes; and by eating of that of which no offering is made, he does not eat before the gods have eaten.
স বা আরণ্যমেবাশ্নীয়াৎ । যা বারণ্যা ওষধয়ো যদ্বা বৃক্ষ্যং তদু হ স্মাহাপি বর্কুর্বার্ষ্ণো মাষান্মে পচত ন বা এতেষাং হবির্গৃহ্ণন্তীতি তদু তথা ন কুর্যাদ্ব্রীহিয়বয়োর্বা এতদুপজং যচ্ছমীধান্যং তদ্ব্রীহিয়বাবেবৈতেন ভূয়াংসৌ করোতি তস্মাদারণ্যমেবাশ্নীয়াৎ - ১।১।১।১০
অনুবাদঃ তার কেবল অরণ্য হতে উৎপাদিত দ্রব্যাদি অর্থাৎ ওষধি এবং বনস্পতি থেকে আহরিত দ্রব্যই আহার করা উচিত। বর্কুবার্ষ্ণ বলেছেন, "আমাকে মাষ রান্না করে দাও, কারণ মাষকলাই হবি হিসেবে প্রদান করা হয় না।" কিন্তু এগুলো আহার করা উচিত না। কারণ তা চালের সাথে আহার করা হয় এবং চালের বৃদ্ধি করে। তাই তাকে অরণ্যে যা উৎপাদিত হয় তাই আহার করা উচিত।
Let him therefore eat only what grows in the forest, be it forest plants or the fruit of trees. And in regard to this point Barku Vârshna said: 'Cook ye beans for me, for no offering is made of them!' This, however, he should not do; for pulse serves as an addition to rice and barley; and hence he increases the rice and barley by means of it: let him therefore eat only what grows in the forest.
আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্রেও দর্শপৌর্ণমাস ব্রতেই উপবাসের কথা রয়েছে।
তস্য দর্শপূর্ণমাসাভ্যাম্ উপবাসঃ ।। ২।।
(১।১০।২)
অনুবাদক অমরকুমারের বিবৃতি—স্থালীপাকে পর্বদিনে দর্শপূর্ণমাসের মতোই উপবাস করতে হয়। 'উপবাস' অনাহার নয়, নির্দিষ্ট দ্রব্য আহার করা। দুদ্ধমিশ্রিত বা দধিমিশ্রিত এবং হালকা ঝাল প্রভৃতি বর্ণিত খাদ্য গ্রহণ করতে হয় উপবাসে।
অতঃপর সিদ্ধান্তঃ
১. উপবাসের অর্থ সাধারণভাবে আহার নিবৃত্তি হলেও উপবাসে পূর্ণ অনশন বাধ্যতামূলক নয়।
২. উপবাস চলাকালীন হবি হিসেবে নিবেদন করা হয় না এমন খাদ্য বা ফলাদি আহার সিদ্ধ।
৩. উপবাস কালীন সময়ে ব্রহ্মচর্য, ঈশ্বরচিন্তা প্রভৃতিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত আহার নিবৃত্তির চেয়ে।
▪️ একাদশী কীভাবে করতে হয় পৌরাণিকদের ?
হরিভক্তিবিলাস ১২শ উল্লাস, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ২৭।৮-১৩ ও গর্গসংহিতার অশ্বমেধ খণ্ড ৬১।৪৯-৬০ অনুযায়ী একাদশীতে সম্পূর্ণ প্রকার শস্য ও আহার বর্জন হবে । যদি কেউ উপবাসে অসমর্থ হয় তবে ফল-মূল ভোজন ও জলপান করতে পারবে । একেই অনুকল্প বলা হয়ে থাকে । তবে এখানে বেশ কিছু বিষয় জানা উচিত -
১। একাদশীতে অনুকল্প হিসেবে জল ও ফলের কথা থাকলেও তাতে ফলপ্রাপ্তিতে ভেদ আছে । গর্গ সংহিতায় উক্ত স্থানে ৪৯শ্লোক অনুযায়ী নির্জলা উপবাসে যস ফল হয় শুধুমাত্র জলপানে তা কিঞ্চিৎ কম এবং ফলাহার করলে তার অর্ধেক ফল পাবেন ।
হরিভক্তিবিলাস ১২শ উল্লাস, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ ব্রহ্মখণ্ড ২৭।৮-১৩ ও গর্গসংহিতার অশ্বমেধ খণ্ড ৬১।৪৯-৬০ অনুযায়ী একাদশীতে সম্পূর্ণ প্রকার শস্য ও আহার বর্জন হবে । যদি কেউ উপবাসে অসমর্থ হয় তবে ফল-মূল ভোজন ও জলপান করতে পারবে । একেই অনুকল্প বলা হয়ে থাকে । তবে এখানে বেশ কিছু বিষয় জানা উচিত -
১। একাদশীতে অনুকল্প হিসেবে জল ও ফলের কথা থাকলেও তাতে ফলপ্রাপ্তিতে ভেদ আছে । গর্গ সংহিতায় উক্ত স্থানে ৪৯শ্লোক অনুযায়ী নির্জলা উপবাসে যস ফল হয় শুধুমাত্র জলপানে তা কিঞ্চিৎ কম এবং ফলাহার করলে তার অর্ধেক ফল পাবেন ।
২। বৈষ্ণবগণ উক্তস্থানের ৫২-৫৫ শ্লোক প্রদর্শনপূর্বক অনুকল্পে কী কী ফলাহার করা যাবে তার বিস্তর তালিকা প্রদর্শন করেন ।
কিন্তু তাতে যে বিধি দেওয়া অনুকল্প পালনের তা সযতনে এড়িয়ে যান । সেখানে -
(১) ৫৬নং শ্লোক অনুযায়ী পূর্বে প্রদত্ত ফল তালিকার ফলগুলো শুধুমাত্র একবার খাওয়া যাবে । তাও পল পরিমাণ দ্রব্য আগে দ্বিজকে দিয়ে বাকি অর্ধেক নিজে খাবে । সারাদিন ব্যাপী সবজি রান্না করে উদরপূর্তির কোন বিধান নেই । এই কাজটি করা যাবে ৩য় প্রহরের পর ।
(১) ৫৬নং শ্লোক অনুযায়ী পূর্বে প্রদত্ত ফল তালিকার ফলগুলো শুধুমাত্র একবার খাওয়া যাবে । তাও পল পরিমাণ দ্রব্য আগে দ্বিজকে দিয়ে বাকি অর্ধেক নিজে খাবে । সারাদিন ব্যাপী সবজি রান্না করে উদরপূর্তির কোন বিধান নেই । এই কাজটি করা যাবে ৩য় প্রহরের পর ।
(২) একাদশীর জলপান অনুকল্পের বিষয়ে ৫৭ নং শ্লোক বলছে যে কেবল ২ বার জল পান করা যাবে ।
🔸 অর্থাৎ একাদশীতে বিধান হলো নির্জলা, তা না পারলে ২বার জল পান, তাও না পারলে ৩য় প্রহরের পর একবার ফলাহার ।
৫৮-৫৯ শ্লোকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে কিনা ২/৩ বার ফলাহার করে তাদের কিছুই ফল লাভ হয় না৷
- একাদশী ও অটোফেজি
আমরা
অনেকেই মনেকরি একাদশী একটি বিজ্ঞান সম্মত উপাসনা। এই উপাসনায় ঈশ্বর সাধণের
পাশাপাশি নিজের শরিরেরও অনেক উপকার হয়। কিন্তু এই ভাবনাটি নিতান্তই ভুল
একটি ভাবনা। একাদশীর নিয়ম প্রণালীতে দেখা যায় প্রথমেই উল্লেখ আছে, আপনাকে
নির্জলা উপবাস করতে হবে। অর্থাৎ ১ ফোঁটা জলও আপনি পান করতে পারবেন না। সেই
সাথে কোন প্রকার খাদ্য খেতে পারবেন না। যখন আপনি এই নিয়মটা পালন করতে
অসমর্থ্য তখন আপনি ফলমূল আহার করতে পারবেন। অনেকেই সবজি রান্না করে খায়।
এই নির্জলা বা সব কিছুই (কিছু খাবার বাদ দিয়ে) আহার করাটা বিজ্ঞান সমর্থন করেনা। আবার গীতাও নির্জলা উপবাস (অত্যন্ত অনাহার) সমর্থন করে না।
- হে অর্জুন! যে অতিরিক্ত ভোজন করে অথবা উপবাসী থাকে, আবার অতিরিক্ত নিদ্রা অথবা সমস্ত রাত্রি জাগীয়া থাকে তাহার যোগ হয় না। গীতা ৬.১৬
- আহার, বিহার, কর্ম, নিদ্রা ও জাগরণে যিনি সমতা রাখিয়া (নিয়মিত মানিয়া) চলেন, তাঁহার যোগ দুঃখনাশী (দুঃখ নাশ) হয়। গীতা ৬.১৭
- যে সকল লোক অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকারের বলে কাম ও
আসক্তিপরায়ণ হয় এবং বলশালী হইয়া শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয় আর শরীরের
মধ্যস্থ আমাকে কষ্ট দেয়; এইসব লোকেরা অসুরের ন্যায়, ইহা তুমি জানিও। গীতা ১৭. ৫-৬
বিজ্ঞান সম্মত ভাবে পাকস্থলীকে মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিতে হয়। এই বিশ্রাম দেওয়ার কার্যক্রমকেই মূলত “অটোফেজি” বলা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের অটোফেজি গবেষক ইয়োশিনোরি ওহশোমি। জীবদেহ কেমন করে ত্রুটিপূর্ণ কোষ ধ্বংস করে নিজের সুরক্ষা করে এবং কোষ কীভাবে নিজের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ থাকে, সেই রহস্য বের করার কারণে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী।
অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আসলে কি ? অটোফেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অটো ও ফাজেইন থেকে। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে—আত্ম ভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা। বিষয়টি শুনতে ভয়ানক হলেও এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে পরিষ্কার করার একটা প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন হয় কোষীয় পর্যায়ে। শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি হয় এবং প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রোটিনের গঠনটি অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে ও নানা রোগের সৃষ্টি করবে।
এই কাজটির জন্য আমাদের খুব সহজ একটি নিয়ম মান্য করতে হবে।
একাদশীর দিন কোন কিছুই খাওয়া যাবে না, কিন্তু হাফঘন্টা পর পর পেট ভর্তি করে জল পান করতে হবে।
আমি আবার বলছি, জল ছাড়া আর কোন কিছুই খাওয়া যাবে না। আর অবশ্যই হাফঘণ্টা পর পর পেট ভর্তি করে জল পান করবেন।
এতে দেখা যাচ্ছে, নির্জলা থাকতে হচ্ছে না। যা গীতা এবং বিজ্ঞান সম্মত। কারণ গীতা এবং বিজ্ঞান নির্জলা উপবাস সাপোর্ট করেনা। তাই যেখানে একদশীর পরিপূর্ণ পুণ্য লাভ নির্জলা করলেই একমাত্র পাওয়া সম্ভব সেখানে অনুকল্পের ২বার মাত্র জল পান দিয়ে একাদশীকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ করা ছল ব্যতীত কিছুই নয় ।
- সম্পূর্ণ আলোচনা মূল গ্রন্থ ও ব্যাখ্যাসহ দেখুন এখানে -
✅ অতঃ আপনার চারিদিকে একাদশী পালন করে বলে বিশেষ রূপে প্রফুল্লিত ও নিজেকে উচ্চমার্গীয় শাস্ত্রীয় ধ্বজাধারীরা নিজেদের শাস্ত্র কতটা মানে তা এবার নিজে যাচাই করুন ।
গ্রন্থসন্দর্ভঃ
১. পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ী-মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
২. ঋগ্বেদাদি ভাষ্যভূমিকা- মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী
৩. বেদাঙ্গ প্রকাশ
৪. অষ্টাধ্যায়ী- ব্রহ্মদত্ত জী জিজ্ঞাসু
৫. শতপথ ব্রাহ্মণ- স্বামী সমর্পণানন্দ
৬. শতপথ ব্রাহ্মণ - Julius Eggling, Sacred Books of the East series
৭. গোভিল গৃহ্যসূত্র - সত্যব্রত সামশ্রমী
৮. ঋগ্বেদীয় গৃহসূত্র
0 মন্তব্য(গুলি)