https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শ্রীরাম চন্দ্র কি মাংস খেতেন? [ পর্ব ২ ]

Wednesday, February 14, 2018

                                    সম্পর্কিত ছবি

[ Read also: শ্রীরাম চন্দ্র কি মাংস খেতেন?  [ পর্ব  ] ]

শ্রীরামচন্দ্র মাংস খেতেন না কি খেতেন না এই বিষয় অত্যন্ত বিবাদ সম্পন্ন। কিছু লোকের ধারণা এই যে, রামচন্দ্র ক্ষত্রিয় ছিলো অতঃ মাংস খেতেন। কিন্তু আমাদের বিচারে এই ধারণা অশুদ্ধ। কারণ রামচন্দ্রের মতো মর্যাদা সম্পন্ন পুরুষ যিনি কি না মহান বেদজ্ঞ তাহার দ্বারা পশুহিংসা তথা মাংস ভক্ষন স্বভাবজ কর্ম হতে পারে না।
তথাপি রামায়নের কিছু শ্লোক শ্রীরামচন্দ্রের মাংস ভক্ষণের সপক্ষে শঙ্কার উদ্ভব করে। এজন্য এখানে আমরা শ্রীরাম চন্দ্রের কিছু বক্তব্যের উপর নজর দেবো। যখন শ্রী রামচন্দ্রের বন গমনের আজ্ঞা হলো তখন তিনি নিজ মাতা কৌসল্যার নিকট অনুমতি নেবার জন্য আসেন। সেই সময় শ্রীরামচন্দ্র বলেন-

স ষট্ চাষ্টৌবর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে ।
আসেবমানো বন্যানি ফলমূলৈশ্চ বর্তয়ন্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.২০.৩১)

=>>[আমি] চৌদ্দ বৎসর কাল নির্জন বনে[বিচরণ এবং] ফলমূল আহার করে অবস্থান করব ।





মাতা কৌশল্যা শ্রীরামচন্দ্রকে বনে গমনের পূর্বে আশীর্বাদ করে বলেন -

আগমাস্তে শিবাঃ সন্তুঃ সিদ্ধ্যন্তু চ পরাক্রমাঃ ।
সর্বসম্পত্তয়ো রাম স্বস্তিমান্ গচ্ছ পুত্রক ।।
( বাল্মিকী রামায়ণ ২.২৫ ২১)

=>>বৎস রাম ! তোমার যাত্রা মঙ্গলময় হোক,পরাক্রম সার্থক হোক , বনে ফলমূলাদি আহার্যসমূহ সুলভ হোক , তুমি কল্যাণ মণ্ডিত হও ।


পিতা দশরথকেও রামচন্দ্র একই কথা বলেন -

ফলানি মূলানি চ ভক্ষয়ন্ বনে গিরীংশ্চ পশ্যন্ সরিতঃ সরাংসি চ ।
বনং প্রবিশ্যৈব বিচিত্রপাদপং সুখী ভবিষয়ামি তবাস্তু নির্বৃতিঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৩৪.৫৯)

=>>বনে প্রবেশ করে ফলমূল ভক্ষণ করব ; বনের পর্বত , নদী ,সরোবর এবং বিচিত্র সব বৃক্ষ দেখে সুখে থাকব । আপনার মনে শান্তি বিরাজ করুক ।




ভরদ্বাজ মুনিকে নিজের বনবাসের কারণ সম্পর্কে বলে শ্রীরামচন্দ্র বলেন -

পিত্রা নিযুক্তা ভগবন্ প্রবেক্ষ্যামস্ত পোবনম্ ।
ধর্মমেবাচরিষ্যামস্তত্র মূলফলাশনাঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৪.১৬)

=>>ভগবন্ ! পিতা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমরা তপোবনে প্রবেশ করব এবং সেখানে ফলমূলাহারী হয়ে ধর্মাচারণ করব ।



শ্রীরামচন্দ্র তাঁর মিত্র নিষাদরাজ গুহকে বললেন-

কুশচীরাজিনধরং ফলমূলাশনং চ মাম্ ।
বিদ্ধি প্রণিহিতং ধর্মে তাপসং বনগোচরম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫০.৪৪)

=>জেনে রাখুন, আমি এখন আমি এখন কুশ-বল্কল-মৃগচর্মধারী ও ফলমূলাহারী বনবাসী তপস্বী ।



শ্রীরামচন্দ্র জাবালির নাস্তিকমত খণ্ডনের সময় বলেন-

বনবাসং বসন্নেব শুচির্নিয়তভোজনঃ ।
মূলপুষ্পফলৈঃ পূণ্যৈঃ পিতৃন্ দেবাংশ্চ তর্পয়ন ।।
সন্তুষ্টপঞ্চবর্গোহহং লোকযাত্রাং প্রবাহয়ে ।
অকুহঃ শ্রদ্দধানঃ সন্ কার্যাকার্যবিচক্ষণঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.১০.২৭)

=>বনবাসে থেকে নিয়ত পবিত্র-মূল-পুষ্প আহার ও পিতৃদেবদের তৃপ্তি বিধান এবং পঞ্চেন্দ্রিয়ের তৃপ্তি বিধান করে লোকযাত্রা নির্বাহ করব এবং অকপট শ্রদ্ধাশীল ও কর্তব্যাকর্তব্য বিচক্ষণ হব ।




শ্রীরাম চন্দ্রের দুই প্রতিজ্ঞা প্রসিদ্ধ। এক তো তিনি তাহার মাতা কৈকেয়ীর সম্মুখে প্রকট করেছিলেন -
" রাম দ্বির্নাভিভাষতে" (অযো০ ১৮।৩০)




দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা তিনি সীতাজীর সম্মুখে এই রূপে রেখেছিলেন -

অপ্যহং জীবিতং জহ্যাং ত্বাং বা সীতে সলক্ষ্মণম্।
ন তু প্রতিজ্ঞাং সংশৃত্য ব্রাহ্মণেভ্যো বিশেষতঃ।।
(অর০ ১০।১ )
- আমি আমার প্রাণ ছাড়তে পারি, লক্ষণ এবং তোমাকেও ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার প্রতিজ্ঞা কখনো ত্যাগ করতে পারবো না, বিশেষ করে ব্রাহ্মণের নিকট করা প্রতিজ্ঞা।



এই প্রকার শ্রী রামচন্দ্রের প্রতিজ্ঞা দেখে আমরা এই নিষ্কর্ষে পৌছাতে পারি যে, তিনি কখনোই মাংস খাননি। আর যেখানে মাংস খাবার উল্লেখ এসেছে সেটা নিশ্চিতরূপে প্রক্ষিপ্ত। যদিও রামায়নের অনেক অংশে প্রক্ষিপ্ত দোষ রয়েছে তথাপি এ পর্যায়ে আমরা সেসব শ্লোকগুলোর প্রক্ষিপ্ততার দোষ কাটিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবো -

শঙ্কা [১] বাল্মীকি রামায়ণ ২.৫৬.২২-২৮ শ্লোক অনুসারে নিবেদনের উদ্দেশ্যে লক্ষ্মণ দ্বারা কৃষ্ণসার শিকার ও সেগুলোর মাংস রান্না করে যাগ করেছিলেন-

সমাধান :

প্রথমতঃ ৫৬ তম সর্গে বাস্তুশান্তির যজ্ঞের কথা আছে | কিন্তু তাতে মাংস প্রকরণ আনা অনুচিত | কারণ এর পরেও শ্রীরামচন্দ্রের নির্দেশে লক্ষণ কর্তৃক বাস্তুপুজো করার কথা রয়েছে তাতে এই পশু হত্যার কোন কথাই নেই বরং ফল ও পুষ্পের কথাই রয়েছে - যথাঃ

স গত্বা লক্ষণঃ শ্রীমান্ নদীং গোদাবরীং তদা ।
স্নাত্বা পদ্মানি চাদায় সফলঃ পুনরাগতঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ৩.১৫.২৪)

=>>অতঃপর শ্রীমান লক্ষণ গোদাবরী নদীর তীরে গিয়ে [নদীজলে] স্নানান্তে পদ্মপুষ্প ও ফল সংগ্রহ করে পুনরায় প্রত্যাবর্তন করলেন ।

ততঃ পুষ্পবলিং কৃত্বা শান্তিং চ স যথাবিধি ।
দর্শায়ামাস রামায় তদাশ্রমপদং কৃতম্ ।।
বাল্মিকী রামায়ণ ৩.১৫.২৫

=>>অতঃপর তিনি[লক্ষণ] যথাবিধি [দেবোদ্দেশে] পুষ্পাঞ্জলি প্রদান এবং বাস্তুশান্তিক্রিয়া [সমাপন] করে স্বয়ংকৃত পুণ্যাশ্রমটি রামকে দেখালেন ।



 মূলত "মৃগ" শব্দটি নিয়ে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। মদনপালাদিসহ অন্যাদি আয়ুর্বেদিক নিঘণ্টু অনুসারে মৃগ অর্থ ঔষধি মূল  মৃগনাশিনী / বিডঙ্গ (তুঁতে )/মৃগলিণ্ডিক প্রভৃতি করা হয়েছে -

শুণ্ঠ্যাদিবর্গ
বিডঙ্গ


विडङ्गं जन्तुहननं कृमिघ्नं क्षुद्रतण्डुलः |
भूतघ्नी तण्डुला घोषा कराल मृगनाशिनी ||४२||
विडङ्गं कटु तिक्तोष्णं रूक्षं वह्निकरं लघु |
गुल्माध्मानोदरश्लेष्मकृमिवातविबन्धनुत् ||४३||
 
(||নৃপমদনপালবিরচিত||||মদনপালনিঘণ্টু||)
(মদনবিনোদ)





মৃগলিণ্ডিক গাঙ্গেরূকং কর্করকং কর্কটং মৃগলিণ্ডিকম্ |
মৃগবিট্সদৃশং চাথ তোদনং ক্রন্দনং তথা ||৪৯১||

(শ্রীবৈদ্যকৈযদেবপণ্ডিতবিরচিত,কৈযদেবনিঘণ্টু,ওষধিবর্গ )






বাতঘ্নং পিত্তকফকৃন্মিশ্রেযা গিরিপাদিকা ||১৫||
ফলং তু কপিকচ্ছূরুমাণবেত্রকরঞ্জকম্ |
বাতামাভিষুকাক্ষোডমুকূলকনিকোচকম্ ||১৬||
অম্লং লকুচমেলানমারুকং মৃগলেণ্ডিকম্ |
দ্রাক্ষাবৃক্ষাম্লকোশাম্রনীপাম্রাতকরাম্লকম্ ||১৭||


 ||শ্রীকেশববিরচিত||
||সিদ্ধমন্ত্র||

১. বাতঘ্নবর্গ ||বোপদেবকৃতসিদ্ধমন্ত্রপ্রকাশব্যাখ্যাসহিত|



অতএব, এখানে মৃগ অর্থ হরিণ করা অনুচিত । কারণ আমরা পূর্বেই দেখেছি শ্রীরাম চন্দ্র ফলমূলাদি ভক্ষণ করবেন বলেছেন এবং কৌশল্যার কাছে বনবাসে মাংস ভক্ষণ করবেন না বলে শপথ করেছেন । যিনি পিতৃপ্রতিজ্ঞা পালনার্থে রাজ্যত্যাগে বিচ্যুত হন না তিনি মাতার কাছে কৃত তুচ্ছ খাদ্যবিধির প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন না তা ভাবা বিচক্ষণের কর্ম নয়।
২২নং শ্লোকে ঐণেয় মাংসম্ বলতে তাই মৃগলিণ্ডিক /গজকন্দের সারভাগ বুঝতে হবে । নিরুক্তেও মাংস শব্দের অর্থ Meat করা হয়নি ।
মাংসং মানং বা মানসং বা মনোস্মিন সীদতীতি বা।।
(নিরুক্ত ৪.৩)
অর্থাৎ মাংস বলতে কোন মাননীয়,বুদ্ধিবর্ধক মানপছন্দ বস্তু যেমন ক্ষীর,রাবড়ি,ছানা,ফলের শাস ইত্যাদিকে নির্দেশ করে।



মদন পাল নিঘণ্টুতে বীজ বা ফলের শাঁসের জন্য মাংস শব্দের স্পষ্ট ব্যবহার রয়েছে --

রক্তপিত্তকরং কণ্ঠ্যং জিহ্বাহৃচ্ছোধনং পরম্ |
তন্মাংসং বৃংহণং শীতং গুরু পিত্তসমীরজিত্ ||৭৬||
[মদনপালনিঘণ্টু, ফলাদিবর্গ ( দ্রাক্ষাদিবর্গ )]








সুতরাং বর্ণিত সর্গের যথাসম্ভব অনুবাদ এইরকম -

ঐণেয় মাংসমাহৃত্য হালাং যক্ষ্যামহে বয়ম্ ।
কর্তব্যং বাস্তুশমনং সৌমিত্রে চিরজীবিভিঃ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২২)

=>ভ্রাতা সৌমিত্রি ! গজকন্দের সারভাগ সংগ্রহ করে আমরা বাস্তুপূজা করব ; কারণ , দীর্ঘজীবনাকাঙ্খীদের বাস্তুশান্তি অবশ্য কর্তব্য ।




মৃগ্য হত্বাহহনয় ক্ষিপ্রং লক্ষ্মণেহ শুভেক্ষণ ।
কর্তব্যঃ শাস্ত্রদৃষ্টো হি বিধিধর্মমনুস্মর ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৩)
=>>শুভদর্শন লক্ষ্মণ ! শীঘ্র একটি গজকন্দ তুলে এখানে নিয়ে এসো । শাস্ত্রীয় বিধিই অনুসরণ করা উচিত ; তাই ধর্মকে স্মরণ করো ।




ভ্রাতুর্বচনামাজ্ঞায় লক্ষ্মণঃ পরবীরহা ।
চকার চ যথোক্তং হি তং রামঃ পুনরব্রবীৎ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৪)

=>>বীর শত্রুহন্তা লক্ষ্মণ ভ্রাতার আদেশ মেনে নিয়ে তাঁর নির্দেশ অনুসারে কাজ করলে ; তাকে রামচন্দ্র আবার বললেন-
 
ঐণেয়ং শ্রপয়স্বৈতচ্ছালাং যক্ষ্যামহে বয়ম্ ।
ত্বর সৌম্যমুহূর্তোহয়ং ধ্রুবশ্চ দিবসো হ্যয়ম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৫)

=>>এই গজকন্দ সেদ্ধ করো , আমরা বাস্তুপূজাকরব । আজকের এই দিনটি "ধ্রুব"নক্ষত্রযুক্ত শুভ মুহূর্তো ;অতএব তাড়াতাড়ি করো ।


স লক্ষ্মণঃ কৃষ্ণ মৃগং হত্বা মেধ্যং প্রতাপবান্।
অথ চিক্ষেপ সৌমিত্রিঃ সমিদ্ধে জাতবেদসি ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৬)

=>>তখন সুমিত্রানন্দন প্রতাপশালী লক্ষ্মণ , কৃষ্ণবর্ণ গজকন্দ জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন ।
তৎ তু পক্কং সমাজ্ঞায় নিষ্টপ্তং ছিন্নশোণিতম্ ।


লক্ষ্মণঃ পুরুষব্যাঘ্রমথ রাঘবমব্রবীৎ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৭)

=>>অতঃপর,গজকন্দ সেদ্ধ হয়েছে বুঝে , লক্ষণ নরসিঃহ রঘুনন্দন রামকে বললেন-

অয়ং সর্বঃ সমস্তাঙ্গঃ শৃতঃ কৃষ্ণমৃগো ময়া ।
দেবতা দেবসংকাশ যজস্ব কুশলো হ্যসি ।।
( বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৬.২৮)

=>> সর্বাঙ্গসুন্দর এই কৃষ্ণবর্ণ গজকন্দ আমি সম্পূর্ণ সেদ্ধ করেছি ; দেবযজ্ঞে দক্ষ দেবতুল্য আপনি দেবযজ্ঞ করুন ।




শঙ্কা [২] বাল্মীকি রামায়ণ ৩.৪৭.২২-২৩ অনুসারে মাতা সীতা ব্রাহ্মণ বেশে ছদ্মবেশী রাবণ কে বলছেন -
"আপনি এখানে বিশ্রাম করুন, আমার স্বামী বন থেকে বিভিন্ন রকমের হরিণ, গোধাঃ, বন্য শূকর শিকার করে নিয়ে আসবেন"

সমাধান :

শ্লোকে মূলত "আমিষ" শব্দটি নিয়ে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ শঙ্কানুযায়ী বন্য হরিণ শূকর, হত্যা করে আমিষ অর্থাৎ তাদের মাংস আনার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু বৈদিক কোষ অনুযায়ী "আমিষ" অর্থ হচ্ছে ফল। 


 ঋগবেদ ১০।৯৪।৩ মন্ত্রে আমিষ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে।
মন্ত্রের পদার্থের অন্বয় অনুযায়ী " বৃক্ষস্য পক্বে আমিষি" অর্থাৎ বৃক্ষের পক্ব ফল কে আমিষ বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমিষ অর্থে শুধু মাংস নয় বরং এর ফল মূল।





অতএব রামায়ন এর শ্লোকের অর্থ এরূপ -

সমাশ্বস মুহূর্তং আগমিষ্যতি মে ভর্তা বন্যমাদায় পুষ্কলম্ ।
রুরূন্ গোধান্ বরাহাংশ্চ হত্বহহদায়ামিষং বহু ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ৩.৪৭.২৩)

=>> কয়েক মুহূর্তকাল বিশ্রাম করুন ; আপনি এখানে থাকতে (চাইলে) পারবেন । আমার স্বামী  রুরু, গোহ ও বন্য শূকর আদি হিংসক পশু কে বধ করে তপস্বী জনের উপভোগ্য যোগ্য বহু ফল মূল নিয়ে আসবে।

শঙ্কা [৩] বাল্মীকি রামায়ণ ২.৫২.১০২ অনুসারে ক্ষুধাকাতর রাম ও লক্ষ্মণ একটি বন্যশূকর, একটি সাদা পা ওয়াল পুরুষ কৃষ্ণসার, একটি ছোপ ছোপ দাগ বিশিষ্ট হরিণ এবং কালছে ফিতার ন্যায় দাগ বিশিষ্ট একটি বিরাট হরিণ শিকার করেছিলেন।

সমাধান :

শ্রীরামচন্দ্র ভক্ষণের জন্য কখনোই মৃগাদি শিকার করবেন না | কারণ তিনি বহুবার নিজেকে ফলাহারী বলেছেন | কেউ যদি হঠকারিতা বশতঃ বলে শ্রীরাম সত্যনিষ্ঠ ছিলেন না বা ভুলে গিয়েছেন শপথের কথা তা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কারণ রামায়ণেই বলা আছে

ন চানৃতকথো বিদ্বান্ বৃদ্ধানাং প্রতিপূজকঃ ।
অনুরক্তঃ প্রজাভিশ্চ প্রজাশ্চাপানুরজ্যতে ।।
বাল্মিকী রামায়ণ ২.১.১৪

=>>তিনি কদাচ অসত্যভাষী ছিলেন না ; বিদ্বান এবং বয়বৃদ্ধদের সম্মান কলতেন । প্রজারা তাঁর অনুরাগী এবং তিনিও প্রজানুরঞ্জক ছিলেন ।



নাবজ্ঞেয়শ্চ ভূতানাং ন চ কালবশানুগঃ ।
এবং শ্রেষ্ঠৈর্গুণৈর্যুক্তঃ প্রজানাং পার্থিবাত্মজঃ ।।
বাল্মিকী রামায়ণ ২.১.৩১

=>> রাজপুত্র রাম কারও কাছেই অবজ্ঞার [অনাদরের] পাত্র ছিলেন না , কালের বশীভূত ছিলেন না [অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনে স্বরূপ ও স্বভাব পরিবর্তন করতেন না ] । এইরকম শ্রেষ্ঠ গুণসমূহে যুক্ত শ্রীরাম প্রজা ও পার্থিবলোকেদের আদরণীয় ছিলেন ।



আর শ্রীরাম নিজেও মৃগয়া পছন্দ করতেন না |

নাত্যর্থমভিকাঙ্খামি মৃগয়াং সরযূবনে ।
রতির্হোষাতুলা লোকে রাজর্ষিগণসম্মতা ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৪৯.১৬)

=> সরযূতীরস্থ বনে বনে মৃগয়া আমি পছন্দ করিনা । কিন্তু রাজর্ষিগণ একে অতুলনীয় রতিক্রীয়া রূপে স্বীকার করেছেন ।

সুতরাং তিনি অবশ্যই বিপদসঙ্কুল বা কোন বিশেষ কারণবশতঃই মৃগ শিকার বা মৃগয়া করেছেন কিন্তু কখনোই ভক্ষণের জন্য নয় | পূর্বাপর বিবেচনা করে আমরা সঠিক অর্থ এই পাই যে -

স লোকপালপ্রতিমপ্রভাবস্তীর্ত্বা মহাত্মা বরদো মহানদীম্ ।
ততঃ সমৃদ্ধাঞ্ শুভশস্যমালিনঃ ক্রমেণ বৎসান্ মুদিতানুপাগমৎ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫২.১০১)

=>>অতঃপর লোকপালের মতো প্রভাবশালী মহাত্মা বরদাতা শ্রীরাম সেই মহতী নদী উত্তীর্ণ হয়ে ক্রমশঃ প্রভূত শস্যসমৃদ্ধ মঙ্গলময় বৎসদেশে সানন্দে উপস্থিত হলেন ।



সুন্দর সেখানে খাদ্যশস্যের কোন অভাব নেই তা স্পষ্ট |


তৌ তত্র হত্বা চতুরো মহামৃগান্ব রাহমৃশ্যং পৃষতং মহারুরুম্ ।
আদায় মেধ্যং ত্বরিতং বুভুক্ষিতৌ বাসায় কালে যযতুর্বনস্পতিম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৫৩.১০২)

=>>সেখানে তারা মৃগয়া হেতু বরাহ,ঋষ্য,পৃষত এবং মহারুরু নামে চারটি বিরাট হরিণকে প্রহার করলেন । তৎপশ্চাৎ ক্ষুধা নিবৃত্তি হেতু কন্দ-ফল-মূলাদি সংগ্রহ করে সায়ংকালে আশ্রয়ের জন্য শীঘ্র একটি বনস্পতির তলে গেলেন ।



শঙ্কা [৪] বাল্মীকি রামায়ণ ২.৯৬.১-২ অনুসারে শ্রীরাম মাতা সীতাকে খাবার জন্য মাংস নিবেদন করেছিলেন।

সমাধান :

মাংস শব্দের যথাযোগ্য অর্থ না জানার কারনে এরূপ শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর বনবাস কালে সীতার খাবারে মাংসের প্রয়োগ প্রকরণ বিরুদ্ধ। এর যথেষ্ঠ কারনও বিদ্যমান রয়েছে। যথাঃ বনবাসের সিদ্ধান্ত প্রথম যখন সীতাকে বলেন তখন সীতাদেবী বলেন -

অগ্রতস্তে গমিষ্যামি ফলমূলাশনা নিত্যং ভবিষ্যামি ন সংশয়ঃ ।
ন তে দুঃখং করিষ্যামি নিবসন্তী ত্বয়া সদা ।।
( বাল্মিকী রামায়ণ ২.২৭ ১৬)

=>>নিসন্দেহে, আপনার সাথে বনবাসের সময় আপনার দুঃখের কারণ না হয়ে প্রত্যহ ফলমূল আহার করে থাকব |


সীতাকে বনে গমন থেকে নিবৃত্ত করার জন্য শ্রীরাম বললেন -

অহোরাত্রং চ সন্তোষঃ কর্তব্যো নিয়তাত্মনা ।
ফলৈর্বৃক্ষাবপতিতৈঃ সীতে দুঃখমতো বনম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.২৮.১)
=>>ইন্দ্রিয়গুলোকে বশীভূত করে স্বয়ং বৃক্ষচ্যূত ফলাহারেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে । তাই সীতে ! বন দুঃখময় ।




এর উত্তরে শ্রীরামকে সীতা বললেন -

পত্রং মূলং ফলং যত্তু অল্পং বা যদি বা বহু ।
দাস্যসে স্বয়ামাহৃত্য যন্মেহমৃতরসোপমম্ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৩০.১৫)

=>[আপনি তথা শ্রীরাম] নিজে ফলপূলপত্র , অল্প বা বহু আহরণ করে যা আমায় দেবেন , তা-ই আভার কাছে অমৃততুল্য হবে ।


ন মাতুর্ন পিতুস্তত্র স্মরিষ্যামি ন বেশ্মনঃ ।
আর্তবান্যুপভুঞ্জানা পুস্পাণি চ ফলানি চ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৩০.১৬)

=>অরণ্যে ঋতুতে ঋতুতে জাত ফল ও পুষ্প উপভোগ করে, পিতা-মাতা এবং গৃহের কথা কখনোই স্মরণে আনব না ।
যে সর্গে আমরা মাংসের কথা পাই তার আগের সর্গেই শ্রীরাম সীতা দেবীকে বলেছেন -






উপস্পৃশংস্ত্রিষবণং মধুমূলফলাশনঃ ।
নায়োধ্যায়ৈ ন রাজ্যায় স্পৃহয়ে চ ত্বয়া সহ ।।
(বাল্মিকী রামায়ণ ২.৯৫.১৭)

=>>তোমার সঙ্গে ত্রিকাল-সন্ধ্যা-বন্দনাদি সমাপনান্তে মধু ও ফলমূল আহার করে আমি এতই সুখী যে অযোধ্যার বা রাজ্যলাভের আকাঙ্খা করি না ।






আর আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, ফল বা বীজের শাঁসকেও মাংস বলে | সুতরাং সঠিক অনুবাদ -


তাং তদা দর্শয়িত্বা তু মৈথিলীং গিরিনিম্নগাম্ ।
নিষসাদ গিরিপ্রস্থে সীতাং মাংসেন ছন্থয়ন ।।১।।

=>>একদিন রাম সীতাকে পার্বত্য নদী দেখিয়ে নানাবিধ ফল-মূলাদি দ্বারা সন্তুষ্ট করে সীতার সঙ্গে
এক পার্বত্য শীলার উপর উপবেশন করলেন ।

ইদং মেধ্যমিদং স্বাদু নিষ্টপ্তমিদমগ্নিনা ।
এবমাস্তে স ধর্মাত্মা সীতয়া সহ রাঘবঃ ।।২ ।।

(বাল্মীকি রামায়ণ ২.৯৬.১-২)

=>>সীতাসহ উপবিষ্ট ধর্মাত্মা রাম সীতাদেবীকে বলতে লাগলেন-'প্রিয়ে !এই ফলাদি পবিত্র , তথা সুস্বাদু ; কন্দ অগ্নিতে উত্তমভাবে পরিপক্ক ।



অর্থাৎ সর্বোপরি বিচার বিবেচনায় এটাই সিদ্ধ হয় যে, শ্রীরামচন্দ্র কখনো মাংসাহারী ছিলেন না। আমাদের বোঝার ভূল তথা ভূল ব্যাখ্যার জন্য এরূপ শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এটাও সত্য রামায়নে প্রক্ষিপ্ত প্রবেশ করেছে। কিন্তু আমরা শ্লোকগুলো কে প্রক্ষিপ্ত না দেখিয়ে সেগুলোর ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি।  যদি কেউ এই অনুবাদ না মানেন তবে তাকে স্বীকার করতেই হবে হয় এই শ্লোক প্রক্ষিপ্ত নয়তো শ্রীরাম কথা রাখতে পারেননি( যা মানলে   তার চরিত্রে কালিমা লেপন করা হবে)। রামভক্তরা সঠিক দিক বিবেচনা করুন।  একজন সত্য রাম ভক্তদের নিকট ইহা সমাদৃত হবে বলে আশা করি।



।। জয় শ্রী রাম।।

  1. ভালো ব্যাখ্যা

    ReplyDelete
  2. কিন্তু, তুমি ভুলে যাচ্ছ যে রামচন্দ্র তিনি মানুষ্য রূপে লীলা করছেন, অর্থ্যাৎ মানুষ যা ভুল করে তিনিও সেরকমই ভুল করেন। মানুষ অনেক সময়ই কথা রাখলেও সেই কথা গুলো পালন করতে পারে না, এটা মানুষের সাধারণ স্বভাব। তাঁর মিত্র নীষাদ রাজ গুহ কে বিদায় দেওয়ার তিন দিনের মাথায় তাঁদের কাছে কোনো খাবার না থাকায় অত্যন্ত খিদের জ্বালায় তাঁরা নদী পার হওয়ার সময় মাছ আর শুকর শিকার করে খেয়েছিলেন।

    ReplyDelete