https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

প্রজাপতি ও ঊষা - অশ্লীলতা নাকি প্রাকৃতিক বর্ণনা মাত্র

Thursday, June 14, 2018



বর্তমানে বেদ বিরোধী নাস্তিক ও কাঠমোল্লারা তাদের ভাবপিতাদের কাছ থেকে বেদ ও অন্যান্য বৈদিক সাহিত্যে অশ্লীলতা অন্বেষণে ব্যস্ত তাঁদের বহুল প্রচারিত একটি বিষয় শতপথ ব্রাহ্মণে প্রজাপতি ও তাঁর কন্যার তথাকথিত ব্যভিচার যা কিনা পরবর্তীতে প্রচলিত "পুরাণ" সমূহে বিস্তৃত রূপে বিকৃত ও বর্ধিত হয়েছে চলুন দেখে নেই তাঁদের দাবির ভিত্তি কতটা অজ্ঞানতা প্রসূত ও ভিত্তিহীন।


প্রথমে শতপথে ব্রাহ্মণ এ আমরা পাচ্ছি 

प्रजापतिर्ह वै स्वां दुहितरमभिदध्यौ । दिवं वा उषसं वा मिथुन्येनया
स्यामिति तां सम्बभूव - १/७/४/१

=>>প্রজাপতি নিজের দুহিতা দ্যৌ বা ঊষাকে লক্ষ্য করে কামনা করেছিলেন-"আমি যদি এর দ্বারা মিথুনবান্ হতে পারি ।" এবং[এইরূপ চিন্তাকরে] তিনি তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন ।।১।।



এই স্থলে প্রজাপতি অর্থ সূর্য কারণ -

য হৈব সবিতা স প্রজাপতি ; শতপথ ১২।৩।৫।১





সুতরাং সূর্য হতে সৃষ্ট উষা তাঁর দুহিতা বা কন্যা স্বরূপ

तद्वै देवानामाग आस । य इत्थं स्वां दुहितरमस्माकं स्वसारं
करोतीति - १/७/४/२

=>>দেবগণের নিকট এটা[এই কাজ] অপরাধ বলে মনে হয়েছিল । [তারা বলেছিলেন]-যিনি নিজের
দুহিতার প্রতি-আমাদের ভগিনীর প্রতি এইরূপ [আচরণ] করেন [তিনি অপরাধী] ।।২।।





ते ह देवा ऊचुः । योऽयं देवः पशूनामीष्टेऽतिसंधं वा
अयं चरति य इत्थं स्वां दुहितरमस्माकं स्वसारं करोति विध्येममिति तं
रुद्रोऽभ्यायत्य विव्याध तस्य सामि रेतः प्रचस्कन्द तथेन्नूनं
तदास - १/७/४/३

 =>>সেই দেবগণ বলেছিরেন-"এই যে দেব পশুগণের অধীশ্বর [রুদ্র],যিনি নিজের দুহিতার প্রতি-আমাদের ভগিনীল প্রতি এইরূপ[আচরণ] করেছেন,ইনি মর্যাদা অতিক্রম করে বিচরণ করছেন । [আসুন]এঁকে আমরা তাড়না করি ।" রুদ্র[বাণ] আকর্ষণ করে তাঁকে বিদ্ধ করলেন এবং তার অর্ধেক রেত স্খলিত হয়ে পড়ল । সেইরূপ এটা হয়েছিল ।।৩।।





तस्मादेतदृषिणाभ्यनूक्तम् । पिता यत्स्वां दुहितरमधिष्कन् क्ष्मया
रेतः संजग्मानो निषिञ्चदिति तदाग्निमारुतमित्युक्थं
तस्मिंस्तद्व्याख्यायते यथा तद्देवा रेतः प्राजनयंस्तेषां यदा देवानां
क्रोधो व्यैदथ प्रजापतिमभिषज्यंस्तस्य तं शल्यं निरकृन्तन्त्स वै
यज्ञ एव प्रजापतिः - १/७/४/४

=>>এইজন্য ঋষির দ্বারা এটি[এই বিষয়টি] উক্ত হয়েছে-"ঋগ্বেদ ১০.৬১.৭ মন্ত্র পাঠ" । সেই স্তুতি[উক্থ] আগ্নিমারুত[শস্ত্র তথা ঐ বাণ] সেখানে দেবগণ সেই রতে যেভাবে [পুনর্বার] উৎপাদিত করেন তা ব্যাখ্যাত হয়েছে । সেই দেবগণের ক্রোধ যখন প্রশমিত হল তখন তাঁরাপ্রজাপতির চিকিৎসা করলেন এবং [রুদ্র কর্তৃক নিক্ষিপ্ত] সেই শল্যকে কেটে ফেললেন । কারণ সেই প্রজাপতি যজ্ঞই ।।৪।।




সুতরাং যিনি প্রথমে সূর্য ছিলেন তিনি পরবর্তীতে যজ্ঞ সুতরাং এই পুরো ব্রাহ্মণাংশটি মূলত প্রাতঃকালীন যজ্ঞবিধি নিয়ে আলোচনা



চরম সনাতন ধর্ম ও বেদ বিদ্বেষী বিকৃতকারী ম্যাক্স মুলার কর্তৃক সম্পাদিত ও জুলিয়াস ইগলিং অনুবাদকৃত শতপথেও একে রূপই বলা হয়েছে


প্রসঙ্গতঃ ঐ মন্ত্রটির ব্যাখ্যাসহ সরলার্থ নিম্নরূপঃ

মধ্যা যৎকত্বমভবদভীকে কামং কৃণ্বানে পিতরি যুবত্যাম্।
মনানগ্রেতো জহতুর্বিয়ন্তা সানৌ নিষিক্তং সুকৃতস্য যোনৌ।।
(ঋগবেদ ১০।৬১।৬)

পদার্থঃ (কামম্) যথেচ্ছ রূপে (পিতরি) সূর্য (যুবত্যাম্) দ্যুলোক বা ঊষার (কৃণ্বানে) করার পর (যত্) যে (কত্বম্) কর্ম (মধ্যা) অন্তরিক্ষে (অভীকে) তাহার সমীপ (অভবত্) হয় তাহাতে (মনানক্) স্বল্প (রেতঃ) অরুণ কিরণ নামক তেজ কে (বিয়ন্তা) পরস্পর অভিগমনকারী উভয়ে (জহতু) ছেড়ে দেয়। এই তেজই যা প্রজাপতি সূর্য দ্বারা (সুকৃতস্য) উত্তমকর্মের (সানৌ) উঁচু (যোনৌ) স্থান দ্যুলোকে (নিষিক্তম্) নিষিক্ত থাকে।

ভাবার্থঃ আদিত্য এবং ঊষা বা দ্যুলোকের পরস্পর অভিগমন দ্বারা যে কর্ম হয় তাহাতে আদিত্য অরুণ কিরণ নামক তেজ কে উষা বা দ্যুলোকে ছেড়ে দেয় এবং দিনের উৎপত্তি হয়। সূর্যের এই তেজ দ্যুলোকে পূর্ণরূপে পড়ে।



পিতা যৎস্বাং দুহিতরমধিষ্কন্ক্ষ্মযা­ রেতঃ সঞ্জগ্মানো নি সিঞ্চত্।
স্বাধ্যোহজনয়ন্ব্রহ্ম­ দেবা বাস্তোষ্পাতিং ব্রতপাং নিরতক্ষন্।।
(ঋগবেদ ১০।৬১।৭)


পদার্থঃ (পিতা) প্রজাপতি আদিত্য (যত্) যখন (স্বাম্) নিজ (দুহিতারম্) ঊষা অথবা দ্যুলোক কে (অধিষ্কন্) প্রাপ্ত করে তখন (ক্ষ্ময়া) পৃথিবীর সাথে সংগত হয়ে (রেতঃ) নিজ অরুণ কিরণ নামক তেজ কে (নিসিঞ্চত্) আকাশে সিক্ত করে তখন (স্বাধ্যঃ) উত্তম প্রকারে প্রকট (দেবাঃ) দিব্য শক্তি - সূর্য কীরণ (ব্রহ্ম) অগ্নি কে (অজনয়ন্) উৎপন্ন করে এবং (ব্রতপাম্) ব্রতের পালক (বাস্তোঃ পতিম্) বাস্তোষ্পতি রুদ্র নামক অগ্নি কে (নিঃ অতক্ষন্) নির্মিত করে।।


ভাবার্থঃ আদিত্য যখন দ্যুলোক অথবা উষা কে অভিব্যাপ্ত করে তখন পৃথিবীর সাথে সংগত হয়ে আকাশে তেজ কে সিক্ত করে তাহা দ্বারা দিনের প্রকাশ এবং অগ্নি আদি উৎপন্ন হয়। এই অগ্নি কো বাস্তোষ্পতি রুদ্র = অগ্নি বলা যায়।



এই মন্ত্র এর আরো এক প্রকার অর্থ পড়ুন এই লিংকে http://back2thevedas.blogspot.com/2016/07/blog-post_30.html

পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ ৮.২.১০ এ এই একই প্রকার বর্ণনা রয়েছে পাশ্চাত্য পণ্ডিত যারা নাকি বেদ অনুবাদ বিকৃত করতে সিদ্ধহস্ত তাঁরা পর্যন্ত এই কাহিনী রূপক বলেছেন
অনুবাদক তাঁর টীকাতে বলেছেন 


 দেবতারা একটি যজ্ঞের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা প্রথম উচ্চারণ করলেন; “কার্যক্রম দ্বারা যা কিছু বিকট/ভয়ঙ্কর উৎপন্ন হয়েছে, যজ্ঞকর্ম সম্পাদনের পূর্বে তা লুপ্ত করা হোক, যেন তা যজ্ঞকর্মে প্রক্ষিপ্ত না হয়। অর্থাৎ, বিকট যা কিছু উৎপন্ন হয়েছে, যজ্ঞকর্ম আরম্ভের সুবিধার্থে তা পরিচ্ছন্ন হেতু দুটি মাটির তৈরি পাত্রের মধ্যে রাখলেন এবং তারপরই তাঁরা যজ্ঞকরমাদি শুরু করলেন। এইদুই মাটির পাত্র হতে অখল” (যিনি খলবা বিদ্বেষভাবাত্মক নন) এমন দেবতার জন্ম হল, যার নাম শিব। যেহেতু তাঁর জন্ম মাটির পাত্র বা সরা হতে, সেহেতু দেবতারা ( অর্থাৎ সম্ভবত বইয়ের লেখক) তাঁর নামকরণ সর্ব বা রুদ্ররুপে করতে চেয়েছেন বলেই প্রতিভাত হয়। এখানে যার জন্ম হল, তিনি হলেন অগ্নি (কারণ অগ্নি কখনও কখনও রুদ্র নামে ও পরিচিত হয়েছেন), যারা এটা জানেন, তাঁরা সম্ভবত এমন নামকরণে অবাক হবেন না। এই (অগ্নি/রুদ্র) দেবতাদের প্রশ্ন করলেন; “কেন আপনারা আমাকে সৃষ্টি করে অস্তিত্বধারণ করিয়েছেন?” “অতিসাবধানে লক্ষ্য করার জন্য” – উত্তর আসল।উল্লঙ্ঘনকারীকে তুমি হত্যা করবে প্রজাপতি এই মুহূর্তে তাঁর আপন সন্তান ঊষার উপর মন নিবিষ্ট করলেন। রুদ্র তাঁর ধনুকে তীর সংযোজন করে প্রজাপতির দিকে ছুড়লেন। প্রতিক্রিয়ায় প্রজাপতি হরিণসদৃশ (Antelope) রুপ ধারণ করে গাছে উপরে উড্ডীন হন। রুদ্র যে ছুঁড়েছিলেন তা ছিল ত্রিদন্ত বিশিষ্ট। ঐ অস্ত্র প্রজাপতিকে আঘাত করলে তাঁর (প্রজাপতির) বীর্যের পতন হয়ে হিমাবত এ এসে পড়ে। এটি মানুষএ পরিনত হয় (সম্ভবত একটি হ্রদএর কথা বলা হচ্ছে, যা সম্ভবত মানস সরোবরএর অগ্রদুত)। এমন সময় দেবতা ও ঋষিগন একত্রে জড়ো হয়ে সমস্বরে ঘোষণা করলেন এটি সংরক্ষিত হোক”! তাঁরা বললেন; “এর যেন দূষণ না হয়” (মা ইদম্‌ দুষত)। যেহেতু এটি অদূষণীয় বা মাদূষম্‌”, তা ধীরে ধীরে হয়ে গেল মানুষম্‌বা মানুষ।






এই শতপথের কাহিনীই মূলত ব্রহ্মাণ্ড, ভাগবত পুরাণে বিস্তৃত ও বিকৃত হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে

স্কন্দ পুরাণের ব্রহ্ম খণ্ড অধ্যায় ৪০ এ এই কাহিনী অন্যরকম বিবৃত হলেও তা যে মূলত নক্ষত্রের গতিপথের স্থূল কাহিনীতা ঐ লেখতেই বলা আছে





সুতরাং তাঁদের আরোপ যে মিথ্যাচার তা বলা বাহুল্য মাত্র