আজকাল অনলাইনে কিছু তমোনিষ্ঠ পাপবুদ্ধিদের আধিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বেদের মহত্ততার হানি ঘটানোর জন্য এদের প্রচেষ্টা। যদিও বেদের মতো উচ্চ আধ্যাত্মিক জ্ঞান এসব পাপ বুদ্ধিদের মস্তিষ্কে নেই। যার ফলে এরা নিজেদের অশ্লিলপূর্ণ জীবনের নোংরা জ্ঞান দিয়ে বেদ বিচার করতে আরম্ভ করেছে।যার দরুন এরা শুধু নিজেদেরই নয় নিজেদের জন্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এসব কুলাঙ্গার বেদ মন্ত্রে কিছু অশ্লিলতা দাবী করেছে।
ভগবান পিতা আর কণ্যার যৌন সঙ্গমের ফলে মনুষ্য তৈরী করেছিলো।
(ঋগবেদঃ ১০।৬১।৬-৭)
দাবির সত্যতাঃ
নিজের জন্মগত ত্রুটির হেতু এসব কুলাঙ্গার বেদকে অশ্লিল বলার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। বেদ মন্ত্রার্থ বুঝতে হলে প্রাচীন গ্রন্থ সমূহ যেমনঃ নিঘন্টু, নিরুক্ত, পাণিনীর ব্যকরনের মতো শাস্ত্র এবং ব্যাখ্যার জন্য ব্রাহ্মণ গ্রন্থের প্রয়োজন হয়। তবেই মন্ত্রের যথার্থ ভাবার্থ খুজে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অপপ্রচারকারী কোন দিক বিবেচনা না করেই সোজা বেদকে অশ্লিল বলে চালিয়ে দিলেন। কিন্তু তার এই দাবীটা কতটা সত্য তা দেখা যাক -
প্রথমত মন্ত্র দুটিতে মূলত অলংকারিক বর্ণনা এসেছে। এখানে পিতা প্রজাপতি হচ্ছে সূর্য [ প্রজাপতি বৈ সুপর্নো গুরত্বানেষ সবিতা, শতঃ ১।২।২।৪]। তার দুটি কণ্যা ১ম প্রকাশ ২য় ঊষা। যে দ্রব্য যাহা হইতে উৎপন্ন হয় বলে তাকে উক্ত দ্রব্যের সন্তান বলা হয়। ঊষা যা রাত্রির তিন বা চারঘটিকায় পূর্ব দিশায় রক্তবর্ণ দৃষ্টিগোচর হয় তা সূর্যের কীরণ হতে উৎপন্ন বলে তাকে কণ্যা হয়। ঊষার সম্মুখে সূর্যের যে কিরণ পতিত হয় তাহাতে বীর্য স্থাপন রূপ কার্য হয়ে থাকে। এই দুইয়ের সংযোগ দ্বারা পুত্র অর্থাৎ দিবস উৎপন্ন হয়।
নিরুক্ত ৪।২১ এ বলা আছে, "তত্র পিতা দুহিতু গর্ভং দধাতি পর্জন্য পৃথিব্যা "। অর্থাৎ পিতার যে পর্জন্য অর্থাৎ জলরূপী যে মেঘ তাহার কণ্যা ভাব পৃথিবী হয়ে থাকে। ঐ মেঘ যখন পৃথিবীরূপ কণ্যাতে বৃদ্ধি দ্বারা জলরূপী বীর্য ধারন করে। তখন ঐ পৃথিবী গর্ভবতী হইয়া কিছুকাল থাকিয়া পরে ঔষধাদি রূপ অনেক পূত্র উৎপন্ন করে।
মন্ত্র দুটির সরলার্থ এবং ভাবার্থঃ
মধ্যা যৎকত্বমভবদভীকে কামং কৃণ্বানে পিতরি যুবত্যাম্।
মনানগ্রেতো জহতুর্বিয়ন্তা সানৌ নিষিক্তং সুকৃতস্য যোনৌ।।
(ঋগবেদ ১০।৬১।৬)
পদার্থঃ (কামম্) যথেচ্ছ রূপে (পিতরি) সূর্য (যুবত্যাম্) দ্যুলোক বা ঊষার (কৃণ্বানে) করার পর (যত্) যে (কত্বম্) কর্ম (মধ্যা) অন্তরিক্ষে (অভীকে) তাহার সমীপ (অভবত্) হয় তাহাতে (মনানক্) স্বল্প (রেতঃ) অরুণ কিরণ নামক তেজ কে (বিয়ন্তা) পরস্পর অভিগমনকারী উভয়ে (জহতু) ছেড়ে দেয়। এই তেজই যা প্রজাপতি সূর্য দ্বারা (সুকৃতস্য) উত্তমকর্মের (সানৌ) উঁচু (যোনৌ) স্থান দ্যুলোকে (নিষিক্তম্) নিষিক্ত থাকে।
ভাবার্থঃ আদিত্য এবং ঊষা বা দ্যুলোকের পরস্পর অভিগমন দ্বারা যে কর্ম হয় তাহাতে আদিত্য অরুণ কিরণ নামক তেজ কে উষা বা দ্যুলোকে ছেড়ে দেয় এবং দিনের উৎপত্তি হয়। সূর্যের এই তেজ দ্যুলোকে পূর্ণরূপে পড়ে।
পিতা যৎস্বাং দুহিতরমধিষ্কন্ক্ষ্ময়া রেতঃ সঞ্জগ্মানো নি সিঞ্চত্।
স্বাধ্যোহজনয়ন্ব্রহ্ম দেবা বাস্তোষ্পাতিং ব্রতপাং নিরতক্ষন্।।
(ঋগবেদ ১০।৬১।৭)
পদার্থঃ (পিতা) প্রজাপতি আদিত্য (যত্) যখন (স্বাম্) নিজ (দুহিতারম্) ঊষা অথবা দ্যুলোক কে (অধিষ্কন্) প্রাপ্ত করে তখন (ক্ষ্ময়া) পৃথিবীর সাথে সংগত হয়ে (রেতঃ) নিজ অরুণ কিরণ নামক তেজ কে (নিসিঞ্চত্) আকাশে সিক্ত করে তখন (স্বাধ্যঃ) উত্তম প্রকারে প্রকট (দেবাঃ) দিব্য শক্তি - সূর্য কীরণ (ব্রহ্ম) অগ্নি কে (অজনয়ন্) উৎপন্ন করে এবং (ব্রতপাম্) ব্রতের পালক (বাস্তোঃ পতিম্) বাস্তোষ্পতি রুদ্র নামক অগ্নি কে (নিঃ অতক্ষন্) নির্মিত করে।।
ভাবার্থঃ আদিত্য যখন দ্যুলোক অথবা উষা কে অভিব্যাপ্ত করে তখন পৃথিবীর সাথে সংগত হয়ে আকাশে তেজ কে সিক্ত করে তাহা দ্বারা দিনের প্রকাশ এবং অগ্নি আদি উৎপন্ন হয়। এই অগ্নি কো বাস্তোষ্পতি রুদ্র = অগ্নি বলা যায়।
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী - ০২
"হে পুরুষ! তোমার পুরুষাঙ্গ বড়ো আর দীর্ঘ না হলে তুমি পিতা হতে পারবে না"
(অথর্ববেদ ২০।১২৬।১৭)
দাবীর সত্যতাঃ
প্রথমত মন্ত্রে না আছে পুরুষাঙ্গের কথা না আছে সেটা বড় বা দীর্ঘ করার কথা। মন্ত্রে "ঈশ" শব্দটি এসেছে যার অর্থ ঐশ্বর্য। এবং একজন ব্যক্তির ঐশ্বর্য তখনই বৃদ্ধি পাবে যখন সে কর্মঠ এবং কর্ম চিন্তনে রত থাকবে। অলস ভাবে বসে থাকলে তার কখনও ঐশ্বর্য প্রাপ্তি ঘটবে না। ইহাই মূলত উক্ত মন্ত্রের মূল ভাবার্থ।
আর ঈশ্বর্য্য প্রাপ্তির জন্য পুরুষাঙ্গ দীর্ঘ বা বড় হওয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটা কাম চাহিদার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যা ওই পাপবুদ্ধির মস্তিস্কে প্রবেশ করেছে।
মন্ত্রটির অনুবাদ পদার্থসহ দেখে নেওয়া যাক -
ন সেশে যস্য রোমশং নিষেদুষো বিজৃম্ভতে।
সদীশে যস্য রম্বতেন্তরা সকথ্যা কপৃদ বিশ্বস্মাদিন্দ্র।।
(অথর্বববেদ ১০।১২৬।১৭)
পদার্থঃ (সঃ) সেই মনুষ্য (ন ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় না ( যস্য নিষেদুষঃ) যে বসে থাকে [অলস] (রোমশম) কেশযুক্ত মস্তকে (বিজুম্ভতে) হাই তোলে (সঃ ইত) সেই পুরুষ (ঈশে) ঐশ্বর্যবান হয় (যস্য) যার (কপৃত) শির পালনকারী কপাল (সকথ্যা অন্তরা) দুই জঙ্ঘার মাঝে [ চিন্তনে] (রম্বতে) ঝুকে থাকে (ইন্দ্র) ইন্দ্র (বিশ্বস্মাত্) সবার থেকে (উত্তর) উত্তম।
=>> অপপ্রচারকারীর দাবী - ০৩
অগ্নি নাকি কুমারীদের lover। Yama, indeed, is what is born, Yama, what shall be born; he [Agni] is the maidens’ lover, the matrons’ lord.
(Rig Veda 1.66.4)
দাবীর সত্যতাঃ
এসব কুলাঙ্গার দের মস্তিষ্কে এরকম জ্ঞান থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই মন্ত্রে উপমালঙ্কারের প্রয়োগ হয়েছে। এখানে রাত্রীকে আদিত্যের কণ্যাবৎ বলা হয়েছে ( দিবঃ দুহিত, ১০।১২৯।৮) এবং কন্যাবৎ রাত্রী আদিত্যের জার, কেননা রাত্রীতে দিবসের লয় হয় পুনরায় সূর্যই রাত্রীর নিবৃত্তকারী এইজন্য সূর্যকে রাত্রীর জার বলে " আদিত্যোত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা (নিরুক্ত ৩।১৬)।
মন্ত্রটির ভাবার্থ এই যে, মনুষ্য বিদ্যা দ্বারা উত্তম শিক্ষা দ্বারা সিদ্ধ হয়ে শত্রুর উপর বিজয় প্রাপ্ত করবে। যেমন ধনুর্বেদ সমন্ধ্যে জ্ঞাত বিদ্বান লোক শত্রুদের উপর অস্ত্র শস্ত্র ছুড়ে তাদের ছেদন করে। এভাবে সেনাপতি সব দুঃখকে নাশ করবে।
মন্ত্রটির সত্যার্থ দেখে নেওয়া যাক-
সেনেব সৃষ্টামং দধাত্যস্তুর্ন দিদ্যুত্ত্বেষপ্রতীকা।
যমো হ জাতা যমো জনিত্বং জারঃ কনীনাং পতির্জনীনাম্।।
পদার্থঃ হে মনুষ্য! তোমরা যে সেনাপতি (যমঃ) নিয়মকারী (জাতঃ) প্রকট (যমঃ) সর্বদা নিয়মকর্তা (জরিত্বম্) জন্মাদি কারণযুক্ত (কণীনাম) কন্যাবত রাত্রীর (জারঃ) আয়ুর হননকর্তা সূর্যের সমান (জননীনাম্) উৎপন্ন প্রজার (পতিঃ) পালনকর্তা (সৃষবটা) প্রেরিত (সেনেব) উত্তম শিক্ষা কে প্রাপ্ত হয়ে বীর পুরুষের বিজয়কারী সেনার সমান (অস্তুঃ) শত্রুর উপর অস্ত্র শস্ত্র চালনাকারী (ত্বেষপ্রতীকা) দীপ্তির প্রতীতি কারী (দিদ্যুত্র) বিজলীর সমান (অমম্) অপরিপক্ব বিজ্ঞানযুক্ত জন কে (দধাতি) ধারন করেন, তাহার সেবন করো।
অতএব বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান হওয়ার দরুন এতে কোন অশ্লিলতা নেই। তাই এসব অপপ্রচার থেকে দূরে থাকুন।
0 মন্তব্য(গুলি)