https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

R. L. Kashyap ও বেদভাষ্য - সত্য মিথ্যার অন্তরালে

Saturday, July 21, 2018

 

 
বেদের অনেক প্রকার ভাষ্য ও অনুবাদ প্রচলিত । তার মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত, প্রচারিত সায়ণ ভাষ্য। বঙ্গভাষাতে রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ লোকপ্রিয়। কিন্তু তাতে গোমাংস, অশ্লীল , অসঙ্গতি ভাবযুক্ত অনুবাদ পেয়ে স্বাধ্যায়ী বেদপ্রেমী পাঠক হতাশাগ্রস্থ। তারা সর্বদাই বেদের ভাবমাধুর্য্য তথা শ্লীল ভাষ্যের অনুসন্ধানে ব্যস্ত। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী বেদের ভাষ্য অশ্লীলতা মুক্ত এবং গভীর অর্থ প্রকাশ করে। তথা আর্য সমাজের অনেক পণ্ডিত কর্তৃক ব্যাখ্যাত বেদ ভাষ্য অনেক সুন্দর ব্যখ্যাসম্বলিত। কিন্তু কিছু সম্প্রদায়ের আর্য সমাজ এবং দয়ানন্দ জীর প্রতি খুব বিদ্বেষ। তাই তারা বেদের ভালো অনুবাদ খুঁজতে অতি মরিয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তাদের আর এল কাশ্যপের অনুবাদের উপর খুব প্রেম প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। তারা দয়ানন্দ জীর ভাষ্যকে নিন্দা করে জনসম্মুখে আর এল কাশ্যপের অনুবাদ প্রচার করে। তো আসুন দেখা যাক তাদের এ সাধের অনুবাদে কি রয়েছে -


প্রকৃতপক্ষে শ্রী অরবিন্দ বা কপালী শাস্ত্রীর ব্যাখ্যাসূত্র বাদে তার নিজস্ব ব্যাখ্যার স্থান অত্যন্ত দুর্বল । কিন্তু তিনি যে প্রচেষ্টা করেছেন তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য । 
 
 


  •  ঋগ্বেদ ২.৭.৫ এ বন্ধ্যা ও গর্ভিণী গাভীর আহুতি  । অশ্ববধ বা অন্যত্র সায়ণকে অস্বীকার করে এখানে ঠিকই মেনে নিচ্ছেন সেখানে অন্যত্র গো = রশ্মি তিনিই করেছেন । বিষয়টি দুঃখজনক  ।
 


  • অশ্লীলতা (ঋগ্বেদ ১/১২৬/৬)সায়ণভাষ্যের ভাবানুবাদ-
"ভাবয়ব্য রাজার পত্নী রোমশা সম্ভোগ প্রার্থিনী হইলে পর রাজা তাহাকে অপৌঢ়া (অপ্রাপ্তরজধর্ম্মা) জানিয়া পরিহাস করিয়া বলিতেছেন যে, এই সম্ভোগযোগ্যা রমণী উত্তমরূপে আলীঙ্গনবদ্ধা হইয়া শতবৎসা নকুলীর ন্যায় দীর্ঘকাল পর্যন্ত রমণ  করে। বসুরেতযুক্তা এই রমণী আমাকে (স্বনয়রাজাকে) বসুবার সম্ভোগসুখ প্রদান করে ।"  (ঋ ১/১২৬/৭)"স্বামীর সঙ্গে পরিহাস করতে করতে রোমশা তাঁকে বলছেন, তুমি আমার গোপনীয় নিম্নাংশ স্পর্শ করে দেখো- সেখানের কেশগুলি ছোট বলে ভেবো না । আমার রোমগুলি বড় বড়, কাজেই সম্ভোগযোগ্যা ইত্যাদি"


 
 
কশ্যপ এই দুটো মন্ত্রেই একবার ইতিহাস দেখিয়েছেন আবার বলছেন পরবর্তী কালের সংযোজন হওয়া সম্ভব ।  



  • (ঋগ্বেদ ১০।৬১।৬-৭) সায়ণভাষ্যে তথাকথিত পিতা কন্যার মিলন নিয়ে তিনি অরবিন্দ কপালী শাস্ত্রী কারো ব্যাখ্যাই না পেয়ে এই সূক্তের ৫-৮ মন্ত্র সূক্তের বাইরে এনে দিয়েছেন ও অস্পষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন  । 
 
 






অনুবাদগুলো সায়ণভাষ্য অনুযায়ী অনুদিত রমেশ চন্দ্র দত্ত ও সায়ণ ভাষ্য এর হিন্দি অনুবাদ থেকে নেওয়া

কার্ষ্ণরা "ন তস্য প্রতিমা অস্তি " নিয়ে এক যুক্তি দেয় যার জবাব পড়ুন  এই লিংকে-  নিষ্কলঙ্ক মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী - পর্ব ২

গো আহুতির শঙ্কাগুলোর সমাধান এই লিংকে -বেদ যজ্ঞে গো আহুতি তথা গো মাংস ভক্ষণের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব
 
 ঋগ্বেদ ১.৪১.৯ এর নোটে তিনি যাস্ক ও সায়ণ উভয়ের ব্যাখ্যাই মূল টেক্সট অনুযায়ী ভিত্তিহীন বলেছেন ।
 

 
আরো মজার বিষয় ইনি ছিলেন EEEর প্রফেসর । উনি নিজে কোন পরম্পরার অনুসারী না বরং শ্রী অরবিন্দ ও কপালী শাস্ত্রীর ব্যাখ্যায় অনুপ্রাণিত হয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন । আবার এই শ্রী অরবিন্দই মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকে নিয়ে স্বতন্ত্র একটী রচনায় যে উচ্চ প্রশংসা করেছেন তা স্বাধ্যায়ী মাত্রেই অবগত । তাহলে সব সময় পরম্পরা , বিনিয়োগের ছুতো দেওয়া মুষ্টিমেয় অর্বাচীন যে বৃথা একটা বিপক্ষ তৈরি করার চেষ্টা করছে সহজেই বোঝা যাচ্ছে । 

একটা বৃথা যুক্তি হল তিনি পদ্মশ্রী । হ্যাঁ তার অবদানের জন্য তিনি পদ্মশ্রী যা কিনা ভারতের চতুর্থ রাষ্ট্রীয় পেয়েছেন  । এতে তার ভাষ্যই যদি একদম যথাযথ হয় তবে শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর তৃতীয় রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পেয়েছেন । 
 
তার ব্যাখ্যাও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও তিনি পৃথক বইতে সায়ণের ভুল প্রদর্শন করে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যই যথাযথ তা দেখিয়েছেন । সেটাও কেন মানছো না পদবীর হিসেব করলে  ? এগুলো শুধুমাত্র অল্পপড়ুয়াদের নিকট বাগাড়ম্বর করা । 



মিশনারী মাদার তেরেসা যে কিনা ভারতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করতে দায়ী কিংবা বাবা সাহেব আম্বেদকর যিনি কিনা বেদ , মনুস্মৃতিসহ সকল সনাতন শাস্ত্র খণ্ডন-নিন্দা করেছেন , বেদে ও ব্রাহ্মণরা গোমাংস আহার করতো বলেছেন , মনুস্মৃতি পুড়িয়েছেন , বামপন্থী ড. অমর্ত্য সেন  - এরা ভারতের সর্ব উচ্চ সম্মান ভারত রত্ন প্রাপ্ত ।  
 
 

 
 


 
 
 
আপনাদের যুক্তি অনুযায়ী কেবল পদ্মশ্রী পাওয়াতেই যদি আর এল কশ্যপ সব কিছুর উপরে উঠে যান তাহলে মাদার তেরেসা বা আম্বেদকর আরো বড় ও হায়েস্ট উপাধি পাওয়ায় তাঁদের মতামত নিশ্চয়ই বেশী গ্রহণযোগ্য হবে  ? 

অর্থাৎ পাঠক বুঝতেই পারছেন এসব ভ্রান্ত মতামত ও যুক্তি কেবল আর্যসমাজের বিরোধের জন্য মাত্র । যাদের নিজেদের নির্দিষ্ট কোন ভিত্তি কিংবা মন্তব্য নেই তারা নানা সময় নানাদিকে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের মুখরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত থাকে ও অপরের প্রতি বৃথা নিন্দা করে  ।

 
ঋগ্বেদ ১.১৬২ এর অশ্বমেধের সূক্তে শুরুতে বলেছেন  অশ্ব ছেড়ে দেওয়া হতো ও পশুবধ পরবর্তী কালের ব্যাখ্যা যেমনটা রামায়ণে আছে  । 
 



এখানে অনেকে বলতে পারে তিনি আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করেছেন তাই দ্রব্যযজ্ঞ অনুযায়ী অর্থ করেননি । কিন্তু সেসব মূর্খরা এটা এড়িয়ে যায় যে দ্বিবিধ ব্যাখ্যা করা আর ' পশু / ছাগ কোন বধ উল্লেখই নেই ' এটা বলার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে  । দেখুন ওই সূক্তের মন্ত্রের নোটে - 

১.১৬২.২- অজ অর্থ ছাগ করার কোন দরকার নেই এবং এখানে বধ নেই বলেছেন । যদি দ্রব্যযজ্ঞও এখানে স্বীকার করা হতো তাহলে নিশ্চয়ই তার অন্য নোটের মত এখানে বিকল্প অর্থ দেখাতেন , অস্বীকার করতেন না তাই না ?
 

 ১.১৬২.৩  সায়ণ ছাগ অর্থ জোর করে ছাগল করেছেন হত্যার জন্য । 


১.১৬২.৪ ছাগকে ছাগল করার অর্থে টানাটানির দরকার নেই । 

১.১৬২.৬ অশ্ব হত্যা নেই ও অশ্ব মাংস রন্ধনের কোন ভিত্তি মূল টেক্সটে নেই । বিনিয়োগ ও সায়ণবাদীরা কোথায়  ? এখানে তো দ্রবযজ্ঞ টাইপ বিকল্প দূরে থাক সরাসরি ভিত্তিহীন বলা হচ্ছে । \



এছাড়াও শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর বা পণ্ডিত জয়দেবজীর ন্যায় তিনি অশ্বপরক করেও সেখানে অশ্ব হত্যা নয় বরং পরিচর্যা আছে বলেছেন । 

১.১৬২.১৩ - সায়ণের অর্থ ভুল । 
 


১.১৬২.১৭,২১ - হত্যা নেই । 
 

 

শ্রী অরবিন্দ বা কপালী শাস্ত্রীকে অনুসরণ করে আর এল কশ্যপ যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা অভিনন্দনযোগ্য ও পদ্মশ্রী সম্মান তার পরিচায়ক । কিন্তু তারই অনুসৃত অরবিন্দ দ্বারা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্তুত্য মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বা অন্যাদি ভাষ্যকারদের বিরুদ্ধে কিছু অর্বাচীন দ্বারা দুরভিসন্ধিমূলকভাবে বিরোধীভাবে উপস্থাপন করা পরিহাসজনক  ।