পৌরাণিকগণ বলে থাকেন যে পুরাণসমূহ বেদব্যাস রচনা করেছেন । বেদব্যাসের জন্মকাল নিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত এর ১।৪।১৪ তে লেখা আছে-
দ্বাপরে সমনুপ্রাপ্তে তৃতীয়ে যুগপর্যয়ে।
জাতঃ পরাশরাদ্ যোগী বাসব্যাং কলয়া হরেঃ॥
অনুবাদঃ বর্তমান চতুর্যুগের তৃতীয় যুগ দ্বাপরে মহর্ষি পরাশরের ঔরসে বসু-কন্যা সত্যবতীর গর্ভে ভগবানের কলাবতার যোগীরাজ ব্যাসদেবের জন্ম হয় ৷
প্রকাশকঃ গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর
অর্থাৎ ব্যাসদেব দ্বাপর যুগে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মহর্ষি পরাশর এবং মা ছিলেন সত্যবতী।
এরপর আমরা মৎস্যপুরাণ ৫৩ অধ্যায়ের ৭০ শ্লোকটিতে পাই, অষ্টাদশ পুরাণ সত্যবতী সুত অর্থাৎ ব্যাসদেব রচনা করেছেন–
অষ্টাদশপুরাণানি কৃত্বা সত্যবতীসুতঃ।
ভারতাখ্যানমখিলং চক্রে তদুবৃংহিতম্ ।।
অনুবাদঃ সত্যবতী নন্দন বেদব্যাস অষ্টাদশ পুরাণ প্রণয়ন করিয়া তদুপবৃংহিত মহাভারত প্রণয়ন করেন ।
[ মৎস্য পুরাণে এমন আরেকটি ভুল ঠিক তাঁর পরেই আছে বাল্মিকী রামায়ণের শ্লোক সংখ্যা নিয়ে । বিস্তারিত দেখুন - https://back2thevedas.blogspot.com/2021/11/blog-post_54.html ]
অর্থাৎ এখানে দেখা গেল সত্যবতীপূত্র ব্যাসদেব ১৮টি পুরাণ প্রণয়ন করেছেন তারপর মহাভারত প্রণয়ন করেছেন ।
কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবত অনুযায়ী মহাভারত ও সকল পুরাণ লেখার পর ভাগবত লিখিত হয়েছে । সেই হিসেবে মৎস্য পুরাণের উক্ত বক্তব্য সঠিক নয় ।
শ্রীমদ্ভাগবত ১।৫।১ এই বিষয়টি সমর্থন করে যে ভাগবত মহাভারতের পরেই রচিত ।
কিন্তু এখানে এক গভীর ক্ষত আছে। আপনি যদি কোন পুরাণ পণ্ডিতের কাছে গিয়ে ব্যাসদেব রচিত ১৮টি পুরাণের নাম জিজ্ঞাসা করেন তো তিনি আপনাকে সব পুরাণের সাথে বিষ্ণুপুরাণেরও নাম বলবেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পুরাণ নিজেই জানাচ্ছে এই বিষ্ণুপুরাণ ব্যাসদেবের নয় বরং তার পিতা পরাশর মুনির লেখা। এই বিষয়ে আমি নিচে দুটি প্রমাণ উপস্থাপন করছিঃ
১.লিঙ্গপুরাণ পূর্বভাগ ৬৪।১২১-২২ এ লেখা আছেঃ
অনন্তর, পুলস্ত্য এবং জ্ঞানী বসিষ্ঠের প্রসাদে পরাশর ছয় অংশে বিভক্ত সৰ্ব্বার্থসাধক নিখিলজ্ঞানের আধারভূত বিষ্ণুপুরাণ রচনা করেন। এই বিষ্ণুপুরাণ ষটসহস্র শ্লোকাত্মক। নিখিল-বেদার্থপূর্ণ পুরাণের মধ্যে চতুর্থ এবং সংহিতা সকলের মধ্যে সুশোভন।
২.বিষ্ণু পুরাণ ৩।৭।১৯-২০ নং শ্লোকে আমরা দেখিঃ
হে মুনে। সেই তিন সুতকথিত সংহিতা ও রোমহর্ষণিকা—এই চারি সংহিতার সারগ্রহণ করিয়া আমি এই বিষ্ণু-পুরাণসংহিতা রচনা করিয়াছি।
অর্থাৎ এখানে দেখা গেল বিষ্ণু পুরাণের রচয়িতা ব্যাসদেব নন বরং তার পিতা পরাশর মুনি।
প্রশ্নঃ বিষ্ণু পুরাণে [ ৩।৭।১৬-২০ ] আমরা দেখতে পাই, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস একটি পুরাণ সংহিতা রচনা করেছিলেন । তিনি তা সূত লোমহর্ষণকে অধ্যয়ন করান । সূত লোমহর্ষণ তার ৬ জন শিষ্যকে সংহিতা অধ্যাপন করেন । তাদের মধ্যে ৩ জন আলাদা সংহিতা প্রণয়ন করেন । সূত ও এই তিন জনের মোট পুরাণ সংহিতা হয় ৪টি । আর সেই চারটির সার নিয়ে হয় বিষ্ণুপুরাণ ।
উত্তরঃ উক্ত পুরাণের তথ্যেই ব্যাপক গড়মিল ও আপনার যুক্তি অর্ধেক । পুরাণ সংহিতা দিয়ে পুরাণের সংগ্রহ প্রমাণিত হয় । একটাই পুরাণ ছিলো তা প্রমাণিত হয় না ।
দ্বিতীয়তঃ ঠিক তার পরেই বিষ্ণুপুরাণ ৩।৭।২১-২৪ এ ১৮ পুরাণের নাম উল্লেখিত আছে । যদি একটাই পুরাণ হতো ১৮ টার নাম আসতো না ।
আবার যেই শ্রীমদ্ভাগবত বেদব্যাস নাকি নারদের পরামর্শে সবার শেষে রচনা করেছেন তারই মাহাত্ম্য স্কন্দ ও পদ্ম পুরাণে পাওয়া যায় । বিষ্ণু পুরাণে অথচ তারই নাম উল্লেখিত আছে । সেখানে আবার ভাগবত ৫ম স্থানীয় পুরাণ । সবার শেষে রচিত পুরাণ ৫ম স্থানীয় কিভাবে হয় ?
প্রশ্নঃ মহাভারতের স্বর্গারোহণ পর্বেও অষ্টাদশ পুরাণের উল্লেখ আছে ।
উত্তরঃ শ্রীমদ্ভাগবত যদি মহাভারতের পরেই রচিত হয় তবে তার নাম আগেই গণনা হলো কিভাবে ? আর এই শ্লোকটি যে প্রক্ষিপ্ত তা সহজেই প্রমাণিত হয় ।
১. নীলকণ্ঠের এই শ্লোকের উপর কোন টীকা নেই ।
২. মহাভারতের ক্রিটিক্যাল এডিশনেও এই শ্লোকটি রাখা হয়নি ।
অতঃ প্রমাণিত হয় যে এই পুরাণ বেদব্যাসের রচনা এটা দাবি করা সম্পূর্ণই ভ্রান্ত ও মিথ্যা ।
0 মন্তব্য(গুলি)