অষ্টাদশ পুরাণকে পৌরাণিকগণ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস কর্তৃক প্রণীত মানেন । অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে বেশ কিছু পুরাণেই সবগুলো পুরাণের নাম ও তাতে বিদ্যমান শ্লোকসংখ্যা বিদ্যমান রয়েছে৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক পুরাণের সাথে আরেকপুরাণের নামের তালিকা ও শ্লোকসংখ্যা মেলে না । এতে প্রমাণিত হয় যে এই পুরাণসমূহ একাধিক ব্যক্তি প্রণীত তথা এক ব্যক্তি প্রণীত না । উদাহরণস্বরূপ আমরা প্রথমে শ্রীমদ্ভাগবতে প্রদত্ত তালিকাটি দেখি । উল্লেখ্য সব পুরাণেই ক্রমসংখ্যা হিসেবে দেওয়া আছে । তাই কেউ যদি ' কেবল সাধারণভাবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ' এই যুক্তি উপস্থাপন করেন তবে তা ভ্রান্তি বৈ কিছুই নয় ।
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবং চ শৈবং লৈঙ্গং সগারুড়ম্ ।
নারদীয়ং ভাগবতং আগ্নেয়ং স্কান্দসংজ্ঞিতম্ ॥ ২৩ ॥
ভবিষ্যং ব্রহ্মবৈবর্তং মার্কণ্ডেয়ং সবামনম্ ।
বারাহং মাৎস্যং কৌর্মং চ ব্রহ্মাণ্ডাখ্যমিতি ত্রিষট্ ॥ ২৪ ॥
শ্রীমদ্ভাগবত স্কন্ধ ১২ অধ্যায় ৭
(১) ব্রহ্ম, (২) পদ্ম, (৩) বিষ্ণু, (৪) শিব, (৫) লিঙ্গ, (৬) গরুড়, (৭) নারদ, (৮) ভাগবত, (৯) অগ্নি, (১০) স্কন্দ, (১১) ভবিষ্য, (১২) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (১৩) মার্কণ্ডেয়, (১৪) বামন, (১৫) বারাহ, (১৬) মৎস্য, (১৭) কূর্ম ও (১৮) ব্রহ্মাণ্ড ।
ইতিহাসপুরাণানি ভিদ্যন্তে কালগৌরবাৎ ।
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবং চ শৈবং ভাগবতং তথা ॥
ভবিষ্যং নারদীয়ং চ মার্কণ্ডেয়মতঃ পরম্ ।
আগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্তং লৈঙ্গং বারাহমেব চ ॥
বামনাখ্যং ততঃ কূর্মং মাৎস্যং গারুড়মেব চ ।
স্কান্দং তথা চ ব্রহ্মাণ্ডং তেষাং ভেদঃ প্রকথ্যতে ॥
লিঙ্গ পুরাণ পূর্ব০ ৩৯।৬১-৬৩
(১) ব্রহ্ম, (২) পদ্ম, (৩) বিষ্ণু, (৪) শিব, (৫) ভাগবত, (৬) ভবিষ্য, (৭) নারদ, (৮) মার্কণ্ডেয়, (৯) অগ্নি, (১০) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (১১) লিঙ্গ, (১২) বারাহ, (১৩) বামন (১৪) কূর্ম, (১৫) মৎস্য, (১৬) গরুড়, (১৭) স্কন্দ (১৮) ব্রহ্মাণ্ড ।
এখানে অত্যন্ত মজার একটি বিষয় আছে৷ লিঙ্গপুরাণে দেওয়া এই ক্রম অনুযায়ী লিঙ্গপুরাণ ১১তম যা কিনা এই তালিকা অনুযায়ী সঠিক৷ এই ক্রম অনুযায়ী বিষ্ণু পুরাণ ৩য় স্থানীয় পুরাণ । অথচ এই একই লিঙ্গপুরাণের পূর্বভাগের ৬৯ অধ্যায়ে একে ৪র্থ পুরাণ বলা হয়েছে । পুরাণকার আদতে কিসের নেশায় এসব লিখেছেন তা বোঝা দায় বটে ।
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবং চ শৈবং ভাগবতং তথা ॥
ভবিষ্যং নারদীয়ং চ মার্কণ্ডেয়মতঃ পরম্ ॥
আগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্তং লৈংগং বারাহমেব চ ॥
স্কান্দং চ বামনং চৈব কৌর্ম্যং মাৎস্যং চ গারুড়ম্ ॥
ব্রহ্মাণ্ডং চেতি পুণ্যো ঽয়ং পুরাণানামনুক্রমঃ ॥
শিবপুরাণ বায়ু সংহিতা পূর্বভাগ ১।৪৩-৪৫
(১) ব্রহ্ম, (২) পদ্ম, (৩) বিষ্ণু, (৪) শিব, (৫) ভাগবত, (৬) ভবিষ্য, (৭) নারদীয়, (৮) মার্কণ্ডেয়, (৯) অগ্নি, (১০) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (১১) লিঙ্গ, (১২) বারাহ (১৩) স্কন্দ, (১৪) বামন (১৫) কূর্ম, (১৬) মৎস্য, (১৭) গরুড়, (১৮) ব্রহ্মাণ্ড ।
✴️ শিবপুরাণের উমা সংহিতার ৪৪তম অধ্যায়েও এই ক্রমটি শ্লোক ১২০-১২২ নং শ্লোকে রয়েছে ।
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবঞ্চ শৈবং ভাগবতং তথা ॥
ভবিষ্যং নারদীয়ং চ মার্কণ্ডেয়মতঃ পরম্ ॥ ১২০॥
আগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্ত লিঙ্গং বারাহমেব চ ॥
বামনাখ্যং ততঃ কৌর্মং মাৎস্যং গারুড়মেব চ ॥১২১॥
স্কান্দং তথৈব ব্রহ্মাণ্ডাখ্যং পুরাণং চ কীর্তিতম্ ॥
যশস্যং পুণ্যদং নৄণাং শ্রোতৄণাং শাঙ্করং যশ ॥১২২॥
এখানে ১২৯ নং শ্লোকে ভাগবত বলতে দূর্গার মাহাত্ম্য নিয়ে দেবীভাগবতকে নির্দেশ করেছে যা শাক্তদের অন্যতম প্রধান প্রমাণ ।
ভগবত্যাশ্চ দুর্গায়াশ্চরিতং যত্র বিদ্যতে ॥
তত্তু ভাগবতং প্রোক্তং ননু দেবীপুরাণকম্ ॥
পুরাণানি চ বক্ষ্যামি তামসানি যথাক্রমাৎ ১৩
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবং চ শৈবং ভাগবতং তথা
তথৈব নারদীয়ং তু মার্কণ্ডেয়ন্তু সপ্তমম্ ১৪
আগ্নেয়মষ্টমং প্রোক্তং ভবিষ্যং নবমং তথা
দশমং ব্রহ্মবৈবর্তং লিঙ্গমেকাদশং স্মৃতম্ ১৫
দ্বাদশং চ বরাহং চ বামনং চ ত্রয়োদশম্
কৌর্ম্মং চতুর্দশং প্রোক্তং মাৎস্যং পংচদশং স্মৃতম্ ১৬
ষোড়শং গারুড়ং প্রোক্তং স্কন্দং সপ্তদশং স্মৃতম্
অষ্টাদশং তু ব্রহ্মাণ্ডং পুরাণানি যথাক্রমম্ ১৭
পদ্মপুরাণ উত্তর খণ্ড অধ্যায় ২৩৬
(১) ব্রহ্ম, (২) পদ্ম, (৩) বিষ্ণু, (৪) শিব, (৫) ভাগবত, (৬) নারদীয়, (৭) মার্কণ্ডেয়, (৮) অগ্নি, (৯) ভবিষ্য, (১০) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (১১) লিঙ্গ, (১২) বরাহ, (১৩) বামন (১৪) কূর্ম, (১৫) মৎস্য, (১৬) গরুড়, (১৭) স্কন্দ (১৮) ব্রহ্মাণ্ড ।
নির্গতং ব্রহ্মণো বক্ত্রাদ্ব্রাহ্মং বৈষ্ণবমেব চ ॥
শৈবং ভাগবতং চৈব ভবিষ্যং নারদীয়কম্ ॥ ৫ ॥
মার্কণ্ডেয়মথাগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্তমেব চ ॥
লৈঙ্গং তথা চ বারাহং স্কান্দং বামনমেব চ ॥ ৬ ॥
কৌর্ম্যং মাৎস্যং গারুড়ং চ বায়বীয়মনন্তরম্ ॥
অষ্টাদশং সমুদ্দিষ্টং সর্বপাতকনাশনম্ ॥ ॥ ৭ ॥
একমেব পুরা হ্যাসীদ্ব্রহ্মাণ্ডং শতকোটিধা ॥ ৮ ॥
ততোঽষ্টাদশধা কৃত্বা বেদব্যাসো যুগেয়ুগে ॥
প্রখ্যাপয়তি লোকেঽস্মিন্সাক্ষান্নারায়ণাংশজঃ ॥ ৯ ॥
স্কন্দপুরাণ প্রভাস খণ্ড প্রভাসক্ষেত্র মাহাত্ম্য ২।৫-৯
ব্রাহ্ম , বৈষ্ণব , শৈব , ভাগবত , ভবিষ্য , নারদীয় , মার্কণ্ডেয় আগ্নেয় , ব্রহ্মবৈবর্ত্ত , লৈঙ্গ , বারাহ, স্কান্দ , বামন , কৌৰ্ম্ম , মাৎস্য , গাড়ুর , বায়বীয় ও ব্ৰহ্মাণ্ড ; এই অষ্টাদশ মহাপুরাণ সর্ব্বপাতক - নাশন । পূর্ব্বে একমাত্র শতকোটি - শ্লোকাত্মক ব্রহ্মাণ্ড পুরাণই প্রাদুর্ভূত হইয়াছিল , পরে সাক্ষাৎ নারায়ণাংশজ বেদব্যাস যুগে যুগে তাহাকে অষ্টাদশ ভাগে বিভক্ত করেন ।
👉 এখানে পদ্মের উল্লেখই নেই ।
চতুর্দশসহস্রং চ মৎস্যমাদ্যং প্রকীর্তিতম্ । ॥
তথা গ্রহসহস্রং তু মার্কণ্ডেয়ং মহাদ্ভুতম্ ॥ ৩ ॥ ॥
চতুর্দশসহস্রাণি তথা পঞ্চশতানি চ । ॥
ভবিষ্যং পরিসংখ্যাতং মুনিভিস্তত্ত্বদর্শিভিঃ ॥ ৪ ॥
অষ্টাদশসহস্রং বৈ পুণ্যং ভাগবতং কিল ।
তথা চায়ুতসংখ্যাকং পুরাণং ব্রহ্মসংজ্ঞকম্ ॥ ৫ ॥
দ্বাদশৈব সহস্রাণি ব্রহ্মাণ্ডং চ শতাধিকম্ ।
তথাষ্টাদশসাহস্রং ব্রহ্মবৈবর্তমেব চ ॥ ৬ ॥
অয়ুতং বামনাখ্যং চ বায়ব্যং ষট্শতানি চ ।
চতুর্বিংশতিসংখ্যাতঃ সহস্রাণি তু শৌনক ॥ ৭ ॥
ত্রয়োবিংশতিসাহস্রং বৈষ্ণবং পরমাদ্ভুতম্ ।
চতুর্বিংশতিসাহস্রং বারাহং পরমাদ্ভুতম্ ॥ ৮ ॥
ষোডশৈব সহস্রাণি পুরাণং চাগ্নিসংজ্ঞিতম্ ।
পঞ্চবিংশতিসাহস্রং নারদং পরমং মতম্ ॥ ৯ ॥
পঞ্চপঞ্চাশৎসাহস্রং পদ্মাখ্যং বিপুলং মতম্ ।
একাদশসহস্রাণি লিঙ্গাখ্যং চাতিবিস্মৃতম্ ॥ ১০ ॥
একোনবিংশৎসাহস্রং গারুড়ং হরিভাষিতম্ ।
সপ্তদশসহস্রং চ পুরাণং কূর্মভাষিতম্ ॥ ১১ ॥
একাশীতিসহস্রাণি স্কন্দাখ্যং পরমাদ্ভুতম্ ।
পুরাণাখ্যা চ সংখ্যা চ বিস্তরেণ ময়ানঘাঃ ॥ ১২ ॥
দেবীভাগবত পুরাণ স্কন্ধ ১ অধ্যায় ৩
(১) মৎস্য, (২) মার্কণ্ডেয়, (৩) ভাগবত, (৪) ভবিষ্য, (৫) ব্রহ্মাণ্ড, (৬) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (৭) ব্রহ্ম, (৮) বামন, (৯) বারাহ, (১০) বিষ্ণু, (১১) বায়ু, (১২) অগ্নি, (১৩) নারদ, (১৪) পদ্ম, (১৫) লিঙ্গ, (১৬) গরুড়, (১৭) কূর্ম, (১৮) স্কন্দ ।
প্রচলিত শ্রীমদ্ভাগবতকে দেবীভাগবত ১।৩।১৬ তে উপপুরাণ ধরা হয়েছে ।
ব্রাহ্মং পুরাণং প্রথমং পাদ্মং বৈষ্ণবমেব চ ।
শৈবং ভাগবতং চৈব ভবিষ্যং নারদীয়কম্ ॥ ১.১৩
মার্কণ্ডেয়মথাগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্তমেব চ ।
লৈঙ্গং তথা চ বারাহং স্কান্দং বামনমেব চ ॥ ১.১৪
কৌর্ম্মং মাৎস্যং গারুড়ং চ বায়বীয়মনন্তরম্ ।
অষ্টাদশং সমুদ্দিষ্টং ব্রহ্মাণ্ডমিতি সংজ্ঞিতম্ ॥ ১.১৫
কূর্ম পুরাণ পূর্ব ভাগ অধ্যায় ১
(১) ব্রহ্ম, (২) পদ্ম, (৩) বিষ্ণু, (৪) শিব, (৫) ভাগবত, (৬) ভবিষ্য, (৭) নারদ, (৮) মার্কণ্ডেয়, (৯) অগ্নি, (১০) ব্রহ্মবৈবর্ত্ত, (১১) লিঙ্গ, (১২) বারাহ, (১৩) স্কন্দ (১৪) বামন, (১৫) কূর্ম, (১৬) মৎস্য, (১৭) গরুড় (১৮) বায়ু (১৯) ব্রহ্মাণ্ড
👉 উপর্যুক্ত তালিকায় আমরা দেখতে পাই -
১. শ্রীমদ্ভাগবত , লিঙ্গ , শিব ও পদ্ম এই চার পুরাণে ব্রহ্ম, পদ্ম, বিষ্ণু ও শিব এই ৪টি পুরাণের ক্রম ঠিক থাকলেও শ্রীমদ্ভাগবতে ৫ম পুরাণ হলো লিঙ্গ পুরাণ ও লিঙ্গপুরাণে ৫ম হলো শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ । অর্থাৎ দুটি পুরাণ রচয়িতা নিজেদেরকে উক্ত স্থানে এনে আগে প্রাধান্য দেখাতে চেয়েছে ।
২. দেবীভাগবত , কূর্ম ও অগ্নিপুরাণে বায়ু পুরাণের নাম আছে । কিন্তু অন্য পুরাণে নেই ।
৩. পদ্মপুরাণে শিব পুরাণকে মহাপুরাণ বিবেচনা করে সে তালিকা থেকে বায়ু পুরাণকে বাদ দেওয়া হয়েছে ।
৪. আবার স্কন্দ পুরাণে পদ্মপুরাণকে মহাপুরাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি ।
৫. অগ্নিপুরাণে শিবপুরাণের পরিবর্তে বায়ু পুরাণকে মহাপুরাণ বিবেচনা করা হয়েছে ।
৬. কূর্মপুরাণে ১৮ এর বদলে ১৯টির নাম পাওয়া যায় । অনেকে এখানে বায়বীয় পুরাণ বলতে শিব পুরাণের বায়বীয় সংহিতা বোঝানো হয়েছে বলে থাকেন । যদিও দাবিটি সম্পূর্ণই হাস্যকর । কেননা , ১৮ পুরাণের মধ্যে হঠাৎ করে কেন এই সংহিতারই নাম আসবে এই নিয়ে কোন উত্তর নেই কারো কাছে ।
৭. মৎস্য [ অধ্যায় ৫৩ ] আর বায়ু পুরাণে শিব পুরাণের উল্লেখই নেই ।
গীতাপ্রেস
১ম খণ্ডের ভূমিকায় লিখেছে " সম্পূর্ণ মূল শিবপুরাণ" আর ১ম খণ্ডে ২টি ও ২য়
খণ্ডে ৫টি সংহিতা অর্থাৎ মোট ৭টি সংহিতা তারা বের করেছে ।
আবার শিবপুরাণেই বিদ্যেশ্বর সংহিতা ২.৪৯-৫৬] ও বায়বীয় সংহিতা পূর্ব০ ১.৫০-৫৮ - যে ১২ সংহিতার কথা লিখে বলেছে তা ৭টিতে বেদব্যাস সংক্ষিপ্ত করেছে ।
বঙ্গীয় শিব পুরাণের বায়বীয় সংহিতায় [পূর্ব০ ১.৪৭] সংক্ষেপ করার কথা অনুপস্থিত এবং বঙ্গীয় সংস্করণের ভূমিকাতেও ২ প্রকার গ্রন্থের উল্লেখ বিদ্যমান ।
পুরাণের শ্লোক সংখ্যা -
মৎস্য পুরাণের ৩য় অধ্যায়ের মতে পুরাণের সংখ্যা শতকোটি ও তা বেদেরও আগে প্রাদুর্ভূত । যদিও এই অতিশয়োক্তি পরে এই পুরাণেই স্ববিরোধী । কেননা যারা কিনা বেদের সাথে পুরাণের উদ্ভব স্বীকার করেন সেই অনুযায়ী পুরাণ বেদের পরে আসে , আগে নয় ।
বায়ু পুরাণেও একই কথা বলা হয়েছে -
প্রথমং সর্বশাস্ত্রাণাং পুরাণং ব্রহ্মণা স্মৃতম্।
অনন্তরঞ্চ বক্রেভ্যো বেদাস্তস্য বিনিঃসৃতাঃ৷।
বায়ু পুরাণ ১।৬০-৬১
অর্থাৎ ব্রহ্মা কর্তৃক আগে পুরাণ বেদন ও পরবর্তীতে বেদের আবির্ভাব ঘটে ।
প্রসঙ্গতঃ যারা কিনা অথর্ববেদের পুরাণ শব্দ নিয়ে এখনকার ১৮ পুরাণ বোঝান তারা নিজেরাই জানেন সেখানে আগে বেদ ও পরে পুরাণ শব্দ উল্লেখ আছে । অর্থাৎ আপনাদের দাবি অনুযায়ী আগে বেদ এসেছে তারপর পুরাণ অথচ সেই পুরাণই আপনাদের সমর্থন করে না৷
মৎস্য পুরাণ অধ্যায় ৫৩ অনুযায়ী [ চতুর্লক্ষপ্রমাণেন দ্বাপরে দ্বাপরে সদা । ৯ ] ১৮ পুরাণের মোট শ্লোক সংখ্যা ৪ লক্ষ । সম্পূর্ণ অধ্যায় জুড়ে ১৮ পুরাণের শ্লোক সংখ্যা ও তার মাহাত্ম্যই উল্লেখিত রয়েছে যা বিস্তারভয়ে সম্পূর্ণ দেওয়া গেলো না৷ পাঠকগণ পুস্তকে কিংবা প্রদত্ত তালিকায় দেখে নেবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবত ১২।১৩।৪-৯ - তেও সব পুরাণের শ্লোকসংখ্যাসহ তাই বলা হয়েছে ।
ব্রাহ্মং দশ সহস্রাণি পাদ্মং পঞ্চোনষষ্টি চ ।
শ্রীবৈষ্ণবং ত্রয়োবিংশৎ চতুর্বিংশতি শৈবকম্ ॥ ৪ ॥
দশাষ্টৌ শ্রীভাগবতং নারদং পঞ্চবিংশতি ।
মার্কণ্ডং নব বাহ্নং চ দশপঞ্চ চতুঃশতম্ ॥ ৫ ॥
চতুর্দশ ভবিষ্যং স্যাৎ তথা পঞ্চশতানি চ ।
দশাষ্টৌ ব্রহ্মবৈবর্তং লৈঙ্গমেকাদশৈব তু ॥ ৬ ॥
চতুর্বিংশতি বারাহং একাশীতিসহস্রকম্ ।
স্কান্দং শতং তথা চৈকং বামনং দশ কীর্তিতম্ ॥ ৭ ॥
কৌর্মং সপ্তদশাখ্যাতং মাৎস্যং তত্তু চতুর্দশ ।
একোনবিংশৎ সৌপর্ণং ব্রহ্মাণ্ডং দ্বাদশৈব তু ॥ ৮ ॥
এবং পুরাণসন্দোহঃ চতুর্লক্ষ উদাহৃতঃ ।
তত্রাষ্টদশসাহস্রং শ্রীভাগবতং ইষ্যতে ॥ ৯ ॥
অনুবাদঃ ব্রহ্মপুরাণে দশ সহস্র, পদ্ম পুরাণে পঞ্চ পঞ্চাশৎ সহস্র, শ্রীবিষ্ণুপুরাণে ত্রয়োবিংশতি সহস্র এবং শিবপুরাণে চতুর্বিংশতি সহস্ৰ শ্লোক আছে৷৷ ৪ ॥ শ্রীমদ্ভাগবতে অষ্টাদশ সহস্র, নারদপুরাণে পঞ্চবিংশতি সহস্র, মার্কণ্ডেয় পুরাণে নয় সহস্র এবং অগ্নি পুরাণে পঞ্চদশ সহস্র চার শত শ্লোক আছে৷৷ ৫ ৷৷
ভবিষ্যপুরাণে শ্লোক সংখ্যা হল চতুর্দশ সহস্র পাঁচ শত এবং ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে অষ্টাদশ সহস্র ও লিঙ্গপুরাণে একাদশ সহস্ৰ ৷৷ ৬ ॥
শ্লোক সংখ্যা বরাহপুরাণে চতুর্বিংশতি সহস্র, স্কন্ধপুরাণে একাশীতি সহস্র এক শত এবং বামনপুরাণে দশ সহস্ৰ ৷৷ ৭ ॥
কর্মপুরাণে সপ্তদশ সহস্র এবং মৎস্যপুরাণে চতুর্দশ সহস্র শ্লোক আছে। গরুড়পুরাণের শ্লোক সংখ্যা হল ঊনবিংশতি সহস্র ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে দ্বাদশ সহস্ৰ৷৷ ৮ ৷৷
এইভাবে সমস্ত পুরাণের শ্লোক সংখ্যার যোগফল
হল চার লক্ষ। তাতে শ্রীমদ্ভাগবতে, যেমন পূর্বেই বলা হয়েছে শ্লোক সংখ্যা অষ্টাদশ সহস্ৰ ৷ ৯ ৷৷
পদ্মপুরাণ সৃষ্টি খণ্ড অধ্যায় ১ এ আমরা একই তথ্য [ তদেবাত্র চতুর্লক্ষং সংক্ষেপেণ নিবেশিতম্ । ৫৩ ] পাই ।
যেখানে পুরাণের ক্রম, নামই ঠিক নেই সেখানেই এই শ্লোকসংখ্যাও যে অনুমানে বা কপোলকল্পিত তা সহজেই অনুমেয়। বায়ু ও শিব পুরাণ বিকল্প ধরে তারপরেও একটি ছক দিয়ে আমরা সম্পূর্ণ হিসেবটি দেখিয়ে দিচ্ছি -
মৎস্যের হিসাব অনুযায়ী ৪ লক্ষ শ্লোক অতিক্রম করে । অন্যগুলোতে ৪ লক্ষ পূর্ণ হয় না । পুরাণ রচয়িতা গণিতেও অপরিপক্ব ছিলেন বোঝাই যাচ্ছে । অনেক পুরাণে আরো কম শ্লোকও আছে । যেমন ভাগবতেই মাত্র প্রায় ১৪০০০ শ্লোক সম আছে ।
অতঃ অষ্টাদশ পুরাণ যে এক ব্যক্তি তথা বেদব্যাস প্রণীত নয় তা প্রমাণিত ।
0 মন্তব্য(গুলি)