https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শতপথ ব্রাহ্মণে প্রতিমা পূজা মীমাংসা [ পরিবর্ধিত ]

Thursday, December 30, 2021




শতপথ ব্রাহ্মণে যে প্রতিমা পূজা নেই তা নিয়ে আমরা একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম । পৌরাণিকরা তাঁর জবাবে কেবল মাত্র সায়ণের ভাষ্য তুলে দিলেও কোন যুক্তি খণ্ডন করতেই পারেনি   । রাজসূয় ও অগ্নিচয়ন নিয়ে বালখিল্যময় আলাপ করলেও সেখানে একটি যজ্ঞের ধাপ কীভাবে প্রতিমা পূজা হয় বা হলেও কেন পরে সূত্রাদিতে এই ধারা রইলো না তাঁর কোন ব্যাখ্যাব এদের নেই  । অগ্নিচয়ন আপনারা এখানেও দেখতে পারেন -
 


শতপথ মানেই যাদের কাছে বেদ ও সায়ণভাষ্য যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের নিকট এগুলোর জবাব যেন নিজেরা গৃহপালিত গবেষণায় না বানিয়ে সায়ণ থেকে দেয় তার চ্যালেঞ্জ রইলো -
 
  1. ঋগ্বেদে সায়ণভাষ্যে কৃষ্ণ নামক অসুরের ইতিহাস খণ্ডন  
  2. বেদে সায়ণের নিরুক্ত বিরোধী যম-নচিকেতার গল্প খণ্ডন 
  3. অতিথির জন্য ছাগ-বৃষ হত্যা ? সায়ণের ভুলের খণ্ডন 
  4. শতপথ ব্রাহ্মণে অশ্বমেধ - বিবেকানন্দ সমর্থিত অশ্লীলতা ও সদর্থ
  5. অশ্বমেধ নিয়ে হরিবংশ- শ্রৌতসূত্রের অশ্লীল বিধি - প্রকৃত সত্য কী ?  

৪ ও ৫ নং নিবন্ধে শতপথের সায়ণ - হরিস্বামীর ভাষ্য যা কিনা প্রামাণিক পৌরাণিকদের কাছে তা তুলে দেওয়া হয়েছে । পারলে যেন তারা খণ্ডন করে । শ্রৌসূত্র মাত্রেই যাদের নিকট ১০০%
মান্য তাদের জন্যও চ্যালেঞ্জ  বহাল রইলো  । যদিও এটা আমরা জানি বিপদে পড়লে সায়ণাদি পিতৃব্যদের অস্বীকার করে রুমালের বিড়াল ব্যাখ্যাই আপনাদের নিকট প্রাপ্য । 

অপ-দাবিঃ বেদে খুব সুন্দর ভাবে সোনার বিগ্রহ স্থাপন করে তার উদ্দেশ্যে ফুল দিয়ে সামবেদ সংহিতার মন্ত্র উচ্চারণ করে উপাসনার কথা বর্ণনা করা আছে।

প্রত্যুত্তরঃ কোথায় বলা আছে?

অপ-দাবিঃ যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের ৭।৪।১।৭ মন্ত্রের প্রথমেই  বলা হয়েছে, "অথ পুষ্করপর্ণমুপদধাতি..." অর্থাৎ এরপর পদ্মপুষ্পের পাপড়ি স্থাপন করা হলো।
এবং উক্ত মন্ত্রের সায়ণভাষ্য অনুসারে, সামগান করার পর এই মন্ত্রে পদ্মপুষ্পের পাপড়ি স্থাপন করা হচ্ছে।


প্রত্যুত্তরঃ শতপথ ব্রাহ্মণে কোন প্রসঙ্গে এটি বলা হচ্ছে তা আগে বলুন।

অপ-দাবিঃ তা আমরা জানি না৷ আমাদের কাজ হলো শুধু  "যার কাছে পাই তার কাছ থেকে কপি মেরে দাবি জানাই" এভাবে কপি করে প্রচার করা। তাই এখানে কী প্রসঙ্গে এটা বলা হয়েছে তা বলতে পারব না৷

প্রত্যুত্তরঃ বেশ! তবুও নিজের অবৈধ পিতাদের কাছ থেকে লেখা কপি করার কথা স্বীকার করলেন। সত্য স্বীকার করা একটি ভালো দিক৷ আর আপনারা বা জানবেন কিভাবে শতপথ ব্রাহ্মণের এখানে প্রসঙ্গে এসব বলা হচ্ছে৷ কারণ আপনাদের না আছে কোনো সাধারণজ্ঞান আর না আছে কোনো কোনো কর্মকাণ্ডীয় জ্ঞান৷ ফলে আপনাদের চুরি ভাণ্ডার থেকে ছলকপটপূর্ণ ও অর্ধপ্রচারণাগুলোকে গরুর মতো গোগ্রাসে গিলে পরে সেগুলো সারাদিন জাবরকাটাই আপনাদের প্রধান কাজ।

যাই হোক, আপনাদের জেনে রাখা উচিত, শতপথ ব্রাহ্মণের ৬ষ্ঠ ও ৭ম কাণ্ডে 'অগ্নিচয়ন' বিধি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে৷ ফলে আপনারা যে পদ্মপুষ্পের পাপড়ি স্থাপনের প্রমাণ প্রদর্শন করলেন তা মূলত কোনো প্রতিমাপূজায় ব্যবহার হয়নি নয়, বরং অগ্নিচয়নে ব্যবহার হয়েছে। 
 

 


অপ-দাবিঃ অগ্নিচয়ন কী তা আমরা জানি না, এমনকি জীবনে এর নামও শুনিনি৷ আমরা একমাত্র প্রতিমাপূজার নামই জানি আর সেটার নাম সারাদিন জপ করে সাধারণ হিন্দুদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে ব্যবসা করি এবং আপনাদের নামে বিদ্বেষানল ছড়িয়ে বেড়াই৷ তাই, শতপথের এই স্থানে অগ্নিচয়নের বিষয়ে বলা হলেও সেটিকে আমরা প্রতিমা পূজার প্রমাণ হিসেবে দাবী করব। কারণ পরবর্তীতে শতপথ ব্রাহ্মণে (৭।৪।১।১০) বলা হচ্ছে–
"অথ রুক্মমুপদধাতি। অসৌ বাঽআদিত্যঽএষ হীমাঃ সর্ব্বাঃ প্রজাঽতিরোচতে রোচো হ বৈ তং রুক্মঽইত্যাচক্ষতে পরোক্ষং পরোক্ষকামা হি দেবোঽঅমুমেবৈতদাদিত্যমুপদধাতি স হিরণ্ময়ো ভবতি পরিমণ্ডলঽএকবিংশতিনির্বাধস্তস্যোক্তো বন্ধুরধস্তান্নির্বাধমুপদধাতি রশ্ময়ো বাঽএতস্য নির্বাধা অবস্তদুন বাঽএতস্য রশ্ময়ঃ।।"
অর্থাৎ তারপর তিনি সেখানে একটি সুবর্ণপাত্র (রেকাব) স্থাপন করেন। এই সুবর্ণরেকাবটি ঐ আদিত্য। কারণ আদিত্য পৃথিবীতে সকল প্রাণীর উপর উজ্জ্বলভাবে শোভা পায়। উজ্জ্বল শোভাকেই তারা পরক্ষোভাবে বলেন রুক্ম (সোনার রেকাব/পাত্র)। কারণ, দেবগণ পরোক্ষপ্রিয়। তিনি এইভাবে ঐ আদিত্যকে (বেদির উপর) স্থাপন করেন। এটি সুবর্ণময় ও গোলাকৃতি এবং এতে একুশটি (বোতামসদৃশ) উঁচু ফলক থাকে- এর তাৎপর্য ব্যাখ্যাত হয়েছে। ফলকগুলিকে নিম্নমুখী করে তিনি এটি স্থাপন করেন। কারণ, ফলকগুলি সূর্যের কিরণ এবং সূর্য নীচের দিকেই কিরণ দেয়।উক্ত মন্ত্রে দেখা যাচ্ছে যে পূর্বে স্থাপন করা সেই পদ্মফুলের পাপড়ির উপরে একটি গোলাকার সোনার পাত্র বা সুবর্ণ রেকাব স্থাপন করা হল। এই রেকাবটিকে আদিত্য বা সূর্যের প্রতিরূপ বলা হচ্ছে। এই সোনার পাত্রটিতে ২১ টি ফলক থাকবে যা সূর্যের রশ্মির প্রতিরূপ। সূর্য যেমন পৃথিবীর দিকে রশ্মি বিকিরণ করে সেরূপ ভাবে ফলগুলো সোনার পাত্রের নিচের দিকে অবস্থান করে, যেন সূর্য তার রশ্মি প্রদান করছে। সূর্যের প্রতিমা বা বিগ্রহটি কেমন হবে তার বর্ণনা করা হচ্ছে এখানে।
এখানে খুবই সুন্দর ও স্পষ্ট ভাবে সামগান করে পদ্মপাপড়ির উপর বিশেষ ফলক বিশিষ্ট সোনার পাত্র রেখে তাকে সূর্য হিসেবে ধ্যান করা হচ্ছে। অর্থৎ এই ২১ ফলক বিশিষ্ট সোনার রেকাবটি যে সূর্য বিগ্রহ /প্রতিমা/মূর্তি তাই বলা হচ্ছে।


প্রত্যুত্তরঃ প্রথমত, রেকাব (রুক্ম) বস্তুটা কী তা সম্পর্কে আপনাদের কোনো ধারণাই নাই। দ্বিতীয়ত, আপনাদের প্রদত্ত কণ্ডিকা ও তার অর্থে বিগ্রহ/প্রতিমা/মূর্তি উল্লেখ না থাকলেও রেকাবকে আপনারা সূর্যের মূর্তি হিসেবে দাবি করে নিজেদের কপোলকল্পিত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছেন৷

আগে জেনে নিন রেকাব (রুক্ম) বস্তুটি কী৷ রেকাব হলো একটি স্বর্ণের পাত জাতীয় আভরণ, যা রাজসূয় যজ্ঞে যজমান রাজা নিজের শরীরে ধারণ করে৷ নিচের ছবিটি দেখলে বুঝতে পারবেন রেকাব কিভাবে ধারণ করে৷ 




আর রেকাব যজমানের শরীরে ধারণের উল্লেখ কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্রে আর শতপথ ব্রাহ্মণেই পাবেন৷ যেমন– 
"যজমানঃ কণ্ঠে রুক্মং প্রতিমুঞ্চতে পরিমণ্ডলমেকবিংশতিপিণ্ডং কৃষ্ণা-জিননিষ্যূতং লোমসু শুক্লকৃষ্ণেষু শণসূত্রে ত্রিবৃত্যোতমুপরিনাভি বহিষ্পিণ্ডং দৃশানো রুক্ম্ত ইতি।।" (কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র ১৬।৫।১)  
 
এখানে যজমানের কণ্ঠাদিসহ সমগ্র দেহের একবিংশতি পিণ্ডকে রুক্ম (রেকাব) দ্বারা আবৃত্ত করতে বলা হয়েছে৷
 
 
 
আবার শতপথ ব্রাহ্মণেও (৬।৭।১।১) বলা হচ্ছে, 
 
"রুক্মং প্রতিমুচ্য বিভর্তি । সত্যং হৈতদ্যদ্রুক্মঃ সত্যং বা এতং যন্তুমর্হতি সত্যেনৈতং দেবা অবিভরুঃ সত্যেনৈবৈনমেতদ্বিভর্তি।।" 
অর্থাৎ রুক্ম ধারণ করে (যজমান) নিয়ে চলে। এই রুক্ম হলো সত্য, সত্যই একে নিয়ে চলতে পারে৷ সত্য দ্বারাই দেবতা তাকে ওঠাতে পারে৷ সত্য দ্বারাই সেটি তাকে ওঠাতে পারে৷ 
 

 

তাই রুক্ম (রেকাব) এখানে কোনো সূর্যের মূর্তি নয়, বরং রাজসূয় যজ্ঞে যজমানের পরিধেয় স্বর্ণের আভরণ৷

অপ-দাবিঃ তাহলে উপরে রেকাবকে আদিত্য বা সূর্য বলা হলো কেন?

প্রত্যুত্তরঃ
ধৈর্য ধরুন। শুধু কপিবাজি করে চললেই হয় না৷ ধৈর্য নিয়ে সব পড়তে হয়। ধৈর্য নিয়ে পড়তে থাকুন, সব বুঝতে পারবেন৷ 

অপ-দাবিঃ আপনারা একবার বলছেন এটা অগ্নিচয়নের প্রকরণ। আবার সেখানে রাজসূয় যজ্ঞকে এনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন কেন? এগুলো সব আপনাদের মিথ্যাচার৷

প্রত্যুত্তরঃ
ওরে ভ্রষ্টাচারীগণ, একটু তো জ্ঞান রাখুন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে! সারাজীবন কপি পেস্ট করে আর চুরির জোরে কতদিন পেট চালাবেন৷ অগ্নিচয়ন বিধি যে রাজসূয় যজ্ঞেতেও রয়েছে তা তো জানতে হবে। নিজেকে সারাদিন গবেষক বলে দাবী করেন, অথচ এতটুকুও জানেন না!

অপ-দাবিঃ অগ্নিচয়ন রাজসূয় যজ্ঞেও রয়েছে, এর পক্ষে প্রমাণ দিন। শুধু শুধু বললে হবে না৷


প্রত্যুত্তরঃ তাহলে দেখে নিন প্রমাণ তৈত্তিরীয় সংহিতা (৫।৬।৩) থেকে– 
 
"ভূতেষ্টকা উপ দধাত্যত্রাত্র বৈ মৃত্যুর্জ্জায়তে যত্রয়ত্রৈব মৃত্যুর্ঙ্ঞয়তে তত এবৈনমব যজতে তস্মাদপ্নিচিৎ সর্বমায়ুরেতি সর্ব্বে হ্যস্য মৃত্যবোঽবেষ্টাঃতস্মাদগ্নিচিন্নাভিচরিতবৈ প্রত্যগেন মভিচারঃ স্তৃণুতে সূয়তে বা এষ যোঽগ্নিং চিনুতে দেবসুবামেতানি হবীংষি ভবন্ত্যেতাবন্তো বৈ দেবানাং সবাজ্জ এব
অস্মৈ সবান্ প্র যচ্ছন্তি ত এনং সুবন্তে সবোঽগ্নির্ব্বরুণসবো রাজসূয়ং ব্রহ্মসবশ্চিত্যো দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসব ইত্যাহ সবিতৃপ্রসূত এবৈনং ব্রহ্মণা দেবতাভিরভি ষিঞ্চত্যন্নস্যান্নস্যাভিষিঞ্চত্যন্নস্যান্নস্যাবরুদধ্যৈ পুরস্তাৎ প্রত্যঞ্চমভিষিঞ্চতি পুরস্তাদ্ধি প্রতীচীনমন্নমদ্যতে শীর্ষতোঽভি ষিঞ্চতি শীর্ষতো হ্যন্নমদ্যতে আ মুখাদদ্ববস্রাবয়তি মূখত এবাস্মা অন্নাদ্যং দধাত্যগ্নেস্ত্বা সাম্রাজ্যেনাভি ষিঞ্চামীত্যাহৈষ বা অগ্নেঃ সবস্তেনৈবৈনমভি ষিঞ্চতি বৃহস্পতেস্ত্বা সাম্রাজ্যেনাভি ষিঞ্চামীত্যাহ ব্রহ্ম বৈ দেবানাম্ বৃহস্পতির্ব্রহ্মণৈবৈনমভি ষিঞ্চতীন্দ্রস্য ত্বা সাম্রাজ্যেনাভি ষিঞ্চামীত্যাহেন্দ্রিয়মেবাস্মিন্নুপরিষ্টান্দধাত্যেতৎ বৈ রাজসূয়স্য রূপম্ য এবং বিদ্বানগ্নিং চিনুত উভাবেব লোকাবভি জয়তি যশ্চ রাজসূয়েনেজানস্য যশ্চাগ্নিচিত ইন্দ্রস্য সুষুবাণস্য দশধেন্দ্রিয়ং বীর্য্যং পরাঽপতওন্দেবাঃ সৌত্রামণ্যা সমভরনৎসূয়তে বা এষ যোঽগ্নিং চিনুতেঽঅগ্নিং চিত্বা সৌত্রামণ্যা যজেতেন্দ্রিয়মেব বীর্যং সম্ভৃত্যাত্মন্ধত্তে।।" 

অর্থাৎ দেশ, কাল ও নিমিত্ত বিশেষে অপমৃত্যুর ব্যাপ্তি ঘটে। সর্প, ব্যাঘ্র ও চোর অধ্যুষিত দেশ বা স্থান মৃত্যুর কারণ (হেতবঃ)। সন্ধ্যা, মধ্যরাত্রি ইত্যাদি সময় যক্ষ রাক্ষস ইত্যাদি প্রযুক্ত (অর্থাৎ ঐ সময়ে যক্ষ-রাক্ষসদের প্রাদুর্ভাব হওয়ার কারণে, ঐ কাল) মৃত্যুকাল। দুষ্ট (দোষযুক্ত) খাদ্য আহার-ভোজন ইত্যাদি মৃত্যুর নিমিত্ত (কারণ)। ভূতেষ্টকা উপধানের দ্বারা সেই দেশ, কাল ও নিমিত্ত প্রযুক্ত (সম্পর্কিত) সরকম মৃত্যু হতে যজমান পরিত্রাণ প্রাপ্ত হন (অর্থাৎ মৃত্যু দুরীভূত হয়)। অতএব অগ্নিচয়নকারী নিজের পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত হন; তার ফলে সকল অপমৃত্যুও বিনাশিত হয়। অধিকন্তু এই অগ্নিচয়নকারী কোন আভিচারিক কর্মের বিষয়ীভূতও হন না। সেইরকম যে মূর্খ অতিচার কর্ম করে, এমন মূর্খ সেই অভিচারের দ্বারা পশ্চিমাভিমুখ (প্রত্যঙ্গুখো) হয়ে অর্থাৎ বিমুখতায় বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে যজমান অগ্নিচয়ন করেন, তিনি দেবগণ কর্তৃক প্রেরিত হন। অগ্নয়ে গৃহপতয়ে পুরোডাশম–অর্থাৎ গৃহপতি অগ্নির উদ্দেশে পুরোডাশ ইত্যাদি রাজসূয় যজ্ঞে কথিত মন্ত্রে অগ্নি প্রমুখ দেবতাগণ এই যজমানের প্রেরক। অভিষেকযুক্ত যাগের নাম সব–এই হেতু কথিত হয়, এবং তা দুরকম–বরুণ-সব ও ব্রহ্ম-সব। রাজা কর্তৃক অনুষ্ঠেয় রাজসূয় হলো বরুণ-সব; কারণ বরুণ হলেন রাজাভিমানী দেবতা। কিন্তু চিত্য (অর্থাৎ চয়িত বা চয়নকৃত) অগ্নি ব্রাহ্মণের দ্বারাও অনুষ্ঠিত হয়; সেই কারণে তা (অর্থাৎ অগ্নিচয়ন) ব্রহ্মসব; যেহেতু অগ্নি হলেন ব্রাহ্মণাভিমানী দেবতা। অতএব সব-দ্বয় (যাগদ্বয়) অভিষেকের যোগ্য। দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসব–অর্থাৎ সবিতাদেবের প্রেরণায় (বা উৎপত্তিতে)–এই ব্ৰহ্মমন্ত্রের দ্বারা সবিতা ইত্যাদি দেবতাগণের অভিষেকের বিষয় প্রতিপাদিত হয়েছে। এই অভিষেক চিত্য অগ্নির রাজসূয়ের স্বরূপ–এইরকম বিজ্ঞাত হয়ে যিনি অগ্নিচয়ন করেন, তিনি বরুণযাগ ও ব্রহ্মযাগ উভয় যাগের ফলস্বরূপ উভয় তোক জয় করে থাকেন (উভয়ফলং ভবতি)।

 






 

এখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, রাজসূয়যজ্ঞে ক্ষত্রিয় রাজা অগ্নিচয়ন করেন। 

এরও যদি আপনাদের কর্মকাণ্ডের জ্ঞান না থাকে এবং দাবী করেন রাজসূয়যজ্ঞে অগ্নিচয়ন নাই, 

তবে সেটা হবে নিজেকে মূর্খ প্রমাণ করা৷ অবশ্য প্রথম থেকে মূর্খরা নিজেকে বা কিভাবেই আবার 

মূর্খ প্রমাণ করবে!



অপ-দাবিঃ #অথ পুরুষমুপদধাতি। স প্রজাপতিঃ সোঽগ্নিঃ স যজমানঃ স হিরণ্ময়ো ভবতি জ্যোতির্ব্বৈ হিরণ্যং জ্যোতিরগ্নিরমৃতং হিরণ্যমমৃতমগ্নিঃ পুরুষো ভবতি পুরুষো হি প্রজাপতিঃ।।

#অনুবাদ-
তারপর তিনি একটি (সুবর্ণ) পুরুষকে (অর্থাৎ সোনার পুরুষ মূর্তি) তার উপর স্থাপন করেন- তিনি প্রজাপতি তিনি অগ্নি, তিনিই যজমান। তিনি হিরণ্ময়, কারণ, হিরণ্য আলোকোজ্জ্বল এবং অগ্নিও আলোকোজ্জ্বল; হিরণ্য অমরণধর্মা, অগ্নিও অমরণ ধর্মবিশিষ্ট। (স্থাপন  করা হয়) একটি পুরুষ, কারণ, প্রজাপতি পুরুষ।
**পুরো লেখার মধ্যে এই অংশটা সবচেয়ে আকর্ষণীয়! কেননা এখানে বলা হচ্ছে যে পূর্বোল্লিখত সেই সূর্য বিগ্রহস্বরূপ সোনার পাত্রের উপর একটি সোনা দ্বারা নির্মিত পুরষাকৃতির মূর্তি বা বিগ্রহ বা প্রতিমা স্থাপন করা হল। এই পুরুষই বেদের পুরুষসূক্তের বিরাটপুরুষ, হিরণ্যগর্ভসূক্তে হিরণ্যগর্ভের ও প্রজাপতি স্বরূপ অর্থৎ এটিই বেদের পরমপুরুষের বিগ্রহ।
এখানে স্পষ্টভাবে হিরণ্যগর্ভ পুরুষের বিগ্রহের কথা বলা হচ্ছে। এই পুরুষই প্রজাপতি, অগ্নি ও যজমান।
পরবর্তী মন্ত্রে আরো কিছু চমক অপেক্ষা করছে!


প্রত্যুত্তরঃ

 

উক্ত কাণ্ডিকাটিতে ব্যবহৃত পুরুষের সুবর্ণময় মূর্তিকে আপনারা দাবী করছেন পরমাত্মার মূর্তি হিসেবে৷ 

কিন্তু আপনাদের ব্যবহৃত অনুবাদ ও মূল কাণ্ডিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে– "স যজমানঃ" অর্থাৎ 

তিনি যজমান৷ অর্থাৎ এই কাণ্ডিকায় যে পুরুষের মূর্তি নিয়ে বলা হচ্ছে সেই পুরুষ মূলত যজমান৷ 

আর এই মূর্তি পরমাত্মার নয়, বরং যজমানের৷ 

 
 অথ পুরুষমুপদধাতি । স প্রজাপতিঃ সোঽগ্নিঃ স যজমানঃ স হিরণ্ময়ো ভবতি জ্যোতির্বৈ হিরণ্যং জ্যোতিরগ্নিরমৃতং হিরণ্যমমৃতমগ্নিঃ পুরুষো ভবতি পুরুষো হি প্রজাপতিঃ। 
শত০ ব্রা০ ৭।৪।১।১৫ 
অনুবাদঃ 
এখন সে পুরুষকে স্থাপন করে । সেই প্রজাপতি , সেই অগ্নি,  সেই যজমান । তা হিরণ্ময় হয় কেননা হিরণ্য হলো জ্যোতি , অগ্নিও জ্যোতি । হিরণ্য অমৃত , অগ্নি অমৃত । সেটি পুরুষ হয় কেননা প্রজাপতিও পুরুষ । 

 





১। পুরুষ অর্থ পরমাত্মা ও জীবাত্মা উভয়পক্ষেই হয় ৷
 
অথর্ববেদ  ১০।২।৩১ এ শরীরকেই অজেয় পুরী বলা হয়েছে । 
 

 
 
গীতা ১৫।১৬ তে জীবাত্মার সময় পুরুষ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।



অথর্ববেদ ১১।৪।১৪ তে পুরুষ শব্দটি জীবের জন্য ব্যবহৃত । 
 
 


 এখানে পুরুষ অর্থ যজমান তথা জীবাত্মা তা আমরা আগেই দেখেছি । এখন এই কণ্ডিকায় পুরুষ 
অগ্নি ও প্রজাপতির যে সম্পর্ক বলা হয়েছে তা যে জীবাত্মারই সেটি আমরা শতপথ ব্রাহ্মণ 
থেকেই দেখবো । 

যদ্বেব চতুর্বিংশতিঃ । চতুর্বিংশো বৈ পুরুষো দশ হস্ত্যা অঙ্গুলয়ো দশ পাদ্যাশ্চত্বার্যঙ্গানি পুরুষঃ প্রজাপতিঃ প্রজাপতিরগ্নির্যাবানগ্নির্যাবত্যস্য মাত্রা তাবতৈবৈনমেতৎসমিন্দ্ধে । 
শত০ ব্রা০ ৬।২।১।২৩ 
অনুবাদঃ  
পুরুষের ২৪ অঙ্গ = ১০ হাতের আঙুল , ১০ পায়ের আঙুল ও ৪ অঙ্গ [ ২ পা ও ২ হাত ] । প্রজাপতি পুরুষ । প্রজাপতি অগ্নি । 




এছাড়াও এই রাজসূয়ের রুক্ম সম্পর্কিত প্রকরণে মৈত্রেয়াণী সংহিতায় স্পষ্ট করে পুরুষ যে 
যজমান জীবই তা বর্ণনা করেছে ।
স্পষ্টতঃ এখানে পুরুষ অবশ্যই জীব । কেননা জীবের দেহেই এসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় ।  
সায়ণাদি ভ্রান্ত ভাষ্য অনুযায়ী যদি পুরুষ সূক্তে বর্ণিত বিরাট পুরুষই উপলক্ষ হতো তবে এ
খানে ২৪ অঙ্গ হতো না । কেননা সাকারবাদীগণের মতেই সেখানে সহস্র পদের বর্ণনা রয়েছে । 
তদুপরি এখানে আলোচ্য কণ্ডিকার পরবর্তী অগ্নি ও প্রজাপতি পদের পূর্ব উল্লেখও পরবর্তী
 কণ্ডিকার পুরুষ = জীবাত্মা এটিই প্রমাণিত করে । 




শতায়ুর্বৈ পুরুষঃ শতবীর্যা , আয়ুরেব বীর্যমাপ্নোতি ॥
মৈ০ সং০ ৪।৪।৩,৪
অর্থাৎ - 
শত আয়ু যুক্ত পুরুষই শতবীর্য । আয়ুই তার বীর্য বা বল স্বরূপ । 

 




শত বৎসর আয়ু জীবাত্মার সাথেই সম্পর্কিত তা যজুর্বেদ ৪০।২ এ স্পষ্টতঃ প্রমাণিত । 
 

 

অর্থাৎ শত আয়ু যুক্ত পুরুষই শতবীর্য। আয়ুই তার বীর্য বা বল স্বরূপ।

 

মৈত্রেয়াণী সংহিতার রাজসূয় যজ্ঞ প্রকরণের এসব প্রমাণ খুব স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে 

আপনাদের উল্লিখিত অগ্নিচয়ন স্থলে পুরুষ হলো যজমান রাজা৷ তা না হলে পুরুষকে শত

 আয়ু বলা হত না৷ কোনো মূর্খও দাবি করবে না যে পরমাত্মারূপ পুরুষ হলো শত আয়ু৷

 

আর পরিশেষে অখণ্ডনীয় একটি প্রমাণ -

চত্বারো বৈ পুরুষা ব্রাহ্মণো রাজন্যো বৈশ্যঃ শূদ্র । 
মৈ০ সং০ ৪।৪।৬ 
অর্থাৎ পুরুষ ৪ প্রকার । ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শূদ্র । 

অতঃ রাজসূয়ের অগ্নিচয়নের এই প্রকরণে পুরুষ অর্থ যে জীবাত্মা তথা যজমান 
রাজাই তা অখণ্ডনীয়ভাবে প্রমাণিত ও অন্যাদি সকল ব্যাখ্যা ভ্রান্ত তাও প্রমাণিত । 
 
অপ-দাবিঃ এই স্থলে যদি পুরুষ অর্থ যজমান রাজা হয় তবে শতপথ ব্রাহ্মণে পুরুষকেই অগ্নি ও প্রজাপতি বলা হলো কেন? যজমান রাজা কিভাবে অগ্নি ও প্রজাপতি হতে পারেন? 
 
প্রত্যুত্তরঃ 

পূর্বে আমরা প্রমাণ করে এসেছি, শতপথের উক্ত কাণ্ডিকায় পুরুষ অর্থ যজমান। এখন এই কণ্ডিকায় 

পুরুষ অগ্নি ও প্রজাপতির যে সম্পর্ক বলা হয়েছে তা যে যজমানই সেটি আমরা শতপথ ব্রাহ্মণ থেকেই 

দেখবো।

i. "যদ্বেব চতুর্বিংশতিঃ। চতুর্বিংশো বৈ পুরুষো দশ হস্ত্যা অঙ্গুলয়ো দশ পাদ্যাশ্চত্বার্যঙ্গানি পুরুষঃ প্রজাপতিঃ প্রজাপতিরগ্নির্যাবানগ্নির্যাবত্যস্য মাত্রা তাবতৈবৈনমেতৎসমিন্দ্ধে।"

(শত০ ব্রা০ ৬।২।১।২৩)

অর্থাৎ পুরুষের ২৪ অঙ্গ = ১০ হাতের আঙু , ১০ পায়ের আঙুল ও ৪ অঙ্গ [২ পা ও ২ হাত]। (এই) প্রজাপতি পুরুষ। প্রজাপতি অগ্নি। 

 

 

স্পষ্টত এখানে পুরুষ অবশ্যই জীব। কেননা জীবের দেহেই এসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। 

সায়ণাদি ভ্রান্ত ভাষ্য অনুযায়ী যদি পুরুষ সূক্তে বর্ণিত বিরাট পুরুষই উপলক্ষ হতো তবে 

এখানে ২৪ অঙ্গ হতো না। কেননা সাকারবাদীগণের মতেই সেখানে সহস্র পদের বর্ণনা রয়েছে। 

তদুপরি এখানে আলোচ্য কণ্ডিকার পরবর্তী অগ্নি ও প্রজাপতি পদের পূর্ব উল্লেখও পরবর্তী কণ্ডিকার 

পুরুষ = যজমান এটিই প্রমাণিত করে।

 

রাজাকে প্রজাপতি বলা হচ্ছে কেননা তিনি সকল প্রজাগণের স্বামী বা অধীশ্বর ।  এখানে প্রজা কারা ? নিঘণ্টু ও  ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বলা হয়েছে - 
 
(১) প্রজা অপত্যনাম - নিঘ০ ২।২ = অপত্যই প্রজা
 
 

 
(২) প্রজা বৈ সূনু - শত০ ব্রা০ ৭।১।১।২৭ = সন্তানই প্রজা 
 
 

 
 
(৩) আদ্যা হীমাঃ প্রজা বিশঃ - শত০ ব্রা০ ৪।২।১।১৭ = মানবই প্রজা
 
 

 
(৪) মনুষ্যঃ। নরঃ। ধবাঃ। জন্তবঃ। বিশঃ। ক্ষিতয়ঃ। কৃষ্টয়ঃ৷ চর্ষণয়ঃ। নহুষ৷ হরয়ঃ৷ মর্যাঃ। মর্ত্যাঃ। মর্তাঃ। ব্রাতাঃ। তুর্বশাঃ। দ্রুহ্যবঃ৷ আয়বঃ। যদবঃ। অনবঃ৷ পূরবঃ। জগতঃ। তস্থুষঃ৷ পঞ্চজনাঃ। বিবস্বন্তঃ। পৃতনাঃ ইতি পঞ্চবিংশতির্মনুষ্যনামানি।।
নিঘণ্টু ২।৩ অনুযায়ী যদু , বিশঃ, নরঃ ইত্যাদি মনুষ্যবাচক বা সমার্থক । 
 

 
 
(৫) আদিত্যা বা ইমাঃ প্রজা - মৈ০ সং০ ৪।৪।৫ = প্রজাগণই আদিত্য । আদিত্য অর্থ যেহেতু অখণ্ডনীয় এখানে সংগঠিত প্রজাশক্তি অভিপ্রেত । 
 


সিদ্ধান্তঃ অতএব প্রজা অর্থ যেহেতু মানব হচ্ছে তাই প্রজাপতি অর্থ মানবগণের অধিপতি রাজা । নিরুক্ত ১০।৪(৪২) অনুযায়ী ' প্রজাপতিঃ । প্রজানাং পাতা বা পালয়িতা বা ' = প্রজাগণের রক্ষক অথবা পালক । 
 



আবার এই রাজাই ক্ষত্রিয় পুরুষ কেননা ' পুরুষ প্রজাপতিঃ'  ও 'প্রজাপতির্বৈ ক্ষত্রং' শত০ ব্রা০ ৮।২।৩।১১ । 



(৩) পুরুষকে বলা হয়েছে অগ্নি । অগ্নি শব্দ দ্বারা আত্মা, মন, প্রাণ, বাণী প্রভৃতিও বাচ্যার্থ হতে পারে। শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে, 
  • 'আত্মাই অগ্নি' শত০ ৬।৭।১।২০, 
 

 
  • 'মনই অগ্নি' শত০ ১০।১।২।৩
 


  • 'প্রাণই অগ্নি' শত০ ৯।৫।১।৬৮,
 

 
 
  •  'বাণীই অগ্নি' শত০ ৩।২।২।১৩। 
 

 
আর ব্যবহারিক দৃষ্টিতে পার্থিব অগ্নি, বিদ্যুৎ, সূর্য, বিদ্বান পুরুষ, রাজা, সেনাপতি প্রভৃতি অগ্নি শব্দের বাচ্যার্থ হয়ে থাকে। 
 
 
যাস্কাচার্য নিরুক্ত (৭।১৪) তে যে নির্বচন দেখিয়েছেন, সেই অনুসারে অগ্নি শব্দ 'অগ্র-নী' যা 'অংগ-নী' দ্বারা নিষ্পন্ন হয়। অগ্নি এই কারণে যে তিনি অগ্র-নী অর্থাৎ অগ্র-নায়ক অথবা পথপ্রদর্শক হন বিদ্বানকেও অগ্নি বলা হয়। 
 
 
 
 
এই বিষয়ে ''বিদ্বানই অগ্নি, যিনি ঋতের সংগ্রাহক এবং সত্যময় হয়ে থাকেন।’ [ঋ০ ১।১৪৫।৫],
 
 

 
 'বিদ্বানই অগ্নি, যিনি বল প্রদান করে থাকেন।’ [ঋ০ ৩।২৫।২] ইত্যাদি মন্ত্র প্রমাণ রয়েছে। 
 
 

 
রাজাকেও অগ্নি বলা হয়। এই বিষয়ে 'হে অগ্নি! তুমি প্রজাপালক, উত্তম দাতা প্রজাদের রাষ্ট্ররূপ গৃহকে রাজা রূপে অলঙ্কৃত করো।’ [ঋ০ ২।১।৮]; 
 
 

 
'রাজাই অগ্নি, যিনি রাষ্ট্ররূপ গৃহের অধিপতি এবং রাষ্ট্রযজ্ঞের ঋত্বিক হয়ে থাকেন।’ [ঋ০ ৬।১৫।১৩] ইত্যাদি প্রমাণ রয়েছে।
 

 

৪। উক্ত পুরুষকে বলা হয়েছে যজমান । স্বাভাবিকভাবেই ' যদ্ যজতে তদ্ যজমান ' - শত০ ব্রা০ ৩।২।১।১৭ = যে যজ্ঞ করে সেই যজমান । রাজসূয় যজ্ঞে রাজাই যজমান এটি সর্ববিদিত । 
 
 

 
প্রসঙ্গতঃ যজমানই যে প্রজাপতি ও অগ্নি সে সম্পর্কিত প্রমাণ উদ্ধৃত করা হলো । 
 
অপ-দাবিঃ আপনারা প্রমাণ দিচ্ছেন, শতপথ ৭।৪।১।১৫ এর পুরুষ হলেন যজমান রাজা। আপনাদের প্রমাণ যথেষ্ট পোক্ত৷ তবুও আমরা তা অস্বীকার করব। কারণ আমাদের জন্মই হয়েছে আপনাদের প্রমাণ অস্বীকার করে আপনাদের বিরোধিতা করার জন্য৷ যাই হোক, শতপথ ৭।৪।১।১৫ এ পুরুষকে 'হিরণ্ময়' বলা হয়েছে৷ কিন্তু মানব বা যজমান বা রাজা তো হিরন্ময় হতে পারে না। তাই আপনাদের প্রমাণ ঠিক নয়৷ 
 

প্রত্যুত্তরঃ হিরণ্ময় জীবাত্মা তথা মানবেরও বৈশিষ্ট্য৷ এই বিষয়ে আমাদের বৈদিক বাঙ্ময়ে বহু 

প্রমাণ রয়েছে৷ সেগুলো পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করে আপনাদের শঙ্কার সমাধান হয়ে যাবে, যদি না 

আপনারা বিদ্বেষে অন্ধ হয়ে থাকেন৷ 

 
 
(১)  যজমানো হ্যেব স্বে যজ্ঞে প্রজাপতিরেতেন হ্যুক্তা ঋত্বিজস্তন্বতে তং জনয়ন্তি - শত০ ব্রা০ ১।৬।১।২০ = স্বীয় যজ্ঞে যজমানই প্রজাপতি কেননা তার কথনেই ঋত্বিকগণ যজ্ঞ বিস্তার ও সৃজন করে । 
 
 

 
 
(২) আধ্যাত্মিকভাবে রুক্ম যা কিনা যজমানেরই প্রতিরূপ তা মূলতঃ যজমানকে আত্মিকভাবে বলবান করে । কেননা  ' আত্মা বৈ যজ্ঞস্য যজমানঃ ' - শত০ ব্রা০ ৯।৫।২।১৬ = যজমানই যজ্ঞের আত্মা । এই জন্যই রাজসূয় যাগে যজমানেরই প্রতিরূপ ব্যবহৃত হয় । 
 
 

 

৫। হিরণ্য বলতে যজমানের  আয়ু , তেজ ও অবিনাশী জীবাত্মা স্বরূপ বোঝায় । বৈদিক শাস্ত্র থেকে আমরা শত প্রমাণ দিতে পারি এই বিষয়ে । বাহুল্য ভয়ে সংক্ষেপে প্রমাণ দেওয়া হলো - 

আয়ুর্বৈ হিরণ্যম্ বর্চো বৈ হিরণ্যম্ 
মৈ০সং০ ৪।৪।২,৪ 
অর্থাৎ,  আয়ুই হিরণ্য, তেজই হিরণ্য । 


 
 মৈ০সং০ ৪।৪।৪

মৈ০সং০ ৪।৪।২

 
 
অমৃতং হিরণ্যম্ 
মৈ০ সং০ ৪।৪।৪
অর্থাৎ অবিনাশী স্বরূপই হিরণ্য । 


 
 
অষ্টচক্রা নবদ্বারা দেবগণের ( ইন্দ্রিয়সমূহ ) পুরীতে হিরণ্ময়কোশের উল্লেখ রয়েছে । একে স্বর্গ এবং জ্যোতিষাবৃত ( জ্যোতি দ্বারা আবৃত ) বলা হয়েছে । পরবর্তী মন্ত্রে এই হিরণ্ময়কোশের " ত্রিপ্রতিষ্ঠিত ত্র্যর " এর  স্থানে " আত্মন্বৎ যক্ষ " এর স্থিতি বলা হয়েছে । একারণে প্রথমে পর্যবেক্ষণ করা উচিত যে, মন্ত্রোক্ত হিরণ্ময়কোশের স্থিতি শরীরের কোথায় অবস্থান করছে ?
 
বৈয়াকরণগণের মতানুসারে হিরণ্ময় শব্দ হলো  ময়ট্প্রত্যয়ান্ত [ দ্রষ্টব্য - 'ঋত্ব্যবাস্ত্ব্যবাস্ত্বমাধ্বীহিরণ্যয়ানি ছন্দসি' অষ্টা০ ৬।৪।১৭৪ সূত্র দ্বারা " হিরণ্ময় " এর 'ময়ট্' এর মকারের লোপ বেদে দর্শিত করা হয়েছে । কিছু বৈদিক গ্রন্থে হিরণ্ময় শব্দেরও প্রয়োগ রয়েছে, সেখানে হিরণ্ময় এর য়কার এর লোপের উল্লেখ রয়েছে, অথবা হিরণ্যার্থক " হিরণ্ " প্রকৃত্যন্তর হয়েছে ] । 
 

 
 
এই পদে ময়ট্ " আনন্দময় " এর সমান প্রকৃত অর্থ্যাৎ প্রাচুর্য দ্বারা প্রস্তুত [ 'তৎপ্রকৃতবচনে ময়ট্' অষ্টা০ ৫।৪।২১- প্রাচুর্যেণ প্রস্তুতং প্রকৃতম্ ( কাশিকা) ]  অর্থে হয়েছে ।  
 
 

 
 
তদনুসার " হিরণ্ময় " শব্দের অর্থ - হিরণ্য এর প্রাচুর্য - প্রাধান্য দ্বারা নির্মিত বস্তু । এই দেবপুরী শরীরে এমন কোন অবয়ব রয়েছে, যা হিরণ্য এর প্রাচুর্য দ্বারা তৈরি হয়েছে । এই বিষয়ে শরীর-শাস্ত্র-নিষ্ণাতসমূহের কথন হলো মস্তিষ্কে এমন একটি অবয়ব রয়েছে, যা হাল্কা হলুদ ( ধুসর ) বর্ণের পদার্থের বাহুল্য দ্বারা তৈরি হয়েছে এই দুটির আকৃতি মনুষ্যের অঙ্গুষ্ঠ-পর্ব থেকে পাওয়া যায় । এটাই সমস্ত জ্ঞান তথা চেষ্টাতন্তুসমূহের কেন্দ্র ।এই অবয়বের অতিরিক্ত শরীরে আর কোনো এমন অবয়ব নাই যা, হাল্কা হলুদ বর্ণ বহুল পদার্থ দ্বারা তৈরি । এই হিরণ্ময় কোশকে ঋগ্বেদ ৪।৫৮।৫- এ   " হিরণ্ময় বেতস " বলা হয়েছে ।
 

 
   
শুধু এইটুকু নয়, বেদ-এ এই হিরণ্ময়কোশকে স্বর্গও বলা হয়েছে । ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলোতে স্বর্গকে উর্ধ্বলোক বলা হয়েছে  ' উপরীব হি সুবর্গো লোকঃ ' তৈ০ ব্রা০ ৩।২।১।৬,১২ ।  

 

এই ব্রহ্মাণ্ডে স্বর্গ আদিত্যলোক  এবং এই শরীরের স্বর্গ মস্তিষ্কের অবয়বভূত হিরণ্ময়কোশই । উভয়ই ঊর্ধ্বভাগে নিহিত । আদিত্যে অজর অমর দেবগণ = কিরণে বাস করে এবং এই হিরণ্ময়কোশে দেবগণ = ইন্দ্রিয়সমূহ সূক্ষ্ম সংবেদনাত্মক শক্তির সংনিবাস ।  এজন্য বলা হয় " যদ্ ব্রহ্মাণ্ডে তৎপিণ্ডে " অর্থাৎ, যেমনভাবে ব্রহ্মাণ্ডের রচনা হয়েছে তেমনভাবে শরীরের হয়েছে ।

৬। জ্যোতি - হিরণ্য বা অগ্নিকে জ্যোতি বলা হয়েছে তা কণ্ডিকাতেই আছে । এছাড়াও জীবাত্মাকেও জ্যোতি বলা হয়েছে । 

ত্রয়ঃ কেশিন ঋতুথা বিচক্ষতে সংবৎসরে বপত এক এষাম্। 
বিশ্বমেকো অভিচষ্টে শচীভির্ঘ্রাজি রেকস্য দদৃশে ন রুপম্।
অথর্ববেদ ৯।১০।২৬ 

অর্থাৎ তিন প্রকাশময় [ নিরু০ ১২।২৬ ] পদার্থ তাদের প্রকাশানুসারে ব্যাখ্যাত হয় । 




প্রসদ্ধ ভস্মনা যোনিমপশ্চ পৃথিবীমগ্নে। 
সংসৃজ্য মাতৃভিষ্ট্বং জ্যোতিষ্মান্ পুনরাসদঃ।।
যজুর্বেদ ১২।৩৮
অর্থঃ (অগ্নে) হে সূর্যের ন্যায় (জ্যোতিষ্মান) প্রশংসিত জ্যোতির্ময় জীবাত্মা (ত্বম্) তুমি (ভস্মনা) এই জড় শরীর ভস্মের পশ্চাৎ(পৃথিবীম্) ভূমি (চ) ও (অপঃ) জলের মধ্যে (যোনিম্) দেহ ধারণের কারণকে (প্রসদ্ধ) প্রাপ্ত হও।(মাতৃভিঃ) মাতৃগর্ভে (সংসৃজ্য)  সংযুক্ত হয়ে তুমি (পুনঃ) পুনরায় (আসদঃ) শরীর লাভ করো ।




এছাড়াও পুরুষ শব্দ বিচার কালে অথর্ববেদ ১০।২।৩১,৩২ এ জ্যোতি শব্দটি আমরা জীবাত্মার ক্ষেত্রে পেয়েছি ।  
 


 

৭। অমৃত নিঘণ্টু ১।২ অনুযায়ী হিরণ্যেরই অপর নাম ।
 
 
 

 
অমৃতং হিরণ্যম্ ' তৈ০ ব্রা০ ১।৭।৬।৩, 
 
 
 
শত০ ব্রা০ ৯।৪।৪।৫,   





তৈ০ ব্রা০ ১।৩।৭।১৮
 

 


নিরুক্ত ২।২০ অনুযায়ী ' অমৃতে অমরণধর্মাণৌ' = অমরণধর্মই অমৃত । 
 

 

 শ্রীমদভগবদগীতা ২।২২,২৩ আত্মার এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি সম্পর্কে কে না জানে  - 
 




জীবাত্মার প্রাণতত্ত্বকেও অমৃত বলা হয় ।  বৈদিক বাঙ্ময়ে প্রাণ শব্দ অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । পরন্তু প্রথম মন্ত্রে প্রাণকে মাথা, দেবকোশ, মস্তিষ্ক তথা অন্ন এবং মনের রক্ষক  নির্দেশ করেছে ।  এই প্রাণ ভৌতিক বায়ু নয়, বরং জীব বাচক এটাই এই ভৌতিক শরীরে অমৃতস্বরূপ । এজন্য ব্রাহ্মণগ্রন্থ গুলোতে বিভিন্ন স্থানে প্রাণকে অমৃত বলা হয়েছে [ কৌ০ ব্রা০ ১১।৪ , ১৪।২ ; গো০ ব্রা০ উ০ ১।৩ ] । 
 
 

 
 
ভৌতিক প্রাণবায়ু হলো নাশবান, অতএব একে অমৃত শব্দ সম্বোধন করা উপযুক্ত নয়  । মহাভারত শান্তিপর্ব ১৮৭।৩১-এ এই মানস অগ্নিকেই জীব ( আত্মা ) বলা হয়েছে - " মানসোগ্নিঃ শরীরেষু জীব ইত্যভিধীয়তে " । জগতে জীবযুক্ত সচেতন শরীরকেই  প্রাণী বলা হয়ে থাকে । 
 
 

 
অতএব এটা স্পষ্ট যে, প্রাণ শব্দের মুখ্যতয়া জীব বাচকই । প্রাণ অপান আদি ভৌতিক বায়ু সমূহের জন্য প্রাণ শব্দের ব্যবহার " প্রাণ = জীব " এর সাহচর্যের কারণে লক্ষণাবৃত্তিতে হয়ে থাকে ।
 
' প্রাণোঽমৃতম্ ' শত০ ব্রা০ ১০।২।৬।১৮ , 
 
 
 
' অমৃতমু বৈ প্রাণা' শত০ ব্রা০ ৯।৩।৩।১৩




 অপ-দাবিঃ #এরপর শতপথব্রাহ্মহণের ৭/৪/১/১৭ তে বলা হচ্ছে-
"তং রুক্মঽউপদধাতি। অসৌ বাঽআদিত্যঽএষ রুক্মঽথ য ঽএষএতস্মিন্মণ্ডলে পুরুষঃ স ঽএষ তমেবৈতদুপদধাতি।।

#অনুবাদ-
তিনি স্বর্ণময় রেকাবে তাকে(সোনার পুরুষ  স্থাপন করেন। কারণ, 'সুবর্ণরেকাবই ঐ আদিত্য; ঐ আদিত্যমণ্ডলে যে- পুরুষের অবস্থান তাকেই তিনি এখন (বেদিস্থানে) স্ থাপন করেন।**এখানে সেই সোনার পুরুষ মূর্তি যাকে সূর্যবিগ্রহস্বরূপ ২১ ফলক বিশিষ্ট রেকাবে রাখা হয়েছে তাকে আদিত্যমন্ডলের আত্মাস্বরূপ পুরুষ হিসবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এই স্থাপিত পুরুষ মূর্তিটি সেই বেদের বিরটপুরুষ, প্রজাপতি, হিরণ্যগর্ভ, আদিত্যমন্ডলের আত্মা স্বরূপ এবং তাকে যজ্ঞ বেদীস্থানে স্থাপন করা হচ্ছে।উক্ত আলোচনা থেকে উঠে আসলো, যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণে স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে মূর্তিপূজা বা বিগ্রহ উপাসনা বা প্রতিমা দিয়ে উপাসনা বর্ণিত হয়েছে। যেখানে সূর্যের বিগ্রহ বা প্রতিমা হিসেবে ২১ ফলক যুক্ত সোনার পাত্র ও বেদের বিরাটপুরুষ/ হিরণ্যগর্ভ / প্রজাপতির বিগ্রহ বা প্রতিমা হিসেবে একটি সোনার পুরুষ বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। সূর্য বিগ্রহটি স্থাপন করা হয় পদ্মপুষ্পের পাপড়ির উপর ও পুরুষ বিগ্রহটি স্থাপন করা হয় সূর্য বিগ্রহটির উপর। বিগ্রহ স্থাপনের পূর্বে সামগান গাওয়া হয় এবং বিগ্রহ স্থাপনের পর তার উদ্দেশ্যে সামগান করা হয়। উক্ত মন্ত্রগুলের সায়ণভাষ্য সহ প্রদত্ত রয়েছে।

সুতরাং, প্রতিমাপূজা বা বিগ ্ রহ উপাসনা ১০০% বেদ স্বীকৃত। যারা যুগ যুগ ধরে চলে আসা সনাতন ধর্মের এই  অনুশাসনকে বেদ বিরোধী বলে নিজের ব্যবসার সুবিধার্থে চালায় বা এর বিরোধীতা করে তারা কখনোই সনাতনের অংশ হতে পারে না। তাদের থেকে সকলে দূরত্ব বজায় রাখুন।

প্রত্যুত্তরঃ 
 
 আদিত্য মণ্ডলস্থ ও হিরণ্যগর্ভ পুরুষের রাজনৈতিক তাৎপর্যঃ 
 
১। আমরা পূর্বে প্রজাপতি শব্দ নির্ণয়ে দেখেছি যে আদিত্য বলতে অখণ্ডনীয় সংগঠিত প্রজাশক্তিও বোঝায় । রাজা সামগ্রিকভাবে এই প্রজাগণের থেকেই উৎপন্ন । কেননা সমগ্র সৃষ্টিই পরমেশ্বরের প্রজা । অতঃ অখণ্ডনীয় প্রজা সমষ্টির মধ্যে স্থিত রাজাই সেই পুরুষ । আবার এই পুরুষ  জীবাত্মাও বটে । হিরণ্য শব্দে আমরা তা প্রমাণ করেছি । ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে - 

তস্যা [ বিশঃ ] রাজা গর্ভঃ । 
তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ ২।৭।৫ 
অর্থাৎ প্রজাগণই রাজার গর্ভ । 
 
 




অতঃ অমৃত জীবাত্মা তথা প্রজা রাজার গর্ভ স্বরূপ তা বলাই বাহুল্য । 
আদিত্য হৃদয়ও বোঝায় । আদিত্যস্থ পুরুষ হৃদয়ে স্থিত জীবাত্মাও, প্রজাপতি যজমান ৷ গোল রুক্ম সেই হৃদয় । 
 
অথ প্রজাপতের্হৃদয়ং গায়তি । অসৌ বা আদিত্যো হৃদয়ং শ্লক্ষ্ণ এষ শ্লক্ষ্ণং হৃদয়ং পরিমণ্ডল এষ পরিমণ্ডলং হৃদয়মাত্মন্গায়ত্যাত্মন্হি হৃদয়ং নিকক্ষে নিকক্ষে হি হৃদয়ং দক্ষিণে নিকক্ষেঽতো হি হৃদয়ং নেদীয় আদিত্যমেবাস্যৈতদ্ধৃদয়ং করোত্যথো হৃদয়মেবাস্যৈতদনস্থিকমমৃতং করোতি। 
শত০ ব্রা০ ৯.১.২.৪০
অর্থাৎ ,  হৃদয়ই আদিত্য  । উভয়েই শ্লক্ষ্ণ [ চিকন ], পরিমণ্ডলাকার , শরীরে স্থিত । হৃদয় হাড় শূণ্য ও অমর । তাহাই যজ্ঞ বেদীয় হৃদয়ও বটে ।

লক্ষণীয়,  এখানে আমরা আদিত্য মণ্ডল ব্যাখ্যা পেয়ে গেলাম এবং তা যে সায়ণ কথিতটি নয় তাও প্রমাণ হলো। 

প্রজাসু চ প্রজাপতৌ চ গায়তি । তদ্যৎপ্রজাসু গায়তি তৎপ্রজাসু হৃদয়ং দধাত্যথ যৎপ্রজাপতৌ গায়তি তদগ্নৌ হৃদয়ং দধাতি। 
শত০ ব্রা০  ৯.১.২.৪১
অর্থাৎ , প্রজা ও প্রজাপতির বিষয়ে গীত হয় । প্রজা ও প্রজাপতির বিষয়ে গীত হলে হৃদয়কে যথাক্রমে প্রজাগণ ও অগ্নি বেদীতে রাখা হয় । 
 
 
 

 
 
অতঃ আদিত্য মণ্ডলস্থ পুরুষ এখানে যজমান তা আবারও প্রমাণিত । 
 
 
২। আধ্যাত্মিক তাৎপর্যে এখানে হিরণ্য পুরুষ বলার কারণ হলো - 
 
যদসাবেব যজমানো যোঽসৌ হিরণ্ময়ঃ পুরুষোঽথ কতমদস্যেদং রূপমিতি দৈবো বা অস্য স আত্মা মনুষোঽয়ং তদ্যৎস হিরণ্ময়ো ভবত্যমৃতং বাঽঅস্য তদ্রূপং দেবরূপমমৃতং হিরণ্যমথ যদিয়ং মৃদঃ কৃতা ভবতি মানুষং হ্যস্যেদং রূপম্ 
শত০ ব্রা০ ৭.৪.২.[১৬]
অর্থাৎ  ,  এই হিরণ্যময় পুরুষ যজমানের দৈবী শরীর । আর দ্বিযজু ইট তার মানুষী শরীর । হিরণ্য অমৃত স্বরূপ বলে সেই প্রতিমা তার দৈবী শরীর নির্দেশ করে । আর মাটির তৈরী ইট তার মানুষী রূপ । 
 
 

 

তদাহুঃ । যদসাবেব যজমানো যোঽসৌ হিরণ্ময়ঃ পুরুষোঽথ কতমদস্যেদং রূপমিতি দৈবো বা অস্য স আত্মা মনুষোঽয়ং তদ্যৎস হিরণ্ময়ো ভবত্যমৃতং বাঽঅস্য তদ্রূপং দেবরূপমমৃতং হিরণ্যমথ যদিয়ং মৃদঃ কৃতা ভবতি মানুষং হ্যস্যেদং রূপম্। 
শত০ ব্রা০ ৭.৪.২.[১৭]
অর্থাৎ , যদি হিরণ্ময়কে রাখার পর ইট না রাখতো তবে যজমান শীঘ্রই মৃত্যুবরণ করতো । যে এই ইটকে রাখে সে যেন তার মানুষী শরীরকে রাখতে দেয় ৷, এভাবে সে সম্পূর্ণ আয়ু তার শরীরের সাথেই থাকে । 




সুপ্রিয় পাঠক,  এরপরেও কি সন্দেহ আছে এই পুরুষ যে যজমান রাজা নয় ? আয়ু ভোগ সম্পূর্ণ জীবই করে ।   পুরুষ = যজমান রাজা আমাদের সমস্ত প্রমাণ দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত । 

৩। তারপরেও আমরা অম্বিকাদত্ত ব্যাস ও অনুকূলী ভণ্ডদের নির্বোধ অনুসারীগণের জন্য আরো কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করছি । অন্ততঃ এগুলো দেখার পরেও যদি তারা সায়ণ ও নিজেদের ভুল সংশোধন না করে তবে বিশেষ একটি প্রাণীর লেজের সাথে তুলনা দেওয়া ব্যতীত কোন উপায় নেই । 

 অপ-দাবিঃ এই স্থাপিত পুরুষ মূর্তিটি সেই বেদের বিরটপুরুষ, প্রজাপতি, হিরণ্যগর্ভ, আদিত্যমন্ডলের আত্মা স্বরূপ এবং তাকে যজ্ঞ বেদীস্থানে স্থাপন করা হচ্ছে।উক্ত আলোচনা থেকে উঠে আসলো, যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণে স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে মূর্তিপূজা বা বিগ্রহ উপাসনা বা প্রতিমা দিয়ে উপাসনা বর্ণিত হয়েছে। যেখানে সূর্যের বিগ্রহ বা প্রতিমা হিসেবে ২১ ফলক যুক্ত সোনার পাত্র ও বেদের বিরাটপুরুষ/ হিরণ্যগর্ভ / প্রজাপতির বিগ্রহ বা প্রতিমা হিসেবে একটি সোনার পুরুষ বিগ্রহ স্থাপন করা হয়।
 
প্রত্যুত্তরঃ 
 
সায়ণ অনুযায়ী পুরুষ দেখেই যারা বিরাট পুরুষ তথা পুরুষ সূক্তের পুরুষ মনে করেন তাদের জন্য প্রশ্ন আপনাদের মতে সেখানে সহস্র শীর্ষ , সহস্র চক্ষু ও সহস্র পাদ মূলতঃ সাকার বোধক । [  এর খণ্ডন এখানে পড়ে নিতে পারেন - পুরুষসূক্তে উল্লেখিত পুরুষের যথাযথ স্বরূপ
 
 
তাহলে শতপথ ব্রাহ্মণে - 
 
(১) দ্বিপাদ্যজমানো শত০ ব্রা০ ৭.৪.১.২১  = যজমানের ২ টি পা
 
 
এতদ্বৈ দেবা এতং পুরুষমুপধায় তমেতাদৃশমেবাপশ্যন্যথৈতচ্ছুষ্কং ফলকম্- শত০ ব্রা০ ৭.৪.১.২২ = বীর্যহীন পুরুষ দর্শনে শুষ্ক কাষ্ঠ ফলক বোধ । 
 


 

 

এই অংশকে আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি এভাবে যে, আমাদের দেহস্থিত দেবগণ তথা ইন্দ্রিয়গণ দেহে প্রবেশের পরেও দেহে খাদ্য বা তেজের অভাববোধ হয়। খাদ্য ও পানীয় দ্বারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণ 


[ কোন মূর্খ বলবে ঈশ্বরে বীর্য নেই ও তা দেখে শুকনো তক্তার মত লাগে ?  ] 

 
 
 
বৌ হীমৌ বাহূ পার্শ্বত উপদধাতি পার্শ্বতো হীমৌ বাহূ - শত০ ব্রা০ ৭.৪.১.৩৬ = পুরুষের বাহু ২ টি৷ 
 
 


 
প্রাপদ্যেতাং তস্মাদ্বাহুভ্যামেবান্নং ক্রিয়তে বাহুভ্যামদ্যতে বাহুভ্যাং হি স সর্বমন্নম্প্রায়চ্ছৎ - শত০ ব্রা০ ৭.৪.১.৪০ = ২ টি হাতেই অন্ন উপার্জন ও ভোগ করা হয় । 
 

 
তাবস্যৈতাবিন্দ্রাগ্নী এব বাহূ শত০ ব্রা০ ৭.৪.১.৪৩ = ইন্দ্রাগ্নি [ বীর্য ও তেজ ] পুরুষ বা জীবের দুই বাহু এজন্য হিরণ্ময় পুরুষেরও দুই বাহু । 
 
 

 

বিরাট সহস্রশীর্ষ পুরুষের সাথে এখানে সাধারণ জীব তথা যজমানের কোন মিলই নেই । 

(২) অগ্নিচয়ন অর্থাৎ সম্পূর্ণ এই প্রক্রিয়ার শুরুতেই সপ্ত ঋষি ও শরীরধারী জীবই প্রজাপতি তা স্পষ্টতঃ উল্লেখ আছে । 

অথ যৈতেষাং সপ্তানাং পুরুষাণাং শ্রীঃ । যো রস আসীত্তমূর্ধ্বং সমুদৌহংস্তদস্যশিরোঽভবদ্যচ্ছ্রিয়ং সমুদৌহংস্তস্মাচ্ছিরস্তস্মিন্নেতস্মিন্প্রাণা অশ্রয়ন্ত তস্মাদ্বেবৈতচ্ছিরোঽথ যৎপ্রাণা অশ্রয়ন্ত তস্মাদু প্রাণাঃ শ্রিয়োঽথ যৎসর্বস্মিন্নশ্রয়ন্ত তস্মাদু শরীরম্ - শত০ ব্রা০৬.১.১.৪

স এব পুরুষঃ প্রজাপতিরভবৎ । স যঃ স পুরুষঃ প্রজাপতিরভবদয়মেব স যোঽয়মগ্নিশ্চীয়তে - শত০ ব্রা০৬.১.১.৫

স বৈ সপ্তপুরুষো ভবতি । সপ্তপুরুষো হ্যযং পুরুষো যচ্চ্ত্বার আত্মা ত্রয়ঃ পক্ষপুচ্ছানি চত্বারো হি তস্য পুরুষস্যাত্মা ত্রয়ঃ পক্ষপুচ্ছান্যথ যদেকেন পুরুষেণাত্মানং বর্ধয়তি তেন বীর্যেণায়মাত্মা পক্ষপুচ্ছান্যুদ্যচ্ছতি - শত০ ব্রা০ ৬.১.১.৬

অর্থাৎ ,  উপরে সব শ্রী একত্রিত হওয়ায় তার নাম 'শির' প্রাণ আশ্র‍য় নেওয়ায় এই দেহের নাম শরীর । পুরুষ - প্রজাপতি ও অগ্নি এখানে তাৎপর্য একই [ শব্দের ব্যাখ্যা আমরা আগেই করেছি ] । ধড়ের চার,  দুই পক্ষ ও এক প্রতিষ্ঠা সব মিলিয়ে এক জীব । 
 
 

 

যজুর্বেদে বলা হয়েছে— “সপ্ত ঋষয়ঃ প্রতিহিতাঃ শরীরে” (যজু০ ৩৪।৫৫) অর্থাৎ শরীরে নেত্রাদি পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়, মন ও প্রাণ এই সপ্ত ঋষি প্রত্যেকে নিজেদের কার্য করে থাকে।
 

 

(৩) স্বয়মাতৃণ্ণামুপদধাতি । ইয়ং বৈ স্বয়মাতৃণ্ণেমামেবৈতদুপদধাতি তামনন্তর্হিতাং পুরুষাদুপদধাত্যন্নং বৈ স্বয়মাতৃণ্ণেয়ং বৈ স্বয়মাতৃণ্ণেয়মু বা অন্নমস্যাং হি সর্বমন্নং পচ্যতেঽনন্তর্হিতমেবাস্মাদেতদন্নং দধাত্যুত্তরামুত্তরমেবাস্মাদেতদন্নং দধাতি - শত০ ব্রা০৭.৪.২.[১]
 
অর্থাৎ এই স্বর্ণ পু্রুষের ওপর স্বয়মাতৃম্ণ অর্থাৎ ভেতরে ছিদ্র আছে এমন ইট দিয়ে চাপা দিতে হবে । 


অর্থাৎ এখান থেক পরিষ্কার বুঝছি এটি মূলত বেদী নির্মাণের অংশ। যেখানে সোনার রুক্মরূপী যজমানের সূক্ষ্ম শরীরে প্রাণ, অন্ন প্রভৃতি প্রতীকিভাবে যোজনা করা হচ্ছে। যদি এই পুরুষ ঈশ্বর হত, আর মূর্তিপূজা প্রেক্ষিত হত, তাহলে ঈশ্বরকে এভাবে মাটিচাপা দেয়া হত ?


(৪) তদাহুঃ । কথমেষ পুরুষঃ স্বয়মাতৃণ্ণায়ানভিনিহিতো ভবতীত্যন্নং বৈ স্বয়মাতৃণ্ণা প্রাণঃ স্বয়মাতৃণ্ণানভিঽনিহিতো বৈ পুরুষোঽন্নেন চ প্রাণেন চ 

শত০ ব্রা০ ৭.৪.২.৯ 

স্বয়মাস্তৃণ ইট অন্ন আর প্রাণের প্রতীক। অন্ন আর প্রাণ পুরুষকে ধারণ করে, এদের দ্বারা পুরুষ কখনো দেবে যায় না বা বিনষ্ট হয় না। 

 

এখানেও স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে এই পুরুষ জীবাত্মা। প্রাণ ও অন্ন দেহে জীবাত্মার পোষণের জন্যই দরকার। অন্ন বা প্রাণের অনুপস্থিতিতে দুর্বল হয় জীবাত্মাই। প্রাণ ও অন্ন গ্রহণের সাথে পরমাত্মার দেবে যাওয়ার কোনো সম্বন্ধই নেই। 

 


 


(৫) অথ দূর্বেষ্টকামুপদধাতি । পশবো বৈ দূর্বেষ্টকা পশূনেবৈতদুপদধাতি তদ্যৈরদোঽগ্নিরনন্তর্হিতৈঃ পশুভিরুপৈত্ত এতে তানেবৈতদুপদধাতি তামনন্তর্হিতাং স্বয়মাতৃণ্ণায়া উপদধাতীয়ং বৈ স্বয়মাতৃণ্ণানন্তর্হিতাস্তদস্যৈ পশূন্দধাত্যুত্তরামুত্তরাংস্তদস্যৈ পশূন্দধাতি 

  শত০ ব্রা০ ৭.৪.২.১০

এই কণ্ডিকায় দূর্বা ইটরূপী পশুকে স্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে। 

 

 


 

এখান থেকেও প্রমাণিত যে, পুরুষ হলো মানব। পুরুষ ঈশ্বর হলে ঈশ্বরের ওপর পশুরূপী ইট স্থাপন করার কোনো কারণ ছিল না। যদি এই ইট বা রুক্ম মূর্তিকে পরমাত্মাজ্ঞানে পূজা করাই উদ্দেশ্য হবে, তবে এর ওপর পশুর দ্যোতক এমন বস্তু কেন স্থাপন করা হবে?

 

 


তাহলে আমরা শতপথ ব্রাহ্মণের পুরো কণ্ডিকা থেকে অগ্নিচয়নে ব্যবহৃত রুক্মবর্ণ পুরুষের বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে ও শতপথ ব্রাহ্মণের ঐ অংশের তথা অগ্নিচয়নের বাস্তবিক প্রয়োগ রাজসূয় বা রাজ্যাভিষেক যজ্ঞ অন্যান্য কল্প বা ব্রাহ্মণ সমমর্যাদাসম্পন্ন সংহিতাদি থেকে দেখিয়েছি যে রাজসূয়তেও প্রকৃতপক্ষে রুক্মবর্ণ পুরুষ জীবাত্মা বা যজমানের পরক। কাজেই এখানে পরমাত্মার মূর্তি নির্মাণ করে পূজা করা দেখা অবোধের আস্ফালন ব্যতীত আর কিছুই না। কোনো কণ্ডিকা বুঝতে হলে মাঝখান থেকে ইচ্ছামত তিনটা শ্লোক নিয়ে কোট করে দিলেই হয় না। আমরা এতটাও বোকা না যে এতে বিভ্রান্ত হব। 


আর এই অসংস্কৃতজ্ঞ ম্লেচ্ছ বর্বরেরা এতটাই অশিক্ষিত যে একটা কণ্ডিকার রেফারেন্স দিয়েছে সেটাও পুরোটা পড়ে দেখে নি। এদের জ্ঞান এতটাই ন্যূন যে নিজেরা কী দিয়েছে সেটা নিজেরাও ভালো করে পড়ে দেখে নি আগেপিছে যে কী আছে। 

 

অথচ এত বড় প্রমাণসমৃদ্ধ কাউন্টার দেখে কী না বলবে " গরু রচনা"। যাদের আদর্শ ঠিক নেই, যাদের কোনো দর্শন নেই, যেসব খিচুড়িভূক, স্ববিরোধীদের একতার মূল কারণ আর্যসমাজ বা অগ্নিবীরের অন্ধ বিরোধিতা করা, তাদের দেখলে আমাদের হাসি লাগে। এত হাজার বছরের পরম্পরাতেও তারা কী না বিষয় ফিক্সড করতে পারছে না যে আর্যসমাজের বিরোধিতা করতে কখন কার মত গ্রহণ করবে, আর কখন কাকে ছাড়বে। এদের লেজেগোবরে অবস্থা দেখলেই মনে হয় বৈদিকেরা সত্যের পথে, ন্যায়ের পথেই রয়েছে।


এরা হল অনেকটা টোকাইয়ের মত। টোকাই যেমন আবর্জনা কুড়িয়ে কুড়িয়ে নিজের জীবিকা সংস্থান করে, এরাও এর থেকে, ওর থেকে কপি করে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। এসব শাস্ত্রীয় টোকাইদের থেকে সাবধানতা অবলম্বনই শ্রেয়।

 

অলমিতি

 


  1. The Tin Tin - Titanium Hip
    The Tin Tin was a pipe carved titanium hair straightener from the Tain. It is a type of pipe ford ecosport titanium crafted in China by The Tin tin was titanium drill bits constructed titanium hammer using ceramic blocks and ford titanium ecosport TIN-TI-TIN-TIN-TIN-TIN-TIN-TIN-TIN-TIN.

    ReplyDelete