https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঋগ্বেদে সায়ণভাষ্যে ' কৃষ্ণ' নামক অসুরের ইতিহাস খণ্ডন

Tuesday, December 28, 2021


উপনয়নহীন অসংস্কৃতজ পরচর্চায় ব্যস্ত , সুবিধাবাদী , কপি নামক বিষয়কে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের ছলে চৌর্যবৃত্তি অবলম্বনকারী বিকৃত মস্তিষ্ক প্রসূত কুসংস্কারবাদী , স্বার্থান্বেষী জন্মভিত্তিক বর্ণবাদী মান্যকারী বিশিষ্ট পদবীধারী লোফাররা লম্ফঝম্ফ করে অবোঝ মূর্খের ন্যায় আস্ফালন শুরু করেছে । পরচর্চাই যাদের সারাদিন গ্রুপ ও নিজস্ব পরিমণ্ডলে প্রধান উপজীব্য তাঁরা নাকি বলে সায়ণ ভাষ্যে ভুল নেই গো হত্যা নেই , অপদার্থ মূর্খ স্বাধ্যায়বিহীন লোফারদের কি আর বলার দুইদিন আগে যাঁদের খোজ পাওয়া যেত না তারা কিনা পণ্ডিত্য দেখাচ্ছে (?) । 

তারা উপনীত কি ? বিশিষ্ট পদবীধারী স্বঘোষিত মায়াবাদী লোফার [ যাদের কিনা ব্রহ্মসূত্রের শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী অধিকার তো দূরে থাক , কানে সীসা ঢালা উচিৎ তারা কিনা জ্ঞান দিতে আসে ] এবং নিজেদের তথাকথিত পরম্পরা নিজেরাই বিচ্যুত করে । তাদের নিজেদের পরম্পরাবাদী ভাষ্য আছে (?) অথচ এতোটাই অপদার্থ যে তার বঙ্গানুবাদ বের করতে অক্ষম । কখনো শ্রীরাম শর্মা বা কখনো অক্ষয়ের অনুবাদ ভরসা । আবার বলে সায়ণের ভাষ্যে নাকি ভুল নেই । অর্থাৎ এ অব্দি সায়ণের সব অনুবাদক ভুল ছিলেন আর মিশনের অন্নভোজী এক তথাকথিত অধ্যাপক ব্যতীত মিশনের বাকি সবাই মূর্খ ও সায়ণ ভাষ্য বোঝে না । গর্তজীবী জীবদের আর কি বলার । আর এই একই বুলি আওড়ায়াচ্ছে স্ব-গু-ষিত লোফারা ? ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গজিয়ে উঠেছে । 


বেদকে ভাষার জননী বলা হয় । পুত্র হতে যেমন পিতার জন্ম হয়না , পিতা হতেই পুত্রের জন্ম হয় , ঠিক তেমনি বেদ থেকেই ব্যক্তির নাম এসেছে , কোন ব্যক্তির নাম বেদে উল্লেখিত হয়নি । 

ঠিক এই কথাটাই পূর্ব মীমাংসা ১.১.৩১ এ বলা হয়েছে । এই সূত্রের শাবরভাষ্যে বলা হয়েছে-

বেদে ববর , প্রাবাহণি আদি নাম মনুষ্যবাচক প্রতীত হলেও তা মূলতঃ বায়ু নির্দেশক কেননা ' ববরেতি শব্দ কুর্বন্ বায়ুরভিধীয়তে ' - অর্থাৎ বায়ুর নাম ববর । অর্থাৎ বেদে যেসব নাম দেখলে মনে হয় এগুলো কোন মানুষের নাম তা আসলে কোন মানুষের নাম নয় ।
 

বেদ মন্ত্রে ইতিহাস নেই এই নিয়ে পৌরাণিক পরম্পরার ভাষ্যকার সায়ণাচার্য পূর্ব মীমাংসার সূত্রটি ব্যবহার করে তার ঋগ্বেদ ভাষ্যের ভূমিকাতে বলেছেন - 

"জৈমিনি সূত্র বা পূর্ব মীমাংসার ১.১.৩১ ' পরন্তু শ্রুতিসামান্যভাবম্' 
 
অর্থাৎ শ্রুতিতে যেকল নামের উল্লেখ রয়েছে তা ঐতিহাসিক বা ব্যক্তিবাচক নয় বরং ত শব্দানুকৃতি তথা অন্যাদি অর্থ বাচক ।"









যদিও পরবর্তীকালে তার নিজের বলা এই কথা নিজেই ভঙ্গ করে বেদভাষ্যের শুরুতেই ঋগ্বেদে ইতিহাস , মনুষ্যের নাম ইত্যাদি দেখিয়ে এক সুবিশাল ভুল অনুবাদের বেদাঙ্গ বহির্ভূত রচনা করেছিলেন সায়ণাচার্য । এভাবে নিত্য বেদে তিনি অনিত্য ইতিহাস ভাষ্য করে বেদের নিত্যতার হানি ঘটিয়েছেন । 





পরম্পরার বিভিন্ন অন্ধভক্তির মোহে বেদে নিজের পছন্দের বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দেখতে গিয়ে বা বিভিন্ন পৌরাণিক কল্পকাহিনীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সায়ণাচার্যের মত বেদ ভাষ্যকাররা সনাতন সমাজের মহাসর্বনাশ ঘটিয়েছেন । তার ই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে আজকের পর্ব শুরু করবো ।

ইউরোপীয়রা এবং এদেশীয় বামপন্থীদের কল্যাণে একটি মারাত্মক মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে সনাতন ধর্ম একটি বহিরাগত ধর্ম । আর্যরা ইরান থেকে এদেশে আক্রমণ করে এদেশের আদিবাসীদের উপর বিজয় লাভ করে বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে । আর এই মারাত্মক মিথ্যা কথাটি এখনো পাঠ্যবইয়ে অনেকাংশে রয়ে গেছে । যদিও বর্তমানে বিশেষজ্ঞগণ এই বহিরাগত আর্য আক্রমণ তত্ত্ব থেকে সরে এসেছেন । কিন্তু এই তত্ত্বটি উদ্ভাবনের পিছনে অন্যতম মূল অবদান ছিল সায়ণাচার্যের ভুল বেদ ভাষ্যের ।

ম্যাক্স মুলার নামক জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ প্রথম সায়ণাচার্যের বেদ অনুবাদ অনুসরণ করে এই তত্ত্বের আবিস্কার করেন যে আর্যরা বহিরাগত আক্রমণকারী আর পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পরে । সায়ণাচার্যের করা যে মন্ত্রগুলোর অনুবাদের ফলে এই ইতিহাস কুখ্যাত অপকর্মটি ঘটে তার মধ্যে একটি উপস্থাপন করছি । সেটি হলে পবিত্র ঋগ্বেদের ১.১০১.১ নং মন্ত্র এবং সামবেদের ৩৮০ নং মন্ত্র । মন্ত্রটি হলো-

প্র মন্দিনে পিতুমদৰ্চতা বচো য়ঃ কৃষ্ণগর্ভা নিরহন্নৃজিশ্বনা।
অবস্যবো বৃষণং বজ্রদক্ষিণং মরুত্বন্তং সখ্যায় হুবেমহি ॥১১॥ 

[ঋগ্বেদ ১.১০১.১ , সামবেদ ৩৮০]


সায়ণ ভাষ্য - 

হে ঋত্বিজঃ "মন্দিনে স্তুতিমতে স্তোতব্যায়েন্দ্রায় “পিতুমৎ হবির্লক্ষণেনান্নেনোপেতং "বচঃ স্তুতিলক্ষণং বচনং “প্র “অর্চত প্রকর্ষেণোচ্চারয়ত । "যঃ ইন্দ্রঃ “ঋজিশ্বনা এতৎসংজ্ঞকেন রাজ্ঞা সখ্যা সহিতঃ সন্ "কৃষ্ণগর্ভাঃ । কৃষ্ণো নাম কশ্চিদসুরঃ । তেন নিষিক্তগর্ভাস্তদীয়াঃ ভার্যাঃ "নিরহন্ অবধীৎ । কৃষ্ণমসুরং হত্বা পুত্রাণাম্ অপি অনুৎপত্ত্যর্থং গর্ভিণীস্তস্য ভার্যাঃ অপ্যবধীদিত্যর্থঃ । "অবস্যবঃ রক্ষণেচ্ছবো বয়ং “বৃষণং কামানাং বর্ষিতারং "বজ্রদক্ষিণং বজ্রয়ুক্তেন দক্ষিণহস্তেনোপেতং তং "মরুত্বন্তম্ ইন্দ্রং "সখ্যায় সখ্যুঃ কর্মণে "হবামহে আহ্বয়ামহে ॥ মন্দিনে । মদি স্তুতিমোদমদস্বপ্নকান্তিগতিষু' । ঔণাদিকঃ ইনিপ্রত্যযঃ । তদুক্তং যাস্কেন-’ মন্দী মন্দতেঃ স্তুতিকর্মণঃ ' (নিরু. ৪. ২৪ ) ইতি । পিতুমৎ । ‘ হ্রস্বনুড্ভ্যাং মতুপ্ ' ইতি মতুপ উদাত্তত্বম্ । কৃষ্ণগর্ভাঃ কৃষ্ণেন নিষিক্তাঃ গর্ভাঃ যাসু তাস্তথোক্তাঃ। ‘ পরাদিশ্ছন্দসি বহুলম্ ' ইতি পূর্বপদান্তোদাত্তত্বম্ । অবস্যবঃ । অবেরৌণাদিকো ভাবেঽসুন্। অবঃ ইচ্ছতি অবস্যতি । সুপ আত্মনঃ ক্যচ্ ' । ‘ক্যাচ্ছন্দসি ' ইতি উপ্রত্যযঃ । বৃষণম্ । বা ষপূর্বস্য নিগমে ' ইতি বিকল্পনাদুপধাদীর্ঘাভাবঃ । সখ্যায় । সখ্যুঃ কর্ম সখ্যম্ ।' সখ্যুর্যঃ' ইতি যপ্রত্যযঃ । হবামহে । হ্বেঞো লটি ‘ বহুলং ছন্দসি ' ইতি সংপ্রসারণম্ ॥


এই মন্ত্রের অনুবাদে সায়ণাচার্য ও ভরতস্বামী এক অদ্ভুত গল্প ফেঁদে বসেন । তারা লিখেন  

"কৃষ্ণ নামে এক অসুর ছিলো , সেই কৃষ্ণ দ্বারা গর্ভবতী হওয়া তার ভার্যাকে ইন্দ্র গর্ভ নষ্ট করার জন্য মেরে ফেলেছিলো ৷ ঋজিশ্বা নামক রাজর্ষি কৃষ্ণাসুরের শত্রু ছিলো , তার ভালোর জন্যই ইন্দ্র কৃষ্ণাসুরকেও বধ করলেন আর তার পুত্রও উৎপন্ন না হয় সেজন্য তার গর্ভবতী ভার্যাদেরও বধ করলেন ৷"


এখন এই ভুল অনুবাদের সূত্র ধরে ম্যাক্স মুলাররা এটা প্রচলিত করে দেন যে শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন একজন অনার্য , কালো গায়ের রং যার এরকম রাজা। আর ইন্দ্র ছিল বহিরাগত গৌরবর্ণের আর্য । বহিরাগত আর্য ইন্দ্র ভারতের আদিবাসী অনার্য রাজা কৃষ্ণকে হত্যা করেন । আর সায়ণাচার্যদের এরকম অসংখ্য ভুল মন্ত্রানুবাদ আর্য আক্রমণ তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে দেয় ।

অথচ এই মন্ত্রে এমন কিছুই নেই! এগুলো তাদের পৌরাণিক রূপকথার কল্পনার বিলাস মাত্র , এতে বাস্তবতা কিছু নেই ৷ সত্যব্রত সামশ্রমীর মতো প্রখ্যাত পৌরাণিক পরম্পরার পণ্ডিতও সায়ণের ব্যাখ্যাকে অরুচিকর আখ্যা দিয়ে টিপ্পনী দিয়েছিলেন-

“সেখানে বিবরণকারের ব্যাখ্যা অধিক উৎকৃষ্ট , যিনি আধিদৈবিক অর্থ করতে গিয়ে লিখেছেন ‘কৃষ্ণগর্ভাঃ’ শব্দের তাৎপর্য হলো কালো মেঘে গর্ভরূপে থাকা জল , যেগুলোকে ইন্দ্র সেখান থেকে বের করে বর্ষণ করেন । ‘নিরহন্’ এ হন্ ধাতু অন্তর্ণীতণ্যর্থ, যার অর্থ বের করা বা নিচে ফেলে দেওয়া ।" 


বাস্তবিকই তাই । নিরুক্ত , নিঘন্টু অনুযায়ী এই মন্ত্রের বিশুদ্ধ অনুবাদ আমরা পাই -


প্রথম পরমাত্মা পক্ষে 

পদার্থঃ হে মানবজাতি! তোমরা (মন্দিনে) আনন্দযুক্ত তথা আনন্দপ্রদাতা সেই জগদীশ্বরের জন্য (পিতৃমৎ) শ্রদ্ধারূপ রস যুক্ত ['তব ত্যে পিতো রসা রজাৎস্যনু বিষ্ঠিতাঃ। ঋক ১।১৮৭।৪' ইতি শ্ৰুতেঃ, তত্রৈব ‘য়ৎ তে সোম। ঋক০ ১।১৮৭।৯′ ইত্যুভেন্ট পিতুর্বৈ রসময়ঃ সোমঃ; 'পিতুঃ প্যায়তের্বা' নিঘo ৯। ২৪] (বচঃ) স্তুতিবচনকে (প্র অর্চত) প্রেরিত করো, (য়ঃ) যে জগদীশ্বর (ঋজিশ্বনা) সোজাসুজি চলমান কিরণের সাথে যুক্ত সূর্যের দ্বারা (কৃষ্ণগর্ভাঃ) অন্ধকারপূর্ণ রাত্রিকে (নিরহন্) নষ্ট করেন । এসো, (অবস্যবঃ) রক্ষা আকাঙ্ক্ষী তোমরা আমরা ['ক্যাচ্ছন্দসি' অষ্টা০ ৩।২।১৭০] (বৃষণম্) মেঘ হতে বৃষ্টির বর্ষণকারী অথবা সুখের বর্ষণকারী, (বজ্রদক্ষিণম) ন্যায়দণ্ড যাঁর প্রতাপকে বৃদ্ধি করে, [দক্ষতিঃ সমৰ্দ্ধয়তিকর্মা' নিরু০ ১৬] তেমন (মরুত্বস্তম্) প্রশস্ত প্রাণযুক্ত জগদীশ্বরের (সখ্যায়) মিত্রতার জন্য (হুবেমহি) আহ্বান করি ['হুবেম হ্বয়েম' নিরু০ ১১।৩১] ॥

 
 
দ্বিতীয় গুরু শিষ্যের পক্ষে 

পদার্থঃ হে সহপাঠীগণ! তোমরা (মন্দিনে) আনন্দদাতা তথা বিদ্যার ঐশ্বর্যযুক্ত আচার্যের জন্য (পিতুমৎ) উৎকৃষ্ট অন্নের সহিত [পিতুরিত্যন্ননাম , পাতেবা পিবতেবা প্যায়তের্বা । নিরু০ ৯।২৪ । ] (বচঃ) আদরপূর্ণ প্রিয়বচন (প্ৰ অৰ্চত) উচ্চারণ কর, (য়ঃ) যে আচার্য (ঋজিশ্বনা) সরল শিক্ষাপদ্ধতি দ্বারা (কৃষ্ণগৰ্ভাঃ) অন্ধকার অজ্ঞান যার গর্ভে আছে , এমন অবিদ্যা রূপ রাত্রিকে (নিরহন্) নষ্ট করেন । (অবস্যবঃ) বিদ্যার আকাঙ্ক্ষাকারী তোমরা আমরা (বৃষণম্) সদগুণের বর্ষণকারী , (বজ্রদক্ষিণ) কুপথ দূরকারী বিদ্যা আর [বজ্রঃ বর্জয়তীতি সতঃ। নিরু০ ৩।১১।] (মরুবন্তম্) বিদ্যাযজ্ঞের ঋত্বিক প্রশস্ত বিদ্বান অধ্যাপক যার কাছে আছেন , [মরুত ইতি ঋত্বিনাম । নিঘ০ ৩।১৮। ] তেমন আচার্যকে (সখ্যায়) মিত্রতার জন্য (হুবেমহি) স্বীকার করি ॥





ভাবার্থঃ পরমেশ্বর আমাদের প্রতি মিত্রভাব পোষণ করেন । তিনি ছাড়া সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে রাত্রির অন্ধকার নিবারণ করতে আর বর্ষণ করতে আমাদের মত মানবের কি সামর্থ্য হতে পারে ? তিনি আমাদের উপকারের জন্য এই ধরনের নানাবিধ কর্ম করলেও আমাদের থেকে কোনো শুল্ক নেন নি । সেই আচার্যেরও আমাদের প্রতি মহান উপকার আছে , যিনি সমস্ত অবিদ্যা রাত্রিকে দূর করে জ্ঞানের বর্ষা দিয়ে আমাদের অন্তঃকরণের ভূমিকে সরস করেন । এজন্য পরমেশ্বর আর আচার্যকে আমাদের সর্বাত্মক সম্মান ও সৎকার করা উচিত ।


অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণ রাত্রিকে দূর করে ভোরের সূর্য কিরণের প্রতিষ্ঠা , কালো মেঘকে ভেদ করে বর্ষণকে কী হাস্যকরভাবেই না কৃষ্ণ নামক অসুর , ইন্দ্র নামক আর্যের হাতে বধ হবার কাল্পনিক পৌরাণিক মনগড়া কাহিনী দাঁড় করানো হয়েছিল!

একইভাবে ঋগ্বেদ ৮.৯৬.১৩ সামবেদ ৩২৩ নং মন্ত্রের ব্যখ্যায় এরকম মনগড়া গল্প হাজির করে শ্রীকৃষ্ণকে অনার্য রাজা বানিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন সায়ণাচার্য । 


অব দ্রপ্সো অংশুমতীমতিষ্ঠদীয়ানঃ কৃষ্ণো দশভিঃসহস্ৰৈঃ।
আবত্তমিন্দ্ৰঃ শচ্যা ধমন্তমপ স্নীহিতিং নৃমণা অধদ্রাঃ॥১॥



এই মন্ত্রের ওপর সায়ণাচার্য এইরকম ঐতিহাসিক অর্থ লিখেছেন - 

"প্রাচীন কোন এক সময়ে কৃষ্ণ নামক অসুর দশ হাজার অসুরের সাথে অংশুমতী নামক নদীর পাড়ে অবস্থান করছিল । সেখানে জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত কৃষ্ণাসুরের নিকট ইন্দ্র বৃহস্পতির সঙ্গে পৌঁছেছিল । সেখানে পৌঁছে কৃষ্ণাসুর এবং তার অনুচরদের বৃহস্পতির সহায়তায় হত্যা করা হয় ।" 

অথচ চার বেদের ভুলেভরা ইংরেজি ভাষায় টিপ্পণী সহ অনুবাদকারী গ্রিফিথ মহাশয় পর্যন্ত মন্ত্রের টিপ্পণীতে লিখেছেন যে এই মন্ত্রে-

The Black Drop: the darkened Moon. Ansumatic: A mystical river of the air into which the Moon dips to recover its vanished light. Ten thousand: probably, demons of darkness; the numbers are without a substantive-Griffith.

"কৃষ্ণ দ্রপ্স' হচ্ছে অন্ধকারাবৃত চন্দ্র , এবং অংশুমতী অন্তরিক্ষের কোন রহস্যময়ী নদী , দশ হাজার অসুর অন্ধকাররূপ দানব , যা বধের মাধ্যমে চন্দ্র অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়েছে ।" 



গ্রিফিথের এই ব্যাখ্যা আধিদৈবিক ব্যাখ্যার এক সাংকেতিক দিক প্রদান করেছে। অর্থাৎ একজন ইংরেজ পর্যন্ত মন্ত্রটির অর্থ ও তাৎপর্য অনেকটা ধরতে পেরেছেন যা ভারতীয় হয়েও সায়ণাচার্য পারেন নি বরং উলটো বিপদ ঘটিয়ে দিয়ে গেছেন ।

সায়ণ ভাষ্য - 

অত্রেতিহাসমাচক্ষতে কিল । কৃষ্ণো নামাসুরো দশসহস্রসংখ্যৈরসুরৈঃ পরিবৃতঃ সন্নংশুমতীনামধেয়ায়া নদ্যাস্তীরেঽতিষ্ঠৎ । তত্র তং কৃষ্ণমুদকমধ্যে স্থিতমিন্দ্রো বৃহস্পতিনা সহাগচ্ছৎ । আগত্য তং কৃষ্ণং তস্যানুচরাংশ্চ বৃহস্পতিসহায়ো জঘানেতি । কেচিদন্যথা বদন্তি । তেষাং কথা হেতুঃ । দ্রপ্স ইত্যুদককণোঽভিধীয়তে স তু সোমো ‘দ্রপ্সশ্চস্কন্দ ' (ঋ. সং. ১০. ১৭. ১১ ) ইত্যাদিষু সোমপরত্বেনোক্তত্বাৎ । এতৎপদমাশ্রিত্যাহুঃ- ‘ অপক্রয় তু দেবেভ্যঃ সোমো বৃত্রভয়ার্দিতঃ ॥ নদীমংশুমতীং নামাভ্যতিষ্ঠৎ কুরূন প্রতি । তং বৃহস্পতিনৈকেন সোঽভ্যযাদ্বৃত্রহা সহ ॥ যোৎস্যমানঃ সুসংহৃষ্টৈর্মরুদ্ভির্বিবিধায়ুধৈঃ। দৃষ্ট্বা তানায়তঃ সোমঃ স্ববলেন ব্যবস্থিতঃ ॥ মন্বানো বৃত্রমায়ান্তং জিঘাংসুমরিসেনয়া । ব্যবস্থিতং ধনুষ্মন্তং তমুবাচ বৃহস্পতিঃ ॥ মরুৎপতিরয়ং সোম প্রেহি দেবান্ পুনর্বিভো । সোঽব্রবীন্নেতি তং শক্রঃ স্বর্গ এব বলাদ্বলী । ইয়ায় দেবানাদায় তং পপুর্বিধিবৎসুরাঃ ॥ জঘ্নুঃ পীত্বা চ দৈত্যানাং সমরে নবতীর্নব । তদব দ্রপ্স ইত্যস্মিন্ তৃচে সর্বং নিগদ্যতে' (বৃহদ্দে. ৬. ১০৯-১১৫ ) । এতদনার্ষত্বেনানাদরণীয়ং ভবতি । এষোঽর্থঃ ক্রমেণর্ক্ষু বক্ষ্যতে । তথা চাস্যা ঋচোsযমর্থঃ । “দ্রপ্সঃ । দ্রুতং সরতি গচ্ছতীতি দ্রপ্সঃ । পৃষোদরাদিঃ । দ্রুতং গচ্ছন্ "দশভিঃ “সহসৈঃ দশসহস্রসংখ্যৈরসুরৈঃ “ইয়ানঃ “কৃষ্ণঃ এতন্নামকোঽসুরঃ "অংশুমতীং নাম নদীম্ “অব “অতিষ্ঠৎ অবতিষ্ঠতে । ততঃ “শচ্যা কর্মণা প্রজ্ঞানেন বা “ধমন্তম্ উদকস্যান্তরুচ্ছ্বসন্তং যদ্বা জগদ্ভীতিকরং শব্দং কুর্বন্তং “তং কৃষ্ণমসুরম্ “ইন্দ্রঃ মরুদ্ভিঃ সহ “আবৎ প্রাপ্নোৎ । পশ্চাত্তং কৃষ্ণমসুরং তস্যানুচরাংশ্চ হতবানিতি বদতি । “নৃমণাঃ নৃষু মনো যস্য সঃ । যদ্বা । কর্মনেতৃষ্বৃত্বিক্ষ্বেকবিধং মনো যস্য স তথোক্তঃ । তাদৃশঃ সন্ “স্নেহিতীঃ । স্নেহতির্বধকর্মসু পঠিতঃ । সর্বস্য হিংসিত্রীস্তস্য সেনাঃ “অপ “অধত্ত । অপধানং হননম্ । অবধীদিত্যর্থঃ । ‘ অপ স্নীহিতিং নৃমণা অধদ্রাঃ' (সা. সং. ১. ১.৪.৪.১) ইতি ছন্দোগাঃ পঠন্তি । তস্যানুচরান্ হত্বা তং দ্রুতং গচ্ছন্তমসুরমপাধত্ত । হতবান্ ॥


আসলে মন্ত্রটিতে কি আছে ?


অব দ্রপ্সো অংশুমতীমতিষ্ঠদীয়ানঃ কৃষ্ণো দশভিঃসহস্ৰৈঃ।
আবত্তমিন্দ্ৰঃ শচ্যা ধমন্তমপ স্নীহিতিং নৃমণা অধদ্রাঃ॥

পদার্থঃ 
 
 (দ্রপ্সঃ) জলবিন্দুবৎ অণুর ন্যায় জীবাত্মা (অংশুমতীম্) চক্ষু আদি ইন্দ্ৰিয়, প্রাণ এবং মন দ্বারা যুক্ত দেহপুরকে [প্রাণ এবাংশুঃ, চক্ষুরেবাংশুঃ। মনো হ বাংশুঃ। শ০ ১১।৫।৯।২] (অব-অতিষ্ঠৎ) প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ সঞ্চিত কর্মের ফল ভোগ করার জন্য এবং নতুন কর্ম করার জন্য পরমাত্মা দ্বারা প্রেরিত হয়ে দেহপুরীতে আগমন করে । (কৃষ্ণঃ) কৃষ্ণ বর্ণ সূচিত তমোগুণ ['তমো বৈ কৃষ্ণং,মৃত্যুস্তমো', এতদ্বৈ পাপ্মনো রূপং য়ৎ কৃষ্ণং,কৃষ্ণং ইব পাপ্মা,কৃষ্ণো ভবতি, পাপ্মানং এবাপহতে মৈ০ স০ ২/৫/৬; কৃষ্ণ ইব পাপ্মা য়ৎ কৃষ্ণঃ কাঠক ০ ১৩।২] (দশভিঃ সহস্রৈঃ) দশ হাজার যোদ্ধার সাথে অর্থাৎ নিজের বিভিন্ন প্রকার গণের সহিত বিবিধ প্রকার কাম , ক্রোধ , লোভ , মোহ , মদ , মাৎসর্য প্রভৃতি রিপুর সাথে (ইয়ানঃ) সেই আত্মাকে আক্রমণ করে থাকে ['লিটঃ কানজ্‌ বা’ অষ্টা০ ৩।২।১০৬ ] । তখন (ধমন্তম্) বিবিধ স্থানে গমনশীল বা হিংসাকারী [ধমতিঃ গতিকর্মা বধকর্মা চ। নিঘo ২১৪, ২।১৯৷ ‘পাঘ্ৰাধ্মা০' অষ্টা০ ৭।৩।৭৮ ] (তম্) সৈন্যসহিত সেই তমোগুণকে (ইন্দ্ৰঃ) জীবাত্মার সহায়ক পরমৈশ্বর্যবান পরমাত্মা (শচ্যা) উৎকৃষ্ট জ্ঞান বা কর্মের সহিত [শচীতি প্রজ্ঞানাম কৰ্মনাম চ। নিঘ ৩।৯, ২।১] (আবৎ ) কাবু করে ফেলেন । তারপর (নৃমণাঃ) সজ্জন ব্যক্তির প্রতি ধ্যান ও প্রেম প্রদানকারী সেই পরমাত্মা (স্নীহিতিম্) তমোগুণের সেই হিংসক সেনাদের [স্নেহয়তিঃ বধকর্মা। নিঘ০ ২।১৯] (অপ) দূর করে দিয়ে আত্মাতে (রাঃ) সদ্গুণরূপী সম্পত্তির (অধৎ) আধার করে দেন [ ‘ছন্দসি লুঙ্লঙ্লিটঃ’ অষ্টা০ নিঘ০ ৩।৪।৬] । এর অভিপ্রায় এই যে, যখন যখন দেহধারী জীবাত্মার উপর তমোগুণরূপ কৃষ্ণাসুর আক্রমণ করে , তখন তখন ঐশ্বর্যশালী পরমাত্মা তাঁকে উদ্ধার করে দেন ॥১॥

সরলার্থঃ 
 
 জলবিন্দুবৎ অণুর মতো জীবাত্মা চক্ষু আদি ইন্দ্রিয় , প্রাণ এবং মন দ্বারা যুক্ত দেহপুরকে প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ সঞ্চিত কর্মের ফল ভোগ করার জন্য এবং নতুন কর্ম করার জন্য পরমাত্মা দ্বারা প্রেরিত হয়ে দেহপুরীতে আগমন করে । অন্ধকাররূপ তমোগুণ দশ হাজার যোদ্ধার সাথে অর্থাৎ নিজের বিভিন্ন প্রকার গণের সাথে বিবিধ প্রকার কাম , ক্রোধ , লোভ , মোহ , মদ , মাৎসর্য প্রভৃতি রিপুর সাথে সেই আত্মাকে আক্রমণ করে । তখন বিবিধ স্থানে গমনশীল বা হিংসাকারী সৈন্যসহ সেই তমোগুণকে জীবাত্মার সহায়ক পরমেশ্বর্যবান পরমাত্মা উৎকৃষ্ট জ্ঞান বা কর্মের সাথে কাবু করে ফেলেন । তারপর সজ্জন ব্যক্তির প্রতি ধান ও প্রেম প্রদানকারী সেই পরমাত্মা তমোগুণের সেই হিংসক সেনাদের দূর করে দিয়ে আত্মাতে সদ্গুণরূপী সম্পত্তির আধার করে দেন ।

ভাবার্থঃ দেহে অবস্থিত জীবাত্মাকে কাম , ক্রোধ প্রভৃতি দানব পীড়িত করতে চায় , জীবাত্মার উচিত পুরুষার্থ দ্বারা এবং পরমাত্মার সহায়তা দ্বারা তাদেরকে পরাজিত করা । তবেই সকল প্রকার আধ্যাত্মিক এবং ভৌতিক ঐশ্বর্য প্রাপ্ত করা যাবে ।

অভিপ্রায় এই যে , যখন যখন দেহধারী জীবাত্মার উপর তমোগুণরূপ কৃষ্ণাসুর আক্রমণ করে , তখন তখন ঐশ্বর্যশালী পরমাত্মা তাঁকে উদ্ধার করে দেন ।
কত সুন্দর একটি মন্ত্রে কী আজগুবি সব গল্প আরোপ করা হয়েছিল ভেবে দেখুন!


১. তমো বৈ কৃষ্ণং , মৃত্যুস্তমো
২. এতদ্বৈ পাপ্মনো রূপং যৎ কৃষ্ণং , কৃষ্ণ ইব হি পাপ্মা
৩. কৃষ্ণো ভবতি, পাপ্মানং এবাপহতে

মৈত্রেয়ানী সংহিতা ২.৫.৬

 কৃষ্ণ অর্থ যা যা আর্যসমাজের ভাষ্যকার করেছেন তার প্রমাণ -






কৃষ্ণ ইব পাপ্মা যৎ কৃষ্ণঃ 

কাঠক সংহিতা ১৩.২

এই অনুযায়ী ড. রামনাথ বেদালঙ্কার সামবেদের উক্ত মন্ত্রের এবং ঋগ্বেদ ৮.৯৬.১৩ এর অনুবাদে মহামহোপাধ্যায় আর্যমুনিজী ও পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালঙ্কার এই স্থলে কৃষ্ণ অর্থ পাপ , মলিন ও তমোগুণ করেছেন ।




আর এভাবেই বারে বারে নিজেদের মনগড়া কাহিনীর প্রভাবে আমরা সুযোগ দিয়েছি অন্যদেরকে আমাদের ধর্মতত্ত্বকে বিকৃত করে ফেলার । আমরাই এভাবে মনগড়া অনুবাদ দিয়ে বেদের ভাষ্যে গোমাংস , উদ্ভট কাল্পনিক কাহিনী , অশ্লীল বর্ণনা ঢুকিয়ে হরফ প্রকাশনী , অক্ষয় প্রকাশনী এসবের বাড়বাড়ন্ত ঘটিয়েছি । আর এর ই সুযোগ নিয়েছে বিধর্মী , নাস্তিক , বামপন্থীরা বারেবার । কেউ খুঁজে পাচ্ছে জামাত , সালাত , কেউ পাচ্ছে যীশু , কেউ কৃষ্ণকে খুঁজে পাচ্ছে অনার্য দেবতা হিসেবে , কেউ ইন্দ্রকে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে বধ করাচ্ছে । যার যা খুশি মনগড়া জিনিস বেদে পেয়েই যাচ্ছে । 


কুচক্রী স্ববিভ্রান্তিতে পরা স্বাধ্যায়হীন ভ্রান্তিকে সত্য প্রমাণের জন্য লোফাররা [ সযতনে এড়িয়ে গিয়ে নিজেদের অন্ধ বাহিনীদের নিকট বাহবা পাওয়ার ধান্ধায় থাকে ] এবং ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে এবং নানা প্রকার হাস্যকর যুক্তি দিয়ে থাকে । আবার যখন তাদেরই প্রিয় পরম্পরাবাদী ভাষ্যকারগণকে টেক্কা দিয়ে [ যারা কিনা নিজেরাই বেদের কদর্থ করেছেন ] পূর্বাপর বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বার্থে তাদের বাহিনীদের দেখায় তাদের ভাষ্য গো হত্যা নেই ভুল নেই হ্যান ত্যান । অতঃ প্রমাণিত যে তথাকথিত পরম্পরাবাদী ভাষ্যকারগণ কি পরিমাণ ত্রুটি পূর্ণ এবং কদর্থ করেছে তা খুব সহজেই অনুমেয় ।