সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।।
শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ
➢সেই পূর্ণস্বরুপের অনন্ত মস্তক, অনন্ত নয়ন,
অনন্ত চরণ; তিনি ভুবনকে সর্বতোভাবে
পরিব্যাপ্ত করিয়াও নাভির দশাঙ্গুল উর্ধ্বে
হৃদয়মধ্যে অবস্থিত আছেন। জগৎকে অতিক্রম
করিয়া অসীমস্বরুপে বিদ্যমান আছেন।
এই মন্ত্রটি উপস্থাপন করে অনেক কে দেখি
একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, কি বুঝে যে তারা
আনন্দে এই ঢেকুর তুলে তা আমার বোধগম্য
না। আসলে মন্ত্রটি তে কি বুঝানো হয়েছে?
আসুন তার সন্ধান করি.....
শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ এর এই মন্ত্রটির পূর্বের
কয়েকটি এবং পরের কয়েকটি মন্ত্র দেখলেই
এটা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যাবে আসলে
মন্ত্রটিতে কি বুঝানো হয়েছে।
বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বতোমুখো বিশ্বতোবাহুরুত
বিশ্বতস্পাৎ।
সং বাহুভ্যাং ধমতি সম্পতত্রৈ- র্দ্যাবাভূমী
জনয়ন্ দেব একঃ।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/৩
শব্দার্থঃ [যে] (বিশ্বতচক্ষুঃ) সব সংসারের দ্রষ্টা (উত্) এবং (বিশ্বতোমুখঃ) সর্ববক্তা অর্থাৎ সবার অন্তর্যামী রুপে উপদ্রেষ্টা [বা] (বিশ্বতোবাহুঃ) সর্বধারক বা সব প্রকার অনন্ত বল বা পরাক্রম যুক্ত (উত্) তথা(বিশ্বতস্পাত্) সর্বত্র পদবান অর্থাৎ,সর্বগত বা সর্বব্যাপক [তিনি] (একঃ) এক 'অসহায় অদ্বিতীয়' (দেবঃ)স্বপ্রকাশস্বরুপ পরমাত্মা (দ্যাবাভ্যাম্) সূর্যপৃথিব্যাদি লোককে (জনয়ন) উৎপন্ন করে (বাহুভ্যাম্) অনন্তরুপ বল বা পরাক্রমরুপ বাহু দ্বারা (পতত্রঃ) [সব জীব কে] সুখদুঃখরুপ বল দ্বারা (সংঘমতি) সম্যক [যথাযোগ্য] কম্পমান অর্থাৎ,জন্মমরণাদি কে প্রাপ্ত করায়। ।। ৩।।
সরলার্থঃ [যে] সব সংসারের দ্রষ্টা এবং সর্ববক্তা অর্থাৎ সবার অন্তর্যামী রুপে উপদ্রেষ্টা [বা] সর্বধারক বা সব প্রকার অনন্ত বল বা পরাক্রম যুক্ত তথা(বিশ্বতস্পাত্) সর্বত্র পদবান অর্থাৎ,সর্বগত বা সর্বব্যাপক [তিনি] (একঃ) এক 'অসহায় অদ্বিতীয়' (দেবঃ)স্বপ্রকাশস্বরুপ পরমাত্মা (দ্যাবাভ্যাম্) সূর্যপৃথিব্যাদি লোককে (জনয়ন) উৎপন্ন করে (বাহুভ্যাম্) অনন্তরুপ বল বা পরাক্রমরুপ বাহু দ্বারা (পতত্রঃ) [সব জীব কে] সুখদুঃখরুপ বল দ্বারা (সংঘমতি) সম্যক [যথাযোগ্য] কম্পমান অর্থাৎ,জন্মমরণাদি কে প্রাপ্ত করায়। ।। ৩।।
ততঃ পরং ব্রহ্মপরং বৃহন্তং যথানিকায়ং
সর্বভূতেষু গূঢ়ম্।
বিশ্বস্যৈকং পরিবেষ্টিতারম্ ঈশং তং
জ্ঞাত্বাহমৃতা ভবন্তি।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/৭
শব্দার্থঃ (ততঃ) সেই [ব্রহ্মান্ড] থেকে (পরম্) পরে অর্থ্যাৎ ব্রহ্মান্ডের অতিরিক্ত]ব্রহ্ম [যিনি] (পরম্) সর্বোৎকৃষ্ট [বা] (বৃহতম্) মহান (যথানিকায়ম্) [শরীরে] যথা স্থান (সর্বভূতেষু) সব [চর-অচর] ভূতের মধ্যে (গূঢ়ম্) নিগূঢ় ভাবে বর্তমান অন্তর্যামী (বিশ্বস্য) জগতের (একম্) এক [স্বামী] (পরিবেষ্টিতারম্) সব বিশ্বকে পরিবেষ্টনকারী [এবং] (ঈশাম্) স্বামী (তম্) সেই [ব্রহ্ম] কে (জ্ঞাত্বা) জেনে [ধার্মিক বিদ্বান যোগী লোক] (অমৃতাঃ) অমৃত [মুক্ত] (ভবন্তি) হয়ে যান।। ৭।।
সরলার্থঃ সেই [ব্রহ্মান্ড] থেকে পরে অর্থ্যাৎ ব্রহ্মান্ডের অতিরিক্ত]ব্রহ্ম [যিনি] সর্বোৎকৃষ্ট [বা] মহান [শরীরে] যথা স্থান সব [চর-অচর] ভূতের মধ্যে নিগূঢ় ভাবে বর্তমান অন্তর্যামী জগতের এক [স্বামী] সব বিশ্বকে পরিবেষ্টনকারী [এবং] স্বামী সেই [ব্রহ্ম] কে জেনে [ধার্মিক বিদ্বান যোগী লোক] অমৃত [মুক্ত] হয়ে যান।।
যস্মাৎ পরং নাপরমস্তি কিঞ্চিদ্
যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কশ্চিৎ।
বৃক্ষ ইব স্তবধো দিবি তিষ্ঠত্যেক- স্তেনেদং
পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/৯
শব্দার্থঃ (যস্মাত্) যাহা থেকে (পরম্) পরে [দূর] অথবা (অপরম্) পিছে (কিঞ্চিত্) কোন কিছুই (ন অস্তি) না হয় (যস্মাত্) যাহা থেকে (অণীয়ঃ) সূক্ষ্ম (কিঞ্চিত্) কোন কিছুই (নঃ) না (জ্যায়ঃ) বড় (অস্তি) হয় [যে] (দিবি) আকাশে (বৃক্ষ ইব) বৃক্ষের সমান (একঃ) একেলাই (স্তব্ধঃ) নিশ্চল (তিষ্ঠতি) স্থির বর্তমান (তেন) সেই (পুরুষেণ) পূর্ন পরমাত্মা দ্বারা (ইদম্) এই (সর্বম্) সম্পূর্ণ জগৎ(পূর্ণম্) পূর্ন [পরিব্যাপ্ত] অর্থ্যাৎ সবের মধ্যে তিনি পূর্নরূপে ব্যাপক হয়ে রয়েছেন ।। ৯।।
সরলার্থঃ যাহা থেকে পরে [দূর] অথবা পিছে কোন কিছুই না হয় যাহা থেকে সূক্ষ্ম কোন কিছুই না বড় হয় [যে] আকাশে বৃক্ষের সমান একেলাই নিশ্চল স্থির বর্তমান সেই পূর্ন পরমাত্মা দ্বারা এই সম্পূর্ণ জগৎ পূর্ন [পরিব্যাপ্ত] অর্থ্যাৎ সবের মধ্যে তিনি পূর্নরূপে ব্যাপক হয়ে রয়েছেন ।
.
সর্বাননশিরোগ্রীবঃ সর্বভূতগুহাশয়ঃ।
সর্বব্যাপী স ভগবাংস্তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১১
শব্দার্থঃ (সর্বাননশিরোগ্রীবঃ = সর্ব + আনন + শিরঃ + গ্রীবঃ) সর্বত্র মুখ,শির বা গ্রীবধারী [অর্থ্যাৎ সবার উপদেষ্টা,সর্বজ্ঞ, বা সর্বব্যাপক] অথবা যাহাতে সব প্রাণীর মুখ,শির বা গ্রীবা স্থিত [এবং] (সর্বভূতগূহাশয়ঃ) সব প্রাণীর হৃদয় গুহায় শরণ কারী [অর্থ্যাৎ অন্তর্যামী রুপে ব্যাপক] (সর্বব্যাপী) সর্বব্যাপক (সঃ) তিনি (ভগবান্)ভগবান [ঐশ্বর্যবান্] (তস্মাত্) এই কারণ [তিনি] (সর্বগতঃ) সব জায়গায় পৌছায় এবং (শিবঃ) কল্যানকারী [ঐহিক ও পারমার্থিক সুখের দানকারী]।। ১১।।
সরলার্থঃ সর্বত্র মুখ,শির বা গ্রীবধারী [অর্থ্যাৎ সবার উপদেষ্টা,সর্বজ্ঞ, বা সর্বব্যাপক] অথবা যাহাতে সব প্রাণীর মুখ,শির বা গ্রীবা স্থিত [এবং] সব প্রাণীর হৃদয় গুহায় শরণ কারী [অর্থ্যাৎ অন্তর্যামী রুপে ব্যাপক] সর্বব্যাপক তিনি ভগবান [ঐশ্বর্যবান্] এই কারণ [তিনি] সব জায়গায় পৌছায় এবং কল্যানকারী [ঐহিক ও পারমার্থিক সুখের দানকারী]।
অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ পুরুষোহন্তরাত্মা সদা জনানং
হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ।
হৃদা মন্বীশো মনসাহভিক্লপ্তো য
এতদ্বিদুরমৃতাস্তে ভবন্তি।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৩
শব্দার্থঃ (জনানাম্) মনুষ্যের (অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ) অঙ্গুষ্ঠমাত্র (হৃদয়ে) হৃদয়ে (অন্তরাত্মা) জীবাত্মার ভিতরে (সদা) সর্বদা (পুরুষঃ) পূর্ণব্রহ্ম (সন্নিবিষ্টঃ) স্থিত [বিদ্যমান] [তিনি] (হৃদা) হৃদয় (মনীষা), বুদ্ধি ও (মনসা) মন দ্বারা (অভিকলৃপ্তঃ) প্রাপ্ত [জানার যোগ্য] (যে) যিনি (এতত্) ইহা (বিদুঃ) জানেন (তে) তিনি (অমৃতাঃ) অমর [মুক্ত] (ভবন্তি) হয়ে যান ।।১৩।।
সরলার্থঃ মনুষ্যের অঙ্গুষ্ঠমাত্র হৃদয়ে জীবাত্মার ভিতরে সর্বদা পূর্ণব্রহ্ম স্থিত [বিদ্যমান] [তিনি] হৃদয়, বুদ্ধি ও মন দ্বারা প্রাপ্ত [জানার যোগ্য] যিনি ইহা জানেন তিনি অমর [মুক্ত] হয়ে যান ।
সহস্রশীর্ষা পুরুষঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রপাৎ।
স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাহত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৪
শব্দার্থঃ (সহস্রশীর্ষা) হাজার [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের শীর যাহার মধ্যে অথবা যিনি সর্বজ্ঞ (সহস্রাক্ষঃ) [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের চক্ষু যাহাতে অথবা যিনি সর্বদ্রষ্টা(সহস্রপাত্) হাজার [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের পাদ যাহাতে অথবা যিনি সর্বগত,সর্বব্যাপক (সঃ) তিনি (পুরুষঃ) পূর্ন ব্রহ্ম (সর্বতঃ) সব প্রকার (ভূমিয়) ভূগোল অর্থ্যাৎ সমস্ত প্রকৃতিরূপ জগৎকে (স্পৃত্বা) ব্যাপক হয়ে (দশাঙ্গুলম্) দশাঙ্গুল [অর্থ্যাৎ পাঁচ স্থুল বা পাঁচ সূক্ষ্ম ভূতবান জগৎ কে] (অত্যতিষ্ঠত্= অত্য+ অতিষ্ঠত্) উলঙ্ঘন করে স্থিত অর্থ্যাৎ এই সকল জগৎ এর এর ভিতর বাহিরেও পরিপূর্ন ব্যাপক হয়ে রয়েছেন ।।১৪।।
সরলার্থঃ হাজার [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের শীর যাহার মধ্যে অথবা যিনি সর্বজ্ঞ [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের চক্ষু যাহাতে অথবা যিনি সর্বদ্রষ্টা হাজার [অর্থ্যাৎ অসংখ্য] জীবের পাদ যাহাতে অথবা যিনি সর্বগত,সর্বব্যাপক তিনি পূর্ন ব্রহ্ম সব প্রকার ভূগোল অর্থ্যাৎ সমস্ত প্রকৃতিরূপ জগৎকে ব্যাপক হয়ে দশাঙ্গুল [অর্থ্যাৎ পাঁচ স্থুল বা পাঁচ সূক্ষ্ম ভূতবান জগৎ কে] উলঙ্ঘন করে স্থিত অর্থ্যাৎ এই সকল জগৎ এর এর ভিতর বাহিরেও পরিপূর্ন ব্যাপক হয়ে রয়েছেন ।
See also :ভাষ্যাদিকরণ শঙ্কা সমাধানঃ যজুর্বেদ ৩১।১
সর্বতঃ পাণিপাদন্তৎ সর্বতোহক্ষিশেরোমুখম্।
সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৬
শব্দার্থঃ[এই ব্রহ্মঃ] (সর্বতঃ) সব দিকে [সর্বত্র] (পাণিপদয়) হাত [অনন্ত বল] বা পাদ [সর্বগত অনন্ত বিদ্যমানতা] সম্পন্ন (সর্বতঃ) সব দিকে (অক্ষিশিরোমুখম্= অক্ষি + শিরঃ + মুখম্) চক্ষুসম্পন্ন [সর্বদ্রষ্টা], শির [অনন্ত জ্ঞান সম্পন্ন], মুখ [অন্তর্যামীরুপ সবার উপদেশ দানকারী (সর্বতঃ) সব দিকে (শ্রুতিমত্) কান [শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন] সম্পন্ন (লোকে) সংসারে (সর্বম্) সবাইকে (আবৃতা) ঢেকে [ঘিরে] [অর্থ্যাৎ সবার মধ্যে ব্যাপক হয়ে] (তিষ্ঠতি) স্থিত হয়ে রয়েছেন।। ১৬।।
সরলার্থঃ [এই ব্রহ্মঃ] সব দিকে [সর্বত্র] হাত [অনন্ত বল] বা পাদ [সর্বগত অনন্ত বিদ্যমানতা] সম্পন্ন সব দিকে চক্ষুসম্পন্ন [সর্বদ্রষ্টা], শির [অনন্ত জ্ঞান সম্পন্ন], মুখ [অন্তর্যামীরুপ সবার উপদেশ দানকারী সব দিকে কান [শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন] সম্পন্ন সংসারে সবাইকে ঢেকে [ঘিরে] [অর্থ্যাৎ সবার মধ্যে ব্যাপক হয়ে] স্থিত হয়ে রয়েছেন।
সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিব
র্জিতম্।
সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং বৃহৎ।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৭
শব্দার্থঃ [সেই ব্রহ্ম] (সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসম্= সর্ব+ ইন্দ্রিয়+গুণ+আভাসম্) [বিনা ভৌতিক ইন্দ্রিয়ের] সব ইন্দ্রিয়ের গুণের আভাসবিশিষ্ট [জ্ঞান অর্থ্যাৎ শোনা দেখা আদির শক্তি বিশিষ্ট] (সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্) সব ইন্দ্রিয় রহিত (সর্বস্য) সবার (প্রভূম্) স্বামী [অধিষ্ঠাতা] (ঈশানম্) পরমঐশ্বর্যবান [এবং] (সর্বস্য) সবার (বৃহত্) মহান (শরণম্) আশ্রয় স্থান।। ১৭।।
সরলার্থঃ [সেই ব্রহ্ম] [বিনা ভৌতিক ইন্দ্রিয়ের] সব ইন্দ্রিয়ের গুণের আভাসবিশিষ্ট [জ্ঞান অর্থ্যাৎ শোনা দেখা আদির শক্তি বিশিষ্ট] সব ইন্দ্রিয় রহিত সবার স্বামী [অধিষ্ঠাতা] পরমঐশ্বর্যবান [এবং] সবার মহান আশ্রয় স্থান।
নবদ্বারে পুরে দেহী হংসো লেলায়তে
বহিঃ।
বশী সর্বস্য লোকস্য স্থাবরস্য চরস্য চ।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৮
শব্দার্থঃ (নবদ্বারে) নয় দ্বারবিশিষ্ট (পুরে)
শরীরূপী নগরী মধ্যে (দেহী) দেহের
স্বামী [দেহধারী] (হংস) জীবাত্মা (বহিঃ) বাহির যাবার
জন্য (লেলায়ত) সচেষ্ট [উৎসক] হন [পরন্তু ব্রহ্ম
সদা মুক্ত] (সর্বস্য) সমস্ত (স্থাবরস্য) অচর (চ) ও
(চররস্থ) চর জঙ্গম (লোকস্য) জগতের (বশী)
বশী [বশ নিয়মে স্থাপনকারী] ।। ১৮।।
সরলার্থঃ নয় দ্বারবিশিষ্ট শরীরূপী নগরী মধ্যে
দেহের স্বামী [দেহধারী] জীবাত্মা বাহির যাবার
জন্য সচেষ্ট [উৎসক] হন [পরন্তু ব্রহ্ম সদা মুক্ত]
সমস্ত অচর ও চর জঙ্গম জগতের বশী [বশ
নিয়মে স্থাপনকারী] ।
অপাণিপাদো জবনো প্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ স
শৃণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩/১৯
শব্দার্থঃ[পরমেশ্বরের] (অপাণিপাদঃ) হাত পা নেই [পরন্তু গ্রহীতা] নিজ শক্তিরূপ হাত দ্বারা সবকিছু রচনা গ্রহন করতে পারে [এবং] (জবনঃ) সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সবার চেয়ে অধিক বেগবান, গতিশীল (অচক্ষুঃ) চক্ষু গোলক নাই [পরন্তু] (পশ্যতি) সবাইকে যথাযথ দেখেন (অকর্ণ) কান নেই [পরন্তু] (শৃণোতি) [সব কথা] শুনতে পারেন ] [অন্তঃকরণ নেই পরন্তু] (সঃ) তিনি (বিশ্বম্) সব জগৎ কে (বেত্তি) জানেন (চ) এবং (তস্য) তাহাকে (বেত্তা) জ্ঞাত কেউ নেই (তম্) তাহাকে (অগ্রয়ম্) সবথেকে শ্রেষ্ঠ (মহান্তম্) সবথেকে মহান (পুরুষম্) [সবথেকে পূর্ন হবার কারণে] পুরুষ (আহুঃ) বলা হয়।। ১৯।।
সরলার্থঃ [পরমেশ্বরের] হাত পা নেই [পরন্তু গ্রহীতা] নিজ শক্তিরূপ হাত দ্বারা সবকিছু রচনা গ্রহন করতে পারে [এবং] সর্বব্যাপক হওয়ার কারণে সবার চেয়ে অধিক বেগবান, গতিশীল চক্ষু গোলক নাই [পরন্তু] সবাইকে যথাযথ দেখেন কান নেই [পরন্তু] [সব কথা] শুনতে পারেন ] [অন্তঃকরণ নেই পরন্তু] তিনি সব জগৎ কে জানেন এবং তাহাকে জ্ঞাত কেউ নেই তাহাকে সবথেকে শ্রেষ্ঠ সবথেকে মহান [সবথেকে পূর্ন হবার কারণে] পুরুষ বলা হয়।
See also : অপাণিপাদ শ্রুতি বর্জে প্রাকৃত পাণিচরণ ,শ্বেতাশ্বতর ৩/৫,৬ খন্ডন
...................................................................
তাহলে এখানে পরিষ্কার ভাবে এটা বুঝা
যাচ্ছে এই মন্ত্রটিতে পরমাত্মার
সর্বব্যাপকতা বুঝানো হয়েছে এবং তিনি
সর্বব্যাপক হলেও আমাদের হৃদয়ে অবস্থান
করেন। তাই বলা হয়েছে যত চক্ষু, যত মুখ, যত
বাহু, যত চরণ আছে, তাহা তাহারই। তিনিই
মনুষ্যাদিকে বাহুসংযুক্ত করেন। ভূলোক ও
দ্যুলোক সৃষ্টি করিয়া তিনিই তাহার
অদ্বিতীয় প্রকাশকরুপে বিরাজিত। তিনি
অঙ্গুষ্ঠপরিমাণ অথচ পরিপূর্ণস্বরুপ এবং তিনি
অন্তরাত্মরুপে সর্বদা প্রাণিগণের হৃদয়ে
প্রতিষ্ঠিত আছেন। অদ্বিতীয় পরমাত্মা
বৃক্ষের ন্যায় নিশ্চলভাবে নিজ প্রকাশাত্মক
মহিমায় বিরাজিত, সেই পুরুষেরই দ্বারা এই
সমস্ত জগৎ পরিব্যাপ্ত। যেহেতু সকল প্রাণীর
হস্ত ও পদ সেই ব্রহ্মেরই; সর্বজীব চক্ষু, মস্তক
ও মুখ তাহারই; এবং সকল প্রাণীর কর্ণও
তাহারই; তিনিই আবার সকল প্রাণীর হৃদয়ে
অবস্থিত; তাই বলা হয়েছে, সেই পূর্ণস্বরুপের
অনন্ত মস্তক, অনন্ত নয়ন, অনন্ত চরণ; তিনি
ভুবনকে সর্বতোভাবে পরিব্যাপ্ত করিয়াও
নাভির দশাঙ্গুল উর্ধ্বে হৃদয়মধ্যে অবস্থিত
আছেন। জগৎকে অতিক্রম করিয়া
অসীমস্বরুপে বিদ্যমান আছেন।
.
পরে আবার এটাও বলা হয়েছে তিনি নিখিল
ইন্দ্রিয়ের গুণবিশিষ্ট-রুপে প্রতিভাত হন, অথচ
তিনি সমুদয় ইন্দ্রিয়ব্যাপার-শূন্য। তাহার
হস্তপদ না থাকিলেও তিনি দ্রুত গমন করেন
এবং সর্ববস্তু গ্রহণ করেন, চক্ষু না থাকিলেও
দর্শন করেন, কর্ণ না থাকিলেও শ্রবণ করেন।
তিনি জ্ঞাতব্য সর্ববস্তু জানেন, অথচ
তাহাকে কেহ জানে না। ব্রহ্মবিদগণ
তাহাকে সর্বাগ্রণী, পরিপূর্ণ এবং মহান
বলিয়া থাকেন।
.
শেষ কথা হচ্ছে যারা এতো দিন না বুঝে
তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছেন, তারা আজকের পর
থেকে আসা করি বুঝে ঢেকুর তুলবেন।
0 মন্তব্য(গুলি)