বেদ হল পরমাত্মার কাব্য। পুরো বেদের মন্ত্রেই নানারকম কাব্যের অনুপম নিদর্শন রয়েছে। কাব্যশাস্ত্রের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল অলঙ্কার ও নানাবিধ উপমা। বেদের প্রতি মন্ত্রেই যথাযথ অলঙ্কার আছে, এবং অনেক মন্ত্রেই বাচকালঙ্কার লুপ্ত রয়েছে।
আমরা জানি যারা বাংলা সাহিত্য পড়েছি, জীবনানন্দ দাশ নানারকম উপমা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। তবে বেদের উপমার কাছে লৌকিক সকল কবির উপমাই কম হয়ে যায়। প্রথমে এরকম একটি নিদর্শন উপস্থাপন করি, যা আসলে লৌকিক কবিদের চেয়ে অনেক বেশি অনুপম নিদর্শন।
বয়ঃ সুপর্ণা উপ সেদুরিন্দ্রং প্রিয়মেধা ঋষয়ো নাধমানাঃ ।
অপ ধ্বান্তমূর্ণুহি পূর্ধি চক্ষুর্মুমুগ্ধ্যা৩স্মান্নিধয়েব বদ্ধান্।
(ঋগ্বেদ ১০/৭৩/১১)
পদার্থঃ (সুপর্ণাঃ বয়ঃ ষ) সুন্দর পাখাযুক্ত পক্ষীর ন্যায় সুন্দর উড্ডয়নকারী সূর্য-কিরণ যেন (ইন্দ্রম্) সূর্যের (উপসেদুঃ) সমীপে পৌঁছে যায়। (প্রিয়মেধাঃ) বুদ্ধি বৃদ্ধি করা অথবা প্রকাশপ্রদানরূপ যজ্ঞ করা যার প্রিয়, [প্রিয়মেধঃ প্রিয়া অস্য মেধা। নিরু০ ৩।১৭। মেধ ইতি যজ্ঞনাম। নিঘ০ ৩।১৭] তেমন (ঋষয়ঃ) দর্শনে সহায়তাকারী কিরণ [ঋষির্দর্শনাৎ ইতি নিরুক্তম্ ২।১১।] (নাধমানাঃ) যেন যাচঞা করে যে, হে সূর্য! (নিধয়া ইব) জাল দ্বারা যেন [পাশ্যা পাশসমূহঃ, পাশঃ পাশয়তেঃ বিপাশনাৎ। নিরু০ ৪।২।] (বদ্ধান্) আবদ্ধ (অস্মান্) আমাদের (মুমুগ্ধি) তুমি ছেড়ে দাও, [‘বহুলং ছন্দসি। অষ্টা০ ২।৪।৭৬’] আমাদের দ্বারা (ধ্বান্তম্) অন্ধকারের আবরণকে (অপ-ঊর্ণুহি) দূর করে দাও , এবং (চক্ষুঃ) প্রাণিদের চোখকে (পূর্ধি) প্রকাশ দিয়ে পূর্ণ করে দাও।
সরলার্থঃ সুন্দর পাখাযুক্ত পক্ষীর ন্যায় সুন্দর উড্ডয়নকারী সূর্য-কিরণ যেন সূর্যের সমীপে পৌঁছে যায়। বুদ্ধি বৃদ্ধি করা অথবা প্রকাশপ্রদানরূপ যজ্ঞ করা যার প্রিয়, তেমন দর্শনে সহায়তাকারী কিরণ যেন যাচঞা করে যে, হে সূর্য! জাল দ্বারা যেন আবদ্ধ আমাদের তুমি ছেড়ে দাও, আমাদের দ্বারা অন্ধকারের আবরণকে দূর করে দাও এবং প্রাণিদের চোখকে প্রকাশ দিয়ে পূর্ণ করে দাও।
এই মন্ত্র যাস্কাচার্য এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে—বয়ো বের্বহুবচনম্। সুপর্ণাঃ সুপতনাঃ আদিত্যরশ্ময়ঃ। উপসেদুরিন্দ্রং য়াচমানাঃ। অপোর্ণুহি আধ্বস্তং চক্ষুঃ। পূর্ধি পূরয়, দেহীতি বা। মুঞ্চাস্মান্ পাশৈরিব বদ্ধান্ ইতি। নিরু০ ৪।৩ ॥
আরো পড়ুন - নিরুক্ত তথা যাস্কের দেবতা ও আকার প্রসঙ্গে - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/06/blog-post_11.html?m=1#more
কিন্তু যদি এই উপমা কেউ না বোঝে, সে কল্পনা করবে ইন্দ্রের কাছে কিছু পাখি গিয়ে কিচিরমিচির করছে এবং নানা কথা বলছে, যেমনটা সায়ণ ভাষ্যে রয়েছে।
সেজন্য বেদ বুঝতে হলে উপমা ও অলঙ্কার সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে সবার আগে।
আরো একটি উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে বিষয়টি।
চত্বারি শৃঙ্গা ত্রয়াে অস্য পাদা
ত্রিধা বন্ধো বৃষভা রোরবীতি
দ্বে শীর্ষে সপ্ত হস্তাসাে অস্য
মহাদেবাে মর্ত্যা আবিবেশ।
(যজু ১৭।৯১)
-মহান দেব বৃষরূপে (ষণ্ড বা ষাঁড়, অন্য অর্থে কামফল বা জল বর্ষণকারী) মলােকে ( অথবা মানুষের মধ্যে ) প্রবেশ করে গর্জন করছেন। এর চারটি শৃঙ্গ, তিন পা, দুই মস্তক, সাতটি হাত ; ইনি তিন স্থানে বন্ধ।
বৃষের কোন অবতার থাকলে পৌরাণিক গণ এখানেও হয়তো ঈশ্বরকে ষাঁড় বানিয়ে এই অবতারকে পেত! হাত-পা রূপক অর্থে উল্লেখ থাকলেও তাকে প্রাকৃত হাত পা বানাবার জন্য সবসময় উঠে পড়ে লেগে থাকা দলকে আর কি বলা যায়?
যজ্ঞ বা যজ্ঞীপুরুষের এই যে কল্পনা, সেই স্মৃতি গড়ে যে পূজা করা হত না। এ কথায় বােধ হয় দ্বিমত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে বৈদিক কবির কবি ছিলেন। তাদের বর্ণনা যেমন গভীর অর্থবহ তেমনি রূপকাবৃত।
যজ্ঞ-পুরুষের চারটি শৃঙ্গ চারিবেদ অথবা ব্ৰহ্ম, উদ্গাতা, হােতা ও অর্ধ্বয়ু অভিধেয় চারজন ঋত্বিক। তিন পদ—প্রাতঃ সবন, মাধ্যন্দিন সবন ও সায়াহ্ন-এই ত্রি সবন অথবা ঋক্, সাম, যজুঃ এই তিন বেদ ; দুই মস্তক—হবিধান ও পর্গব্য এই দুই অনুষ্ঠান ; সাতটি হাত সাত রকমের হােতা অথবা সাত প্রকারের গায়ত্রী আদি ছন্দ ; তিনটি বন্ধন স্থান, তিনটি সবন—মন্ত্র, ব্রাহ্মণ ও কল্পসূত্র।
এমনটা মহীধরের ব্যাখ্যা।
মহর্ষি দয়ানন্দ জীর ব্যাখ্যাও এই স্থলে প্রায় সমান, কেবল দুই মস্তকের ব্যাখ্যা তিনি অহোরাত্র করেছেন।
আরো দেখুন - পুরুষসূক্তে উল্লেখিত পুরুষের যথার্থ স্বরূপ - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/12/blog-post.html?m=1#more
তো ইদানীং এরকম অনেক উদ্ভট দাবি নিয়ে অনেকেই আসছে, তাদের কারণ বেদ মন্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞানের ন্যূনতা। আমরা এখন ধীরে ধীরে পুরো অংশ খণ্ডন করব -
বিভ্রদ্দ্রাপিং হিরণ্যয়ং বরুণো বস্ত নির্ণিজম্ ।
পরি স্পশো নি ষেদিরে ॥
ঋগ্বেদ ১।২৫।১৩
অনুবাদঃ যেভাবে এই বায়ু বা সূর্যের তেজে (স্পশঃ) স্পর্শবান অর্থাৎ স্থূল-সূক্ষ্ম সকল পদার্থ (নিষেদিরে) স্থির হয় এবং তারা উভয়ে তথা (বরুণঃ) বায়ু এবং সূর্য (নির্ণিজম্) শুদ্ধ (হিরণ্যযম্) অগ্ন্যাদিরূপ পদার্থসমূহকে (বিভ্রৎ) ধারণ করে (দ্রাপিম্) বল তেজ এবং নিদ্রাকে (পরিবস্ত) সর্ব প্রকারে লাভ করে জীবগণের জ্ঞানকে আবৃত করে ফেলে , সেভাবে (নির্ণিজম্) শুদ্ধ (হিরণ্যয়ম্) জ্যোতির্ময় প্রকাশযুক্তকে [ ঋত্ব্যবাস্ত্ব্য০ (অষ্টা০ ৬.৪.১৭৫)] (বিভ্রৎ) ধারণ করে (দ্রাপিম্) নিদ্রাদির হেতু রাত্রিকে (পরিবস্ত) নিবারণ করে স্বীয় তেজ দ্বারা সবাইকে আবৃত করে।
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি স্বামী শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী ]
অধ্যাত্ম পক্ষে -
বরণীয় ও পরমেশ্বর শুদ্ধ জ্ঞানস্বরূপ দ্বারা অজ্ঞান অন্ধকার আবরণ নিবারণকারী এবং তেজ ও জ্যোতির ধারক ও তিনি সমস্ত প্রকাশমান স্পর্শযোগ্য পদার্থকে ব্যাপক রূপে পরিবেষ্টন তথা ধারণ করে আছেন ।
[ পণ্ডিত জয়দেব শর্মা , পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার ও পণ্ডিত ধর্মদেব বিদ্যামার্তণ্ড ]
বরুণ অর্থ সূর্য -
১.বরুণ এব সবিতা জৈ০উ০ব্রা০ ৪।২৭।৩
২.বরুণ আদিত্যৈ ( উদক্রামৎ) ঐ০ব্রা০ ১।২৪
৩.বরুণ আদিত্যৈ ( ব্যদ্রবৎ) শ০ব্রা০ ৩।৪।২।১
বরুণ অর্থ বায়ু -
১.বরুণ পদনাম নিঘ০ ৫।৪
২.য প্রাণ স বরুণ গো০ব্রা০ উ০ ৪।১১
অনুসিদ্ধান্ত -
(১) প্রাণই বরুণ৷, আবার এই প্রাণই হল 'বাত' -
যো বৈ প্রাণ স বাত শ০ ব্রা০ ৫।২।৪।৯
প্রাণো বৈ বাত শ০ব্রা০ ১।১।২।১৪
(২) ' বাত' অর্থ বায়ু -
বাতো হি বায়ু শ০ব্রা০ ৮।৭।৩।১২
৩.ব্যানো বরুণ শ০ব্রা০ ১২।৯।১।১৬
৪.অপানো বরুণ শ০ব্রা০ ৮।৪।২।৬
বরুণ অর্থ পরমেশ্বর -
(বৃঞ বরণে, বর ঈপ্সায়াম) এই সকল ধাতুর সাথে উণাদি ‘উন’ প্রত্যয় যােগে বরুণ’ শব্দ সিদ্ধ হয়। য়ঃ সর্বান্ শিষ্টান্ মুমুক্ষুন্ধর্মাত্মননা বৃণােত্যথবা য়ঃশিষ্টেমুমুক্ষ ভিধর্মাত্মভিব্রিয়তে বয়তে বা স বরুণঃ পরমেশ্বরঃ যিনি আপ্তযােগী বিদ্বান, মুক্তিকামী, মুক্ত এবং ধর্মাত্মাদিগেরও স্বীকাৰ্য্য অথবা যিনি শিষ্ট, মুমুক্ষু এবং ধর্মাত্মাদিগের দ্বারা স্বীকৃত হন, সেই ঈশ্বরের নাম বরুণ। অথবা বরুণাে নাম বরঃ শ্রেষ্ঠঃ যেহেতু পরমেশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ, সেইহেতু তাহার নাম বরুণ।
১. বরুণো বৃণোতীতি সৎ নি০ ১০।৩
২.সর্বো বৈ দেবানা বরুণ শ০ব্রা০ ৫।৩।১।৫
৩.বরুণ সম্রাট্ সম্রাটপতি তৈ০ব্রা০ ২।৫।৭।৩
৪.বরুণো বৈ দেবানা রাজা শ০ ১২।৮।৩।১০
৫.রুণো অন্নপতি শ০ ১২।৭।২।২০
হিরণ্য অর্থ জ্যোতি -
১. বর্চো বৈ হিরণ্যম্ তৈ০ব্রা০ ১।৮।৯।১
২.তেজো বৈ হিরণ্যম্ তৈ০ব্রা০ ১।৮।৯।১
৩.জ্যোতির্বৈ শুক্র হিরণ্যম্ ঐ০ব্রা০ ৭।১২
৪.জ্যোতির্বৈ হিরণ্যম্ তা০ব্রা০ ৬।৬।১০
৬. জ্যোতির্বৈ হিরণ্যম্ শ০ব্রা০ ৭।৪।১।১৫
৭. জ্যোতির্বৈ হিরণ্যম্ গো০ব্রা০ উ০ ৫।৮
আরো দেখুন - বরুণের রথ নিয়ে বেদ মন্ত্রে সাকারবাদ অন্বেষণের জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/05/blog-post_29.html?m=1#more
ক্ব স্য তে রুদ্র মৃল়য়াকুর্হস্তো যো অস্তি ভেষজো জলাষঃ ।
অপভর্তা রপসো দৈব্যস্যাভী নু মা বৃষভ চক্ষমীথাঃ ॥
ঋগ্বেদ ২।৩৩।৭
অনুবাদঃ হে (বৃষভ) শ্রেষ্ঠ (রুদ্র) দুঃখনিবারক বৈদ্য আপনি (দৈব্যস্য) যে বিদ্বানগণের সাথে বর্ত্তমান তার মধ্যে (মা) আমাকে (অভি,চক্ষমীথাঃ) সর্বদিক হতে সহ্য করুন । (যঃ) যে (তে) আপনাকে (মৃল়য়াকুঃ) সুখদানকারী(হস্তঃ) হর্ষযুক্ত (ভেষজঃ) বৈদ্য (জলাষঃ) সুখকর্ত্তা এবং (রপসঃ) পাপসমূহের (অপভর্ত্তা) অপভর্ত্তা অর্থাৎ দূরকর্তা (অস্তি) রয়েছে (স্যঃ) সে (ক্ব) কোথায় ?
[ ভাষ্যকারঃ মহর্ষি স্বামী শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী ]
হস্তঃ - "হসে হসনে" (ধাতুপাঠ ১।৪৭৭)
আরো পড়ুন - উপনিষদে বর্ণিত সহস্রশীর্ষ-পাদযুক্ত পুরুষের তাৎপর্য - http://back2thevedas.blogspot.com/2018/03/blog-post_75.html?m=0#more
প্র বভ্রবে বৃষভায় শ্বিতীচে মহো মহীং সুষ্টুতিমীরয়ামি ।
নমস্যা কল্মলীকিনং নমোভির্গৃণীমসি ৎবেষং রুদ্রস্য নাম ॥
ঋগ্বেদ ২।৩৩।৮
অনুবাদঃ ( বভ্রবে) সকলের পোষক (বৃষভায়) সকলের উপর সুখ বর্ষণকারী ( শ্বিতীচে) শুদ্ধ পবিত্র জীবন প্রাপ্ত করান যিনি সেই প্রভুর জন্য ( মহঃ মহীম্) মহান থেকে মহানতর ( সুষ্টুতিম্) উত্তম স্তুতিকে ( প্র ঈদয়ামি) প্রেরিত করি । ( কল্মলীকিনম্) এই তেজস্বী প্রভুকে ( নমস্য) তুমি পূজা করবে । ( নমোভিঃ) নমস্কারের সাথে আমরা ( রুদ্রায়) সেই দুঃখদ্রাবক প্রভু (ত্বেষম্) দীপ্ত (নাম) নামের (গৃণীমসি) উচ্চারণ করি ।
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডির হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার ]
কল্মলীকিনম্ - কল্মলীকিনমিতি জ্বলতো নাম -নিঘ০ ১।১৭
স্থিরেভিরঙ্গৈঃ পুরুরূপ উগ্রো বভ্রুঃ শুক্রেভিঃ পিপিশে হিরণ্যৈঃ ।
ঈশানাদস্য ভুবনস্য ভূরের্ন বা উ যোষদ্রুদ্রাদসুর্যম্ ॥
ঋগ্বেদ ২।৩৩।৯
অনুবাদঃ সেই ( পুরুরূপঃ) এক রূপকে অনেক রূপ দানকারী প্রভু (উগ্রঃ) অত্যন্ত তেজস্বী । (বভ্রুঃ) তিনি সকলের ভরণ-পোষণকারী । সেই প্রভু র থেকে ( স্থিরেভিঃ অঙ্গৈঃ) দৃঢ় অঙ্গ দ্বারা তথা ( শুক্রেভিঃ) দীপ্ত ( হিরণ্যৈঃ) জ্ঞানজ্যোতি দ্বারা ( পিপিশে) নিজ অঙ্গ করা হয়, অর্থাৎ শরীরের অঙ্গসমূহকে সুস্থ ও সবল করার মাধ্যমে তথা জ্ঞান প্রাপ্তির দ্বারা আমরা স্বীয় জীবনকে প্রভুর দ্বারা অলংকৃত করি । ( অস্য) এই ( ভুবনস্য ঈশানাৎ) ভুবনের স্বামী ( ভুরেঃ) সকলের ভরণকারী ( রুদ্রাৎ) দুঃখদ্রাবক প্রভু থেকে (অসূর্যম্) শক্তি ( ন বা উ) না ( যোষৎ) পৃথক হয় । অর্থাৎ পরমাত্মা সকল শক্তির আধার ।
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডির হরিশরণ সিদ্ধান্তালংকার ]
পুরুরূপঃ -
একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি ৷
তমাত্মস্থং যেনুপশ্যন্তি ধীরাস্তেষাং সুখং শাশ্বতং নেতরেষাম্ ৷৷
কঠোপনিষদ ২.২.১২
সরলার্থঃ এক সবার নিয়ন্তা, সবার অন্তর্যামী যিনি এক প্রকৃতিরূপী বীজ কে বহু প্রকার করেন। যে ধীর পুরুষ তাকে নিজের অন্তঃকরণে ব্যাপকরূপ দ্বারা দর্শন করেন তার নিরন্তর সুখ প্রাপ্তি হয়, অপরের নয়।
শুক্র -
১.শুক্র হিরণ্যম্ তৈ০ব্রা০ ১।৭।৬।৩
২.জ্যোতির্বৈ শুক্র হিরণ্যম্ ঐ০ব্রা০ ৭।১২
৩.সত্য বৈ শুক্রম্ শ০ব্রা০ ৩।৯।৩।২৫
৫.শুক্রং শোচতেঃ জ্বলতিকর্মণঃ - নি০ ৮।১১
হিরণ্য অর্থ আমরা পূর্বেই দেখেছি ।
বভ্রুঃ - কুর্ভ্রশ্চ। উ০ ১।২২। ডুভৃঞ্ ধারণপোষণয়োঃ-কু দ্বিৎবঞ্চ। পোষকঃ
অর্হন্বিভর্ষি সায়কানি ধন্বার্হন্নিষ্কং যজতং বিশ্বরূপম্ ।
অর্হন্নিদং দয়সে বিশ্বমভ্বং ন বা ওজীয়ো রুদ্র ত্বদস্তি ॥
ঋগ্বেদ ২।৩৩।১০
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ! সর্বপূজনীয়, সর্বগুণযোগ্য হওয়াতে 'অর্হন' । তিনি ( সায়কানি) জগতের অন্তকারী, প্রলয়কারী সাধনসমূহ ও (ধন্ব) অন্তরিক্ষ বা জলকে , তিনি ( নিষ্কং) সম্পূর্ণ সুখ সমস্ত রূপকে, তিনিই ( যজত) উপাস্য, (বিশ্বরূপম্) বিশ্বময় বিরাটরূপ বা বিশ্বরূপ অর্থাৎ জীব জগতকে ( বিভর্তি) ধারণ, পালনকারী ।
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত জয়দেব শর্মা মীমাংসাতীর্থ ]
ধন্ব অর্থ অন্তরিক্ষ -
দিবো বা বিষ্ণ ঽ উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণঽউরোরন্তরিক্ষাৎ ।
উভা হি হস্তা বসুনা পৃণস্বা প্রয়চ্ছ দক্ষিণাদ্ ওত সব্যাৎ ।
বিষ্ণবে ত্বা ॥
যজুর্বেদ ৫।১৯
অনুবাদঃ হে ( বিষ্ণো) যজ্ঞরূপ প্রজাপতি । চরাচরে ব্যাপক পরমেশ্বর ! ( দিবঃ) আকাশ, বিদ্যুৎ , অগ্নি দ্বারা ( উত বা মহ ) বৃহৎ ও মহৎ ( পৃথিব্যাঃ) এং পৃথিবী থেকে , হে ( বিষ্ণপ) পরমেশ্বর ! ( উরোঃ) বিশাল ( অন্তরিক্ষাৎ) অন্তরিক্ষ থেকে তুমি আমার ( উভা হস্তা হি) উভয় হাতকে ( বসুনা) ঐশ্বর্য দ্বারা ( আ পৃণস্ব) পূর্ণ করো । ( দক্ষিণাৎ) ডান ( উত) ও ( সব্যাদ্) বাম দিক থেকেও তুমি আমাদের বিবিধ প্রকার ধন ( আ প্রয়চ্ছ) প্রদান করো । হে পরমেশ্বর ! ( ত্বা) তোমার আমরা ( বিষ্ণবে) যজ্ঞ তথা উপাসনার নিমিত্তে প্রার্থনা করি ।
[ ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত জয়দেব শর্মা মীমাংসাতীর্থ ]
বিষ্ণু অর্থ যজ্ঞ -
বিষ্ণু যজ্ঞনাম - নিঘ০ ৩।১৭
যজ্ঞো বৈ বিষ্ণু শিপিবিষ্ট তা০ব্রা০ ৯।৭।১০
যো বৈ বিষ্ণু স যজ্ঞ শ০ব্রা০ ৫।২।৩।৬
বিষ্ণুর্যজ্ঞ গো০ব্রা০ উ০ ১।১২
বিষ্ণুর্বৈ যজ্ঞ ঐ০ব্রা০ ১।১৫
যজ্ঞো বিষ্ণু শ০ব্রা০ ১।৯।৩।৯
বিষ্ণু অর্থ পরমেশ্বর -
বিষেঃ কিচ্চ। (উণা০৩।৩৯) অনেন ‘বিষ্লৃ’ধাতোর্নুঃ প্রত্যয়ঃ কিচ্চ
(বি ব্যাপ্তেী) এই ধাতুর সহিত নু’ প্রত্যয় যােগে ‘বিষ্ণু’ শব্দ সিদ্ধ হয়, ‘বেবেষ্টি ব্যাগ্নেতি চরা চরং জগৎ স বিষ্ণুঃ পরমাত্মা’ চর এবং অচর রূপ জগতে ব্যাপক বলে পরমাত্মার নাম ‘বিষ্ণু।
য়ামিষুং গিরিশন্ত হস্তে বিভরষ্যস্তবে।
শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং জগৎ।।
যজুর্বেদ ১৬।৩
শব্দার্থঃ (গিরিশন্ত) হে সত্যোপদেশের বাণী দ্বারা সুখের বিস্তারকারী পরমাত্মা! (আম্) যেই (ইষুম্) প্রেরণাকে (অস্তবে) চারিদিকে বিস্তার করার জন্য (হস্তে) জ্ঞান দ্বারা (বিভর্ষি) ধারণ করেছাে (তাম্) সেই জ্ঞান ও প্রেরণাকে [আমাদের জন্য (শিবাম্) কল্যাণময় (কুরু) করাে। (গিরিত্র) হে বেদবাণীর উপদেষ্টা পরমাত্মা! (পুরুষম্) পুরুষার্থযুক্ত মানুষদেরকে [এবং] (জগৎ) জগৎকে দুরাচারীদের দ্বারা] (হিংসীঃ) হিংসিত হতে দিও (মা) না ।
সরলার্থঃ হে সত্যোপদেশের বাণী দ্বারা সুখের বিস্তারকারী পরমাত্মা! যেই প্রেরণাকে চারিদিকে বিস্তার করার জন্য জ্ঞান দ্বারা ধারণ করেছাে, সেই জ্ঞান ও প্রেরণাকে আমাদের জন্য কল্যাণময় করাে। হে বেদবাণীর উপদেষ্টা পরমাত্মা! পুরুষার্থযুক্ত মানুষদেরকে তথা এই জগৎকে, দুরাচারীদের দ্বারা হিংসিত হতে দিও না।
ভাবার্থঃ পরমাত্মা আমাদের সুখের নিমিত্তে জ্ঞানের প্রেরণা প্রদান করেন।
গিরিশন্ত= যো গিরিণা মেঘেন সত্যোপদেশেন বা শং সুখং তনোতি তৎসম্বুদ্ধৌ।
'গীঃ বাঙ্ নাম্ ' নিঘ০ ১।১১
বাগ্বৈ গী শ০ব্রা০ ৭।২।২।৫
তিনি এই প্রেরণা নিজ হস্তে অর্থাৎ জ্ঞান দ্বারা ধারণ করে আছেন। এখানে "হস্তে ধারণ করা" এর প্রয়ােগ জ্ঞানের উপস্থিতি"- '-এর সূচক।
হস্ত = হসে হসনে (ভ্বা০) ধাতো 'হসিমৃগ্রিণ্বামিদমি০' উ০ ৩।৮৬ সূত্রেণ তন্
যেমন বলা হয়ে থাকে (At one's fingertips) সমস্ত নিয়ন্ত্রণ নখাগ্রে বা নখদর্পনে বিদ্যমান। যেমন কোন Broadcasting station থেকে সংবাদ প্রচার করা হয়, তেমনি পরমাত্মা সম্পূর্ণ প্রেরণাকে বেদবাণী দ্বারা চারদিকে ছড়িয়ে দেন। যদি আমরা সেই প্রেরণাকে গ্রহণ করতে পারি, তবে অবশ্যই আমাদের কল্যাণ হবে। সেজন্যই তাঁর নিকট আমাদের প্রার্থনা-হে পরমাত্মা! তােমার সেই প্রেরণার দ্বারা আমাদের সবাইকে রক্ষা করাে, আমাদের অধিক ক্রিয়ান্বিত করার জন্য প্রেরণা প্রদান করাে, তবেই তাে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবাে।
আরো পড়ুন - যজুর্বেদের রুদ্রাধ্যায়ের তাৎপর্য৷ - http://back2thevedas.blogspot.com/2018/05/blog-post_24.html?m=1
একটু পায়খানা করে গেলাম কমেন্ট বক্স এ,কমেন্ট সরিয়ে পরিষ্কার করে নিয়েন।
ReplyDeleteনা বুঝে মন্তব্য করা ঠিক নয়। তোমাকে পেলে যে কি করতাম রে পাগল।
Deleteফকিরের বাচ্চা😠😠উটের মুত খেয়ে আসিস
Delete