https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে গোহত্যা নিয়ে অপপ্রচারের জবাব

Friday, August 7, 2020



❤ ও৩ম্ ❤

নমস্কার ,

সম্প্রতি বিধর্মীগণ বাংলাদেশ ও ভারতের বিবিধ সনাতনী পদবীধারী সেকুলাঙ্গারগণ বেদে গোহত্যা আছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে । বিশেষতঃ সায়ণভাষ্য অবলম্বনে রমেশচন্দ্র দত্ত , রামকৃষ্ণ মিশন কিংবা ম্যাক্সমুলার-গ্রিফিথ-উইলসনের উদ্দেশ্যমূলক অনুবাদ তাদের মূল পাথেয় । নিতান্তই শাস্ত্রজ্ঞানহীনতা ও অসংস্কৃতজ্ঞ হওয়ার দরুন অনলাইনে বিবিধ আর্ষভাষ্য উপলব্ধ হওয়া সত্ত্বেও তারা এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে যার মূল কারণ কিনা আমাদের বেদ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অবহেলারই ফল ।

যাই হোক , আজ আমরা এমনই কিছু নব্য দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা করব ।

💥 অপপ্রচারঃ ঋগবেদ ৬/৩৯/১ এ ঋষি গোপ্রমুখ অন্নের জন্য প্রার্থনা করেছেন-
मन्द्रस्य कवेर्दिव्यस्य वह्नेर्विप्रमन्मनो वचनस्य मध्वः |
अपा नस्तस्य सचनस्य देवेषो युवस्व गर्णते गोग्राः ||
“ হে ইন্দ্র! তুমি আমাদিগের সেই সোমরস পান কর। ইহা মদকর, বিক্রান্ত, স্বর্গীয়, প্রাজ্ঞসম্মত, ফলোপধায়ক, সুপ্রসিদ্ধ ও সেবনীয়। হে দেব, তুমি আমাদিগকে গো প্রমুখ অন্ন দান কর।“

জবাবঃ

মন্দ্রস্য কবের্দিব্যস্য বহ্নের্বিপ্রমন্মনো বচনস্য মধ্বঃ ।
অপা নস্তস্য সচনস্য দেবেষো যুবস্ব গর্ণতে গোগ্রাঃ।।
ঋগ্বেদ ৬.৩৯.১

অনুবাদঃ হে (দেব) অত্যন্ত বিদ্বান্! আপনি (বহ্নেঃ) সম্পূর্ণ বিদ্যাধারণকারী ও অগ্নির ন্যায় শুদ্ধকারী ; (কবেঃ) বিদ্বান্ এবং (দিব্যস্য) সুন্দর ইচ্ছাসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ [ হয়ে ] (মন্দ্রস্য) [ নিজে ] আনন্দিত হন এবং [সকলকে ] আনন্দিত করেন (বিপ্রমন্মনঃ) বিদ্বানের বিজ্ঞান যাতে রয়েছে সেই [ বিপ্র ইতি মেধাবী নাম - নিঘ০ ৩.১৫ ] (মধ্বঃ) মাধুর্যতাদি গুণযুক্ত (বচনস্য) বচনের ব্যবহারকারী হয়ে (অপাঃ) তা পালন করুন এবং (তস্য) সেই (সচনস্য) [ পরমাত্মা ] সম্বন্ধীয় ব্যক্তিগণের [ যোগীজন ] (গৃণতে) স্তুতি করার জন্য (গোঅগ্রাঃ) উত্তম বাণী যার মধ্যে রয়েছে (ইষঃ) অন্ন আদি বা ইচ্ছাসমূহকে [ ইষমিত্যন্ননামসু পঠিতম্ - নিঘ০ ২.৭ ] (নঃ) আমাদের জন্য (যুবস্ব) সংযুক্ত করুন [ যাতে আমরা তাদের থেকে বিদ্যা ও পরমাত্ম জ্ঞান লাভে সমর্থ হই ] ।

[ ভাষ্যঃ মহর্ষি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী , আর্যসমাজ ] 

এখানে সায়ণাচার্য  ও তদানুসারী বঙ্গ ও ইংরেজি অনুবাদকগণ গো অর্থ সরাসরি গোরু ধরেছেন যা কিনা প্রকরণ বিরুদ্ধ ও বৈদিক ভাষ্যরীতির অনুকূল নয় । বেদের অর্থ পরম্পরা  ও তাৎপর্যের জন্য এই পদ্ধতি অত্যন্ত হানিকর ।  মহর্ষি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী গো শব্দের অর্থ বাণী করেছেন যা কিনা নিরুক্ত ও ব্রাহ্মণাদি গ্রন্থ সমর্থিত  । উদাহরণ স্বরূপ - 

 বাঙ্ নাম - নিঘণ্টু - ১.১১ 
স্তোতৃনাম - নিঘণ্টু - ৩.১৬ 
সরস্বতী হি গৌ - শ০ব্রা০ ১৪.২.১.৭ 

এই গো শব্দের অর্থ বাণী তা ঋগ্বেদ ১.১৭৩.৮ এও পাবেন যেখানে এর অর্থ 'বিদ্যাসুশিক্ষিতা বাণী' । 

💥 অপপ্রচারঃ অগ্নির উদ্দেশ্যে ঋগ্বেদ ৬/১৬/৪৭ এ বলা হয়েছে-
आ ते॑ अग्न ऋ॒चा ह॒विर्हृ॒दा त॒ष्टं भ॑रामसि ।
ते ते॑ भवन्तू॒क्षण॑ ऋष॒भासो॑ व॒शा उ॒त ॥ ६.०१६.४७
“হে অগ্নি! আমরা তোমাকে হৃদয় দ্বারা সংস্কৃত ঋক রূপ হব্য প্রদান করিতেছি। বলশালী বৃষভ ও ধেনুগণ তোমার নিকট পূর্বোক্ত রূপ হব্য হউক।”
Agni, we bring thee, with our hymn, oblation fashioned in the heart.
Let these be oxen unto thee, let these be bulls and kine to thee. [ Translated by Griffith]

জবাবঃ 

আ তে অগ্ন ঋচা হবির্হৃদা তষ্টং ভরামসি ।
তে তে ভবন্তুক্ষণ ঋষভাসো বশা উত ॥ 
ঋগ্বেদ ৬.১৬.৪৭

অনুবাদঃ হে (অগ্নে) জগদীশ্বর! যে (তে) আপনার (হবিঃ) অন্তঃকরণ [ মৃল তত্ত্ব ] এবং (তষ্টম্) অত্যন্ত শুদ্ধ স্বরূপকে আমরা (ঋচা) প্রশংসারূপ ঋগ্বেদ আদি দ্বারা এবং (হৃদা) হৃদয় দ্বারা (আ, ভরামসি) উত্তমভাবে পোষণ [ ধ্যান ] করি ; সেই  (তে) আপনার কৃপার মাধ্যমে আমাদের জন্য (তে) আপনার সমন্ধীয় [সমস্ত চিন্তা ও কর্ম ](উক্ষণঃ) [শান্তি ] বর্ষণকারী (ঋষভাসঃ) উত্তম (উত) ও (বশাঃ) [ সকলের জন্য মঙ্গল ] কামনাযোগ্য  (ভবন্তু) হোক । 

[ ভাষ্যঃ মহর্ষি  শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী , আর্যসমাজ ] 

এখানে উক্ষণ , ঋষভ ও বশা যথাক্রমে সায়ণ ভাষ্যে ষাঁড় , মহিষ ও ধেনু করা হয়েছে  । 

কিন্তু উক্ষণ শব্দের অর্থ সেচন সমর্থ বা বর্ষণকারী  , বৃষ অর্থও বর্ষণকারী হয় । এই অর্থ ঋগ্বেদ ১.৬৪.২ এও আছে । উক্ষা নিঘণ্টু ৩.৩ অনুযায়ী মহৎ শব্দের পর্যায়বাচীও বটে । উণাদি কোষ ১.১৫৯ অনুযায়ী উক্ষণ - বৃদ্ধিকর্মণ, উক্ষন্ত্যুদকেনেইতি বা , উক্ষণ এতান্ মাধ্যমিকান সস্ত্যাযান্ নিরুক্ত ১২.৯ ।  নিরুক্ত ১৩.৯ অনুযায়ী জল সেচনার্থেও এটি ব্যবহার হয় । 

ঋষভ অর্থ  উত্তম  - অতিশ্রেষ্ঠ যজুর্বেদ ২৮.৩৪, উৎকৃষ্ট গুণকর্মস্বভাবস্য যজুর্বেদ ২১.৪৯, উত্তমস্য (হবিষ=বস্তুন) যজুর্বেদ ২১.৪৫ । শতপথ ব্রাহ্মণ ৫.৩.১.৩ অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ মনুষ্যকেও ঋষভ বলা যায় ,  ' ইন্দ্র যদৃষভ' । 

বশা অর্থ কামনাযোগ্য , বশযোগ্য, বশ করেছেন যিনি  । এই একই অর্থ ব্যবহার হয়েছে ঋগ্বেদ ১.২৯.১ বশঃ = কাময়মান, ঋগ্বেদ ৩.৬০.৪ বশানাম্ = কমনীয়ানাম্ [ বিদ্বজ্জনানাম ] । এছাড়াও  বশ্মি কান্তিকর্মা নিঘণ্টু ২.৬।  শতপথ ব্রাহ্মণ ২.৭.৩.১৫, ২.৪.৪.১৪,  ১.৮.৪.১৫, ৫.১.৩.৩ অনুযায়ী পৃথিবীকেও বশা বলা হয়েছে 'ইয়ং [পৃথিবী ] বৈ বশা পৃশ্নি ।অথর্ববেদ ১০.১০.৪ এ পরমাত্মাকে বশা বলা হয়েছে কারণ তার বশ বা অধিপতিত্বেই জগৎ নিয়মানুবর্তীভাবে চালিত হয় । ব্যাকরণগতভাবে -  বশ কান্তৌ (অদা০) ধাতোরচ্। [ অষ্টাধ্যায়ী  ৩.৩.৫৮ ]।  ততষ্টাপ্। যদ্ বশমস্রবতস্যা বশাহভবৎ তস্মাত্মা হবিরিব ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩.২৬ । 

💥 অপপ্রচারঃ ১০ মণ্ডলে অগ্নিতে ঘোড়া, বৃষ, মেষকে আহুতি দিতে দেখা যায় –
यस्मि॒न्नश्वा॑स ऋष॒भास॑ उ॒क्षणो॑ व॒शा मे॒षा अ॑वसृ॒ष्टास॒ आहु॑ताः ।
की॒ला॒ल॒पे सोम॑पृष्ठाय वे॒धसे॑ हृ॒दा म॒तिं ज॑नये॒ चारु॑म॒ग्नये॑ ॥ १०.०९१.१४
“যে অগ্নির উপরও বিস্তর ঘোটক, বলবান বৃষ, পুরুষত্ব বিহীন মেষ আহুতি রূপে অর্পণ করা হইয়াছে , যিনি জলের পালন কর্তা , যাহার পৃষ্ঠে সোমরস, যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা , সেই অগ্নির উদ্দেশ্যে মনে মনে চিন্তা করিয়া এই সুন্দর স্তব রচনা করিয়াছি।” ১০/৯১/১৪
He in whom horses, bulls, oxen, and barren cows, and rams, when duly set apart, are offered up,—To Agni, Soma-sprinkled, drinker of sweet juice, Disposer, with my heart I bring a fair hymn forth. “ [Translated by Griffith ]

জবাবঃ 

যস্মিন্নশ্বাস ঋষভাস উক্ষণো বশা মেষা অবসৃষ্টাস আহুতাঃ ।
কীলালপে সোমপৃষ্ঠায় বেধসে হৃদা মতিং জনয়ে চারুমগ্নয়ে ॥ 
ঋগ্বেদ ১০.০৯১.১৪

অনুবাদঃ (যস্মিন্) যে উপাসনাতে আনীত  পরমাত্মাকে অথবা যার আশ্রয়ে (উক্ষণঃ) সেচন সমর্থ  (অশ্বাসঃ) অশ্ব (ঋষভাসঃ) বৃষভ (বশাঃ) কমনীয় দুগ্ধদানকারী গোসমূহ (মেষাঃ) ঊর্ণ বা সুতা দানকারী ভেড়া (অবসৃষ্টাসঃ) পর্যাপ্ত (আহুতাঃ) অভিপ্রাপ্ত [  “আহুতং-অভিহুতম্” নিরু০ ২।২৫ ] (কীলালপে) সেই অন্নরক্ষক [  কীলালম্ অন্ননাম - নিঘ০ ২।৭ ] (সোমপৃষ্ঠায়) সৌম্য ঔষধীরস যেমন আনন্দ স্পৃষ্ট করেছে , আত্মাতে ভাবনা করা হয় যার আশ্রয়ে,  সেই  (বেধসে-অগ্নয়ে) বিধাতা পরমাত্মার জন্য (হৃদা-চারুং মতিং জনয়ে) আমি হৃদয়  থেকে,  মন দ্বারা অতিসুন্দর আস্তিক চিন্তা-ভাবনা উৎপন্ন করি । 

[ ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তণ্ড, আর্যসমাজ ]

 সায়ণাচার্য  তার ভাষ্যে এখানে আকাশ-পাতাল থেকে লিখেছেন - স্বভাববন্ধ্যাশ্চ “মেষাঃ চ "অবসৃষ্টাসঃ দেবতার্থম্ অবসৃষ্টাঃ পরিত্যক্তাঃ সন্তোঽশ্বমেধে । অশ্বমেধের এখানে কোন প্রসঙ্গই নেই । আবার যদি ধরেও নেই এখানে অশ্বমেধ তাহলে একটা অশ্বের স্থলে বিস্তর অশ্ব কেন দেয়া হবে । অতঃ উক্ত অর্থ যে অশুদ্ধ ও কপোলকল্পিত তা প্রমাণিত । 

 💥অপপ্রচারঃ ঋগবেদ ১০/৭৯/৬ এ গরুকে খণ্ড খণ্ড করে কাটার কথা বলা আছে-
किं देवेषु तयज एनश्चकर्थाग्ने पर्छामि नु तवामविद्वान |
अक्रीळन करीळन हरिरत्तवे.अदन वि पर्वशश्चकर्त गामिवासिः ||
“ হে অগ্নি! তুমি কি দেবতাদের মধ্যে কোন অপরাধ পাইয়া ক্রোধ ধারণ করিয়াছ? আমি জানি না, এজন্য তোমাকে একথা জিজ্ঞাসা করিতেছি? যেমন খড়্গ দ্বারা কোন গাভীকে খণ্ড খণ্ড করে ছেদন করে সেরূপ তুমি ক্রীড়া কর আর না কর , তুমি উজ্জ্বল হইয়া তোমার আহারীয়দ্রব্য ভোজনকালে পর্বে পর্বে কর্তন কর।

জবাবঃ  প্রথমেই দেখা যাচ্ছে, অপপ্রচারীর এই অর্থে কিন্তু বলা নেই যে যজমানের যজ্ঞ বা খাদ্যাভ্যাসের নিমিত্তে গোহত্যা বা খণ্ড করা হচ্ছে । এখন মূল মন্ত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি - 

কিং দেবেষু তয়জ এনশ্চকর্থাগ্নে পর্ছামি নু তবামবিদ্বান। 
অক্রীডন করীডন হরিরত্তবে অদন বি পর্বশশ্চকর্ত গামিবাসিঃ।। 
ঋগ্বেদ  ১০.৭৯.৬

অনুবাদঃ (অগ্নে) হে অগ্রনায়ক পরমাত্মন্ ! তোমার (দেবেষু) জীবন্মুক্ত বিদ্বানগণের মধ্যে (ত্যজঃ-এনঃ) ক্রোধ তথা পাপ [ ত্যজঃ ক্রোধনাম - নিঘ০ ২।১৩ ] (কিং চকর্থ) কি করে ? অর্থাৎ কিছু করে না (নু-অবিদ্বান্ ৎবাং পৃচ্ছামি) অবিদ্বান্ হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি (অক্রীডন্ ক্রীডন্ হরিঃ) জানি বা না জানি তুমি সংহর্তা (অত্তবে-অদন্) নিজের মধ্যে গ্রহণ করার জন্য গ্রহণকারী (অসিঃ) অসি [দ্বারা ] (পর্বশঃ) খণ্ড খণ্ড  করো , (গাম্-ইব) অন্নের বীরুৎকে যেভাবে [ “অন্নং বৈ গৌঃ” - শ০ ৪।৩।৪।২৫ ]  (বিচকর্ত) ছিন্ন-ভিন্ন করে দাও । 

[ ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তণ্ড, আর্যসমাজ ]

এই মন্ত্রের তাৎপর্য হল , পরমাত্মা জীবন্মুক্তগণের জন্য কখনো ক্রোধ করেন না । কারণ তিনি রাগ-অবিদ্যাদি পঞ্চক্লেশ থেকে সর্বদা মুক্ত । এই বিষয়টি অবিদ্বানগণ জানেন না । কিন্তু যে এই জড়জাগতিক সংসারে জন্ম গ্রহণ করে , যে তার কর্ম করে এবং পরিশেষে যেভাবে ধান গাছ পরিপক্ক হলে কেটে নেয়া হয় সেভাবে কালও তারও অঙ্গ বিভক্ত হতে থাকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে । অর্থাৎ , সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তার অঙ্গসমূহ আস্তে আস্তে জীর্ণ হয়ে আসে , সে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় । 

এখানে প্রসঙ্গতঃ কিছু কথা বলা আবশ্যক । বিবিধ বই যেমন ড. ডিএন ঝা কিংবা অধুনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গীয় সেকুলাঙ্গারগণ 'অন্নং বৈ গৌ'  যা কিনা শতপথ ও তৈত্তিরীয় সংহিতার ৩.৯.৮.৩ এ রয়েছে তার অর্থ করেন  ' গো হল  অন্ন । নিতান্তই সংস্কৃত অনভিজ্ঞতা কিংবা স্বার্থপরবশ হয়ে তারা এই অর্থ করেন । কারণ এর অর্থ হল স্পষ্টভাবে  'অন্ন হচ্ছে গো ' । ঠিক যেভাবে 'বিদ্বাংসি হি দেবা ' শ০ ৩.৭.৩.১০ এর অর্থ বিদ্বানগণই হন দেব ।  এই বাক্য দ্বারা বেদাদি শাস্ত্রে গো শব্দের অর্থ কনটেক্সট অনুযায়ী অন্ন করা যায় । এখানে গো আদি পশু অন্ন বা খাদ্য হয়ে যায়  না । যদি গৌ হি অন্ন বলা হতো তাহলে এই প্রকার অর্থ সম্ভব হতো । 'রানী শেরনী হ্যায় ' আর 'শেরনী রানী হ্যায় ' এই দুটো বাক্য শব্দত্রয় এক হলেও বিন্যাসগত কারণে অর্থ এক নয় । উপর্যুক্ত ব্রাহ্মণ বাক্যেও এই কথাটি স্মরণীয়  । 

💥অপপ্রচারঃ মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় মৃতকে গোচর্ম দ্বারা ঢেকে দেওয়া হত-
अ॒ग्नेर्वर्म॒ परि॒ गोभि॑र्व्ययस्व॒ सं प्रोर्णु॑ष्व॒ पीव॑सा॒ मेद॑सा च ।
नेत्त्वा॑ धृ॒ष्णुर्हर॑सा॒ जर्हृ॑षाणो द॒धृग्वि॑ध॒क्ष्
यन्प॑र्य॒ङ्खया॑ते ॥ १०.०१६.०७
“ হে মৃত! তুমি গোচর্মের সাথে অগ্নি শিখা স্বরূপ কবচ ধারণ কর, তোমার প্রচুর মেদের দ্বারা তুমি আচ্ছাদিত হও, তা হলে এ যে দুর্ধর্ষ অগ্নি, যিনি বলপূর্বক ও অহংকারের সাথে তোমাকে দগ্ধ করতে উদ্যত হয়েছেন, তিনি একেবারে তোমার সর্বাংশে ব্যপ্ত হতে পারবেন না।“ ১০/১৬/৭

জবাবঃ

অগ্নের্বর্ম পরি গোভির্ব্যযস্ব সং প্রোর্ণুষ্ব পীবসা মেদসা চ ।
নেত্ত্বা ধৃষ্ণুর্হরসা জর্হৃষাণো দধৃগ্বিধক্ষ্
যন্পর্যঙ্খয়াতে ॥ 
ঋগ্বেদ ১০.০১৬.০৭

অনুবাদঃ (অগ্নেঃ-বর্ম গোভিঃ পরিব্যযস্ব পীবসা মেদসা চ সম্প্রোর্ণুষ্ব) অগ্নির গৃহ [বর্মেতি গৃহনাম - নি০ ৩.৪ ]অর্থাৎ চিতাকে ইন্দ্রিয় এবং নাড়িসমূহ সহিত এই মৃতদেহ উত্তম ভাবে প্রাপ্ত হোক  [ ব্যয গতৌ -ভ্বাদিঃ] এবং মাংস-মেদ-চর্বি সহিত জ্বলন্ত শববেদি অর্থাৎ চিতাকে সম্যক্ পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হোক , কেননা (ধৃষ্ণুঃ-জর্হৃষাণঃ-দধৃক্-বিধক্ষ্যন্-নেত্ত্বা হরসা পর্যঙ্খয়াতে) প্রসহ্যকারী [ প্রসহনার্থস্য চৌরাদিকস্য ধৃষ্ধাতোঃ - ত্রসিগৃধিধৃষিক্ষিপেঃ ক্নুঃ - অষ্টা০৩।৩।১৪০ ]  অতিশয় তীব্রতা দ্বারা [ হৃষু-অলীকে ভ্বাদিঃ ]  বস্তুমাত্রকে অকিঞ্চিৎকারী অগ্নি সেই শবকে বিশেষরূপে জ্বালানোর সময় শবের অঙ্গ সমূহকে  যেন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত না করে । 

[ ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তণ্ড, আর্যসমাজ ]

টীকাঃ তস্মাৎ “তাচ্ছীল্যবয়োবচনশক্তিষু চানশ্” [অষ্টা০৩।২।১৮৯] ইতি শক্ত্যর্থে চানশ্ প্রত্যযঃ “অভ্যস্তানামাদিঃ” [অষ্টা০৬।১।১৮৯] ইত্যাদ্যুদাত্তঃ। দধৃক্ প্রগল্ভোঽতিদৃঢ এষোঽগ্নিঃ। “ধৃষ্ প্রাগল্ভ্যে” [স্বাদিঃ] “ঋৎবিগ্দধৃক্০”  [অষ্টা০৩।২।৫৯] ৎবাং তং প্রেতং বিধক্ষ্যন্ বিশেষং দগ্ধং করিষ্যন্-নেৎ-নোচেৎ। জ্বালয়া পর্যঙ্খয়াতে-পর্যঙ্খয়েৎ পরিক্ষিপেদিতস্ততঃ পাতয়েৎ “উপসংবাদাশঙ্কয়োশ্চ” [অষ্টা০৩।৪।৮] ইত্যাশঙ্কায়াং লেট্ প্রত্যযঃ

অর্থাৎ, শবদহনবেদি বা চিতার পরিমাণ এমন হওয়া উচিৎ  যাতে মৃত শরীর সুগমভাবে চিতাতে প্রবিষ্ট হয় এবং তার ইন্দ্রিয়, অঙ্গ , নাড়ী, মাংস, চর্বি আদি অংশতে যেন উত্তমভাবে অগ্নির প্রবেশ হয়  । অপপ্রচারকারীগণ তথা সায়ণ ভাষ্যে গো অর্থ গোচর্ম করা হয়েছে আশ্বলায়ম শ্রৌতসূত্র অনুযায়ী । কিন্তু যেখানে স্বয়ং বেদ গো কে অদিতি বলেছে এবং পূর্ব মীমাংসা কল্পসূত্রের প্রমাণকে স্বতঃপ্রমাণ স্বীকার করেনি সেখানে এই অর্থ কিভাবে সঠিক হতে পারে  ?  আর সাধারণ বেদপাঠী বা সংস্কৃতজ্ঞও জানেন যে গো এর একটি অর্থ হল ইন্দ্রিয়  । যারা তারপরেও প্রমাণ চাই বলবেন তাদের জন্য প্রমাণ দেয়া হল - 

প্রাণো হি গৌ শ০ ৪.৩.৪.২৫ 
ইন্দ্রিয় বৈ বীর্য গাবঃ শ০ ৪.৫.৩.১০ ,  শ০ ৫.৪.৩.১০ 

শবদাহকারীগণের এটা খেয়াল রাখা উচিৎ , চিতাতে অগ্নি এমন ভাবে জ্বালানো হবে যাতে  তা অতিতীক্ষ্ণ এবং বলবান্ হয়ে বিপরীতভাবে স্থাপিত শবকে যেন দাহ করার সময় তার অঙ্গাদিকে চিতার বাইরে নিক্ষিপ্ত না করে । 

💥 অপপ্রচারঃ গোহত্যা এত বিপুল পরিমাণে হত যে গোহত্যার জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছিল। তাই ঋগ্বেদ ১০/৮৯/১৪ এ বলা হয়েছে-
कर्हि॑ स्वि॒त्सा त॑ इन्द्र चे॒त्यास॑द॒घस्य॒ यद्भि॒नदो॒ रक्ष॒ एष॑त् ।
मि॒त्र॒क्रुवो॒ यच्छस॑ने॒ न गावः॑ पृथि॒व्या आ॒पृग॑मु॒या शय॑न्ते ॥ १०.०८९.१४
” হে ইন্দ্র! যে অস্ত্র ক্ষেপন করিয়া পাপাত্মা রাক্ষসকে বিদীর্ণ করিলে , তোমার সেই নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র কোথায় রহিল? যেরূপ গোহত্যাস্থানে গাভীগণ হত হয় , তদ্রুপ তোমার ওই অস্ত্র দ্বারা নিহত হইয়া বন্ধুদ্বেষী রাক্ষসগণ পৃথিবীতে পতিত হইয়া শয়ণ করে।”
Where was the vengeful dart when thou, O Indra, clavest the demon ever beat on outrage? When fiends lay there upon the ground extended like cattle in the place of immolation? [ Translated by Griffith ]

জবাবঃ 

কর্হি স্বিৎসা ত ইন্দ্র চেত্যাসদঘস্য যদ্ভিনদো রক্ষ এষৎ ।
মিত্রক্রুবো যচ্ছসনে ন গাবঃ পৃথিব্যা আপৃগমুয়া শয়ন্তে ॥
ঋগ্বেদ ১০.৮৯.১৪

অনুবাদঃ 
(ইন্দ্র) হে পরমাত্মন্ ! (তে) তোমার (কর্হিস্বিৎ) কদাচিৎ (সা চেত্যা) সেই চেতনা ও প্রেরণীয় শক্তি (যৎ) যতঃ-যার দ্বারা (অঘস্য রক্ষঃ) পাপী রাক্ষস অর্থাৎ [ ক্রুর-নিষ্ঠুর-মানবতা ও জীব-প্রকৃতি বিরোধী ও ক্ষতিকারীর প্রতি -  দ্বিতীয়ার্থে ষষ্ঠী ব্যত্যযেন ]  (এষৎ-অভিনৎ) আক্রমণ করে , তাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে -নষ্ট করে (মিত্রক্রুবঃ) মিত্রঘাতক [ পশু ও প্রকৃতিরূপ মিত্রের ঘাতক ] (যৎ-শসনে ন) যেভাবে হিংসাস্থানে (গাবঃ) গো আদি পশু হত্যা করে , (অমুয়া পৃথিব্যাঃ) সেই শক্তি দ্বারা পৃথিবীর সহিত (আপৃক্ শয়ন্তে) সম্যক্ সম্পৃক্ত হয়ে মৃত ভাবে শয়ন করে । 

[ ভাষ্যঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক বিদ্যামার্তণ্ড, আর্যসমাজ ]



উক্ত মন্ত্রের ভাবার্থ , পাপী রাক্ষসের প্রতি পরমাত্মার ন্যায়বিচার ও কর্মফল রূপ অস্ত্রশক্তি গমন করে, বিনাশ করে । যেভাবে পাপীগণ দ্বারা গো আদি পশু হত্যা করাতে পৃথিবীতে মৃতদেহ শয়ন করে , সেভাবে পাপী মনুষ্য দুর্গতিরূপ পৃথিবী শয্যা লাভ করে । 

অতঃ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে বেদে গোহত্যা সূচক কোন প্রসঙ্গই নেই । প্রসঙ্গতঃ , বঙ্গীয় সংস্কৃতজ্ঞ হওয়ার নামে যারা সায়ণাচার্যের ভাষ্যের প্রচার ও একচেটিয়া সমর্থন দান করেন তাদের সংস্কৃতজ্ঞান ও উদ্দেশ্য কতটুকু মহৎ তা সহজেই বোধগম্য । 

প্রস্তুতকরণে - 

বাংলাদেশ অগ্নিবীর

  1. অসাধারণ দাদা চালিয়ে যান

    ReplyDelete