https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে প্রতিমা নির্মাণ অন্বেষণ ও অবোধের আস্ফালন নিবারণ

Friday, September 3, 2021



বেদে প্রতিমা বা মূর্তির কথা নেই তা সুধী ও স্বাধ্যায়ী পাঠকগণ মাত্রেই অবগত । তবে পৌরাণিকগণ তা মানতে অপারগ ও খুবই স্বাভাবিক । তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হল মায়াবাদীসহ তথাকথিত পরম্পরাবাদীগণ যখন তাদেরই প্রিয় ভাষ্যকারগণকে টেক্কা দিয়ে [ যারা কিনা নিজেরাই বেদের কদর্থ করেছেন ] পূর্বাপর বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব স্বার্থে আরো বিকৃত অর্থ করে । আজকে আমরা তেমনই কিছু দাবির খণ্ডন করবো ।


অপপ্রচারঃ
"কচিৎ প্রতিমা, কিং প্রতিমা
কিং নিরাধম আদ্যম কিমানামৎ পরিধি কচিৎ॥"
*🌀❈🌀অনুবাদঃ-* কিরূপে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি নির্মিত হবে, কি নাম হবে তার?
──(ঋকবেদ- অষ্টম মণ্ডল,
                 ১৮সুক্ত, মন্ত্র ৩)

জবাবঃ শুরুতেই বলহরি হরিবোল । ঋগ্বেদের ৮ম মণ্ডলের ১৮শ সূক্তের ৩য় মন্ত্রে এমন কোন কথাই নেই । এমনকি মন্ত্রটাও সম্পূর্ণ বানোয়াট ।  দেখুন -

তৎসু নঃ সবিতা ভগো বরুণো মিত্রো অর্যমা । 

শর্ম যচ্ছন্তু সপ্রথো যদীমহে ॥

ঋগ্বেদ ৮।১৮।৩



  • রমেশ চন্দ্র দত্ত কৃত অনুবাদঃ

আমরা যে বিস্তীর্ণ সুখ যাচঞা করি, সবিতা, ভগ, মিত্র, বরুণ ও অর্যমা আমাদের সে সুখ প্রদান করুন ।


  • দূর্গাদাস লাহিড়ী ও দিলীপ মুখোপাধ্যায় কৃত অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশিত অনুবাদঃ
আমরা যে বিস্তীর্ণ সুখ যাচ্ঞা ক’রি, সবিতা, ভগ, মিত্র, বরুণ ও অর্যমা আমাদের সেই সুখ প্রদান করুন ॥৩॥


  • আর্যসমাজের মূর্ধণ্য বিদ্বান পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্মাকৃতঃ

(সবিতা) সংসারের উৎপাদক (ভগঃ) ভজনীয় (বরুণঃ) বরণীয় (মিত্রঃ) সর্বস্নেহী (অর্য্যমাঃ) শ্রেষ্ঠগণ দ্বারা মাননীয় পরমাত্মা (নঃ) আমাদের (সপ্রথঃ) সর্বত্র বিস্তীর্ণ (তৎ) সেই (শর্ম) কল্যাণ বা গৃহ বা সুখ-শান্তি (সু+যচ্ছন্তু) উত্তমভাবে প্রদান করন  (যৎ)  যা আমরা (ঈমহে) যাচ্ঞা করি ॥৩॥


অপপ্রচারঃ
স্যাম অস্যসচামে মৃত্তিকাচামে কিরয়সচামে পর্বতাসচামে। শিখাতাসচামে বানস্পত্যচামে হিরন্যস্যচামে অপ্সচামে। শাম্চ্যমে লোহশ্চ্যমে শিষ্যশ্চমে যজ্ঞেন কল্পতাম্॥"

অনুবাদঃ-* মৃত্তিকা(মাটি), পর্বত(পাথর), শিষা(ধাতু), বালুকা(বালি), বানস্পত্য(বৃক্ষ বা কাঠ), হিরণ্য(সোনা) শিষ্য(শিষা) প্রভৃতি দ্বারা ঈশ্বরের শরীর রচনা কর, যা যজ্ঞের বিকল্প উপাসনা হিসেবে বিবেচ্য।"
                         ──(যজুর্বেদঃ-
                             অধ্যায় ৮, মন্ত্র ১৬)

জবাবঃ প্রথমতঃ মন্ত্রের রেফারেন্স ভুল । এটা যজুর্বেদ ১৮ অধ্যায়ের ১৩ নং মন্ত্র হবে । দ্বিতীয়তঃ এখানে মূর্তির কোন প্রসঙ্গই নেই । আমরা ক্রমান্বয়ে ১১-১৫ এই ৫টি মন্ত্রের তাদেরই মান্য ৩ টি অনুবাদ দেখি ।

বিত্তঞ্চ মে বেদ্যঞ্চ মে ভূতঞ্চ মে ভবিষ্যচ্চ মে সুগঞ্চ মে সুপথ্যঞ্চ ম ঋদ্ধঞ্চ ম ঋদ্ধিশ্চ মে ক্ল়্প্তঞ্চ মে ক্লৃপ্তিশ্চ মে মতিশ্চ মে সুমতিশ্চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ ॥
ব্রীহয়শ্চ মে যবাশ্চ মে মাষাশ্চ মে তিলাশ্চ মে মুদ্রাশ্চ মে খল্বাশ্চ মে প্রিয়ঙ্গবশ্চ মে ণবশ্চ মে শ্যামাকাশ্চ মে নীবারাশ্চ মে গোধূমাশ্চ মে মসূরাশ্চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ ॥
অশ্মা চ মে মৃত্তিকা চ মে গিরয়শ্চ মে পর্বতাশ্চ মে সিকতাশ্চ মে বনস্পতয়শ্চ মে হিরণ্যঞ্চ মে যশ্চ মে শ্যামঞ্চ মে লোহঞ্চ মে সীসঞ্চ মে ত্রপু চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ ॥
অগ্নিশ্চ মঽআপশ্চ মে বীরুধশ্চ মঽওষধয়শ্চ মে কৃষ্টপচ্যাশ্চ মে কৃষ্টপচ্যাশ্চ মে গ্রাম্যাশ্চ মে পশবঽআরণ্যাশ্চ মে বিত্তং চ মে বিত্তিশ্চ মে ভূতঞ্চ মে ভূতিশ্চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ ॥
বসু চ মে বসতিশ্চ মে কর্ম চ মে শক্তিশ্চ মে র্থশ্চ মঽএমশ্চ মঽইত্যা চ মে গতিশ্চ মে যজ্ঞেন কল্পন্তাম্ ॥
যজুর্বেদ ১৮।১১-১৫



  • বিজনবিহারী গোস্বামীঃ

প্রাপ্য বস্তু, পূর্বসিদ্ধ ক্ষেত্রাদি, ভবিষ্যতে লভ্য ক্ষেত্রাদি, সুখগম্য দেশ, সুপথ্য, সমৃদ্ধ যজ্ঞফল, যজ্ঞাদির সমৃদ্ধি, কার্মক্ষম দ্রব্যাদি, স্বকার্যের সামর্থ্য, পদার্থমাত্রের নিশ্চয়, দুর্ঘটকার্যের নিশ্চয়-এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার সম্পন্ন হোক । ১১।
ব্রীহি, যব, মাষ, তিল, মুদগ, চণক, প্রিয়ঙ্গব, চীণক, শ্যামাক, নীবার, গোধূম, মসূর—এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার সম্পন্ন হোক । ১২।
পাষাণ, মৃত্তিকা, পাহাড়, পর্বত, বালুকা, বনস্পতি, স্বর্ণ, রৌপ্য, লৌহ, তাম্র, সীসা, ত্রপু- কার্যবিশেষে এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার সম্পন্ন হোক। ১৩।
অগ্নি, জল, গূলা, ওষধি, কৃষিকার্য সম্পন্ন ও অকৃষিকার্যসম্পন্ন শস্যাদি, গ্রাম্য ও আরণ্য পশু, পূর্বলব্ধ ও ভাবি লব্ধ ধন, জাত পুত্রাদি, ঐশ্বর্য-এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার সম্পন্ন হোক। ১৪।
গবাদি ধন, বাসযোগ্য গৃহ, অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ও তার অনুষ্ঠানে সামর্থ্য, কাম্য পদার্থ, প্রাপ্তব্য অর্থ, প্রাপ্তির উপায়, ইষ্টপ্রাপ্তি-এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার সম্পন্ন হোক । ১৫।





  • দূর্গাদাস লাহিড়ী ও দিলীপ মুখোপাধ্যায় কৃত অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশিত অনুবাদঃ

প্ৰাপ্ত ধন, প্ৰাপ্তব্য ধন, পূর্বসিদ্ধ ক্ষেত্র ইত্যাদি, প্রাপ্তব্য ক্ষেত্র ইত্যাদি, সুখগম্য প্রদেশ, সুপথ্য, সমৃদ্ধ যজ্ঞফল, যজ্ঞ ইত্যাদির সমৃদ্ধি, দুগ্ধ ইত্যাদি, স্বকার্যসাধনে সামর্থ্য, মতি (পদার্থমাত্র-নিশ্চয়) এবং সুমতি (দুর্ঘটনাকার্যসমূহকে নিশ্চয়করণের বুদ্ধি)—এগুলি আমার যজ্ঞে সিদ্ধ হোক । ১১।
ধান্য, যব, কলাই, তিল, মুগ, ছোলা, প্রিয়ঙ্গব, চীনক, শ্যামক, নীবার, গৌধূম এবং মসুর—এগুলি আমার যজ্ঞের দ্বারা সম্প্ৰাপ্ত হোক । ১২।
প্রস্তর, মৃত্তিকা, পর্বত, মহাপর্বত বালু, বনস্পতিসকল, সুবর্ণ, রৌপ্য, তাম্র লৌহ, সীসা ও ত্রপু (রঙ্গ বা রাং)— এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার প্রাপ্ত হোক । ১৩।
অগ্নি, জল, লতাসমূহ, ওষধিসকল, কৃষি হ’তে উৎপন্ন শস্য ইত্যাদি, বিনা কৃষিকর্মে জাত শস্য ইত্যাদি, গ্রামীণ পশু, আরণ্য পশু, বিত্ত, ভাবি লাভ (ভবিষ্যতে লব্ধব্য সামগ্ৰী), পূর্বলাভ তথা স্ব-অর্জিত ঐশ্বর্য এগুলি যজ্ঞের দ্বারা আমার প্ৰাপ্ত হোক । ১৪।
গো-ইত্যাদি ধন, সুন্দর বসতি (বাসস্থান), অগ্নিহোত্র ইত্যাদি কর্মের শক্তি, অর্থ (কাম্য অর্থ), প্রাপ্তব্য অর্থ, ইষ্ট প্রাপ্তির উপায়, এবং ইষ্টপ্রাপ্তি এসকলই আমার যজ্ঞের দ্বারা সিদ্ধ হোক । ১৫।




মহীধর উব্বট সত্যব্রত সামশ্রমী সবার ভাষ্য অনুবাদই একই অর্থ প্রকাশ করে  ।

লক্ষ্যণীয় এখানে মূলতঃ যেটি বলা হচ্ছে যে জাগতিক বিবিধ উপাদান ও দ্রব্যাদি যেন আমরা যজ্ঞের মাধ্যমে সুসম্পন্ন , প্রাপ্ত ও সিদ্ধ করতে পারি । এখানে প্রতিমা নির্মাণের কোন প্রসঙ্গই নেই । যারা কিনা মাঝখানে থেকে একটা মন্ত্রের সাথে মিলিয়ে বলছেন মাটি, পাথর , স্বর্ণ দিয়ে মূর্তি বানাতে হবে তাদের কাছে প্রশ্ন তবে  ধান - যব - কলাই - মসুর - ছোলা [ মন্ত্র ১২ ] ,  অগ্নি - জল - লতা - গ্রামীণ ও আরণ্য পশু  [ মন্ত্র ১৪ ] ,  গোরু - ঐশ্বর্য  [ মন্ত্র ১৫ ] দ্বারা কিভাবে মূর্তি তৈরী হবে ?  এই অধ্যায়ের মন্ত্র ১ এ বলাই হয়েছে যে অন্ন, ধ্যান, জ্যোতি সবই যজ্ঞ দ্বারা প্রাপ্ত হবে তথা যজ্ঞ সম্পাদনের দ্বারা এসব লাভ করবে । তবে এসবও কি প্রতিমা ?  ছলকারীগণ এতোটা মূর্খ কিভাবে হয় তা আমাদের বোধের অগম্য । অবশ্য স্বার্থান্বেষীগণ আপন দোষ দেখেন না ।

অপপ্রচারঃ
"এহষমা নোম মাতিষ শমা ভবতুতে তননুঃ।"
অনুবাদঃ-* এই পবিত্র মাটি, ও প্রস্তরে তুমি(ঈশ্বর) এসো,এই মৃত্তিকা দিয়ে তোমার শরীর নির্মিত হোক।"
                       ──(অথর্ববেদঃ- কাণ্ড ২,
                             অনুবাক ৩, মন্ত্র ৪)

জবাবঃ কথিত মন্ত্রটি দীর্ঘায়ু প্রাপ্তির জন্য ব্রহ্মচারীকে বলা হয়েছে । ঈশ্বরকে নয় । মূর্খ পৌরাণিকগণের ধৃষ্টতা দেখুন । এখানে মাটির কোন প্রসঙ্গই নেই তাও মাটি ঢুকিয়েছে কেননা প্রতিমা মাটি দিয়ে তারা বানায় এই স্বার্থে  । আবার মন্ত্রও দিয়েছে অর্ধেক আর অনুবাদে বাকিটা নিজেদের মত সাজিয়েছে । মন্ত্রের শেষে  " শরদঃ শতম্ " অর্থাৎ শত বৎসরা আয়ুষ্মান থাকার কথা রয়েছে । অজর অমর পরমেশ্বরকে শত বৎসর আয়ুষ্মান থাকার এহেন কল্পনা মূর্খাতিমূর্খ ও মিথ্যাচারী পৌরাণিকদের দ্বারাই সম্ভব । এখন তাদেরই ভাষ্য-অনুবাদ দিয়ে হাতে হারিকেন ধরাচ্ছি আমরা দেখুন -

এহ্যশ্মানমা তিষ্ঠাশ্মা ভবতু তে তনূঃ।
কৃণ্বন্তু বিশ্বে দেবা আয়ুষ্টে শরদঃ শতম্ ॥
অথর্ববেদ ২।১৩।৪  [ ২।৩।৩।৪ ]


  • বিজনবিহারী গোস্বামীঃ

হে মাণবক, এস, ডান পা দিয়ে প্রস্তরখন্ড আক্রমণ কর। তোমার শরীর রোগাদি বিনির্মুক্ত হয়ে পাথরের মত শক্ত হোক। বিশ্বদেবগণ তোমাকে শতবছর পরমায়ু দিক ৷ ৪ ॥


টীকাঃ১-৫। 'আয়ুর্দাঃ' ইত্যাদি সুক্ত গোদানাখ্য সংস্কার কর্মে শান্তিজল দিতে বলতে হয়। এ কর্মে এ সুক্তের দ্বারা আজ্যাহুতি দিয়ে ব্রহ্মচারীর মাথায় জলের ছিটে দিতে হয়। ‘পরি ধত্ত’ ইত্যাদি মন্দ্রে নতুন বস্ত্র মাণবককে দেবার বিধান ভাষ্যনুক্রমণিকায় দৃষ্ট হয়। 



  • দূর্গাদাস লাহিড়ী ও দিলীপ মুখোপাধ্যায় কৃত অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশিত অনুবাদঃ

হে বালক! আপন দক্ষিণ পাদের দ্বারা এই পাষাণখণ্ডের উপর আঘাত করো এবং এর ন্যায় দৃঢ় এবং নিরোগ থাকো । সকল দেবগণ তোমাকে শত বৎসর আয়ুষ্মান করুন  ৪॥
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ ‘আয়ুর্দাঃ’ ইতি সূক্তং গোদানাখ্যে সংস্কারকর্মণি শাস্ত্যদকে অনুযোজয়েৎ। তত্রৈব কর্মণি অনেনৈব সূক্তেন আজ্যং হুত্বা ব্রহ্মচারিণো মূর্ধি সম্পাতান আনয়েৎ । ইত্যাদি।। (২কা. ৩অ. তস্) ।।
টীকা – মূলতঃ দীর্ঘায়ুপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে এই সূক্তের বিনিয়োগ নির্দিষ্ট আছে । তবে গোদানাখ্য সংস্কার কর্মে শান্তিজল প্রদানে এর প্রয়োগ আছে । এই গোদানাখ্য কর্মে এই সৃক্তমন্ত্রের দ্বারা আজ্যাহুতি প্রদান ক'রে ব্রহ্মচারী বালকের মস্তকে জলসিঞ্চন করা হয় ।...ইত্যাদি ।






অপপ্রচারঃ
"সহস্র প্রতিমূর্তি বিশ্বরূপম্
পরম ঈশ্বর বিবির্ধ প্রতিমাঃ॥"
অনুবাদঃ-* এক পরম ঈশ্বরের অনেক রূপের প্রতিমা বা বিশ্বে রচিত হোক।
                           ──(যজুর্বেদঃ
                           অধ্যায় ১৩, মন্ত্র ৪১)

  
জবাবঃ পৌরাণিকদের গৃহের সম্ভবতঃ বেদ মন্ত্র তৈরী করা হয় । নতুবা এহেন বানোয়াট মন্ত্র তারা কিভাবে তৈরী করতে পারে সেটিই আশ্চর্যজনক । সম্পূর্ণ মন্ত্রটি দেখুন -

আদিত্যঙ্গর্ভম্পয়সা সমঙ্ধি সহস্রস্য প্রতিমাঁ বিশ্বরূপম্ ।
পরি বৃঙ্ধি হরসা মাভি মঁস্থাঃ শতায়ুষঙ্কৃণুহি চীয়মানঃ ॥

যজুর্বেদ ১৩।৪১



  • বিজনবিহারী গোস্বামীঃ
হে পুরুষ, পশুদের গ্রাহক, বহুধনের প্রদাতা, সকল রূপের প্রকাশক চিত্যাগ্নি জলে রচনা কর। অগ্নির তেজের দ্বারা যজমানকে বর্ধন কর; যজমানের হিংসা করো না, গৃহীত হয়ে তুমি তাকে শতায়ু কর ।


  • দূর্গাদাস লাহিড়ী ও দিলীপ মুখোপাধ্যায় কৃত অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশিত অনুবাদঃ

হে মানব শির! তুমি এই গ্রহণশীল অগ্নিকে জলে সিঞ্চিত করো, যে অগ্নি সহস্রের দাতা এবং বিবিধ রূপের উৎপন্নকারী। অগ্নির তেজে এই যজমানকে জীবিত রাখো। তুমি এঁকে হিংসা করো না। চিতিতে গলিত (বা গৃহীত) হয়ে যাওয়া, হে শির! তুমি এই যজমানকে শত বর্ষ আয়ুশালী করো৷৷৪১৷৷




দেখুন তো । এখানে কোথাও ঈশ্বরের প্রতিমা আছে পেলেন কিনা ৷

অপপ্রচারঃ
"হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাপিহিতং মুখম্।
তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে॥"

অনুবাদঃ-*  হে প্রভু! হে সর্বজীবপালক, আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার প্রকৃত মুখরাবিন্দ আচ্ছাদিত। কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তের নিকট নিজেকে প্রদর্শিত করুন।"
                    ──(ঈষোপনিষদ মন্ত্র-১৫)
     
"হে প্রভু, হে আদিকবি ও বিশ্বপালক, হে যম, শুদ্ধ ভক্তদের পরম গতি এবং প্রজাপতিদের সুহৃদ, কৃপা করে আপনার অপ্রাকৃত রশ্মির জ্যোতি অপসারণ করুন, যাতে, আপনার আনন্দময় রূপ আমি দর্শন করতে পারি। আপনি সনাতন পুরুষোত্তম ভগবান। সূর্য ও সূর্যকিরণের সম্বন্ধের মতো আপনার সঙ্গে আমি সম্বন্ধযুক্ত।"
                ──(ঈশোপনিষদ, মন্ত্র১৬)

জবাবঃ আমরা উক্ত মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ দেখি -




প্রশ্ন হচ্ছে -
১. "হে প্রভু, হে আদিকবি ও বিশ্বপালক, হে যম, " ,  " শুদ্ধ ভক্তদের" ,  " অপ্রাকৃত রশ্মি" এসব পদ মন্ত্রের কোথায় আছে ? 
২. " সূর্য ও সূর্যকিরণের সম্বন্ধের মতো আপনার সঙ্গে আমি সম্বন্ধযুক্ত। " এই বাক্যটি কোন অংশের অর্থ পদার্থ সহ দেখান ।

অতঃ উক্ত অনুবাদটিই যে ভ্রান্ত ও বানোয়াট প্রমাণিত ।

অপপ্রচারঃ

  "সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু, সহস্র পদ বিশিষ্ট সেই পরম পুরুষ  সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে পরিব্যাপ্ত করেও  দশ অঙুলি পরিসরের মধ্যে অবস্থান করছেন।"
         ──(ঋকবেদ- ১০ম মণ্ডল, ৯০/১)
     
      "সর্বত্র হস্ত-বিশিষ্ট,সর্বত্র নেত্র-বিশিষ্ট, সর্বত্র মস্তক ও মুখ বিশিষ্ট, সর্বত্র কর্ণ বিশিষ্ট সেই পরমাত্মা এই বিশ্বচরাচরের সব কিছুতেই পরিব্যপ্ত হয়ে রয়েছেন।"
                         ──(শ্বেতাশ্বতর
                              উপনিষদ ৩/১৬)

"সর্বত্র চোখ বিশিষ্ট, তথা সর্বত্র মুখ বিশিষ্ট, সর্বত্র হস্ত বিশিষ্ট এবং সর্বত্র পদ বিশিষ্ট, স্বর্গ ও মর্ত্যের সৃষ্টিকর্তা সেই একমাত্র পরমেশ্বর প্রাণীকুলকে হস্ত, ডানা ইত্যাদি প্রদান করেছেন।"
                       ──(ঋকবেদ-১০ম মণ্ডল
                                   ৮১/৩))

     
জবাবঃ

বেদে পুরুষ বলতে কি বোঝানো হয়েছে ও সহস্র-হস্ত - মুখের অর্থ পড়ুন এখানে - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/12/blog-post.html?m=1

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের উক্ত অধ্যায়ের সম্পূর্ণ অর্থ পড়ুন এখানে - http://back2thevedas.blogspot.com/2018/03/blog-post_75.html?m=0

অপপ্রচারঃ
ভগবানের প্রতি যিনি অপ্রতিহতা ভক্তিসম্পন্ন এবং শ্রীগুরুদেবের প্রতিও তদরূপ, তিনি পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে দর্শন করতে পারেন।"
                         ──(শ্বেতাশ্বতর
                        উপনিষদ-৬/২৩)

ঈশ্বরের এক বিরাট, অদ্ভুত, অপ্রাকৃত এবং দিব্য রূপ রয়েছে।পুরুষ অর্থে ব্যক্তিকে বোঝায়।
        "এই পরব্রহ্ম পরমাত্মাকে না প্রবচনের মাধ্যমে, না বুদ্ধি দিয়ে, না বহু শ্রবণের মাধ্যমে প্রাপ্ত করা যেতে পারে। ইনি যাঁকে স্বীকার করে নেন, একমাত্র তিনিই তাঁকে প্রাপ্ত হতে পারেন। এই পরমাত্মা তাঁর জন্য, তাঁর যথার্থ স্বরূপটিকে প্রকট করে দেন।"
              ──(কঠোপনিষদ-১/২/২৩)

জবাবঃ দর্শন ,  সাক্ষাৎ এর প্রকৃত তাৎপর্য জানতে এই পোস্টের শেষে দেওয়া লিংকসমূহের মধ্যে বরুণ ও ইন্দ্র-নেম সম্পৃক্ত পোস্ট দুটি পড়ুন  ।

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ বাক্যের তাৎপর্য -



কঠোপনিষদ বাক্যের তাৎপর্য -




কঠোপনিষদে কৃত তনু শব্দের অর্থ নিয়ে অনেকের জ্বলতে পারে । তাদের বার্নল এখানে পাবেন -

টীকাঃ মন্ত্রে "তনূ" শব্দ সাকারবাদীরা পরমাত্মাকে শরীরধারী সিদ্ধ করেন। কিন্তু "তনূ বিস্তারে (তনা০) ধাতোর্লোটি রূপাণি। 'উতশ্চ প্রত্যয়াচ্ছন্দো বা বচনম্' অষ্টা০ ৬।৪।১০৬ সূত্রেণ ছন্দসি হর্লোপে বিকল্প। শতপথ ব্রাহ্মণ অনুসারে "আত্মা বৈ তনূ" (শত০ ৬।৭।২।৬) অথবা তন্ (বিস্তার করা) + ঊ = তনূ, অর্থাৎ পরমাত্মার বিস্তৃত আত্মস্বরূপ।

বিস্তারিত পড়ুন - 

http://back2thevedas.blogspot.com/2017/07/blog-post_10.html?m=1

অপপ্রচারঃ
সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্মতর এবং মহৎ থেকেও মহত্তর সেই পরমাত্মা জীবের হৃদয়রূপ গুহায় বিরাজমান রয়েছেন। তাঁরই  কৃপায় কোনও ভাগ্যবান জীব দুঃখ  ও শোক থেকে মুক্ত হয়ে তাঁকে দর্শন করতে সক্ষম হন।"
              ──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৩/২০)

   
জবাবঃ




অপপ্রচারঃ
তুমি স্ত্রী, তুমি পুরুষ, তুমিই কুমার, অথবা কুমারী। তুমিই বৃদ্ধরূপ ধারণ করে লাঠির সাহায্যে চল। আবার তুমিই বিরাটরূপে প্রকট হয়ে সর্বদিকে মুখবিশিষ্ট হয়ে যাও।"
               ──(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ-৪/৩)


জবাবঃ বাহ । যে পরমাত্মাকে -

স পর্যগাছুক্রমকায়মব্রণম স্নাবিরং শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধ কবিৰ্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভুর্যাথা তথ্যতােহর্থাষ্যদধাচ্ছা শ্বশীভ্যঃ সমাভ্যঃ ॥  (যজুৰ্বেদ ৪০/৮ )
 
বঙ্গানুবাদঃ- পরমাত্মা সর্বব্যাপক , সর্বশক্তিমান্ , শরীররহিত , রােগরহিত , জন্মরহিত , শুদ্ধ , নিস্পাপ , সর্বজ্ঞ , অন্তর্যামী , দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি । তিনি তাঁহার শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন ।
ঈশ উপনিষদ  —৮ নং শ্লোক(অকায়ম্ বা শরীর রহিত)
কেন   উপনিষদ -১/৩ (ঈশ্বরকে চোখে দেখা যায় না)
কেন  উপনিষদ -১/৭ (যেসব দৃশ্যমান বস্তুর লোকে উপাসনা করে সেগুলো ব্রহ্ম বা ঈশ্বর নয়।)
কঠ উপনিষদ  —১/২/২২(অশরীরী)
কঠ উপনিষদ   —১/৩/১৫(অরূপ বা রূপহীন)
কঠ উপনিষদ  —২/৩/৮(অলিঙ্গ বা লিঙ্গহীন বা চিহ্নহীন)
কঠ উপনিষদ -২/৩/৯(চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না)
কঠ  উপনিষদ —২/৩/১২(ব্রহ্ম-বাক্য,মন,চক্ষুর অগোচর)
প্রশ্ন  উপনিষদ -৪/১০(অশরীরী)
মুণ্ডুক উপনিষদ  —১/১/৬(অপাণিপাদম্ অচক্ষুশোত্রম্ অর্থাৎ ব্রহ্মের হাত,পা,চক্ষু,কর্ণ নেই।)
মুণ্ডুক উপনিষদ  —২/১/২(অমূর্ত)
মুণ্ডুক  উপনিষদ —৩/১/৭(অচিন্ত্যরূপ বা ব্রহ্মের রূপ চিন্তা করা সম্ভব নয়)
মুণ্ডুক উপনিষদ —৩/১/৮(চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না।)
তৈত্তেরীয়  উপনিষদ —২/৭/২(ব্রহ্ম দর্শনাতীত এবং অশরীরী)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ  —২/১৫(জন্ম রহিত)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ  —৩/১০(অরূপ বা রূপহীন)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ  —৩/১৯(অপাণিপাদম্ অর্থাৎ ব্রহ্মের হাত পা নেই)
শ্বেতাশ্বতর  উপনিষদ —৪/১(বর্ণ রহিত)
শ্বেতাশ্বতর  উপনিষদ —৪/১৯(মূর্তি বা প্রতিমা নেই)
শ্বেতাশ্বতর  উপনিষদ —৪/২০(চক্ষু দিয়ে দেখা যায় না এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নন)
শ্বেতাশ্বতর  উপনিষদ —৪/২১(জন্ম রহিত)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ  —৫/১৪(অশরীরী)
শ্বেতাশ্বতর  উপনিষদ —৬/৮(ব্রহ্মের শরীর এবং ইন্দ্রিয় নেই)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ  —৬/৯(লিঙ্গ বা চিহ্ন নাই এবং তাঁর কোন জনক বা পিতা নেই)

ইত্যাদি বেদ ও উপনিষদে যাকে বারংবার অজর , অমর বলা হলো এখানে তারা তাকেই বৃদ্ধ - ছেলে - মেয়ে বানিয়ে দিলো !  ধন্য পৌরাণিকদের ঈশ্বর কনসেপ্ট ।

উক্ত উপনিষদ বাক্যের অর্থ -



অপপ্রচারঃ
"ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য যস্য নাম মহৎযশঃ
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষ॥"
*🌀❈🌀অনুবাদঃ-*  "কেউ তাঁর আদি, মধ্য, অন্ত উপলব্ধি করতে পারে না। তিনি গ্রাহ্যাতীত, তাঁর কোনও উপমা নেই, তাঁর নাম অনন্ত মহিমাপূর্ণ॥"
      ──এখানে উল্লেখ্য যে, "প্রতিমা" অর্থে "তুলনা" বোঝানো হয়েছে! "ন তস্য প্রতিমা অস্তি" অর্থাৎ, "তাঁর (ঈশ্বরের) কোনো তুলনা নেই।"
                   ──(শুক্ল যজুর্বেদ-৩২/৩)
   )

জবাবঃ এর প্রকৃত অর্থ সমস্ত প্রমাণ সহ দেখুন এই লিংকে - http://back2thevedas.blogspot.com/2019/12/blog-post_37.html?m=1

এছাড়াও বেদ মন্ত্রে বরুণ , রুদ্র প্রভৃতির অর্থ বিবেচনা না করেই নিজেদের কদর্থের এমন বাক্যবিন্যাস রচনা করে পরে সেই অর্থের জালে নিজেরাই আটকা পড়ে । এমন কিছু অপপ্রচারের জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2021/01/blog-post.html?m=1

এছাড়াও কল্পসূত্রে তারা দেবায়তন প্রভৃতি শব্দ দেখিয়ে মূর্তিপূজা আছে বলে দাবি করে । এর জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/06/blog-post.html?m=1

ধর্মচক্র ও বিনিয়োগের নামে কিছু মূর্খ মিথ্যাবাদী যারা কিনা নামের আগে মিথ্যে ড. যুক্ত করে মানবগণকে বিভ্রান্ত করছে সেসব অনার্যদের দাবির জবাব দেখুন - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/06/blog-post_28.html?m=1

বরুণের রথ পৃথিবীতে দেখা যায় এই নিয়ে জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/05/blog-post_29.html?m=1

রূপং রূপং.. আদি মন্ত্র নিয়ে অপপ্রচারের জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/04/blog-post_26.html?m=1

ইন্দ্র ও নেম নিয়ে অপপ্রচারের জবাব - http://back2thevedas.blogspot.com/2020/04/blog-post.html?m=1