আমাদের সনাতন ধর্মের যাত্রা বেদের হাত ধরে শুরু হয়েছে।যুগে যুগে মুনি ঋষিরা বেদের পথেরই অনুবর্ত্তন করে গিয়েছেন। তাই বেদ গোটা মানব জাতির জন্য অলঙ্ঘনিয় জীবন বিধান। মনু তার বচনে বেদের পথকেই কল্যাণ স্বরূপ বলে স্বীকার করে গিয়েছেন। আসুন দেখে নেই মনুর দৃষ্টিতে বেদ এবং বেদ বিরুদ্ধ শাস্ত্র সমন্ধ্যে-
=> বেদ সবার চক্ষু অর্থাৎ প্রথপ্রদর্শক -
পিতৃদেবমুষ্যাণাং বেদশ্চচক্ষুঃ সনাতনম।
অশকয়ং চাপ্রমেয়ং চ বেদশাস্ত্রমিতি স্থিতি।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৪)
পদার্থঃ (পিতৃ-দেব-মনুষ্যাণাম) পিতৃ এবং পালক পিতৃ আদি বিদ্বান এবং অন্যান্য মনুষ্যদের জন্য (বেদঃ সনাতন চক্ষু) বেদে সনাতন চক্ষু = পথপ্রদর্শক (চ) ইহা (অশকয়ম) অক্ষম অর্থাৎ যাহা কোন পুরুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এজন্য অপৌরুষেয়। (চ) তথা (অপ্রমেয়) অনন্ত সত্য বিদ্যা দ্বারা যুক্ত (ইতি স্থিতি) এই নিশ্চিতভাবে স্বীকৃত।
=> বেদ বিরুদ্ধ শাস্ত্র অপ্রামানিক -
যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কাশ্চ কুহষ্টয়ঃ।
সর্বাস্তা নিষ্ফলাং প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাং স্মৃতা।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৫)
পদার্থঃ (যা, স্মৃতয়ঃ বেদবাহ্যাঃ) যেই গ্রন্থ বেদবিরুদ্ধ ( যাঃ চ কাঃ চ কুতষ্টয়ঃ) তাহা কুদৃষ্টিমূলক পুরুষ তৈরী করেছে এবং সংসার মধ্যে নিমজ্জিতকারী (তাং সর্বা নিষ্ফলাঃ) ঐ সব নিষ্ফল (প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি স্মৃতাঃ) অসত্য, অন্ধকাররূপ এই লোকে এবং পরলোকে দুঃখদায়ক।
=> বেদ বিরুদ্ধ শাস্ত্র অস্থায়ী-
উত্পদ্যন্তে চ্যবন্তে চ যান্যতোন্যানি কানিচিত।
তান্যর্বাককালিকতয়া নিষ্ফলান্যনুতানি চ।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৬)
পদার্থঃ ( যানি- অনঃ অন্যানি কানিচিত উৎপদ্যন্তে) যে এই বেদ বিরুদ্ধ শাস্ত্র উৎপন্ন করেছে ( তানি- অর্বাক কালিকতয়া চবন্তে) ঐ সব আধুনিক হওয়ার কারনে শীঘ্র নষ্ট হয়ে যাবে ( নিষ্ফলানি চ অনুতানি) উহা মানা নিষ্ফল এবং মিথা।
=> বেদে বর্ণ, আশ্রম, লোক, কাল আদির জ্ঞান-
চাতুর্বণ্য ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চাশ্রমাঃ পৃথক।
ভূতং ভব্যং ভবিষ্যং চ সর্ব বেদাৎপ্রসিধ্যতি।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৭)
পদার্থঃ (চাতুর্বণম) ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য, শুদ্র এই চার বর্ণ এবং ইহার ব্যবস্থা ( ত্রয়ঃ লোক) পৃথিবী, আকাশ এবং দ্যুলোক অর্থাৎ সমস্ত ভূমন্ডল গ্রহ আদি (চত্বারঃ আশ্রমাঃ পৃথক) ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ,বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস এই চারি আশ্রম কে পৃথক পৃথক বিধান ( চ ভুত্যং ভব্যং ভবিষ্যম) এবং ভুত, ভবিষ্যত, বর্তমান এবং কালের বিদ্যা ( সর্ব বেদাত প্রসিদ্ধতি) ইহা সব বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ প্রকাশ এবং জ্ঞান অর্থাৎ এই সব ব্যবস্থা এবং বিদ্যার জ্ঞান বেদ দ্বারাই হয়।
=> বেদে পঞ্চভূত আদি সুক্ষ্ম শক্তির জ্ঞান-
শব্দঃ স্পর্শশ্চ রুপং চ রসো গন্ধশ্চ পঞ্চম।
বেদাদেব প্রসূয়ন্তে প্রসূতিগুণকর্মন্ত।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৮)
পদার্থঃ (শব্দঃ স্পর্শঃ রূপং রসঃ পঞ্চম গন্ধ) শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং পঞ্চম গন্ধ এই ( প্রসূতি- গুন - কর্মন্তঃ) উৎপত্তি, গুন এবং কর্ম্মের জ্ঞানরূপ ( বেদাত এব প্রূযন্তে) বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ= বিজ্ঞাত অর্থাৎ এই তত্তশক্তির উৎপত্তিবাস ইহার গুণের জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান এবং উৎপন্ন সমস্ত জড় চেতন সংসারের জ্ঞান বিজ্ঞান বেদ দ্বারা প্রাপ্ত হয়।
=> বেদ সর্ব প্রাণী ধাতা এবং সুখের সাধন -
বিভতি সর্বভুতানি বেদশাস্ত্রং সনাতনম।
তস্মাদেতত্পরং মন্যে যজ্জন্তোরস্য সাধনম।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।৯৯)
পদার্থঃ (সনাতনং বেদশাস্ত্রম) এই যে সনাতন বেদশাস্ত্র ইহা ( সর্ব ভুতানি বিভর্তি) সর্ব বিদ্যার জ্ঞান দ্বারা সম্পূর্ণ প্রাণীদের ধারন এবং সর্ব সুখ প্রাপ্ত করায়। ( তস্মাত এতত পরং মন্যে) এই কারনে [মনু আদি] আমরা সবাই তাহাকে উত্তমরূপে মানি এবং এই প্রকারে মানতে চাই (যত) কারন (জন্তোঃ অস্য সাধনম) সর্ব জীবের সুখের সাধন ইহাই।
=> বেদবেন্তা সকল রাজা সেনাপতি ন্যায়াধীশ-
সৈনপত্যং চ রাজ্যং চ দন্ডনেতৃত্বমেব চ।
সর্বলোকাধিপত্যং চ বেদশাস্ত্র বিদর্হতি।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।১০০)
পদার্থঃ (সৈনাপত্যম) সব সেনা (চ) এবং (রাজ্যম) সেনাপতির উপর রাজ্যাধিকার (দন্ডনেতৃত্বম এব) দন্ড দেবার ব্যবস্থা , সর্ব কার্যের অধিপত্য ( চ) এবং (সর্বলোক অধিপত্যম) সবার উপর বর্তমান সর্বাধীশ, রাজ্যাধিকার এই চার অধিকারের মধ্যে ( বেদশাস্ত্রবিদ অর্হতি) সম্পূর্ন বেদশাস্ত্রে মধ্যে প্রবীণ, পূর্ণ, বিদ্যাবান, ধর্মাত্মা, জীতেন্দ্রীয়, সুশীল জনকে স্থাপিত করতে চায়। অর্থাৎ মুখ্য সেনাপতি , মুখ্য রাজ্যাধি কারী, মুখ্য ন্যায়াধীশ এবং প্রধান রাজা এই চার বিদ্বান হতে চায়।
=> বেদ জ্ঞান দ্বারা পরমগতি এবং প্রগতি-
বেদশাস্ত্রর্থতত্ত্বজ্ঞো যত্র তত্রাশ্রমে বসন।
ইহৈব লোকে তিষ্ঠন্স ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২।১০২)
পদার্থঃ (বেদশাস্ত্রর্থতত্ত্বজ্ঞঃ) বেদশাস্ত্রের জ্ঞাতা বিদ্বান (যত্র তত্র আশ্রমে বসন) কোন আশ্রমের মধ্যে অবস্থান করে (ইহ এব লোকে তিষ্ঠন) এই বর্তমান জন্মের মধ্যে ( ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে) ব্রহ্মপ্রাপ্তির জন্য অধিকাধিক সামর্থযুক্ত হয়।
[বিঃ দ্রঃ বাজারে প্রচলিত মনুস্মৃতি অনেকাংশে প্রক্ষিপ্ত। মনুস্মৃতির মোট শ্লোক সংখ্যা ২৬৮৫। প্রক্ষিপ্ত অনুসন্ধানের পর ১৪৭১ শ্লোক প্রক্ষিপ্ত প্রমাণিত হয়েছে। এবং ১২১৪ টি মৌলিক শ্লোক বের করা হয়েছে। ডঃ সুরেন্দ্রকুমার (আচার্য) এই ১২১৪ মৌলিক শ্লোক নিয়ে বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি প্রণয়ন করেছেন।]
প্রনাম সবাইকে.. পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর সর্ব প্রথম কোন ধর্মের অনুসারী ছিলো মানব জাতি?
ReplyDeleteসনাতন ধর্মের আগে কি কোনো মতবাদ বা ধর্ম ছিলো.…?