https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

রামায়ন মিমাংসাঃ মাতা সীতার উৎপত্তি

Monday, November 14, 2016
মাতা সীতার উৎপত্তি সমন্ধ্যে একটি ঘটনা বেশ প্রচলিত আছে। রাজা জনক না কি লাঙ্গল দিয়ে ভূমি চাষ করতে গিয়ে ভূমির মধ্যে থেকে  এক কণ্যা প্রাপ্ত হন।  এবং তার নাম রাখেন সীতা।  এই ঘটনা অসম্ভব হবার কারনে সম্পূর্ণ প্রক্ষীপ্ত।
এই বিষয়ে এক প্রসিদ্ধ পৌরাণিক বিদ্বান স্বামী করপাত্রী জী তার স্বরচিত " রামায়ন মিমাংসা" এর মধ্যে লিখেছে - পুরাণকার কোন ব্যক্তির নাম সমজ্ঞানের জন্য প্রস্তুত করে নেয়। জনক পুত্রী সীতার
নাম স্পষ্ট করার জন্য তাকে হলকৃষ্ট ভূমি সমন্ধ জুড়ে তাহার জন্ম ভূমি থেকে হয়েছে ইহা বলেছেন (পৃষ্ঠা ৮৯)। অথবা  ইহাও হতে পারে যে, কোন কারনবশত এই কণ্যা ক্ষেতের মধ্যে কেউ ফেলে দিয়ে গিয়েছে এবং সংযোগ বশত ইহা রাজা জনক পেয়ে যান।
ধরিত্রী ভেদ করে জন্ম নেওয়াকে উদ্ভিদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়।  তৃণ,  ঔষধি, তরু লতা আদি কে উদ্ভিদ বলা হয়।  মাতা সীতা মানুষ বর্গের মধ্যে হওয়ার কারনে পৃথিবী থেকে জন্ম নেওয়া প্রকৃতি বিরুদ্ধ এবং অসম্ভব।
বাল্মিকী রামায়নে অনেক স্হানে জনকের "আত্মজা" ঔরষ পুত্রী তথা ঊর্মিলার সহোদর বলা হয়েছে।
.
"বর্ধনামানাং মমাত্মজাম" (বালকান্ড ৬৬।১৫)
"জনকাত্মেজ" (যুদ্ধকান্ড ১৫।১৮)
মহাভারত মধ্যেও স্পষ্ট বলা হয়েছে সীতা রাজা জনকের কণ্যা।  এ স্থলেও "আত্মজা" শব্দ এসেছে -
.
বিদেহরাজী জনকঃ সীতা তস্যাত্মজা বিভী।
যা চকার স্বয়ং ত্বষ্টা রামস্য মহিষীং প্রিয়াম।।
(মহাঃ বন পর্ব, অঃ ২৭৪, শ্লোক ৯)
.
বিদেহ দেশের রাজা জনকের এক পুত্রী ছিলো যার নাম সীতা।  তাহাকে স্বয়ং বিধাতা রামচন্দ্রের প্রিয় রাণী হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন।
.
অমরকোষ (২।৬।২৭) মধ্যে "আত্মজ" শব্দের অর্থ এই প্রকার লেখা আছে।  আত্মনো দেহাজ্জাত = আত্মজ অর্থাৎ নিজ শরীর থেকে উৎপন্ন হওয়া।
সামবেদ ব্রাহ্মণে লেখা আছে -
" অঙ্গদঙ্গাত সংভবসি হৃদয়াদধিজায়তে......  আত্মাসি পুত্র"(১।৫।১৭)
হে পুত্র!  তুমি অঙ্গ -অঙ্গ দ্বারা উৎপন্ন হয়ে আমার বীর্য এবং হৃদয় দ্বারা উৎপন্ন হয়েছো।  এ জন্য তুমি আমার আত্মা।
অতএব "আত্মজ" বা "আত্মজা" তাহাকে বলে যে স্ত্রী পুরুষের রজ বীর্য দ্বারা স্ত্রীর গর্ভের মধ্যে উৎপন্ন হয়। 
.
"জনী প্রাদূর্ভাবে" দ্বারা জননী শব্দ নিষ্পন্ন হয়।  এজন্য জন্মদাত্রীকে  জননী বলা হয়।  বনবাস কালে অত্রি মুনির আশ্রমে কথোপকথনের সময় সীতা বলেছিলো -
.
পাণিপ্রদানকালে চ যৎপুরা ত্বাগ্নিসান্নিধৌ।
অনুশিষ্টং জনন্তা মে বাক্যং তদাপি মে ঘৃতম।।
(অযোধ্যা কান্ড,  ১১৮।৮)
.
বিবাহের সময় আমার জননী অগ্নির সামনে আমাকে উপদেশ দিয়েছিলো যা আমি  কখনো ভূলি নি। সেই উপদেশ আমি হৃদয়ঙ্গম করেছি ।
.
কি বিবাহের সময় উপদেশ দাত্রী পৃথিবী ছিলো? এখানে সীতা তার মাতাকে জননী সম্বোধন করেছেন। পৃথিবীকে কখনো জননী সম্বোধন করা হয় না।
বিবাহ সংস্কারের সময় যেই প্রকার রামচন্দ্র জীর প্রজন্মের বর্ণনা করা হয়েছিলো। সেই প্রকার মাতা সীতারও ২২ প্রজন্মের বর্ননা করা হয়েছিলো। রাজস্থানে আজও বিবাহের সময় দুই পক্ষের পুরোহিত ২২ নয় ৩০-৪০ প্রজন্মের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করে।  তাহলে যদি সীতার উৎপত্তি পৃথিবী থেকে ধরে নেওয়া হয় তাহলে পৃথিবীর পূর্ববর্তী প্রজন্মের কথা কি করে বলা যেতে পারে?
অতএব মাতা সীতার জন্ম ভূমি থেকে নয়।  বরং রাজা জনক তার পিতা এবং রামচরিতমানস অনুসারে সুনয়না তার মাতা।