https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণ ৩৬- গীতা ৯।২৩ নং এ দেবতাদের পূজার কথাবলা আছে, আর্যরা তা মানেন না কেন ?

Tuesday, July 18, 2017


প্রশ্ন- গীতা ৯।২৩ নং এ দেবতাদের পূজার কথা
বলা আছে, আপনি বা আপনারা আর্যরা তা মানেন না কেন ?

উত্তর-কে বলেছে আমি বা আমরা আর্যরা
দেবতাদের পূজা করি না? দেখুন দাদা, জগতে এমন
কোন বস্তু বা ব্যক্তি বা জিনিস নেই যে তার পূজা হয়
না।
সব কিছুরই পূজা হয়! পূজা মানে কি তা জানতে
গীতা বিশ্লেষণের পূর্বের পর্বটা(গীতা৯।২৬নং শ্লোকের
বিশ্লেষণ) দেখার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। এখন আমি মূলত দেবতা সম্পর্কে বলবো। কেননা গীতায় যে সকল দেবতাদের পূজার কথা বলা হয়েছে তা কি বর্তমান হিন্দু সমাজ করছে? নাকি নিজেদের সৃষ্টি কিছু মিথ্যা কল্পনার পূজা করছে তা আমি এখন গীতা থেকেই দেখিয়ে প্রমাণ দেব।
চলুন দেখি গীতার ৯।২৩ এ
যে দেবতার কথা বলা আছে, সেগুলো কি তা
দেখতে আপনারা সকলে গীতা ১১/৬ ও ১১।২২ নং
শ্লোকগুলো একটু দেখুন। এখানে বলা আছে
যে-

"হে ভারত! আদিত্য সকল, বসুগণ, রুদ্রগণ,
অশ্বিনীকুমারদ্বয় ও মরুত সকল দেখ।" গীতা
১১/৬.
"রুদ্র (একাদশ রুদ্র) ও আদিত্যগণ (দ্বাদশ আদিত্য),
বসুগণ (অষ্ট বসু), সাধ্য নামক দেবগণ,
বিশ্বদেবগণ...।" গীতা ১১/২২.
(দিব্যগুণ যুক্ত ব্যক্তি, বস্তু সব কিছুকেই দেব
বলে, তার
প্রমাণ নিরুক্ত ৭।৪।১৫, এছাড়াও স্থান, নাম ও জম্ম এই
তিন পদার্থকেও ত্রয়োদেব বলা হয়, যথা- 'ধামানি
ত্রয়াণি ভবন্তি স্থানানি নামানি জম্মানীতি' নিরুক্ত ৯/২৮.)"

অর্থাৎ গীতার ৯।২৩ নং শ্লোকে যে
দেবতাদের পূজার কথা বলা হয়েছে তা তথাকথিত
কাল্পনিক পৌরাণিক দেবতা নয়। বরংচ গীতার ১১।৬ও২২
নং এ উক্ত দেবতাদের পূজার কথা বলা হয়েছে।
আর গীতায় যে সকল দেব শক্তির কথা বলা
হয়েছে তা আমরা শতপথ ব্রাহ্মণ  উপনিষদ ও
বেদে দেখতে পাই। আসুন কোথায় আছে ও
কি আছে তা দেখে নেই-  বৃহদারণ্যক_উপনিষদে
৩।৯।২-১১ তে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে শাকল্য প্রশ্ন
করেন দেবতা কয়টি। তখন তিনি উত্তর দেন ৩৩টি
এবং খুব সুন্দর করেই তার ব্যাখ্যা দেন। এখন সেই
দেবতা বিষয়ে ৩৩ প্রকার দেবতাগণের ব্যাখ্যা লিখিত
হচ্ছে।

"ত্রয়স্ত্রিং শতাস্তুবত ভূতান্য শাম্যন্ প্রজাপতিঃ ।
পরমেষ্ঠ্যধিপতিরাসীৎ।।
যজুর্বেদ ১৪।৩১.
অনুবাদ~ প্রকৃতির শাষক, প্রজার পালক সর্ব্বব্যাপক,
সর্ব্বাধিপতি পরমাত্মার তেত্রিশ ভৌতিক দেব শক্তির
অনুশীল কর।"

ঋগবেদের ১০/১২৫ দেবী সুক্তের প্রথম
মন্ত্রেও পাই-
" আমি বাক্-আমব্রীনী, অসীম জ্ঞানের
কন্ঠস্বর, মহািবশ্বের বাক্, (আমি) ১১ রুদ্র, ৮ বসু, ১২
আদিত্য এবং সকল বিশ্বদেবগনের সহিত সকল কিছু
বহনকারী ও একইসঙ্গে বিদ্যমান ৷ আমি মিত্র ও বরুন
(দিবস ও রাত্রি) উভয়ের সাথে ব্যাপ্ত ও ইহাদের
ধারন করি ৷ আমি ইন্দ্র ও অগ্নি (বাতাস ও আগুন)
উভয়ের সহিত ব্যাপ্ত ও ইহাদের ধারন করি৷ আমি
অশ্বিনীদ্বয়কে বহন করি ও ধারন করি৷"

শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪।৪-৬ এ ও বৃহদারণ্যক উপনিষদ
৩/৯/২-১১ নং শ্লোকেও ঐ দেবতার কথা বলা
আছে। দেবতা ৩৩টি, ইহারা পরমেশ্বরের মহিমাকে
প্রকাশ করিতেছে। ব্যাখ্যা-
"৮ বসু, ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য, ইন্দ্র ও প্রজাপতি
এই ৩৩ দেবতা।
পৃথিবী, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, চন্দ্রমা, সূর্য, দ্যৌঃ এবং
নক্ষত্র সকল সৃষ্টির নিবাস স্থান বলিয়া এ সকলকে
অষ্ট_বসু বলে। প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান, সমান, নাগ,
কূর্ম, কৃকল, দেবদত্ত ,ধনঞ্জয় ও জীবাত্মা এই
১১টি
দেহান্তকালে রোদন করে বলিয়া ইহাদিগকে রুদ্র
বলে। সংবৎসরের ১২ মাস সকলের আয়ু হরণ করে
বলিয়া এই সকলকে আদিত্য বলে। পরম ঐশ্বর্য্য
হেতু বলিয়া বিদ্যুতের নাম ইন্দ্র । প্রজাপতি অর্থাৎ
যজ্ঞ, ইহা দ্বারা বায়ু ও বৃষ্টির জলের শুদ্ধি হয়ে
থাকে, এর দ্বারা উত্তম
অন্নাদি উৎপন্ন হয়।"

প্রশ্ন হল প্রকৃত পক্ষে কি দেবতাদের নিজস্ব
কোন শক্তি আছে? না, প্রকৃত পক্ষে
দেবতাদের নিজের কোন শক্তিই নেই। গীতা
থেকেই দেখুন-

"আদিত্যগত যে তেজ অখিল জগৎকে প্রকাশিত
করে, চন্দ্রেও যে জ্যোতিঃ এবং অগ্নিতে যে
তেজ তা আমারই বলে জানবে।" গীতা ১৫/১২.
কঠ উপনিষদ থেকেও দেখুন-
"সেই ব্রহ্মকে সূর্য প্রকাশ করেন না, চন্দ্র
তারকারাও প্রকাশ করে না, এই বিদ্যুৎসকলও প্রকাশ
করে না। এই অগ্নি আববার কিরূপে করিবে? তিনি
প্রকাশমান বলিয়াই সমস্ত বস্তু তদনুযায়ী দীপ্তিমান
হয়। তাহারই দীপ্তিতে এই সমুদয় বিবিধরূপে প্রকাশ
পায়।"
কঠোপনিষদ ২/২/১৫.
"এই পরমেশ্বরের ভয়ে অগ্নি তাপ দেন, ভয়ে
সূর্য কিরণ বিকিরণ করেন, ভয়ে ইন্দ্র ও বায়ু এবং
পঞ্চমস্থানীয় মৃত্যুও স্বকর্মে প্রবৃত্ত থাকেন।"
কঠোপনিষদ ২/৩/৩.

এইরূপে উপরোক্ত ৩৩টি পদার্থ প্রত্যেকে
(পরমেশ্বর হতে প্রাপ্ত) দিব্যগুণ হেতু ৩৩দেবতা
নামে অভিহিত হয়। অথচ আজকাল আমাদের হিন্দু
সম্প্রদায়ের যারা গীতায় দেবতা পূজার কথা আছে
বলে দেবতা দেবতা বলে আত্মচিৎকারে গলা ফাটান,
তারা নিজেরাই জানেন না প্রকৃতপক্ষে দেবতা কি ও
কারা! তাই সকলের উদ্দেশ্যে একটাই আহ্বান, সত্য
জানুন ও মানুন এবং মিথ্যা কল্পিত তথাকথিত
দেবদেবীদের উপাসনা ও পূজা বর্জন করুন।