প্রশ্ন: গীতা ৭।২০ও২১ নং শ্লোকে স্পষ্ট
করেই দেব দেবীর মূর্তির অর্চনার কথা বলা
হয়েছে। ২৩নং শ্লোকে দেব উপাসকরা যে
দেবলোক পায় তাও বলা হয়েছে, ২৯নং
শ্লোকে কৃষ্ণকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে, অথচ
আপনারা মূর্খ আর্যরা এটা
মানেন না কেন?
করেই দেব দেবীর মূর্তির অর্চনার কথা বলা
হয়েছে। ২৩নং শ্লোকে দেব উপাসকরা যে
দেবলোক পায় তাও বলা হয়েছে, ২৯নং
শ্লোকে কৃষ্ণকে ব্রহ্ম বলা হয়েছে, অথচ
আপনারা মূর্খ আর্যরা এটা
মানেন না কেন?
উত্তর: গীতা থেকেই দেখুন এনং সংশয়গুলো
দূর করুন-
দূর করুন-
(তৈঃ তৈঃ) সেই সেই (কামৈঃ) কামনা দ্বারা (হতজ্ঞানা)
যাদের জ্ঞান নাশ হয়েছে,, তারা (অন্যদেবতাঃ) অন্য
দেবতাকে (প্রপদ্যন্তে) প্রাপ্ত হয় (তং তং) সেই
সেই (নিয়মং) নিয়ম কে (আস্থায়) আশ্রয় করে
(স্বয়া, প্রকৃত্যা) নিজ যে প্রকৃতি= বাসনারূপ পূর্ব
স্বভাব তাহাতে (নিয়তাঃ) বশ হয়।।
গীতা ৭/২০.
ভাবার্থঃ হে অর্জুন! আর্ত, অর্থাথী, জিজ্ঞাসু এই
তিন প্রকারের ভক্ত পরমাত্মাকে এই জন্য প্রেম
করে না কারন তারা নিজ নিজ কামনার বশীভূত হয়ে
ভিন্ন পদার্থের উপাসনায় লেগে যায় এবং সেই কামনা
দ্বারা তাদের জ্ঞান নাশ প্রাপ্ত হয়। এইজন্য তাদের
সত্যাসত্যের বিবেক থাকে না। এই প্রকার
পরমেশ্বর থেকে বিমুখ হওয়ার কারনে তিনি তাদের
প্রিয় হন না। যেমনঃ "অথ যে অন্যাং দেবতাং উপাসতে
" বৃহঃ ১।৪।১০ ইত্যাদি বাক্যে পরমাত্মা ভিন্ন অন্য
কিছুকে উপাসনা কারীকে পশু বলা হয়েছে এবং
"অন্ধনতম প্রবিশন্তি যেহসম্ভূতে" যজু ৪০।৯ ইত্যাদি
মন্ত্রে প্রকৃতির উপাসককে অজ্ঞান প্রাপ্তির কথন
করা হয়েছে। এই প্রকার কৃষ্ণ জীও এখানে অন্য
দেবতরা উপাসককে " হতজ্ঞান" শব্দ দ্বারা
অজ্ঞানী কথন করেছেন। এখানে মোটেও
মুর্তির উপাসনার কথা বলেনি, বরংচ পূর্ব পূর্ব গীতা
বিশ্লেষণে ৩৩ প্রকার দেবতার উল্লেখ পাই।
কিন্তু এদেরকে কোথাও উপাসনা করার নির্দেশ
নেই। বরংচ ২০ নং শ্লোকে এটা স্পষ্ট করেই বলা
আছে যে "যাদের বিবেক বুদ্ধি লোপ
পেয়েছে তা এদের অর্চনা করে" ( এই কথা বলার
কারণ হল অনেকে দেহধারী দেবতা গুরুর,
অনেকে আবার সূর্য, চন্দ্রের উপাসনা বা অর্চনা
করে,)।
আপনাদের প্রতি অনুরোধ রইল গীতা ৭/২১নং
শ্লোকটা যাচাই করেনিন আপনারা, সংস্কৃত শব্দটা হল
তনুং অর্থাৎ দেহ। যদি শাব্দিক অর্থে
ঐ শ্লোকের অনুবাদ করি তাহলে অর্থ হয়-
"যে যে ভক্ত যে যে দেবতাদের দেহে
শ্রদ্ধার সহিত অর্চনা করতে ইচ্ছা করে সেই সেই
ভক্তের সেই সেই দেবতা বিষয়ে অচলা ভক্তি
আমি বিধান করি।"
গীতা ৭।২১.
আপনি গীতা ৭/২৩ নং শ্লোকের প্রশ্নে
দেবলোক বলতে আলাদা কোন স্থানকে
বুঝিয়েছেন, অথচ একটুও চিন্তা করে দেখলেন না
আসলেই দেবলোক কি! পৃথিবী, অগ্নি, বায়ু, বিদ্যুৎ,
একাদশ রুদ্র যথা চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ইত্যাদিও
দেবতা, আবার মাতা, পিতা, গুরু, অতিথীও এক একটি
দেবতা। প্রশ্ন হল এরা কি পৃথিবীর মধ্যে, এমনকি
একাদশ রুদ্র শরীরের মধ্যে থাকে না? যদি বলেন
থাকে, তাহলে আপনি দেবলোককে বাহিরে
কোথাও আলাদা কোন জগৎকে চিন্তা করছেন
কেন অযথা? হ্যা এটাও ঠিক যে গ্রহ
নক্ষত্রগুলোও দেবতা, আার সেই হিসেবে গ্রহ
নক্ষত্রগুলোও দেবলোক, এবং ওগুলোর
কোন কোনটাতে জীব বাস করে। আরে
পাঠকগণ, পৃথিবীটাকেই বাস উপযুগী করুন,
শরীরটাকেই দেবালয় বানান, এখানেই তো বাস
করছে অধিকাংশ দেবতা(অজ্ঞানীর মত অম্য
কোথাও দেবলোক তথা দেবালয় খুজছেন
কেন?)। প্রকৃত পক্ষে ঐ শ্লোকে অর্থ হবে
এইরূপ-
" কিন্তু সেই অল্প মেধাযুক্ত ভক্তদের সেই ফল
বিনাশশীল। দেব উপাসকগণ দেবতাগণকে
(দেবতাদের গুণ সকলকে) প্রাপ্ত হন, আমার
ভক্তগণ আমাকেই প্রাপ্ত হন( আমার অনন্ত গুণসকল
প্রাপ্ত হন)।" গীতা৭/২৩.
গীতা ৭/২৯ নং শ্লোকে কৃষ্ণ নিজেকে ব্রহ্ম
বলেনি, বরংচ বলেছে মোক্ষ লাভের জন্য যারা
ওনাকে আশ্রয় করে(কৃষ্ণের মত) যত্নশীল হন,
তারা সেই সনাতন ব্রহ্মকে জানেন-
"(জরামরণমোক্ষায়) জরা= বৃদ্ধাবস্থা, মরণ=
দেহত্যাগ, ইহার মোক্ষায়= দুঃখ থেকে মুক্তির
জন্য (মাং) আমাকে (আশ্রিত্য) আশ্রয় করে (যে)
যে (যজন্তি) যত্ন করে (তে) তিনি (তত, ব্রহ্ম)
সেই ব্রহ্ম (কৃৎস্নং, আধ্যাত্মং) সম্পূর্ণ আধ্যাত্ম (চ)
এবং (অখিলং, কর্ম) সম্পূর্ণ কর্ম কে (বিদুঃ) জানে।"
গীতা ৭/২৯.
ভাবার্থঃ "বিজ্ঞানী পুরুষ যে জন্ম মরণাদি দুঃখ
থেকে মুক্তের জন্য "মাং আশ্রিত্য" আমাকে
আশ্রয় করে জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগ এই উভয়
প্রকারের যোগ দ্বারা যত্ন করেন তিনি অক্ষর
ব্রহ্ম এবং আধ্যাত্ম অর্থাৎ নিজের স্বরূপনিষ্পত্তি
কে প্রাপ্ত হয়।"
যেমনটি "পরমজ্যোতিরুপসম্পদ্যস্বেনরূপেণ
াভিনিষ্পদ্যতে" এই বাক্যে কথন করা হয়েছে যে,
সেই পরমজ্যোতি পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়ে নিজ
শুদ্ধস্বরূপে স্থিরর হয় এবং শুভাশুভ কর্মের তার
পূর্নজ্ঞান হয়ে যায়। এই শ্লোকে নিজ থেকে
ভিন্ন অক্ষর ব্রহ্মের কথন করে কৃষ্ণজী নিজে
ঈশ্বর হওয়ার সন্দেহ মিটে দিয়েছেন। কেবল
নিজেকে নিজে এই অংশে কারন রেখেছে
যে, আমার দৃঢ় উপদেশ দ্বারা অক্ষর ব্রহ্ম,
স্বরূপনিষ্পত্তি, শুভাশুভ কর্মের জ্ঞান, এই ফল
মিলে। অবতারবাদীর মতানুকুল তদ্ধর্মতাপত্তিরূপ
ঈশ্বরীয় ভাবকে উলঙ্ঘন করে যদি কৃষ্ণজী
নিজেকে ঈশ্বর হওয়ার ভাব দর্শায় তো এখানে
নিজ থেকে ভিন্ন ব্রহ্মকে কখনোই বলতো না।
দেবতাদেরকে পূজা করা যেতে পারে, কিন্তু
অর্চনা বা উপাসনা করা উচিত না। গীতার ২নং অধ্যায়ের
৪নং শ্লোক থেকে পাই গুরুজনদের পূজার কথা,
দেখুন অর্জুন বললেন-
"হে অরিসূদন, হে মধুসূদন! আমি পূজার যোগ্য
ভীষ্ম ও দ্রোণের সঙ্গে বাণ দিয়ে প্রতিযুদ্ধ
কি করে করব?"
গীতা ২।৪.
গীতা বিশ্লেষণের পূর্বের পর্বে ৩৩প্রকার
দেবতার বর্ণনা দেয়েছি এবং পূজা কি তা বলেছি।
এখন এই শ্লোকের সাথে সম্পর্ক যুক্ত আরো
কিছু দেবতার পূজা সম্পর্কে লিখলাম। এরা হল বৈদিক
পঞ্চদেবতা।
প্রথম দেবতা মাতাঃ
মাতার স্থান ঈশ্বরের পরেই তিনি জাগ্রত মূতিমতি
দেবী ।সন্তান কর্তব্য হলো মাকে শ্রদ্ধা, ভক্তি,
সন্মান,সেবা ও পূজা করা। মা দুঃখ-কষ্টপান এমন কাজ করা
কোন সন্তানের কতর্ব্য নয়।
এ জন্য অথর্ববেদে বলা হয়েছে " মা হিংসষ্ট পিতরং
মাতরং চ (অথর্ববেদ ৬।১৪০।২)" অর্থাৎ পিতা মাতাকে
কখনো হিংসা করো না।
দ্বিতীয় দেবতা পিতাঃ
পিতা আমাদের সর্বদা রক্ষা করেন। তাই সন্তানের
কর্তব্য মাতার সমান পিতাকেও সেবা করা। পিতাকে
কখনো কষ্ট দেওয়া উচিৎ নয়। যজুর্বেদ এ জন্য
বলছে " মা নো বধীঃ পিতরং মাতরং" (যজু১৬।১৫)
অর্থাৎ পিতা মাতাকে কখনো বধ করো না, তাদের
তাড়না দিও না।
তৃতীয় দেবতা আচার্য্যঃ
আচার্য্য অর্থাৎ যিনি বিদ্যাদাতা তাকে কায় মন বাক্য দ্বারা
সেবা করা উচিৎ। কারন তিনি আমাদের বিকশিত শরীর
মন ও উন্নত মস্তিস্কবানরূপে প্রস্তুত করেন।
অথর্ববেদে বলা হয়েছে - "আচার্য্য
উপনয়মানো ব্রহ্মচারিনং কৃণুতে গর্ভমন্ত
(অথর্ববেদ ১১।৫।৩) অর্থাৎ আচার্য ব্রহ্মচারীকে
উপনয়ন সংস্কার করে নিজের সমীপে রেখে
তাহার মধ্যে বিদ্যা গর্ভরূপে স্থাপন করেন।
চতুর্থ দেবতা অতিথিঃ
একজন গৃহস্থ ব্রাত্য অর্থাৎ সত্যব্রতধারী, ধার্মিক,
অকপকট অতিথিকে সৎকার করবে।
অথর্ববেদে বলা হয়েছে " ব্রাত্যোহপরিমিতা
রাত্রীরতিথির্গৃহে বসতি.....তেনাব রুন্ধে
(অথর্ববেদ ১৫।১৩।৯) অর্থাৎ অতিথি বহু রাত্রী গৃহ
মধ্যে অবস্থান করলে তাকে সৎকার দ্বারা গৃহস্থ
সুরক্ষিত করবে।
পঞ্চম দেবতা পতিপত্নিঃ
অর্থাৎ স্ত্রীর পক্ষে পতি এবং পতির পক্ষে
স্বপত্নী। অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে শ্রদ্ধা
করবেন। এবং স্ত্রীও তার স্বামীকে শ্রদ্ধা
করবেন।
"পূজ্যা ভুষয়িত ব্যাশ্চ বহু কল্যাণমীপসুভীঃ।"
মনুঃ ৩।৫৫. অর্থাৎ শুধু পতিই স্ত্রীকে পূজা করবেন
এমন নয়, কি ভ্রাতা, পিতা, দেবর সবাই ইহাকে
ভোজনাদি দ্বারা পূজা করবেন এবং বস্ত্রালংকার দ্বারা
ভূষিত করবেন।
এবং স্ত্রীও পতিকে দেবতাজ্ঞানে সেবা
করবেন -
" উপচর্যঃ স্ত্রীয়া সাধ্ব্যা সততং দেবব পতিম্।"
মনুঃ ৫।১৫৪.
এই পাঁচজন বাস্তব জীবনে প্রত্যক্ষ দেব-
দেবী। এই পঞ্চদেবতার পূজাকে "পঞ্চায়তন
পূজা" বলে। তৈত্তিরীয় উপনিষদেও আমরা এইরূপ
দেবতাদেরকেই দেখতে পাই এবং তাদের
পূজনের কথা পাই।
"মাতৃ দেবো ভব, পিতৃ দেবো ভব, আচার্য
দেবো ভব, অতিথি দেবো ভব।"
তৈত্তিরীয়_উপনিষদ্ ১।১১।২"
যারা এই পাঁচজনের সেবা পূজা করে না তারা অতীব
মূর্খ এবং নরকগামী। এই পাঁচ দেব-দেবীকে
খাদ্য, বস্ত্র ,পানীয় সেবা-শ্রদ্ধা ভক্তি করা সকল
সনাতনীর একান্ত কর্তব্য কর্ম।
শ্লোকটা যাচাই করেনিন আপনারা, সংস্কৃত শব্দটা হল
তনুং অর্থাৎ দেহ। যদি শাব্দিক অর্থে
ঐ শ্লোকের অনুবাদ করি তাহলে অর্থ হয়-
"যে যে ভক্ত যে যে দেবতাদের দেহে
শ্রদ্ধার সহিত অর্চনা করতে ইচ্ছা করে সেই সেই
ভক্তের সেই সেই দেবতা বিষয়ে অচলা ভক্তি
আমি বিধান করি।"
গীতা ৭।২১.
আপনি গীতা ৭/২৩ নং শ্লোকের প্রশ্নে
দেবলোক বলতে আলাদা কোন স্থানকে
বুঝিয়েছেন, অথচ একটুও চিন্তা করে দেখলেন না
আসলেই দেবলোক কি! পৃথিবী, অগ্নি, বায়ু, বিদ্যুৎ,
একাদশ রুদ্র যথা চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ইত্যাদিও
দেবতা, আবার মাতা, পিতা, গুরু, অতিথীও এক একটি
দেবতা। প্রশ্ন হল এরা কি পৃথিবীর মধ্যে, এমনকি
একাদশ রুদ্র শরীরের মধ্যে থাকে না? যদি বলেন
থাকে, তাহলে আপনি দেবলোককে বাহিরে
কোথাও আলাদা কোন জগৎকে চিন্তা করছেন
কেন অযথা? হ্যা এটাও ঠিক যে গ্রহ
নক্ষত্রগুলোও দেবতা, আার সেই হিসেবে গ্রহ
নক্ষত্রগুলোও দেবলোক, এবং ওগুলোর
কোন কোনটাতে জীব বাস করে। আরে
পাঠকগণ, পৃথিবীটাকেই বাস উপযুগী করুন,
শরীরটাকেই দেবালয় বানান, এখানেই তো বাস
করছে অধিকাংশ দেবতা(অজ্ঞানীর মত অম্য
কোথাও দেবলোক তথা দেবালয় খুজছেন
কেন?)। প্রকৃত পক্ষে ঐ শ্লোকে অর্থ হবে
এইরূপ-
" কিন্তু সেই অল্প মেধাযুক্ত ভক্তদের সেই ফল
বিনাশশীল। দেব উপাসকগণ দেবতাগণকে
(দেবতাদের গুণ সকলকে) প্রাপ্ত হন, আমার
ভক্তগণ আমাকেই প্রাপ্ত হন( আমার অনন্ত গুণসকল
প্রাপ্ত হন)।" গীতা৭/২৩.
গীতা ৭/২৯ নং শ্লোকে কৃষ্ণ নিজেকে ব্রহ্ম
বলেনি, বরংচ বলেছে মোক্ষ লাভের জন্য যারা
ওনাকে আশ্রয় করে(কৃষ্ণের মত) যত্নশীল হন,
তারা সেই সনাতন ব্রহ্মকে জানেন-
"(জরামরণমোক্ষায়) জরা= বৃদ্ধাবস্থা, মরণ=
দেহত্যাগ, ইহার মোক্ষায়= দুঃখ থেকে মুক্তির
জন্য (মাং) আমাকে (আশ্রিত্য) আশ্রয় করে (যে)
যে (যজন্তি) যত্ন করে (তে) তিনি (তত, ব্রহ্ম)
সেই ব্রহ্ম (কৃৎস্নং, আধ্যাত্মং) সম্পূর্ণ আধ্যাত্ম (চ)
এবং (অখিলং, কর্ম) সম্পূর্ণ কর্ম কে (বিদুঃ) জানে।"
গীতা ৭/২৯.
ভাবার্থঃ "বিজ্ঞানী পুরুষ যে জন্ম মরণাদি দুঃখ
থেকে মুক্তের জন্য "মাং আশ্রিত্য" আমাকে
আশ্রয় করে জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগ এই উভয়
প্রকারের যোগ দ্বারা যত্ন করেন তিনি অক্ষর
ব্রহ্ম এবং আধ্যাত্ম অর্থাৎ নিজের স্বরূপনিষ্পত্তি
কে প্রাপ্ত হয়।"
যেমনটি "পরমজ্যোতিরুপসম্পদ্যস্বেনরূপেণ
াভিনিষ্পদ্যতে" এই বাক্যে কথন করা হয়েছে যে,
সেই পরমজ্যোতি পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়ে নিজ
শুদ্ধস্বরূপে স্থিরর হয় এবং শুভাশুভ কর্মের তার
পূর্নজ্ঞান হয়ে যায়। এই শ্লোকে নিজ থেকে
ভিন্ন অক্ষর ব্রহ্মের কথন করে কৃষ্ণজী নিজে
ঈশ্বর হওয়ার সন্দেহ মিটে দিয়েছেন। কেবল
নিজেকে নিজে এই অংশে কারন রেখেছে
যে, আমার দৃঢ় উপদেশ দ্বারা অক্ষর ব্রহ্ম,
স্বরূপনিষ্পত্তি, শুভাশুভ কর্মের জ্ঞান, এই ফল
মিলে। অবতারবাদীর মতানুকুল তদ্ধর্মতাপত্তিরূপ
ঈশ্বরীয় ভাবকে উলঙ্ঘন করে যদি কৃষ্ণজী
নিজেকে ঈশ্বর হওয়ার ভাব দর্শায় তো এখানে
নিজ থেকে ভিন্ন ব্রহ্মকে কখনোই বলতো না।
দেবতাদেরকে পূজা করা যেতে পারে, কিন্তু
অর্চনা বা উপাসনা করা উচিত না। গীতার ২নং অধ্যায়ের
৪নং শ্লোক থেকে পাই গুরুজনদের পূজার কথা,
দেখুন অর্জুন বললেন-
"হে অরিসূদন, হে মধুসূদন! আমি পূজার যোগ্য
ভীষ্ম ও দ্রোণের সঙ্গে বাণ দিয়ে প্রতিযুদ্ধ
কি করে করব?"
গীতা ২।৪.
গীতা বিশ্লেষণের পূর্বের পর্বে ৩৩প্রকার
দেবতার বর্ণনা দেয়েছি এবং পূজা কি তা বলেছি।
এখন এই শ্লোকের সাথে সম্পর্ক যুক্ত আরো
কিছু দেবতার পূজা সম্পর্কে লিখলাম। এরা হল বৈদিক
পঞ্চদেবতা।
প্রথম দেবতা মাতাঃ
মাতার স্থান ঈশ্বরের পরেই তিনি জাগ্রত মূতিমতি
দেবী ।সন্তান কর্তব্য হলো মাকে শ্রদ্ধা, ভক্তি,
সন্মান,সেবা ও পূজা করা। মা দুঃখ-কষ্টপান এমন কাজ করা
কোন সন্তানের কতর্ব্য নয়।
এ জন্য অথর্ববেদে বলা হয়েছে " মা হিংসষ্ট পিতরং
মাতরং চ (অথর্ববেদ ৬।১৪০।২)" অর্থাৎ পিতা মাতাকে
কখনো হিংসা করো না।
দ্বিতীয় দেবতা পিতাঃ
পিতা আমাদের সর্বদা রক্ষা করেন। তাই সন্তানের
কর্তব্য মাতার সমান পিতাকেও সেবা করা। পিতাকে
কখনো কষ্ট দেওয়া উচিৎ নয়। যজুর্বেদ এ জন্য
বলছে " মা নো বধীঃ পিতরং মাতরং" (যজু১৬।১৫)
অর্থাৎ পিতা মাতাকে কখনো বধ করো না, তাদের
তাড়না দিও না।
তৃতীয় দেবতা আচার্য্যঃ
আচার্য্য অর্থাৎ যিনি বিদ্যাদাতা তাকে কায় মন বাক্য দ্বারা
সেবা করা উচিৎ। কারন তিনি আমাদের বিকশিত শরীর
মন ও উন্নত মস্তিস্কবানরূপে প্রস্তুত করেন।
অথর্ববেদে বলা হয়েছে - "আচার্য্য
উপনয়মানো ব্রহ্মচারিনং কৃণুতে গর্ভমন্ত
(অথর্ববেদ ১১।৫।৩) অর্থাৎ আচার্য ব্রহ্মচারীকে
উপনয়ন সংস্কার করে নিজের সমীপে রেখে
তাহার মধ্যে বিদ্যা গর্ভরূপে স্থাপন করেন।
চতুর্থ দেবতা অতিথিঃ
একজন গৃহস্থ ব্রাত্য অর্থাৎ সত্যব্রতধারী, ধার্মিক,
অকপকট অতিথিকে সৎকার করবে।
অথর্ববেদে বলা হয়েছে " ব্রাত্যোহপরিমিতা
রাত্রীরতিথির্গৃহে বসতি.....তেনাব রুন্ধে
(অথর্ববেদ ১৫।১৩।৯) অর্থাৎ অতিথি বহু রাত্রী গৃহ
মধ্যে অবস্থান করলে তাকে সৎকার দ্বারা গৃহস্থ
সুরক্ষিত করবে।
পঞ্চম দেবতা পতিপত্নিঃ
অর্থাৎ স্ত্রীর পক্ষে পতি এবং পতির পক্ষে
স্বপত্নী। অর্থাৎ স্বামী তার স্ত্রীকে শ্রদ্ধা
করবেন। এবং স্ত্রীও তার স্বামীকে শ্রদ্ধা
করবেন।
"পূজ্যা ভুষয়িত ব্যাশ্চ বহু কল্যাণমীপসুভীঃ।"
মনুঃ ৩।৫৫. অর্থাৎ শুধু পতিই স্ত্রীকে পূজা করবেন
এমন নয়, কি ভ্রাতা, পিতা, দেবর সবাই ইহাকে
ভোজনাদি দ্বারা পূজা করবেন এবং বস্ত্রালংকার দ্বারা
ভূষিত করবেন।
এবং স্ত্রীও পতিকে দেবতাজ্ঞানে সেবা
করবেন -
" উপচর্যঃ স্ত্রীয়া সাধ্ব্যা সততং দেবব পতিম্।"
মনুঃ ৫।১৫৪.
এই পাঁচজন বাস্তব জীবনে প্রত্যক্ষ দেব-
দেবী। এই পঞ্চদেবতার পূজাকে "পঞ্চায়তন
পূজা" বলে। তৈত্তিরীয় উপনিষদেও আমরা এইরূপ
দেবতাদেরকেই দেখতে পাই এবং তাদের
পূজনের কথা পাই।
"মাতৃ দেবো ভব, পিতৃ দেবো ভব, আচার্য
দেবো ভব, অতিথি দেবো ভব।"
তৈত্তিরীয়_উপনিষদ্ ১।১১।২"
যারা এই পাঁচজনের সেবা পূজা করে না তারা অতীব
মূর্খ এবং নরকগামী। এই পাঁচ দেব-দেবীকে
খাদ্য, বস্ত্র ,পানীয় সেবা-শ্রদ্ধা ভক্তি করা সকল
সনাতনীর একান্ত কর্তব্য কর্ম।
0 মন্তব্য(গুলি)