https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণঃ৪৮- আপনি যখন এতোই শাস্ত্র বোঝেন তবে জঙ্গলে গিয়ে তপস্যা করেন না কেন?

Friday, July 21, 2017
                    সম্পর্কিত চিত্র
প্রশ্ন- আপনি এত শাস্ত্র আলোচনা করেন,
এত কিছু বুঝেন, তাহলে নিজে কেন তপস্যায়
লেগে পড়েন না? বনে জঙ্গলে তথা তপোবনে
গিয়ে তপস্যা লেগে পড়ুন, এতেই আপনার
মঙ্গল নয় কি?

উত্তর- আপনার প্রশ্নটা শুনে না হেসে
থাকতে পারছি না! এখন আপনার প্রতিই
আমার প্রশ্ন তপস্যা বলতে কি আপনি শুধু
জঙ্গলে গিয়ে বসে বসে ধ্যান করাকেই
বুঝেন? অন্য কিছু বা অন্য কোন নিয়মে কি
তপস্যা বলা হয় না? দেখুন মিত্র, গীতাতেই
তপস্যার ব্যাপারে কি বলা আছে-
.
"ফল আকাঙ্ক্ষাহীন, সমাহীত ব্যক্তিগণ পরম
শ্রদ্ধার সহিত শারীরিক, বাচনিক ও মানসিক
তপস্যা করেন। আর এই ধরণের তপস্যাকে
সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়।"  গীতা ১৭/৭.
.
আপনি বলেছেন 'আমি এত শাস্ত্র আলোচনা
করি অথচ তপস্যা কেন করি না?' হ্যাঁ, এটা
ঠিক যে আপনার মত আরো অনেকের মনেই এই
ধরণের প্রশ্ন আসে যে-'তাহলে কি আমার এই
শাস্ত্রীয় আলোচনা লোক দেখানো মাত্র?'
প্রশ্ন আসা অবান্তর নয়। কারণ, এই ব্যাপারে
না জানা থাকলে এবং জানার প্রতি আগ্রহ
থাকলে প্রশ্ন আসবেই। এটাই স্বাভাবিক,
আপনার এই ধরণের প্রশ্নকে আমি সাধুবাদ
জানাই। এখন গীতা উক্ত সেই সাত্ত্বিক
তপস্যার মধ্যে শাস্ত্র আলোচনা পড়ে কি না
তা দেখুন মিত্র। গীতায় শ্রী ভগবান
বলেছেন-
.
"অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় ও হিতকর বাক্য এবং
বেদাদদি শাস্ত্র পাঠকে বাঙ্গম তপস্যা বলে ।"
গীতা ১৭/১৫.
.
এখন এটাও প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, এই
তপস্যা কি সর্বদা করা উচিত? এর উত্তরে
শ্রীভগবান বলেছেন-
"যজ্ঞ, দান ও  তপস্যারূপ কর্ম
ত্যাগ করা উচিত নয় - এই সকল করাই উচিত।
যজ্ঞ, দান, তপঃকর্ম মনীষীদের
চিত্তশুদ্ধিকর। এই সকল কর্মও কিন্তু আসক্তি
ত্যাগ করে করা উচিত। হে পার্থ! এই আমার
স্থির ও উত্তম মত। নিত্য কর্ম ত্যাগ যুক্তি
যুক্ত নয়, মোহ বশত নিত্য কর্মের ত্যাগকে
তামস ত্যাগ বলে" গীতা ১৮/৫-৭.
.
এটাও প্রশ্ন হতে পারে যে ব্রহ্মকে জানার
জন্য শাস্ত্র পাঠের আবশ্যকতা কি? এর উত্তর
বেদান্তসূত্র থেকে দেওয়া যাক।
বেদান্তসূত্রের ১ম সূত্রেই বলা হয়েছে-
"  অথাতো ব্রহ্মজিজ্ঞাসা ।" বেঃসূঃ ১/১/১.
অর্থাৎ ব্রহ্মের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা।
.
এখন প্রশ্ন হল সেই ব্রহ্মকে জানার উপায় কি?
এই ব্যাপারে ৩নং ও ৪নং সূত্র বলছে-
.
"  শাস্ত্রয়োনিত্বাৎ ।" বেঃসূঃ ১/১/৩.
অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানের উপায় হল শাস্ত্র।
"  তত্তু সমন্বয়াৎ ।" বেঃ সূঃ ১/১/৪.
অর্থাৎ ব্রহ্মকে শুধু মাত্র শাস্ত্র দ্বারাই
জানিতে হইবে, নিরপেক্ষ ভাবে অন্য কোন
উপায়ের দ্বারা নয়। কারণ ব্রহ্ম হলেন সকল
শাস্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
.
তাই তো গীতার মাতৃস্থানিয় তৈত্তিরীয়
উপনিষদের শিক্ষাবল্লবীতে শাস্ত্র পাঠ,
তথা অধ্যায়নের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে। এখানে বেদ অধ্যাপনান্তে আচার্য
শিষ্যকে ২বার জোর দিয়ে বলেছেন-
.
" স্বাধ্যায়ান্মা প্রমদঃ - অধ্যায়নে প্রমাদ
করিবে না।
স্বাধ্যায় প্রবচনাভ্যাং ন প্রমদিতব্যম্ -
স্বাধ্যায় ও অধ্যাপনা বিষয়ে প্রমাদগ্রস্থ
হইও না।"
তৈত্তিরীয়োপনিষদ ১/১১/১.
.
প্রশ্ন কর্তার মনে আরো প্রশ্নের উদয় হতে
পারে যে-'আপনার তপস্যা আপনি করুন,কিন্তু
একেবারে সবাইকে ব্যাখ্যা করে শুনাচ্ছেন
কেন?' উপনিষদের সুধাস্বরূপ গীতায়
শ্রীভগবান এই ব্যাপারে কি বলেছেন তাই
আপনাকে শুনাচ্ছি-
.
"যিনি এই পরম গোপনীয় তত্ত্বজ্ঞান আমার
ভক্তগণের কাছে পাঠ ও  ব্যাখ্যা করিবেন ,
তিনি পরাভক্তি লাভ করিয়া আমাকে প্রাপ্ত
হবেন। এতে কোন সংশয় নেই। এই পৃথিবীতে
মানুষের মধ্যে তার চাইতে কেউ আমার অধিক
প্রিয়কারী নাই, আর তার চাইতে প্রিয়তর
কেউ হইবেও না। আর যিনি আমাদের এই
ধর্মীয় আলোচনা অধ্যায়ন করিবেন, তাঁর সেই
জ্ঞানযজ্ঞের দ্বারা আমি পূজিত হব, এই
আমার মত।"
গীতা ১৮/৬৮-৭০.
.
হে মিত্র! তাহলে কেন আমি এই তত্ত্বজ্ঞান
আলোচনা করবো না? কেনই বা আমার এই
ধর্মীয় আলোচনা তপস্যা বলে গন্য হইবে না?
শাস্ত্র মতে তো এটা সাত্ত্বিক বাঙ্গম
তপস্যার অন্তর্গত এবং সর্বোপরি এটা পঞ্চ
মহাযজ্ঞের অন্তর্গত ব্রহ্মযজ্ঞও বটে।
.
প্রশ্নে আপনি আরেকটি কথা উল্লেখ করে
বলেছেন যে, তপস্যার জন্য বনে জঙ্গলে তথা
তপোবনে চলে যেতে। হে মিত্র! তোমার
জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে-
.
"দেশের আজ বড়ই দুর্ভাগ্য যে, এখানে ওরকম
তপোবন নেই। অতীতে তা অনেক ছিল, তাই
এখন আমাদের তপোবন চাই। তপোবনের শান্ত,
সৌম্য, সুন্দর রূপ দেখে নয়ন জুড়িয়ে যেতো,
যার ফলে তপস্যাও হত খুব ভালো ভাবে। আজ
এই ভুমিতে আছে শুধুই শ্মশান, তাই বলে দুঃখ
করো না, হতাশ হইয়ো না। মনে রেখো! যখন
তোমার চিত্ত স্থির, মন শান্ত, প্রাণ সাংযত,
তখনই সেটা তপোবনে পরিণত হয়। যখন তোমার
বুদ্ধি বিনীত, মেধা শুশ্রূষু, হৃদয় নির্ভীক, তখনই
তা তপোবন।"
.
মনই যখন তপোবন, তখন তপস্যার জন্য বনে
জঙ্গলে ছুটতে হয় না মিত্র। আশাকরি আমার
এই আলোচনা স্বয়ং বিচার বিবেচনা করে
দেখবে মিত্র।