https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণঃ ৩৫-গীতার ৯।২৬নং শ্লোকে ঈশ্বর বলেছেন ওনাকে পত্র পুষ্প দিয়ে পূজা করার কথা। এর অর্থ কি?

Tuesday, July 18, 2017

প্রশ্ন-গীতার ৯।২৬নং শ্লোকে ঈশ্বর
বলেছেন ওনাকে পাতা, ফুল,ফল ও জল দ্বারা পূজা
দেওয়ার জন্য, আপনারা বৈদিক সনাতনীরা এটা মানেন না কেন?

উত্তর- আর্যমুনি গীতা ভাষ্য থেকে উত্তরটা দিচ্ছি
দেখুন (অধ্যায় ৯ শ্লোক ২৬,২৭ ও ২৮)-
"পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্তা পযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃত মশ্নামি প্রযতাত্মনঃ।।"২৬
পদার্থঃ যে পুরুষ পত্র পুষ্প ফল জল আমার জন্য
ভক্তিপূর্বক প্রদান করে সমাহিত চিত্ত ভক্তিযুক্ত
সেই বস্তুকে (অহম, অশ্নামি) আমি গ্রহন করি।

ভাষ্যঃ এই শ্লোকে এই ভাব বর্ণনা করা হয়েছে
যে, পরমাত্মার পূজনের জন্য বড় উপাচারের কোন
আবশ্যকতা নেই। পত্র, পুষ্পাদি তুচ্ছ থেকেও তুচ্ছ
বস্তু যদি ভক্তিপূর্বক সমাহিত চিত্তবান পুরুষ
পরমাত্মাকে সমর্পন করে তবে ইহাই সর্বোপরি
উপাচার বুঝতে হবে।

প্রশ্নঃ তোমাদের মনে তো পরমাত্মা নিরাকার।
তবে এই পত্র পুষ্পাদি উপাচার কিভাবে গ্রহন করবে?
উত্তরঃ পত্র পুষ্পাদি সর্বপরি উপাচার এখানে উপলক্ষ
মাত্র। যেমন লোক রত্নাদি বহুমূল্য পদার্থ
দেবার পর এটা বলে জানে যে, ইহাই পত্র-পুষ্পাদি।
এই প্রকারে পত্র পুষ্পাদি উপাচার এখানে উপলক্ষ্য
মাত্র। আর কেউ যদি বলে যে, এই শ্লোকে
(অশ্নামি) লেখা আছে, যার অর্থ ভক্ষন করে।
তো উত্তর এটা-
সাকারবাদীর ঈশ্বর কি পত্র পুষ্প ভক্ষন করে?
আবার তাদের মনে (অশ্নামি) ভক্ষনের অর্থ
অযুক্ত। তাহলে আমাদের মতে ইহার সমাধান-

"যস্য ব্রহ্ম ক্ষত্রং চ উভে ভবতং ওদনং।
মৃত্যুর্যস্যোপসেনং ক ইতথ্যা বেদ যত্র সঃ।।"
(কঠোপনিষদঃ২।২৫)
অর্থঃ যেই পরমাত্মার ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় "ওদনং"=
অন্নের সমান অথবা মৃত্যুর সমান। তবে তাহার
কোনটা যথার্থ জানবে? তবে কি এই বাক্যে
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় এবং মৃত্যু
পরমাত্মার ডাল, ভাত?
" অত্তাচরাচরগ্রহণাত" ব্রঃ সূঃ ১।২।৬
চরাচরকে গ্রহণকারী পরমাত্মাকে কি এখানে
ভক্ষনকারী বর্ণনা করা হয়েছে? এখানে বাস্তবে
পরমাত্মা ভক্ষক কখনই নয়। এবং এখানে উপাচার
(অশ্নামী) শব্দে কি ভক্ষনকারী বর্ণনা করা হবে?
বাস্তবে ইহার
অর্থ গ্রহন করা। এবং গীতার বড় দুই টিকাকার ইহার
অর্থ এটাই করেছে। ভক্ষন করেনি।

প্রশ্নঃ যদি ভক্ষনের অর্থ গ্রহন করা হয় তবে পত্র
পুষ্পাদি যাহা অর্পন করা হয় তাহলেও তো
পরমাত্মাকে সাকার পাওয়া যায়?

উত্তর- "যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহসি দদাসি যৎ।
যৎ তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পনম।।"২৭
পদার্থঃ (কৌন্তেয়) হে অর্জুন (যৎ করোষি) তুমি যাহা
করো (যৎ অশ্নাসি) যাহা খাও (যৎ জুহুষি)যাহা যজ্ঞ
করো (দদামি যৎ) যাহা দান করো এবং (যৎ তপস্যসি)
যাহা তপস্যা করো (তৎ মদর্পনং কুরুষ্ব) সে সব
আমাকে অর্পন করবে।

ভাষ্যঃ এই শ্লোকে এই ভাব বর্ননা করা হয়েছে,
মনুষ্য যাহা করে তাহা পরমাত্মাকে অর্পন করবে
অর্থাৎ কামনাবিহীন হয়ে করবে। আমার অর্থে
কদাপি না রাখবে। এই বর্ণনা থেকে এই ভাব স্পষ্ট
করে দিয়েছে যে, পত্র পুষ্পাদি কোন সাকার
মূর্তির সামনে রাখার কোন
অভিপ্রায় নেই। কিন্তু নিষ্কাম কর্মে অবশ্যই
অভিপ্রায় আছে।

প্রশ্নঃ এই শ্লোকে তো নিষ্কাম ও সকাম
কর্মের কোন প্রকরণ নেই। তবে এ উত্তর
কেন?

উত্তর-"শুভাশুভ ফলৈরেবং মোক্ষসে কর্ম্মবন্ধনৈঃ।
সন্ন্যাস যোগযুক্তাত্মা বিমুক্তো মামুপৈষ্যসি।।"২৮
পদার্থঃ (শুভাশুভফলৈ) শুভ ও অশুভ ফল (কর্মবন্ধনৈ)
বন্ধনরূপ কর্ম থেকে (এবং মোক্ষসে) মুক্ত
হয়ে
(সংন্যাস যোগযুক্তাত্মা) সন্ন্যাসরূপ যে যোগ
তাহাতে যুক্ত হয়ে (বিমুক্তঃ) মুক্ত হয়ে (মাম,
উপৈষ্যসি) আমাকে প্রাপ্ত হবে।

ভাষ্যঃ এই শ্লোকে "সন্ন্যাসযোগযুক্তাত্মা" এই
বাক্য
থেকে এই স্পষ্ট হয়েছে যে, নিষ্কামকর্মী
প্রতিপাদন করতে এখানে কৃষ্ণজীর উদ্দেশ্য।
ইহার জন্য বলেছেন যে পরমাত্মাকে অর্পন
করে কর্ম করো অর্থাৎ
নিষ্কাম কর্ম করো। কারন নিষ্কাম কর্ম করার নামই
সন্ন্যাস। "যস্ত কর্মফলত্যাগী স ত্যাগী
ভিধীয়তে " গীতা ১৮।১১ এই শ্লোকে
বলছেন যে, যিনি কর্মের ফল ত্যাগ করেন তিনিই
ত্যাগী। এবং দেহধারী সর্বদা কর্ম কে কদাপি
ছাড়াতে পারে না। এই প্রকারে এখানে
সন্ন্যাসযোগযুক্তাত্মা শব্দ দ্বারা নিষ্কামকর্মী সিদ্ধ
হয়। এবং এখানে ঈশ্বরকে অর্পন একমাত্র
নিষ্কামকর্মীর অভিপ্রায়। অদ্বৈতবাদীর এখানে
একটা ভেদ আছে যে-
"মাং উপৈষ্যসি" অর্থাৎ তুমি ব্রহ্ম হয়ে যাবে। কিন্তু
কৃষ্ণজীর উদ্দেশ্য হচ্ছে তুমি ঈশ্বরের শরণ
প্রাপ্ত হবে।

প্রকৃত পক্ষে ঐ শ্লোকে কি বুঝানো হয়েছে
তা শতপথ বাহ্মণের নিচের বর্ণনা থেকে বুঝাযায়।
শতপথব্রাহ্মণের বর্ণনা অনুসারে (১১/৩/১/২-৪)
মহারাজা জনক ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে বললেন-
"হে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য! তুমি কি যজ্ঞকে
(অগ্নিহোত্র) জান?
উঃ হ্যাঁ জানি, রাজন্।
প্রঃ কী রকম?
উঃ কেবল দুধ।
প্রঃ যদি দুধ না থাকে তাহলে কি দিয়ে আহুতি দিবে?
উঃ ধান বা যব।
প্রঃ যদি ধান বা যব না থাকে তাহলে?
উঃ অন্য ঔষুধীযুক্ত দ্রব্য।
প্রঃ যদি ঔষুধীযুক্ত দ্রব্য না থাকে?
উঃ জঙ্গলের ঔষুধীদব্য।
প্রঃ যদি তা না থাকে?
উঃ জঙ্গলের গাছপালা।
প্রঃ যদি তাও না থাকে?
উঃ তাহলে জল দিয়ে।
প্রঃ যদি জল না থাকে?
উঃ হে রাজন্! যদি কিছুই না থাকে, তবুও যজ্ঞ করা
উচিত। কেবল শ্রদ্ধায় সত্যের অগ্নিহোত্র করুন।"

এই রকম আনন্দদায়ক সংলাপে যজ্ঞের জন্য
প্রয়োজনীয় হব্য পদার্থের উল্লেখ ঋষি
যাজ্ঞবল্ক্য করেছেন। এর অর্থ হল যদি যজ্ঞ
সামগ্রীর প্রত্যেক বস্তু নাও থাকে, এই অবস্থায় যা
আছে, তা দিয়েই যজ্ঞ করা উচিত। ঠিক এই রকম
বাণী ঋগবেদেও পাই আমরা। সেখানে বলা
হয়েছে-
"হে ভগবান! আমার কাছে না আছে গরু(ঘী এর
জন্য), না কুঠার (ভালো ঔষুধী কাঠ কাটার জন্য)
তবুও যজ্ঞ করবো, যেমন কাঠ এনেছি
এগুলোকেই স্বীকার কর, মৌমাছির এঁটোই আমার
ঘী-ভগবান।"
ঋগবেদ ৮/১০২/১৯-২১.

এরপরও যারা বলবেন যে এখানে পূর্জার কথাই বলা
হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে
প্রকৃত অর্থে পূজা কি তা দেখুন একবার। প্রশ্ন হল
পূজা করা উচিত নয় বুঝি? হ্যাঁ, পূজা করতে হবে! তবে,
সে পূজা কেমন জানেন? জড় মূর্তির পূজা জড়ের
মত, আর চেতন মূর্তির পূজা চেতনের মত করা
উচিত। পূজা শব্দের ধাতুগত ও ব্যবহারিক প্রভৃতি
কয়েক প্রকারের অর্থ হয়। পূজা অর্থ আদর,যত্ন
করা। যাকে সংস্কৃততে সৎকার
বলে। কোন বস্তুর যথাযথ ব্যবহার, রক্ষা ও
কাওকে যথাযথ দান দেওয়াকেও পূজা বলে।
এবার একটু বিচার বিবেচনা করে জড়মূর্তি পূজার
অর্থ চিন্তা করে দেখুন। জড়মূর্তির পূজা মানে
সেই বস্তুকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখা।
মূর্তিটিকে এমন
স্থানে রাখা যেখানে সেই মুর্তিটির কোন
প্রকার ক্ষতি না হয়। মানে ভেঙ্গে না যায় বা
ময়লা না হয় বা তার ঔজ্জ্বল্য নষ্ট না হয় বা
অবহেলিত হয়ে না থাকে।এখানে মূর্তি পূজার অর্থ
জড়মুর্তির যথাযথ উপযোগ,উচিত রক্ষণাবেক্ষণ।
পূজা মানে এই নয় যে, প্রত্যেক বস্তুর সামনে ঢিপ
ঢিপ
করে মাথা ঠুকে তাতে ফুল বেলপাতা ,
তুলসীপাতা,ফল মিষ্টি ও নৈবদ্য অর্পন করা।
যেমন নাকি একজন আরেক জনকে বললে-
'আরে
ভাই! এই সাধুজীর পেট পূজা করে দাও।'
এর মানে এই নয় যে সাধুর পেটের উপর কিছু ফুল
তুলসী বেলপাতা ও মন্ডা মিষ্টি রেখে প্রনাম করা!
বরং এর মানে হলো সাধুকে ভালো করে খাইয়ে
সন্তুষ্ট
করা। আবার এক জন আরেক জনকে বলল-
এই গুন্ডা বা চোরটাকে একটু পিঠ পূজা করে দাও
তাহলে সে শান্ত হবে!
এখানে কি এর মানে হবে ঐ গুন্ডা বা চোরের
পিঠের উপর কিছু ফুল তুলসী বেলপাতা ও মিঠাই
মিষ্টি রেখে প্রণাম করা? বরং এর মানে হল তার
পিঠের উপর লাঠি দিয়ে কষে কিছু মার দেওয়া।
দেখলেনতো এক জায়গায় পূজার অর্থ খাওয়ানো

অন্য জায়গায় মার দেওয়া। ঠিক তেমনি জড়মুর্তির
পূজার অর্থ- মুর্তিকে যথা স্থানে রাখা যেন তার
চাকচিক্য নষ্ট না হয়, ময়লা না জমে। জড়মূর্তির
সামনে ফুল তুলসী বেলপাতা ও মিঠাই মিষ্টি দিয়ে
তাকে ঈশ্বর আছেন ভেবে মাথা ঠুকে প্রণাম
করার অর্থ মূর্তি পূজা নয়। কেননা জড়মুর্তিতে সে
যোগ্যতা নেই
যে, সে তোমার ফুল ফল মিঠাই মিষ্টি খাবে। যত
সজীব ও চেতন মূর্তি আছে এ জগতে,যথা- মাতা,
বাবা, গুরু, অতিথি,সন্যাসী, উপদেশক বা অন্য প্রাণী,
এরা সবাই ফল মূল মিঠাই মিষ্টি পেয়ে লাভবান হয়। আর
এই সব দ্বারা এদের পূজা করা উচিত। এখানে পূজা
অর্থ আদর যত্ন করা। সংস্কৃততে যাকে সৎকার
বলে। আর এর
নাম হল সজীব মূর্তি পূজা। এখন অনেকে এর
বিরূদ্ধেও গলা উচিয়ে কথা বলবে, তাই আমার
কথাগুলো যে ঠিক তার জন্য পূজা সম্পর্কে তাদের
জন্য কিছু উদাহরণ
দেখাবো মনুস্মৃতি থেকে! দেখুন  নারীদের
পূজা করার কথা-

"যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বস্ত্র অলঙ্কার
ইত্যাদি দ্বারা পূজা বা সমাদর প্রাপ্ত হন, সেখানে
দেবতারা প্রসন্ন থাকেন। আর যে বংশে
স্ত্রীলোকদের পূজা বা সমাদর নেই, সেখানে
সমস্ত কাজই নিষ্ফল হয়ে যায়।"
মনুস্মৃতি ৩।৫৬.
"যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী,
পুত্রবধূ
ইত্যাদি স্ত্রীলোকেরা পূজিত না হয়ে বা অনাদৃত
হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ অভিচার হতের মত ধন
পশু প্রভৃতির সাথে সর্বতোভাবে বিনাশ প্রাপ্ত হয়।"
মনুঃ ৩।৫৮.
"অতএব যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, এই রকম
পতিসম্বন্ধীয় লোকেরা বিভিন্ন সৎকার্যের
অনুষ্ঠানে এবং নানা উৎসবে অলঙ্কার, বস্ত্র ও
ভোজনের দ্বারা নিত্য স্ত্রীলোক বা নারীদের
পূজা বা সমাদর বিধান করবে।"
মনু ৩।৫৯.
দেখলেন তো এক এক জায়গায় পূজার অর্থ এক
এক
রকম? তাছাড়া গীতার ঐ শ্লোকে পূজা নামক কোন
শব্দই নেই।

  1. তোর বাপের শ্রাদ্ধ করছত।হালার পুত।কর্মকাণ্ড আর জ্ঞানকাণ্ড মিশায়া জগাখিচুড়ি করছত।

    ReplyDelete