প্রশ্ন- দাদা দৈব গুণ সম্পন্ন মানুষ কি হতে
পারে অর্থাৎ মানুষের পক্ষে কি দেবতা
হওয়া সম্ভব? এই ব্যাপারে গীতায় কি বলা
আছে?
পারে অর্থাৎ মানুষের পক্ষে কি দেবতা
হওয়া সম্ভব? এই ব্যাপারে গীতায় কি বলা
আছে?
উত্তর- হ্যাঁ, অবশ্যই মানুষের পক্ষে দৈবগুণ
প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষই
দেবতা হতে পারে। জীব তার ঐকান্তিক
চেষ্টা ও সাধনার বলে নিজেকে পশুত্ব
থেকে মনুষত্বে ও মনুষত্ব থেকে দেবত্বে
উন্নিত করতে পারে। গীতাও এমনই বলে,
দেখুন-
"হে পার্থ! এই জগতে দৈব ও আসুর এই দুইপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষই
দেবতা হতে পারে। জীব তার ঐকান্তিক
চেষ্টা ও সাধনার বলে নিজেকে পশুত্ব
থেকে মনুষত্বে ও মনুষত্ব থেকে দেবত্বে
উন্নিত করতে পারে। গীতাও এমনই বলে,
দেখুন-
প্রকার মানুষ সৃষ্টি হয়েছে।" গীতা ১৬/৬.
"হে ভারত! এই সমস্ত গুণগুলি দৈবীং অর্থাৎ
দেবগুণের যোগ্য তথা দিব্যভাব সমন্বিত
ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়-
১.ভয়হীনতা, ২.অকুটিলতা, ৩.জ্ঞানযোগে
নিষ্ট, ৪.দাতা ৫.বহিরিন্দ্রিয় সংযত ৬.যজ্ঞ
অনুষ্ঠান ৭.যারা বৈদিক শাস্ত্র অধ্যায়ন করে
৮.তপস্যায় একনিষ্ঠ ৯.সরল ১০.অহিংসা পরায়ণ
১১.সত্যনিষ্ঠ ১২.ক্রোধশূন্য ১৩.ত্যাগী
১৪.শান্তিপ্রিয় ১৫.অন্যের দোষ বা পরছিদ্র
না দেখা ১৬.সমস্ত জীবে দয়ালু ১৭.লোভহীন
১৮.মৃদুতা বা শান্ত বা ভদ্র ১৯.কু-কর্মে লজ্জা
২০.অচপলতা ২১.তেজস্বী ২২.ক্ষমাশীল
২৩.ধৈর্য্যশীল ২৪.শৌচ অর্থাৎ বাহির ও
ভেতরের মলিনতাহীন ২৫.দ্রোহরহিত বা
কারো সাথে শত্রুতা না করা
২৬.অভিমানশূণ্য।"
গীতা ১৬।১-৩.
অর্থাৎ যারা উপরোক্ত গুণ সম্পন্ন তারাই মূলত
দেবতা।
আর গীতা অনুসারে অর্জুনও এই গুণ সম্পন্ন
ছিলেন অর্থাৎ দেবত্বেরগুণ নিয়েই
জম্মেছিলেন, দেখুন-
"দৈবী সম্পদ অর্থাৎ দেব যোগ্য সাত্ত্বিক গুণ
সংসার বন্ধন থেকে মুক্তিলাভের হেতু, আর
আসুর সম্পদ সংসারে বদ্ধ হওয়ার হেতু। হে
পান্ডব, তুমি শোক করো না, দৈবী সম্পদ
নিয়েই তুমি জম্মেছ।" গীতা ১৬।৫.
এখন অনেকে বলবে যে মহাভারত অনুসারে
অর্জুনের তো এই ২৬টা গুণ ছিল না, তাহলে
তিনি কি করে দেবতা হতে পারে? এর
উত্তরও পরিষ্কার, সকলগুণ থাকতে হয় না। তা
বৈদিক শব্দ কোষ থেকেই দেখুন-
"দেবো দানাদ্বা, দীপনাদ্বা, দ্যোতনাদ্বা,
দুংস্থানো ভবতীতি বা।"
নিরুক্ত অঃ৭ খং১৫.
দুংস্থানো ভবতীতি বা।"
নিরুক্ত অঃ৭ খং১৫.
ভাষার্থ- দান করিলেই দেব সংঙ্গা প্রাপ্ত
হয়। আর দান বললেই বুঝতে হবে যে, আপনার
দ্রব্য অপরের জন্য অর্পন করা, দ্বীপন শব্দে
প্রকাশ বুঝায়, দ্যোতন শব্দের অর্থ
সত্যোপদেশ। এদের মধ্যে দান বিষয়ে
মুখ্যদাতা এক পরমেশ্বরই আছেন, যিনি
জগতের সমস্ত পদার্থই প্রদান করে
রেখেছেন। এইরূপ বিদ্বান ব্যক্তিগণও
বিদ্যাদি পদার্থ দান করেন, এই জন্য
তাঁদেরকেও দেবতা
বলে। দ্বীপন অর্থাৎ সমস্ত মূর্তিমান দ্রব্যের
প্রকাশক হেতু, সূর্য্যাদি লোককেই দেবতা
বলে। পুনরায় মাতা, পিতা, আচার্য, অতিথি ও
পালনকর্তা এবং যিনি বিদ্যা ও সত্য উপদেশ
প্রদান করেন, এরা সকলেই দেবতা। কারণ
বিদ্যান ব্যক্তিরা বিদ্যাদি পদার্থ দান
করেন।
0 মন্তব্য(গুলি)