https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণঃ৪৫- নিকট আত্মীগণের সাথে কি যুদ্ধ করাসম্ভব? এটা তো এক ধরণের অধর্ম।

Friday, July 21, 2017


প্রশ্ন- যদি কখনো দেখা যায় যে আমার
আশেপাশের নিকট আত্মী-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবই
আমার ক্ষতির লক্ষে আমার ও আমার
পরিবারের সাথে যুদ্ধভিলাষী হয়, তখন আমার
কি করা উচিত? এই ব্যাপারে গীতা কি বলে?
নিকট আত্মীগণের সাথে কিরূপে যুদ্ধ করা
সম্ভব? এটা তো এক ধরণের অধর্ম।

উত্তর- যদিও আমরা অহিংসবাদী, যদিও
আমরা বৈদিকরা সদা পরমেশ্বরের নিকট
উপাসনা করে বলি-
" য়ো৩স্মান্ দ্বেষ্টি য়ং বয়ং দ্বি
ষ্মস্তং বো জম্ভে দধমঃ । অথর্ববেদ
৩/২৭/১-৬.
অর্থাৎ আমাদের পরস্পরের হিংসাত্বক ভাব
তোমার(পরমেশ্বরের) পাপবিনাশি শক্তিতে
স্থাপন করি।
.
তবুও মনে রাক্ষা উচিত যেহেতু উপনিষদ
গীতার মাতা স্বরূপ, তাই সেই উপনিষদের
দিকেও আমাদের নজর দিতে হয় একটু।
তৈত্তিরীয় উপনিষদের শিক্ষা বল্লবীতে
আমরা দেখতে পাই গুরুগৃহে বা শিক্ষকের
নিকট যখনই শিষ্যরা তথা ছাত্ররা শিক্ষা
গ্রহণ করতে যায়, তখন তিনি তাদেরকে
অধ্যাপনান্তে যে শিক্ষা দেন তা দেখলেই
বুঝতে পারবেন যে আমরা অহিংসবাদী,
কিন্তু আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আছে
আমাদের। কারণ আত্মরক্ষাও ধর্ম, তাই
উপনিষদের শিক্ষাবল্লবীতে ঋষিরা
আত্মরক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন।
যথা-
.
" কুশলান্ন প্রমদিতব্যম্ ।" তৈত্তিঃ উপঃ
১/১১/১.
অর্থাৎ আত্মরক্ষা বিষয়ে অনবহিত হইও না।
.
এখন গীতা থেকে দেখুন আত্মরক্ষা কত বড়
ধর্ম-
.
"ঘোর সংকটময় যুদ্ধ স্থলে এই ধরণের
অনার্যজন সেবিত, অকীর্তিকর মোহে পড়া
কারোই উচিত নয়। তুমি যাকে অধর্ম বলছ, তা
প্রকৃত পক্ষে অধর্ম নয়, এটা তোমার
কাপুরুষতা। হে পার্থ! হৃদয়ের ক্ষুদ্র দুর্বলতা
ত্যাগ করে উঠে দাড়াও।"
গীতা ২/২-৩.
"যাদের জন্য শোক করা উচিত নয়, তাদের জন্য
শোক করছ, আবার পন্ডিতের মতো কথা বলছ।
পন্ডিতেরা জীবিত বা মৃত কারো জন্যই শোক
করে না। দেহীর এই দেহে যেমন কৌমার,
যৌবন, জরা ক্রমে ক্রমে আসে, তাতে দেহী
আত্মার কোন পরিবর্তন ঘটে না, তেমনি
দেহান্তর প্রাপ্তিতেও তথা মৃত্যুতেও দেহের
পরিবর্তন হয়, আত্মার নয়। ইন্দ্রীয়ের সংগে
বিষয়ের সংযোগ হয় বলে শীত-উষ্ণ, সুখ-দুঃখ
ইত্যাদির বোধ হয়। এগুলি আসে আর যায়, তাই
এই সব অনিত্য। অতএব হে মিত্র! এগুলোকে
সহ্য কর। যে ব্যক্তি এই সবে সমভাবাপন্ন, সে-
ই অমৃতত্ত্ব লাভের যোগ্য। হে মিত্র! তুমি যুদ্ধ
কর। মনে রেখো আত্মা মরেনও না, আবার
মারেনও না। যেমন মানুষ পুরাতন বস্ত্র ত্যাগ
করে নতূন বস্ত্র পরিধান করে, সে রকম আত্মা
পুরাতন দেহ ত্যাগ করে নূতন দেহ ধারণ করেন।
হে মিত্র! জীবগণ জম্মের আগে অপ্রকাশিত
অবস্থায় থাকে, স্থিতিকালে প্রকাশিত হয়,
প্রলয় কালে আবার অপ্রকাশ অবস্থায় ফিরে
যায়। সুতরাং এতে শোক করার কি আছে?
প্রাণিগণের দেহে অবস্থিত আত্মা সর্বদা
অবধ্য। তাই কোন প্রাণীর জন্যই তোমার শোক
করা উচিত নয়। স্বধর্মের দিকে তাকিয়েও
তোমার ভীত হওয়া উচিত নয়, কারণ ধর্ম যুদ্ধ
অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর
কিছুই নেই। যদি তুমি এরকম ধর্ম যুদ্ধ না কর,
তবে স্বধর্ম ও কীর্তি ত্যাগ করে পাপ প্রাপ্ত
হবে। তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের
নিন্দা করে অনেক অকথ্য কথা বলবে। এর
চেয়ে অধিক দুঃখের আর কি হতে পারে?
যুদ্ধে নিহত হলে স্বর্গ লাভ করবে, আর জয়ী
হলে এই পৃথিবী ভোগ করবে। অতএব যুদ্ধের
জন্য দৃঢ় সঙ্কল্প করে উঠে দাঁড়াও। সুখ-দুঃখ,
লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয়কে সমান চিন্তা করে
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। এভাবে যুদ্ধ করলে
পাপ স্পর্শ করবে না।" গীতা ২/১১-৩৮
সংক্ষেপে।
.
"হে মিত্র! তুমি যোগস্থ হয়ে কর্ম কর। কর্ম
ফলের প্রতি আকঙ্ক্ষা ত্যাগ এবং সিদ্ধি ও
অসিদ্ধিতে সমজ্ঞান করে কর্ম কর। মনে
রেখো, ফলাফলে চিত্তের সমত্বকেই যোগ
বলে। কর্ম যোগ হচ্ছে কর্মের কৌশল, সুতরাং
কৌশল অবলম্বন করে কর্ম কর। বিষয়ের চিন্তা
করতে করতে সেই বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা
জম্মে, আসক্তি থেকে কাম, কাম হতে ক্রোধ
জম্মে। ক্রোধ হতে বিবেক নাশ, বিবেকনাশ
হতে স্মৃতিবিভ্রম, স্মৃতিভ্রংশ হতে বুদ্ধিনাশ,
বুদ্ধিনাশ হতে মানুষ পুরুষার্থ লাভের অযোগ্য
হয়ে পড়ে। আসক্তি ও  বিদ্বেষ মুক্ত কিন্তু
সংযতমনা পুরুষ নিজের বশীভূত ইন্দ্রীয়গুলি
দিয়ে বিষয়সমূহ ভোগ করিয়াও আত্মপ্রসাদ
লাভ করেন। প্রসন্নতা লাভে ইহার সব দুঃখ
লাশ হয়। অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তির চিত্ত সদা
অপ্রসন্ন, অপ্রসন্ন চিত্তের পরমার্থ ভাবনা হয়
না, পরমার্থ ভাবনা না থাকিলে শান্তুিও হয়
না। আর যার শান্তি নেই তার সুখ কোথায়?
বায়ু যেমন নৌকাকে বিপর্যস্থ করে, সেই রকম
ধাবমান ইন্দ্রীয়গুলির যেটিকে মন অনুগমন
করে সেটিই ইহার প্রজ্ঞাকে হরণ করে।
যেমন জলরাশি পরিপূর্ণায়মান সমুদ্রে প্রবেশ
করলেও তা স্ফীত হয়ে বেলা ভুমি অতিক্রম
করে না, সেরূপ সকল কামনারাশি যে পুরুষে
প্রবেশ করেও তাকে বিক্ষুব্ধ করে না, সে-ই
শান্তি লাভ করে। কামনার বিষয়কামী অজ্ঞ
পুরুষ সেই শান্তি পায় না। যিনি সকল কামনা
ত্যাগ করে নিঃস্পৃহ, নিরহঙ্কার ও নির্মম
হইয়া বিচরণ করেন, তিনিই শান্তি লাভ
করেন।" গীতা ২/১৩-৭১ সংখিপ্ত।
.
"কাম, ক্রোধ, রজোগুণ থেকে উৎপন্ন, এরা
দুষ্পূরণীয় ও মহাউগ্র, এই জগতে সর্ব অনর্থকরী
শত্রু বলে জানবে। যেমন ধোঁয়ার দ্বারা আগুন
এবং মলের দ্বারা আয়না আবৃত থাকে, যেমন
জরায়ু দ্বারা গর্ভস্থ শিশু আবৃত থাকে, সেইরূপ
কামের দ্বারা এই বিবেক বুদ্ধি আবৃত থাকে।
জ্ঞানীর চির শত্রু এই দুষ্পূরণীয় কামতৃষ্ণারূপ
অনলের দ্বারা বিবেক বুদ্ধি আবৃত থাকে।
ইন্দ্রিয় সকল, মন ও বুদ্ধি এই কামের আশ্রয়
বলা হয়। এই কাম ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা
বিবেকজ্ঞান আচ্ছন্ন করে জীবকে
বিমোহিত করে। হে মিত্র! তুমি প্রথমে
ইন্দ্রিয়সমূহ বশীভূত করে জ্ঞান ও বিজ্ঞান
নাশক এই কামকে পরিহার কর। ইন্দ্রিয়
সকলকে দেহ থেকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়। ইন্দ্রিয়
সকল হতে মন শ্রেষ্ঠ, মন থেকেও শ্রেষ্ঠ হল
বুদ্ধি, পরন্তু বুদ্ধি থেকেও শ্রেষ্ঠ হল কিন্তু
আত্মা। হে মিত্র! এরূপ বুদ্ধি হতে শ্রেষ্ঠ
আত্মাকে জানিয়া আত্মশক্তি দ্বারা
আত্মাকে নিশ্চল করিয়া কামরূপ দুর্জয়
শত্রুকে বধ কর।" গীতা ৩/৩৭-৪৩ সংক্ষেপ।
.
"হে মিত্র! অতএব নিজের অজ্ঞান থেকে
উৎপন্ন হৃদয়ে অবস্থিত এই সংশয় জ্ঞান রূপ
তরবারি দ্বারা ছিন্ন করে যোগ অবলম্বন
করে ওঠ, যুদ্ধ কর।" গীতা ৪/৪২.
.
কেউ এক জন তোমার এক গালে থাপ্পড় দিলে
তুমি আরেকটা গালকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য
পেতে দিয়ে এসো না। কারণ 'তুমি অহিংস'
এটা তা প্রমাণ করে না, বরংচ এই ঘটনা এটাই
প্রমাণ করে যে- 'তুমি নপুংশক, তুমি ক্লিবত্ব
প্রাপ্ত হয়েছ।' তাই এই ধরণের অজ্ঞানতাকে
ছিন্ন করে আত্মরক্ষায় উঠে দাঁড়াও, এমন
ভাবে চল যেন সে তোমার গায়ে আঁচড়ও দিতে
না পারে। কারণ প্রাচীন বৈদিক
শিক্ষাগুরুগণ আমাদের এটাই শিক্ষা
দিয়েছেন যে-
.
"কুশলান্ন প্রমদিতব্যম্ অর্থাৎ আত্মরক্ষা
বিষয়ে অনবহিত হইও না।" তৈঃউঃ ১/১১/১.
.
ওম্ শান্তি শান্তি শান্তি