https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

রন্তিদেবের ভোজনশালায় কি দুই সহস্র গাভী রন্ধন করা হতো?

Sunday, August 27, 2017

মহাভারতের সমন্ধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ভ্রম এই যে, রাজা রন্তিদেবের রাজ্যে প্রতিদিন দুই সহস্র গাভী রান্ন করা হতো অতিথিদের জন্য। যার উল্লেখ বেশ রসালোভাবে রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার "ভোলগা থেকে গঙ্গা" বইয়ের ১৫৮ পৃষ্ঠাই উল্লেখ করেছেন।
                   
মূল শ্লোক উদ্ধৃতিটি তিনি মহাভারতের বনপর্বের ২০৮ অধ্যায় থেকে দিয়েছেন । শ্লোকটি হচ্ছে -

রাজ্ঞো মহানসে পূর্বে রন্তিদেবস্য বৈ দ্বিজ।
দ্বে সহস্রে তু বধ্যতে পশুনমন্বহং তদা।।


মহাভারতে সব সংস্করণে এ শ্লোকটি পাওয়া যায় না।গীতা প্রেস থেকে প্রকাশিত মহাভারতের ২০৭ এবং ২০৮ অধ্যায়ের কোন স্থলেই এই শ্লোকটি নেই। উক্ত অধ্যায়ে ধর্মব্যাধ এবং কৌশিক ব্রাহ্মণের উপাখ্যানে ধর্মব্যাধ কোন ঐতিহাসিক রাজার বর্ননা করেন নি।

আমাদের সর্বপ্রথম মান্যতা বেদ। কারণ বেদ ভিন্ন সমস্ত শাস্ত্র কালান্তরে প্রক্ষিপ্ততার স্বীকার হয়েছে। তাই কোন শাস্ত্রের সিদ্ধান্তকে অবশ্যই বেদ দ্বারা যাচাই করা উচিৎ।  এক্ষনে উক্ত শ্লোকটির উপর একটু সমীক্ষা করা যাক -
(i) মহাভারত অনুশাসন পর্ব অধ্যায় ১১৫ শ্লোক ৬৩-৬৭  মধ্যে অনেক রাজার নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তারা কখনো মাংস খান নি। সেই নামগুলোর মধ্যে রন্তিদের নামও উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ যিনি কখনো মাংস খান না তিনি গরু মাংসের ভোজ দেবেন এটা কখনো হতে পারে না।
                                   

(ii) যদি রন্তিদেবের রাজ্যে প্রতিদিন ২০০০ গাভী হত্যা হয় তবে, বছরে গাভী হত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭,২০,০০০। আর এ নিয়ম যদি ক্রমাগত কয়েক বছর চলতে থাকে তবে পৃথিবী থেকে গাভী হারিয়ে যেত।

(iii) মহাভারত দ্রোণপর্ব অঃ ৬৭ তে নারদ সৃন্জয় কে রাজা রন্তিদেবের সমন্ধ্যে বর্ণনা করে বলেন যে, রন্তিদেব প্রত্যেহ ১০০০ নিষ্ক দান করেন। এক হাজার সুবর্ণের ষাড়ের সাথে শত শত গাই এবং একশত আট স্বর্ণমুদ্রা এরূপ ধনকে নিষ্ক বলে।                         

(iv) মহাভারত শান্তপর্ব ২৬২। ৪৭ এ গাভীহত্যাকে মহা পাপ বলে গণ্য করা হয়েছে -

অঘ্না ইতি গবাং ক এতো হন্তমুর্হতি।
মহচ্চকারাকুশলং বৃষং গাং বাহহলভেন তু য়ঃ।।


অর্থাৎ ,  শ্রুতিতে গাভীকে অঘ্না (অবধ্য) বলা হয়েছে। পুনারায় তাকে হত্যার জন্য কে বিচার করেন? যে গাই কে এবং ষাড়কে মারেন তিনি মহা পাপ করেন। 

                         


শ্রুতি মধ্যে গাভী হত্যার বিরুদ্ধে প্রমাণ -
★ প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।। (ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- হে জ্ঞানবান পুরুষের নিকট আমি বলেতেছি নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী সদৃশ গাভীকে হত্যা করিও না।
★ " অদিতিম মা হিংসী" (যজুর্বেদ ১৩। ৪৯)
হত্যার অযোগ্য গাভীকে কখনো মেরো না।
 " মা গাম অনাগাম অদিতিম বধিষ্ট" (ঋগবেদ ৮।১০১।১৫)
--- নিরপরাধ গাভী এবং ভূমিতূল্য গাভীকে কখনো বধ করো না।
"অঘ্না ইব" (অঃ ৩।৩০।১)। গাভী সমূহ বধের অযোগ্য।
★ যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা। (অথর্বেদ ১।১৬।৪)
--- যদি আমাদের গাভীকে হিংসা কর যদি অশ্বকে যদি মনুষ্যকে হিংসা কর তবে তোমাকে সীসক দ্বারা বিদ্ধ করিব যাহাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না  থাকে।


রাহুল জী মহাভারতে কে পঞ্চম বেদ সঙ্গা দিয়ে গোহত্যাকে শাস্ত্রীয় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন।তিনি কি মহাভারতের পূর্বে মূল চতুর্বেদ কদাপি অধ্যয়ন  করেছিলেন? করলে বোধ হয় তিনি গোহত্যাকে শাস্ত্রীয় বলতেন না। আর রাহুল জীর পঞ্চম বেদ মহাভারতেও তো গো হত্যাকে মহাপাপ বলা হয়েছে যার উল্লেখ আমরা করেছি। তো কিভাবে ইহা সম্ভব হতে পারে যে, রাজা রন্তিদেব সহস্র গাভী বধ করতেন?

রাহুল জী তার ভোলগা থেকে গঙ্গা বই এর ফুট নোটেদ্রোণপর্বের ৬৭ অধ্যায়ের প্রথম দুটো শ্লোকের মধ্য তিনটি লাইনের উল্লেখ করেন। প্রথম শ্লোক পুরোটা এবং দ্বিতীয় শ্লোকের অর্ধেক -

সাংকৃতু রন্তিদেবং চ মৃতং সৃংজয় শুশ্রুম।
যস্য দ্বিশতসাহস্রা আসন্ সুদা মহাত্মনঃ।১।।
গৃহানভ্যাগতান্ বিপ্রানতিথীন্ পরিবেষকাঃ।


এই লাইনগুলো দিয়ে রাহুল জী প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, রন্তিদেবের রাজ্যে দুই সহস্র গাভী রান্না করা হতো।

কিন্তু রান্নার সংখ্যা সংস্কৃতে দুই শত সহস্র (দ্বিশতসাহস্রা) দুই সহস্র নয়। আর শ্লোকগুলোতে তো গাভী রান্নার কোন কথাই আসে নি। রাহুল জী অনেক চালাকীর সাথে অর্ধেক শ্লোক উল্লেখ করে ভ্রম সৃষ্টি করেছেন। বাকী অর্ধেক শ্লোক পড়ুন

পক্বাপক্বং দিবারাত্রং বরান্নমমৃতোপমম্।।২।।

এই শ্লোকে তো স্পষ্ট যে, মূলতো কি রান্না হতো রন্তিদেবের রাজ্যে । শ্লোকে ( বরান্ন অমৃত পমম্) শব্দ এসেছে যার অর্থ অমৃতের সমান উত্তম অন্ন যা পায়েস, ক্ষীর, দধি ইত্যাদি। শ্লোক দুটির পূর্ণঙ্গ অর্থ হচ্ছে -

নারদ সৃন্জয় কে বলছন - সৃন্জয়! শুনেছো সংকৃতির পুত্র রন্তিদেবও জীবিত নেই। সেই মহাত্মা নরেশের ওখানে দুই লাখ পাচক ছিলো, যারা ব্রাহ্মণদের জন্য অমৃতের সমান মধুর অন্ন রান্না করতো।


অর্থাৎ রন্তিদেবের রাজ্যের রান্নায় গাভী আসতো দুধ প্রদানের জন্য তাদের মাংস সরবরাহের জন্য নয়

রাহুল জী একই পৃষ্ঠায় উক্ত অধ্যায়ের আরো একটি শ্লোক অত্যন্ত বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ঘৃণ্য মানষিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন - অতিথিদের সংখ্যা বেড়ে উঠার কারণে মাংস কম পড়ে যাবার ভয়ে পাচকরা মাংসের বদলে ঝোল বেশী করে নেবার অনুরোধ জানাতো। শ্লোকটি হচ্ছে -

তত্রস্ম সুদাঃ ক্রোশন্তি সুমৃষ্টমণিকুন্ডলাঃ।।১৫
সুপং ভূয়িষ্ঠমশ্নীধ্বং নাদ্য মাসং যথা পুরা।


শ্লোকটিতে রাহুল সাংকৃত্যায়ন মাসং (month) শব্দটির পাঠে মাংস (meat) করে এরূপ অনর্থ করেছেন। শ্লোকটির পদপাঠগুলোর সঠিক অর্থ হচ্ছে -

(সুদাঃ) পাচকরা (সুমৃষ্ট মণিকুন্ডলাঃ) মণিময় কুন্ডল ধারণ করে (ক্রোশন্তি) ডেকে ডেকে উচ্চস্বরে বলেন (তত্র) এখানে (অশ্নিধ্বম্) আপনারা ভোজন করুন(ভূয়িষ্ঠ) অধিক (সুপম্) তরল রান্না ডাল আদি (যথা) যাহা (নাদ্য) রান্না করা হয় নি (মাসং পুরা) গত এক মাসে।

সরলার্থ হচ্ছে , পাচকরা মণিময় কুন্ডল ধারণ করে ডেকে ডেকে উচ্চস্বরে বলেন - আপনারা অধিক ডাল আদি অধিক ভোজন করুন এরূপ রান্না গত একমাসে হয় নি।
                 
                                       

অর্থাৎ শ্লোকটিতে মাসং (month) শব্দের পাঠ রয়েছে, মাংস(meat) নয়। যদি শ্লোকটিতে রাহুল জীর মান্য অনুসারো মাংস ধরে নেওয়া হয় তবুও অর্থের অনর্থ ঘটবে না। কারণ বৈদিক নিরুক্ত আদি গ্রন্থ অনুসারে, মনন, সাধক, বুদ্ধিবর্ধক মন কে রুচি দানকারী বস্তুকে বলা হয়েছে। যা ফলের রসালো অংশ, ঘী, মাখন, ক্ষীর আদি পদার্থ (মাংস মাননং বা মানসং বা মনোস্মিনৎসীদতীতি ; নিরুক্ত ৪।৩)।

শান্তিপর্বের ২৯২ অধ্যায়ের ৭ শ্লোকে দেখা যায় যে, রন্তিদেব ঋষি মুনিদের ফল মূল দিয়ে আপ্যায়ন করতেন মাংস দ্বারা নয়।
রন্তিদেবেন লোকেষ্টা সিদ্ধিঃ প্রাপ্তা মহাত্মনা।
ফলপত্রেরথো মূলৈর্মুনীনর্বিতবাংশ্চ সঃ।।


অর্থাৎ মহাত্মা রন্তিদেব ফল মূল দিয়ে ঋষি মুনিদের পূজন করেছিলেন। ইহা দ্বারা তিনি সিদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছিলেন, যাহা সব লোক অভিলাস রাখেন। 

                         

গোচর্ম হতে নির্গত রস থেকে কি নদী হওয়া সম্ভব?

রাহুল সাংকৃত্যায়ন উক্ত পৃষ্ঠাই আরো লিখেছেন - রন্তিদেবের ভোজনশালায় প্রতিদিন দুই হাজার করে গরু মারা হতো। তাদের চামড়া রসুইখানায় রাখা হতো। তা থেকে যে রস গড়িয়ে পড়তো তাতে এক নদীর সৃষ্টি হয়। চর্ম থেকে উৎপত্তি বলে তার নাম চর্মণবতী।

এর শ্লোকটির উল্লেখ মহাভারত শান্তিপর্বের ২৯ তম অধ্যায়ে রয়েছে। শ্লোকটি আলোচনার জন্য আমরা শ্লোকটির আগে এবং পরের কয়েকটি শ্লোকের অর্থ ক্রমান্বয়ে দেখবো -

উপতিষ্ঠন্ত পশবঃ স্বয়ং তং সংশিতব্রতম্।
গ্রাম্যারণ্যা মহাত্মনং রন্তিদেবং যশস্বিনম্।।১২২।।


কঠোর ব্রতের পালনকারী, যশস্বী মহাত্মা রাজা রন্তিদেবের নিকট জঙ্গলের পশু নিজে নিজেই যজ্ঞের জন্য উপস্থিত হন।।১২২

মহানদী চর্মরাশেরুৎকলেদাত্ সসৃজে যতঃ।
ততশ্চর্মণ্বতীর্বং বিখ্যাতা সা মহানদী।। ১২৩।।


সেখানে চর্মরাশী দ্বারা যে জল প্রবাহিত হয় তা থেকে এক বিশাল নদী উৎপন্ন হয়, যাকে চর্মণবতী (চম্বল) এর নামে বিখ্যাত।

ব্রাহ্মণেভ্যো দদৌ নিষ্কান্ সদসি প্রততে তৃপঃ।
তুভ্যং নিষ্কং তুভ্যং নিষ্কমিতি ক্রোশন্তি বৈদ্বিজাঃ।১২৪।।
সহস্রং তুভ্যমিত্যুক্তা ব্রাহ্মণান্ সম্প্রপদ্যতে।


রাজা নিজে বিশাল যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের সোনার নিষ্ক দান করেন। সেখানে দ্বিজলোগ ডেকে ডেকে বলেন ব্রাহ্মণ এখানে তোমাদের জন্য নিষ্ক, এখানে তোমাদের জন্য নিষ্ক, কিন্তু কেউ নেবার জন্য এগোয় না। পুনরায় তারা বলে যে, তোমাদের জন্য সহস্র নিষ্ক তখন গ্রহনকারী অনেক ব্রাহ্মণ উপলব্ধ হয়।

এই শ্লোকগুলোতে স্পষ্ট যে, রন্তিদেবের রাজ্যে কোনরূপ হত্যা হতো না। কারণ সহস্র গাভী হত্যার পর আবার সবাই কে সহস্র গাভী দান করতে দিনে বহু সংখ্যক গাভীর প্রয়োজন। আর যদি গাভীদের সেখানে হত্যাই করা হতো গাভীরা সেখানে নিজে থেকে কখনো আসতো না।

 রামচরিতমানে গোস্বামী তুলসীদাস লিখেছেন -

মুনিগণ নিকট বিহগ মৃগ জাহী। বাধ বধি বিলেকি পরাহি।।
হিত অনহিত পসু পচ্ছিউ জানা। মানুষ তনু গুন গ্যান নিধানা।।

(অযোধ্যা কান্ড দোহা ২৬৩-২৬৪)


                           
অর্থাৎ, দেখো না পশু পক্ষিগণ কেমন নির্দ্ধিতায় মুনিগনের নিকট গমন করেন তারাই আবার হিংসায় বিশ্বাসী ব্যাধকে দেখে পলায়ন করেন। শত্রু মিত্রদের চেনবার ক্ষমতা পশু পক্ষিদেরও আছে আর মানবতনু বিশেষ জ্ঞান গুন সম্পন্ন।
                               

তো ইহা স্পষ্ট যে, গাভীগুলো রাজা রন্তিদেবের নিকট দুধ সরবরাহের জন্যই গমন করতো। তারপর সেই গাভীগুলোকে যজ্ঞানুষ্ঠানে রাজা ব্রাহ্মণদের দান করতেন। দানের পূর্বে গাভীগুলোকে উত্তমভাবে পরিষ্কার করার জন্য স্নান করানো হতো যাতে গাভীগুলোকে সুন্দর করে সাজানো যায়। গাভীদের গায়ের চর্ম পরিষ্কারের জন্য জল ব্যবহার করা হতো। সেই অধিক পরিমাণ গাভীদের গায়ের চর্ম হতে নির্গত পরিষ্কৃত জল প্রবাহের ফলে এক নদীর সৃষ্টি হয় তাহাই চর্মণবতী (চম্বল) নদী নামে পরিচিত।

কিন্তু রাহুল সাংকৃত্যায়ন এই ঘটনাটির বিপরীত অর্থ করে হত্যাকৃত গাভীর চর্ম হতে নির্গত রস কর্তৃক নদীর সৃষ্টি করেছেন। যা সম্পূর্ণরূপে অমানবিক কার্য।

এখন কেউ যদি পূর্বোক্ত মহাভারত বন পর্বের রাহুল কর্তৃক উদ্ধত শ্লোকটিতে "বধ্যতে" শব্দটি দেখে প্রমাণ করতে চায় যে, গাভীদের হত্যাই করা হতো। তো তাদের অবগতির জন্য এটা জানানো আবশ্যক যে, বধ্যতে শব্দের অর্থ শুধু বধ অর্থেই ব্যবহৃত হয় না পরন্ত এর অর্থ হয় to tie, to bind ইত্যাদি । " বধ্যতে" শব্দটির উল্লেখ আমরা ঋগবেদ ১০।৮৫।২৮ এ পাই - "পতির্বন্ধেষু বধ্যতে" অর্থাৎ পতি সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ হন।

          
           

পশ্চিমা বিদ্বানগণ গ্রিফিথ আদি বধ্যতে শব্দের অর্থ bond করেছেন।
                             

অতএব মহাভারতের উক্ত শ্লোকের এরূপ অর্থ সম্ভব যে, দুই সহস্র গাভী রান্না ঘরের পাশে আবদ্ধ করে রাখা হতো যাতে গাভীদের নিকট হতে দুধ সংগ্রহ করা যায়।

এটাও ধ্যান রাখা আবশ্যক যে, উক্ত শ্লোক মহাভারতের সব সংস্করনে নেই। ধর্ম ব্যাধ কৌশিক ব্রাহ্মণকে কোন ঐতিহাসিক ঘটনা শোনান নি। যার উল্লেখ আমরা পূর্বেও করেছি। অর্থাৎ রাহুল সাংকৃত্যায়ন এর দাবীগুলো সম্পূ্ণরূপে সত্য নয়।

রাহুল সাংকৃত্যায়ন এর উক্ত বই এর পৃষ্ঠার খন্ডচিত্র




  1. আমি পড়ে দেখলাম আপনার বেদ বিশ্লেষণ।

    ReplyDelete
  2. খুবই ভালো বিশ্লেষণ,খুশি হলাম।

    ReplyDelete
  3. এটা আমি আগেও পড়েছি,,,

    ReplyDelete
  4. আপনার যুক্তি গুলি ভীষণ পরস্পর বিরোধী এবং সচেতন ভাবে কিছু বিষয় এড়িয়ে যাবার চেষ্টা। যেমন কালিদাস এর মেঘদূত এও এই রন্টিদেব এর গো হত্যার কথা বলা আছে আপনি তা এড়িয়ে গেছেন। আবার বেদ এর যে বক্তব্য গুলি আপনি উল্যেখ করেছেন সেখানে বোঝা যাচ্ছে কারণ থাকলে গরু বধ্য। আবার আপনি ভীষণ ভাবে গরুর চামড়া থেকে নদী হওয়া যে অসম্ভব সেটা বলে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করেছেন। প্রথম কথা একটা ঘটনার ব্যাপকতা বোঝাতে অনেকসময় অনেক কথা বলা হয় সেটা কি আক্ষরিক ভাবে ঠিক? আর আপনার কথা অনুযায়ী সীতা দেবীর অগ্নিপরীক্ষা কি করে সম্ভব? আপনি একবার বলছেন ওই অংশ গুলি মূল মহাভারতের অংশ নয়(সেটা সঠিক )আবার ওই শ্লোক টার বব্যাখ্যাও দিতে ছুটছেন। এত দ্বিধা কেনো?

    ReplyDelete
  5. আমার কাছে তো পরস্পরবিরোধী মনে হলো না। বেদ নিয়ে যা বললেন তাতে "হত্যার অযোগ্য" কোন তুলনামূলক বিশেষণ না, এটা একটা ধ্রুবক। যেমন অমর ঈশ্বর, এর মানে তো এই না যে মরণশীল ঈশ্বরও আছে।
    আর মহাভারতের অনেকগুলো অংশে আছে বলে খণ্ডন আবশ্যক, যেমন রামায়ণের অনেকগুলো অংশে রাম কর্তৃক দুর্গাপূজার কথা আছে, যা আসলে ঠিক নয়।

    ReplyDelete
  6. উপকৃত ও নিশ্চিন্ত হলাম

    ReplyDelete
  7. মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩৯ এবং ৪০ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন উৎসর্গের পশু উৎসর্গের জন্যই। সুতরাং উৎসর্গের জন্য হত্যা-হত্যা নয়। মহাভারত অনুশীলন পর্ব ৮৮ অধ্যায় বর্ণনা করছে-ধর্মরাজ যুধিষ্টির ও পিতামহ ভীষ্ম, এদের, এদের মধ্যে কথোপকথন কেউ যদি শ্রাদ্ধ করতে চায় তাহলে সে অনুষ্ঠানে কি ধরনের খাবার খাওয়ালে স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষ (এবং মাতাগণ) সন্তুষ্ট হবেন। যুধিষ্টির বলল, হে মহাশক্তির মহাপ্রভু! কি সেই সব বস্তু সামগ্রী যাহা-যদি উৎসর্গ করা হয় তাহলে তারা প্রশান্তি লাভ করবে ? কি সেই বস্তু সামগ্রী যা (উৎসর্গ করলে) স্থায়ী হবে? কি সেই বস্তু যা (উৎসর্গ করলে) চিরস্থায়ী হবে?
    ভীষ্ম বলেছেন, তাহলে শোন হে যুধিষ্টীর! কী সেই সব সামগ্রী। যারা গভীর জ্ঞান রাখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পর্কে- যা উপযোগী শ্রাদ্ধের জন্য। আর কি সেই ফল-ফলাদি যা তার সঙ্গে যাবে। সীম বিচীর সাথে চাল, বার্লী এবং মাশা এবং পানি আর বৃক্ষমূল (আদা, আলু বা মূলা জাতীয়) তার সাথে ফলাহার। যদি স্বর্গীয় পিতৃদেবদের শ্রাদ্ধে দেয়া হয়। হে রাজা! তা হলে তারা এক মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে।
    শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মৎস সহকারে আপ্যায়ন করলে স্বর্গীয় পিতৃকুল দুই মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে। ভেড়ার মাংস সহকারে- তিন মাস। খরগোশ সহকারে চারমাস। ছাগ-মাংস সহকারে ৫ মাস। শুকর-মাংস সহকারে ছয় মাস। পাখীর মাংস দিয়ে আপ্যায়িত করলে সাত মাস। হরিণের মধ্যে ‘প্রিসাতা’ হরিণ শিকার করে খাওয়ালে আট মাস এবং ‘রুরু’ হরিণ দিলে নয় মাস। আর গাভীর মাংস দিলে দশমাস। মহিসের মাংশ দিলে তাদের সন্তুষ্টি এগারো মাস বজায় থাকে।
    শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে, বিশেষ করে বলা হয়েছে তাদের সন্তুষ্টি থাকে পুরো এক বছর। ঘি মিশ্রিত পায়েশ, স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের কাছে গরুর মাংসের মতোই প্রিয়। ভদ্রিনাসার (বড় ষাড়) মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে পিতৃপুরুষ বার বছর সন্তুষ্ট থাকেন। পিতৃপুরুষের মৃত্যু বার্ষিকি গুলোর যে দিনটিতে সে মারা গেছে সেই রকম একটি দিন দিন যদি শুক্ল পক্ষের হয় আর তখন যদি গন্ডারের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করা যায়- স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষম হয়ে যায়। ‘কালাসকা’ কাঞ্চন ফুলের পাপড়ি আর লাল ছাগলের মাংস যদি দিতে পারো তাহলেও তাদের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাবে।
    অতএব আপনি যদি চান আপনার স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাক তাহলে লাল ছাগলের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করতে হবে।
    ছ.হিন্দু ধর্ম অন্যান্য ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত
    হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ তার অনুসারীদের আমিষ খাদ্য গ্রহনের অনুমতি দেয়। তথাপি অনেক হিন্দু নিরামিষ ভোজনকে সংযোজন করে নিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা এসেছে ‘জৈন’ ধর্ম থেকে।
    জ. উদ্ভীদেরও জীবন আছে
    বিশেষ কিছু ধর্ম খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। কারণ তারা জীব হত্যার সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি কেউ কোনো সৃষ্ট জীবকে হত্যা না করে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমি হবো প্রথম ব্যক্তি যে এধরনের জীবন যাপন পদ্ধতিকে বেছে নেবে।
    অতীত কালের মানুষ মনে করত উদ্ভিদের প্রাণ নেই। অথচ আজ তা বিশ্ববাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে,উদ্ভীদেরও প্রাণ আছে। কাজেই সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজী হয়েও জীব হত্যা না করার শর্ত পূরণ হচ্ছে না।
    ঝ. উদ্ভীদ ব্যাথাও অনুভব করতে পারে
    এর পরেও হয়তো নিরামিষ ভোজীরা বলবেন, প্রাণ থাকলে কি হবে উদ্ভীদ ব্যাথা অনুভব করতে পারে না। তাই পশু হত্যার চাইতে এটা তাদের কম অপরাধ। আজকের বিজ্ঞান পরিষ্কার করে দিয়েছে উদ্ভিদও ব্যাথা অনুভব করে কিন্তু তাদের সে আর্ত চিৎকার মানুষই শোনার ক্ষমতা রাখে না ২০ Herts থেকে ২০০০ Herts এর ওপরে বা নীচের কোনো শব্দ মানুষের শ্রুতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। একটি কুকুর কিন্তু শুনতে পারে ৪০,০০০ Herts পর্যন্ত। এজন্য কুকুরের জন্য নিরব ‘হুইসেল’ বানানো হয়েছে যার ফ্রীকোয়েন্সী ২০,০০০ Herts এর বেশী এবং ৪০,০০০ Herts এর মধ্যে। এসব হুইসেল শুধু কুকুর শুনতে পারে, মানুষ পারে না। কুকুর এ হুইসেল শুনে তার মালিককে চিনে নিতে পারে এবং সে চলে আসে তার প্রভুর কাছে।

    ReplyDelete