“যোগঃ চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ
(পাতঞ্জল যোগ দর্শন)
অর্থ— চিত্তের বৃত্তি সমূহের নিরোধের নাম যোগ । ‘নিরোধ’ অর্থ সম্যকরূপে রুদ্ধ বা বন্ধ হইয়া যাওয়া । প্রতিটি মানবের চিত্তক্ষেত্রে কাম-ক্রোধ, মান-অপমান, সৎ -অসৎ, আমি মানুষ, আমি পুরুষ, আমি পশু ইত্যাদি অসংখ্য প্রকারের বৃত্তি সাগরের ঢেউ এর মত আবির্ভূত হয়,
আবার সেখানেই অস্তমিত হইয়া যায়। পুকুরে মৎস্য না থাকিলে জল যেমন আলোড়িত হয় না সেইরূপ উপরি -উক্ত বৃত্তিগুলি যাহার মনকে আলোড়ন করিতে পারে না, বৃত্তিগুলি জ্ঞানের আগুনে ভর্জিত হইয়া শান্তভাব ধারণ করে, বীজের ন্যায় তাহাদের আর অঙ্কুর উদগম হয় না — ইহাকেই বৃত্তিনিরোধ বলা হয় ।
(পাতঞ্জল যোগ দর্শন)
অর্থ— চিত্তের বৃত্তি সমূহের নিরোধের নাম যোগ । ‘নিরোধ’ অর্থ সম্যকরূপে রুদ্ধ বা বন্ধ হইয়া যাওয়া । প্রতিটি মানবের চিত্তক্ষেত্রে কাম-ক্রোধ, মান-অপমান, সৎ -অসৎ, আমি মানুষ, আমি পুরুষ, আমি পশু ইত্যাদি অসংখ্য প্রকারের বৃত্তি সাগরের ঢেউ এর মত আবির্ভূত হয়,
আবার সেখানেই অস্তমিত হইয়া যায়। পুকুরে মৎস্য না থাকিলে জল যেমন আলোড়িত হয় না সেইরূপ উপরি -উক্ত বৃত্তিগুলি যাহার মনকে আলোড়ন করিতে পারে না, বৃত্তিগুলি জ্ঞানের আগুনে ভর্জিত হইয়া শান্তভাব ধারণ করে, বীজের ন্যায় তাহাদের আর অঙ্কুর উদগম হয় না — ইহাকেই বৃত্তিনিরোধ বলা হয় ।

“তাং যোগং ইতি মন্যন্তে স্থিরামিন্দ্রিয়ধারণাম্” (কঠ উঃ ২।৩।১১)
অর্থাৎ — ইন্দ্রিয়গণের স্থিরভাব অবলম্বনের নামই যোগ । শৈশবকালের পুতুল খেলার আকর্ষণ যেমন বার্দ্ধক্যে আর ক্রিয়া প্রকাশ করিতে পারে না, বৃদ্ধকালের জ্ঞানের অগ্নিতে ঐ খেলার আকর্ষণ পুড়িয়া দগ্ধবস্ত্রের মত প্রতিভাত হয়, সেইরূপ যে জ্ঞানী পুরুষের নিকট এই জাগতিক খেলা অকিঞ্চিৎকর অথবা নারিকেলের ছোবরার মতই মনে হয়— খেলার জন্য কোনই ইচ্ছার উদয় হয় না — এইরূপ পুরুষেরই ইন্দ্রিয়গণ স্থিরভাব প্রাপ্ত হইয়াছে , তাঁহারই যোগ সিদ্ধ হইয়াছে ।
“জীবাত্মা পরমাত্মানো ঐক্যং যোগম্” (মহানির্বাণ তন্ত্র)
অর্থাৎ — জীবাত্মার পরমাত্মার সহিত যে মিলন, তাহাকেই যোগ বলা হয় ।
নদী যেমন সাগরের মধ্যে পড়িয়া নিজের নাম ও রূপ হারাইয়া ফেলে, সেইরূপ খন্ডের অখন্ড অখন্ড সত্তার মধ্যে নিমজ্জিত হইয়া যে অখন্ডের ভাবপ্রাপ্তি, তাহাকেই যোগ বলে । এইভাবে জীবাত্মার পরমাত্মার সহিত যোগ হইয়া (মিলিত হইয়া) পরমাত্মা হইয়া যাওয়ার নাম যোগ । সুতরাং মনের যে সৎ - অসৎ বৃত্তিগুলি যাহারা জীবগণকে পরমাত্মার সহিত মিলিত হইতে বাধা প্রদান করিতেছে, মলিনতা (অশান্তিদানের শক্তি) নষ্ট করিয়া তাহাদের শুদ্ধ করিয়া ব্রহ্মাবস্তায় রূপান্তরিত করার নামই যোগ।
অর্থাৎ — জীবাত্মার পরমাত্মার সহিত যে মিলন, তাহাকেই যোগ বলা হয় ।
নদী যেমন সাগরের মধ্যে পড়িয়া নিজের নাম ও রূপ হারাইয়া ফেলে, সেইরূপ খন্ডের অখন্ড অখন্ড সত্তার মধ্যে নিমজ্জিত হইয়া যে অখন্ডের ভাবপ্রাপ্তি, তাহাকেই যোগ বলে । এইভাবে জীবাত্মার পরমাত্মার সহিত যোগ হইয়া (মিলিত হইয়া) পরমাত্মা হইয়া যাওয়ার নাম যোগ । সুতরাং মনের যে সৎ - অসৎ বৃত্তিগুলি যাহারা জীবগণকে পরমাত্মার সহিত মিলিত হইতে বাধা প্রদান করিতেছে, মলিনতা (অশান্তিদানের শক্তি) নষ্ট করিয়া তাহাদের শুদ্ধ করিয়া ব্রহ্মাবস্তায় রূপান্তরিত করার নামই যোগ।
এখানে ইহাও স্মরণীয় যে, ইন্দ্রিয়গুলি এক একটি শক্তিবিশেষ । শক্তি ও শক্তিমান অভেদ । তাই কোন শক্তিই মরে না । এইজন্য ইন্দ্রিয়গণকে কলুষভাব হইতে মুক্ত করিয়া ব্রহ্মভাবে রূপায়িত করার নামই যোগ । জ্ঞান ব্যতীত কোন কর্মের দ্বারা, বা কোন বহিরঙ্গ সাধনের দ্বারা ইন্দ্রিয়গণ শুদ্ধ হয় না । “মনঃ সত্যেন শুদ্ধতি”— মন সত্য আচরণ ও সচ্চিন্তার দ্বারাই শুদ্ধ হয় । মন সুদ্ধ না হইলে জীবাত্মার পরমাত্মার সহিত মিলন সাধিত হয় না । এই সকলই রাজযোগের নির্দেশ ।

যোগ বলিতে সাধারণ লোক প্রাণায়াম, আসন ও মুদ্রা বুঝিয়া থাকে । এই সকলকে হঠযোগ বলে । হঠযোগের অন্তর্গত শ্বাস প্রশ্বাসরূপ প্রাণবায়ুর বিশ্রামকে প্রাণায়াম বলে । স্থূল প্রাণায়ামের দ্বারা বহু শারীরিক ব্যাধির নিরাময় হয়, শরীর হালকা হয় এবং মানুষ দীর্ঘজীবী হইতে পারে ।


আসন ও মুদ্রা অভ্যাসের দ্বারা শরীরের অঙ্গসমুহ চালনা হয় এবং বহু রোগ হইতে মুক্ত হওয়া যায় । আসন অভ্যাসের দ্বারা শরীর রোগমুক্ত হইয়া স্থিরভাবে রাখার যোগ্যতা অর্জন করে এবং দেহ ভগবৎ চিন্তার সহায়ক হয় ।
প্রাণায়াম , আসন ও মুদ্রার দ্বারা স্থূল শরীরকে রোগমুক্ত করা গেলেও ইহাদ্বারা সূক্ষ্ম শরীর বা মন রোগমুক্ত হয় না । অসুস্থ মনকে সুস্থ মনের দ্বারা চিকিৎসা করিতে হয় । বিচারই অসুস্থ মনের মহৌষধ । বিষয় ভোগের জন্য মন আসক্ত হয়, সেই বিষয়টিকে মনের সম্মুখে আনিয়া তাহাকে ভোগের দ্বারা কতটুকু সুখ বা দুঃখ লাভ হয় সেই সম্বন্ধে পুনঃ পুনঃ বিচার করিলেই বিষয়ের দোষগুণ মনের নিকট ধরা পড়ে । এইভাবে মন যদি বিষয়ের দোষ দেখিতে পায়, তবে সে আর তাহার দিকে আকৃষ্ট হয় না । বিষয় মনের নিকট হেয় পতিপন্ন হইলে উহা মন হইতে ত্যাগ হইয়া যায় । এইরূপ বিচার ব্যতীত বিষয়মোহ ত্যাগের অন্য কোন উপায় নাই ।
চলবে......
0 মন্তব্য(গুলি)