https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ব্যক্ত অব্যক্ত ও মোক্ষ

Friday, October 27, 2017
          সম্পর্কিত ছবি
“অব্যক্তাৎ ব্যক্তয়ঃ সর্বাঃ”
(গীতা ৮।১৮)
অব্যক্ত অবস্থা হইতে এই জগত ব্যক্ত হইয়াছে । 'অব্যক্ত’ অর্থ যাহা ব্যক্ত হয়না বা যাহার বাহিরে প্রকাশ দৃষ্ট হয় না । সুষুপ্তিতে (গাঢ় নিদ্রার সময়ে) যখন আমাদের মনের কোন প্রকাশ থাকে না, তখন আমাদের নিকট ঘর-বাড়ি, বৃক্ষ, মনুষ্যাদি জীবগণ কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না, সকলই অব্যক্তর মধ্যে ডুবিয়া যায় । আবার মনের স্ফুরণ হইলে এই জগৎ একে একে অব্যক্ত হইতে প্রকাশ পাইতে থাকে । তাই মনের ব্যক্ততাই জগৎ এবং অব্যক্ত অবস্থায় আগমণ করিলেই জগতের কোন বোধ হয় না । মনের অব্যক্ত ভাবের নামই ব্রহ্ম ।

👉 প্রশ্নঃ — তাহা হইলে শ্বাস -প্রশ্বাসাদি কোন ক্রিয়ার দ্বারা যদি মনকে কিছুক্ষণের জন্য শান্ত (বৃত্তিশূন্য) করিয়া রাখা যায় অথবা ক্লোরোফর্ম জাতীয় কোন প্রকৃয়ার দ্বারা যদি মনকে স্তব্ধ করিয়া রাখা যায়, তবে তাহাতেই তো ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হইতে পারে । ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য কষ্টসাধ্য সাধন-ভজনের প্রয়োজন কি ?

👉 উত্তর — শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াই হউক বা ক্লোরোফর্ম জাতীয় কোন প্রক্রিয়ার দ্বারাই হউক, মনকে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করিয়া রাখিতে পারিলেও ভগবৎ দর্শন বা ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয় না । মনের কাম,ক্রোধ, লোভ, হিংসা-দ্বেষ, আপন-পর বোধ এবং ঈশ্বর হইতে পৃথকত্ববোধ রহিত করিয়া মনকে শুদ্ধ করা কোন কর্মের দ্বারা সিদ্ধ হয় না — জ্ঞানাগ্নি (জ্ঞানরূপ অগ্নি) প্রজ্জলিত না হইলে মনোবৃত্তিগুলি জীবহৃদয় ছাড়িয়া পলায়ন করে না । কোন রোগের বীজানু দেহের মধ্যে বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত যেমন সেই লোক সুস্থ হয় না , একদিন সুস্থ থাকিলেও পরের দিনই আবার রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ার সম্ভাবনা থাকে, সেইরূপ মনের বৃত্তিগুলি ক্রিয়াশীলই হউক বা স্তব্ধভাবেই থাকুক না কেন, কোনভাবেই মন মুক্ত হাইতে পারে না — যে কোন সময়ে মন সংসারের রূপ -রসে ডুবিয়া যাইতে পারে । মন হইতে বিষয় ত্যাগ না হইলে মানব বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া পড়িবেই ।
জ্ঞান ব্যতীত মন মুক্ত হন না । ‘জ্ঞান’ অর্থ নিজ স্বরূপের জ্ঞান অর্থাৎ মানুষ যে দেহ-মন হইতে পৃথক একটি সত্তাবিশেষ, তাহার সেই সত্তার জ্ঞান বা অনুভব । এই অবস্থা লাভ করিয়া দেহগৃহে অবস্থান করিলেও মানব আর বন্ধনে আবদ্ধ হয় না — সে বাঁধামুখে জগৎ দর্শন করিয়া অর্থাৎ “জাগতিক বস্তুগুলি চক্ষে দেখা গেলেও উহারা প্রকৃতপক্ষে সত্য নহে— স্বপ্নের মতই” এই বোধ স্থিত হইয়া সর্বচিন্তাহীন হইয়া পরম শান্তি ভোগ করেন । ইহাকেই জীবন্মুক্ত অবস্থা বলে ।
👉 মোক্ষ কি ? — সর্ববিধ বাসনার নিবৃত্তিই মোক্ষ, আর বাসনা অল্প পরিমানে থাকা পর্যন্তও সে বদ্ধ । কামনা-বাসনার বীজই মানুষকে অব্যক্ত হইতে ব্যক্ত অবস্থায় (জীবত্বে) লইয়া আসে । বীজ ভর্জিত (ভাঁজা) হইলে যেমন আর অংকুর উদ্গম হয় না, সেইরূপ জ্ঞানানলে কামনা-বাসনা বা অজ্ঞানের বীজ ভর্জিত হইলে আর পুনর্জন্মের সম্ভাবনা থাকে না।