ধর্ম কোথায় অবস্থান করে ? ধর্ম কি আকাশে অবস্থান করে, পাতালে থাকে, মন্দিরে, মসজিদে, চার্চে বা গীর্জার ঘরে, গুরুদ্বারে থাকে ? তবে কি ধর্ম সপ্তম আকাশে, চতুর্থ আকাশে, হরিদ্বারে, গঙ্গাসাগরে, কৈলাশে পর্বতের উপরে, বৈকুন্ঠ ধামে, গোলক ধামে, কুম্ভমেলা ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ স্থানে অবস্থান করে ? অথবা অন্য কোথাও থাকে ।
ইহার অনুসন্ধান তো করিতেই হইবে কেননা ধর্মই তো সুখের মূল। এই জন্য ধর্মকে খুঁজিয়া বাহির করা এতটাই আবশ্যক যে যেরূপ পিপাসার্ত ব্যক্তির কুঁয়ার সন্ধান করা আবশ্যক কেননা জল বিনা পিপাসার নিবৃত্তি সম্ভবই হয় না, বাস্তবে ধার্মিক ব্যক্তির ভাগ্য হাঁসিতে এবং অধার্মিকতা ব্যক্তির ভাগ্য বিলাপ করিয়া থাকে। আমাদের জীবন পরমাত্মার নিকট হইতে হাঁসিবার জন্য প্রাপ্ত হইয়াছে, বিলাপ করিবার জন্য নহে। যদি জীবন ভরিয়া হাস্যমুখে বাঁচিতে হয় তাহা হইলে ধর্মের অনুষ্ঠান তো করিতেই হইবে এবং কান্নার জীবন চাহিলে তাহাতেও জীবাত্মা স্বতন্ত্র।
পরমাত্মা মনুষ্য শরীরেই কেবল এরূপ যোগ্যতা প্রদান করিয়াছেন যে -বাস্তবিক ধর্মের অনুসন্ধান করিতে সমর্থ হয়। মনুষ্যেতর শরীরে কখনো সম্ভবই নয়, কেননা ভোগ যোনিতে কেবল কর্ম ফল ভোগই করিতে হয়। আমরা জানি যে -বহু দূরে যাত্রা করিবার জন্য শক্তপোক্ত সাধনের আবশ্যকতা হয়। কোলকাতা থেকে দিল্লী অথবা মুম্ববাই গমন করিতে হইলে সাইকেল অথবা মোটর সাইকেল কাজে লাগে না বরং শক্তপোক্ত সাধনের রেল অথবা এ্যরোপ্লেন কার্য্যকরী হয়। ঠিক এইরূপে মানব জীবনের দীর্ঘ যাত্রা পথে ধর্ম রূপী শক্তপোক্ত সাধনের প্রয়োজনীয়তা আছে, ইহা ব্যতীত আমার কখনো সংসার রূপী ভবসাগর উত্তীর্ণ হইতেও পারিব না। এইজন্য ধর্মের অনুসন্ধান অনিবার্য্য।
মনু মহারাজ বলেন -
অধর্ম প্রভবংচৈব দুঃখযোগং শরীরিণাম্।
ধর্মার্থ প্রভবং চৈব সুখ সংযোগমক্ষয়ম্ ।।
অর্থাৎ শরীর ধারী দিগের দুঃখ অধর্ম হইতে হয় এবং অক্ষয় সুখের সংযোগ ধর্মের দ্বারা হইয়া থাকে। ইহার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে -যেখানে যেখানে অশান্তি, দুঃখ, কষ্ট, ক্লেশ, বাধা, পীড়া ইত্যাদি পরিলক্ষিত হইতেছে, নিশ্চিত রূপে ইহা মানিতে হইবে যে সেখানে ধর্মের আচরণ হইতেছে না। কেননা কোথাও যদি ধুঁয়া উঠিতে থাকে তাহা হইলে ইহা অনুমান করিতে হইবে যে ওখানে আগুণ লাগিয়াছে। কেননা আগুণ বিনা ধুঁয়া উঠিতে পারে না।
ঠিক ইহার বিপরীত কোথাও যদি সুখ, শান্তি, সন্তোষ, প্রসন্নতা, দেখিতে পাওয়া যায় তাহা হইলে ইহাও অনুমান করিতে হইবে যে সেখানে ধর্মের সত্যের আচরণ অবশ্যই হইতেছে। কেননা এই সকল সম্ভাবনা ধর্মযুক্ত আচরণের সাথে দেখিতে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ছিলো ধর্মের নিবাস স্থান কোথায়.?
উত্তরও স্পষ্ট -ধর্মের স্থান আত্মাতে। ধর্ম আত্মার মধ্যেই থাকে। এই জন্য লোক সমাজের মধ্যে প্রায়ই যাঁহারা চরিত্রবান, আচরণবান, আদর্শবান ব্যক্তিগণের জন্য যদি সর্বাপেক্ষা অধিক উপযুক্ত শব্দের প্রয়োগ হয় তাহা হইলে সেই শব্দ হইল ধর্মাত্মা অর্থাৎ ধর্মাত্মা শব্দ হইতে এই জ্ঞান হয় যে -ধর্মের স্থানই আত্মার মধ্যে হয়ে থাকে।
যুগ প্রবর্তক মহর্ষি দয়ানন্দ তাঁহার স্বরচিত বিশাল সাহিত্য ভান্ডারের মধ্যে ধর্মাত্মা শব্দের প্রয়োগ বহু স্থানে করিয়াছেন। ইহার অতিরিক্ত ঋষি যত্রতত্র ধর্মযুক্ত ব্যবহার এবং ধার্মিক শব্দেরও প্রয়োগ করিয়াছেন।
দয়ানন্দ তাঁহার গোকরুণানিধি পুস্তিকার ভূমিকায় লিখিয়াছেন -সেই সকল ধর্মাত্মা বিদ্বান্ ব্যক্তিগণ ধণ্য, যাহারা ঈশ্বরের গুণ কর্ম, স্বভাবের অভিপ্রায়, সৃষ্টিক্রম, প্রত্যক্ষাদি প্রমাণ এবং আপ্ত পুরুষ গণের আচার -আচরণের দ্বারা পরিশুদ্ধ রূপে চালিত হইয়া জগৎ কে পৌঁছাইয়া থাকেন।
মহর্ষি দয়ানন্দ বেদ শাস্ত্র সকল গম্ভীর রূপে অধ্যায়নের পশ্চাৎ নিজ বিবেক দ্বারা রত্নরাজি আহরণ করিয়া 'আর্যোদদেশ্য রত্নমালার' র নির্মাণ করিয়াছেন। আর্যগণের গলায় পরিধান করাইয়াছেন। যাহাকে ধারণ করিয়া আমরা আর্য্যত্ব হইতে দেবত্ব এবং দেবত্ব হইতে ঋষিত্ব প্রাপ্ত করিতে পারি।
আর্যঃ কস্মাৎ ?
আমরা আর্য্য কেন ?
আর্যাঃজ্যোতিরগ্রাঃ
সেই আর্য্য যে জ্যোতির বাহক, সেই আর্য যে—
ঈশ্বরের পুত্র হয়। আর্যঃ ঈশ্বর পুত্রঃ (নিরুক্ত) সঠিক রূপে আর্য্য হইতে গেলে অথবা ঈশ্বরের. পুত্র হইতে গেলে আমাদিগকে আর্যদ্দেশ্য রত্নমালা অতি অবশ্যই পড়িতে হইবে ।
0 মন্তব্য(গুলি)