https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

অজমেধ এবং অবিমেধ কি?

Friday, October 6, 2017

অজমেধের পৌরাণিক অর্থঃ
অজের অর্থ ছাগল। অতঃ পৌরাণিক অর্থে ছাগলের মাংস কে যজ্ঞে আহুতি দেওয়া কে "অজ মেধ" বলে।  পৌরানিক রমেশ আদি ভাষ্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। যথাঃ
"এই তুর্ণগামী অশ্ব একমনে দেবগণকে ধ্যান করতঃ বধ্যস্থানে গমন করিতেছে। উহার বন্ধুতুল্য সহকারী ছাগলকেও উহার অগ্রে লইয়া যাওয়া হইতেছে এবং স্তোত্রপাঠি কবিগন উহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতেছে।"
(ঋগবেদ ১।১৬৩।১২)

আলোচনাঃ
অজ-মেধ এর পৌরাণিক অর্থ  প্রমাণ দ্বারা সত্য প্রমাণ হয় না।  কারণ সংস্কৃত সাহিত্যে অজ এর অর্থ শুধু ছাগলই নয়। তাই বেদ মন্ত্রে অজ এর প্রয়োগ ছাগল অর্থে করা যথার্থ কি না তা অবশ্যই বিচার করা প্রয়োজন।

মহাভারতে অজ শব্দের অর্থ 
অজমেধ সমন্ধ্যে মহাভারতের শান্তিপর্বের ৩৩৭ অধ্যায়ে  নিম্নলিখিত শ্লোক মেলে।

বীজৈর্যজ্ঞেষু যষ্টব্যমিতি বৈ বৈদিকী শ্রুতিঃ।
অজসংজ্ঞানি বীজানি চ্ছাগং তো হন্তমর্হথ।।৪।।
তৈষ ধর্মঃ সতাং দেবা যত্র বধ্যতে বৈ পশুঃ।
ইদং কৃতযুগে শ্রেষ্ঠং কথং বধ্যতে বৈ পশুঃ।।৫।।

ঋষি দেবতাদের বলছে  দেবজন! যজ্ঞে বীজ দ্বারা যজন করা উচিৎ। ইহাই বৈদিকী শ্রুতি। বীজের নাম অজ অতঃ যজ্ঞে ছাগল বধ করা উচিৎ নয়। হে দেব! যেখানে কোথাও যজ্ঞে পশু বধ হয় তাহা সৎ পুরুষের ধর্ম নয়। ইহা শ্রেষ্ঠ সত্যযুগ এইজন্য কি প্রকার পশুর বধ হতে পারে? 

উপরের  শ্লোক ঋষি এবং দেবতার সংবাদ সম্বন্ধী।  মহাভারতে দর্শানো হয়েছে যে,  দেবতার মত ছিলো যে, যজ্ঞে "অজ" শব্দ দ্বারা ছাগল বোঝা উচিৎ।  এর প্রক্ষিতে ঋষি বলেন যে, তোমাদের  এই পক্ষ সত্য নয়। বেদে বীজের নাম অজ, ছাগল নয়। ঋষি এবং দেবের মধ্যে যখন এই বিবাদ চলছিলো,  সেই সময় রাজা বসু সেখানে উপস্থিত হলেন। তার সম্মুখেও এই প্রশ্ন রাখা হলো।  তিনি দেবতার পক্ষ নিয়ে বললেন যজ্ঞে ছাগলের বধ করা উচিৎ।  এই অসত্যের পোষন করার ফলে তিনি স্বর্গচ্যুত হন।  এ থেকে স্পষ্ট যে,  যজ্ঞে ছাগল বলি দিয়ে কখনো স্বর্গ প্রাপ্ত হওয়া যায় না বরং স্বর্গচ্যুতি ঘটে। আর ঋষির পক্ষ যে সঠিক ছিলো তাও প্রমাণ হলো।

এছাড়া অজ শব্দের আরো অনেক অর্থ রয়েছে -

অজ- গমনার্থক অজ্ ধাতুর সাথে অচ্ প্রত্যয় করে অজ হয়েছে।  নিত্যগমনশীল। অজ+ ল্যুট্ = অজন।  অজন্মা, এক প্রকার অন্ন। তাছাড়া বেদে অজ ধাতু নিক্ষেপ অর্থেও প্রযুক্ত হয়েছে।

এই প্রকার বেদে উক্ত মন্ত্রটির শুদ্ধার্থটি দাঁড়ায় -

উপ প্রাগাচ্ছসনং বাজ্যর্বা দেবদ্রীচা মনসা দীধ্যান।
অজঃ পুরো নীয়তে নাভিরস্যানু পশ্চাৎকবয়ো যন্তি রেভা।।
(ঋগবেদ ১।১৬৩।১২)

পদার্থঃ (বাজী) বেগবান [অশ্বের ন্যায়] (অর্বা) অগ্নি, তেজস্বী পুরুষ [অর্গ্নির্বা অর্বা ; তৈঃ ১।৩।৬।৪] (দেবদ্রীবা) বিদ্বান কে প্রাপ্ত কারী (মনসা) জ্ঞান দ্বারা (দীধ্যান) স্বয়ং প্রকাশিত (শসনম) শাসন কার্যের উপর (উপ প্র অগাত) নিযুক্ত হয় (অজঃ) শত্রুকে দূরকারী বীর পুরুষ [ অজ গতিক্ষেপনয়োঃ] (নাভি) সবাইকে বন্ধনে সমর্থ (অস্য) এই রাষ্ট্রের (পুর) অগ্র মুখ্য পদে (নীয়তে) নিয়ে অবস্থান করে এবং (পশ্চাত) পেছনে [তার পোষক রূপে] (রেভা) বিদ্বার্থী [রেভ ইতি সর্ব স্তোতৃনামসু পঠিতম; নিঘুঃ ৩।১৬] (অনু যন্তি) অনুগমন করে।

সরলার্থঃ বেগবান [অশ্বের ন্যায়] তেজস্বী পুরুষ বিদ্বান কে প্রাপ্ত কারী জ্ঞান দ্বারা স্বয়ং প্রকাশিত শাসন কার্যের উপর নিযুক্ত হয়। শত্রুকে দূরকারী বীর পুরুষ সবাইকে বন্ধনে সমর্থ এই রাষ্ট্রের আগে মুখ্য পদে নিয়ে অবস্থান করে এবং পেছনে [তার পোষক রূপে] বিদ্বার্থী অনুগমন করে।

অবিমেধঃ
অবিমেধ সমন্ধ্যে পৌরাণিক ভাব হচ্ছে যজ্ঞে ভেড়ার আহুতি।  এখন দেখা প্রয়োজন যে, বেদে ভেড়া সমন্ধ্যে কি আজ্ঞা রয়েছে।  নিচের মন্ত্রে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত হবে যে, ভেড়া আদি বধ করা বেদানুমোদিত নয়।

ইমমুর্ণায়ু বরুণস্য নাভিং ত্বচং পশুনাং দ্বিপদাং চতুষ্পদাম্।
ত্বষ্টুঃ প্রজানাং প্রথমং জনিত্রমগ্নেমাহিংসীঃ পরমে ব্যোমন্।
(যজুর্বেদ ১৩।৫০)

হে রাজন! তুমি পরম ব্যোম অর্থাৎ বিবিধ প্রাণীদের রক্ষাধিকারে নিযুক্ত হয়ে সর্ব জগতের রচয়িতা পরমেশ্বরের প্রজার সবচেয়ে উত্তম বা সবচেয়ে প্রথম উৎপাদক কারণ, বরুণ অর্থাৎ বরণ যোগ্য সুখের মূলকারণ,  দ্বিপদী এবং চতুষ্পদী পশু শরীরে কম্বল আদি দ্বারা আবৃত এই ঊর্ণায়ু  অর্থাৎ ঊণ দানকারী ভেড়া আদি জন্তু কে মেরো না। 

এই প্রমাণ দ্বারা আমরা নিশ্চিতরুপে বলতে পারি বেদে যখন ভেড়া আদির হিংসা সর্বদা নিষেধ,  তখন অবিমেধের হিংসাময় পৌরাণিক ভাব বেদের দৃষ্টিতে কিভাবে সত্য হতে পারে?