https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বৈদিক ধর্মের বিশালতাঃ আচার্য্য ব্রহ্মদত্ত

Friday, October 13, 2017
               
বৈদিক (সনাতন ধর্ম) ধর্ম মজহব নয়, সম্প্রদায় নয়, পন্থ নয় এবং রিলীজিওনও নয় । বৈদিক ধর্ম তো এরূপ শাশ্বত সিদ্ধান্ত সকলের নাম যাহার দ্বারা মানব জাতি পরস্পর সুখ এবং শান্তির সহিত অবস্থান করিয়া জীবনকে উচ্চতার দিকে নির্বহন করিতে সক্ষম হয় । ধর্ম নৈতিকতা এবং আচরণ প্রধান, মান্যতা প্রধান নয় । ধর্ম ব্যক্তি কেন্দ্রিত নয়, সদাচার কেন্দ্রিক ।
ধর্ম বাহ্য আড়ম্বর বা বাহ্য কর্মকান্ড নয় । ইহা ব্যক্তির নিজের তথা সমাজকে সুব্যবস্থিত রাখিবার আদর্শ । আমরা সকলেই জানি যে ভবনের ভিত, স্তম্ভ মজবুত নয় সেই ভবন যতই সুন্দর হোক না কেন তাহা বসবাসের বাসস্থানের যোগ্য হয় না । কেননা নাজানি কখন এই ভবন ভূমিস্যাৎ হইয়া যাইবে । ঠিক এই রূপেই মত-মতান্তর, জাতিবাদ, পন্থ, সম্প্রসারণ রূপী যে সকল ভবন রহিয়াছে তাহার স্তম্ভ গভীর পর্যন্ত নাই, মজবুত দৃঢ় নয়, এই জন্য ইহারা চিরস্থায়ী নয় । পরন্তু বৈদিক ধর্মের স্তম্ভ বেদ রূপী মজবুত আধারশীলার উপর প্রতিষ্ঠিত এইজন্য ইহা শাশ্বত, সনাতন, “ন মমার ন জির্য়তি” কখনো মৃত্যু বরণ করে না এবং জীর্ণ -শীর্ণও হয় না । বেদের মধ্যে সনাতন ধর্মের সংঞ্জা এইরূপে প্রাপ্ত হয়—

সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাৎ পুনর্ণবঃ । অহোরাত্রে প্র জায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়োঃ ।। (অথর্ববেদ ১০/৮/২৩। )
এনম্স নাতনম্ আহু = ইহাকে স্থায়ী অনাদি কালীন বলা হয়,উতঅদ্য পুনঃ নবঃ_স্যাৎ = ইহা আজও আরো অধিক প্রতিদিন পুনঃ পুনঃ নবীন হইয়া যায়, অন্যঃঅন্যস্যরূপয়োঃ = একে অপরের রূপে ও সমান রূপময়ও,অহোরাত্রে প্রজেয়েতে = ইহা দিবারাত্র সদা উৎপন্ন হইতে থাকে । এই মন্ত্রে "সনাতনম্" এর অনাদিত্বের সংজ্ঞা, পুনঃ নবঃ = পুনঃ পুনঃ নতুন হওয়া । যাহা নিত্য নূতন হয় না, তাহা সনাতন হইতে পারে না । সে জীর্ণ হইয়া গিয়াছে, সে আজ চলন যোগ্য নয় । সে Out of date হইয়া গিয়াছে । মহর্ষি দয়নন্দ এই সনাতন ধর্মের ব্যাখ্যা করিয়াছেন । তিনি যাহাকে সত্য সনাতন বৈদিক ধর্ম বলিয়াছেন । মহর্ষি দয়ানন্দ স্বামীজীর কার্য্যক্ষেত্রে পদার্পণ হইবার সময় আমাদের তথাকথিত সনাতন ধর্মের এরূপ দশা হইয়াছিল যে তাহার মধ্যে পুনঃ নূতন হইবার ক্ষমতাটুকুও ছিল না । ঐ ধর্মের স্বরূপ আমাদিগকে বাধা বিপত্তির নদীর পারে পৌঁছাইবার উপযুক্ত ছিল না । অপিতু সে এরূপ পাথর হইয়া গিয়াছিল যে পারে যাইবার ইচ্ছুক ব্যক্তি দিগকে যথাস্থানে ডুবাইবার কারণ হইয়া যাইত । ঋষি চাহিয়াছিলেন ধর্মের নামে এই সংকীর্ণ বোধ সমাপ্ত হইবে এবং মানবজাতি একই পরিবারের সমান পরস্পর একে অপরের সহায়ক হইয়া নিজ জীবনের লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছাইবে । মহাভারত যুদ্ধের পর ভারতবর্ষে নানা মতমতান্তর পন্থ, জাতিবাদের প্রাদুর্ভাব হইতে লাগিল এখনো নিরসনের নামই নাই । আমিতো বলিব যে আপনি খ্রীষ্টান মতের বাউন্ডারী দিতে পারেন, মুসলিম মতের, বৌদ্ধমতের, জৈন মতের অথবা অন্যান্য মতমতান্তরের আপনি বাউন্ডারী তো দিতে পারিবেন কিন্তু সত্য সনাতন বৈদিক ধর্মের বাউন্ডারী বাঁধিয়া সীমাবদ্ধ করিতে পারিবেন না । কেননা সনাতন ধর্ম অপৌরূষেয় কল্প । যেহেতু অন্যান্য মত-মতবাদ, সম্প্রদায় অল্পজ্ঞ মনুষ্যের ফসল । ইহা ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা নিশ্চিত -নির্দিষ্ট সময়ে প্রচলিত হইয়াছে, এইজন্য ইহা শাশ্বত, সনাতন হইতে পারে না । কেননা উৎপত্তির সাথে বিনাশের নিত্য সম্বন্ধ রহিয়াছে । হ্যাঁ, মত-মতান্তর সম্প্রদায়, মতবাদ ইত্যাদির মধ্যে যদি সততা এবং উত্তমতা থাকে তাহা হইলে তাহা অবশ্যই গ্রহণীয় । কেননা যেখানে -যেখানে সত্য বিদ্যার প্রকাশ আছে সেখানে -সেখানে সর্বজ্ঞকল্প পরমাত্মারই উপদেশ রহিয়াছে ইহা বুঝিতে হইবে । যদি আমি লৌকিক চিন্তনের দ্বারা নিজ কথার স্পষ্টীকরণ করি তাহা হইলে আমি বলিতে পারি —
বিশ্বে যে সকল মত-মতান্তর আছে তাহারা সকল নদী, নালা, কুঁয়ার সমান, যাহারা সময় হইলে শুকাইয়া যায় ; পরন্তু বৈদিক ধর্ম তো সমুদ্রের সমান যাহা কখনও শুকাইয়া যায় না । এইরূপ সার্বকালীক সার্বজনীক এবং সার্বভৌমিক ধর্ম কে গ্রহণ না করিয়া মত-মতান্তরে ব্যক্তিগণের ফাঁসিয়া যাওয়া, সত্য এবং যথার্থ হইতে দূরে চলিয়া যাওয়া, মনুষ্যের বুদ্ধিহীনতা তথা অবিবেকতাই মান্য হইবে । মহাভারতে আমাদিগের জন্য একটি সতর্কতা দেওয়া হইয়াছে —
ন জাতু কামন্ন ভয়ান্ন লোভাদ্ ধর্মং ত্যজেজ্জীবিতস্যাপি হেতোঃ।
নিত্যো ধর্মঃ সুখঃ দুঃখে ত্বনিত্ব্যে জীবো নিত্যো হেতুরস্য ত্বনিত্যঃ ।।
অর্থাৎ মনুষ্যকে কখনও কোনও সময়ে, ভয়ে, লোভে বা জীবন রক্ষার জন্যও ধর্মের ত্যাগ করা উচিৎ নয় । কেননা ধর্ম নিত্য এবং সুখ-দুঃখ অনিত্য তথা জীব নিত্য এবং জীবনের হেতু অনিত্য । এই জন্য যেখানে ধর্ম, ন্যায় এবং সত্য বর্তমান থাকিবে সেখানে বিজয় এবং কল্যাণ হইবে ।
ওম্ শান্তিঃ। শান্তিঃ। শান্তিঃ।।।